মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন হউক আগামীর অঙ্গীকার- প্রেরণা-১৯৭২বীর নজমুল

  • Home
  • মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন হউক আগামীর অঙ্গীকার- প্রেরণা-১৯৭২বীর নজমুল

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন হউক আগামীর অঙ্গীকার- প্রেরণা-১৯৭২বীর নজমুল স্মৃতিরক্ষার্থে:ভারতীয় তালিকা ২৫৮৪৫লাল মুক্তিবার্তা ০৫০৩০১০১৬৫গেজেট১৫এ সমন্বিত তালিকা(প্রথমপর্ব)১৭৬৫

আজ শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসঃ১৯৭৫ সালের ১৫ ই অগাস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর দীর্ঘ প্রবাসজীবন কাটিয়ে ১৯৮১ স...
20/05/2023

আজ শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসঃ
১৯৭৫ সালের ১৫ ই অগাস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর দীর্ঘ প্রবাসজীবন কাটিয়ে ১৯৮১ সালের ১৭ ই মে দেশে ফেরেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

৪২ বছর আগে আজকের এই দিনে দেশে ফেরেন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর দীর্ঘ প্রবাসজীবন কাটিয়ে তাঁর দেশে ফেরার এই দিনটিতে (১৯৮১ সালের ১৭ মে) লাখো মানুষ তাকে স্বাগত জানান। এর পর থেকে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিনটিকে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে পালন করে আসছে আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী ও অঙ্গসংগঠনগুলো।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের বেশির ভাগ সদস্যকে হত্যা করা হয়। দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান তাঁর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। বিদেশে থাকার সময় ১৯৮১ সালের ১৪, ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে শেখ হাসিনা দলের সভাপতি নির্বাচিত হন।

সে সময় আওয়ামী লীগের যুববিষয়ক সম্পাদক এবং যুবলীগের চেয়ারম্যান ছিলেন আমির হোসেন আমু। তিনি এখন দলটির উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য। আমির হোসেন আমু গতকাল বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ১৯৭৫ সালের পটপরিবর্তনের পর একদিকে দল ভাঙার রাজনীতি চলছিল, অন্যদিকে আওয়ামী লীগেও কোন্দল সৃষ্টি হয়েছিল। সেই পটভূমিতে দলে ঐক্যের প্রতীক হিসেবে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতেই তাঁকে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়েছিল।

আমির হোসেন আমু বলেন, শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করার পর দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা দিল্লি গিয়ে বিষয়টি তাঁকে জানিয়েছিলেন। তখন দীর্ঘ নির্বাসন শেষে তিনি দেশে ফেরেন ১৯৮১ সালে।

সেই থেকে চার দশকের বেশি সময় ধরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে রয়েছেন শেখ হাসিনা।তাঁর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ প্রথম রাষ্ট্রক্ষমতায় আসে ১৯৯৬ সালে। এরপর ২০০৯ সাল থেকে টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় রয়েছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে ঢাকাসহ সারা দেশে আজ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে আওয়ামী লীগ, এর সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন। আজ বেলা ১১টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল যাবে তাঁকে শুভেচ্ছা জানাতে। বেলা সাড়ে তিনটায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।

আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গতকাল এক বিবৃতিতে বলেন, ১৯৭৫-পরবর্তী বাংলাদেশের হারানো গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। তাঁর নেতৃত্বে বাঙালি জাতি ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ 'স্মার্ট বাংলাদেশ' বিনির্মাণে এগিয়ে যাচ্ছে।

১৮ ই মে ১৯৮১ সালের জাতীয় পত্রিকাগুলি এইভাবে সংবাদ পরিবেশন করে।
দৈনিক সংবাদ (১৮ মে ১৯৮১)

“রাজধানী ঢাকা গতকাল ১৭ মে মিছিলের শহরে পরিণত হয়েছিল। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মিছিল। শুধু মিছিল আর মিছিল। প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টিও মিছিলের গতিরোধ করতে পারেনি। শ্লোগানেও ভাটা পড়েনি। লাখো কণ্ঠের শ্লোগান নগরীকে প্রকম্পিত করেছে। গতকালের ঢাকা ন’বছর আগের কথাই বার বার স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি যেদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে স্বদেশে এসেছিলেন, সেদিন স্বজন হারাবার ব্যথা ভুলে গিয়েও লাখ লাখ জনতা রাস্তায় নেমে এসেছিলো নেতাকে এক নজর দেখার জন্য। গতকালও হয়েছে তাই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কন্যা শেখ হাসিনাকে একনজর দেখার জন্য ঢাকায় মানুষের ঢল নেমেছিলো। কুর্মিটোলা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও শেরেবাংলা নগর পরিণত হয়েছিলো জনসমুদ্রে। ফার্মগেট থেকে কুর্মিটোলা বিমানবন্দর পর্যন্ত ট্রাফিক বন্ধ ছিল প্রায় ছ’ঘণ্টা।”

20/05/2023
২৫ শে বৈশাখ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, বিশ্ব-কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মবার্ষিকী- চির নূতনেরে দিল ডাক পঁচিশে বৈশাখ।মোর চিত্ত-মাঝে/ ...
20/05/2023

২৫ শে বৈশাখ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, বিশ্ব-কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মবার্ষিকী- চির নূতনেরে দিল ডাক পঁচিশে বৈশাখ।

মোর চিত্ত-মাঝে/ চিরনূতনেরে দিল ডাক পঁচিশে বৈশাখ।' জন্মদিনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এভাবেই নিজের হৃদয়ে নূতনের আহ্বান উপলব্ধি করেছিলেন। আজ আবার বর্ষ ঘুরে এল তাঁর জন্মতিথি। আজ তাঁর ১৬২তম জন্মবার্ষিকী। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর অমিত প্রতিভায় বাঙালির রুচি ও সংস্কৃতি গড়ে তুলেছেন। সাহিত্যের নানা শাখা থেকে সংগীত, নৃত্য, চিত্রকলা ও নাটক পর্যন্ত বিচিত্র শিল্পক্ষেত্রকে তাঁর প্রতিভার স্পর্শে অনন্য করে তুলেছিলেন। ১৯১৩ সালে গীতাঞ্জলির জন্য নোবেল পুরস্কার পেয়ে তিনি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে বিশ্বসাহিত্যে প্রতিষ্ঠিত করেন।

বাঙালির সংকটে, সংগ্রামে, আনন্দে, বেদনায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনা অনুপ্রেরণা ও আত্মবিশ্বাস জাগিয়েছে। ইতিহাসের নানা বাঁকে নতুন ব্যঞ্জনায় তাঁর সৃষ্টি সমকালের সঙ্গী হয়ে উঠেছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের আগে তিনি হয়ে উঠেছিলেন পূর্ববাংলার আত্ম- অনুসন্ধানের অন্যতম কেন্দ্র; মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর গান ও কবিতা জুগিয়েছে সাহস। বাংলাদেশ পরম ভালোবাসায় তাঁর গানকে গ্রহণ করেছে জাতীয় সংগীত হিসেবে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সৃষ্টিসম্ভার পরিমাণে ও বৈচিত্র্যে বিপুল। তবু শুধু সৃষ্টিশীল চর্চাতেই নিজেকে নিমগ্ন রাখেননি। শিক্ষা, সমাজসংস্কার, কৃষি, গ্রামীণ
অর্থনীতিসহ নানা বিষয়ে তাঁর ভাবনা ও কর্মশীলতার
বিস্তৃতি সমীহ জাগানোর মতো। ১৩৩৮ সালের
রবীন্দ্রজয়ন্তীর মানপত্রে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় যে
লিখেছিলেন, 'তোমার প্রতি চাহিয়া আমাদের বিস্ময়ের
সীমা নাই', তা যথার্থ। কোনো জাতির মর্মের গভীরে
এত গভীর প্রভাব বিস্তার করা মানুষ বিশ্বে বিরল।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে। ছিলেন বাবা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং মা সারদা সুন্দরী দেবীর চতুর্দশ সন্তান। ঠাকুরবাড়ির পারিবারিক ঐতিহ্য তাঁর চিত্তকে শৈশব থেকেই গড়ে তুলেছিল। জমিদারির কাজে পূর্ববাংলার নদীপথ, নিসর্গ ও গ্রামীণ জীবনযাত্রা তাঁর মন চিরদিনের জন্য বদলে দেয়।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে কেবল প্রেরণাই দেননি, নিজেও সোচ্চার হয়েছেন। জালিয়ানওয়ালাবাগে ব্রিটিশ শাসকদের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বর্জন করেছিলেন তাদের দেওয়া মাইটহুড উপাধি। তাঁর দীর্ঘ ৮০ বছরের কর্মময় জীবনের অবসান ঘটেছিল ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের বাইশে শ্রাবণ।

বাসস জানায়, রবীন্দ্রজয়ন্তী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক বাণীতে বলেছেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনাদর্শ ও তাঁর সৃষ্টিকর্ম শোষণ-বঞ্চনামুক্ত, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে চিরদিন বাঙালিকে অনুপ্রাণিত করবে। তিনি বলেন, অহেতুক যুদ্ধ-সংঘাত, মৌলবাদের উত্থান, জাতীয়তা বোধের সংকীর্ণতা, শ্রেণিবৈষম্য, হানাহানি – এসবের কারণে বর্তমান বিশ্বে রবীন্দ্রনাথ আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছেন।
"জন্মবার্ষিকীতে বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি।

আজ ৩০ এপ্রিল হবিগঞ্জ প্রথম আক্রান্ত দিবস। ১৯৭১ সালের উত্তাল-মার্চের ২৫ শে মার্চ  গভীর রাত্রে পাক হানাদার বাহিনী ঢাকার রা...
20/05/2023

আজ ৩০ এপ্রিল হবিগঞ্জ প্রথম আক্রান্ত দিবস।
১৯৭১ সালের উত্তাল-মার্চের ২৫ শে মার্চ গভীর রাত্রে পাক হানাদার বাহিনী ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ লাইন, পিলখানা বিডিআর হেডকোয়ার্টার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে ও আশেপাশে এলাকায় ট্যাংক কামান অত্যাধুনিক অস্ত্র নিয়ে নারকীয় গনহত্যা অগ্নিসংযোগ, ধ্বংস,(লুটপাট) লুন্ঠন, নারী নির্যাতনসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় এবং পূর্বপরিকল্পিতভাবে সারা বাংলাদেশ বিভিন্ন সময়ে ট্যাংক, কামান অত্যাধুনিক অস্ত্র নিয়ে নিরীহ সাধারণ বাঙালির উপর ঝাঁপিয়ে পরে ও - - - - - অগ্নিসংযোগ ধ্বংস লুন্ঠন নারী নির্যাতনসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়- বাংলার দামাল বীর মুক্তিযোদ্ধারা প্রথমে প্রতিরোধে তেমন সফলতা পান নাই, কারণ অত্যাধুনিক অস্ত্র ও সর্বাধুনিক ট্রেনিংপ্রাপ্ত পাক সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে পিছু হটতে বাধ্য হন।তেমনিভাবে ৩০ এপ্রিল জালালাবাদ সিলেট ক্যান্টনমেন্ট থেকে একদল পাক হানাদার বাহিনী হবিগঞ্জে প্রবেশ করে,ও পহেলা মে হবিগঞ্জ শহর ও শহরতলীর আশেপাশে সেনাবাহিনী ও সেনাবাহিনীর উৎসাহে ও পৃষ্ঠপোষকতায় গনহত্যা লুন্ঠন, অগ্নিসংযোগ ধর্ষন সহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়। অবশ্য তখন স্থায়ীভাবে হবিগঞ্জে অবস্থান করেন নাই,কয়েক দিনের মধ্যেই চলে যায়।(যে কারণে ৩০ শে মে কে হবিগঞ্জ আক্রান্ত দিবস হিসেবে অনেক ইতিহাসবিদ গণ্য করে থাকে) পুনরায় ৩০ শে মে আগমন করে ও স্থায়ীভাবে ক্যাম্প স্থাপন করে হবিগঞ্জে অবস্থান করে এবং ৬ই ডিসেম্বর হবিগঞ্জ মুক্ত হওয়া পর্যন্ত পাক হানাদার বাহিনী বিভিন্ন সময়ে গনহত্যা, লুন্ঠন, অগ্নিসংযোগ নারী নির্যাতন সহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়।যদিও জেলা প্রশাসন কিংবা মুক্তিযোদ্ধা জেলা কমান্ড কাউন্সিল থেকে দিবসটি তেমন ভাবে পালন করা হয় না, দিবসটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ কারণ তৎকালীন মহকুমা প্রশাসক আকবর আলি খান ২৫ শে মার্চের পর থেকে নির্বাচিত এমএলএ এমপিও ও সংগ্রাম কমিটির নির্দেশে সরকার পরিচালনা করেন। মহকুমা প্রশাসক আকবর আলি খান পরবর্তীতে মুজিবনগর সরকারের যোগদান করে মুজিবনগর সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন।
(অসমাপ্ত বা চলবে)

২২ (বাইশে) ডিসেম্বর বীর মুক্তিযোদ্ধা নাজমুল হোসেন লিলুর বীর-পিতা আলহাজ্ব মরহুম মোহাম্মদ শামসুল হোসেন সাহেবের ১৭ তম মৃত্য...
20/05/2023

২২ (বাইশে) ডিসেম্বর বীর মুক্তিযোদ্ধা নাজমুল হোসেন লিলুর বীর-পিতা আলহাজ্ব মরহুম মোহাম্মদ শামসুল হোসেন সাহেবের ১৭ তম মৃত্যুবার্ষিকী। উপলক্ষে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে উনার নিজ গ্রামের বাড়িতে,উক্ত মিলাদ মাহফিলে সকল বীর মুক্তিযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধার পরিবার আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধব এলাকাবাসী ও দেশবাসীকে উপস্থিত হয়ে রুহের মাগফেরাত কামনা করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা যাইতেছে।

মহা পবিত্র ঈদুল ফিতর ২২ শে এপ্রিল ২০২৩ উপলক্ষে বীরমুক্তিযোদ্ধা মরহুম মোঃ নাজমুল হোসেন লিলুর পরিবারের পক্ষ থেকে "পবিত্র ঈ...
25/04/2023

মহা পবিত্র ঈদুল ফিতর ২২ শে এপ্রিল ২০২৩ উপলক্ষে বীরমুক্তিযোদ্ধা মরহুম মোঃ নাজমুল হোসেন লিলুর পরিবারের পক্ষ থেকে "পবিত্র ঈদুল ফিতরের" শুভেচ্ছা।পবিত্র ঈদ উল ফিতর নিয়ে আসুক সবার জীবনে অনাবিল শান্তি সমৃদ্ধি সুখী জীবন।

বাংলায় সেকালের ঈদ-উৎসবঃ
বাঙালি মুসলমানের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব হলো ঈদ। কেমন ছিল সেকালের বাঙালিদের ঈদ উদযাপন বিভিন্ন বইপত্রের শরণ নিয়ে জানা যাক সে সম্বন্ধে।
বাংলায় ঘটা করে ঈদ উদযাপনের ইতিহাসের সূচনা মোগলদের হাত ধরে। তার আগে বাংলা অঞ্চলে জাঁকজমকভাবে ঈদ-উৎসব বা ঈদের সংস্কৃতির খোঁজ সেভাবে মেলে না। ইতিহাস ঘাঁটলে এ অঞ্চলে প্রথম যে ঈদগাহের সন্ধান মেলে, সেটি ১৬৪০ সালের দিকে ধানমন্ডিতে নির্মিত এবং শাহি ঈদগাহ নামে পরিচিত।

১৭২৯ সালের পবিত্র রমজান মাসের শেষ দিন। রাত পোহালেই ঈদ। দ্বিতীয় মুর্শিদ কুলি খান খবর পেলেন ত্রিপুরা রাজ্য জয় হয়েছে, এটি এখন তাঁদের দখলে। এই সংবাদ মুর্শিদ কুলি খানের ঈদের আনন্দ করে দিল। মীর সৈয়দ আলী ও মীর মোহাম্মদ জামানকে তিনি আদেশ দিলেন, ঢাকা কেন্না থেকে (ধানমন্ডির) ঈদগাহ পর্যন্ত দুই মাইল রাস্তায় সাধারণ মানুষের মধ্যে এক হাজার টাকা বিলিয়ে দিতে। ঈদযাত্রা করে তাই-ই করা হলো। ঘটনাটি সম্পর্কে স্যার যদুনাথ সরকার তাঁর বিখ্যাত বই বেঙ্গল নওয়াবস-এ বিশদভাবে লিখেছেন।

এই দান আর ঈদের আনন্দযাত্রা সব সময়ই যে এমন ছিল, তা নয়। তবে পরবর্তী দুই-আড়াই শ বছর পর্যন্ত নায়েব নাজিমরা ধারাটি অব্যাহত রেখেছিলেন। এসব ঘটনা থেকে বোঝা যায়, সেকালে ঈদ-উৎসবের সময় নবাবেরা নিজেদের শানশওকত আর আনন্দ প্রকাশের জন্য বড় একটা বহর নিয়েই ঈদগাহে যেতেন এবং সাধারণ মানুষকে দিতেন উপহার। নিম্নবিত্ত মানুষও তখন রাস্তার দুই ধারে দাঁড়িয়ে থাকত, মোগল- আমিরদের ঈদযাত্রা দেখার জন্য বা উপহার পাওয়ার আশায়।

বাংলায় ঘটা করে ঈদ উদযাপনের ইতিহাসের সূচনা মোগলদের হাত ধরে। তার আগে বাংলা অঞ্চলে জাঁকজমকভাবে ঈদ-উৎসব বা ঈদের সংস্কৃতির খোঁজ সেভাবে মেলে না। ইতিহাস ঘাঁটলে এ অঞ্চলে প্রথম যে ঈদগাহের সন্ধান মেলে, সেটি ১৬৪০ সালের দিকে ধানমন্ডিতে নির্মিত এবং শাহি ঈদগাহ নামে পরিচিত। বাংলার সুবেদার শাহ সুজার নির্দেশে তাঁর প্রধান অমাত্য মীর আবুল কাসেম এটি নির্মাণ করেন। ঢাকার ইতিহাসবিদ হেকিম হাবিবুর রহমানের লেখা থেকে জানা যায়, ১৬৪০ সালে প্রথম দিকে গড়ে ওঠা ধানমন্ডির ওই ঈদগাহে সবার যাওয়ার সুযোগ ছিল না, কেবল নবাব, উচ্চপদস্থ রাজ কর্মচারী, কাজি হাকিম এবং তাঁদের বন্ধুবান্ধবই ঈদগাহে যেতেন।

পরে সতের শতকের দিকে সিলেটের প্রথম ঈদগাহ শাহি ঈদগাহ এবং আঠারো শতকে কিশোরগঞ্জের নরসুন্দার তীরে শোলাকিয়াহ ঈদগাহসহ পর্যায়ক্রমে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ঈদগাহ বা ঈদের মাঠের গোড়াপত্তনের মধ্য দিয়ে মূলত মুসলমানদের এই প্রধান ধর্মীয় উৎসব পূর্ব বাংলার সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।

এর আগে বাংলার সাধারণ মানুষকে আনুষ্ঠানিকভাবে ঈদ-উৎসব উদযাপন করতে তেমনভাবে দেখা যায়নি। জেমস টেলরের লেখা উপোগ্রাফি অব ঢাকা কিংবা জেমস ওয়াইজের বই ঘাঁটলে মালুম হয়, তখনকার সময়ের সাধারণ মুসলমানদের মধ্যে ধর্মীয় বিষয়-আশয় নিয়ে আজকের মতো এতটা সচেতনতা ছিল না, এমনকি ঈদের নামাজ কীভাবে পড়তে হয়, অনেকে সেটাও ঠিকভাবে জানতেন না। ১৮৮৫ সালের দিকে ঢাকার সিভিল সার্জন জেমস ওয়াইজ তাঁর নোটস অন রেইসেস : কাস্ট অ্যান্ড ট্রেড অব ইস্টার্ন বেঙ্গল বইয়ে লিখেছিলেন, 'ঈদের সময় লক্ষ্যা নদীর তীরে স্থানীয় গ্রামবাসী মিলিত হয়েছিলেন নামাজ পড়ার জন্য। তবে সেটা কীভাবে করবেন, তা তারা বুঝে উঠতে পারছিলেন না। আসলে ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পর্কে তাদের অজ্ঞতাই এর জন্য দায়ী। নদীতে নৌকায় করে ঢাকার এক যুবক যাচ্ছিল। অবশেষে তাকে দিয়ে ঈদের জামাত পড়ানো হলো।'

ইতিহাস বলছে, মোগল শাসক ও ঢাকায় আসা খোরাসানি শিয়া সম্প্রদায়ের মুসলমানদের হাত ধরে বাংলার ঈদ-উৎসব দিনে দিনে বর্ণিল হতে শুরু করে। উৎসবকে আরও সপ্রাণ করতে ধীরে ধীরে এতে যুক্ত হয় 'ঈদ-মিছিল', 'চানরাতের উৎসব', 'মেহেদি উৎসব', 'ঈদ মেলা'সহ বিচিত্র সব অনুষঙ্গ। ঢাকা পাঁচাস বারাস পাহলে বইয়ে হেকিম হাবিবুর রহমান দাবি করেন, ঢাকায় যে খোসবাস সংস্কৃতি তৈরি হয়েছিল, তা ছিল মূলত ইরান ও আগ্রার সমাজব্যবস্থার অনুকরণে।

ঈদ-মিছিলঃ
নায়ের-নাজিমদের এ সময় ঢাকায় যে ঈদ-মিছিল বের হতো, তা যথেষ্ট দৃষ্টিনন্দন ছিল। উনিশ শতকের প্রথমার্ধে ঢাকার শিল্পী আলম মুসাওয়ার নায়েব নাজিমদের মহররম ও ঈদযাত্রার ৩৯টি ছবি আঁকেন, বর্তমানে ছবিগুলো জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে। এসব ছবি থেকে সেকালের ঈদ মিছিল সম্পর্কে সম্যক ধারণা পাওয়া যায়।

কী না ছিল ঈদের সেই মিছিলের মধ্যে! মিছিলের বিরাট বহরের সঙ্গে রংবেরঙের নিশান,জমকালো হাওদায় সজ্জিত হাতি, উট, পালকি.... আরও কত কী! সামনের হাতিতে থাকতেন নায়েব- নাজিম। তাঁর পেছনে থাকতেন আমির, অমাত্য ও বিদেশি মেমরা। আর এসবের পেছনে কিংখাবের ছাতা হাতে ছিলেন ছাতি বরদার ও বাদ্যকরেরা।

ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন ঢাকা সমগ্র গ্রন্থে জানাচ্ছেন, এই ঈদ শোভাযাত্রা বা আনন্দমিছিল ঢাকার নিমতলি প্রাসাদ থেকে চকবাজার, হোসেনি দালান ঘুরে আবার ফিরে আসত প্রাসাদে। আর ওই শোভাযাত্রা থেকে গরিব আদমিদের পয়সা ছিটিয়ে দেওয়া হতো।

চাঁদ দেখাঃ
এখন ঈদের চাঁদ দেখাকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যে যে উচ্ছ্বাস দেখা

যায়, সেকালেও এর ব্যতিক্রম ছিল না। ঈদের মূল আনন্দ শুরু হতো ঈদের চাঁদ দেখার মধ্য দিয়ে। ঈদের চাঁদ দেখতে কেউ নৌকা নিয়ে যেতেন বুড়িগঙ্গায়, কেউবা কেল্লায় উঠতেন। চাঁদ দেখার জন্য নবাববাড়ির ছাদই ছিল সবচেয়ে উপযুক্ত।

চাঁদ দেখা গেলে নবাববাড়ি থেকে তোপধ্বনির আওয়াজ শোনা যেত। সন্ধ্যায় মোমবাতির আলোয় আলোকিত হতো মোগল আমলের ঢাকা। সৈন্য শিবিরে বেজে উঠত শাহি তুর্য। সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলত আতশবাজির খেলা। গবেষক আনোয়ার হোসেন আমার সাত দশক বইয়ে জানাচ্ছেন, চাঁদ দেখার পর ঈদকে স্বাগত জানিয়ে কিশোরেরা মিছিল করত এবং কাসিদা গাইত। ঢাকায় চাঁদরাতে কী হতো, তার সবিস্তার বর্ণনা পাওয়া যায় আৰু যোহা নুর আহমদের বই উনিশ শতকের ঢাকার সমাজ জীবন-এ। এতে তাঁর ভাষ্য,"চাঁদ দেখামাত্রই চারিদিক হইতে মোবারকবাদ, পরস্পর সালাম বিনিময় এবং গোলাবাজি ও তোপের আওয়াজ হইতে থাকিত।'

বিশ শতক পর্যন্ত ঈদের কেনাকাটা সাধারণ চাঁদরাতেই হতো। ছেলেরা কাগজের টুপি কিনত, মেয়েরা কিনত চুড়ি। তবে বর্তমানে ঈদ সামনে রেখে যেভাবে নতুন জামা-জুতা কেনার হিড়িক পড়ে, বাঙালি মুসলমান সমাজে এই চল খুব বেশি দিন গড়ে ওঠেনি। ইতিহাস থেকে জানা যায়, এ অঞ্চলে মাত্র কয়েক দশক আগ থেকে ঈদ উপলক্ষে মানুষ দর্জিবাড়িতে যাতায়াত শুরু করে। লোকসংস্কৃতিবিদ শামসুজ্জামান খানের 'বাঙালি মুসলমানের ঈদ' প্রবন্ধে এ কথার সপক্ষে সাক্ষ্যও পাওয়া যাচ্ছে। তিনি লিখেছেন, সেসময়কার সাধারণ মানুষ ধুতি পরতেন। নামাজের সময় ধুতির থাকতেন।' পেছনের গিঁঠ খুলে দিতেন।

ঈদের মেলাঃ
মুনশী রহমান আলী তায়েশ তাওয়ারিখে ঢাকা বইয়ে লিখেছেন, 'উনিশ শতকের শেষের দিকে ঢাকার মুসলমানেরা ধানমন্ডির মোগল ঈদগাহে যেতেন ঈদের নামাজ পড়তে। যদিও সে ঈদগাহ তখন অযত্ন-অবহেলায় জরাজীর্ণ ও জঙ্গলাকীর্ণ। ঈদ উপলক্ষে এখানে মেলা হতো, সেখানে যোগ দিতেন ঢাকা ও আশপাশের এলাকার লোকজন।'

এভাবে এই ঈদ উপলক্ষে মেলা যে সংস্কৃতি গড়ে ওঠে, অচিরকালের মধ্যে তা বিভিন্ন স্থাে সম্প্রসারিত হয়। ধানমণ্ডির পর ঢাকার চকবাজার, কমলাপুর ও রমনায় সূচনা এসব মেলায় সাধারণত শিশু-কিশোরদের খেলনা, হরেক পদের মণ্ডামিঠাই ও নানা র খানার পাওয়া যেত। আশরাফ উজ্জামান আত্মস্মৃতিমূলক এক নিবন্ধে এই মেলার কথা উল্লেখ করেছেন, ঈদের মেলা হতো চকবাজারে এবং রমনা ময়দানে। বাঁশের তৈরি শাখা ভালা আসত নানা রকমের। কাঠের খেলনা, ময়দা এবং ছানার খাবারের দোকান বসত সুর করে সাজিয়ে। কাবলীর নাচ হতো বিকেলবেলা।

ঈদ মেলার সংস্কৃতিটি খুব দ্রুতই বাংলাদেশের গ্রামীণ জনপদে ছড়িয়ে পড়ে। গত শতকের মাটি ও সত্তরের দশকের সামাজিক ইতিহাসের দিকে নজর দিলে দেখা যায়, ঈদকে কেনা করে গ্রামীণ জনপদে মেলার যে সংস্কৃতি শুরু হয়, দ্রুতই তা ঈদের অন্যতম আকর্ষণ হয়ে দাঁড়ায়। প্রিন্সিপাল ইব্রাহীম খাঁ, কবি জসীমউদদীন প্রমূখ মনীষীর আত্মস্মৃতিতে সেকালের ঈদ উদযাপনের টুকরা টুকরা বিবরণ আছে। সেখান গত শতকের ঈদ-সংস্কৃতির চিত্র ফুটে ওঠে। জানা যায়, ঈদের সকালে শিশু-কিশোরেরা মুরব্বিদের কাছ থেকে ঈদসালামি সংগ্রহ করে তারপরই ঈদগাহে যেত। পরে ঈদের নামাজ শেষে ঈদগাহ থেকে ফেরার পথে মেলা থেকে নানা রকম খেলনা আর খাবার কিনে বাড়ি ফিরত। সে সময় এগুলোই ছিল ঈদের আনন্দময় স্মৃতি।

এখনো বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ঈদের এ ধরনের মেলা বসে। ঈদের নামাজের পর শুরু হওয়া মেলা কোথাও দু-তিন দিন পর্যন্ত চলে।

নানান আয়োজনে ঝলমলেঃ
শুধু ঈদ মেলা নয়, সেকালের ঈদের আনন্দ আরও ঝলমলে হয়ে উঠেছিল বিচিত্র সব ক্রীড়ামূলক আয়োজনে। যেমন ঈদকে ঘিরে নৌকাবাইচ, ঘোড়দৌড় বা বিভিন্ন ধরনের খেলা হতো। আঠারো শতকের শেষ বা উনিশ শতকের শুরু থেকে ঈদ উপলক্ষে বাংলার বিভিন্ন গ্রামে এই খেলাধুলার প্রচলন হয় বলে গবেষকদের অনুমান। যদিও এ অঞ্চলে নৌকাবাইচ, ঘোড়দৌড় বা নানা রকমের প্রতিযোগিতার ইতিহাস বেশ পুরোনো। মির্জা নাথান তাঁর বিখ্যাত বই বাহারিস্তান-ই গায়েবিতে লিখেছেন, 'সুবেদার ইসলাম খান ঢাকার ইসলামপুরে বুড়িগঙ্গা নদীতে নৌকাবাইচের ব্যবস্থা করতেন। এ সময় তিনি নিজেও উপস্থিত থাকতেন।

আবার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান অনূদিত জেমস টেলরের কোম্পানি আমলে ঢাকা গ্রন্থে আছে, ‘আঠারো শতকের প্রথম থেকেই ফরিদপুর ও ময়মনসিংহ অঞ্চলে ঈদ ও মহররমে নৌকাবাইচের আয়োজন করা হতো। কোথাও কোথাও ঘোড়দৌড়ের প্রচলনও ছিল।'

বাঙালি মুসলমানের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব হলো ঈদ। ধর্মের আচার পালনের সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় সংস্কৃতির মেলবন্ধনে এ অঞ্চলে ঈদ উদযাপনের ক্যানভাসটি দিনে দিনে যে বিশাল হয়ে এভাবে ঈদ উপলক্ষে মেলার যে সংস্কৃতি উঠেছে, এসব দৃষ্টান্তই তার প্রমাণ।

এসো এসো হে বৈশাখ এসো এসো ....আজ পহেলা বৈশাখ শুভ নববর্ষ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ। শুভ বাংলা নববর্ষে সকল বীরমুক্তিযোদ্ধা, বীরমুক্তিযো...
25/04/2023

এসো এসো হে বৈশাখ এসো এসো ....
আজ পহেলা বৈশাখ শুভ নববর্ষ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ। শুভ বাংলা নববর্ষে সকল বীরমুক্তিযোদ্ধা, বীরমুক্তিযোদ্ধা পরিবার ও দেশবাসীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা। শুভ বাংলা নববর্ষ নিয়ে আসুক সবার জীবনে অনাবিল শান্তি ও সমৃদ্ধি।

"নব আনন্দে জাগো আজি, নব রবিকিরণে",
"শুভ সুন্দর প্রীতি উজ্জ্বল নির্মল জীবনে"।
বসন্তের আগমনে কোকিলের সুর
গ্রীস্মের আগমনে রোদেলা দুপুর
শুভ বাংলা নববর্ষ।

বাংলা সন বা বঙ্গাব্দের সূচনা:
বাংলা সন বা বঙ্গাব্দ, কে প্রবর্তন করেছিলেন- তা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও বাংলাদেশের গবেষক ও ইতিহাসবিদরা একমত যে, এর সূচনা হয়েছিল সম্রাট আকবরের হাতে। গৌড়ের রাজা শশাঙ্ক নান, মুঘল সম্রাট আকবরই বাংলা সনের প্রবর্তক। যদিও ভারতের হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠী আরএসএস ও তাদের অনুসারী সংগঠনগুলো, পশ্চিমবঙ্গে জোরালো প্রচার ও সচেতনতা অভিযান' শুরু করেছে এই বলে যে, মুঘল সম্রাট আকবর নন, গৌড়ের প্রাচীন হিন্দু রাজা শশাঙ্কই বাংলা সন বা 'বঙ্গাব্দ' প্রবর্তন করেছিলেন।

রাজা শশাঙ্ক মারা গিয়েছিলেন ৬৩৭ বা ৬৩৮ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ। এর মোটামুটি ৪৫ বছর আগে তিনি সিংহাসনে আরোহণ করেছিলেন। এবং তখন থেকেই (৫৯৩ খ্রিস্টাব্দ) বঙ্গাব্দ চালু করা হয়- এটা ধরে নিলে কথাটা অনেকটা মিলে যায়।

কারণ বঙ্গাব্দের সঙ্গে খ্রিস্টীয় অব্দের ব্যবধানও ঠিক ৫৯৩ বছরের। এই মূহূর্তে যেমন ১৪২৯ বাংলা সন শেষ হয়ে নতুন ১৪৩০, আর সেটা ইংরেজি বা খ্রিস্টীয় ২০২২ সাল ফলে গণনার ব্যবধানটা ৫৯৩ বছরের। তবে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ও গবেষক অমর্ত্য সেন তার একাধিক নিবন্ধ, বক্তৃতা ও গ্রন্থে মুঘল সম্রাট আকবরকেই রঙ্গাদের প্রবর্তক হিসেবে স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করেছেন।

'বঙ্গাব্দে'র সূচনা সম্পর্কে প্রচলিত রয়েছে বেশ কিছু মত। এর মধ্যে মাত্র দুটি মতকেই মোটামুটিভাবে প্রামাণ্য হিসাবে ধরা হয়। একটি মত বলছে, বঙ্গাব্দের সূচনা করেন গৌড়ের রাজা শশাঙ্ক। সপ্তম শতাব্দীর শুরুতে বঙ্গদেশের রাজা ছিলেন শশাঙ্ক। এ অঞ্চলটির এদিক-ওদিকে ছড়িয়ে থাকা ছোট ছোট স্বাধীন রাজ্যগুলোকে এক সুতায় বেঁধে, বাঙালি জাতিসত্তাভিত্তিক গৌড় রাজ্যের সূচনা করেন তিনি। অধিকাংশ ইতিহাসবিদ মনে করেন শশাঙ্কই বাংলার প্রথম স্বাধীন শাসক। যার রাজধানী ছিল- কর্ণসুবর্ণ বা কানসোনা। তখন অগ্রহায়ণ মাসে ধান কাটা শুরু হতো বলে, এই মাসকে বছরের প্রথম মাস ধরা হতো। তাই এ মাসের নাম রাখা হয়- অগ্রহায়ণ। "অর্থ" অর্থ প্রথম আর 'হায়ণ' অর্থ বর্ষ বা ধান।

ভারতবর্ষে মুঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পর, সম্রাটরা হিজরি পঞ্জিকা অনুসারে কৃষিপণ্যের খাজনা আদায় করত। কিন্তু হিজরি সন চাঁদের ওপর নির্ভরশীল হওয়ায়, তা কৃষি ফলনের সঙ্গে মিলত না। ফলে আরে কৃষকদের খাজনা পরিশোধ করতে বাধ্য করা হতো।খানা আদায়ের সুষ্ঠুতা প্রণয়নের লক্ষ্যে মুঘল সম্রাট আকবর বাংলা সালের প্রবর্তন করেন। তিনিই মূলত প্রাচীন বর্ষপঞ্জিতে সংস্কার আনার আদেশ দেন। সম্রাটের আদেশ মতে, তৎকালীন বাংলার বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও চিন্তাবিদ ফতেহউল্লাহ সিরাজি সৌর সন এবং আরবি হিজরি সনের ওপর ভিত্তি করে, নতুন বাংলা সনের নিয়ম বিনির্মাণ করেন। প্রথমে এই সনের নাম ছিল ফসলি সন, পরে বঙ্গাশ' বা বাংলা বর্ষ নামে পরিচিত হয়।

সুনীল কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় তার 'বঙ্গাব্দের উৎসকথা বইয়ে বলছেন- ৫৯৪ খ্রিস্টাব্দের ১২ এপ্রিল গৌড়ের সিংহাসনে বসেন শশাঙ্ক। সেদিন থেকেই বাংলা সন বা বঙ্গাব্দের প্রচলন। এই মত অনুসারে, পরবর্তীকালে অনেকেই দাবি করেন যেদিন শশাঙ্ক সিংহাসনে আরোহণ করেন সেদিন থেকেই বাংলা বর্ষপঞ্জি বা বঙ্গাব্দের গণনা শুরু। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, ঠিক কোন সময়ে শশাঙ্ক ক্ষমতায় এসেছিলেন, তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। ঐতিহাসিকরা তার যে শাসনকালের উল্লেখ করেন, তার অনেকটাই নিছক অনুমান। অনেক ইতিহাসবিদের মতে, তার শাসনকাল ছিল ৬০০-৬২৫ খ্রিস্টাব্দ। সেই সময়ের কিছু প্রামাণ্য পুঁথিতে আবার 'গুপ্তাব্দ' শব্দটার উল্লেখ পাওয়া যায়। খুব স্বাভাবিকভাবেই কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, শশাঙ্কই যদি বঙ্গাব্দের সূচনা করে থাকেন, তাহলে বঙ্গাব্দের বদলে 'গুপ্তাব্দ' শব্দটা ব্যবহৃত হলো কেন ? খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দী, ভারতবর্ষের ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, ভানুগুপ্তের হাতে গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতনের ঘণ্টা বেজে গেছে ততদিনে। আসলে 'বঙ্গ' কোনো শাসকের নাম নয়। তাই শিলালিপি দেখে শাসনকাল খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। ১৯৫৪ সালে ভারতীয় পঞ্জিকা সংস্কার কমিটির প্রধান ড. মেঘনাদ সাহা অঙ্ক কষে নিশ্চিত করেছিলেন যে, সম্রাট আকবরই বাংলা সনের প্রবর্তক।

গবেষক ও বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলা অঞ্চল তখন 'হিজরি সনে পরিচালিত হতো। কিন্তু বাংলা ছিল কৃষিপ্রধান। ফলে খাজনা দেওয়াসহ নানা কাজে বছরের শুরু হিসাব করতে সমস্যা হতো। এ কারণেই সম্রাট আকবর তখন বাংলা সন প্রবর্তন করেছেন- পহেলা বৈশাখ দিয়ে যার শুরু। আসলে রাজা শশাঙ্ক যেটা করেছিলেন, সেটা শতাব্দ। আর সম্রাট আকবর যে সন চালু করেছিলেন, সেটি বঙ্গাব্দ এবং এটি ছিল কৃষকদের কর দেওয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত। আগে বাংলায় বছরের শুরু হতো অগ্রহায়ণ দিয়ে, কারণ তখন কৃষকের ঘরে ফসল আসত। কিন্তু খাজনা আদায়সহ নানা কিছু চিন্তা করেই বাংলা সন, পহেলা বৈশাখ থেকে নির্ধারণ করা হয়। এটিকে প্রথমে ফসলি সন বলা হলেও পরে বঙ্গাব্দ বা বাংলা বর্ষ নামে পরিচিতি পেতে শুরু করে।

আকবরনামায় আবুল ফজলের বর্ণনা থেকে জানা যায়, রাজকার্যে যে ক্যালেন্ডার ব্যবহৃত হতো তা ছিলা হিচারি ক্যালেন্ডার। আকাশে চাঁদের অবস্থান,পূর্ণিমা অমাবস্যার হিসেবের ওপর ভর করে চলত সেই ক্যালেন্ডার। কিন্তু চাষের কাজে চাঁদের থেকেও সূর্যের অবস্থান বেশি তাৎপর্যপূর্ণ। তাই কৃষিকাজের জন্য যে ক্যালেন্ডার প্রচলিত ছিল, তা ছিল সৌর ক্যালেন্ডার। একই সাম্রাজ্যে দুরকম ক্যালেন্ডারের প্রচলন থাকায় নানাক্ষেত্রে বিপদে পড়তেন সাধারণ মানুষ। দুটি ক্যালেন্ডারের গণনা পদ্ধতিতে দিনের তফাত থাকায়, কর সংগ্রহে খুবই অসুবিধা হতো। যে সময় চাষির ঘরে ফসল উঠত, কর সংগ্রহ করা হতো তার অনেক পরে হিজরি ক্যালেন্ডার মেনে। স্বাভাবিকভাবেই এতে সমস্যায় পড়তেন গরিব কৃষক। দেরিতে হলেও, বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনিকভাবে শুরু হয় চিন্তা ৩২টি সৌরবর্ষ ৩৩টি চান্দ্রবর্ষের সমান হওয়ায় চাষিরা বাধ্য হতেন অতিরিক্ত এক বছরের খাজনা দিতে। আকবর ভাবলেন- খাজনা আদায় যাতে বছরের একটি নির্দিষ্ট সময় হয় এবং দেশের গরিব চাষিদের যাতে কোনোভাবেই অতিরিক্ত খাজনা না দিতে হয়। সভাসদ জ্যোতির্বিদ আমির ফতুল্লাহ শিরাজীর সহযোগিতায়, সৌর সন আর হিজরি সনের ওপর ভিত্তি করে ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১০ বা ১১ মার্চ থেকে 'তারিখ-এ-এলাহি' নামে নতুন এক বছর গণনা পদ্ধতি চালু করেন।

ঐতিহাসিকদের মতে, সম্রাট আকবর সিংহাসনে বসেন ৯৬৩ হিজরি সনে, ইংরেজি হিসেবে সেটা ১৫৫৬ সাল। তার নির্দেশ অনুসারে, ওই ৯৬৩ হিজরি সন থেকেই তারিখ-ই-ইলাহির প্রথম দিন ধরা হয়েছিল। ১৫৮৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে ফতেহউল্লাহ সিরাজি প্রবর্তিত এই নতুন সাল 'ফসলি সন' নামে ভারতীয় উপমহাদেশে ব্যাপকভাবে প্রসিদ্ধ লাভ করে। পরবর্তী সময়ে এ ফসলি সনই বাংলা সন বা বঙ্গাব্দ' নাম ধারণ করে। তারিখ-ই-ইলাহিতে মাসগুলোর নাম ছিল- ফরওরদিন, অর্নির্বিহিষ্ট, মুরর্নদ, তির, অমুরদাদ, শারেবার, মির, আবান, আজর, দয়, বহুমন এবং ইসফদারমজ। পরে আকাশের বিভিন্ন নক্ষত্রের নাম অনুসারে বাংলা সনের মাসগুলোর নামকরণ করা হয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই নামগুলো নেওয়া হয়েছে ৭৮ খ্রিস্টাব্দে সাকা জাতির রাজত্বের সময়, প্রচলিত শকাব্দ থেকে। চাঁদের ২৭টি নক্ষত্র, সেই তারাদের মধ্যে প্রধান কয়েকটি তারার নাম অনুসারে বাংলা মাসগুলোর নাম দেওয়া হয়। যেমন- মাসের শুরুতে বিশাখা নক্ষত্রের নাম থেকে বছরে প্রথম মাসের নাম- বৈশাখ। জেষ্ঠা নক্ষত্রের নাম থেকে দ্বিতীয় মাসের নাম- জ্যৈষ্ঠ। তৃতীয় মাস অষধা নক্ষত্রের সময়কাল, তাই সেই মাসের নাম- আষাঢ়। একইরকমভাবে শ্রবণা নক্ষত্র থেকে- শ্রাবণ। ভাদ্রপাদ বা ভদ্রা নক্ষত্রের সময়কাল থেকে ভাদ্র। ভাদ্রের পর চাঁদ অশ্বিনী নক্ষত্রের কক্ষপথে বিরাজ করে। তাই ভাদ্রের পরের মাস আশ্বিন। আবার হেমন্তকালে চাঁদ থাকে কৃত্তিকা নক্ষত্রে, বৃত্তিকার নাম থেকেই সে মাসের নাম কার্তিক। আবার মৃগশিরা নক্ষত্রের আরেক নাম অগ্রহায়ণী, তাই মৃগশিরার মাস অগ্রহায়ণ। একইরকমভাবে পুষ্যা থেকে পৌষ, মঘা থেকে মাঘ, ফাল্গুনী থেকে ফাল্গুন আর চিত্রা নক্ষত্রের নামানুসারে চৈত্র মাসের নামকরণ করা হয়েছে।

অন্যদিকে সোমবার হচ্ছে সোম বা শিব দেবতার নাম অনুসারে, মঙ্গলবার হচ্ছে মঙ্গল গ্রহের নাম অনুসারে, বুধবার হচ্ছে বুধ গ্রহের নাম অনুসারে, বৃহস্পতিবার হচ্ছে বৃহস্পতি গ্রহের নাম অনুসারে, শুক্রবার হচ্ছে শুক্র গ্রহের নাম অনুসারে, শনিবার হচ্ছে শনি গ্রহের নাম অনুসারে আর রবিবার হচ্ছে রবি বা সূর্য দেবতার নাম অনুসারে।

আমাদের দেশে প্রচলিত বঙ্গাব্দ বা বাংলা সন, মূলত ইসলামি হিজরি সনেরই একটি রূপ। ভারতে ইসলামী শাসনামলে হিজরি পঞ্জিকা অনুসারেই সব কাজকর্ম পরিচালিত হতো। মূল হিজরি পঞ্জিকা চান্দ্র মাসের ওপর নির্ভরশীল। চান্দ্র বছর সৌর বছরের চেয়ে ১১/১২ দিন কম হয়। কারণ সৌর বছর ৩৬৫ দিন, আর চান্দ্র বছর ৩৫৪ দিন। এ কারণে চান্দ্র বছরে গুলো ঠিক থাকে না। আর চাষাবাদ ও এ জাতীয় অনেক কাজ ঋতুনির্ভর। এ জন্য ভারতের মোগল সম্রাট আকবরের সময় প্রচলিত হিজরি চান্দ্র পঞ্জিকাকে সৌর পঞ্জিকায় রূপান্তরিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বাংলা সনে দিনের শুরু ও শেষ হয় সূর্যোদয়ে। ইংরেজি বা গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জির শুরু হয় যেমন মধ্যরাত হতে। 'সন' একটি আরবি শব্দ। আবার ‘সাল” শব্দটি উর্দু ও ফার্সি ভাষায় ব্যবহৃত হয়। আর বাংলায় সনকে 'অব্দ' নামে অভিহিত করা হয়। তখন চৈত্র মাসের শেষ দিনের মধ্যে খাজনা, শুল্ক দিতে হতো কৃষকদের। তাই তখন থেকেই -সম্রাট আকবর কৃষকদের জন্য মিষ্টি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করতেন। হালখাতার প্রচলনও সম্রাট আকবরের সময় থেকেই ব্যবসায়ীরা করেছেন। সোনারগাঁওয়ে ঈসা খাঁ-এর আমলে, বউমেলা হতো সেখানে স্থানীয় বটতলায় কুমারী, নববধূ ও মায়েরা তাদের মনের ইচ্ছা পূরণে পূজা করত। পাঠা বলি দেওয়া হতো আগে। তবে এখন শান্তির বার্তার আশায় তারা দেবীর কাছে কবুতর বা পায়রা উড়িয়ে দেয়। এ ছাড়াও সোনারগাঁও এ ঘোড়ামেলারও প্রচলন ছিল। লোকমুখে প্রচলিত আছে যে, আগে যামিনী সাধন নামের এক ব্যক্তি নববর্ষের দিন ঘোড়া চড়ে সবাইকে প্রসাদ দিত। তার মৃত্যুর পরে সেখানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ বানানো হয় এবং পরবর্তী সময় এটিকে কেন্দ্র করে মেলার আয়োজন হয়। আগে মাটির ঘোড়া রাখা হতো, এরপর থেকে মেলায় নাগরদোলা, চরকা, ঘোড়ার আকারে ঘূর্ণি দোলনা রাখা হয়। বর্তমানের বাংলা সন এসেছে, গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে। বাংলাদেশে এই গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে প্রতিবছর ১৪ এপ্রিল শুভ নববর্ষ পালিত হচ্ছে। ১৯৮৯ সাল থেকেই মঙ্গল শোভাযাত্রা বাঙালির নববর্ষ উদযাপনের একটি প্রধান আকর্ষণ।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে ইউনেসকো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে আয়োজিত যে মঙ্গল শোভাযাত্রার বের করে, সেটিকে 'মানবতার অমূল্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য' হিসেবে ঘোষণা করে। বাংলাদেশে নববর্ষ ১৪ এপ্রিল পালিত হলেও পশ্চিমবঙ্গে তা ১৫ এপ্রিল পালন করা হয়। কারণ, ভারতে হিন্দু সম্প্রদায় তিথি পঞ্জিকা অনুসরণ করে থাকে। বাংলাদেশে আধুনিক বাংলা বর্ষপঞ্জিকায় গ্রেগরীয় পঞ্জিকা অনুসারে বাংলা একাডেমি কর্তৃক ১৪ এপ্রিল বাংলা বছরের প্রথম দিন নির্দিষ্ট করা হয়। পহেলা বৈশাখ সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ছায়ানটের শিল্পীরা সম্মিলত কণ্ঠে গান গেয়ে নতুন বছরকে আহ্বান জানান। স্থানটির পরিচিতি বটমূল হলেও, প্রকৃতপক্ষে যে গাছের ছায়ায় মঞ্চ তৈরি হয় সেটি বটগাছ নয়, অশ্বত্থ গাছ। ১৯৬০-এর দশকে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর নিপীড়ন ও সাংস্কৃতিক সন্ত্রাসের প্রতিবাদে ১৯৬৭ সাল থেকে ছায়ানটের এই বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের সূচনা।

"শুভ নববর্ষ, বাঙ্গালির প্রাণে বাজুক মনুষ্যত্বের দোলা" "আপন হৃদয়ে থাকুক, অপর চিহ্ন খোলা'।

১৯৭১ সাল উত্তাল শায়েস্তাগঞ্জ-হবিগঞ্জ  ও বাংলাদেশঃ১৯৭১ সাল শায়েস্তাগঞ্জে স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন অবস্থা এবং আমার অবস্থানঃ ...
25/04/2023

১৯৭১ সাল উত্তাল শায়েস্তাগঞ্জ-হবিগঞ্জ ও বাংলাদেশঃ
১৯৭১ সাল শায়েস্তাগঞ্জে স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন অবস্থা এবং আমার অবস্থানঃ
ডেপুটি ইউনিট কমান্ডার,
বীরমুক্তিযোদ্ধা গৌর প্রসাদ রায়
হবিগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ । সভাপতি, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম, হবিগঞ্জ জেলা শাখা ।

পরিচিতিঃ
১৯৪৮ সালের ১৮ই জানুয়ারী শায়েস্তাগঞ্জ পুরান বাজার সম্ভ্রান্ত ব্যবসায়ী পরিবারে জন্ম গ্রহণ করি। পিতা ব্রজেন্দ্র লাল রায়, মাতা আশালতা রায়। শায়েস্তাগঞ্জ হাই স্কুল হতে এস.এস.সি ও হবিগঞ্জ কলেজ হতে বি.এ । ছাত্রকালীন সময়ে ভাল ফুটবল খেলুয়ার ছিলাম। বৃন্দাবন কলেজে ছাত্র রাজনীতিতে জড়িত ছিলাম। হবিগঞ্জ মহকুমার ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলাম এবং ছাত্রলীগকে সু-সংগঠিত করি। আমার সময় হতেই ছাত্রলীগের উন্নতি শুরু হয় এবং বৃন্দাবন কলেজ ছাত্র ইউনিয়ন নির্বাচনে কদ্দুছ গৌর পরিষদ নামে আমি সাধারণ সম্পাদক হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করি। পরবর্তীতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে ঠিকাদার ব্যবসা ও ধান চাউলের ব্যবসায় জড়িত হই। আমি এক নাগারে শায়েস্তাগঞ্জ ইউনিয়ন পৌরসভার ৩৫ বৎসর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে আওয়ামী সংগঠনের সঙ্গে ওৎপ্রতোভাবে জড়িত ছিলাম।

স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন আমার অবস্থানঃ
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে হবিগঞ্জ সংগ্রাম কমিটির খাদ্য সরবরাহ ও পরিবহনের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলাম। তেলিয়াপাড়া চা-বাগানে মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে ট্রাকে করে খাদ্য সরবরাহ করি। বঙ্গবন্ধুর ডাকে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করার জন্য ভারতে পাড়ি জমাই। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে শীলচর অদূরে লোহারবন্দ নামক স্থানে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে জে.এল ডব্লিউ প্রশিক্ষণ নিয়ে ৪নং সেক্টরের কৈলা শহরে সাব-সেক্টরের অধীনে কোম্পানী কমান্ডার লে.ওয়াকিউজ্জামানের অধীনে একজন প্লাটুন কমান্ডার হিসাবে মনু নদীর তীরে নোমৌজা নামক স্থানে ডিফেন্সে যুদ্ধরত ছিলাম। এছাড়া চাতলাপুর বিওপি, মনু রেল স্টেশন, রাজনগর, বালাগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ, বিশ্বনাথ মোগলা বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধরত ছিলাম। আমি দুইবার নির্বাচিত হবিগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ডার ডেপুটি ইউনিট কমান্ডার । বর্তমানে এই হবিগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ডার ডেপুটি ইউনিট কমান্ডর ও হবিগঞ্জ জেলা সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম এর সভাপতি। আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের যোদ্ধাপরাধী মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সৈয়দ কায়সারের উল্লেখযোগ্য স্বাক্ষী ছিলাম। সত্যকে ধরে রাখাই আমার উদ্দেশ্য।

১৯৭১ সনে শায়েস্তাগঞ্জে স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন অবস্থা এবং আমার অবস্থানঃ
১৯৭০ সানের পাকিস্তানের গণ পরিষদ নির্বাচনে (এম.এল.এ) আওয়ামীলীগ এককভাবে পূর্ব পাকিস্তানের ১৬২টি আসনের মধ্যে ১৬০টি আসন জয়লাভ করে এবং প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে (এম.পি.এ) ৩১০টি আসনের মধ্যে আওয়ামীলীগ এককভাবে ২৯৮টি আসনে জয়লাভ করে। যার ফলে পাকিস্তানের শাসন ভার আওয়ামীলীগের হাতে ন্যস্ত হওয়ার কথা। অপর দিকে পশ্চিম পাকিস্তানের নির্বাচনে জুলফিকার আলী ভুট্টো সাহেবের পাকিস্তান পিপলস পার্টি সংখ্যা গরিষ্ট আসন পায়। এরই ফলশ্রুতিতে ভূট্টো সাহেব ও প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া বাঙালীরদের হাতে শাসন ক্ষমতা যাহাতে না দেওয়া যায় তাহার পর্দার আড়ালে কু পরামর্শ ও গভীর ষড়যন্ত্র করে ১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারী মাসের ২৮ তারিখ হঠাৎ করে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া পার্লামেন্টের অধিবেশন অনির্দিষ্ট কালের জন্য স্থগিত করে দেয়। অথচ মার্চ মাসের এক তারিখ পার্লামেন্টের প্রথম অধিবেশন বসার পূর্ব নির্ধারিত তারিখ ছিল। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার এই ঘোষণার বিরুদ্ধে সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ বিক্ষোভে ফেটে পরে। ঢাকা সহ সারা দেশে মিছিল আর মিটিং চলতে থাকে। কার্যত বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে পূর্ব পাকিস্তানের সকল সরকারি বেসরকারি কার্যক্রম চলতে থাকে। ইহাতে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার পূর্ব পাকিস্তানের শাসন ক্ষমতা অচল হয়ে পরে। ধানমন্ডির ৩২নং রোডের বাসা থেকে যে দিক নির্দেশনা দেওয়া হতো জনগণ তাই মেনে নিত। ৭ই মার্চ তারিখে বঙ্গবন্ধু বাঙ্গালি জাতির উদ্দেশ্যে ঢাকা রেসকোর্স ময়দানে ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেন। এই ভাসনের মধ্যেই বাঙ্গালি জাতিকে ঐক্যের গেরিলা যুদ্ধের এবং স্বাধীনতার নির্দেশ প্রদান করেন। ১৯৭১ এর ১০ মার্চ টিক্কা খানকে পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক প্রশাসন হিসাবে নিয়োগ দেন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান। এরই মধ্যে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান, ভূট্টো ও সেনাবাহিনীর কয়েক জন জেনারেলকে নিয়ে পূর্ব পাকিস্তানের ঢাকায় চলে আসেন। পূর্ব পাকিস্তানের উত্তাল রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও অসহযোগ আন্দোলন থামানোর জন্য বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলোচনা করার জন্য গোল টেবিল বৈঠক ডাকেন। বঙ্গবন্ধু ঐ ডাকে সারা দিলেন না এবং স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন আমার বুকের উপর গুলি, আমার লোককে নির্বিচারে হত্যা করা হয়।

আমি এই রক্তাক্ত লাশের উপর পা দিয়ে আলোচনায় যাইতে পারি না। বঙ্গবন্ধু শর্ত দিলেন আপনারা সামরিক আইন তুলে নেন এবং সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেন। পরিস্থিতি বেগতিক অনুধাবন করে বিভিন্ন প্রশাসনিক এবং সামরিক কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত একটি পরামর্শক দল নিয়ে ইয়াহিয়া খান ঢাকায় আসেন ১৫ মার্চ। এদলে ছিলেন বিচারপতি এ. আর কর্নেলিস, জেনারেল পীরজাদা, আই, এস, আই, জেনারেল আকবর, জেনারেল রেজভী, এম.এম আহমেদ এবং আওয়ামীলীগের পক্ষে এই বৈঠকে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া বঙ্গবন্ধুর শর্তে রাজি হয়ে সামরিক আইন তুলে নেন এবং সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেন। বঙ্গবন্ধুর সাথে অংশ নেন তাজ উদ্দিন আহমদ, খন্দকার মোস্তাক, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, কামরুজ্জামান এবং কামাল হোসেন সহ প্রথম বৈঠক হয় ১৬ই মার্চ। ২০শে মার্চ ১৯৭১ এর বিবৃতিতে বঙ্গবন্ধু বলেন “আমাদের জনগণ প্রমাণ করছে তারা সুচারুভাবেই তাদের নিজেদের কাজ চালিয়ে নিয়ে যেতে পারেন। উস্কানিমূলক তৎপরতা থেকে বিরত থাকার জন্য ধ্বংসাত্মক ব্যক্তিদের আমি হুঁশিয়ার করে দিচ্ছি”। তারপর ২১শে মার্চ বৈঠকে যোগ দেন ভূট্টো, আলোচনা চলতে থাকে। দীর্ঘ কয়েক দিন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া আলোচনা চালিয়ে গেলেন। ইহা ছিল প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার একটা ষড়যন্ত্র এবং কালক্ষেপনের সুযোগ নেওয়া। আলোচনা চলা অবস্থায় পশ্চিম পাকিস্তান থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গুলাবারুদ পূর্ব পাকিস্তানে মজুত করতে থাকে। ইহা ছিল প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার গোপন নির্দেশ। মার্চ মাসের ২৫ তারিখে হঠাৎ করে ইয়াহিয়া ও ভুট্টো আলোচনা অসমাপ্ত রেখে পশ্চিম পাকিস্তান চলে যায় এবং তৎকালীন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল নিয়াজীকে টিক্কা খান বাঙ্গালীদের কণ্ঠ স্তব্দ করে দেওয়া ও হত্যা যজ্ঞ চালানোর নির্দেশ দিয়ে যান। জেনারেল নিয়াজি মার্চ মাসের ২৫ তারিখ দিবাগত রাত্রে ১১ ঘটিকার সময় ঢাকায় ঘুমন্ত বাঙ্গালীদের উপর অপারেশন চার্জলাইট নামে পাক সেনাবাহিনী রাজারবাগ পুলিশ লাইন, ইপিআর, হেডকোয়ার্টার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক ছাত্র/ছাত্রী হলে অজস্র ট্যাংক, কামান, গুলাবারুদের বিস্ফোরন ঘটিয়ে ইতিহাসের জগণ্যতম হত্যাযজ্ঞ চালায়। মার্চের ২৫ তারিখ দিবাগত রাত ও ২৬ তারিখ এই দুই দিনে শুধু মাত্র ঢাকা শহরে প্রায় এক লক্ষ বাঙ্গালীকে হত্যা করে ২৫শে মার্চের দিবাগত রাত্রে বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামীলীগ নেতারা বুঝতে পারছিলেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কিছু একটা ঘটাইবে।

যারফলে বঙ্গবন্ধু তার সকল সহকর্মীগণকে নিরাপদে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেন এবং পিলখানায় ইপিআরের ওয়্যারলেসের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রত্যেক মহকুমার এমপিদের নিকট স্বাধীনতা ঘোষণার মেসেজ দেন। যার ফলে সারা বাংলাদেশে পাকিস্তানি সৈন্যদের উপর ইপিআর, পুলিশ, ছাত্রজনতা সংগঠিত হয়ে আক্রমণ শুরু করে দেয়। এই রাতেই বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যায়। হবিগঞ্জ থেকে মানিক চৌধুরীর নেতৃত্বে আনসার কমান্ডার ইউনুছ চৌধুরী সহ তৎকালীন মহকুমার এস.ডিও ডঃ আকবর আলী খান সাহেবের নিকট হইতে ট্রেজারিতে সংরক্ষিত চারশত রাইফেল ও গুলাবারুদ সংগ্রহ করা হয়। পাকবাহিনীকে আক্রমণ করার জন্য বেশ কয়েকটি ট্রাকে করে আনসার, মোজাহিদ, ছাত্রগণ শায়েস্তাগঞ্জ পুরান বাজারে এসে সমবেত হয়। এখান থেকে মানিক চৌধুরী সাহেব (এম.এল.এ) আমাকে (গৌর প্রসাদ রায়) খাদ্য সরবরাহ করার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। এবং উনার বাহিনী নিয়ে দারাগাঁও চা-বাগানে চলে যান। এদিকে শায়েস্তাগঞ্জ পুরান বাজারে খোয়াই নদীর উপরে লোহার নির্মিত যে ব্রীজ ছিল তাহা ডিনামাইট দ্বারা ভাঙ্গিয়া ফেলিলে উহার প্রতিবাদে অনেক লোক উত্তর বাজারের হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর আক্রমণ ও তাহাদের দোকান ঘর লুটপাঠ করার জন্য আগাইতে থাকিলে তৎক্ষনাৎ উত্তর উবাহাটা গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক মিয়ার ছেলে আঃ সালেক ও কমরেড আব্দুল ওয়াদুদ, ঠিকানা-উত্তর উবাহাটা, তাহাদের লাইসেন্স করা নিজস্ব বন্দুক দিয়ে তাদেরকে প্রতিহত করে এক সাহসী ভুমিকা রাখে। শায়েস্তাগঞ্জ পুরান বাজারের আওয়ামীলীগ সভাপতি ডাঃ মাহতাব উদ্দিন সাহেবকে সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক, জনাব সুফি মিয়া চৌধুরী (জিকুয়া) কে যুগ্ম আহবায়ক, শেখ মুজিবুর রহমান, ঠিকানা- সাবাসপুর, উনাকে সদস্য সচিব, জমশেদ মিয়া, ঠিকানা-কুঠিরগাঁও এবং শাহাবাজ মিয়া, ঠিকানা-উত্তর উবাহাটা, তাদেরকে দপ্তর সম্পাদক এবং সর্ব জনাব ফটিক মিয়া, ঠিকানা-কুঠিরগাঁও, কমরেড আব্দুল ওয়াদুদ, ঠিকানা-উত্তর উবাহাটা, ডাঃ সিরাজুল হক চৌধুরী, ঠিকানা-উত্তর উবাহাটা, ছুরুক মিয়া, ঠিকানা-দক্ষিণ লেঞ্জাপাড়া, রমজান মিয়া, ঠিকানা-লস্করপুর, আঃ হামিদ, ঠিকানা-উত্তর উবাহাটা, আলী মিয়া চৌধুরী, ঠিকানা-তাউসি সহ আরো অনেককে নিয়ে কমিটি গঠন করা হয় এবং আমাকে (গৌর প্রসাদ রায়) খাদ্য সংগ্রহ ও যোগান দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়।

অফিসের স্থান : আঞ্চলিক সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক ডাঃ মাহতাব উদ্দিন সাহেবের ছেলে ডাঃ মহিউদ্দিন আহমদ জিতু মিয়ার ফার্মেসীর সকল ঔষধপত্র উনার নিজ বাড়িতে সরাইয়া নিয়া যান এবং তথায় অফিসের স্থান করে দেন। অফিসের নিরাপত্তার জন্য আনসার কমান্ডার আব্দুর রাজ্জাক, এলেমান মিয়া, আব্দুল মতিন, ঠিকানা-কুঠিরগাঁও, তোয়াজউল্লাহ, ওমর আলী উভয়ের ঠিকানা-উত্তর উবাহাটা, কচির মাহমুদ, ঠিকানা-লস্করপুর সহ সশস্ত্র অস্ত্রধারী পাহাড়াদার হিসাবে দায়িত্ব পালন করিত। ২৫শে মার্চের পর থেকে শায়েস্তাগঞ্জে সকল যানবাহন ও যোগাযোগ বন্ধ থাকায় জেলার বিভন্ন অঞ্চলের লোকজন যার যার গন্তব্য পথে পায়ে হেটে যাওয়া ছাড়া বিকল্প কোনো সুযোগ ছিল না। বিকাল হতে রাত ১০ ঘটিকা পর্যন্ত শায়েস্তাগঞ্জ পুরান বাজার বর্তমান দুর্গা মন্দির মাঠে আশ্রয় কেন্দ্র ও লঙ্গরখানা চালু থাকিত। যাত্রীদের রাত্রীযাপন ও খাদ্য হিসেবে খিচুরী পরিবেশন করা হতো।

টেলিফোন বা কন্ট্রোল রুম : শায়েস্তাগঞ্জ পুরান বাজারে আমদের আত্মিয় জনাব বিরজা কান্ত রায়ের ফেলে যাওয়া দোকান ঘরে কন্ট্রোল রুম করা হয়েছিল। তাহা শায়েস্তাগঞ্জ পুরান বাজার হতে মাধবপুর ও হবিগঞ্জ পর্যন্ত যোগাযোগের ব্যবস্থা ছিল। এই কন্ট্রোল রুমের দায়িত্ব পালন করিত আব্দুল খালেক, ঠিকানা-দক্ষিণ লেঞ্জাপাড়া, কমরেড আব্দুল ওয়াদুদ, ঠিকানা-উত্তর উবাহাটা, মানব মিয়া, ঠিকানা-বিক্রমপুর (ঢাকা), আলী মিয়া চৌধুরী, ঠিকানা-তাউসি, হাবিবুর রহমান চৌধুরী, ঠিকানা-ময়নাবাদ (চুনারুঘাট)। শায়েস্তাগঞ্জ স্টেশনের আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক দিদার হোসেন সাহেবের নেতৃত্বে জিলা বোর্ডের অফিসে সর্ব জনাব নিম্বর আলী তালুকদার, আব্দুর রাজ্জাক রাজা মিয়া, আজব আলী, প্রমুখ ব্যক্তিগণের পরিচালনায় গণসংযোগ ও মিছিল মিটিং পরিচালিত হইত। মানিক চৌধুরীর নেতৃত্বে মুক্তি বাহিনীর যে ইউনিট কামাইছড়াতে অবস্থান নিয়েছিল। পরবর্তীতে মেজর সি আর দত্ত যোগ দিয়ে ঐ ইউনিটকে একটি সুশৃঙ্খল ও গতিশীল যোদ্ধাবাহিনী হিসেবে গঠন করে শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার, শেরপুর পর্যন্ত এগিয়ে নিয়ে যান। শেরপুরে কুশিয়ারা নদীর অপর তীরে পাক বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ সমরে তুমুল লড়াই হয়। সেই লড়াইয়ে হাফিজ উদ্দিন ও মফিল হোসেন নামে শায়েস্তাগঞ্জের দুই জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয় ।

উক্ত দুই জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা বড়চর প্রাইমারী স্কুল প্রাঙ্গণের মাজারে শায়িত আছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে পাক বাহিনী টিকতে না পেরে সাদীপুরের অপর প্রান্তে চলে যায়। সেইখানেও মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে তুমুল লড়াই হয়। সাদিপুরে ৩ দিন লড়াইয়ের পর পাক বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের উপরে Air Attack শুরু করে। ফলে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটে ও বিচ্ছিন্ন হয়ে পরে।

* অপরদিকে এপ্রিলের ২৪ ও ২৫ তারিখ মাধবপুরের তেলিয়াপাড়া জগদীশপুর তেমুনিয়াতে মুক্তি বাহিনীর সঙ্গে তুমুল যুদ্ধ হয়। সেনাবাহিনীর ফোর বেঙ্গল (Four Bengal) যুদ্ধ করে পাক বাহিনীর যথেষ্ট পরিমাণে ক্ষতি সাধন ও অনেক পাক সেনাকে হত্যা করতে সক্ষম হয়। পাক বাহিনীর আক্রমণে শেষ পর্যন্ত ঠিকতে না পেরে ফোর বেঙ্গল (Four Bengal) ভারতের সুন্দর টিলায় অবস্থান নেয়। ২৯শে এপ্রিল এডভোকেট মুস্তফা আলী সাহেবের বাস ভবনে মানিক চৌধুরী সাহেব, এনামুল হক মোস্তফা শহিদ সাহেব, মোস্তফা আলী সাহেবের ছেলে মোহাম্মদ আলী টিপুর উপস্থিতিতে একটি মিটিং হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে খাদ্য সামগ্রী কিভাবে পৌঁছানু যায় আলোচনা করে সিদ্ধান্ত হয় যে, শায়েস্তাগঞ্জ খাদ্য গুদাম হইতে খাদ্য সংগ্রহ করে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পৌছাইতে হবে। আমি (গৌর প্রসাদ রায়) এই সময় শায়েস্তাগঞ্জ কন্ট্রোল রুমে ছিলাম। কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে বিষয়টি আমাকে অবগত করা হয়। মানিক চৌধুরী কর্তৃক শায়েস্তাগঞ্জ খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা বরাবরে একটি চিঠি এনামুল হক মোস্তফা শহিদ সাহেব, মোহাম্মদ আলী টিপু, ছাবু মিয়া চৌধুরী (গাজীপুর) সহ আরো কয়েক জনকে সঙ্গে নিয়ে শায়েস্তাগঞ্জে আমার বাসায় আসে। আমাকে সঙ্গে নিয়ে খাদ্য গুদামের কর্মকর্তার হাতে চিঠিটি পৌঁছে দেন। খাদ্য গুদামের তৎকালীন O.C.L.S.D চিঠিটি পেয়ে আমাদেরকে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে বলেন। তিনি তৎকালীন ফুড কন্ট্রোলার (সাব ডিভিশনাল) আব্দুল আজিজ সাহেবের সঙ্গে যোগাযোগ করে খাদ্য গুদামে আসার জন্য অনুরোধ করেন। সে অনুসারে আব্দুল আজিজ সাহেব খাদ্য গুদামে এসে O.C.L.S.D আব্দুল করিম সাহেবকে গুদাম খুলে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিলে সঙ্গে সঙ্গে জনগণ খাদ্য গুদাম থেকে খাদ্য সংগ্রহ শুরু করে।

আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য পূর্ব থেকেই গুদামে নিয়ে আসা দুটি ট্রাকে খাদ্য তুলতে থাকি। আনুমানিক সাড়ে বারটার (১২.৩০) দিকে সৈয়দ কায়সার ও তার ভাই ফয়সল সহ কায়সার বাহিনীর কয়েক জন সদস্য একটি জিপে করে খাদ্য গুদামে এসে পৌঁছে এবং গাড়ী থেকে নেমে কারো সঙ্গে কোনো কথা না বলে প্রায় ১০ মিনিট অবস্থান করে আবার জিপে উঠে শায়েস্তাগঞ্জ পুরান বাজারের দিকে চলে যায়। কায়সার চলে যাওয়া পর আনুমানিক বেলা একটা ত্রিশ (১.৩০) মিনিটের দিকে কিছু সংখ্যক লোক পশ্চিম দিক থেকে দৌড়াইয়া এবং কয়েক জন সাইকেল আরোহি সুতাং শাহজিবাজার থেকে আসছিল এবং চিৎকার করে বলাবলি করছিল পাঞ্জাবীরা আসিতেছে পালাও পালাও। উল্লেখ থাকা প্রয়োজন যে শায়েস্তাগঞ্জ অঞ্চল ২৯শে এপ্রিল রোজ বৃহস্পতিবার বেলা একটা ত্রিশ মিনিটের পূর্ব পর্যন্ত হানাদার বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত ছিল। শায়েস্তাগঞ্জ পাক বাহিনী আসা মাত্রই নিমেষের মধ্যেই খাদ্য গুদামের লোকজন পালাইয়া যায়। গুদামের কর্মকর্তা কর্মচারীরাও আত্মরক্ষার্থে গুদামের ভিতরে আত্মগোপন করে থাকে। আমি তখন কিংকর্তব্য বিমুর হয়ে আত্মগোপনে চলে যাই। ঐদিন কায়সার শায়েস্তাগঞ্জে পুরান বাজারে পাক সেনাবাহিনীকে দিয়ে ডাঃ সালেহ আহমদ ও হীরেন্দ্র সাহা (হীরু বাবু) হবিগঞ্জ থেকে বাল্লা যাইবার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়া পুরান বাজার আসিলে উনাদেরকে ধরে ফেলে। এবং নৃশংসভাবে অত্যাচার করে গুলি করে হত্যা করে লস্করপুরে রমজান মিয়ার বাড়িতে খবর দেয়। কায়সার পাকবাহিনীকে শায়েস্তাগঞ্জ ডাক বাংলোতে অফিস স্থাপন করে দেয়। এই ডাক বাংলো থেকেই জুলুম হত্যা, নির্যাতন ও লুণ্ঠন চালাত। সৈয়দ মহিবুল হাসান, সৈয়দ আঃ আউয়াল সহ আরো অনেকে শান্তি কমিটি গঠন করে। পাক বাহিনী শায়েস্তাগঞ্জের ব্যবসায়ী ঢাকাইয়া খলিফা উরুপে হাফিজ উদ্দিন ও তার দুই ছেলে (আঃ হান্নান জয়নাল ও নূর মিয়া) কে শায়েস্তাগঞ্জে খোয়াই নদীর রেল ব্রীজের নিচে নামিয়ে গুলি করে হত্যা করে। খোয়াই নদীর সড়ক ও জনপথের ব্রীজটি মুক্তিবাহিনী এপ্রিলের আনুমানিক ১৫ তারিখ পাকসেনাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য ভেঙ্গে দেয়। ফলে পাক বাহিনী পুরান বাজারের রেলওয়ে ব্রীজটিকে সড়ক যোগাযোগের স্বার্থে কাঠের পাঠাতন দিয়ে লস্করপুর রেলগেইট হইতে এই ব্রীজ দিয়ে রেল ও মটর গাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা করে।

ওরা খোয়াই নদীর রেলওয়ে ব্রীজের পূর্ব প্রান্তে একটি বড় ভেংকার ও একটি ছাউনি নির্মান করে চেকপোষ্ট বসায়। ট্রেন ও মটরের যাত্রীগণকে নামিয়ে তল্লাশি করে সন্দেহজনক ব্যক্তিগণকে আটকে রেখে অত্যাচারের মাধ্যমে জিজ্ঞাসাবাদ করিত এবং সব ধরনের নির্যাতন শেষে খোয়াই নদীর তীরে নামিয়ে গুলি করে হত্যা করত। এইভাবে অসংখ্য লোককে ওরা হত্যা করেছিল।

• হবিগঞ্জ মহকুমার খাদ্য কর্মকর্তা জনাব মোঃ আজিজ, ঠিাকানা- ব্রাহ্মণবাড়িয়া। চীফ ইন্সপেক্টর আঃ খালেক, ঠিকানা-সিলেট। O.C.L.S.D রেজাউল করিম, ঠিকানা-চাঁদপুর (কুমিল্লা)। দারোয়ান গেনাউল্লাহ, ঠিকানা-বহুলা। দারোয়ান আঃ রহমান, ঠিকানা-বহুলা। দারোয়ান মাজত আলী, ঠিকানা-দক্ষিণ লেঞ্জাপাড়া। খাদ্য ঠিকাদার তারা মিয়া, ঠিকানা-সুলতান মাহমুদপুর, এই সাতজনকে ২৯শে মে রেলওয়ে ব্রীজের নিচে সৈয়দ কায়সারের সক্রিয় সহযোগিতায় গুলি করে হত্যা করে। * পাক বাহিনী জনাব মোক্তার মিয়া, বাড়ি কদমতলী, জনাব ইব্রাহিম,বাড়ি তালুঘরাই এই দুইজনকে ও গুলি করে হত্যা করে। * পাক বাহিনী চুনারুঘাট উপজেলার ৪নং পাইকপাড়া ইউ/পির ফুলপুর গ্রামের আর্ট (০৮) জনকে ধরে এনে শায়েস্তাগঞ্জ বিরামচর গ্রামের রাধাগোবিন্দ মন্দিরের সন্নিকটে গুলি করে হত্যা করে মাটি চাপা দেয় । তাদের নামগুলি যথাক্রমে-
(ক) পুলক চন্দ্ৰ দেব, পিতা- গোবিন্দ চন্দ্ৰ দেব।
(খ) শ্যামসুন্দর দেবনাথ, পিতা- গোবিন্দ চন্দ্ৰ দেব।
(গ) প্রফুল্ল দেবনাথ, পিতা- গোবিন্দ চন্দ্ৰ দেব।
(ঘ) গোপেন্দ্র দেবনাথ, পিতা- গোবিন্দ চন্দ্ৰ দেব।
(ঙ) শ্যামচরণ দেবনাথ, পিতা- কমলা চন্দ্ৰ দেবনাথ। (চ) রাজেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ, পিতা- কৈলাস চন্দ্র দেবনাথ
(ছ) মাখন চন্দ্ৰ দেবনাথ, পিতা- অংকু চন্দ্র দেবনাথ।
(জ) ঠাকুরধন দেবনাথ, পিতা- প্রকাশ চন্দ্র দেবনাথ। সর্ব সাং- ফুলপুর, শাকির মামুদ, থানা-চুনারুঘাট, হবিগঞ্জ। পাক বাহিনী লালচাঁন্দ চা-বাগান হইতে জনাব আনু মিয়া, পিতা-আবু মিয়া । কৃষ্ণ বাউরী, পিতা-বিহারী বাউরী।রাজকুমার, পিতা-যণমুয়া গোয়ালা। বৃন্দাবন বাউরী, পিতা- কৃষ্ণ বাউরী । সুশীল বাউরী, পিতা-মৃত কৃষ্ণ বাউরী। নেপু বাউরী, পিতা-সন্ন্যাসী বাউরী। লাশ যায়, পিতা-হরিদাশ বাউরী। রাজেন্দ্র রায়, পিতা-বিহারী রায়। গহর রাম, পিতা-বিহারী রায়। মহাদেব বাউরী, পিতা-নিতাই বাউরী। দীপক বাউরী, পিতা-টকা বাউরী। সর্ব সাং-লালচান্দ চা বাগান। ১৯৭১ সনে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়কালে পাকহানাদার বাহিনী তাদেরকে ধরে এনে শানোজাগঞ্জ রেলওয়ে জংশন সংলগ্ন দিঘীর পাড়ে হত্যা করে (বর্তমানে বধ্যভূমি) মাটি চাপা দেয়। মিরপুরের পার্শ্ববর্তী গ্রাম হইতে পাকবাহিনী ১০ জান কৃষককে ধরে এনে খোয়াই নদীর রেলওয়ে ব্রীজের পাশে গুলি করে হত্যা করে। ভাগ্যক্রমে একজন বেঁচে যায়। সে বাড়িতে গিয়ে তার সঙ্গীয় ৯ জনের পরিবারকে পাকবাহিনী কর্তৃক নিহত হওয়ার সংবাদটি দেয়।

১৯৭১ এর ১৮ এপ্রিল বানিয়াচং উপজেলা হালদারপুর গ্রামে পাক বাহিনী বিমান আক্রমণ করে প্রায় ১২ জনকে হত্যা করে এবং ইহাতে অনেক আহত হয়। এই ক্ষত চিহ্ন নিয়ে এখনও অনেকে বেঁচে আছেন।

১৯৭১ এর ১৮ সেপ্টেম্বর লাখাই উপজেলার কৃষ্ণপুর গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের নাম জানা ১২৭ জনকে এবং অজানা আরো অসংখ্য লোককে পাক বাহিনী গুলি করে হত্যা করে, তাহারাও দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে পালটা আক্রমণ করে বীরের মত দেশের স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিয়েছিল। সেখানে বঙ্গবন্ধুর মোৱাল সহ ১২৭ জনের নাম খুদাই করে একটি সুন্দর দর্শনীয় স্থাপনা কৃষ্ণপুরে সাক্ষ্য বহন করে।

আজমিরীগঞ্জ উপজেলা বদলপুর গ্রামে ১৬ নভেম্বর পাক বাহিনীর সাথে যুদ্ধে জগৎজ্যোতি দাস নিহত হন। তাহার লাশকে পাক বাহিনী অত্যাচার করে নদীর জলে ভাসিয়ে দেয়। তাহাকে বীর উত্তম পদক দেওয়া হয়। (মরনোত্তর)। তাহার স্মৃতিসৌধ আজমিরীগঞ্জে সদরে অবস্থিত আছে ।

চুনারুঘাট উপজেলার রেমা চা-বাগানে মুক্তিযোদ্ধাদের পাক বাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে রমিজ উদ্দিন নিহত হয়। তাহাকে বীর উত্তম (মরনোত্তর) পদক দেওয়া হয়। তাহার কবর রেমা ফরেস্ট অফিসের সংলগ্ন স্থানে দেওয়া হয়। রমিজ উদ্দিন বীর উত্তমের নামে ঢাকা সেনা নিবাসে শহীদ রমিজ উদ্দিন বীর উত্তম নামে একটি মহা বিদ্যালয় অবস্থিত আছে। আমরা তাহাদের জন্য গর্ব অনুভব করি। তাহারা বাঙ্গালি জাতির কাছে অমর হয়ে থাকবে।

৪ ঠা এপ্রিল মুক্তিযুদ্ধের প্রথম বৈঠকটি মাধবপুরের তেলিয়াপাড়া চা বাগানের ডাক বাংলায় অনুষ্ঠিত হয়। এই বৈঠকে নেতৃত্ব দেন কর্ণেল এ.এ. মাनী (যিনি পরবর্তীতে জেনারেল), এম. এ. রব (MLA), মানিক চৌধুরী সাহেব (MLA), এ্যাডঃ মোস্তফা আলী সাহেব (M.L.A), এনামুল হক মোস্তফ শহীদ সারে (MPA), মৌলানা আছাদ আলী সাহের (M.P.A), গোপাল মহারত্ন (M.PA), সেনাবাহিনীর মেজর শফিউল্লাহ, মেজর খালেদ মোশাররফ, মেজর সি.আর. দত্ত, ক্যাপস্টোন নাসির, ক্যাপ্টেন মতিউর রহমান, লেঃ হেলাল মোর্শেদ খাঁন (বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের চেয়ারম্যান), লেঃ সুবিদ আলী ভূঁইয়া, লেঃ সৈয়দ ইব্রাহীম, ছাত্র নেতা (গৌর প্রসাদ রায়), মোঃ আলী পাঠান, মাধবপুর (ছাত্র নেতা)। এক গাড়ি খাদ্য নিয়া সেদিন উপস্থিত ছিলাম। এখানেই বসে মুক্তিযোদ্ধের প্রথম পাক বাহিনীকে আক্রমণ করার এবং যুদ্ধ পরিচালনা করার প্রথম পদক্ষেপ নেওয়া হয়। ফোর বেঙ্গল (Four Bengal) এর বেশ কয়েকজন সেনা অফিসার মুক্তিযোদ্ধের এই রণকৌশল তৈরী করেন। এখানেই প্রথম সারা বাংলাদেশকে তিনটি সেক্টরে বিভক্ত করা হয় এবং তিনটি ফোর্সের কমান্ড গঠন করা হয়।

১। মেজর শফিউল্লার নেতৃত্বে এস (S) ফোর্স
২। মেজর জিয়ার নেতৃত্বে জেড (Z) ফোর্স
৩। মেজর খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে কে (K) ফোর্স।

এই মাধবপুরের তেলিয়াপাড়াতে গণপ্রজাতন্ত্রি বাংলাদেশ সরকার গঠন করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু তেলিয়াপাড়া চা-বাগানের ডিফেন্স নিরাপত্তা জনিত কারণে সরিয়ে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সিদাই থানার অন্তর্গত সুন্দর টিলার নামক স্থানে স্থানান্তরিত হয়। পরে বাংলাদেশ সরকার ১৭ই এপ্রিল মেহেরপুরের বৈদ্যনাথ তলায় (অস্থায়ী সরকার) আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করে। বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপ- রাষ্ট্রপতি, তাজ উদ্দিন আহমদকে প্রধান মন্ত্রী, এম মনসুর আলী, এম কামরুজ্জামানকে নিয়ে মন্ত্রী পরিষদ গঠন করা হয়। এই মন্ত্রী পরিষদকে পুলিশবাহিনীর এসপি (SP) মাহবুব স্যার বার (১২) জন আনসার বাহিনীর সদস্য নিয়ে (Guard of Honour) গার্ড অফ অনার প্রদান করেন। মুজিবনগর সরকারের উপদেষ্ঠা পরিষদে ছিলেন (১) মৌলানা ভাসানী (২) অধ্যাপক্ষ মোজাফ্ফর আহমেদ (৩) কমরেড মনি সিং (8) মনোরঞ্জন ধর।

প্রবাসী সরকার গঠনের পর জেনারেল ওসমানীকে সর্বাধিনায়ক, জেনারেল এম.এ রবকে চীফ অব ষ্টাফ, এয়ারভাইস মার্শাল এ কে খন্দকারকে ডেপুটি চীফ অব ষ্টাফ করা হয়। এবং সমগ্র বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে
ভাগ করা হয়।
সেক্টর নং-১
এই সেক্টরের নেতৃত্বে ছিলেন মেজর জিয়াউর রহমান বীর উত্তম। সময় সীমা ঃ (এপ্রিল-জুন) পরবর্তীতে (জুন-ডিসেম্বর) নেতৃত্বে ছিলেন মেজর রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম।
এলাকা সমূহ : চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, ফেনী নদী পর্যন্ত ।

সেক্টর নং-২ ঃ
এই সেক্টরের নেতৃত্বে ছিলেন মেজর খালেদ মোশাররফ বীর উত্তম।
সময় সীমা ঃ (এপ্রিল-সেপ্টেম্বর) পরবর্তীতে (সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর) পর্যন্ত নেতৃত্বে ছিলেন মেজর এ.টি.এম হায়দার বীর উত্তম। এলাকা সমূহ : নোয়াখালি, কুমিল্লা, আখাউড়া, ভৈরব রেল লাইন পর্যন্ত এবং ঢাকা ও ফরিদপুর জেলার কিছু অংশ ।

সেক্টর নং-৩ঃ
মেজর কে.এম শফিউল্লাহ বীর উত্তম এর নেতৃত্বে ছিলেন। সময় সীমা ঃ (এপ্রিল-ডিসেম্বর) পরবর্তীতে মেজর এ.এন.এম নুরুজ্জামান (সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর) দায়িত্বে ছিলেন।
এলাকা সমূহ : আখাউড়া, ভৈরব রেল লাইন থেকে পূর্ব দিকে কুমিল্লা জেলা, সিলেট জেলার হবিগঞ্জ, ময়মনসিংহ জেলার কিশোরগঞ্জ ও ঢাকা জেলার কিছু অংশ ।

সেক্টর নং-৪ঃমেজর চিত্ত রঞ্জন দত্ত বীর উত্তম।
সময় সীমা ঃ (এপ্রিল-ডিসেম্বর)।
এলাকা সমূহ ঃ সিলেট জেলার পূর্বাঞ্চল, খোয়াই শায়েস্তাগঞ্জ রেল লাইন থেকে উত্তর দিকে সিলেটের ডাউকি সড়ক পর্যন্ত ।

সেক্টর নং-৫ ঃমেজর মীর সৈকত আলী বীর উত্তম।
সময় সীমা : (এপ্রিল-ডিসেম্বর)।
এলাকা সমূহ ঃ সিলেট জেলার পশ্চিম এলাকা, সিলেটের ডাউকি থেকে সুনামগঞ্জ ও ময়মনসিংহ জেলা সীমানা পর্যন্ত।

সেক্টর নং-৬ঃ উইং কমান্ডার এম বাশার বীর উত্তম সময় সীমা ঃ (এপ্রিল-ডিসেম্বর)।
এলাকা সমূহ : ব্রহ্মপুত্র নদের তীরাঞ্চল ছাড়া সমগ্র রংপুর জেলা

সেক্টর নং-৭:দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও পর্যন্ত। মেজর নাজমুল হক বীর উত্তম।
সময় সীমা : (জুলাই-আগস্ট) পর্যন্ত। পরবর্তীতে কাজী নুরুজ্জামান
(আগস্ট-ডিসেম্বর) পর্যন্ত দায়িত্বে ছিলেন। এলাকা সমূহঃ রাজশাহী জেলা, দিনাজপুর, বগুড়া ও পাবনা জেলা।

সেক্টর নং-৮ :মেজর আবু ওসমান চৌঃ বীর উত্তম। সময় সীমা ঃ (এপ্রিল-আগস্ট) পর্যন্ত। পরবর্তীতে মেজর এম.এ মঞ্জুর বীর
উত্তম (আগস্ট-ডিসেম্বর) পর্যন্ত দায়িত্বে ছিলেন। এলাকা সমূহ ঃ কুষ্টিয়া, যশোর, ফরিদপুরের দৌলতপুর, সাতক্ষীরা, খুলনা জেলা।

সেক্টর নং-৯ :মেজর এম.এ জলিল বীর উত্তম। সময় সীমা ঃ (এপিল-ডিসেম্বর) পর্যন্ত।অঞ্চল সমূহ : সাতক্ষীরা, দৌলতপুরের সড়ক সহ খুলনার সমগ্র দক্ষিণাঞ্চল, বরিশাল ও পটুয়াখালি ।

সেক্টর নং-১০ঃঅভ্যন্তরীন নৌপথ ও সমুদ্রউপকুল অঞ্চল, চালনাবন্দর, চট্টগ্রাম বন্দর, সব এলাকার সেক্টর কমান্ডারদের নির্দেশে পরিচালিত হইত।

সেক্টর নং-১১মেজর এম আবু তাহের বীর উত্তম।
সময় সীমা ঃ (আগস্ট-নভেম্বর) পর্যন্ত। পরবর্তীতে স্কোয়াড্রন লিডার এম হামিদ উল্লাহ খাঁন বীর উত্তম (নভেম্বর-ডিসেম্বর) পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।

অঞ্চল সমূহ ঃ কিশোরগঞ্জ ছাড়া সমগ্র ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল পর্যন্ত। ১৯৭১ইং জুন মাসের ২য় তারিখে আমি (গৌর প্রসাদ রায়) পায়ে হেটে কালেঙ্গা পাহাড় হয়ে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের অন্তর্গত গোবিন্দসিং আশারাম বাড়ী পৌঁছি। তারপরে আগরতলা যাই। আগরতলা কংগ্রেস ভবন হইতে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার জন্য নাম অন্তর্ভুক্ত করি। এখান হইতে আমাদেরকে আসাম রাজ্যের লোহারবন্দ ট্রেনিং ক্যাম্পে পাঠানো হয়। সেখানে বেসিক ট্রেনিং জে.এল.ডাব্লিউ (J.L.W.) ট্রেনিং সহ এক্সপ্লোসিভ ট্রেনিং নিয়ে ৪নং সেক্টরের অধীনে কৈলা শহর সাব-সেক্টরে যোগদান করি। আমার কোম্পানী কমান্ডার (Sub Sector Commander) লেঃ ওয়াকিউজামান এর অধীনে একজন প্লাটুন কমান্ডার হিসেবে মনু নদীর তীরে নয় মৌজা নামক স্থানে ডিফেন্সে যুদ্ধরত ছিলাম। এছাড়া চাতলাপুর বিওপি, মনু রেল ষ্টেশন, টেংরা বাজার, রাজনগর, বালাগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ, বিশ্বনাথ, মোগলাবাজার সহ বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধরত ছিলাম। বর্তমানে হবিগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ডের ডেপুটি ইউনিট কমান্ডর ও হবিগঞ্জ জেলা সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের সভাপতি হিসেবে দায়িত্বরত আছি।

১লা ডিসেম্বর পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। ফলে ভারতের মিত্রবাহিনী ও আমাদের মুক্তিবাহিনী একযোগে সাঁড়াশি আক্রমণ করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে ১৬ই ডিসেম্বর ৯৩ হাজার সশস্ত্র পাকিস্তানি সৈন্যের ঢাকা রেসকোর্স ময়দানে আত্মসমর্পনের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিজয় লাভ করে। এই আত্মসমর্পন অনুষ্ঠানে মিত্রবাহিনীর নেতৃত্ব দেন ইস্টার্ন কমান্ডের কমান্ডিং অফিসার জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা এবং মুক্তিবাহিনীর পক্ষে ছিলেন উপ-সেনা প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল এ.কে খন্দকার এবং পাকিস্তানের পরাজিত সেনা প্রধান জেনারেল নিয়াজী, এই আত্মসমর্পন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়। ৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১ শায়েস্তাগঞ্জ এলাকা হানাদার পাকবাহিনীর দখল হইতে মুক্ত হয়। আমরা স্বাধীন বাংলাদেশের মুক্ত আকাশে, মুক্ত মাটিতে চলতে পেরে মহান মুক্তিযুদ্ধের গর্ব অনুভব করি এবং লাল সবুজের পতাকা উড্ডয়ন করি ও জয় বাংলার প্রতিধ্বনিতে শায়েস্তাগঞ্জ মুখরিত হয়ে উঠে। এই যুদ্ধে বাংলাদেশের ৩০ লক্ষ শহীদের এবং দুই লক্ষ মা-বোনের শ্লীলতাহানির মধ্য দিয়ে এই বিজয় অর্জিত হয়।

ভারতের প্রায় ১০ হাজার সৈন্য শহীদ ও (Missing) লাপাত্তা হয়েছে। মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর মধ্যে এই যুদ্ধ রক্তের সম্পর্ক তৈরী করেছে। এই বন্ধন চিরদিন অটুট থাকবে।

“জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু”

বীরমুক্তিযোদ্ধা গৌর প্রসাদ রায়
ডেপুটি ইউনিট কমান্ডার
হবিগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সভাপতি সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম, হবিগঞ্জ জেলা শাখা ।
তারিখ ঃ ১৭-০৩-২০২১ইং

Address


Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন হউক আগামীর অঙ্গীকার- প্রেরণা-১৯৭২বীর নজমুল posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Videos

Shortcuts

  • Address
  • Alerts
  • Videos
  • Claim ownership or report listing
  • Want your business to be the top-listed Media Company?

Share