24/08/2022
নিঃসন্দেহে আনন্দের বিষয়। মা হওয়া পৃথিবীর সুন্দর অনুভূতির একটি। কিন্তু এখানে চিন্তার বিষয় একটিই। সন্তান কিভাবে হবে? নরমাল ডেলিভারি নাকি সেই কাটাকাটির ঝামেলায় যেতে হবে। আগে নরমাল প্রেগন্যান্সি ছিলো সাধারণ একটি বিষয়। এখন অনেকেই প্রেগন্যান্সির ব্যাথা সহ্য করতে চায় না বলে সিজারিয়ান হয়ে থাকে। কিন্তু এক গবেষণায় দেখা গেছে নরমাল ডেলিভারিতে মা ও সন্তান উভয়েই সুস্থ থাকে। শরীরে কোন বড় ধরনের সমস্যা না থাকলে কিছু জিনিস মেনে চললেই স্বাভাবিক নিয়মে কাটাছেঁড়া ছাড়াই সন্তান জন্ম দেওয়া যায়। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায়।
নরমাল ডেলিভারি কেন গুরুত্বপূর্ণ
মা ও সন্তান উভয়ের জন্যই স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ হলো এই নরমাল ডেলিভারি। নরমাল ডেলিভারি বা স্বাভাবিক প্রসব হলে সন্তানের মায়ের সুস্থ হতেও কম সময় লাগে। নরমাল ডেলিভারিতে বাচ্চা হলে কিছু ব্যাকটেরিয়া বাচ্চার মধ্যে প্রবেশ করে যা বাচ্চার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।
নরমাল ডেলিভারিতে প্রসবের সময় অ্যামনিয়োটিক নামক তরলের সংস্পর্শে আসে বাচ্চাটি, যার ফলে বাচ্চাটির শ্বাসকষ্টের সম্ভাবনা কমে যায়। সিজারিয়ান পদ্ধতির ক্ষেত্রে জরায়ুতে অক্সিজেন কম প্রবেশ করায় যার জন্য সেরে উঠতে বেশি সময় লাগে। আর নরমাল ডেলিভারিতে তার উল্টো টা। এছাড়াও আরো যে সুবিধা রয়েছে নরমাল ডেলিভারিতে। যেমন
নরমাল ডেলিভারির ক্ষেত্রে বাচ্চা সহজেই মাতৃদুগ্ধ পান করার পদ্ধতি শিখে যায়।
নরমাল ডেলিভারিতে কোন কাটাকাটির ঝামেলা নেই বিধায় রোগীর সেরে উঠতে কম সময় লাগে।
যারা নরমাল ডেলিভারিতে সক্ষম তারা সিজারিয়ানদের থেকে বেশি কর্মক্ষম ও সাহসী হয়ে থাকেন।
নরমাল ডেলিভারিতে প্রসব বেদনা একটু বেশি সহ্য করতে হয় ঠিকই কিন্তু একবার প্রসব হয়ে গেলে পরবর্তীতে আর কোন সমস্যা হয় না।
নরমাল ডেলিভারি শরীর জন্য যে কতো ভালো তা ডেলিভারির পরেই জানতে পারবেন।
নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায়
নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায়গুলো নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-
ডায়েট
প্রেগন্যান্ট জানার পর থেকে নিজের প্রতি বাড়তি যত্ন নেওয়া শুরু করুন। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ডায়েট চার্ট মেনে চলুন। স্বাস্থ্যকর খাবার, টাটকা শাক সবজি, ফলমূল প্রচুর পরিমানে খাওয়ার চেষ্টা করুন । এছাড়াও খাদ্য তালিকা মাল্টিভিটামিন, ক্যালসিয়াম ও আয়রন সমৃদ্ধ খাদ্য রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে শরীরের পেশি যত শিথিল থাকবে নরমাল ডেলিভারির সম্ভাবনা ততো বাড়বে।
একটিভ থাকা
অনেকে প্রেগন্যান্সির খবর শুনেই শুয়ে বসে কাটাতে শুরু করে। তারা ভাবে এই সময়ে কোন কাজ করা যাবে না। কিন্তু এটা একদমই ভুল ধারনা। বরং প্রেগন্যান্সির সময় নিজেকে যতো একটিভ রাখা যায় ততো ভালো। নরমাল ডেলিভারি হওয়ার সুযোগ ততো বেশি।
চিকিৎসক যদি বেড রেস্ট না বলে, অন্য কোন সমস্যা না থাকে তবে নিজেকে একটিভ রাখুন। একটিভ রাখতে যা যা করতে পারেন –
বাড়ির হালকা কাজ কর্ম করতে পারেন।
চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে হালকা ব্যায়াম বা যোগাব্যায়াম করুন।
সকাল সন্ধ্যা হাটতে পারেন। এতে ওজন কম থাকবে, শরীর সুস্থ থাকবে, নরমাল ডেলিভারির চান্সও ততো বাড়বে।
পানি
পানি আমাদের শরীরের অত্যাবশকীয় একটি জিনিস। শরীরের ফ্লুইড চলাচলের জন্য পানি খুব জরুরি। তাই গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি খেতে হবে। এতে রক্ত চলাচল ভালো হয়। কোষ্ঠকাঠিন্য এর সমস্যা হয় না। সুতরাং যতো বেশি পানি খাওয়া যায় ডেলিভারি ততো সহজ হবে।
নরমাল ডেলিভারির জন্য শরীর সুস্থ্য ও ঝরঝরে রাখা জরুরী। স্ট্রেস বাড়লেই শরীর খারাপ হয়ে যায়। গর্ভাবস্থায় যতো স্ট্রেস কম নেওয়া যায় ততো ভালো। এই সময়ে নিজেকে হাসিখুশি প্রফুল্ল রাখতে হবে। প্রয়োজনে মনোবিদের কাছে যাওয়া যেতে পারে। প্রেগ্ন্যাসির মাসাজ নিলেও স্ট্রেস কমে।
জন্মের পরিকল্পনা
গর্ভাবস্থার শুরুতেই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পরিকল্পনা করে নিতে হবে। আপনার সমস্যা খুলে বলুন। ডক্তারের পরামর্শ, নিয়ম কানুন, নির্দেশ মেনে চলুন। এতে চিন্তা কম হবে। গোটা ব্যাপারটাই সহজ মনে হবে।
প্রেশার ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা
গর্ভাবস্থার আগে থেকেই যাদের প্রেশার ও ডায়াবেটিস সমস্যা রয়েছে তাদের তা নিয়ন্ত্রনে রাখতে হবে। নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলতে হবে। যাতে এগুলো নিয়ন্ত্রণে থাকে।
অভিভাবক ক্লাস
বাচ্চা জন্মের আগে বাড়ির কাছে কোন প্যারেন্টাল ক্লাস থাকলে সেখানে যান। সেখানে বাচ্চা জন্মানো থেকে শুরু করে সব কিছু শিখানো হয়। কিভাবে সহজে, কম কষ্টে কম সময়ে বাচ্চা জন্মানো যায় সেসব শেখানো হয়।
যোগাব্যায়াম
নরমাল ডেরিভারির জন্য যোগাব্যায়াম অত্যান্ত কার্যকরী। এতে শরীরের পেশী শিথিল থাকে। নরমাল ডেলিভারির জন্যে শরীরের পেশী শিথিল থাকা জরুরী। এছাড়াও যোগাব্যায়ামে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে, স্ট্রেস কমে। তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী করতে হবে।