14/07/2020
বাসার পাশের মেয়ে সকিনা। যাকে পাড়ার প্রত্যেক ছেলে'ই মনে মনে চায়। তবে কেউ মুখ ফুটে কিছু বলতে পারে না। এর একমাত্র কারণ হচ্ছে সকিনার বাপ শেখ আব্দুর রহমান। উনাকে সবাই শেখ সাব বলেই ডাকে। বিশাল বড় সম্পত্তি ও ভালো টাকা পয়সা থাকায় উনার দাপট'টা এলাকায় একটু বেশি'ই।
আর সকিনা হচ্ছে শেখ সাবের একমাত্র মেয়ে। যার কারণে অনেকে টাকার লোভেও সকিনাকে বিয়ে করতে চায়।
তাদের বাসার সামনে দিয়ে গেলেই দেখা যায়, গেইটের সম্মুখে বিশাল বড় এক লাইন। কারো হাতে ফুল, কারো হাতে বই।
ইদানিং আবার বই দিয়ে প্রপোজ করার পদ্ধতি চালু হয়েছে। আর এদিকে সকিনা হচ্ছে অনেক বড় বইপ্রেমী। ওর ফেসবুকে শুধু বিভিন্ন লেখকদের উক্তি, এবং গল্প শেয়ার দেওয়া আছে।
এই দিকে পাড়ার ছেলেরা টিফিনের টাকা জমিয়ে বই কিনছে তাকে উপহার দেওয়ার জন্য।
সকিনা দেখতে সুন্দরী হলেও তার প্রতি আমার কোনোকালেই আগ্রহ জন্মায় নি। আমি আবার স্যোশাল মিডিয়াতে টুকটাক লিখে থাকি। বেশিরভাগ এই রক্ত খাওয়া আর ডেভিল স্বত্তা নিয়ে।
আমার পাঠক বেশ অল্প হলেও তারা বেশ। তাদের মন্তব্যগুলো কখনোই নেক্সট আর নাইসে সীমাবদ্ধ থাক্র নি।
আমি যখন'ই গল্পের কমেন্ট বক্সে যাই, সেখানে শুধু গঠনমূলক মন্তব্য দেখতে পাই। যা আমাকে লিখতে আরো বেশি উৎসাহিত করে। তো এবার ফিরে আসি কাহিনীতে।
বেশ কিছুদিন আগে "আমি সকিনা" আইডি থেকে ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট আসে। আমি সেটা দেখেও আর প্রোফাইল চেক করি না। কারণ আমি শুধু মেসেজ রিকু দেওয়া পাবলিকদের ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট এক্সেপ্ট করে থাকি। বলা তো যায় না, কে পাঠক, কে পাঠক নয়।
তো আমি সেই রিকুয়েষ্ট'টা সপ্তাহ দশদিন ঝুলিয়ে রাখি। হঠাৎ একদিন একটা মেসেজ রিকু আসে। চেক করতে গিয়ে দেখি "আমি সকিনা" থেকে মেসেজ আসছে। মেসেজটি ছিল, "আসসালামু আলাইকুম। আপনি সত্যি অনেক ভালো লিখেন। আমি আপনার অনেক বড় ভক্ত। আপনার লেখা আমার সারা দেহে শিহরন জাগ্রত করে। যদি রিকুয়েষ্ট'টা এক্সেপ্ট করতেন, আমি সত্যিই ধন্য হতাম।"
মেসেজটি পড়ে আমি আবেগাপ্লুত হয়ে সাথে সাথে রিকুয়েষ্ট এক্সেপ্ট করলাম।
তারপর উনাকে রিপ্লাই দিলাম, "ধন্যবাদ।"
অবাক হলেও সত্যি, মেয়েটি সাথে সাথে রিপ্লাই দিল,
- আপনি আমাদের পাড়ার সালমান না?
- মানে?
- আরে আমি সকিনা। আপনাদের শেখ সাবের মেয়ে।
- কি!
মেসেজটি দেখে সাথে সাথে তার প্রোফাইলে গেলাম। গিয়ে দেখি এটাই আমাদের পাড়ার সকিনা।
আমার কেন জানি বিশ্বাস'ই হচ্ছিল না। যে মেয়ের পিছনে হাজারো ছেলের লাইন, সে কিনা আমাকে রিকুয়েষ্ট দিয়েছে! তাও মেসেজ দিয়ে!
ব্যাপারটা জমল না।
মেসেঞ্জারে ঢুকে দেখি সকিনা রিপ্লাই দিয়েছে,
- আমি সত্যি ভাবতে পারছি না, আমি যার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছি, যে আমার ক্রাশ, সে কি না আমার পাড়ার। অথচ সেটা আমি আজ জানলাম!
- আমি আপনার ক্রাশ! লাইক সিরিয়াসলি?
- হ্যাঁ গো হ্যাঁ। আপনার গল্পের অনেক বড় ফ্যান আমি।
- আপনিও রক্ত খেতে পছন্দ করেন নাকি!
- করতাম না, তবে আপনার লেখা পড়ে ইচ্ছে হচ্ছে একবার খেতে। আপনি খাওয়াবেন?
মেসেজটি দেখে আমি আবারো অবাক। মেয়েটা বলে কি! রক্ত কখনো খাওয়া যায় নাকি! এতো শুধু গল্প।
আমি আর মেয়েটির রিপ্লাই দিলাম না। বেশ খানিকক্ষন বাদে সে নিজে'ই মেসেজ দিল,
- কি গো ক্রাশ, রক্তের কথা বলায় ভয় পেলেন বুঝি?
- দেখুন, এসব শুধু গল্পেই সীমাবদ্ধ। বাস্তবে নয়।
- আচ্ছা আচ্ছা সরি। আমি তো মজা করছিলাম।
তো এভাবেই শুরু আমাদের কথা বলা। কয়েকদিন পর দেখতে পেলাম, সে আমার পরিচিত সব লেখকদের লিস্টে আছে। সবার কমেন্ট বক্সে'ই তাকে দেখা যায়। আর যে'ই সেই কমেন্ট নয়। সবগুলো হচ্ছে লুতুপুতু কমেন্ট।
আর এই কিছুদিনের মধ্যে মেয়েটার প্রতি আমারো এক মায়া জন্মে। আমু তাকে এ ব্যাপারে কিছু বলতে যাবো, ঠিক তখন'ই সে প্রপোজ মেরে বসে।
আমি তো দিন দুনিয়া ভুলে তার প্রপোজাল এক্সেপ্ট করে ফেলি। সে'ই ব্যাপারটাও ভুলে যাই। শুরু হয় আমাদের প্রেম।
প্রেমের শুরু হতেই আমি লেখাপড়া সব ভুলে তার সাথে কথা বলতে থাকি। এদিকে আমার ইঞ্জিনিয়ারিং এর ফাইনাল এক্সাম চলে আসছে। কিন্তু সেদিকে আমার খেয়াল নেই। সকিনা নিজেও ম্যাট্রিক পাশ। ম্যাট্রিক পাশ করে আর পড়ালেখা করে নি। করবে'ই বা কেন! বাবার এত এত টাকা পয়সা রেখে।
তো সকিনার সাথে প্রেম করতে গিয়ে দেখা গেল আমার পরীক্ষা শুরু। আর ইঞ্জিনিয়ারিং এ না পড়ে পাশ করার চান্স নেই বললেই চলে। তেমনি আমিও ঘোড়ার ডিম পাড়লাম। অর্থাৎ পরীক্ষায় লজ্জাজনক ভাবে ফেইল করলাম। বাবা তো বলে'ই দিয়েছিল, পাশ না কিনে রিকশা কিনে দিবে। উনি উনার কথা রেখেছেন। আমাকে একটা অটো রিকশা কিনে দিয়েছেন। বলেছেন ঢাকায় গিয়ে রিকশা চালাতে। এদিকে সকিনা ফোন রিসিভ করছে না। সে নাকি একটা রিকশা ওয়ালার সাথে প্রেম করবে না।
দুঃখে ভরা মন নিয়ে গেলাম ঢাকা শহরে। চালাতে লাগলাম আব্বার কিনে দেওয়া রিকশা। রিকশা চালাতে চালাতে'ই সেদিন মিরপুরের রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম। সেখানে দেখতে পেলাম যুবায়ের ও সকিনা দাঁড়িয়ে লুতুপুতু করছে।
এই ছেলেকে কয়েকদিন আগেও দেখেছি লেখালেখি শুরু করতে। বর্তমানে অনলাইন প্রেমের টিপ্স দিয়ে থাকে। কিন্তু এদের এই অবস্থায় দেখে আমার মন আরো দুঃখে ভারাক্রান্ত হয়ে গেল। মনের দুঃখে তাদের পাশ দিয়ে রিকশা চালাতে চালাতে গান ধরলাম,
"ও সকিনা যাইবা কিনা, ভুইলা আমারে।
আমি এখন রিকশা চালাই, ঢাকা শহরে।"
রম্যগল্প: সকিনা।
সালমান চৌধুরী সুপ্রিয়