29/09/2025
১৯৪২ সালের ২৯শে সেপ্টেম্বর। মেদিনীপুর জেলার তমলুক মহকুমার বিভিন্ন থানা ও সরকারি ভবন দখল করার জন্য একটি বিশাল মিছিলের আয়োজন করা হয়েছিল। এই কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য ছিল ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটিয়ে তমলুকে একটি স্বাধীন ভারতীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করা। সেদিন অসংখ্য মহিলা স্বেচ্ছাসেবকের সমন্বয়ে গঠিত একটি বিশাল মিছিলের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন ৭২ বছর বয়সী এক বৃদ্ধা!
মিছিলটি যখন তমলুক থানা ভবনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল, তখন ব্রিটিশ পুলিশ ১৪৪ ধারা জারি করে এবং মিছিলটি ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু বৃদ্ধার নেতৃত্বে মহিলাদের মিছিল পুলিশের নির্দেশ অগ্রাহ্য করেই এগিয়ে যাচ্ছিল। বৃদ্ধার হাতে ছিল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের ত্রিবর্ণ রঞ্জিত পতাকা।
পুলিশ প্রথমে তাঁকে বাধা দেয় এবং গুলি চালায়। প্রথম গুলি তাঁর হাতে লাগে, কিন্তু তিনি পতাকাটি শক্ত করে ধরে রেখে "বন্দেমাতরম" স্লোগান দিতে দিতে এগিয়ে যেতে থাকেন। দ্বিতীয় গুলি তাঁর অন্য হাতে লাগে, কিন্তু তবু তিনি পতাকাটি মাটিতে পড়তে দেননি। তখনও তিনি পুলিশের কাছে আবেদন জানাচ্ছিলেন যেন তারা নিজেদের ভাই-বোনের ওপর গুলি না চালায়।
অবশেষে, তৃতীয় গুলিটি তাঁর কপালে লাগে। "বন্দেমাতরম" ধ্বনি উচ্চারণ করেই তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন । প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, মৃত্যুর পরেও বৃদ্ধার হাতে জাতীয় পতাকাটি শক্তভাবে ধরা ছিল।
সেই বৃদ্ধা শহীদ আর কেউ নন, তিনি হলেন আমাদের সকলের সুপরিচিত মাতঙ্গিনী হাজরা। যাকে সবাই আদর করে ডাকতেন “গান্ধী বুড়ি”। তাঁর সাহসিকতা এবং দেশপ্রেম প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ভারতবাসীর কাছে এক বিরাট অনুপ্রেরণার উৎস হিসাবে চিহ্নিত হয়ে আছে।
আজকের দিনে তিনি শহীদ হয়েছিলেন। তাঁর মৃত্যুবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধা জানাই।