02/10/2024
স্বাভাবিক ব্যাংকিং পরিসেবা ও সাধারণ মানুষের স্বার্থ-
মাননীয় গভর্ণর মহোদয়,
প্রথমেই বলে রাখি আপনি ইতিপূর্বে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোন নীতিনির্ধারক ছিলেন না। আপনার পূর্বে যিনি ছিলেন তিনিই বাংলাদেশের যে সমস্ত ব্যাংক খাত দূর্নীতিগ্রস্ত হয়েছে গত ১৭ বছরে তার জন্য ৫0% দায়ী। কারণ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিনিয়ত সুক্ষ নিরীক্ষা পালন করা তাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। অনসাইট সুপারভিশন ও অফ সাইট সুপারভিশ এর আওতায় প্রতিনিয়তই কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনিটরিংয়ে রাখে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে। তাহলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতার কারণেই ব্যাংক খাতে দুর্ণীতি সম্ভব হয়েছে।
গত ০৫ আগষ্ট যখন সরকার পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্যই আপনার মত অভিজ্ঞ ও দূরদশী অর্থনীতিবিদকে
বাংলাদেশ ব্যাংক এর মত একটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বোচ্চ দায়িত্বে বসানো হয়েছে। আপনাকে অবশ্যই ৬১টি ব্যাংকের অভিভাবক নয় শুধু এই ব্যাংকগুলো গ্রাহক তথা বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের লক্ষ্যেই সকল ধরণের নীতি নির্ধারণে সহায়ক ভুমিকা পালন করতে হবে।
আমরা যতটুকু জানি,
সাধারণত একটি ব্যাংকের ১০০ টাকা আমানতের বিপরীতে ৮০ টাকা ঋণ প্রদান করা হয়। এবং তারল্য বলতে শুধু বাংলাদেশ ব্যাংকে মোট আমানতের একটি অংশ রাখা হয়। যা দিয়ে স্বাভাবিক লেনদেন হয়ে থাকে।
যখন একসাথে সবাই মিলে একটি ব্যাংকে তাদের সঞ্চিত ডিপিএস, এফডিআরসহ সেভিংস একাউন্টের টাকার জন্য জড়ো হয় তখন সেই ব্যাংক কেন পৃথিবীর কোন ব্যাংকই পারবে না সাথে সাথে তাদের প্রয়োজন মেঠাতে।
ব্যাংকিং হচ্ছে একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় ব্যাংক পরিচালনা করায় ৫৩ বছরের ইতিহাসে ব্যাংকে কোন সমস্যা দেখা দেয়নি। যত সমস্যা দেখা গিয়েছে তা সমাধাণ হয়েছে খুবই সুক্ষভাবে নিরীক্ষা ও সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে।
এ পর্যন্ত হাজার বার তারল্য সহযোগিতা দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংক অথবা এক ব্যাংক আরেক ব্যাংকে। এসব ব্যাংকিং এর সাধারণ বিষয়।
দূর্নীতি বাংলাদেশের একটি জাতীয় সমস্যা। কোন বাপের পুত বলতে পারবে না বাংলাদেশে এ পর্যন্ত কোন ব্যাংকে কেন অন্য কোন সেক্টরে দুর্নীতি হয়নি।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে অনেক সময় স্পর্শকাতর অর্থাৎ আর্থিক বিষয়গুলো গোপন রাখা জরুরী বলে আমি মনে করি। এই দেশের মানুষ এখনো ব্যাংকের তারল্য সহযোগিতা বলতে কি বুঝেনা। অথচ দিনের পর দিন গণমাধ্যমে এটা নিয়ে নিউজ করতেই আছে। আর মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ছে ব্যাংকে।
সমস্যা থাকলে সমাধান সেখানে স্বয়ংক্রিয় ভাবেই হয়ে আসছে এতদিন ধরে। তাই বলে সকাল বিকাল চা য়ের কাপে যদি গণমাধ্যমের লোকজনকে জড়ো করে তাদের ভিউ ব্যবসা বাড়ানোর জন্য দিনের পর দিন এসব স্পর্শকাতর বিষয়গুলো সাধারণ মানুষের কাছে পৌছে দেন তাহলে তারা তারা বুঝতে চাইবে না কোনভাবেই। তারা বুঝবে তাদের অর্থে উত্তোলন করে নিরাপদে স্থানান্তর করতে। এটাই এই বাংলাদেশের মানুষের ট্রেন্ড বা সাধারণ ক্যারেক্টার বলতে পারেন।
সংস্কার করেন বা যা-ই করেন, টাস্ক ফোর্স গঠন করেন, নিরীক্ষা করেন অথবা দোষী ব্যাক্তিকে শাস্তি প্রদান করেন। কিন্তু এভাবে সাধারণ মানুষের যে স্বাভাবিক লেনদেন তা কোন ভাবেই ব্যাহত করতে আপনাদেরকে ২ হাজার মানুষের প্রাণের বিনিময়ে ওই ক্ষমতায় বসানো হয়নি। আপনারা পলিচি বুঝেন ভাল কথা কিন্তু সাধারণ মানুষের স্বার্থটা বুঝেন না ?
বিগত আওয়ামীলীগ সরকার যদি লাখ কোটি টাকা দুর্নীতির মাধ্যমে পাচার করতে পারে তাহলে দেশের কোটি মানুষের স্বার্থে তারল্য সহযোগিতা দিয়ে ব্যাংকিং খাতকে স্বাভাবিক রাখতে সমস্যা কোথায় ? তারল্য সহযোগিতা তো ঠিকই দেয়ার ব্যবস্থা করে দিলেন এতদিন পর কিন্তু কেন গণমাধ্যমে দিনের পর দিন এসব স্পর্শকাতর বিষয়গুলো তুলে ধরে সাধারণ মানুষের মাঝে আতংক ছড়ালেন।
যারা চলে গেছে তারা তো একবারে সব শেষ করে দিয়ে গেছে। আর আপনারা কি করছেন ? পোস্ট মর্টেম করতে বসছেন গদিতে ?