18/08/2023
ভূমিকম্পের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা সচরাচর আমাদের অনেকের-ই জানা আছে যে, ভূ-গর্ভে প্রচুর পরিমাণ উষ্ণবায়ু জমাট হয়ে থাকে। এগুলো একত্রে বের হতে জমিনের ছিদ্রপথ সংকীর্ণ হলে ভূ-খন্ডের মধ্যে ধাক্কা লাগার ফলে কম্পনের সৃষ্টি হয়। বর্তমান গবেষণা মতে, জমিন অনেকগুলো প্লেটের উপর অাছে। তো উষ্ণবায়ু বের হওয়ার সময় প্লেটে ধাক্কা লাগে, সেই ধাক্কাতেই ভূ-কম্পনের সৃষ্টি।
এবার আসুন কুরআন-হাদিসের দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা একে একটু বিশ্লেষণ করি।
১/ কুরআন মজিদ থেকে জানা যায়, সর্বপ্রথম সামুদ জাতিকে আল্লাহ তাদের পাপ ও দুষ্কৃতির কারণে ভূমিকম্প দিয়ে শাস্তি দিয়েছিলেন। পরে লুত আ.'র জাতিকে। পরে বনী ইসরাঈলের এক দলকে এবং কারুনকে। (আখবারুয যালযালাহ পৃ. ৮, হযরত থানবী)
এখান থেকে জানায় যায়, ভূমিকম্পের কারণ পাপ।
২/ ইমাম ইবনু আবিদ্দুনয়া রহ. বর্ণনা করেন- নবীজি সা.'র যুগে একবার ভূমিকম্প হয়েছিল। তখন নবীজী মাটিতে হাত মেরে বলেছিলেন, থেমে যাও, সে সময় এখনও আসেনি। এরপর নবীজী সাহাবীগণকে বললেন, তোমাদের রব তোমাদের কাছ থেকে তওবা চাচ্ছেন। (সুবুলুল হুদা ওয়াররাশাদ ৭/৩৫৩)
হযরত থানবী রহ. বলেন, এ হাদিস থেকে বুঝা গেল ভূমিকম্পের কারণ পাপ এবং এর দ্বারা উদ্দেশ্য বান্দাদেরকে সতর্ক করা ও তওবার প্রতি ধাবিত করা। (আখবারুয যালযালাহ পৃ.৪)
উল্লেখ্য যে, উপরোক্ত হাদিসটির সনদের ব্যাপারে কালাম আছে। অনেকেই একে যয়ীফ বলেছেন। কেউ কেউ হাসান লিগাইরিহিও বলেছেন।
৩/ ইমাম ইবনে আবি শাইবাহ রহ. ও ইমাম আহমদ রহ. বর্ণনা করেন- হযরত উমর রাযি.'র যুগে ভূমিকম্প হলে তিনি লোকজনকে বললেন, ভূমিকম্প হয়েছে, নিশ্চয় তোমরা কোন নতুন পাপ করেছো। আমি কসম করে বলছি, আবার যদি কোন দিন ভূমিকম্প হয় আমি আর তোমাদের সাথে থাকব না। (সুবুলুল হুদা ৭/৩৫৪)
৪/ ইমাম হাকিম রহ. বর্ণনা করেন- হযরত আয়েশা রাযি.কে এক লোক ভূমিকম্প সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, লোকেরা যখন মুবাহ কাজের মত ব্যাপকভাবে যিনা করবে, শরাব পান করবে, গান-বাজনা করবে, তখন আল্লাহ সুবহানাহুর গায়রত উথলে ওঠে, অতঃপর জমিনকে হুকুম দেন, এদেরকে কিছুটা নাড়া দাও। যদি তওবা করে নেয় তাহলে তো ঠিক আছে। নচেৎ দালানসমূহ পতিত করা হয়।
(আলমুসতাদরাক ৪/৫১৬, হা. ৮৫৭৫)
৫/ ইমাম ইবনুল কাইয়িম রহ. উল্লেখ করেন- উমর ইবনে আব্দুল আজিজ রহ. বলেছেন, ভূমিকম্প দ্বারা আল্লাহ তার বান্দাদের প্রতি তার রাগ প্রকাশ করেন। (আলজাওয়াবুল কাফী পৃ. ২৫৪)
৬/ হযরত কা'বে আহবার রহ. বলেন, ভূমিকম্প তখন হয় যখন জমিনে মানুষ বেশি পরিমাণে গোনাহ করতে লাগে। (আলজাওয়াবুল কাফী পৃ. ২৫৪)
এসব বর্ণনা থেকে সুস্পষ্ট যে, ভূমিকম্পের কারণ হল বান্দাদের ব্যাপকহারে পাপ ও দুষ্কর্ম।
বাহ্যিক দৃষ্টিতে ভূমিকম্পের কারণের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা ও ইসলামী ব্যাখ্যার মধ্যে পুরোপুরি বিরোধ মনে হয়। হাকিমুল উম্মত হযরত থানবী রহ. এর জবাবে বলেন, এ ব্যাপারে কোন মতভেদ নেই যে, কোন একটি কাজ সংঘটিত হওয়ার পেছনে একাধিক কারণ থাকতে পারে। তার কিছু সরাসরি আর কিছু পরোক্ষ। যেমন কোন এক ব্যক্তি কাউকে রাগ ওঠার মত কোন কথা বলল। ফলে সে রাগে উত্তেজিত হয়ে তার ব্রেইনস্ট্রোক করে মারা যায়। এখন এখানে মৃত্যুর কারণ যেভাবে ব্রেইনস্ট্রোককে বলা ঠিক আছে, তদ্রূপ ঐ লোকের কথা দ্বারা উত্তেজিত হওয়াকেও বলা ঠিক হবে। তো অনুরূপভাবে ব্যাপকহারে বান্দাদের পাপের কারণে আল্লাহর গায়রত ও রাগ হল ভূমিকম্পের মূল কারণ এবং এ রাগের বহিঃপ্রকাশ ঘটে উষ্ণবায়ুর মাধ্যমে জমিনকে কাঁপিয়ে। (আখবারুয যালযালাহ পৃ. ৬)
যেহেতু বিজ্ঞানের পরিধি এ জমিনেই সীমাবদ্ধ তাই বিজ্ঞানীগণ কেবল জমিনের ব্যাপারটাই বলতে পেরেছেন। আর ওহীর পরিধি সূদুর আরশ পর্যন্ত। তাই ওহী আমাদেরকে মূলকারণ হিসেবে জানিয়েছে বান্দাদের পাপের ফলে আল্লাহ সুবহানাহুর রাগকে।