25/06/2022
অনেক সময় আগের কথা। কোনো এক রাজ্যে এক প্রভাবশালী রাজা রাজত্ব করতেন। একদিন সেই রাজার দরবারে এক বিদেশী আগন্তুকের আগমন হল, এবং সেই বিদেশী লোকটি রাজাকে একটি সুন্দর পাথর উপহার হিসেবে দিলেন।
রাজা পাথরটি দেখে খুবই খুশি হলেন, এবং সেই পাথরটি দিয়ে নিজের মূর্তি গড়াবেন বলে তিনি মনস্থির করে ফেললেন, এবং মূর্তি গড়ার দায়িত্ব দিয়ে দিলেন, রাজ্যের মন্ত্রীর উপর।
মহামন্ত্রী রাজ্যের সর্বশ্রেষ্ঠ মূর্তিকারের নিকট গিয়ে বললেন- “মহারাজ তাঁর নিজের প্রতিমা স্থাপন করতে চান। সাত দিনের মধ্যে মহারাজের মূর্তি বানিয়ে রাজমহলে দিয়ে আসবেন। এর বদলে আপনাকে ৫০ স্বর্ণ মুদ্রা দেওয়া হবে।”
৫০ স্বর্ণ মুদ্রার কথা শুনে মূর্তিকার খুবই খুশি হয়ে গেলেন। এরপর তিনি দ্রুত ঘরে গিয়ে মূর্তি তৈরির সরঞ্জাম নিয়ে চলে এলেন। এবং সেখান থেকে হাতুড়ি নিয়ে পাথরটি ভাঙ্গার জন্য, বাড়বার পাথরটির উপর হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করতে লাগলেন। কিন্তু পাথরটি কিছুতেই ভাঙছিল না। যেমন পাথর ঠিক তেমনটিই রয়ে গেল।
প্রায় পঞ্চাশ বার জোরে জোরে আঘাত করার পর, তিনি শেষ বাড়ের জন্য হাতুড়ি আঘাত করার জন্য উপরে উঠালেন। কিন্তু এটা ভেবে তিনি হাতুড়িটি নামিয়ে নিলেন যে, পঞ্চাশ বার চেষ্টা করার পরেও যখন, পাথরটি ভাঙতে পারলাম না, আর এক আঘাতেই কি আর ভাঙবে?
সে পাথরটিকে নিয়ে মন্ত্রীর কাছে, চলে গেল এবং তিনি মন্ত্রীকে বললেন- এই পাথর ভাঙ্গা সম্ভব নয়। তাই এটি দিয়ে মূর্তি বানানো সম্ভব নয়।
কিন্তু এদিকে মন্ত্রীকে কিছু করেই হোক মহারাজের কথা পালন করতেই হবে। তাই নিরুপায় হয়েই তিনি রাজ্যের একজন সাধারণ মূর্তিকারকে মূর্তি নির্মাণের দায় ভার শপে দিলেন। পাথরটি নিয়ে সেই মূর্তিকার মন্ত্রীর সামনেই পাথরটিকে আঘাত করলেন, এবং পাথরটি মাত্র একটি আঘাতেই ভেঙ্গে গেল। কারণ এটি আগে থেকেই অনেক আঘাত পেয়েছে। তাই পাথরটির বন্ধন আলগা হয়ে গিয়েছিল।
পাথরটি ভেঙ্গে ফেলার পড়েই, সেই মূর্তিকার মূর্তি বানানোর কাজে ডুবে গেলেন। আর এইদিকে মন্ত্রী ভাবতে লাগলেন- ইস, যদি সেই মূর্তিকার, কেবলমাত্র আর এক বার শুধু শেষ চেষ্টাটুকু করত, তাহলে সে আজ ৫০ স্বর্ণ মুদ্রা পেয়ে যেত।
শিক্ষণীয় নীতি কথা:
তো এই গল্পটি থেকে আমরা শিখতে পাই যে, কখনো কখনো কোনো কাজ করার সময় আমাদের সামনে সমস্যা আসা মাত্রই, আমরা আমাদের আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলি, এবং আমরা আর চেষ্টা করি না। আবার কোনো সময় দু-এক বার ব্যর্থ হওয়ার পর, আমরা হাল ছেড়ে দিই। যদিও আর একটু মাত্র চেষ্টাই আমাদের সাফল্যের পথ দেখিয়ে দিত। তাই বারংবার অসফল হওয়ার পরেও, যতদিন এবং যতক্ষণ না পর্যন্ত সফলতার দেখা মিলছে ততক্ষণ পর্যন্ত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া উচিত। হতেও পারে, শেষ পর্যায়ে এসে আমরা হাল ছেড়ে দিচ্ছি।