28/09/2022
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কিসের তৈরি | Nabiji Kisher Toiri
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কিসের তৈরি
নবীজি কিসের তৈরী, মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) কিসের তৈরী নূরের নাকি মাটির?,
নবী কিসের তৈরি হাদিস, নবী কিসের তৈরি দলিল, চলুন জেনে নিই বিস্তারিত ভাবে মাথা ঠান্ডা রেখে অনেকের মাথা গরম ও হতেপারে মাথা গরম করবেন্না দয়াকরে আমরা বিস্তারিত ভাবে জানার চেষ্টা করি
নবীজি কিসের তৈরী মুহাম্মাদ সা. মাটির মানুষ ছিলেন, নূরের তৈরী ফেরেশতা নন
নবীজি কিসের তৈরী চলুন বিস্তারিত জেনেনেই
কেবল বিশ্বনবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামই নন, বরং কুরআনের বহু আয়াত ও অসংখ্য সহীহ হাদীস দ্বারা সুস্পষ্ট প্রমাণিত যে, মানব জাতির আদি পিতা হযরত আদম আলাইহিস সালাম থেকে সর্বশেষ নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত সকল নবী-রাসূলই ছিলেন মাটির তৈরী মানুষ। কোনো পয়গম্বরই নূরের তৈরী কিংবা ফেরেশতা ছিলেন না। তাছাড়া আল্লাহ তা’আলা মানুষের কাছে তাদের পথপ্রদর্শক মানুষ নবী পাঠাবেন এটিই স্বাভাবিক। মানুষের কাছে যদি নূরের তৈরি কোনো ফেরেশতাকে নবী হিসাবে প্রেরণ করতেন তাহলে তাঁদের মাধ্যমে পৃথিবীতে দীন প্রতিষ্ঠা করা প্রায় অসম্ভব হয়ে যেতো।
কারণ, যেসব মাখলুক নূরের তৈরী তাদের কোনো আহার নেই, নিদ্রা নেই, ক্লান্তি নেই, স্ত্রী-পুত্র নেই, পেশাব-পায়খানা নেই, অসুস্থতা নেই, শরীরে ব্যথা নেই, ক্ষুধার জ্বালা নেই। এবার আপনারাই বিচার করুন, যাদের মাঝে মানবীয় গুণবৈশিষ্ট্য ও দুর্বলতা নেই তারা মানুষের চাহিদা ও প্রয়োজন বুঝবেন কিভাবে? অধিকন্তু তারা যদি মানুষকে কষ্টকর কোনো জিনিসের নির্দেশ করেন তাহলে মানুষ স্বাভাবিক কারণেই তাদের নির্দেশ পালন করবে না।
বর্তমানে হক্কানী উলামায়ে কেরাম ও পীর-মাশায়েখগণ আমাদেরকে নবী-রাসূলগণের দৃষ্টান্ত পেশ করে বিভিন্ন ওয়াজ-নসীহত পেশ করে থাকেন। নবী-রাসূলগণ যদি নূরের তৈরী হতেন তাহলে সাধারণ মানুষ এসকল আলেম ও ও পীর-মাশায়েখের কথা গ্রহণ করতো না; বরং তারা মুখের উপর বলে দিত-
হুযূর! আপনার ওয়াজ-নসীহত বন্ধ করুন, আমরা নবী-রাসূলগণের কথা শুনতে চাই না। কারণ,
আমরা রোযা রাখতে পারবো না, আমাদের পেটে ক্ষুধা আছে।
আমরা জিহাদে যেতে পারবো না, আমাদের শরীরে ব্যথা আছে।
আমরা আল্লাহর রাস্তায় বের হতে পারবো না, আমাদের সংসার, বিবি-বাচ্চা আছে।
আমরা নামায পড়তে পারবো না, আমাদের ক্ষেত-খামার আছে।
আমরা লজ্জাস্থানের হেফাজত করতে পারবো না, আমাদের খাহেশাত আছে।
আমরা চুরি-ডাকাতি ছাড়তে পারবো না, আমাদের সংসারে অভাব আছে।
ইত্যাদি, ইত্যাদি। আল্লাহ তা’আলা যদি মানুষের কাছে নূরের তৈরী নবী-রাসূল প্রেরণ করতেন তাহলে গোটা শরীয়তই ধ্বংস হয়ে যেতো। মানুষ নবী-রাসূলগণের কোনো কথাই গ্রহণ করতো না।
নবী-রাসূলগণ মানুষ হওয়ার কারণেই আজ আমরা তাদের দৃষ্টান্ত মানুষের সামনে পেশ করতে পারছি। যেমন আমরা বলে থাকি- আল্লাহর দীন কায়েমের জন্য হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম আগুনে নিক্ষিপ্ত হয়েছেন, হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সালামের মাথা করাত দ্বারা দ্বি-খণ্ডিত করা হয়েছে, হযরত ইউনুস আলাইহিস সালামকে মাছের পেটে থাকতে হয়েছে, হযরত মূসা আলাইহিস সালামকে সাগরে নিক্ষেপ করা হয়েছে, উহুদ যুদ্ধে হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দন্ত মুবারক শহীদ করা হয়েছে, খন্দক যুদ্ধে তিনি পেটে পাথর বেঁধেছেন ইত্যাদি। এভাবেই আমরা নবী-রাসূলের দৃষ্টান্ত পেশ করে থাকি। আর যদি তারা নূরের তৈরী হতেন তবে শরীয়তের কোনো বিধি-বিধান মানুষের সামনে পেশ করা সম্ভব হতো না। বরং সবকিছুই অকার্যকর হয়ে যেতো। আল্লাহ তা’আলা আহকামুল হাকীম। তিনি অত্যন্ত দয়াপরবশ হয়ে মানব জাতির কাছে তাদের মধ্য হতেই নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন।
এবার আসুন, নবী-রাসূলগণ মাটির তৈরী মানুষ ছিলেন নাকি নূরের তৈরী ফেরেশতা ছিলেন তা আমরা পবিত্র কুরআন ও রাসূলের রেখে যাওয়া অসংখ্য হাদীস থেকে পরিস্কারভাবে জেনে নেই।
সর্বোপরি কথা হলো, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নূরের তৈরী নাকি মাটির তৈরী, এ নিয়ে বিতর্ক করে আমাদের কোনো ফায়দা ও সাওয়াব নেই। আর পরকালে এ বিষয়ে আমাদেরকে প্রশ্নও করা হবে না। বরং আমাদের ফায়দা ও কামিয়াবী হলো তাঁর রেখে যাওয়া দ্বীন ও সুন্নাতসমূহ আঁকড়ে ধরার মধ্যে। তাই আসুন অনর্থক সময় নষ্ট না করে আমলের যিন্দেগী গড়ি। পরকালে পাথেয় সংগ্রহ করি।
-সংকলক
মুহাম্মাদ সা. মাটির মানুষ ছিলেন তার দলিল।
মুহাম্মাদ সা. নূরের তৈরী নন, বরং তিনি মাটির মানুষ-১
قُلْ اِنَّمَاۤ اَنَا بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ يُوْحٰۤى اِلَيَّ اَنَّمَاۤ اِلٰهُكُمْ اِلٰهٌ وَّاحِدٌ فَمَنْ كَانَ يَرْجُوْا لِقَآءَ رَبِّه فَلْيَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا وَّلَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّه ۤ اَحَدًا
অর্থ: হে নবী! আপনি বলে দিন, ‘আমি তোমাদের মতই একজন মানুষ। (পার্থক্য কেবল) আমার নিকট ওহী আসে যে, তোমাদের ইলাহই একমাত্র ইলাহ। সুতরাং যে আপন পালনকর্তার সাক্ষাত কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম করে ও আপন পালনকর্তার ইবাদতে কাউকে শরীক না করে’। (সূরা কাহ্ফ : আয়াত-১১০)
মুহাম্মাদ সা. নূরের তৈরী নন, বরং তিনি মাটির মানুষ-২
قُلْ اِنَّمَاۤ اَنَا بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ يُوْحٰۤى اِلَيَّ اَنَّمَاۤ اِلٰهُكُمْ اِلٰهٌ وَّاحِدٌ فَاسْتَقِيْمُوْاۤ اِلَيْهِ وَاسْتَغْفِرُوْهُ وَوَيْلٌ لِّلْمُشْرِكِيْنَ
অর্থ: (হে নবী!) আপনি বলে দিন, ‘আমি কেবল তোমাদের মতই একজন (মাটির) মানুষ। আমার কাছে এ মর্মে ওহী আসে যে, তোমাদের ইলাহই একমাত্র একক ইলাহ। অতএব, তোমরা তাঁর পথে অটল-অনড় থাক, তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। বস্তুত মুশরিকদের জন্য ধ্বংস।
(সূরা হা-মীম সিজদা : আয়াত -০৬)
মুহাম্মাদ সা. নূরের তৈরী নন, বরং তিনি মাটির মানুষ-৩
قُلْ سُبْحَانَ رَبّىْ هَلْ كُنْتُ اِلَّا بَشَرًا رَّسُوْلًا, وَمَا مَنَعَ النَّاسَ اَنْ يُّؤْمِنُوْاۤ اِذْ جَآءَهُمُ الْهُدٰۤى اِلَّاۤ اَنْ قَالُوْاۤ اَبَعَثَ اللهُ بَشَرًا رَّسُوْلًا, قُلْ لَّوْ كَانَ فِى الْاَرْضِ مَلٰٓئِكَةٌ يَّمْشُوْنَ مُطْمَئِنِّيْنَ لَنَزَّلْنَا عَلَيْهِمْ مِنَ السَّمَآءِ مَلَكًا رَسُوْلًا, قُلْ كَفٰى بِاللهِ شَهِيْدًاۢ بَيْنِىْ وَبَيْنَكُمْ اِنَّهٗ كَانَ بِعِبَادِه خَبِيْرًاۢ بَصِيْرًا
অর্থ : (হে নবী!) বলুন, আমার পালনকর্তা অতি পবিত্র মহান। আমি তো কেবল তার একজন মানব-রাসূল ছাড়া অন্য কিছু নই। যখন মানুষের নিকট হেদায়েত আসে তখন ঈমান আনতে অন্তরায় সৃষ্টি করে তাদের এ উক্তি যে, ‘আল্লাহ কী একজন মানুষকে রাসূল হিসেবে পাঠিয়েছেন? বলুন, যদি ফেরেশ্তাগণ পৃথিবীর বুকে নিশ্চিন্তে চলাচল করত তবে আমি অবশ্যই আকাশ হতে তাদের কাছে রাসূল হিসেবে ফেরেশ্তা পাঠাতাম। আপনি বলুন, আমার ও তোমাদের মাঝে সাক্ষী হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট। অনন্তর তিনি তাঁর বান্দাদের সব কিছু জানেন ও দেখেন।
(সূরা বনী ইসরাঈল, আয়াত নং-৯৩-৯৬)
মুহাম্মাদ সা. নূরের তৈরী নন, বরং তিনি মাটির মানুষ-৪
قَالَتْ لَهُمْ رُسُلُهُمْ اِنْ نَّحْنُ اِلَّا بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ وَلٰكِنَّ اللهَ يَمُنُّ عَلٰى مَنْ يَشَآءُ مِنْ عِبَادِه وَمَا كَانَ لَنَاۤ اََنْ نَاْتِيَكُمْ بِسُلْطَانٍ اِلَّا بِاِذْنِ اللهِ وَعَلَى اللهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُؤْمِنُوْنَ
অর্থ : তাদেরকে তাদের রাসূলগণ বলল, আমরা তো কেবল তোমাদের মতই মানুষ, কিন্তু আল্লাহ তার বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা অনুগ্রহ করেন। আল্লাহর অনুমতি ছাড়া তোমাদের কাছে প্রমাণ নিয়ে আসার সাধ্য আমাদের নেই। বস্তু কেবল আল্লাহর উপরই মুমিনদের তাওয়াক্কুল করা উচিত’।
(সূরা ইবরাহীম, আয়াত নং-১১)
মুহাম্মাদ সা. নূরের তৈরী নন, বরং তিনি মাটির মানুষ-৫
اِنَّ مَثَلَ عِيْسٰى عِنْدَ اللهِ كَمَثَلِ اٰدَمَ خَلَقَهٗ مِنْ تُرَابٍ ثُمَّ قَالَ لَهٗ كُنْ فَيَكُوْنُ - الْحَقُّ مِنْ رَبِّكَ فَلَا تَكُنْ مِّنَ الْمُمْتَرِيْنَ
অর্থ : নিশ্চয় আল্লাহর নিকট ঈসা এর দৃষ্টান্ত আদমের মত। আল্লাহ তাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তাকে বললেন, ‘কুন’ ( হয়ে যাও) ফলে সে হয়ে গেল। সত্য তোমার পালনকর্তার পক্ষ থেকে। সুতরাং তুমি সন্দেহ পোষণকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না।
(সূরা আলে ইমরান, আয়াত নং-৫৯-৬০)
মুহাম্মাদ সা. নূরের তৈরী নন, বরং তিনি মাটির মানুষ-৬
وَمَاۤ اَرْسَلْنَا قَبْلَكَ مِنَ الْمُرْسَلِيْنَ اِلَّاۤ اِنَّهُمْ لَيَاْكُلُوْنَ الطَّعَامَ وَيَمْشُوْنَ فِى الْاَسْوَاقِ وَجَعَلْنَا بَعْضَكُمْ لِبَعْضٍ فِتْنَةً اَتَصْبِرُوْنَ وَكَانَ رَبُّكَ بَصِيْرًا
অর্থ : আপনার পূর্বে যত নবী পাঠিয়েছি, তারা সবাই আহার করত, হাট-বাজারে চলাফেরা করত। আমি তোমাদের একজনকে অপরজনের জন্য পরীক্ষাস্বরূপ করেছি। তোমরা কি ধৈর্যধারণ করবে? অনন্তর তোমার প্রতিপালক সবকিছু দেখেন।
(সূরা ফুরকান, আয়াত নং-২০)
মুহাম্মাদ সা. নূরের তৈরী নন, বরং তিনি মাটির মানুষ-৭
سُبْحَانَ الَّذِىْۤ اَسْرٰى بِعَبْدِه لَيْلًا مِّنَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ اِلَى الْمَسْجِدِ الْاَقْصٰى الَّذِىْ بٰرَكْنَا حَوْلَهٗ لِنُرِيَهٗ مِنْ اٰيٰتِنَاۤ اِنَّهٗ هُوَ السَّمِيْعُ الْبَصِيْرُ
অর্থ : মহা পবিত্র সত্তা, যিনি তাঁর বান্দাকে (মুহাম্মাদ সা.-কে) রাতের আধারে নিয়ে গেছেন মসজিদুল হারাম হতে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত, যার আশপাশে আমি বরকত প্রদান করেছি। যাতে তাকে আমার কিছু নিদর্শন দেখাতে পারি। তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।
(সূরা বনী ইসরাঈল, আয়াত নং-০১)
মুহাম্মাদ সা. নূরের তৈরী নন, বরং তিনি মাটির মানুষ-৮
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِىْۤ اَنْزَلَ عَلٰى عَبْدِهِ الْكِتٰبَ وَلَمْ يَجْعَلْ لَّهٗ عِوَجًا, قَيِّمًا ليُنْذِرَ بَأْسًا شَدِيْدًا مِّنْ لَّدُنْهُ وَيُبَشِّرَ الْمُؤْمِنِيْنَ الَّذِيْنَ يَعْمَلُوْنَ الصّٰلِحٰتِ اَنَّ لَهُمْ اَجْرًا حَسَنًا
অর্থ: সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি তাঁর বান্দা (মুহাম্মাদ) এর উপর কিতাব (কুরআন) নাযিল করেছেন এবং তাতে রাখেননি কোন বক্রতা। সরলরূপে, যাতে সে তাঁর পক্ষ থেকে কঠিন আযাব সম্পর্কে সতর্ক করেন ও সুসংবাদ দেন সেসব মুমিনকে, যারা সৎকর্ম করে। অনন্তর তাদের জন্য রয়েছে উত্তম প্রতিদান।
(সূরা কাহাফ, আয়াত নং-১,২)
মুহাম্মাদ সা. নূরের তৈরী নন, বরং তিনি মাটির মানুষ-৯
وَاَنَّهٗ لَمَّا قَامَ عَبْدُ اللهِ يَدْعُوْهُ كَادُوْا يَكُوْنُوْنَ عَلَيْهِ لِبَدًا, قُلْ اِنَّمَاۤ اَدْعُوْ رَبّىْ وَلَاۤ اُشْرِكُ بِه ۤ اَحَدًا, قُلْ انِّىْۤ لَاۤ اَمْلِكُ لَكُمْ ضَرًّا وَّلَا رَشَدًا
অর্থ: নিশ্চয় আল্লাহর বান্দা (মুহাম্মাদ) যখন তাঁকে ডাকার জন্য দাঁড়ালেন, তখন তারা তার নিকট ভিড় জমাল। আপনি বলুন, ‘নিশ্চয় আমি আমার পালনকর্তাকে ডাকি ও তার সাথে কাউকে শরীক করি না। বলুন, ‘নিশ্চয় আমি তোমাদের কোন ক্ষতি বা উপকার করার সাধ্য আমার নেই।
(সূরা জ্বীন, আয়াত নং-১৯-২১)
মুহাম্মাদ সা. নূরের তৈরী নন, বরং তিনি মাটির মানুষ-১০
فَاَوْحٰۤى اِلٰى عَبْدِه مَاۤ اَوْحٰى, مَا كَذَبَ الْفُؤَادُ مَا رَاٰى , اَفَتُمَارُوْنَهٗ عَلٰى مَا يَرٰى
অর্থ: অতঃপর তিনি তাঁর বান্দা (মুহাম্মাদ) এর প্রতি যা ওহী করার তা ওহী করলেন। তিনি যা দেখেছেন, অন্তকরণ সে সম্পর্কে মিথ্যা বলেনি। তিনি যা দেখেছেন সে সম্পর্কে তোমরা কী তার সাথে বিতর্ক করবে?
(সূরা নাজম, আয়াত নং-১০-১২)
ফায়দা :
আলোচ্য আয়াতগুলোতে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে عبد (আবদ তথা বান্দা) বলে সম্বোধন করা হয়েছে। কেবলমাত্র মাটির তৈরী মানুষকেই ‘আবদ’ বলা হয়, ফেরেশতা অথবা নূরের তেরী কোনো সৃষ্টিকে ‘আবদ’ বলা হয় না। এ কথা সকলেরই জানা। সুতরাং আলোচ্য আয়াতসমূহ দ্বারা স্পষ্টত প্রমাণিত হয় যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাটির তৈরী মানুষ ছিলেন। তিনি ফেরেশতা বা নূরের তৈরী মাখলুক নন।
মুহাম্মাদ সা. নূরের তৈরী নন, বরং তিনি মাটির মানুষ-১১
لَقَدْ مَنَّ اللهُ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ اِذْ بَعَثَ فِيْهِمْ رَسُوْلًا مِّنْ اَنْفُسِهِمْ يَتْلُوْ عَلَيْهِمْ اٰيٰتِه وَيُزَكِّيْهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَاِنْ كَانُوْا مِنْ قَبْلُ لَفِىْ ضَلَالٍ مُّبِيْنٍ
অর্থ: অবশ্যই আল্লাহ তাআলা মুমিনদের উপর অনুগ্রহ করেছেন, যখন তিনি তাদের মধ্য থেকে তাদের প্রতি একজন রাসূল পাঠিয়েছেন, যিনি তাদের কাছে তাঁর আয়াতসমূহ তেলাওয়াত করেন, তাদেরকে পরিশুদ্ধ করেন এবং তাদেরকে শিক্ষা দেন কিতাব ও হিকমাত। যদিও তারা ইতঃপূর্বে স্পষ্ট ভ্রান্তিতে নিমজ্জিত ছিলো।
(সূরা আলে ইমরান, আয়াত নং-১৬৪)
ফায়দাঃ
আলোচ্য আয়াতে পরিস্কার বলা হয়েছে, আল্লাহ তায়ালা মানুষের মাঝে মানুষ নবী পাঠিয়ে মানুষের উপর অনুগ্রহ করেছেন। একথা অনস্বীকার্য যে, যদি আল্লাহ তায়ালা মানুষের কাছে নূরের তৈরী নবী বা কোনো ফেরেশতাকে নবী হিসেবে প্রেরণ করতেন তাহলে সাধারণ মানুষ (নূরের তৈরী ঐসব নবী-রাসূলগণের) কোন কথাই গ্রহণ করতো না। এ পৃথিবীতে (আল্লাহ তায়ালার মূল উদ্দেশ্য) শরীয়ত প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হতো না।
মুহাম্মাদ সা. নূরের তৈরী নন, বরং তিনি মাটির মানুষ-১২
عَنْ عَبْدِ اللهِ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ...قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : اِنَّمَاۤ اَنَا بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ اَذْكُرُ كَمَا تَذْكُرُوْنَ وَاَنْسٰى كَمَا تَنْسَوْنَ –
অর্থ: হযরত আবদুল্লাহ রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, নিশ্চয় আমি তোমাদের মতই একজন মানুষ। আমি স্মরণ রাখি যেভাবে তোমরা স্মরণ রাখো। আমি ভুলে যাই যেভাবে তোমরা ভুলে যাও।
(সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৩১২, ১৩১৩)
মুহাম্মাদ সা. নূরের তৈরী নন, বরং তিনি মাটির মানুষ-১৩
عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا: عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ، وَإِنَّكُمْ تَخْتَصِمُونَ إِلَيَّ، وَلَعَلَّ بَعْضَكُمْ أَنْ يَكُونَ أَلْحَنَ بِحُجَّتِهِ مِنْ بَعْضٍ، وَأَقْضِيَ لَهُ عَلَى نَحْوِ مَا أَسْمَعُ، فَمَنْ قَضَيْتُ لَهُ مِنْ حَقِّ أَخِيهِ شَيْئًا فَلاَ يَأْخُذْ، فَإِنَّمَا أَقْطَعُ لَهُ قِطْعَةً مِنَ النَّارِ
অর্থ: হযরত উম্মে সালামা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন: আমি মানুষ ছাড়া অন্য কিছু নই। তোমরা আমার নিকট ঝগড়া-বিবাদ নিয়ে এসে থাকো। হয়তো তোমাদের কেউ অন্যের তুলনায় প্রমাণ উপস্থাপনের ব্যাপারে অধিক বাকপটু। বস্তুত আমি তো তোমাদের বক্তব্যে ভিত্তিতেই বিচার করে থাকি। অতএব, আমি যদি কারো জন্য তার অপর ভায়ের হক ও অধিকারের ভিতর কোনো ফায়সালা দেই, তবে সে যেন তা গ্রহণ না করে। কেননা, আমি তার জন্য (ভুল ফায়সালার মাধ্যমে) যে অংশ নির্ধারণ করলাম তা তো এক টুকরা আগুন।
(সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৬৬৮১, ৬৯৬৭)
ফায়দা :
আলোচ্য হাদীস দ্বারা স্পষ্টত প্রমাণিত হয় যে, রাসূল সা. মানুষ ছিলেন। মানুষ হওয়ার ব্যাপারে তিনি নিজেই সাক্ষ্য প্রদান করেছেন। তাছাড়া হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে গায়েব জানতেন না সেটা আলোচ্য হাদীস দ্বারা ভালো করেই বুঝা যায়।