Bengali Umbrella

  • Home
  • Bengali Umbrella

Bengali Umbrella এক ছাতার তলে দুই বাংলা!

ধর্মের ভিত্তিতে একটা জাতি কে কেটে দু ভাগ করার উদাহরণ মানব সভ্যতার ইতিহাসে আর একটাও নেই।

৪৭ থেকে ২০২১: সময়টা ৭৪ বছর। বাংলা ভাগ হয়েছে, ভাগ হয়ে ভিটেবাড়ি, ভাগ হয়েছে অস্তিত্ব, সর্বস্ব। রেডক্লিফ লাইন ধরে কোটি কোটি মানুষ সব ছেড়ে চলে গেছে, কারণটা ভয় আর আতংক। আজও শৈশবে ফেলে আসা ভিটের কথা চিন্তা করে বিষন্ন বসে থাকেন আপনার ঠাকুর্দা কিংবা আমার নানা ভাই।

বেঙ্গলি আমব্রেলা এমন একটা প্ল্যাটফর্ম যেখানে বাঙালিরা

কাঁটাতারের বেড়া ডিঙিয়ে নিজেদের ইতিহাস, কালচার আর চাওয়া পাওয়ার গল্প করবে, নিজেদের কথা বলবে। এটা কোন পলিটিকাল প্ল্যাটফর্ম নয়। দু দেশের স্বাধীনতা আর সার্বভৌমত্ব'র ব্যাপারে আমাদের অগাধ শ্রদ্ধা ছাড়া কিছুই নেই।

এখনো বাঙালি আসলে এক, এখনো সূরটা অভিন্ন। ফেসবুকে ক্রিকেট বা ধর্ম নিয়ে মিথ্যে গালাগাল দেয়ার পর কমলাপুর বা হাওড়া স্টেশানে যখন দুই বাংলার দুজনের দেখা হয়, তখন কথার আগে বুক এগিয়ে যায়। হাজার বছরের টান ৭৪ বছরে নষ্ট হওয়া সম্ভব না। স্বভাব, জীবন যাপনে, চাওয়া পাওয়ায় এখনো এক ফোঁটা অমিল নাই।

তাই কোন দেশ নয়, বেঙ্গলি আমব্রেলা শুধুই বাঙালিদের জন্য; সে আপনি ঢাকা থাকুন; থাকুন কলকাতায় কিংবা লস এঞ্জেলেস এ।

"বয়স হয়েছে অনেক, কিন্তু যেতে চাই আরেকবার। শুনেছি আমার বাবা ঢাকার রমনা পার্কের দিকে ভোরে হাঁটতে যেতেন। সেখানে শতবর্ষী গাছ...
17/01/2024

"বয়স হয়েছে অনেক, কিন্তু যেতে চাই আরেকবার। শুনেছি আমার বাবা ঢাকার রমনা পার্কের দিকে ভোরে হাঁটতে যেতেন। সেখানে শতবর্ষী গাছ থাকলে বুঝব, বাবা সেটা দেখেছেন। জগন্নাথ কলেজে (বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়) পড়তেন বাবা। সেখানে গিয়ে বসে থাকব। আর ওই যে হলঘরটার কথা বললাম, ওখানে যাব। গতবার এত দ্রুত সব ঘটেছে যে কিছু খুঁজে দেখার আগেই আবার ফিরতে হয়েছে। আমি জানি আমাদের বাড়িটি এখন রাষ্ট্রের। তবু আরেকবার শুধু স্পর্শ করতে বাংলাদেশে যাব।"

রুমা চৌধুরী ৬৯ বছর পর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা থেকে ঢাকায় ছুটে এসেছিলেন নিজের জন্মের ঘরটা একবার দেখতে। কিন্তু আরেক দেশে আসার পথশ্রমের চেয়ে যেন দীর্ঘ হয়েছিল বাড়ির সদর থেকে অন্দরমহলের দূরত্ব। জন্মের সেই ঘরে ঢুকতে অনুমতি নিতে হয়েছিল বর্তমানে সেখানে বসবাস করা কয়েকটি পরিবারের কাছ থেকে। এ ঘটনা পুরান ঢাকার ‘সূত্রাপুর জমিদারবাড়ি’ নামে পরিচিত পুরোনো বাড়িটি ঘিরে।

আরেকবার বাংলাদেশে আসতে চান ৭৪ বছরের রুমা চৌধুরী। কয়েকটি ইচ্ছা পূরণ করা বাকি রয়েছে তাঁর। ঢাকার রমনা পার্কে এক বিকেলে হাঁটবেন, শতবর্ষী কোনো গাছ পেলে সেটির তলায় দাঁড়িয়ে থাকবেন। পুরান ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে ঢুকে কিছুক্ষণ একা বসবেন। রুমার আরেকটি ছোট ইচ্ছা, পুরান ঢাকার সূত্রাপুরের ৩৩ নম্বর মোহিনী মোহন দাস লেনের বাড়িতে যাবেন। সেখানকার হলঘরে একবার দাঁড়াবেন তিনি।

একসময় এই হলঘরে রুমা চৌধুরীর পূর্বপুরুষদের তেলরঙে আঁকা বেশকিছু ছবি ছিল। ছবিগুলো এখনো আছে, নাকি ঘরটাই আর নেই, তা নিশ্চিত জানেন না তিনি। তবু ইচ্ছা করে বলেই প্রথম আলোকে রুমা চৌধুরী বললেন, ‘নিজের জন্মস্থানের সবকিছুই তো মানুষের কাছে স্মৃতিময়। অনেকবার শুনেছি ওই হলঘরের কথা, কিন্তু খুঁজে পাইনি। কেউ তখন নির্দিষ্ট করে বলতে পারল না।’

বিশ শতকের শুরুর দিকে প্রতাপশালী ব্যবসায়ী ও সমাজসংস্কারক রেবতী মোহন দাস তৈরি করেছিলেন বাড়িটি। তাঁর মৃত্যুর পর পরিবারের পরবর্তী প্রজন্মের সদস্যরা থাকতেন এখানে। মূল দরজা দিয়ে প্রবেশ করেই সামনের অংশে দীর্ঘ করিন্থিয়ান কলামের স্থাপনা, যা খুব একটা চোখে পড়ে না ঢাকা শহরে।

প্রশস্ত উঠান আর ৫০ ফুটের মতো দীর্ঘ কলাম নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা এই বাড়ি যেন এক স্মৃতির ভান্ডার। সেই বাড়ির গল্পটা বদলে গেল ১৯৫০ সালে। তখন রেবতী মোহনের পরিবারের দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রজন্মের সদস্যরা বাস করছেন। পরিবারের সবাইকে নিয়ে রেবতী মোহনের বড় ছেলে সত্যেন্দ্র কুমার দাসকে চলে যেতে হয়েছিল ভারতে।

ওই সময় বিশাল এই বাড়ি বিক্রি করা কিংবা হাতবদল করার সুযোগ ছিল না বলে শুনেছিলেন রুমা চোধুরী। এর পর থেকে এই বাড়ি ব্যবহার করা হচ্ছে নানাভাবে। শত্রু সম্পত্তি, অর্পিত সম্পত্তি, এরপর তালিকাভুক্ত প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা হয়েছে। ব্রিটিশ আমলে রায় বাহাদুর খেতাব পাওয়া রেবতী মোহন দাসের সেই বাড়ি এখন এজমালি। ফায়ার সার্ভিসের কার্যালয় এবং তাদের কর্মকর্তা–কর্মচারীদের ৫০টিরও বেশি পরিবারের বসবাস বাড়িটিতে।

রেবতী মোহন দাসের ছেলে রায় বাহাদুর সত্যেন্দ্র কুমার দাস। তাঁরই মেয়ে রুমা চৌধুরী। রুমা জন্মেছিলেন এই বাড়িতে, দোতলার এক ঘরে। সূত্রাপুর জমিদারবাড়ির পেছন দিকে দ্বিতীয় তলায়, দক্ষিণ–পূর্বমুখী ঘর সেটা। এখান থেকে একসময় দেখা যেত ধোলাইখাল। সেই ঘরের জানালায় আছে রঙিন কাচের নকশা। রোদে কাচের নকশার ছায়া পড়ে ঘরের মেঝেতে। সামনে একটু জায়গা নিয়ে টেরাস মতো। আশপাশে তখন গাছপালাঘেরা ছিল। বিকেল হতে না হতে সুনসান হয়ে যেত পথঘাট।

এসব গল্প বয়োজ্যেষ্ঠদের মুখে মুখে শুনেছেন রুমা চৌধুরী। ১৯৫০ সালের ১৮ জানুয়ারি তাঁর জন্ম। জন্মের পর সপ্তাহ তিনেক এই ঘরেই তাঁকে রাখা হয়েছিল। এরপর সব ফেলে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর্ব। কিন্তু চাইলে কি আর মানুষ সব ফেলে যেতে পারে? রেবতী মোহন দাসের পরিবারের মানুষেরা সঙ্গে নিয়ে গেলেন হারানোর কষ্ট আর পূর্ব বাংলার স্মৃতি।

রুমা চৌধুরী বড় হয়েছেন ভারতে, কিন্তু তাঁর কথার মধ্যে ঢাকার আঞ্চলিক টান পাওয়া যায়। জানতে চাইলে বললেন, ‘আমার বাবা (সত্যেন্দ্র কুমার দাস) মারা গিয়েছেন ১৯৬৪ সালে। মা যূথিকা দাসের মুখে শুনতে শুনতে মনে হতো সবই চেনা বাংলাদেশের। তাঁদের কথায় ঢাকার টান ছিল। সেই টান দিয়ে মাঝেমধ্যে কথা বলতে চেষ্টা করে দেখি, আপন লাগে।’

ভারতে পাড়ি জমানোর পর রুমা চৌধুরী প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে আসেন ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে। বর্ণনার স্মৃতি থেকে খুঁজে বের করলেন সেই ঘর। সঙ্গে কলকাতা থেকে এসেছিলেন পরিবারের কয়েক সদস্য। দোতলার বিশাল জানালার সেই ঘরে ঢুকেছিলেন। মিলিয়ে দেখেছিলেন ঠাকুরদার আমলের সেসব নকশা।

ওই সময় দোতলার সেই ঘরে চুপ করে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলেন রুমা চৌধুরী। ওই মুহূর্তে ঠিক কী অনুভূত হচ্ছিল, স্পষ্ট বলতে পারেন না তিনি। প্রথম আলোকে বললেন, ‘মনে হচ্ছিল কেউ হারিয়ে যায়নি জীবন থেকে। সবকিছু আগের মতো আছে। আশ্চর্য ঘটনা কী, তা জানেন, সেদিন আমার জন্মদিন। ৬৯ বছর পর জন্মদিনের দিনই সেই ঘরে এসে দাঁড়ালাম, যে ঘর, যে বাড়ি ছেড়ে আমাদের চলে যেতে হয়েছিল।’

তখন রুমার পাশে ছিলেন স্বামী প্রশান্ত চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আমার জন্ম, বেড়ে ওঠা—সবই কলকাতায়। কিন্তু রুমার ঘটনায় অনুভব করেছিলাম, নিজের জন্মভূমি হারানোর কষ্ট কেমন হয়। আমার শ্বশুরমশাই রায় বাহাদুর সত্যেন্দ্র কুমার দাস কলকাতায় এসে দেশপ্রিয় পার্কের কাছে বসতি করেছিলেন, সেটাও অনেক সংগ্রাম করে। এখনো তাঁদের ঠিকানা ওটাই।’

একসময় ভারত সরকারের সমাজকল্যাণ (সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার) মন্ত্রণালয়ে হিসাবরক্ষক পদে কাজ করতেন প্রশান্ত চৌধুরী। এখন বয়স ৮৩ বছর। তিনি শ্বশুর সত্যেন্দ্র কুমার দাসকে দেখেননি। তবে তাঁকে নিয়ে গর্ব আছে অনেক। প্রথম আলোকে বলেন, ‘একসময় নাকি এই পরিবারের অনেক প্রভাব ছিল ঢাকায়। মানুষের জন্য অনেক ভালো কাজ করতেন শুনেছি। সেই আমলে মিটফোর্ড হাসপাতালে ৫০ হাজার টাকা অনুদান দিয়েছিলেন আমার শ্বশুর। এসব কথা শুনে যেমন ভালো লাগে, আবার অবাকও হই দেশ ছাড়ার ইতিহাস মনে করে।’

রেবতী মোহন দাসের ‘আত্মকথা’ নামে একটি বই রয়েছে। ১৩৪১ বঙ্গাব্দে বইটি প্রকাশিত হয়। এই বইয়ে গত শতকের বিশ ও ত্রিশের দশকের ব্রিটিশ শাসন থেকে শুরু করে ঢাকার সামাজিক–অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কিছু বর্ণনা পাওয়া যায়। ঢাকায় প্রথম মূক ও বধির বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, ঢাকা বিধবাশ্রম, ‘পূর্ব্ববাঙ্গালা ব্রাহ্মসমাজ’ নিয়েও লিখেছেন তিনি।

এই বইয়ে পরিবার নিয়ে লেখা পরিচ্ছেদে রেবতী মোহন দাস লিখেছেন, ‘১৯৩৩ খৃষ্টাব্দে ১লা জানুয়ারী ১৯৩৮ সাল, ১৬ই পৌষ কাগজে দেখিলাম, শ্রীমান সত্যেন্দ্র “রায় বাহাদুর” খেতাবী পাইয়াছে। ১৯২৬ খৃষ্টাব্দে সরকার দয়া করিয়া আমাকেও এই উপাধি দিয়াছিলেন।’ বইয়ে রেবতী মোহন দাস উল্লেখ করেছেন, ‘আমার পুত্রেরা মানুষের সেবা করতে পারছে, এ আমার আনন্দ।’ সত্যেন্দ্র কুমার দাস ছিলেন ঢাকা মিউনিসিপ্যালিটির চেয়ারম্যান ও বেঙ্গল লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের সভ্য।

বাবা রেবতী মোহন দাসের লিখে যাওয়া বইটি ছেলে সত্যেন্দ্র কুমার দাসের সহযোগিতায় প্রকাশিত হয়েছিল। সূত্রাপুরে অবস্থিত তাঁদের সেই বাড়ির সামনের সড়কের নামও রেবতী মোহনের নামে; সংক্ষিপ্তরূপে সেটি আর এম দাস রোড।

রেবতী মোহনের ‘আত্মকথা’ বইয়ে উঠে এসেছে ১৯৩১ সালের ২৫ মে সূত্রাপুর বাজারে তাঁর এক কর্মচারীর ছেলের নিহত হওয়ার ঘটনা। এই ঘটনা ঘিরে দাঙ্গা পরিস্থিতির শুরুর একটি আভাস লিখে গেছেন তিনি।

রুমা চৌধুরী ও তাঁর পরিবারের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হয় এ বছরের ২ ও ৩ জানুয়ারি। এত দিনেও কেন একবার আসেননি জানতে চাইলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওখান থেকে চলে আসার পর এখানে (কলকাতায়) থিতু হওয়ার অনেক সংগ্রাম ছিল। গত শতকের ষাটের দশকে পাসপোর্ট নবায়ন করতেও আমাদের যেতে হতো পেট্রাপোল স্থলবন্দরে। যতবার ওখানে যেতাম, এপাশ থেকে তাকিয়ে বাংলাদেশের স্থলভাগের যতখানি দেখা যায় দেখতাম। কেমন যেন একটা অনুভব। আমার বাবা আর ঠাকুরদার দেশ, আমার জন্মস্থান। যাওয়া হয়নি অনেক কারণে।’

সূত্রাপুরের আর এম দাস রোডের এই বাড়িকে ২০১৮ সালে ফায়ার সার্ভিসের জাদুঘর বানানোর সিদ্ধান্ত নেয় প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর। কথা হয় কবি নজরুল সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী সায়েম আল ফাহাদের সঙ্গে।

২০১৯ সালের ১৮ জানুয়ারি রুমা চৌধুরী যখন বাড়িটিতে আসেন, তখন সেখানে ছিলেন ফাহাদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, রুমা চৌধুরী ওই ঘর খুঁজে পেয়ে প্রায় কেঁদে ফেলেছিলেন। শুনেছি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘আরবান স্টাডি’ নামে একটি গ্রুপে বাড়িটির ছবি পোস্ট করা হয়েছিল। সেটা রুমা চৌধুরীর এক স্বজনের চোখে পড়েছিল। সেই সূত্র থেকে রুমা চৌধুরী খবর পান এবং কলকাতা থেকে চলে আসেন। তবে তিনি একটি হলঘর খুঁজছিলেন। সেটি পাওয়া যায়নি। তখন বাড়ির বয়স্ক এক বাসিন্দা বলছিলেন, দোতলায় এমন একটি ঘর ছিল একসময়। সেসব বহু আগেই বদলে ফেলা হয়েছে।’

পুরোনো স্থাপনা নিয়ে কাজ করে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আরবান স্টাডি। এর প্রধান নির্বাহী তাইমুর ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘রুমা চৌধুরী ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা এসে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। প্রত্নতত্ত্বের তালিকাভুক্ত একটি বাড়িতে দমকল বাহিনীর জাদুঘর বানানোর পরামর্শ মোটেই সঠিক সিদ্ধান্ত নয়। আজ নতুন ঘর, কাল আরেকটা ছাউনি—এসব তৈরি করা হচ্ছে এই স্থাপনার মধ্যে।’ তাইমুর ইসলামের পরামর্শ, সূত্রাপুর জমিদারবাড়িটি সংরক্ষণ করে শিশুদের জন্য সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের জায়গা হিসেবে ব্যবহার করা দরকার।

নতুন বছরের শুরুতে রুমা চৌধুরীর কাছে জানতে চেয়েছিলাম, বাংলাদেশে আবার আসবেন? রুমা চৌধুরী বলেন, ‘বয়স হয়েছে অনেক, কিন্তু যেতে চাই আরেকবার। শুনেছি আমার বাবা ঢাকার রমনা পার্কের দিকে ভোরে হাঁটতে যেতেন। সেখানে শতবর্ষী গাছ থাকলে বুঝব, বাবা সেটা দেখেছেন। জগন্নাথ কলেজে (বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়) পড়তেন বাবা। সেখানে গিয়ে বসে থাকব। আর ওই যে হলঘরটার কথা বললাম, ওখানে যাব। গতবার এত দ্রুত সব ঘটেছে যে কিছু খুঁজে দেখার আগেই আবার ফিরতে হয়েছে।’ রুমা চৌধুরী আরও বলেন, ‘আমি জানি বাড়িটি এখন রাষ্ট্রের। তবু আরেকবার শুধু স্পর্শ করতে বাংলাদেশে যাব।’

সূত্রঃ প্রথম আলো

আহসান মঞ্জিল উত্তর গেট, ১৯৯৫
24/01/2023

আহসান মঞ্জিল উত্তর গেট, ১৯৯৫

দাংগা থামাতে নোয়াখালী তে মোহন দাস করমচাঁদ গান্ধী এসেছিলেন এবং সেখানে তাঁর ছাগল চুরি হয়ে যায়। এই নিয়ে বাংলাদেশে এবং পশ্চি...
05/01/2023

দাংগা থামাতে নোয়াখালী তে মোহন দাস করমচাঁদ গান্ধী এসেছিলেন এবং সেখানে তাঁর ছাগল চুরি হয়ে যায়। এই নিয়ে বাংলাদেশে এবং পশ্চিম বঙ্গে’র যাদের আদি বাড়ি নোয়াখালী, তাঁদের প্রচুর হাসি ঠাট্টার শিকার হতে হয় অহরহ। কিন্তু কেউ হয়ত জানে না, ঐ একটা ছাগল চুরির পেছনে কয়েক হাজার লোকের মৃত্যুর গল্প আছে।

ঘটনার শুরু ১৯৪৬ সালের দশই অক্টোবর। দিনটা ছিল কোজাগরী লক্ষ্মীপূজার দিন। সব দাঙ্গার শুরু হয় একটা গুজব এর মাধ্যমে। এখানেও তার ব্যতিক্রম না।

সেদিন এর গুজবটি ছিল: লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ থানার করপাড়ার জমিদার রাজেন্দ্রলাল চৌধুরীর বাড়িতে ভারত সেবাশ্রম সংঘের এক সন্ন্যাসী এসে উঠেছেন। তার নাম সাধু ত্রিয়াম্বাকানন্দ। তিনি নাকি ঘোষণা করেছেন, পূজার জন্য ছাগবলির বদলে এবার তিনি মুসলমানের রক্ত দিয়ে দেবীকে প্রসন্ন করবেন।

করপাড়া থেকে সামান্য দূরে শ্যামপুর দায়রা শরীফ। গোলাম সারোয়ার হুসেইনী এই পীর বংশের উত্তর পুরুষ। গুজব ছড়িয়ে পড়ার পর তিনি ১০ই অক্টোবর ভোরবেলা চৌকিদার মারফৎ রাজেন্দ্রলাল চৌধুরীর কাছে একটি চিঠি পাঠান এবং বিষয়টি নিয়ে আলোচনার প্রস্তাব দেন।

কিন্তু চৌধুরী সাহেব এতে সাড়া না দিলে গোলাম সারোয়ার হুসেইনী সকালে শাহ্‌পুর বাজারে তার অনুগত ভক্ত এবং মুসলমানদের নিয়ে সমাবেশ ডাকেন। সেখানে তিনি হিন্দু জমিদারকে উৎখাত করার ডাক দেন।

অভিযোগ রয়েছে, ঐ সমাবেশ থেকে তিনি জমিদার ও সাধুর মুন্ডু কেটে আনার নির্দেশ দেন।
এরপরই সহিংসতার আগুন ছড়িয়ে পড়ে সবখানে।

শাহ্‌পুর বাজারের সব হিন্দু ব্যবসায়ীদের দোকানপাট লুঠ করা হয় এবং আগুন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়। রামগঞ্জ এবং দশঘরিয়া বাজার লুঠ হয়। নারায়ণপুরের জমিদার সুরেন বোসের কাছারি বাড়িতে হামলা হয়।

পরের দিন ১১ই অক্টোবর সকাল বেলা করপাড়ার চৌধুরী বাড়িতে হামলা হয়। পরিবারটি প্রথম দিকে বন্দুক ব্যবহার করে হামলাকারীদের ঠেকিয়ে রাখলেও একসময় তাদের গুলি ফুরয়ে যায়।
উত্তেজিত জনতা এসে রাজেন্দ্রলাল চৌধুরীর মাথা কেটে ফেলে। সাধু ত্রিয়াম্বাকানন্দ এর আগেই কোনক্রমে প্রাণ নিয়ে পালিয়ে যান।

রায়পুরের জমিদার চিত্তরঞ্জন রায় চৌধুরী নোয়াখালীতে মুসলমানদের ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক শক্তিকে গোড়া থেকেই মেনে নিতে পারছিলেন না। এ নিয়ে তার সাথে গোলাম সারোয়ার হুসেইনীর দ্বন্দ্ব বেশ পুরোনো।

যেহেতু রায় চৌধুরী বাবু কংগ্রেসের সাথে যুক্ত ছিলেন, তাই হুসেইনী সাহেব কংগ্রেসের বিভিন্ন নেতা এমনকি মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর কাছেও চিঠি পাঠিয়ে জমিদারের অত্যাচারের কথা জানান এবং তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করেন।

কিন্তু কোন সাড়া না পেয়ে তিনি নিজেই চিত্তরঞ্জন রায় চৌধুরীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধের ডাক দেন।

তার অধীন আধাসামরিক বাহিনী 'মিয়ার ফৌজ' এবং এক সহযোগীর অধীন 'কাশেম ফৌজ' এর সদস্যরা রায়পুরের জমিদার বাড়ি অবরোধ করে। এ নিয়ে শুরু হয় সংঘর্ষ, যার পরিণামে তিনি রায় চৌধুরী তার পরিবারের সদস্যদের হত্যা করে নিজেও আত্মহত্যা করেন।

এসব ঘটনার কথা ছড়িয়ে পড়লে নোয়াখালী জেলার রায়পুর, রামগঞ্জ, বেগমগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর, ছাগলনাইয়া এবং পার্শ্ববর্তী ত্রিপুরা (বৃহত্তর কুমিল্লা) জেলার চাঁদপুর, চৌদ্দগ্রাম, হাজীগঞ্জ, ফরিদগঞ্জ এবং লাকসাম থানার বিশাল এলাকাজুড়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।

ধারণা করা হয়, এসময় ঐ অঞ্চলের পাঁচ হাজারেরও বেশি হিন্দু প্রাণ হারান।

ইতিহাসবিদরা মূলত তিনটি কারণে নোয়াখালীর হত্যাযজ্ঞকে ভারতের অন্যান্য জায়গার হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গার সাথে তুলনা করতে চান না।

👉🏽 প্রথমত, এখানে দুই পক্ষের শক্তি সমান ছিল না, যেমনটি দেখা গিয়েছিল কলকাতা দাঙ্গার সময়। এখানে মূলত হিন্দু জনগোষ্ঠী হামলার শিকার হন।

👉🏽 দ্বিতীয়ত, ঐ হত্যাযজ্ঞের সময় এবং পরে বহু হিন্দু নারীকে ধর্ষণ করা হয়।

👉🏽 তৃতীয়ত, হাজার হাজার হিন্দু নারী-পুরুষদের জোর করে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করা হয়। যাদের জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করা হয়েছিল তাদের কাছ থেকে লিখিয়ে নেয়া হয়েছিল যে তারা স্বেচ্ছায় ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন।

কিন্তু যাকে কেন্দ্র করে এসব ঘটনা ঘটছিল সেই গোলাম সারোয়ার হুসেইনীর একটি রাজনৈতিক পরিচয়ও ছিল। গদ্দিনশীন পীর ছাড়াও তিনি ছিলেন নোয়াখালী কৃষক সমিতির অত্যন্ত প্রভাবশালী নেতা। কৃষকের খাজনা মওকুফ, ঋণ সালিশি বোর্ড থেকে সুদখোর ব্যবসায়ীদের উৎখাত করা এবং জমিদারি বাজার বয়কট করার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে তিনি তৎকালীন নোয়াখালীর ক্ষমতাধর হিন্দু জমিদার এবং মহাজনদের চক্ষুশূল হয়েছিলেন।

১৯৩৭ সালে রামপুর ও রায়গঞ্জ নির্বাচনী এলাকার কৃষক প্রজা পার্টির টিকেটে নির্বাচন করে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে ১২,০০০ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন এবং বঙ্গীয় আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। অবশ্য পরে ১৯৪৬ সালের নির্বাচনে তিনি মুসলিম লীগ প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন।

কিন্তু তার কৃষকপন্থী নীতির কারণে তিনি কখনই নোয়াখালীর 'হিন্দু ভদ্রলোকদের' কাছের মানুষ হতে পারেননি। যার পরিণতিতে কংগ্রেস তার ব্যাপারে প্রথমদিকে আগ্রহী হলেও পরে আর তাকে দলে টানতে পারেনি।

বলা যায়, নোয়াখালীর মুসলমান কৃষকের দলে টানার প্রচেষ্টা মূলত তিনি নস্যাৎ করে দেন এবং এককভাবে নোয়াখালীর গ্রামীণ সমাজের ক্ষমতার বিরোধকে 'হিন্দু-মুসলমান ইস্যুতে' পরিণত করেন।

নোয়াখালী দাঙ্গার চার সপ্তাহের মধ্যে হাজার হাজার হিন্দু ঘরবাড়ী হারিয়ে কুমিল্লা, চাঁদপুর, আগরতলা ও অন্যান্য জায়গার অস্থায়ী আশ্রয় শিবিরে আশ্রয় নিতে শুরু করেন। এই পটভূমিতে মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী নোয়াখালীতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

গবেষকরা বলছেন, নোয়াখালীতে গিয়ে কী করতে চান কিংবা কী হবে তার কৌশল -- যাত্রার আগে, এমনকি যাত্রার সময়ও গান্ধী সে সম্পর্কে সন্দিহান ছিলেন। তিনি শুধু এটুকু বুঝতে পেরেছিলেন যে তার সেখানে যাওয়া দরকার। পরিস্থিতির জটিলতা অনুধাবন করে তার সফরের এক পর্যায়ে তিনি তার সেক্রেটারি নির্মল কুমার বোসকে বলেছিলেন, তাকে হয়তো নোয়াখালীতে বহু বছর থাকতে হবে।

মহাত্মা গান্ধী নোয়াখালীর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন ৬ই নভেম্বর। পরদিন চৌমুহনীতে যোগেন্দ্র মজুমদারের বাড়িতে দুই রাত কাটিয়ে ৯ই নভেম্বর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি তার শান্তির লক্ষ্যে পদযাত্রা শুরু করেন।

এর পরের দিনগুলোতে তিনি খালি পায়ে মোট ১১৬ মাইল হেঁটে প্রায় ৪৭ টি দাঙ্গায় ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাম পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি নিয়মিত প্রার্থনা সভা পরিচালনা ছাড়াও স্থানীয় মুসলমানদের সাথে বৈঠক করে হিন্দুদের আস্থা পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করেন। এসব বৈঠকে তাঁর সাথে থাকতেন মুসলিম লীগের হুসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এবং তরুণ নেতা শেখ মুজিবর রহমান।

নোয়াখালীতে এসেই মহাত্মা গান্ধী গোলাম সারোয়ার হুসেইনীর সাথেও দেখা করতে চান। হুসেইনী সাহেব ততদিনে গান্ধীর ওপর সম্পূর্ণভাবে আস্থা হারিয়ে ফেলেছিলেন। তাই তিনি প্রথম দিকে সাক্ষাতে রাজী হন নি।

পরে গান্ধী’র আহ্বানে চাটখিলে দুজনের মধ্যে বৈঠক হয়। বৈঠকে তিনি গান্ধীকে বলেন যে, দাঙ্গার সূত্রপাত নোয়াখালীতে নয়। কলকাতা ও বিহারে যখন দাঙ্গা থেমে যাবে তখন নোয়াখালীতেও হানাহানি বন্ধ হবে।

আর এই বৈঠকেই ঘটে মহাত্মা গান্ধী’র ছাগল নিয়ে সেই ঐতিহাসিক ঘটনাটি। মহাত্মা গান্ধী ছাগলের দুধ পান করতেন। তাই তিনি সাথে করে একটি ছাগল এনেছিলেন। কিন্তু চাটখিলের বৈঠকের আগে কাশেম ফৌজের লোকজন ছাগলটি গোপনে সরিয়ে ফেলে।

চাটখিলে হুসাইনী সাহেবের সাথে ঐ বৈঠকে সেই ছাগলের মাংস রান্না করে নিরামিষাশী গান্ধীর সামনে পরিবেশন করা হয়। এর মাধ্যমে হুসেইনী রাজনৈতিক একটি বার্তা দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন।

তবে নোয়াখালীতে হিন্দু-মুসলিমে সম্পর্কের মধ্যে যে পারষ্পরিক ঘৃণা ও অবিশ্বাসের দেয়াল তৈরি হয়েছিল গান্ধীর মতো ক্ষমতাধর রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বও তা ভেঙে ফেলতে ব্যর্থ হন বলেই গবেষকরা বলেন। ইতোমধ্যে নোয়াখালীর ঘটনার জের ধরে বিহারে শুরু হয় দাঙ্গা। এতে প্রচুর মুসলমান প্রাণ হারাতে শুরু করলে মুসলিম লীগ নেতারা তাকে বিহারে যেতে অনুরোধ করে।

ভগ্নহৃদয়ে নোয়াখালী শান্তি মিশন অসমাপ্ত রেখেই গান্ধী ১৯৪৭ সালের ২রা মার্চ বিহারের উদ্দেশ্যে রওনা দেন।
নোয়াখালী সফরের একমাস পর যখন তাকে জানানো হয় যে সেখানে তখনও সহিংসতা চলছে, তখন গান্ধী পরিতাপের সাথে মন্তব্য করেছিলেন,

“নোয়াখালীর অবস্থা এমনই দুর্বিষহ যে হিন্দুদের হয় নোয়াখালী ছাড়তে হবে, নয়তো ধ্বংস হয়ে যেতে হবে।”

📌 তথ্যসূত্র: BBC, বাঙলা ভাগ হলো - জয়া চ্যাটার্জী; Communalism, the Noakhali Riot and Gandhi - Rakesh Batabyal; 1946: The Great Calcutta Killings and Noakhali Genocide - Dinesh Chandra Sinha: Ashok Dasgupta; Noakhali's Darkest Hour - Andrew Whitehead; Syed Ghulam Jamaluddin Baker Husseini

14/08/2022

দেশবিভাগ 👣

তর্ক সাপেক্ষে উপমহাদেশের সর্বকালের সেরা অভিনেতা বরিশালের ছেলে উৎপল দত্তের আজ জন্মদিন। শুভ জন্মদিন।
29/03/2022

তর্ক সাপেক্ষে উপমহাদেশের সর্বকালের সেরা অভিনেতা বরিশালের ছেলে উৎপল দত্তের আজ জন্মদিন। শুভ জন্মদিন।

বঙ্গবন্ধু কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে ডিগ্রি পড়ার সময় এই বেকার হোস্টেলে ছিলেন ১৯৪২ থেকে ৪৭ সাল পর্যন্ত। উচ্চমাধ্যমিক পাস করে ...
17/03/2022

বঙ্গবন্ধু কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে ডিগ্রি পড়ার সময় এই বেকার হোস্টেলে ছিলেন ১৯৪২ থেকে ৪৭ সাল পর্যন্ত। উচ্চমাধ্যমিক পাস করে তিনি ১৯৪২ সালে ভর্তি হয়েছিলেন এ কলেজে। ছিলেন ২৪ নম্বর কক্ষে।

১৯১০ সালে কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত হয় এই বেকার হোস্টেল। এটি সরকারি ছাত্রাবাস। ইসলামিয়া কলেজের নাম পরিবর্তন করে এখন নামকরণ করা হয়েছে মৌলানা আজাদ কলেজ। ১৯৪৬ সালে বঙ্গবন্ধু ইসলামিয়া কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক হন। ১৯৪৭ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন এই ইসলামিয়া কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ইতিহাসে স্নাতক হয়েছিলেন।

১৯৯৮ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উদ্যোগে বেকার হোস্টেলের ২৩ ও ২৪ নম্বর কক্ষ নিয়ে গড়া হয় বঙ্গবন্ধু স্মৃতি কক্ষ। এই স্মৃতি কক্ষে এখনো রয়েছে বঙ্গবন্ধুর ব্যবহৃত খাট, চেয়ার, টেবিল এবং আলমারি।

ইলা মজুমদারের জন্ম ১৯৩০ সালের ২৪শে জুলাই বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার মাদারীপুর গ্রামে। পিতা যতীন্দ্র কুমার মজুমদার ছিলেন ডে...
16/03/2022

ইলা মজুমদারের জন্ম ১৯৩০ সালের ২৪শে জুলাই বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার মাদারীপুর গ্রামে। পিতা যতীন্দ্র কুমার মজুমদার ছিলেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। মা ছিলেন গৃহবধূ । যতীন্দ্রবাবু ছোট থেকেই মেয়েকে মুক্ত পরিবেশে বড় করে তোলেন। ১২ বছর বয়সেই ইলা সাইকেল চালাতে পারত। মাত্র ১৬ বছর বয়সে শিখেছিলেন জিপ চালানো। খুলনায় তিনি নবম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। এরপর ১৯৪৫ সালে ইলাদের পুরো পরিবার কলকাতায় চলে আসে।

১৯৪৭ সাল। ভারত ভাগ হয়েছে। ইঞ্জিনিয়ারিং এ পুরুষদের একচ্ছত্র আধিপত্য। পশ্চিমবাংলার বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ তখন ইঞ্জিনিয়ারিং এর অন্যতম পীঠস্থান। ১৯৪৭ সালেই পশ্চিমবাংলার তৎকালীন বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ দরজা খুলে দিল মহিলাদের জন্যে। প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেন দুইজন ছাত্রী। ভর্তি হলেন দুজনেই। কিন্তু একজন দ্বিতীয় বর্ষেই কলেজ ছাড়লেন।

রইলেন একজন ছাত্রী। প্রচন্ড শারীরিক পরিশ্রম দরকার বলে অধ্যক্ষ তাকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে নিষেধ করেন। শেষে ইলা ভর্তি হন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে।

১৯৫১ সালে তিনি মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। তিনিই ছিলেন বাংলার প্রথম মহিলা ইঞ্জিনিয়ার। গোটা ব্যাচে তিনিই ছিলেন একমাত্র ছাত্রী। বাকি সকলেই ছিলেন ছাত্র।

প্রথম প্রথম মানিয়ে নিতে অসুবিধা হলেও ধীরে ধীরে ছাত্রদের সাথে বন্ধুত্ব হয়ে যায় তার। তখন ছাত্রীদের জন্যে আলাদা হোস্টেল ছিল না তাই ইলা মজুমদার থাকতেন লাইব্রেরির বাম প্রান্তের একটি ঘরে। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিভাগীয় প্রধান পুলিন বিহারী ঘোষ এই সময় তার পাশে দাঁড়ান। কলেজে তিনিই ছিলেন ইলার অভিভাবক।

১৯৫১ সালে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক হলেন ইলা। তারপর ট্রেনিং করতে যান গ্লাসগো। ট্রেনিং শেষে ভারতে ফিরে এসে দেরাদুনের অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরিতে কাজে যোগ দেন। তিনি ভারতের প্রথম মহিলা যিনি ভারী যন্ত্রাংশ তৈরীর কারখানায় কাজ করেছেন। সেই সময় ইলা থাকতেন স্টাফ কোয়ার্টারে। ছয় মাস চাকরি করার পর দিল্লি পলিটেকনিক কলেজে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। এরপর কলকাতার ইনস্টিটিউট অফ জুট টেকনোলজিতে লেকচারার ছিলেন তিনি।

কলকাতার প্রথম মহিলা পলিটেকনিক কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তিনি। ইলা মজুমদার ই ছিলেন ঐ কলেজের প্রথম প্রিন্সিপাল। তার কর্মকান্ডে মুগ্ধ হয়ে ১৯৮৫ তে জাতিসংঘের তরফ থেকে তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয় ঢাকা শহরে একটি মহিলা পলিটেকনিক কলেজ খোলার। সেই সময় পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁকে ছাড়তে রাজি ছিল না। কিন্তু মাতৃভূমির টান তিনি ফেরাতে পারেন নি। ঢাকা এসে সাফল্যের সঙ্গেই কলেজ প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব সম্পন্ন করেন।

দুই বই মেলায় বই বিক্রি করছেন দুই বই ফেরিওয়ালা। প্রথম ছবিটি কলকাতা বই মেলার। দশ টাকায় নিজের লেখা হাসির নাটক বিক্রি করছেন ...
10/03/2022

দুই বই মেলায় বই বিক্রি করছেন দুই বই ফেরিওয়ালা।

প্রথম ছবিটি কলকাতা বই মেলার। দশ টাকায় নিজের লেখা হাসির নাটক বিক্রি করছেন এই লেখক।

দ্বিতীয় ছবিটি ঢাকা বই মেলার। মেলায় ঘুরে ঘুরে বই বিক্রি করেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী জুঁই। ‘প্রজাপতির খেলা’, ‘শিশুদের ছড়া ও কবিতা’, ‘সুখ’ এবং ‘বাংলাদেশের মহান স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমান’ নামে চারটি বই ফেরি করে বিক্রি করছেন তিনি। লেখালেখি করেন আর পাশাপাশি একটি চিকিৎসাকেন্দ্র পরিচালনা করেন তিনি।

১৬৩৮ সালে বেদেরা আরাকান রাজ বল্লাল রাজার সাথে এ দেশে আসার পর বিক্রমপুরে প্রথম বসতি গড়ে তোলে। পরে সেখান থেকে ছড়িয়ে পড়ে বা...
07/03/2022

১৬৩৮ সালে বেদেরা আরাকান রাজ বল্লাল রাজার সাথে এ দেশে আসার পর বিক্রমপুরে প্রথম বসতি গড়ে তোলে। পরে সেখান থেকে ছড়িয়ে পড়ে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও আসামে। বাংলাদেশের বগুড়া, পাবনা, ময়মনসিংহ, বাখরগঞ্জ, নোয়াখালিতে বেদে সম্প্রদায়ের মানুষদের পাওয়া যায়। সাভার, মুন্সীগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, গাজীপুরের জয়দেবপুর, চট্টগ্রামের হাটহাজারী, মিরসরাই, তিনটুরী, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম, চান্দিনা, এনায়েতগঞ্জ, ফেনীর সোনাগাজী ও উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় বেদেদের আবাসের কথাও জানা যায়।

দিন বদলের সাথে বেদেদের কাজেও আসছে পরিবর্তন। চুড়ি-ফিতা, খেলনা বিক্রি, ছোটখাট ব্যবসা এসবে জড়িয়ে পড়ছে অনেকে। আবার অনেকের বিরুদ্ধেই রয়েছে মাদক ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ততার অভিযোগ। বেদেদের বিরুদ্ধে চিকিৎসার নামে প্রতারণার অভিযোগ পাওয়া যায় প্রায়ই। বর্তমানে শহরের রাস্তাতেও এদের দেখা যায় মানুষকে বিব্রত করে টাকা তুলতে।

"সত্যজিৎ কখনো এখানে থাকতে আসেন নি"
06/03/2022

"সত্যজিৎ কখনো এখানে থাকতে আসেন নি"

"বাহাত্তরের একুশে ফেব্রুয়ারিতে ওরা আমাকে, সত্যজিৎ বাবুকে এবং আরো কয়েকজনকে state guest করে নিয়ে গিয়েছিল ঢাকায়। প্লেনে করে...
05/03/2022

"বাহাত্তরের একুশে ফেব্রুয়ারিতে ওরা আমাকে, সত্যজিৎ বাবুকে এবং আরো কয়েকজনকে state guest করে নিয়ে গিয়েছিল ঢাকায়। প্লেনে করে যাচ্ছিলাম, পাশে সত্যজিৎ বাবু বসে, যখন পদ্মা cross করছি, তখন হাউমাউ করে কেঁদে ফেললাম।"

-- ঋত্বিক ঘটক

বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর ১৯৭২ সালে সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটক এবং আরো বেশ কয়েকজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বকে ঢাকায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। সেই স্মৃতিচারণই করছিলেন ঋত্বিক ঘটক। ঋত্বিক ঘটককে পরিচয় করে দেয়ার ধৃষ্টতা আমরা করব না, সেই উদ্দেশ্যও না এই পোস্টের। আজকে শোনাবো একটা সাইকেল গ্যারেজ তৈরির জন্য কিভাবে ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ সিনেমা নির্মাতার বাড়ি ভেঙে ফেলতে বসেছিল একটি মেডিকেল কলেজ।

ঘটনা ২০১৯ এর ডিসেম্বরের। ঘটনার মূল হোতা রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ। কলেজ কর্তৃপক্ষ সাইকেল গ্যারেজ তৈরির জন্য বাড়ির একটি অংশের পুরোটা ভেঙে ইট, সিমেন্ট ও সুরকি সরিয়ে ফেলে। এরপর টনক নড়ে প্রশাসনের।

ঋত্বিক ঘটক জীবনের শুরুর সময়টা কাটিয়েছেন পৈতৃক বাড়ি রাজশাহীতে। এই বাড়িতে থাকার সময় তিনি রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল ও রাজশাহী কলেজে পড়েছেন। রাজশাহী কলেজ এবং মিঞাপাড়ার সাধারণ গ্রন্থাগার মাঠে প্রখ্যাত সাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে নাট্যচর্চা করেছেন। ওই সময় ‘অভিধারা’ নামে সাহিত্যের কাগজ সম্পাদনা করেছেন ঋত্বিক। তাঁকে ঘিরেই তখন রাজশাহীতে সাহিত্য ও নাট্য আন্দোলন বেগবান হয়। এই বাড়িতে থেকেছেন ঋত্বিক ঘটকের ভাইঝি বরেণ্য কথাসাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবী। এই বাড়ির ৩৪ শতাংশ জমি ১৯৮৯ সালে এরশাদ সরকার রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজকে ইজারা দেয়।

ঘটক পরিবারের আদি বাড়ি ছিল পদ্মার উত্তর তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা পাবনায় ভাঙ্গুরা গ্রামে। কিন্তু ঋত্বিকের জন্মের অনেক আগে ঘটক পরিবারের মূল ভিটে বাড়ি পদ্মার গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। ফলে ১৯৩৩ সালে ঋত্বিক ঘটকের বাবা চাকুরী থেকে অবসর নেয়ার পর পরিবারটি রাজশাহীতে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। উল্লেখ্য, ঋত্বিক ঘটকের মাতামহ শ্রী মহেশ্বর ভট্টাচার্য ছিলেন রাজশাহীর একজন নামকরা আইনজীবী। রাজশাহীতে স্থায়ীভাবে থাকার জন্য বাড়ি করতে চাইলে মহেশ্বর ভট্টাচার্য নিজ কন্যা ইন্দুবালা দেবী ও জামাইকে শহরের মিয়াপাড়ার নিজের জমি বিনামূল্যে দিতে চেয়েছিলেন।

কিন্তু ঋত্বিক ঘটকের পিতা সুরেশ চন্দ্র ঘটক শ্বশুরের জমি দানসূত্রে না নিয়ে কিনে নেন এবং জমির মালিকানায় স্বামী-স্ত্রী দুজনেরই নাম রাখেন। মায়ের জন্ম শহরে বাবা নতুন বাড়ি তৈরি করার পর মূলত এ শহরটিই হয়ে ওঠে ঘটক পরিবারের স্থায়ী আবাসস্থল। ১৯৪৭ সালের ভারত বিভাগের পূর্ব পর্যন্ত বিক্ষিপ্তভাবে ঋত্বিক ঘটক কখনো কানপুর আবার কখনো কলকাতায় কাটালেও মূলত সেই সময়ে তাঁর সিংহভাগ সময়ই কাটে এই শহরে।

সেই সাথে বাড়ির ঠিক পাশেই ছিল পদ্মা। পদ্মা নদীর সাথে তাঁর এক আজন্ম সখ্যতা গড়ে ওঠেছিল। বিকেলে সুযোগ পেলেই জমজ বোন প্রতীতি দেবীর সাথে পদ্মার চরে দাপাদাপি করা ছাড়াও অনেক সময়ই তিনি রাতে বাড়ি থেকে উধাও হয়ে যেতেন। অনেক খোঁজাখুজির পরে তাকে প্রায়ই দেখা যেত রাতের অন্ধকারে পদ্মার পাড়ে মগ্ন হয়ে বাঁশি বাজাতে।

রাজশাহী শহরের পদ্মা পাড়ের নব্বই ঊর্ধ্ব কাউকে জিজ্ঞেস করলে এখনো জানা যায় যুবক ঋত্বিক যে করুণ সুরে বাঁশি বাজাতেন তা অনেকের হৃদয়ই বিদীর্ণ করে দিত। ঋত্বিক যখন এমন মগ্ন হয়ে বাঁশি বাজিয়ে চলতেন তখনই দিল্লী লাহোরের রাজনৈতিক নেতাদের চলছিলো দেশ ভাগের পরিকল্পনা।

ফিরে আসি ২০১৯ এ। রাজশাহীতে ক্রিয়াশীল ঋত্বিক ঘটক চলচ্চিত্র সংসদ, রাজশাহী চলচ্চিত্র সংসদ ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদ এই বাড়িটিকে উদ্ধার ও সংরক্ষণের দাবিতে ২০১৬ সালেই সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে। কিন্তু তখন কোন প্রতিকার হয়নি।

পরবর্তীতে ব্যপক প্রতিবাদ শুরু হলে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ সেই বাড়ি পরিদর্শন করেন। বাড়িটি রক্ষায় প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের মহাপরিচালকের সঙ্গে আলোচনা করা হয় এবং আইন অনুযায়ী বাড়িটি রক্ষায় ব্যবস্থা নেয়া হয়।

দেশভাগ ঋত্বিক ঘটক কখনোই মানতে পারেন নাই। তাঁর সব সিনেমাই এর প্রমাণ। ১৯৭২ সালের পর ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য বেশ কয়েকবার তিনি বাংলাদেশে আসেন। কিন্তু তিনি রাজশাহীতে আসেননি।

একজন পাসপোর্টধারী বিদেশী হয়ে তিনি তাঁর নিজের বাড়ির উঠোনে এসে দাঁড়াতে চাননি।

দেশভাগের সময় বাপ্পী লাহিড়ি'র বাবা অপরেশ লাহিড়ী সব ছেড়ে ভারতে চলে যান। এর ৫ বছর পর অলকেশ লাহিড়ী'র জন্ম। অলকেশের ডাক নাম ব...
17/02/2022

দেশভাগের সময় বাপ্পী লাহিড়ি'র বাবা অপরেশ লাহিড়ী সব ছেড়ে ভারতে চলে যান।

এর ৫ বছর পর অলকেশ লাহিড়ী'র জন্ম। অলকেশের ডাক নাম বাপ্পী। অনেক পরে নিজের ভিটে দেখতে একবার ফিরে এসেছিলেন সিরাজগঞ্জের লাহিড়ী মোহনপুরে। আজন্ম বুকে শিশুকে ধারণ করা ডিস্কো কিং ভিটেতে ফিরে একদম শিশু হয়ে যান। পুরোটা দিন ধানক্ষেতে ঘুরে, খড়ে আগুন দিয়ে বাচ্চাদের মত দুস্টামি করে কাটান।

প্রথাগত জমিদারদের একদম উল্টো লাহিড়ী পরিবার। আজও লাহিড়ী মোহনপুরের সবাই তাঁদের অবদান শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে। বাপ্পী লাহিড়ীর পিতামহ বিংশ শতকের শুরুতে তৎকালীন পাবনা জেলার দ্বিতীয় গার্লস স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি জমিদার থাকার সময় মোট চারটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। লাহিড়ী মোহনপুর হাই স্কুল, সরকারী প্রাইমারি স্কুল, গার্লস স্কুল সব ই লাহিড়ী পরিবারের হাত দিয়ে তৈরি।

একদম ভাঙ্গাচোড়া একটা ঘর এখনো আছে লাহিড়ীদের ভিটে হিসেবে। ১৯৪৭ সাল থেকে এখনো সেই ঘর দখল হয় নাই। সেখানে এখন কেউ থাকে না।

পশ্চিম বাংলার নদিয়ার ছেলে জয়কান্ত চন্দ্র রায় এর বয়স ২৪ বছর। আর অস্টাদশী যুবতী সাগরিকার বাড়ি বাংলাদেশের নড়াইলে। সোশ্যাল...
14/02/2022

পশ্চিম বাংলার নদিয়ার ছেলে জয়কান্ত চন্দ্র রায় এর বয়স ২৪ বছর। আর অস্টাদশী যুবতী সাগরিকার বাড়ি বাংলাদেশের নড়াইলে। সোশ্যাল মিডিয়ায় দু'জনের আলাপ-পরিচয়-বন্ধুত্ব থেকে প্রেম এবং পরিণয়। একসময় এই প্রেমের পরিণয় কিভাবে সম্ভব, সেই পথ খুঁজতে থাকে দুজনই। জয়কান্তের বৈধ পাসপোর্ট-ভিসা ছিল না। আর সাগরিকা তো কাঁটাতারের ঐ পাশে থাকা কোন ছেলের সাথে ঘর বাঁধার কথাই কল্পনা করেন নি কখনো। কিন্তু ভালোবাসার কাছে এসব বাঁধা পড়ে যায়। দু’জনে ঠিক করেন বিয়ে করবেন।

বিয়ে করবেন বলে জয়কান্ত বৈধ পাসপোর্ট-ভিসা ছাড়াই বাংলাদেশে যাওয়ার ঝুঁকি নেন। এক দালালকে ধরে অবৈধ পথে ২০২১ সালের ৮ মার্চ বাংলাদেশে চলে যান। বাংলাদেশ তখন বিয়ের প্রস্তুতি প্রায় নেওয়া হয়ে গেছে। ঠিক দু’দিন পর, ১০ মার্চ সামাজিক মতে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর নববধূকে নিয়ে ২৫ জুন পর্যন্ত বাংলাদেশেই ছিলেন জয়কান্ত।

এরপর স্ত্রীকে নিয়ে একইভাবে অবৈধ পথে ভারতে আসার জন্য রাজু মণ্ডল নামে এক বাংলাদেশি দালালকে তিনি ১০ হাজার টাকা দেন। প্রায় চলেও এসেছিলেন ভারতে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।

ভারত-বাংলাদেশের মধুপুর সীমান্তবর্তী এলাকায় এক সন্ধ্যায় অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করার সময় ওই নবদম্পতি বি এস এফ এর কাছে গ্রেপ্তার হন। বেআইনি অনুপ্রবেশ, বৈধ পাসপোর্ট ভিসা ছাড়া বাংলাদেশে যাওয়ার অভিযোগ-সহ একাধিক আইনে ভারতীয় নাগরিক জয়কান্ত এবং বাংলাদেশি নাগরিক সাগরিকার বিচার শুরু হয়।

তাঁরা গ্রপ্তার হবার পর আজ প্রথম বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। দুই বাংলার এই দম্পতির এখন কি অবস্থা আমরা জানতে পারি নাই।

এই ছবির কোন শব্দ দরকার নাই।
07/02/2022

এই ছবির কোন শব্দ দরকার নাই।

"আরে ভাই, বৃষ্টি পড়ে টাপুর টাপুর ছড়াই তো আর লেখা হবে না পুকুর না থাকলে। নতুন ছেলেমেয়েরা বৃষ্টিকে কেবল ঝামেলা ভাববে। তাই ...
02/02/2022

"আরে ভাই, বৃষ্টি পড়ে টাপুর টাপুর ছড়াই তো আর লেখা হবে না পুকুর না থাকলে। নতুন ছেলেমেয়েরা বৃষ্টিকে কেবল ঝামেলা ভাববে। তাই কিছু পুকুর রাখা দরকার।"

মাত্র তিরিশটি পুকুর টিকে আছে এখন ঢাকায়।

'৩০০টি পুকুর ছিল ঢাকায়। খাল ছিল ১০০টির বেশি। নদী ছিল চারটি – বৃদ্ধাগাঙ্গিনী বা বুড়িগঙ্গা, নড়াই, বালু নদী আর পাণ্ডুনদী। ৭৫০ সাল মানে পাল আমলে এগুলো সবই ছিল ঢাকায়। ৪১০ বছর ছিল বুদ্ধিস্ট আমল। তারপর সেনরা রাজত্ব করেছে ৬৯ বছর। তবে তারা কোনো পূর্তকাজ মানে উন্নয়ন কাজে সময় দিতে পারেনি। ক্ষমতা সংহত করতেই গেছে তাদের সময়।

তারপর শুরু হয় সুলতানি আমল, পাঠান যুগ হয়ে পৌঁছাই মোগল আমলে। ব্রিটিশ আমলেও কিন্তু পুকুর বা খাল ভরাট নিষিদ্ধ ছিল। বিশেষ করে প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ভীষণই কড়াকড়ি ছিল। কারণ আগুণ নেভানোর উৎস তো ছিল ওগুলোই।

এখনকার ঢাকাকে দেড়-দুইশ বছর আগে বসিয়ে দিন, পুকুর আর খালের ধারে উঁচুউঁচু সব ভবন, ভাবতেই অবাক লাগবে। দেখুন উন্নত দেশগুলোর লোকেরা ওয়াটারফ্রন্ট গড়ে শহরের ইতিউতি। কেবল সৌন্দর্যের জন্য নয়, শহর রক্ষার জন্যও প্রয়োজন। আর আমরা পুকুর ভরে ইট-পাথরের জঙ্গল গড়েছি। ঢাকাই বসতির ইতিহাস হাজার হাজার বছরের। সুপেয় জলের সহজলভ্যতাই ছিল এর কারণ।

ঢাকার মাটিতে পানি বিশুদ্ধিকরণ রাসায়নিক যেমন পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়ামের প্রাচুর্য আছে। তাই ঢাকায় বসতি নেবে মানুষ- ভাবা কঠিন না। জানেন তো মসলিনের জন্য টলটলে সুন্দর পানি দরকার। অনেকের স্মৃতিচারণাতেই পাবেন, ধোয়ার পর মসলিন হয়ে গেল ধপধপে। এছাড়া দেখুন, ঢাবাকা থেকে ঢাকার নামকরণ (ঢাক, ডঙ্কা ইত্যাদি জনশ্রুতি)। ঢাকায় ছিল টিলা আর গজারি মানে শালের বন। ১০-১২ ফুট খুঁড়ে দেখুন ঠিকই পাল আমলের অজস্র স্মৃতিচিহ্ন পাবেন", কথাগুলো বলছিলেন হাশেম সুফী।

রায়সাহেব বাজারের স্টার হোটেলে প্রতিদিন তিনবেলা খান হাশেম সুফী। বয়স তার পঁচাত্তর। তিনি পড়েছেন বিজ্ঞান, করেছেন প্রশাসনিক দপ্তরে চাকরি, নির্মাণ করেছেন চলচ্চিত্র। তবে তার ধ্যানজ্ঞান ঢাকা। ঢাকার ইতিহাস চর্চা কেন্দ্রের তিনি প্রধান নির্বাহী। ১৯৯৩ সালে তার বইয়ের (হাকীম হাবিবুর রহমান-পাচাস বারাস পাহলে, টীকা ও মতামতসহ তর্জমা) ভূমিকা লিখেছিলেন জাতীয় অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক। আব্দুর রাজ্জাক লেখেন, 'তিনি (হাশেম সুফী) সত্যসন্ধানী। আপাত সাধারণ বিষয়েও তিনি মনোযোগী এবং সেগুলোর ভুল সংশোধনে আন্তরিক। আশা করি আগামীতেও তিনি এ ব্যাপারে ধারাবাহিক থাকবেন।'

হৃদযন্ত্রের কিছু গড়বড় ব্যতিরেকে পঁচাত্তর বছর বয়সেও সুফী সাহেব সক্রিয় আছেন। রোকনপুরের (লক্ষীবাজারের কাছে) এক নম্বর বাড়িটি তার। বাড়িতে একলাই থাকেন। দুয়েকবার চুরিও হয়েছে। একবার তো খোয়া গেছে অমূল্য সব পুরোনো মুদ্রা ও নথি। স্টার হোটেলে তার জন্য বাঁধা চেয়ার-টেবিল আছে, খাবার নির্দিষ্ট, সময়ও নির্ধারিত। বিল পরিশোধ করেন দিনেরটা দিনেই। বলছিলেন, 'ঢাকার লোক নম্রতা পেয়েছে বৌদ্ধদের কাছ থেকে আর পাঠানদের কাছ থেকে পেয়েছে উগ্রতা।'

"মাত্রই তিরিশটি পুকুর টিকে আছে এখন ঢাকায়। বঙ্গভবনের ভিতরের পুকুরটাকেই কিন্তু বলা হয় মতিঝিল (মোতির পুকুর)। বেশ বড় পুকুর। এটি পুব-পশ্চিমে বর্গাকার। মুঘল আমলের পুকুর। ঢাকায় তিন মালিকানার পুকুর ছিল- ব্যক্তিগত, পঞ্চায়েত আর সরকারি। পঞ্চায়েত পুকুরগুলো ছিল জনকল্যাণের জন্য। এসব পুকুরের বেশিরভাগ মসজিদ সংলগ্ন হতো। এগুলোর কোনোটি গোসল করবার, কোনোটি আবার পানীয় জলের। পানীয় জলের পুকুরে লোকে 'নাইতে' পারত না। এজন্য তদারকী দল ছিল।

ব্যক্তিগত অনেক পুকুরও কিছু ওয়াকফ করা হয়েছিল। এরপর বলি, আকার ধরেও তিনরকম পুকুর- উত্তর দক্ষিণে বড়, বড় স্কয়ার, ছোট স্কয়ার। প্রথম ভাগেরগুলো বেশি তৈরি হয়েছিল বৌদ্ধ আমলে। গোল তালাবও কিন্তু উত্তর দক্ষিণে বড় ছিল, পরে গোল করা হয়েছে। রাজারবাগ পুকুরও উত্তর-দক্ষিণে লম্বা। বৌদ্ধ আমলের পুকুরগুলো বেশ বড় বড়। তবে নকশায় সেরা মোগলদের পুকুর। ওরা সবকিছুতেই সৌন্দর্য পছন্দ করত। ছোট স্কয়ার পুকুরগুলো মূলত ব্রিটিশ আমলের। সব পুকুরের ধারেই তাল আর নারকেল গাছ লাগানো জরুরী ছিল। কারণ এরা মাটি ধরে রাখে। রাজারবাগ পুকুরের ধারে নারকেল গাছ দেখবেন।

আরো কিছু পুকুর কিন্তু খাল বা নদী ব্লক করে তৈরি হয়েছে। রমনা আর ধানমন্ডি লেক তৈরি হয়েছে পাণ্ডু নদী ব্লক করে," বলছিলেন হাশেম সুফী।

সূত্র: দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড

দেশভাগ আপনার কাছে কি? দেশভাগ আমার কাছে কি? খুব সাধারণ, একটি দেশ ভেঙ্গে দুটো দেশ হওয়া। তার মধ্যে একটি দেশের আবার দুটো আলা...
01/01/2022

দেশভাগ আপনার কাছে কি? দেশভাগ আমার কাছে কি? খুব সাধারণ, একটি দেশ ভেঙ্গে দুটো দেশ হওয়া। তার মধ্যে একটি দেশের আবার দুটো আলাদা ভাগ। এই তো আপনার আমার কাছে দেশভাগ। কিন্তু সুমতি গুহঠাকুরতা, বাসন্তী গুহঠাকুরতা আর মেঘনা গুহঠাকুরতা, তিন প্রজন্মের এই তিন নারীর কাছে দেশভাগ সম্পূর্ণ ভিন্ন। এই তিনজন দেশভাগকে দেখেছেন তিন ভাবে। আগে তাদের পরিচয় এবং তাদের পরিবার সম্পর্কে জেনে নেওয়া দরকার।

সুমতি গুহঠাকুরতার জন্ম ১৮৯৯ সালে তৎকালীন পূর্ব বাংলার সোনারগাঁও এর গাবতলির কোন এক গ্রামে। ময়মনসিংহের ট্রেজারি বিভাগে চাকরি করা তার পিতার বকুনি, ধমক অগ্রাহ্য করে সেইসময়ে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করা সুমতির বিয়ে হয় ১৬ বছর বয়সে একজন স্কুল শিক্ষক, কুমুদচন্দ্র গুহঠাকুরতার সাথে। বাসন্তী গুহঠাকুরতার জন্ম নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার এক গ্রামে, উনি মূলত সুমতি গুহঠাকুরতা এবং কুমুদচন্দ্র গুহঠাকুরতার বড় ছেলে জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতার স্ত্রী। এবং সর্বশেষে মেঘনা গুহঠাকুরতা হলেন বাসন্তী এবং জ্যোতির্ময় এর কন্যা।

বাকিদেরকে না চিনলেও জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা নামটা চেনা চেনা, এর কারণ হল, উনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় শহিদ হওয়া বুদ্ধিজীবীদের একজন। ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চের রাতে তিনজন পাকিস্তানি সৈন্য এসে তাকে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দুই রাত একদিন পর তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। ৩০ মার্চ তিনি মারা যান।

৪৭ এর দেশভাগের পরপরই পূর্ব বাংলায় কোন ভয়াবহ দাঙ্গা দেখা যায়নি। তাই সেসময় গুহঠাকুরতা পরিবারের কারও দেশ ছাড়ার চিন্তা মাথাতেও আসেনি। সেসময় শুধু তাদের মনে হয়েছিল এ ভূখণ্ড আর তাদের নয়, হয় তারা এখানে অতিথি, নয় তো আশ্রিত। এজন্য অনেকেই সেসময় পূর্ব বাংলা ছাড়ছিল অজানা গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। ১৯৫০ এর দাঙ্গার পর বেশিরভাগ হিন্দুধর্মের মানুষেরা ঢাকা ছাড়তে শুরু করে। বাকি পরিবারগুলোতে তখনও এই সিদ্ধান্ত আসেনি তারা এ দেশে থাকবেন না ছাড়বেন।

গুহঠাকুরতা পরিবারের অবস্থাও তেমনই ছিল। সুমতি গুহঠাকুরতা এবং তার ছোট ছেলে জ্যোৎস্নাময় ছিলেন দেশ ছাড়ার পক্ষে, তার বড় মেয়ে আরতির তখন বিয়ের কথা চলছে। বিয়ের পর আরতি এমনই ঐ বাংলায় পাড়ি জমাবে। অপরদিকে জ্যোতির্ময় এবং তার স্ত্রী বাসন্তী দুজনেই এই দেশে থাকার পক্ষে। জ্যোতির্ময়ের মনোভাব শুরু থেকেই ছিল দেশভাগের বিপক্ষে। আর তিনি কখনও চাননি এ দেশ ছেড়ে যেতে। বাড়ির সবচেয়ে ছোট মেয়ে তাপতীর তখন এ ব্যাপারে মত দেওয়ার মতো বয়স হয়নি। পরিস্থিতির বদল ঘটে আরও বেশ কিছুদিন পর।

১৯৫০ সালের জানুয়ারির দিকে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা শুরু হয়। চারদিকে গুজব ছড়াতে থাকে হত্যাকাণ্ডের। এমন এক দিনে আরতি স্কুলে পড়িয়ে ফিরছিল। পথে এসব শুনে আরতি সঙ্গে সঙ্গে এক বান্ধবীর বাসায় আশ্রয় নেয়। কিন্তু সেই বাসাতেও আক্রমণ হয়, অল্পের জন্যে পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে আরতি আশ্রয় নেয় এক হিন্দু পুলিশ অফিসারের বাসায়, সেখানেই সারাদিন কাটায় সে।

পরদিন সকালে জ্যোতির্ময় তার বন্ধু আব্দুল গণি হাজারির সাহায্য নেয় আরতিকে খুঁজে বের করতে। আব্দুল গণি হাজারি সে সময় কাজ করতেন পাকিস্তান অবজার্ভার পত্রিকায়। জ্যোতির্ময়কে সেসময় সবাই চিনতো বলেই এই কাজের দায়িত্ব পড়ে জ্যোৎস্নাময়ের উপর। যখন আরতিকে পাওয়া যায় তখন জ্যোৎস্নাময় তাকে পাকিস্তান অবজার্ভার পত্রিকার অফিসে নিয়ে আসে। তারা দুজনেই সেসময় ছিল ভীত।

আরতির বিয়ে হয় কারফিউ এর মধ্যেই। বিয়ের পর গুহঠাকুরতা পরিবারে এক বিশাল মিটিং হয়। সবাই চেষ্টা করে বাসন্তী এবং জ্যোতির্ময়কে রাজী করানোর। কিন্তু তারা তাদের সিদ্ধান্তে অটল থাকে। অবশেষে মার্চ ১৯৫০ এ সুমতি তার পুত্র এবং কন্যাসহ দেশত্যাগ করেন।

সুমতি গুহঠাকুরতার জন্য কলকাতার জীবন ছিল আরও অনিশ্চিত। হাতে একটি রিফিউজি স্লিপ নিয়ে এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে শুধুই আরেক আত্মীয়ের বাড়িতে অল্প একটু আশ্রয়।পশ্চিম বাংলা সরকারের দেওয়া অল্প একটু জমি আর জ্যোতির্ময় এর পাঠানো টাকায় সেখানেই ঘর বাঁধেন সুমতি। ১৯৫৩ সালে জ্যোৎস্নাময় বিয়ে করে আলাদা থাকতে শুরু করে। পরবর্তীতে সুমতি তার মেয়েকে নিয়ে যাদবপুরে থাকতে শুরু করে বাসন্তীর ভাই এর পরিবারের সাথে, কিন্তু সেও আরেক সংগ্রামের জীবন। ১৯৫৭ সালে তাপতীর বিয়ে হয় কুমিল্লার ছেলে বিমল দত্তের সাথে। সুমতি তাদের কাছাকাছি থাকতেন। জ্যোতির্ময় তার জন্য টাকা পাঠাতো আর তাপতী এবং বিমল তার দেখভাল করত।

জ্যোতির্ময়কে অন্য হিন্দু কমিউনিটি সদস্যের মতোই এই বাংলায় হিন্দু এজেন্ট হিসেবে ব্ল্যাকলিস্টেড করা হয়েছিল। ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো থেকে নিযুক্ত ব্যক্তিবর্গ মাঝেমাঝেই তাদের বাসার আশেপাশে ঘুরাফেরা করতেন। এসব কারণেই জ্যোতির্ময় উচ্চতর ডিগ্রীর জন্য স্কলারশিপ পাচ্ছিলেন না। কিন্তু ১৯৬৩ সালে অবশেষে তিনি লন্ডনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন কিংস কলেজে উচ্চতর ডিগ্রী নেওয়ার জন্য। এসময় বাসন্তী আশ্রয় নেয় তার স্কুল কোয়ার্টারে যেখানে সে শিক্ষকতা করতেন। ১৯৬৪ সালে যখন হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা আরও ব্যাপক আকার ধারণ করে তখন বাসন্তী আশ্রয় নিয়েছিলেন সেই স্কুল কোয়ার্টারেই, সাথে আশ্রয় দিয়েছিলেন অনেক হিন্দু নারীদের। পরদিন পুলিশ এসে তাদের নিয়ে যায় এবং সাতদিন তারা পুলিশ হেফাজতে থাকেন। তারা যেখানে ছিলেন তা ছিলেন দাঙ্গা থেকে বাঁচার আশ্রয়কেন্দ্রের মতোই। এরপর থেকেই বাসন্তী লন্ডনে কাজের অনুমতি চেয়ে আবেদন করতে থাকেন।

যখন ১৯৬৫ সালের ইন্দো-পাকিস্তান যুদ্ধ শুরু হয় জ্যোতির্ময় এবং বাসন্তী তখন লন্ডনে। তবুও তাদের মন এই বাংলায়, তাদের চিন্তা তাদের পরিবার নিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নেওয়া লোনের টাকা পরিশোধ করতে জ্যোতির্ময় আবার পূর্ব বাংলায় ফেরত আসার সিদ্ধান্ত নেয়। জানুয়ারি ১৯৬৭ সালে দেশে আসার পর জ্যোতির্ময় যখন তার পাসপোর্ট রিনিউ এর জন্য আবেদন করে তখন তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। বলা হয় কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশ আছে তার জন্য কোন পাসপোর্ট ইস্যু না করার। সমগ্র বিষয়গুলো জ্যোতির্ময়কে একইসাথে হতাশ এবং ক্ষিপ্ত করে তোলে। তাকে পাসপোর্ট দেওয়া থেকে বঞ্চিত করা মানে তাকে নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা, ভারতে যেয়ে তার মাকে দেখতে যাওয়া থেকে তাকে বঞ্চিত করা। কিন্তু এই দেশে তার এই হাহাকার শোনার মতো কেউ ছিলোনা।

১৯৬৫ এর পর কলকাতা থেকে ঢাকার বিমান চলাচল ও বন্ধ হয়ে পড়ে। জ্যোতির্ময় যেহেতু কোনোভাবেই যেতে পারতেন না, তাই এই দায়িত্ব পড়ে বাসন্তী এবং মেঘনার উপর, বেনাপোল বর্ডার পেরিয়ে সুমতি গুহঠাকুরতার সাথে যোগাযোগ রাখবার। ১৯৭০ সালে জ্যোতির্ময়কে জগন্নাথ হলের প্রভোস্ট নিযুক্ত করা হয়। তারপর থেকেই তারা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বসবাস করা শুরু করেন।

নয় মাস যুদ্ধের পর স্বাধীন হয় বাংলাদেশ। ২০ বছর পর বাসন্তী এবং মেঘনার সাথে বাংলাদেশে ফেরত আসেন সুমতি গুহঠাকুরতা, ফিরে এসে শহীদ জননী হিসেবে আবেদন করেন বাংলাদেশী পাসপোর্টের জন্য। ১৯৮৫ সালে ৮২ বছর বয়সে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করার আগেও তিনি তার সাথে বয়ে বেড়িয়েছেন এই দেশভাগকে, ছেলে হারানোর যন্ত্রণাকে, শহিদ জননী হবার গৌরবকে। বাসন্তী গুহঠাকুরতা মারা যান ১৯৯৩ সালে কলকাতায়, যেখানে তার লিভার সিরোসিস রোগের চিকিৎসা চলছিল।

এবার আপনিই বলুন তো, দেশভাগ কি?

Address


Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Bengali Umbrella posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to Bengali Umbrella:

Shortcuts

  • Address
  • Alerts
  • Contact The Business
  • Claim ownership or report listing
  • Want your business to be the top-listed Media Company?

Share