মুক্তিযুদ্ধের হাতিয়াব,জয় বাংলার হাতিয়ার,গর্জে উঠুক আরেকবার১৯৭৮-নাজমুল হব

  • Home
  • মুক্তিযুদ্ধের হাতিয়াব,জয় বাংলার হাতিয়ার,গর্জে উঠুক আরেকবার১৯৭৮-নাজমুল হব

মুক্তিযুদ্ধের হাতিয়াব,জয় বাংলার হাতিয়ার,গর্জে উঠুক আরেকবার১৯৭৮-নাজমুল হব স্মৃতিরক্ষার্থে:ভারতীয়তালিকা ২৫৮৪৫লাল মুক্তিবার্তা ০৫০৩০১০১৬৫ গেজেট ১৫৫সমন্বিত তালিকা(প্রথমপর্ব)১৭৬৫

২২ (বাইশে) ডিসেম্বর বীর মুক্তিযোদ্ধা নাজমুল হোসেন লিলুর বীর-পিতা আলহাজ্ব মরহুম মোহাম্মদ শামসুল হোসেন সাহেবের ১৭ তম মৃত্য...
29/12/2023

২২ (বাইশে) ডিসেম্বর বীর মুক্তিযোদ্ধা নাজমুল হোসেন লিলুর বীর-পিতা আলহাজ্ব মরহুম মোহাম্মদ শামসুল হোসেন সাহেবের ১৭ তম মৃত্যুবার্ষিকী। উপলক্ষে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে উনার নিজ গ্রামের বাড়িতে,উক্ত মিলাদ মাহফিলে সকল বীর মুক্তিযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধার পরিবার আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধব এলাকাবাসী ও দেশবাসীকে উপস্থিত হয়ে রুহের মাগফেরাত কামনা করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা যাইতেছে।

৬ ই ডিসেম্বর হবিগঞ্জ মুক্ত দিবস,
29/12/2023

৬ ই ডিসেম্বর হবিগঞ্জ মুক্ত দিবস,

31/05/2023

রাজাকার ঘৃণা ও প্রতিরোধ জাতীয় দিবস। রাজাকার ঘৃণা ও প্রতিরোধ দিবস কেন?

31/05/2023

ওয়ারেন্ট অফ প্রেসিডেন্সি অনুযায়ী-
একজন রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি-প্রাপ্ত বীরমুক্তিযোদ্ধার রাষ্ট্রীয় পদস্তর নির্ধারণের জন্য দীর্ঘদিন যাবত দাবি জানিয়ে আসছে।আইন করে গেজেট নোটিফিকেশন করার জন্য দাবি দীর্ঘদিনের।
পক্ষে গর্জে উঠ বাংলাদেশ।

আজ একুশে ফেব্রুয়ারি -আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী, আমি কি ভুলিতে পারি -অ  -আ ...
21/02/2023

আজ একুশে ফেব্রুয়ারি -আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।
আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী, আমি কি ভুলিতে পারি -অ -আ -ক -খ - - আ-মরি বাংলা ভাষা।একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের -রফিক সালাম বরকত জব্বার সহ-আরো অনেক নাম-না-জানা শহীদদের প্রতি রইল শ্রদ্ধাঞ্জলি।

একুশের সংগ্রাম এখনো অব্যাহত আছে। তবে আশার কথা এই যে একুশের মধ্যে যে বাঙালি জাতীয় চেতনা ও আবেগ আছে, তা প্রচণ্ড শক্তি হিসেবে এখনো বর্তমান রয়েছে। আমাদের অস্থিমজ্জায় ভাষায় ও সংস্কৃতিতে এবং ইতিহাসে যে চেতনা গাঢ় হয়ে মিশে আছে, তাকে ধ্বংস করা অত সহজ নয়। একুশের মিছিল, একুশের স্লোগান, একুশের গান সেই অপশক্তিকে বারবার রুখেছে, এখনো রুখবে।

২১ ফেব্রুয়ারি কেবল মহান ভাষা আন্দোলনের একটি স্মরণীয় দিন হিসেবেই পালিত হয় না, স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবসের মতো একই মর্যাদার ভিত্তিতে পালিত হয়ে আসছে। এখানেই একুশে ফেব্রুয়ারির বিশেষ স্বাতন্ত্র্য ও বৈশিষ্ট্য। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষিত হয়েছিল এবং শুরু হয়েছিল মহান মুক্তিযুদ্ধ। তাই ২৬ মার্চ আমাদের স্বাধীনতা দিবস। ১৬ ডিসেম্বর আমরা দখলদার পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে পরাজিত করে বিজয় ছিনিয়ে এনেছিলাম। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী ভারত-বাংলাদেশ যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল। অতএব, ২৬ মার্চ ও ১৬ ডিসেম্বর আমাদের জাতীয় দিবস। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে স্বাধীনতা অর্জনের চরম দিনটিকে অথবা বিপ্লব সফল হওয়ার দিবসকে জাতীয় দিবস হিসেবে পালন করা হয়। কিন্তু ২১ ফেব্রুয়ারি কেন, ২৬ মার্চ ও ১৬ ডিসেম্বরের মতো একই ধরনের জাতীয় মর্যাদা নিয়ে পালিত হয়?

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির ছাত্র আন্দোলন আমাদের দেশের ইতিহাসে একটি মাইলফলক বটে- যা তখনকার রাজনীতির ধারাকে ঘুরিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু তার পরও বড় বড়, তীব্রতর আন্দোলন হয়েছে। বড় বড় অভ্যুত্থানও হয়েছে। ইতিহাসের সেসব দিন আমরা শ্রদ্ধাভরে, গর্বভরে স্মরণ করলেও একমাত্র একুশে ফেব্রুয়ারি কেন বিশেষ মর্যাদা অর্জন করেছে? একুশে ফেব্রুয়ারির ছাত্র আন্দোলনকে শুধু স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে নিছক গণতান্ত্রিক আন্দোলনের একটা পর্যায় মনে করলে ভুল বোঝা হবে। সামগ্রিকতায় একুশকে দেখা হবে না। শুধু ভাষার জন্য দাবিভিত্তিক আন্দোলন মনে করলেও খণ্ডিত করে দেখা হবে। অবশ্যই এটা ছিল গণতান্ত্রিক সংগ্রামের অংশ। অবশ্যই তা ছিল ভাষার জন্য সংগ্রাম। কিন্তু ভাষা এখানে এসেছে বাঙালি জাতীয় সত্তার প্রধান পরিচয় হিসেবে। ভাষা তো জাতীয় পরিচয়ের প্রধানতম দিক। একুশের মধ্য দিয়েই পাকিস্তানপরবর্তী যুগে প্রথম বাঙালি জাতীয় চেতনার উন্মেষ ঘটেছিল। আর তারই পরিণতি ছিল ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ। একুশের মধ্যে আমরা বাঙালি সত্তাকে খুঁজে পাই। দুনিয়াজোড়া ইতিহাসেও দেখা গেছে, ধর্মীয় অনুভূতি বা শ্রেণিচেতনার চেয়েও অনেক বেশি প্রবল ও আবেগ সৃষ্টিকারী হয়ে থাকে জাতীয় সাংস্কৃতিক অনুভূতি। একুশের বিশেষ বৈশিষ্ট্য ও তাৎপর্য এখানেই।

"একুশের চেতনা এতটাই প্রবল ও ব্যাপক যে, বাংলাদেশের প্রত্যন্ত দুর্গম অঞ্চলেও শহীদ মিনার নির্মিত হয়েছে। একুশের মধ্যরাত বা ভোরে শহীদ মিনারের পুষ্পস্তবক দেওয়া একটা সাধারণ রীতিতে পরিণত হয়েছে। যখন কোনো ভাবাদর্শ বা চেতনা গোটা জাতির অস্থিমজ্জার সঙ্গে মিশে যায়, তখন তার প্রকাশ রীতির রূপ ধারণ করতে পারে। একুশের আনুষ্ঠানিকতাকে কেবল আনুষ্ঠানিকতা মনে করলে ভুল হবে। এর সঙ্গে জড়িত আছে জাতীয় চেতনা বাঙালি জাতীয়তাবাদের চেতনা।

পাকিস্তান আন্দোলন ছিল বাঙালি জাতিসত্তাকে অস্বীকার করার ভাবাদর্শ। জিন্নাহ সাহেব ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদের কথা বলেছিলেন। স্বল্প সময়ের জন্য হলেও আমাদের দেশের মুসলমান জনগোষ্ঠী পাকিস্তান আন্দোলনের প্রতিক্রিয়াশীল স্রোতে ভেসে গিয়েছিল। নানাবিধ সামাজিক, অর্থনৈতিক ও ঐতিহাসিক কারণে মুসলমান জনগোষ্ঠীর সব শ্রেণিই আশা করেছিল, পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা হলে তারা লাভবান হবে। কৃষক ভেবেছিল, সে হিন্দু জমিদারদের শোষণ থেকে মুক্ত হবে। মধ্যবিত্ত আশা করেছিল, চাকরি ও ব্যবসায় হিন্দু প্রতিযোগী থাকবে না। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, এ জনগোষ্ঠী বাঙালি সত্তাকে পরিত্যাগ করতে রাজি ছিল। মুসলিম লীগ নেতারা এটা বুঝতে ভুল করেছিলেন। তাই জিন্নাহ অত সহজে বাংলার বদলে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চাপিয়ে দেওয়ার ঔদ্ধত্য দেখিয়েছিলেন।

এমন ভুল বোঝার কিছু কারণও আছে। এই দেশের মুসলিম অভিজাত পরিবারে বাংলা ভাষাকে অবজ্ঞা করা হতো। তারা ঘরে উর্দুতে কথা বলত। জিন্নাহসহ মুসলিম লীগ নেতারা সেটাই দেখেছেন এবং তাকেই একমাত্র সত্য মনে করেছেন। জনগণের মন বোঝার চেষ্টাও তারা করেননি। মুসলিম, জাতীয়তাবাদের উদ্ভব কিন্তু আরও আগে। ঊনবিংশ শতাব্দীতেই বাংলাদেশের দুই মুসলমান ব্যক্তিত্ব নবাব আবদুল লতিফ ও বিচারপতি সৈয়দ আমীর আলী মুসলমানদের ইংরেজি ও পাশ্চাত্যের শিক্ষার জন্য উদ্যোগী হলেও তারা বাংলা ভাষাকে হিন্দুর ভাষা মনে করতেন। মুসলমানদের মধ্যে শিক্ষা প্রসারের জন্য তারা দুজন যথাক্রমে 'মোহামেডান লিটারারি সোসাইটি' ও 'ন্যাশনাল মোহামেডান অ্যাসোসিয়েশন' প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যেখানে বাংলা ভাষায় কথা বলা নিষিদ্ধ ছিল। ফরিদপুরের খাস বাঙাল পরিবারে জন্মগ্রহণকারী আবদুল লতিফ পরবর্তী সময়ে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হয়েছিলেন, নবাব ও খানবাহাদুর পদকে ভূষিত হয়েছিলেন। তিনি মুসলিম জাতীয়তাবাদের উৎস খুঁজতেন ভারতবর্ষের বাইরে আরব, ইরান, তুরস্কের ইতিহাসের মধ্যে। একই সময়ে হিন্দু পুনর্জাগরণবাদেরও উদ্ভব হয়েছিল।

একদিকে ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদের উদ্ভব ও বিকাশ, অন্যদিকে হিন্দু, মুসলমান, কৃষক, সিপাহী, শ্রমজীবী জনগণের মিলিত সংগ্রাম দুই পরস্পরবিরোধী ধারা পাশাপাশি চলেছে গোটা ব্রিটিশ জামানায়। চল্লিশের দশকে সাময়িকভাবে তথাকথিত মুসলিম জাতীয়তাবাদ জয়লাভ করলেও তা যে কত ভঙ্গুর ছিল, তা একুশের আন্দোলন দেখিয়ে দিল। বস্তুত, একুশের আন্দোলনের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এই যে, তা পাকিস্তানি ভাবাদর্শকে প্রচণ্ডভাবে ধাক্কা দিতে সক্ষম হয়েছিল, যদিও তখনই পাকিস্তানি রাষ্ট্রীয় কাঠামো থেকে বেরিয়ে আসার মতো জায়গায় বৃহত্তর জনগোষ্ঠী যায়নি। কিন্তু তেমন জায়গায় পৌছাতে বেশি সময়ও লাগেনি। মাত্র এক প্রজন্মের মধ্যে বিরাট পরিবর্তন ঘটে গেল। যারা একদিন পাকিস্তানের দাবিতে সোচ্চার ছিলেন, তাদের সন্তানরাই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করছিলেন। চেতনার জগতে এই যে পরিবর্তন, তার সূচনা হয়েছিল ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়েই।

একুশের চেতনা এক অর্থে মুক্তিযুদ্ধের চেতনারই গুরুত্বপূর্ণ অংশ- যা পাকিস্তানি ভাবাদর্শকে খণ্ডন করেই ভাস্কর হয়ে ওঠে। একুশের চেতনা মানে হলো অবৈজ্ঞানিক ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদকে মিথ্যা প্রমাণ ও রুখবে। ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতা বা সেক্যুলারিজমকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরা।

তবে এখানে যে কথাটা বিশেষভাবে বলা দরকার, তা হলো ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ের মধ্য দিয়ে আমরা পাকিস্তানি ভাবাদর্শকে পরাজিত করতে সক্ষম হলেও সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করতে পারিনি। ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার পাশাপাশি বাঙালি সংস্কৃতির প্রতি বিদ্বেষ ছিল পাকিস্তানি ভাবাদর্শের মূলকথা।

হবিগঞ্জ জেলার ভাষা সৈনিকঃ
১। কমরেড বারীন দত্ত ( লাখাই)।
২। দেওয়ান ফরিদ গাজী ( নবীগঞ্জ)।
৩। সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলী ( বাহুবল)।
৪। কমরেড লালমোহন রায় ( খাগাউড়া,বাহুবল)
৫। সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া (নবীগঞ্জ)
৬। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ডঃ আব্দুল লতিফ চৌধুরী ( দরিয়ারপুর, হবিগঞ্জ সদর)।
৭। এডভোকেট মোস্তফা আলী ( লাখাই)
৮। নারী নেত্রী হেনা দাশ ( লাখাই)
৯। কবি দেওয়ান গোলাম মুর্তোজা (বাহুবল)
১০। অনিমেষ ভট্রাচার্য ( নবীগঞ্জ)
১১। হবিগঞ্জ বৃন্দাবন কলেজের ছাত্র সংসদের ভিপি সৈয়দ সফিক উদ্দিন আহমেদ ( ফকিরাবাদ,হবিগঞ্জ সদর)
১২। অপরেশ ধর ( মান্দারকান্দি,
নবীগঞ্জ)
১৩। আব্দুল আজিজ চৌধুরী ( চরগাও,নবীগঞ্জ)
১৪। ডাঃ আব্দুর রাকিব চৌধুরী ( দরিয়ারপুর,হবিগঞ্জ সদর)।
১৫। উম্মে সাঈদা সিদ্দিকী ( দরিয়ারপুর,হবিগঞ্জ সদর)।
১৬। দেওয়ান মোয়াজ্জেম আহমেদ চৌধুরী ( পানিউমদা,নবীগঞ্জ)
১৭। প্রশান্ত দত্ত ( লাখাই)
১৮। রাজিয়া চৌধুরী ( দরিয়ারপুর,হবিগঞ্জ সদর)
১৯। এডভোকেট আফসার উদ্দিন আহমেদ ( চুনারুঘাট)
২০। এডভোকেট এনামুল হক মোস্তফা শহীদ ( চুনারুঘাট)।
২১। কমান্ড্যান্ট মানিক চৌধুরী ( বাহুবল)
২২। এডভোকেট সৈয়দ আফরোজ বখত ( বানিয়াচং)
২৩। কমরেড শান্তি দত্ত ( মান্দারকান্দী,
নবীগঞ্জ)
২৪। জাকারিয়া খান চৌধুরী ( বানিয়াচং)
২৫। রাবেয়া আলী ( সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতফা আলীর স্ত্রী)
২৬। এডভোকেট শওকত আলী খান ( বানিয়াচং)
২৭। এডভোকেট চৌধুরী আব্দুল হাই ( হবিগঞ্জ)
২৮। আজিজুর রহমান ছুরুক আলী ( চুনারুঘাট)
২৯। ফজলুর রহমান ( আজমিরীগঞ্জ)
৩০। আব্দুল মান্নান চৌধুরী ( বানিয়াচং)
৩১। স্কুল ছাত্র আব্দুল ওয়াদুদ ( রামসিড়ি,চুনারুঘাট)।
৩২। স্কুল ছাত্র বিধান চন্দ্র রায় ( শায়েস্তাগঞ্জ)
৩৩। মোহাম্মদ মাহবুবুল বারী(মুসলিম কোয়ার্টার, হবিগঞ্জ)।
৩৪। এডভোকেট আহমেদ হুসেন খান ( সাগরদীঘির পশ্চিমপাড়,বানিয়াচং)
৩৫। এডভোকেট সদাকত আলী খান ( বানিয়াচঙ্গ)
৩৬। মোহাম্মদ ইয়াকুত চৌধুরী ( খাগাউড়া,বাহুবল)
৩৭। মোহাম্মদ্দ আব্দুল হান্নান ( লস্করপুর,হবিগঞ্জ)
৩৮। মোঃ হাবিবুর রহমান (শ্রীকুটা,চুনারুঘাট)
৩৯। দেওয়ান আহমদ রফি চৌধুরী ( পানিউমদা,নবীগঞ্জ)
৪০। দেওয়ান আহমদ কবীর চৌধুরী ( পানিউমদা, নবীগঞ্জ)।
৪১। মোঃ নুরুল হোসেন ( শায়েস্তানগর,
হবিগঞ্জ)।
৪২। মোঃ ফজলুল হক ( বাতাশহর,হবিগঞ্জ সদর)।
৪৩। মোঃ আতাব আলী ( লেঞ্জাপাড়া,শায়েস্তাগঞ্জ)।
৪৪। ছবিল মিয়া (বড়ই উড়ি, বানিয়াচং)
৪৫। এডভোকেট আফতাব উদ্দিন আহমেদ ( হবিগঞ্জ)
৪৬। মোহাম্মদ ফজলুল করিম তরফদার ( ঝিকুয়া,চুনারুঘাট)।
৪৭। আলী ইমাম তরফদার (দেওলগাও,চুনারুঘাট)
:নাম না জানা আরো অনেকে।
সুত্রঃ ১। ভাষা সংগ্রামীদের কথা বৃহত্তর সিলেট, লেখক তাজুল মোহাম্মদ।
২। ভাষা আন্দোলনে হবিগঞ্জ,লেখক তরফদার মুহাম্মদ ইসমাইল।
৩। ভাষা আন্দোলনে সিলেটের অবদান,লেখক সৈয়দ মোস্তফা কামাল।
৪। বিভিন্ন পত্রিকার রিপোর্ট।
জয় বাংলা- -বাংলার জয়।

আজ পহেলা ফেব্রুয়ারি ভাষার মাস শুরু:আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী আমি কি ভুলিতে পারি। অ'  আ'  ক'   খ'     ...
06/02/2023

আজ পহেলা ফেব্রুয়ারি ভাষার মাস শুরু:
আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী আমি কি ভুলিতে পারি।
অ' আ' ক' খ' -আ-মরি বাংলা ভাষা।
ফিরে এলো রক্তে রাঙানো ফেব্রুয়ারি,
"""একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস"""কে সামনে রেখে সকল ভাষা শহীদদের প্রতি রইল বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি।

ফিরে এলো ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি জাগানিয়া মাস ফেব্রুয়ারি। ভাষা আন্দোলনের উত্তাল দিনগুলো বাংলাদেশের মানুষের কাছে ফিরে আসে প্রেরণার প্রতীক হয়ে। সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউরের নাম যেমন শ্রদ্ধার সঙ্গে উচ্চারণের মধ্য দিয়ে জাতি যেন নতুন দিনের পথচলার প্রেরণা খুঁজে নেয় । তাদের জীবনদানের মধ্য দিয়ে যে অর্জন, যে প্রতিজ্ঞা বায়ান্নতে বাঙালি করেছিল স্বাধীন দেশে, তার প্রতিফলন ঘটানোর দায়িত্ব নতুন করে মনে করিয়ে দেয় দেশের সরকার, রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে প্রতিটি স্তরের মানুষকে ।

১৯৪৭ সালে দেশভাগের পরে ভাষার দাবিতে বুকের রক্ত ঢেলে লেখা হয়েছিল এক নতুন ইতিহাস। ভাষা আন্দোলনের সেই লড়াই থেকে সঞ্চিত শক্তিই পরবর্তীকালে জুগিয়েছে গণ-অভ্যুত্থানের প্রেরণা। বাঙালির মহান মুক্তিযুদ্ধে, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে, জাতির স্বকীয়তা, সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে ভাষা আন্দোলন সব সময় আলো হয়ে পথ দেখিয়েছে । প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ভাষা আন্দোলন জাতির কাছে চির প্রেরণার প্রতীক হয়ে রয়ে যাবে।

১৯৫২ সালের এ মাসেই রক্তঝরা ভাষা আন্দোলন তীব্রতর রূপ ধারণ করেছিল। মাতৃভাষা বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার সংগঠিত দাবি ও আন্দোলনকে বানচাল করার জন্য একুশে ফেব্রুয়ারি প্রথম গুলি চালানো হয়েছিল কয়েকটি অমূল্য প্রাণ সালাম, রফিক, জব্বার, শফিউর, বরকত মৃত্যুবরণ করেছিলেন । গভীর বেদনায়, আবেগে ঐ দিনটি ইতিহাসের পাতায় রক্তের অক্ষরে লেখা হয়ে যায়। বিশেষ সেই তারিখে শহিদদের আত্মদান একটি কিংবদন্তি রূপ লাভ করে। আজ তাই একুশে ফেব্রুয়ারি একটি অভিধা, একটি ধ্বনি, একটি প্রতীকে পরিণত হয়েছে। পরিণত হয়েছে জাতির জাগরণের প্রতীকে।

তাই ভাষা আন্দোলনের চেতনাকে সমাজে, রাষ্ট্রে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য শপথ নেওয়ার মাস ফেব্রুয়ারি। আজ ৭০ বছরেও যা করা যায়নি সেই অফিস-আদালত, শিক্ষাসহ সব ক্ষেত্রে বাংলাকে ছড়িয়ে দেওয়ার অঙ্গীকারের মাস-ফেব্রুয়ারি।

ভাষার মাসে ভাষাকে নিয়ে নানা আয়োজন শুরু হয়। তবে শুধু ভাষা নয়, বরং জাতি হিসেবে আমাদের করণীয় প্রসঙ্গেও আলোচনা চলে। শিল্প-সাহিত্য-সংগীতসহ শিল্পের প্রতিটি ক্ষেত্রে একুশে নতুন নতুন চিন্তাভাবনা নিয়ে আসে। ভাষা আন্দোলনের প্রেরণাদীপ্ত বইমেলা আজ পরিণত হয়েছে বাঙালির মননের প্রতীকে। একুশে ফেব্রুয়ারি বলতে ১৯৫২ সালের কেবল সেই দিনটি নয়, এই আন্দোলন শুরু হয়েছিল সেই ১৯৪৭ সাল থেকে। ১৯৪৭ সালের ১৭ মে হায়দরাবাদে এক উর্দু সম্মেলনে মুসলিম লীগ নেতা চৌধুরী খালিকুজ্জামান ঘোষণা দেন, ‘পাকিস্তানের জাতীয় ভাষা হবে উর্দু তার সঙ্গে গলা মেলান আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড.জিয়াউদ্দিন প্রতিবাদে ২৯ জুলাই ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ 'আজাদ' পত্রিকায় বলেন, বাংলাই হওয়া উচিত পাকিস্তানের
রাষ্ট্রভাষা, তবে দুটি রাষ্ট্রভাষা করা গেলে উর্দুর কথা বিবেচনা করা যায়।

পাকিস্তান গঠনের পরে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন জোরদার হতে থাকে ঐ বছরের ২৭ নভেম্বর করাচিতে পাকিস্তান শিক্ষা সম্মেলনে পাকিস্তান গণপরিষদের কাছে উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা ও প্রাদেশিক সরকারগুলির কাজ চালাবার মাধ্যম রূপে মেনে নেবার সুপারিশ করা হয়। সেই সঙ্গে সমগ্র পাকিস্তানে প্রাথমিক শিক্ষায় উর্দুকে এক বছরের জন্য বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাবও করা হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ৬ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন তমদ্দুন মজলিসের সম্পাদক আবুল কাসেম । বক্তৃতা করেন মুনীর চৌধুরী, আব্দুর রহমান, কল্যাণ দাশগুপ্ত, এ কে এম আহসান, এস আহমদ প্রমুখ। রাষ্ট্রভাষাসংক্রান্ত প্রস্তাবগুলো উত্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়নের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফরিদ আহমদ।

করাচিতে গণপরিষদের অধিবেশন চলছিল। ২৩ ফেব্রুয়ারি বিতর্ক হয় গণপরিষদের কাজের ভাষারূপে ইংরেজির সঙ্গে উর্দুকে যুক্ত করা নিয়ে। পূর্ব বাংলার কংগ্রেস দলের সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত সংশোধনী প্রস্তাব এনে বলেন, বাংলাকেও যুক্ত করতে হবে। তার সংশোধনী লিয়াকত আলী খান, খাজা নাজিমুদ্দিন ও তমিজুদ্দিন আহমেদের বিরোধিতায় অগ্রাহ্য হয়। ঢাকায় এর ভয়ানক প্রতিক্রিয়া হয়। তৎকালীন সচেতন জনগণ ও ছাত্রদের নেতৃত্বে ১৯৪৮ সালের ২ মার্চ গঠিত হয় সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ। ১১ মার্চ সংগ্রাম পরিষদ সারা পূর্ববঙ্গে ধর্মঘট আহ্বান করে ১৯ মার্চ কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলি জিন্নাহ ঢাকায় আসেন। ২১ মার্চ তিনি রেসকোর্স ময়দানে দেওয়া বক্তৃতায় বলেন, 'আমি স্পষ্টভাবে বলে দিতে চাই, উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা, অন্য কোনো ভাষা নয়।' ২৩ মার্চ জিন্নাহর বক্তৃতার সমালোচনা করে এ কে ফজলুল হকের বিবৃতি প্রচারিত হয়। ২৪ মার্চ কার্জন হলে জিন্নাহ ভাষা সম্পর্কে তার বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি করলে 'নো, নো' বলে প্রতিবাদ করে ওঠেন অনেকে। তীব্রতর হতে থাকে রাষ্ট্রভাষা বাংলার আন্দোলন।

06/02/2023

বীর মুক্তিযোদ্ধা গৌর প্রসাদ রায়
ডেপুটি কমান্ডার
হবিগঞ্জ জেলা কমান্ড্ ইউনিট
ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ নাজমুল হোসেন লিলু স্কুল কলেজের বন্ধু।

৪ ঠা জানুয়ারী ঐতিহাসিক ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের এগারো  দফা দাবি দিবস
06/02/2023

৪ ঠা জানুয়ারী ঐতিহাসিক ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের এগারো দফা দাবি দিবস

23/01/2023

গায়েবি মামলা (অপরাধ সংগঠিত হয় নাই অথচ এফআইআর বা মামলা) ভুয়া ওয়ারেন্ট(রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে নিরপরাধ লোককে ফাঁসানোর এক হাতিয়ার)ক্রসফায়ার বা বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড (দেশের সংবিধান -প্রচলিত আইন -সাংবিধানিক বিচারব্যবস্থা বা কমনওয়েলথ জুডিশিয়াল সিস্টেমকে- অস্বীকার করে সংঘবদ্ধভাবে বিচার না করে হত্যা)এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও বাংলাদেশ।"দুর্নীতি মুক্ত বাংলাদেশ গড়ো"।

23/01/2023
১২ ই মার্চ ভারতীয় সেনাবাহিনী মিত্রবাহিনীর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস।
23/01/2023

১২ ই মার্চ ভারতীয় সেনাবাহিনী মিত্রবাহিনীর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস।

আজ ১০ ই জানুয়ারী জাতির পিতা মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। ১৯৭২ সালের ১০ ই জানুয়ারী (...
10/01/2023

আজ ১০ ই জানুয়ারী জাতির পিতা মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস।
১৯৭২ সালের ১০ ই জানুয়ারী (৮ ই জানুয়ারী কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে) স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন।
১০ই জানুয়ারী, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে তাঁর স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা।

২২ ডিসেম্বর প্রবাসী সরকার বা মুজিবনগর সরকার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস।১৯৭১ সালের ২২ মুজিবনগর সরকার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন কর...
06/01/2023

২২ ডিসেম্বর প্রবাসী সরকার বা মুজিবনগর সরকার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস।১৯৭১ সালের ২২ মুজিবনগর সরকার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করে উপলক্ষে বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ নাজমুল হাসান লিলুর পরিবারের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা।

অ
06/01/2023

28/12/2022

বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম । অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যশৈলী ও কারুকার্যময় এই মসজিদটি ঢাকার কয়েকটি স্থাপত্যকর্মের অন্যতম এবং পৃথিবীর সুন্দর মসজিদগুলোর মধ্যে একটি।

অবস্থান: ঢাকার প্রাণকেন্দ্র পল্টনে অবস্থিত।
বায়তুল মোকাররম মসজিদ নির্মাণের মূল উদ্যোক্তা: শিল্পপতি আবদুল লতিফ ইব্রাহীম বাওয়ানি। তিনি প্রথম ১৯৫৯ সালে ঢাকায় একটি বিশাল গ্র্যান্ড মসজিদ নির্মাণের পরিকল্পনা প্রকাশ করেন।
‘বায়তুল মোকাররম মসজিদ সোসাইটি’ কবে গঠিত হয়: ১৯৫৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে।

স্থপতি: পাকিস্তানের আবুল হুসাইন থারিয়ানি।

নির্মাণ কাজ শুরু হয়: ২৭ জানুয়ারি ১৯৬০। মোটামুটি শেষ হয় ১৯৬২ সালে। তবে সুসম্পন্ন হয় ১৯৬৮ সালে।

নামাজ শুরু হয়: ২৫ জানুয়ারি ১৯৬৩।
প্রথম জুমার নামায অনুষ্ঠিত হয়: ২৫ জানুয়ারি ১৯৬৩।
মসজিদ কমপ্লেক্সটির মোট জমির পরিমাণ: ৮.৩০ একর।
মসজিদ ভবন সর্বমোট ৮ তলা। মসজিদ হিসেবে ব্যবহৃত হয় ৬ তলা।
২৮ মার্চ ১৯৭৫ থেকে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ এই মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণ করেছে।
মুসল্লির ধারণক্ষমতা: ৪০,০০০।
আয়তন: ২৬৯৪.১৯ বর্গ মিটার।

বায়তুল মোকাররমের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়: ২৭ জানুয়ারি ১৯৬০।
ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন: পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান।

১৯৭১ সাল উত্তাল শায়েস্তাগঞ্জ-হবিগঞ্জ  ও বাংলাদেশঃ১৯৭১ সাল শায়েস্তাগঞ্জে স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন অবস্থা এবং আমার অবস্থানঃ ...
23/12/2022

১৯৭১ সাল উত্তাল শায়েস্তাগঞ্জ-হবিগঞ্জ ও বাংলাদেশঃ
১৯৭১ সাল শায়েস্তাগঞ্জে স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন অবস্থা এবং আমার অবস্থানঃ
ডেপুটি ইউনিট কমান্ডার,
বীরমুক্তিযোদ্ধা গৌর প্রসাদ রায়
হবিগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ । সভাপতি, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম, হবিগঞ্জ জেলা শাখা ।

পরিচিতিঃ
১৯৪৮ সালের ১৮ই জানুয়ারী শায়েস্তাগঞ্জ পুরান বাজার সম্ভ্রান্ত ব্যবসায়ী পরিবারে জন্ম গ্রহণ করি। পিতা ব্রজেন্দ্র লাল রায়, মাতা আশালতা রায়। শায়েস্তাগঞ্জ হাই স্কুল হতে এস.এস.সি ও হবিগঞ্জ কলেজ হতে বি.এ । ছাত্রকালীন সময়ে ভাল ফুটবল খেলুয়ার ছিলাম। বৃন্দাবন কলেজে ছাত্র রাজনীতিতে জড়িত ছিলাম। হবিগঞ্জ মহকুমার ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলাম এবং ছাত্রলীগকে সু-সংগঠিত করি। আমার সময় হতেই ছাত্রলীগের উন্নতি শুরু হয় এবং বৃন্দাবন কলেজ ছাত্র ইউনিয়ন নির্বাচনে কদ্দুছ গৌর পরিষদ নামে আমি সাধারণ সম্পাদক হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করি। পরবর্তীতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে ঠিকাদার ব্যবসা ও ধান চাউলের ব্যবসায় জড়িত হই। আমি এক নাগারে শায়েস্তাগঞ্জ ইউনিয়ন পৌরসভার ৩৫ বৎসর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে আওয়ামী সংগঠনের সঙ্গে ওৎপ্রতোভাবে জড়িত ছিলাম।

স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন আমার অবস্থানঃ
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে হবিগঞ্জ সংগ্রাম কমিটির খাদ্য সরবরাহ ও পরিবহনের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলাম। তেলিয়াপাড়া চা-বাগানে মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে ট্রাকে করে খাদ্য সরবরাহ করি। বঙ্গবন্ধুর ডাকে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করার জন্য ভারতে পাড়ি জমাই। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে শীলচর অদূরে লোহারবন্দ নামক স্থানে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে জে.এল ডব্লিউ প্রশিক্ষণ নিয়ে ৪নং সেক্টরের কৈলা শহরে সাব-সেক্টরের অধীনে কোম্পানী কমান্ডার লে.ওয়াকিউজ্জামানের অধীনে একজন প্লাটুন কমান্ডার হিসাবে মনু নদীর তীরে নোমৌজা নামক স্থানে ডিফেন্সে যুদ্ধরত ছিলাম। এছাড়া চাতলাপুর বিওপি, মনু রেল স্টেশন, রাজনগর, বালাগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ, বিশ্বনাথ মোগলা বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধরত ছিলাম। আমি দুইবার নির্বাচিত হবিগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ডার ডেপুটি ইউনিট কমান্ডার । বর্তমানে এই হবিগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ডার ডেপুটি ইউনিট কমান্ডর ও হবিগঞ্জ জেলা সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম এর সভাপতি। আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের যোদ্ধাপরাধী মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সৈয়দ কায়সারের উল্লেখযোগ্য স্বাক্ষী ছিলাম। সত্যকে ধরে রাখাই আমার উদ্দেশ্য।

১৯৭১ সনে শায়েস্তাগঞ্জে স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন অবস্থা এবং আমার অবস্থানঃ
১৯৭০ সানের পাকিস্তানের গণ পরিষদ নির্বাচনে (এম.এল.এ) আওয়ামীলীগ এককভাবে পূর্ব পাকিস্তানের ১৬২টি আসনের মধ্যে ১৬০টি আসন জয়লাভ করে এবং প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে (এম.পি.এ) ৩১০টি আসনের মধ্যে আওয়ামীলীগ এককভাবে ২৯৮টি আসনে জয়লাভ করে। যার ফলে পাকিস্তানের শাসন ভার আওয়ামীলীগের হাতে ন্যস্ত হওয়ার কথা। অপর দিকে পশ্চিম পাকিস্তানের নির্বাচনে জুলফিকার আলী ভুট্টো সাহেবের পাকিস্তান পিপলস পার্টি সংখ্যা গরিষ্ট আসন পায়। এরই ফলশ্রুতিতে ভূট্টো সাহেব ও প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া বাঙালীরদের হাতে শাসন ক্ষমতা যাহাতে না দেওয়া যায় তাহার পর্দার আড়ালে কু পরামর্শ ও গভীর ষড়যন্ত্র করে ১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারী মাসের ২৮ তারিখ হঠাৎ করে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া পার্লামেন্টের অধিবেশন অনির্দিষ্ট কালের জন্য স্থগিত করে দেয়। অথচ মার্চ মাসের এক তারিখ পার্লামেন্টের প্রথম অধিবেশন বসার পূর্ব নির্ধারিত তারিখ ছিল। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার এই ঘোষণার বিরুদ্ধে সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ বিক্ষোভে ফেটে পরে। ঢাকা সহ সারা দেশে মিছিল আর মিটিং চলতে থাকে। কার্যত বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে পূর্ব পাকিস্তানের সকল সরকারি বেসরকারি কার্যক্রম চলতে থাকে। ইহাতে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার পূর্ব পাকিস্তানের শাসন ক্ষমতা অচল হয়ে পরে। ধানমন্ডির ৩২নং রোডের বাসা থেকে যে দিক নির্দেশনা দেওয়া হতো জনগণ তাই মেনে নিত। ৭ই মার্চ তারিখে বঙ্গবন্ধু বাঙ্গালি জাতির উদ্দেশ্যে ঢাকা রেসকোর্স ময়দানে ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেন। এই ভাসনের মধ্যেই বাঙ্গালি জাতিকে ঐক্যের গেরিলা যুদ্ধের এবং স্বাধীনতার নির্দেশ প্রদান করেন। ১৯৭১ এর ১০ মার্চ টিক্কা খানকে পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক প্রশাসন হিসাবে নিয়োগ দেন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান। এরই মধ্যে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান, ভূট্টো ও সেনাবাহিনীর কয়েক জন জেনারেলকে নিয়ে পূর্ব পাকিস্তানের ঢাকায় চলে আসেন। পূর্ব পাকিস্তানের উত্তাল রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও অসহযোগ আন্দোলন থামানোর জন্য বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলোচনা করার জন্য গোল টেবিল বৈঠক ডাকেন। বঙ্গবন্ধু ঐ ডাকে সারা দিলেন না এবং স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন আমার বুকের উপর গুলি, আমার লোককে নির্বিচারে হত্যা করা হয়।

আমি এই রক্তাক্ত লাশের উপর পা দিয়ে আলোচনায় যাইতে পারি না। বঙ্গবন্ধু শর্ত দিলেন আপনারা সামরিক আইন তুলে নেন এবং সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেন। পরিস্থিতি বেগতিক অনুধাবন করে বিভিন্ন প্রশাসনিক এবং সামরিক কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত একটি পরামর্শক দল নিয়ে ইয়াহিয়া খান ঢাকায় আসেন ১৫ মার্চ। এদলে ছিলেন বিচারপতি এ. আর কর্নেলিস, জেনারেল পীরজাদা, আই, এস, আই, জেনারেল আকবর, জেনারেল রেজভী, এম.এম আহমেদ এবং আওয়ামীলীগের পক্ষে এই বৈঠকে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া বঙ্গবন্ধুর শর্তে রাজি হয়ে সামরিক আইন তুলে নেন এবং সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেন। বঙ্গবন্ধুর সাথে অংশ নেন তাজ উদ্দিন আহমদ, খন্দকার মোস্তাক, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, কামরুজ্জামান এবং কামাল হোসেন সহ প্রথম বৈঠক হয় ১৬ই মার্চ। ২০শে মার্চ ১৯৭১ এর বিবৃতিতে বঙ্গবন্ধু বলেন “আমাদের জনগণ প্রমাণ করছে তারা সুচারুভাবেই তাদের নিজেদের কাজ চালিয়ে নিয়ে যেতে পারেন। উস্কানিমূলক তৎপরতা থেকে বিরত থাকার জন্য ধ্বংসাত্মক ব্যক্তিদের আমি হুঁশিয়ার করে দিচ্ছি”। তারপর ২১শে মার্চ বৈঠকে যোগ দেন ভূট্টো, আলোচনা চলতে থাকে। দীর্ঘ কয়েক দিন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া আলোচনা চালিয়ে গেলেন। ইহা ছিল প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার একটা ষড়যন্ত্র এবং কালক্ষেপনের সুযোগ নেওয়া। আলোচনা চলা অবস্থায় পশ্চিম পাকিস্তান থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গুলাবারুদ পূর্ব পাকিস্তানে মজুত করতে থাকে। ইহা ছিল প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার গোপন নির্দেশ। মার্চ মাসের ২৫ তারিখে হঠাৎ করে ইয়াহিয়া ও ভুট্টো আলোচনা অসমাপ্ত রেখে পশ্চিম পাকিস্তান চলে যায় এবং তৎকালীন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল নিয়াজীকে টিক্কা খান বাঙ্গালীদের কণ্ঠ স্তব্দ করে দেওয়া ও হত্যা যজ্ঞ চালানোর নির্দেশ দিয়ে যান। জেনারেল নিয়াজি মার্চ মাসের ২৫ তারিখ দিবাগত রাত্রে ১১ ঘটিকার সময় ঢাকায় ঘুমন্ত বাঙ্গালীদের উপর অপারেশন চার্জলাইট নামে পাক সেনাবাহিনী রাজারবাগ পুলিশ লাইন, ইপিআর, হেডকোয়ার্টার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক ছাত্র/ছাত্রী হলে অজস্র ট্যাংক, কামান, গুলাবারুদের বিস্ফোরন ঘটিয়ে ইতিহাসের জগণ্যতম হত্যাযজ্ঞ চালায়। মার্চের ২৫ তারিখ দিবাগত রাত ও ২৬ তারিখ এই দুই দিনে শুধু মাত্র ঢাকা শহরে প্রায় এক লক্ষ বাঙ্গালীকে হত্যা করে ২৫শে মার্চের দিবাগত রাত্রে বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামীলীগ নেতারা বুঝতে পারছিলেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কিছু একটা ঘটাইবে।

যারফলে বঙ্গবন্ধু তার সকল সহকর্মীগণকে নিরাপদে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেন এবং পিলখানায় ইপিআরের ওয়্যারলেসের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রত্যেক মহকুমার এমপিদের নিকট স্বাধীনতা ঘোষণার মেসেজ দেন। যার ফলে সারা বাংলাদেশে পাকিস্তানি সৈন্যদের উপর ইপিআর, পুলিশ, ছাত্রজনতা সংগঠিত হয়ে আক্রমণ শুরু করে দেয়। এই রাতেই বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যায়। হবিগঞ্জ থেকে মানিক চৌধুরীর নেতৃত্বে আনসার কমান্ডার ইউনুছ চৌধুরী সহ তৎকালীন মহকুমার এস.ডিও ডঃ আকবর আলী খান সাহেবের নিকট হইতে ট্রেজারিতে সংরক্ষিত চারশত রাইফেল ও গুলাবারুদ সংগ্রহ করা হয়। পাকবাহিনীকে আক্রমণ করার জন্য বেশ কয়েকটি ট্রাকে করে আনসার, মোজাহিদ, ছাত্রগণ শায়েস্তাগঞ্জ পুরান বাজারে এসে সমবেত হয়। এখান থেকে মানিক চৌধুরী সাহেব (এম.এল.এ) আমাকে (গৌর প্রসাদ রায়) খাদ্য সরবরাহ করার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। এবং উনার বাহিনী নিয়ে দারাগাঁও চা-বাগানে চলে যান। এদিকে শায়েস্তাগঞ্জ পুরান বাজারে খোয়াই নদীর উপরে লোহার নির্মিত যে ব্রীজ ছিল তাহা ডিনামাইট দ্বারা ভাঙ্গিয়া ফেলিলে উহার প্রতিবাদে অনেক লোক উত্তর বাজারের হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর আক্রমণ ও তাহাদের দোকান ঘর লুটপাঠ করার জন্য আগাইতে থাকিলে তৎক্ষনাৎ উত্তর উবাহাটা গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক মিয়ার ছেলে আঃ সালেক ও কমরেড আব্দুল ওয়াদুদ, ঠিকানা-উত্তর উবাহাটা, তাহাদের লাইসেন্স করা নিজস্ব বন্দুক দিয়ে তাদেরকে প্রতিহত করে এক সাহসী ভুমিকা রাখে। শায়েস্তাগঞ্জ পুরান বাজারের আওয়ামীলীগ সভাপতি ডাঃ মাহতাব উদ্দিন সাহেবকে সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক, জনাব সুফি মিয়া চৌধুরী (জিকুয়া) কে যুগ্ম আহবায়ক, শেখ মুজিবুর রহমান, ঠিকানা- সাবাসপুর, উনাকে সদস্য সচিব, জমশেদ মিয়া, ঠিকানা-কুঠিরগাঁও এবং শাহাবাজ মিয়া, ঠিকানা-উত্তর উবাহাটা, তাদেরকে দপ্তর সম্পাদক এবং সর্ব জনাব ফটিক মিয়া, ঠিকানা-কুঠিরগাঁও, কমরেড আব্দুল ওয়াদুদ, ঠিকানা-উত্তর উবাহাটা, ডাঃ সিরাজুল হক চৌধুরী, ঠিকানা-উত্তর উবাহাটা, ছুরুক মিয়া, ঠিকানা-দক্ষিণ লেঞ্জাপাড়া, রমজান মিয়া, ঠিকানা-লস্করপুর, আঃ হামিদ, ঠিকানা-উত্তর উবাহাটা, আলী মিয়া চৌধুরী, ঠিকানা-তাউসি সহ আরো অনেককে নিয়ে কমিটি গঠন করা হয় এবং আমাকে (গৌর প্রসাদ রায়) খাদ্য সংগ্রহ ও যোগান দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়।

অফিসের স্থান : আঞ্চলিক সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক ডাঃ মাহতাব উদ্দিন সাহেবের ছেলে ডাঃ মহিউদ্দিন আহমদ জিতু মিয়ার ফার্মেসীর সকল ঔষধপত্র উনার নিজ বাড়িতে সরাইয়া নিয়া যান এবং তথায় অফিসের স্থান করে দেন। অফিসের নিরাপত্তার জন্য আনসার কমান্ডার আব্দুর রাজ্জাক, এলেমান মিয়া, আব্দুল মতিন, ঠিকানা-কুঠিরগাঁও, তোয়াজউল্লাহ, ওমর আলী উভয়ের ঠিকানা-উত্তর উবাহাটা, কচির মাহমুদ, ঠিকানা-লস্করপুর সহ সশস্ত্র অস্ত্রধারী পাহাড়াদার হিসাবে দায়িত্ব পালন করিত। ২৫শে মার্চের পর থেকে শায়েস্তাগঞ্জে সকল যানবাহন ও যোগাযোগ বন্ধ থাকায় জেলার বিভন্ন অঞ্চলের লোকজন যার যার গন্তব্য পথে পায়ে হেটে যাওয়া ছাড়া বিকল্প কোনো সুযোগ ছিল না। বিকাল হতে রাত ১০ ঘটিকা পর্যন্ত শায়েস্তাগঞ্জ পুরান বাজার বর্তমান দুর্গা মন্দির মাঠে আশ্রয় কেন্দ্র ও লঙ্গরখানা চালু থাকিত। যাত্রীদের রাত্রীযাপন ও খাদ্য হিসেবে খিচুরী পরিবেশন করা হতো।

টেলিফোন বা কন্ট্রোল রুম : শায়েস্তাগঞ্জ পুরান বাজারে আমদের আত্মিয় জনাব বিরজা কান্ত রায়ের ফেলে যাওয়া দোকান ঘরে কন্ট্রোল রুম করা হয়েছিল। তাহা শায়েস্তাগঞ্জ পুরান বাজার হতে মাধবপুর ও হবিগঞ্জ পর্যন্ত যোগাযোগের ব্যবস্থা ছিল। এই কন্ট্রোল রুমের দায়িত্ব পালন করিত আব্দুল খালেক, ঠিকানা-দক্ষিণ লেঞ্জাপাড়া, কমরেড আব্দুল ওয়াদুদ, ঠিকানা-উত্তর উবাহাটা, মানব মিয়া, ঠিকানা-বিক্রমপুর (ঢাকা), আলী মিয়া চৌধুরী, ঠিকানা-তাউসি, হাবিবুর রহমান চৌধুরী, ঠিকানা-ময়নাবাদ (চুনারুঘাট)। শায়েস্তাগঞ্জ স্টেশনের আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক দিদার হোসেন সাহেবের নেতৃত্বে জিলা বোর্ডের অফিসে সর্ব জনাব নিম্বর আলী তালুকদার, আব্দুর রাজ্জাক রাজা মিয়া, আজব আলী, প্রমুখ ব্যক্তিগণের পরিচালনায় গণসংযোগ ও মিছিল মিটিং পরিচালিত হইত। মানিক চৌধুরীর নেতৃত্বে মুক্তি বাহিনীর যে ইউনিট কামাইছড়াতে অবস্থান নিয়েছিল। পরবর্তীতে মেজর সি আর দত্ত যোগ দিয়ে ঐ ইউনিটকে একটি সুশৃঙ্খল ও গতিশীল যোদ্ধাবাহিনী হিসেবে গঠন করে শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার, শেরপুর পর্যন্ত এগিয়ে নিয়ে যান। শেরপুরে কুশিয়ারা নদীর অপর তীরে পাক বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ সমরে তুমুল লড়াই হয়। সেই লড়াইয়ে হাফিজ উদ্দিন ও মফিল হোসেন নামে শায়েস্তাগঞ্জের দুই জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয় ।

উক্ত দুই জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা বড়চর প্রাইমারী স্কুল প্রাঙ্গণের মাজারে শায়িত আছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে পাক বাহিনী টিকতে না পেরে সাদীপুরের অপর প্রান্তে চলে যায়। সেইখানেও মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে তুমুল লড়াই হয়। সাদিপুরে ৩ দিন লড়াইয়ের পর পাক বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের উপরে Air Attack শুরু করে। ফলে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটে ও বিচ্ছিন্ন হয়ে পরে।

* অপরদিকে এপ্রিলের ২৪ ও ২৫ তারিখ মাধবপুরের তেলিয়াপাড়া জগদীশপুর তেমুনিয়াতে মুক্তি বাহিনীর সঙ্গে তুমুল যুদ্ধ হয়। সেনাবাহিনীর ফোর বেঙ্গল (Four Bengal) যুদ্ধ করে পাক বাহিনীর যথেষ্ট পরিমাণে ক্ষতি সাধন ও অনেক পাক সেনাকে হত্যা করতে সক্ষম হয়। পাক বাহিনীর আক্রমণে শেষ পর্যন্ত ঠিকতে না পেরে ফোর বেঙ্গল (Four Bengal) ভারতের সুন্দর টিলায় অবস্থান নেয়। ২৯শে এপ্রিল এডভোকেট মুস্তফা আলী সাহেবের বাস ভবনে মানিক চৌধুরী সাহেব, এনামুল হক মোস্তফা শহিদ সাহেব, মোস্তফা আলী সাহেবের ছেলে মোহাম্মদ আলী টিপুর উপস্থিতিতে একটি মিটিং হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে খাদ্য সামগ্রী কিভাবে পৌঁছানু যায় আলোচনা করে সিদ্ধান্ত হয় যে, শায়েস্তাগঞ্জ খাদ্য গুদাম হইতে খাদ্য সংগ্রহ করে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পৌছাইতে হবে। আমি (গৌর প্রসাদ রায়) এই সময় শায়েস্তাগঞ্জ কন্ট্রোল রুমে ছিলাম। কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে বিষয়টি আমাকে অবগত করা হয়। মানিক চৌধুরী কর্তৃক শায়েস্তাগঞ্জ খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা বরাবরে একটি চিঠি এনামুল হক মোস্তফা শহিদ সাহেব, মোহাম্মদ আলী টিপু, ছাবু মিয়া চৌধুরী (গাজীপুর) সহ আরো কয়েক জনকে সঙ্গে নিয়ে শায়েস্তাগঞ্জে আমার বাসায় আসে। আমাকে সঙ্গে নিয়ে খাদ্য গুদামের কর্মকর্তার হাতে চিঠিটি পৌঁছে দেন। খাদ্য গুদামের তৎকালীন O.C.L.S.D চিঠিটি পেয়ে আমাদেরকে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে বলেন। তিনি তৎকালীন ফুড কন্ট্রোলার (সাব ডিভিশনাল) আব্দুল আজিজ সাহেবের সঙ্গে যোগাযোগ করে খাদ্য গুদামে আসার জন্য অনুরোধ করেন। সে অনুসারে আব্দুল আজিজ সাহেব খাদ্য গুদামে এসে O.C.L.S.D আব্দুল করিম সাহেবকে গুদাম খুলে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিলে সঙ্গে সঙ্গে জনগণ খাদ্য গুদাম থেকে খাদ্য সংগ্রহ শুরু করে।

আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য পূর্ব থেকেই গুদামে নিয়ে আসা দুটি ট্রাকে খাদ্য তুলতে থাকি। আনুমানিক সাড়ে বারটার (১২.৩০) দিকে সৈয়দ কায়সার ও তার ভাই ফয়সল সহ কায়সার বাহিনীর কয়েক জন সদস্য একটি জিপে করে খাদ্য গুদামে এসে পৌঁছে এবং গাড়ী থেকে নেমে কারো সঙ্গে কোনো কথা না বলে প্রায় ১০ মিনিট অবস্থান করে আবার জিপে উঠে শায়েস্তাগঞ্জ পুরান বাজারের দিকে চলে যায়। কায়সার চলে যাওয়া পর আনুমানিক বেলা একটা ত্রিশ (১.৩০) মিনিটের দিকে কিছু সংখ্যক লোক পশ্চিম দিক থেকে দৌড়াইয়া এবং কয়েক জন সাইকেল আরোহি সুতাং শাহজিবাজার থেকে আসছিল এবং চিৎকার করে বলাবলি করছিল পাঞ্জাবীরা আসিতেছে পালাও পালাও। উল্লেখ থাকা প্রয়োজন যে শায়েস্তাগঞ্জ অঞ্চল ২৯শে এপ্রিল রোজ বৃহস্পতিবার বেলা একটা ত্রিশ মিনিটের পূর্ব পর্যন্ত হানাদার বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত ছিল। শায়েস্তাগঞ্জ পাক বাহিনী আসা মাত্রই নিমেষের মধ্যেই খাদ্য গুদামের লোকজন পালাইয়া যায়। গুদামের কর্মকর্তা কর্মচারীরাও আত্মরক্ষার্থে গুদামের ভিতরে আত্মগোপন করে থাকে। আমি তখন কিংকর্তব্য বিমুর হয়ে আত্মগোপনে চলে যাই। ঐদিন কায়সার শায়েস্তাগঞ্জে পুরান বাজারে পাক সেনাবাহিনীকে দিয়ে ডাঃ সালেহ আহমদ ও হীরেন্দ্র সাহা (হীরু বাবু) হবিগঞ্জ থেকে বাল্লা যাইবার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়া পুরান বাজার আসিলে উনাদেরকে ধরে ফেলে। এবং নৃশংসভাবে অত্যাচার করে গুলি করে হত্যা করে লস্করপুরে রমজান মিয়ার বাড়িতে খবর দেয়। কায়সার পাকবাহিনীকে শায়েস্তাগঞ্জ ডাক বাংলোতে অফিস স্থাপন করে দেয়। এই ডাক বাংলো থেকেই জুলুম হত্যা, নির্যাতন ও লুণ্ঠন চালাত। সৈয়দ মহিবুল হাসান, সৈয়দ আঃ আউয়াল সহ আরো অনেকে শান্তি কমিটি গঠন করে। পাক বাহিনী শায়েস্তাগঞ্জের ব্যবসায়ী ঢাকাইয়া খলিফা উরুপে হাফিজ উদ্দিন ও তার দুই ছেলে (আঃ হান্নান জয়নাল ও নূর মিয়া) কে শায়েস্তাগঞ্জে খোয়াই নদীর রেল ব্রীজের নিচে নামিয়ে গুলি করে হত্যা করে। খোয়াই নদীর সড়ক ও জনপথের ব্রীজটি মুক্তিবাহিনী এপ্রিলের আনুমানিক ১৫ তারিখ পাকসেনাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য ভেঙ্গে দেয়। ফলে পাক বাহিনী পুরান বাজারের রেলওয়ে ব্রীজটিকে সড়ক যোগাযোগের স্বার্থে কাঠের পাঠাতন দিয়ে লস্করপুর রেলগেইট হইতে এই ব্রীজ দিয়ে রেল ও মটর গাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা করে।

ওরা খোয়াই নদীর রেলওয়ে ব্রীজের পূর্ব প্রান্তে একটি বড় ভেংকার ও একটি ছাউনি নির্মান করে চেকপোষ্ট বসায়। ট্রেন ও মটরের যাত্রীগণকে নামিয়ে তল্লাশি করে সন্দেহজনক ব্যক্তিগণকে আটকে রেখে অত্যাচারের মাধ্যমে জিজ্ঞাসাবাদ করিত এবং সব ধরনের নির্যাতন শেষে খোয়াই নদীর তীরে নামিয়ে গুলি করে হত্যা করত। এইভাবে অসংখ্য লোককে ওরা হত্যা করেছিল।

• হবিগঞ্জ মহকুমার খাদ্য কর্মকর্তা জনাব মোঃ আজিজ, ঠিাকানা- ব্রাহ্মণবাড়িয়া। চীফ ইন্সপেক্টর আঃ খালেক, ঠিকানা-সিলেট। O.C.L.S.D রেজাউল করিম, ঠিকানা-চাঁদপুর (কুমিল্লা)। দারোয়ান গেনাউল্লাহ, ঠিকানা-বহুলা। দারোয়ান আঃ রহমান, ঠিকানা-বহুলা। দারোয়ান মাজত আলী, ঠিকানা-দক্ষিণ লেঞ্জাপাড়া। খাদ্য ঠিকাদার তারা মিয়া, ঠিকানা-সুলতান মাহমুদপুর, এই সাতজনকে ২৯শে মে রেলওয়ে ব্রীজের নিচে সৈয়দ কায়সারের সক্রিয় সহযোগিতায় গুলি করে হত্যা করে। * পাক বাহিনী জনাব মোক্তার মিয়া, বাড়ি কদমতলী, জনাব ইব্রাহিম,বাড়ি তালুঘরাই এই দুইজনকে ও গুলি করে হত্যা করে। * পাক বাহিনী চুনারুঘাট উপজেলার ৪নং পাইকপাড়া ইউ/পির ফুলপুর গ্রামের আর্ট (০৮) জনকে ধরে এনে শায়েস্তাগঞ্জ বিরামচর গ্রামের রাধাগোবিন্দ মন্দিরের সন্নিকটে গুলি করে হত্যা করে মাটি চাপা দেয় । তাদের নামগুলি যথাক্রমে-
(ক) পুলক চন্দ্ৰ দেব, পিতা- গোবিন্দ চন্দ্ৰ দেব।
(খ) শ্যামসুন্দর দেবনাথ, পিতা- গোবিন্দ চন্দ্ৰ দেব।
(গ) প্রফুল্ল দেবনাথ, পিতা- গোবিন্দ চন্দ্ৰ দেব।
(ঘ) গোপেন্দ্র দেবনাথ, পিতা- গোবিন্দ চন্দ্ৰ দেব।
(ঙ) শ্যামচরণ দেবনাথ, পিতা- কমলা চন্দ্ৰ দেবনাথ। (চ) রাজেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ, পিতা- কৈলাস চন্দ্র দেবনাথ
(ছ) মাখন চন্দ্ৰ দেবনাথ, পিতা- অংকু চন্দ্র দেবনাথ।
(জ) ঠাকুরধন দেবনাথ, পিতা- প্রকাশ চন্দ্র দেবনাথ। সর্ব সাং- ফুলপুর, শাকির মামুদ, থানা-চুনারুঘাট, হবিগঞ্জ। পাক বাহিনী লালচাঁন্দ চা-বাগান হইতে জনাব আনু মিয়া, পিতা-আবু মিয়া । কৃষ্ণ বাউরী, পিতা-বিহারী বাউরী।রাজকুমার, পিতা-যণমুয়া গোয়ালা। বৃন্দাবন বাউরী, পিতা- কৃষ্ণ বাউরী । সুশীল বাউরী, পিতা-মৃত কৃষ্ণ বাউরী। নেপু বাউরী, পিতা-সন্ন্যাসী বাউরী। লাশ যায়, পিতা-হরিদাশ বাউরী। রাজেন্দ্র রায়, পিতা-বিহারী রায়। গহর রাম, পিতা-বিহারী রায়। মহাদেব বাউরী, পিতা-নিতাই বাউরী। দীপক বাউরী, পিতা-টকা বাউরী। সর্ব সাং-লালচান্দ চা বাগান। ১৯৭১ সনে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়কালে পাকহানাদার বাহিনী তাদেরকে ধরে এনে শানোজাগঞ্জ রেলওয়ে জংশন সংলগ্ন দিঘীর পাড়ে হত্যা করে (বর্তমানে বধ্যভূমি) মাটি চাপা দেয়। মিরপুরের পার্শ্ববর্তী গ্রাম হইতে পাকবাহিনী ১০ জান কৃষককে ধরে এনে খোয়াই নদীর রেলওয়ে ব্রীজের পাশে গুলি করে হত্যা করে। ভাগ্যক্রমে একজন বেঁচে যায়। সে বাড়িতে গিয়ে তার সঙ্গীয় ৯ জনের পরিবারকে পাকবাহিনী কর্তৃক নিহত হওয়ার সংবাদটি দেয়।

১৯৭১ এর ১৮ এপ্রিল বানিয়াচং উপজেলা হালদারপুর গ্রামে পাক বাহিনী বিমান আক্রমণ করে প্রায় ১২ জনকে হত্যা করে এবং ইহাতে অনেক আহত হয়। এই ক্ষত চিহ্ন নিয়ে এখনও অনেকে বেঁচে আছেন।

১৯৭১ এর ১৮ সেপ্টেম্বর লাখাই উপজেলার কৃষ্ণপুর গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের নাম জানা ১২৭ জনকে এবং অজানা আরো অসংখ্য লোককে পাক বাহিনী গুলি করে হত্যা করে, তাহারাও দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে পালটা আক্রমণ করে বীরের মত দেশের স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিয়েছিল। সেখানে বঙ্গবন্ধুর মোৱাল সহ ১২৭ জনের নাম খুদাই করে একটি সুন্দর দর্শনীয় স্থাপনা কৃষ্ণপুরে সাক্ষ্য বহন করে।

আজমিরীগঞ্জ উপজেলা বদলপুর গ্রামে ১৬ নভেম্বর পাক বাহিনীর সাথে যুদ্ধে জগৎজ্যোতি দাস নিহত হন। তাহার লাশকে পাক বাহিনী অত্যাচার করে নদীর জলে ভাসিয়ে দেয়। তাহাকে বীর উত্তম পদক দেওয়া হয়। (মরনোত্তর)। তাহার স্মৃতিসৌধ আজমিরীগঞ্জে সদরে অবস্থিত আছে ।

চুনারুঘাট উপজেলার রেমা চা-বাগানে মুক্তিযোদ্ধাদের পাক বাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে রমিজ উদ্দিন নিহত হয়। তাহাকে বীর উত্তম (মরনোত্তর) পদক দেওয়া হয়। তাহার কবর রেমা ফরেস্ট অফিসের সংলগ্ন স্থানে দেওয়া হয়। রমিজ উদ্দিন বীর উত্তমের নামে ঢাকা সেনা নিবাসে শহীদ রমিজ উদ্দিন বীর উত্তম নামে একটি মহা বিদ্যালয় অবস্থিত আছে। আমরা তাহাদের জন্য গর্ব অনুভব করি। তাহারা বাঙ্গালি জাতির কাছে অমর হয়ে থাকবে।

৪ ঠা এপ্রিল মুক্তিযুদ্ধের প্রথম বৈঠকটি মাধবপুরের তেলিয়াপাড়া চা বাগানের ডাক বাংলায় অনুষ্ঠিত হয়। এই বৈঠকে নেতৃত্ব দেন কর্ণেল এ.এ. মাनী (যিনি পরবর্তীতে জেনারেল), এম. এ. রব (MLA), মানিক চৌধুরী সাহেব (MLA), এ্যাডঃ মোস্তফা আলী সাহেব (M.L.A), এনামুল হক মোস্তফ শহীদ সারে (MPA), মৌলানা আছাদ আলী সাহের (M.P.A), গোপাল মহারত্ন (M.PA), সেনাবাহিনীর মেজর শফিউল্লাহ, মেজর খালেদ মোশাররফ, মেজর সি.আর. দত্ত, ক্যাপস্টোন নাসির, ক্যাপ্টেন মতিউর রহমান, লেঃ হেলাল মোর্শেদ খাঁন (বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের চেয়ারম্যান), লেঃ সুবিদ আলী ভূঁইয়া, লেঃ সৈয়দ ইব্রাহীম, ছাত্র নেতা (গৌর প্রসাদ রায়), মোঃ আলী পাঠান, মাধবপুর (ছাত্র নেতা)। এক গাড়ি খাদ্য নিয়া সেদিন উপস্থিত ছিলাম। এখানেই বসে মুক্তিযোদ্ধের প্রথম পাক বাহিনীকে আক্রমণ করার এবং যুদ্ধ পরিচালনা করার প্রথম পদক্ষেপ নেওয়া হয়। ফোর বেঙ্গল (Four Bengal) এর বেশ কয়েকজন সেনা অফিসার মুক্তিযোদ্ধের এই রণকৌশল তৈরী করেন। এখানেই প্রথম সারা বাংলাদেশকে তিনটি সেক্টরে বিভক্ত করা হয় এবং তিনটি ফোর্সের কমান্ড গঠন করা হয়।

১। মেজর শফিউল্লার নেতৃত্বে এস (S) ফোর্স
২। মেজর জিয়ার নেতৃত্বে জেড (Z) ফোর্স
৩। মেজর খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে কে (K) ফোর্স।

এই মাধবপুরের তেলিয়াপাড়াতে গণপ্রজাতন্ত্রি বাংলাদেশ সরকার গঠন করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু তেলিয়াপাড়া চা-বাগানের ডিফেন্স নিরাপত্তা জনিত কারণে সরিয়ে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সিদাই থানার অন্তর্গত সুন্দর টিলার নামক স্থানে স্থানান্তরিত হয়। পরে বাংলাদেশ সরকার ১৭ই এপ্রিল মেহেরপুরের বৈদ্যনাথ তলায় (অস্থায়ী সরকার) আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করে। বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপ- রাষ্ট্রপতি, তাজ উদ্দিন আহমদকে প্রধান মন্ত্রী, এম মনসুর আলী, এম কামরুজ্জামানকে নিয়ে মন্ত্রী পরিষদ গঠন করা হয়। এই মন্ত্রী পরিষদকে পুলিশবাহিনীর এসপি (SP) মাহবুব স্যার বার (১২) জন আনসার বাহিনীর সদস্য নিয়ে (Guard of Honour) গার্ড অফ অনার প্রদান করেন। মুজিবনগর সরকারের উপদেষ্ঠা পরিষদে ছিলেন (১) মৌলানা ভাসানী (২) অধ্যাপক্ষ মোজাফ্ফর আহমেদ (৩) কমরেড মনি সিং (8) মনোরঞ্জন ধর।

প্রবাসী সরকার গঠনের পর জেনারেল ওসমানীকে সর্বাধিনায়ক, জেনারেল এম.এ রবকে চীফ অব ষ্টাফ, এয়ারভাইস মার্শাল এ কে খন্দকারকে ডেপুটি চীফ অব ষ্টাফ করা হয়। এবং সমগ্র বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে
ভাগ করা হয়।
সেক্টর নং-১
এই সেক্টরের নেতৃত্বে ছিলেন মেজর জিয়াউর রহমান বীর উত্তম। সময় সীমা ঃ (এপ্রিল-জুন) পরবর্তীতে (জুন-ডিসেম্বর) নেতৃত্বে ছিলেন মেজর রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম।
এলাকা সমূহ : চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, ফেনী নদী পর্যন্ত ।

সেক্টর নং-২ ঃ
এই সেক্টরের নেতৃত্বে ছিলেন মেজর খালেদ মোশাররফ বীর উত্তম।
সময় সীমা ঃ (এপ্রিল-সেপ্টেম্বর) পরবর্তীতে (সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর) পর্যন্ত নেতৃত্বে ছিলেন মেজর এ.টি.এম হায়দার বীর উত্তম। এলাকা সমূহ : নোয়াখালি, কুমিল্লা, আখাউড়া, ভৈরব রেল লাইন পর্যন্ত এবং ঢাকা ও ফরিদপুর জেলার কিছু অংশ ।

সেক্টর নং-৩ঃ
মেজর কে.এম শফিউল্লাহ বীর উত্তম এর নেতৃত্বে ছিলেন। সময় সীমা ঃ (এপ্রিল-ডিসেম্বর) পরবর্তীতে মেজর এ.এন.এম নুরুজ্জামান (সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর) দায়িত্বে ছিলেন।
এলাকা সমূহ : আখাউড়া, ভৈরব রেল লাইন থেকে পূর্ব দিকে কুমিল্লা জেলা, সিলেট জেলার হবিগঞ্জ, ময়মনসিংহ জেলার কিশোরগঞ্জ ও ঢাকা জেলার কিছু অংশ ।

সেক্টর নং-৪ঃমেজর চিত্ত রঞ্জন দত্ত বীর উত্তম।
সময় সীমা ঃ (এপ্রিল-ডিসেম্বর)।
এলাকা সমূহ ঃ সিলেট জেলার পূর্বাঞ্চল, খোয়াই শায়েস্তাগঞ্জ রেল লাইন থেকে উত্তর দিকে সিলেটের ডাউকি সড়ক পর্যন্ত ।

সেক্টর নং-৫ ঃমেজর মীর সৈকত আলী বীর উত্তম।
সময় সীমা : (এপ্রিল-ডিসেম্বর)।
এলাকা সমূহ ঃ সিলেট জেলার পশ্চিম এলাকা, সিলেটের ডাউকি থেকে সুনামগঞ্জ ও ময়মনসিংহ জেলা সীমানা পর্যন্ত।

সেক্টর নং-৬ঃ উইং কমান্ডার এম বাশার বীর উত্তম সময় সীমা ঃ (এপ্রিল-ডিসেম্বর)।
এলাকা সমূহ : ব্রহ্মপুত্র নদের তীরাঞ্চল ছাড়া সমগ্র রংপুর জেলা

সেক্টর নং-৭:দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও পর্যন্ত। মেজর নাজমুল হক বীর উত্তম।
সময় সীমা : (জুলাই-আগস্ট) পর্যন্ত। পরবর্তীতে কাজী নুরুজ্জামান
(আগস্ট-ডিসেম্বর) পর্যন্ত দায়িত্বে ছিলেন। এলাকা সমূহঃ রাজশাহী জেলা, দিনাজপুর, বগুড়া ও পাবনা জেলা।

সেক্টর নং-৮ :মেজর আবু ওসমান চৌঃ বীর উত্তম। সময় সীমা ঃ (এপ্রিল-আগস্ট) পর্যন্ত। পরবর্তীতে মেজর এম.এ মঞ্জুর বীর
উত্তম (আগস্ট-ডিসেম্বর) পর্যন্ত দায়িত্বে ছিলেন। এলাকা সমূহ ঃ কুষ্টিয়া, যশোর, ফরিদপুরের দৌলতপুর, সাতক্ষীরা, খুলনা জেলা।

সেক্টর নং-৯ :মেজর এম.এ জলিল বীর উত্তম। সময় সীমা ঃ (এপিল-ডিসেম্বর) পর্যন্ত।অঞ্চল সমূহ : সাতক্ষীরা, দৌলতপুরের সড়ক সহ খুলনার সমগ্র দক্ষিণাঞ্চল, বরিশাল ও পটুয়াখালি ।

সেক্টর নং-১০ঃঅভ্যন্তরীন নৌপথ ও সমুদ্রউপকুল অঞ্চল, চালনাবন্দর, চট্টগ্রাম বন্দর, সব এলাকার সেক্টর কমান্ডারদের নির্দেশে পরিচালিত হইত।

সেক্টর নং-১১মেজর এম আবু তাহের বীর উত্তম।
সময় সীমা ঃ (আগস্ট-নভেম্বর) পর্যন্ত। পরবর্তীতে স্কোয়াড্রন লিডার এম হামিদ উল্লাহ খাঁন বীর উত্তম (নভেম্বর-ডিসেম্বর) পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।

অঞ্চল সমূহ ঃ কিশোরগঞ্জ ছাড়া সমগ্র ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল পর্যন্ত। ১৯৭১ইং জুন মাসের ২য় তারিখে আমি (গৌর প্রসাদ রায়) পায়ে হেটে কালেঙ্গা পাহাড় হয়ে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের অন্তর্গত গোবিন্দসিং আশারাম বাড়ী পৌঁছি। তারপরে আগরতলা যাই। আগরতলা কংগ্রেস ভবন হইতে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার জন্য নাম অন্তর্ভুক্ত করি। এখান হইতে আমাদেরকে আসাম রাজ্যের লোহারবন্দ ট্রেনিং ক্যাম্পে পাঠানো হয়। সেখানে বেসিক ট্রেনিং জে.এল.ডাব্লিউ (J.L.W.) ট্রেনিং সহ এক্সপ্লোসিভ ট্রেনিং নিয়ে ৪নং সেক্টরের অধীনে কৈলা শহর সাব-সেক্টরে যোগদান করি। আমার কোম্পানী কমান্ডার (Sub Sector Commander) লেঃ ওয়াকিউজামান এর অধীনে একজন প্লাটুন কমান্ডার হিসেবে মনু নদীর তীরে নয় মৌজা নামক স্থানে ডিফেন্সে যুদ্ধরত ছিলাম। এছাড়া চাতলাপুর বিওপি, মনু রেল ষ্টেশন, টেংরা বাজার, রাজনগর, বালাগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ, বিশ্বনাথ, মোগলাবাজার সহ বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধরত ছিলাম। বর্তমানে হবিগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ডের ডেপুটি ইউনিট কমান্ডর ও হবিগঞ্জ জেলা সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের সভাপতি হিসেবে দায়িত্বরত আছি।

১লা ডিসেম্বর পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। ফলে ভারতের মিত্রবাহিনী ও আমাদের মুক্তিবাহিনী একযোগে সাঁড়াশি আক্রমণ করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে ১৬ই ডিসেম্বর ৯৩ হাজার সশস্ত্র পাকিস্তানি সৈন্যের ঢাকা রেসকোর্স ময়দানে আত্মসমর্পনের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিজয় লাভ করে। এই আত্মসমর্পন অনুষ্ঠানে মিত্রবাহিনীর নেতৃত্ব দেন ইস্টার্ন কমান্ডের কমান্ডিং অফিসার জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা এবং মুক্তিবাহিনীর পক্ষে ছিলেন উপ-সেনা প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল এ.কে খন্দকার এবং পাকিস্তানের পরাজিত সেনা প্রধান জেনারেল নিয়াজী, এই আত্মসমর্পন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়। ৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১ শায়েস্তাগঞ্জ এলাকা হানাদার পাকবাহিনীর দখল হইতে মুক্ত হয়। আমরা স্বাধীন বাংলাদেশের মুক্ত আকাশে, মুক্ত মাটিতে চলতে পেরে মহান মুক্তিযুদ্ধের গর্ব অনুভব করি এবং লাল সবুজের পতাকা উড্ডয়ন করি ও জয় বাংলার প্রতিধ্বনিতে শায়েস্তাগঞ্জ মুখরিত হয়ে উঠে। এই যুদ্ধে বাংলাদেশের ৩০ লক্ষ শহীদের এবং দুই লক্ষ মা-বোনের শ্লীলতাহানির মধ্য দিয়ে এই বিজয় অর্জিত হয়।

ভারতের প্রায় ১০ হাজার সৈন্য শহীদ ও (Missing) লাপাত্তা হয়েছে। মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর মধ্যে এই যুদ্ধ রক্তের সম্পর্ক তৈরী করেছে। এই বন্ধন চিরদিন অটুট থাকবে।

“জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু”

বীরমুক্তিযোদ্ধা গৌর প্রসাদ রায়
ডেপুটি ইউনিট কমান্ডার
হবিগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সভাপতি সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম, হবিগঞ্জ জেলা শাখা ।
তারিখ ঃ ১৭-০৩-২০২১ইং

Address


Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when মুক্তিযুদ্ধের হাতিয়াব,জয় বাংলার হাতিয়ার,গর্জে উঠুক আরেকবার১৯৭৮-নাজমুল হব posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Videos

Shortcuts

  • Address
  • Alerts
  • Videos
  • Claim ownership or report listing
  • Want your business to be the top-listed Media Company?

Share