20/03/2024
#পর্বঃ১
আমি প্রাইমারি স্কুলে যখন পড়তাম, তিন চাকার খাঁচার মতো দেখতে ভ্যান গাড়ি গুলো তে করে স্কুল যেতাম। আমার স্কুল প্রায় পাঁচ-ছয় কিলোমিটার দূরে ছিলো। নব্বইয়ের দশকে তখন স্কুলে মোটরগাড়ির বদলে ভ্যানরিক্সা সবাই বেশি প্রাধান্য দিতো। মায়ের সাথে অনেকবার হেঁটে বাড়ি ফিরেছি। হাইস্কুলে যখন ভর্তি হলাম, দুই কিমি দূর তো, মফস্বলের ভেতরে, তাই, প্রথমদিন থেকেই হেঁটে যাতায়াত। ক্লাস নাইনে এ যখন, সবাই ক্লাস সিক্স থেকে সাইকেল শিখে শহর দাপিয়ে মেয়ে পটিয়ে বেড়ালেও আমি তখনো বন্ধুদের সাইকেল ঠেলতাম। ক্লাস নাইনের ফাইনাল পরীক্ষা দিয়ে সাইকেল যখন শিখলাম, সকাল-সন্ধ্যা মাঠের মধ্যে সাইকেল নিয়ে চক্কর কাটতাম, আর সাইকেল চালিয়ে ভ্রমণের স্বপ্ন দেখতাম। তখন উত্তেজনায় টানা একঘন্টা ও সাইকেল চালিয়েছি, মাঠের মধ্যে গোল হয়ে ঘুরতাম বলে সবাই খিল্লি করতো। আমি আমার মনেই মাটির এবড়োখেবড়ো রাস্তাকে পাহাড়ের রাস্তা ভেবে তকে জয় করার আনন্দে আত্মহারা হতাম। পরে যখন মাধ্যমিক দিলাম, তার পরের ছুটি তে একা একা সাইকেল নিয়ে ঘুরতে বেরিয়ে পড়তাম। প্রতিদিন অজানা -অচেনা গলি, রাস্তা, খানা-খন্দ পার করতাম আর রোমাঞ্চিত হতাম। কিন্তু বাকিরা ততোদিনে বাইক শিখে নিয়েছে। উচ্চবিত্ত ছেলে কয়েকজন বাইক নিয়ে স্টান্ট দেখানোর পাশাপাশি বাইক নিয়ে রীতিমতো উড়ছে, আর যারা নতুন বাইক শিখেছে , তারাও হাত পাকাতে স্কুটি বা পুরোনো বাইক নিয়ে ঘুরছে। মাধ্যমিক শেষের পরপরই যারা বাইক কে উড়নযান হিসেবে ব্যবহার করতো, তাদের বেশ কয়েকজনের গুরুতর অ্যাক্সিডেন্ট হলো। একজন সহপাঠীর মৃত্যু আর একজন প্রতিবেশীর প্রথমে কোমাচ্ছন্ন, পরে আজন্ম প্রতিবন্ধকতা মনে ভীতির উদ্রেক ঘটালো, সাথে পরিবারের লোকজনদের নিষেধাজ্ঞা বাইকের প্রতি আগ্রহ কমিয়ে দিলো। বন্ধুরা স্কুটি, বাইক নিয়ে ঘুরে বেড়ালেও আমি সাইকেল না ছাড়াতে পেছনেই পড়ে রইলাম, একা একাই ঘুরতাম।
ক্রমশঃ