22/10/2024
একটা ছোট্ট গ্রাম ছিল নদীর পাড়ে, নাম তার ‘আলোপুর’। গ্রামের মানুষজন সাধারণ, খুব বেশি কিছু চায় না তারা—একটা শান্ত জীবন, সকালবেলা পাখির ডাক আর সন্ধ্যাবেলা নদীর বাতাসে ভেসে আসা হাওয়ার সুর। সেই গ্রামেই ছিল নীলু, গ্রামের মিষ্টি মেয়ে। নীলু ছোট থেকেই সবকিছুর মধ্যে আনন্দ খুঁজে পেত—সকালবেলা মায়ের হাতের ভাত, স্কুলের পথে চেনা গাছগাছালি, আর সন্ধ্যায় ছাদের কোণে দাঁড়িয়ে মেঘ দেখে স্বপ্ন দেখা।
একদিন নীলুর বাবার অসুখ হলো, খুবই খারাপ। ডাক্তার বলল, শহরে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করাতে হবে। কিন্তু গ্রামের বাড়ির এত সঞ্চয় কোথায়? নীলু বাবার পাশে বসে কাঁদছিল, আর তার মনের মধ্যে ঝড় বয়ে যাচ্ছিল। সে ভাবছিল, "বাবা যদি ভালো না হয়, আমি কেমন করে থাকব?" কিন্তু সে জানত, কাঁদলেই তো আর সমাধান হবে না।
নীলু নিজেকে শক্ত করে শহরে কাজের খোঁজে গেল। শহরটা তার গ্রামের মতো নয়—লোকজন তাড়াহুড়োর মধ্যে থাকে, কেউ কারও দিকে তাকায় না। তবুও নীলু হার মানল না। সে একটা ছোট দোকানে কাজ পেল। সারাদিন দোকানে কাজ করে, রাতে বাসায় ফিরে বাবার চিকিৎসার জন্য টাকা জমানো শুরু করল। প্রতিটা টাকার মধ্যে সে বাবার জন্য ভালোবাসা, চিন্তা, আর আশা ভরিয়ে রাখত।
কিন্তু দিনগুলো কঠিন হয়ে গেল। শহরের জীবনটা কঠিন, আর তার সাথে বাবার অসুখের চিন্তা। অনেক রাত নীলু আকাশের দিকে তাকিয়ে নিজেকে সান্ত্বনা দিত, "বাবা ঠিক হয়ে যাবে, আবার আমরা নদীর পাড়ে বসে গল্প করব।" তার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ত, কিন্তু সে আবারও সকালে উঠে কাজে যেত।
একদিন নীলু জানতে পারল, সে যথেষ্ট টাকা জমিয়েছে বাবার চিকিৎসার জন্য। সে বাবাকে নিয়ে শহরের হাসপাতালে গেল। চিকিৎসা শুরু হলো, আর ধীরে ধীরে বাবার শরীরেও পরিবর্তন আসতে লাগল। ডাক্তার বলল, "তোমার বাবা সুস্থ হয়ে উঠছে।"
নীলুর মুখে হাসি ফোটে। এতদিনের কষ্ট, সব দুঃখ যেন মুছে গেল। বাবাকে নিয়ে সে আবার গ্রামে ফিরে এলো। নদীর পাড়ে বসে নীলু আর তার বাবা অনেক গল্প করল, যেমন তারা আগে করত। নীলু নদীর জলে হাত ডুবিয়ে বলল, "জানো বাবা, আমি যখন শহরে ছিলাম, প্রতিদিন এই নদীর জলের স্পর্শটাকে মিস করতাম।" বাবা তার মেয়ের মাথায় হাত রেখে বলল, "তুই অনেক বড় মনের মেয়ে রে নীলু। তোকে নিয়ে আমি গর্বিত।"
আলোপুরে তখন সন্ধ্যার আলো, আর নদীর বাতাসে মিষ্টি একটা সুর বাজছে। নীলু জানত, সবকিছুর মধ্যে ভালোবাসা থাকলে কোনো কষ্টই বড় হয় না। আর সেই ভালোবাসাই তাকে আলোপুরের নীল আকাশের নিচে আবার ফিরিয়ে এনেছে, বাবার পাশে, তাদের ছোট্ট সুখের পৃথিবীতে।