22/08/2021
আমরা সবাই টাকা আয় করতে চাই, আর সেটা অনলাইনে হলে তো কথাই নেই। কিন্তু সমস্যাটা বাঁধে তখনই, যখন আমরা জামান স্যার টাইপ মানুষের পাল্লায় পড়ে যাই। হ্যাশট্যাগ মোটিভেশনাল স্পিকারদের কথা তো বাদই দিলাম। এই পোস্টে আমি আপনারদের সাথে গত ৮-৯ বছরে অনলাইন দুনিয়ায় আমি যা শিখেছি এবং আমার কাছে লেজিট মনে হয়েছে এমন অনলাইন আয়ের ১০টি উপায় বলে দিবো। যেগুলোর বেশীরভাগই আমি নিজে করেছি এবং বেশ ভালো আয় করতে পেরেছি এবং এখন পারছি। চলুন শুরু করা যাক,
১। ব্লগ লেখাঃ
ব্লগিং কি আসলে? ব্লগিং মানে ভার্চুয়াল ডায়েরী অথবা ইন্টারনেটে ব্যক্তিগত মতামত লেখা।
এখন প্রশ্ন আসে, কি নিয়ে লিখবেন বা ব্লগিং করবেন। উত্তরটা একেবারে সহজ, আপনার যা ভালো লাগে তা নিয়েই ব্লগিং শুরু করতে পারবেন। এই জিনিসটাকে ব্লগিং এর ভাষায় “নিশ” বলে। ধরে নিলাম আপনার ট্রাভেল ভালো লাগে, তাহলে আপনার নিশ কি হবে? অবশ্যই ট্রাভেলিং!
আয় কিভাবে হবে? অনেকভাবেই হতে পারে,
– আপনি আপনার ওয়েবসাইটে এড বসাতে পারেন। কেউ ওই এডে ক্লিক করলেই আপনি টাকা পাবেন।
– এফিলিয়েট লিংকের মাধ্যমে (৪ নাম্বার পয়েন্টে বিস্তারিত)
– স্পন্সরশিপের মাধ্যমে।
– নিজস্ব প্রোডাক্ট সেলিং এর মাধ্যমে।
আমার ব্লগে আপনি কোনো এড পাবেন না আপাততঃ কিন্তু এফিলিয়েট লিংক পাবেন। লিংকের থ্রু-তে কিছু কিনলেই আমি পারসেন্টেজ পাবো। কিছুদিন আগে আমাদের “টেক জাংকিস বিডি” গ্রুপে নেমচিপের এফিলিয়েট লিংক শেয়ার করেছিলাম। টোটাল ৩০০ ডলারের এফিলিয়েট সেল ছিলো, ২০% কমিশনে ৬০ ডলার পেয়েছি শুধু লিংক শেয়ার করেই! এটাকে “প্যাসিভ ইনকাম” বলে, সুন্দর না?
আর হ্যাঁ, ব্লগ বানাতে ডোমেইন এবং হোস্টিং লাগবে, যদি এর আগে ডোমেইন/হোস্টিং কিনে না থাকেন তাহলে এই লিংকে গিয়ে namecheap.pxf.io/mashfique একাউন্ট করে ডোমেইন, হোস্টিং কিনে ফেলুন।
২। ড্রপশিপিংঃ
ধরেন, আপনার গ্রামের বাড়ি বগুড়া। আপনার আশেপাশের সেরা দইয়ের দোকান পরিচিত। বগুড়ার দই নামকরা এটা সবাই জানে কিন্তু আসলটা খুঁজে পায়না কেউ। আপনি কি করলেন, একটা ওয়েবসাইট/ফেইসবুক পেইজের মাধ্যমে মানুষদেরকে জানালেন আপনি বগুড়ার খাটি দই পাঠাতে পারবেন। ঢাকার একজন দই অর্ডার দিলো আপনার ওয়েবসাইট বা পেইজে। আপনি কাস্টমারের ডিটেইলস দইয়ের দোকানদারকে পাঠিয়ে দিলেন, দোকানদার কুরিয়ার করে দিলো।
আপনার লাভ?
– হয়তো প্রতি কেজি দই আপনি ১৫০ টাকা করে কিনতে পারবেন কিন্তু ওয়েবসাইটে সেটা ২৫০/৩০০ লিখে রেখেছেন। প্রতি কেজি দই সেল করে আপনার লাভ কতো?
ঠিক একইভাবে ইন্টারন্যাশনাল মার্কেট থেকে (আলীএক্সপ্রেস/আলীবাবা/টিমল/জেডি) থেকে প্রোডাক্টের ডিটেইলস নিয়ে ওয়েবসাইট বানিয়ে সেটায় বেশীদামে প্রোডাক্ট আপলোড করবেন। একটা নির্দিষ্ট এরিয়া টার্গেট করে মার্কেটিং করে কাস্টমার ধরবেন। কাস্টমারের কাছ থেকে ডিটেইলস নিয়ে চাইনিজ সেলারের কাছে পাঠিয়ে দিবেন। দইয়ের মতো অতিরিক্ত টাকাটাই আপনার প্রফিট।
আমি ২০১৭ সাল থেকে ড্রপশিপিং করি। রিসেন্টলি ইনকাম কিছুটা কম হলেও ১৭-১৮ তে বেশ ভালো রেভিনিউ জেনারেট করেছিলাম। কোভিডের পর ইনশাআল্লাহ্ আবার সব ঠিকঠাক হবে।
৩। টিউটোরিয়াল বানানোঃ
পেন্ডামিকের কারণে মানুষ পারসোনাল ডেভেলপমেন্টে মনোযোগ দিচ্ছে খুব। এই সুযোগটাই কাজে লাগাতে পারেন আপনি। ধরে নিলাম, আপনি খুব ভালো ভিডিও এডিটিং/ড্রয়িং/রান্না পারেন। সুন্দর করে একটা মডিউল বানিয়ে কোর্স লঞ্চ করে দিন। একবার কোর্স বানালে সেটা মিনিমাম ২ বছর পর্যন্ত ইজিলি সেল করতে পারবেন, আর কয়েকদিন পরপর আপডেট করলে তো কোনো কথাই নেই। আপনার স্কিলের উপর বেইজ করে কোর্সের দাম ঠিক করবেন। ধরলাম ভিডিও এডিটিং কোর্স ৩০০০ টাকা। কয়জনের কাছে সেল করতে পারবেন? আনলিমিটেড! জাস্ট একটা কোর্স ৫০০ মানুষের কাছে সেল করতে পারলে কত টাকা? নিজেই হিসাব করে বের করুন!
এটা করিনি এখনো কিন্তু মোটামুটি একটা অডিয়েন্স বেইজ আছে আমার হাতে। আচ্ছা, আমি যদি ব্লগ বানিয়ে ইনকাম/ ড্রপশিপিং কমপ্লিট টিউটোরিয়াল/ এফিলেয়েট মার্কেটিং কোর্স/ কন্টেন্ট রাইটিং কোর্স/ ডিজিটাল মার্কেটিং কোর্স করাই। আপনি করবেন না? অবশ্যই করবেন। কয়েকদিন পর দেখা হচ্ছে ইনশাআল্লাহ্। এটাও কিন্তু প্যাসিভ ইনকাম! একবার কোর্স বানিয়ে অনেকদিন, অনেকজনের কাছে সেল করা যাবে।
৪। এফিলিয়েট মার্কেটিংঃ
প্রথম পয়েন্টে এফিলিয়েট লিংকের কথা বলেছিলাম মনে আছে? এফিলিয়েট মার্কেটিং ব্যাপারটা হচ্ছে, আপনি কারো পণ্য বিক্রি করে সেটার কমিশন নিবেন। আমাদের দেশে যেটাকে “দালাল” বলা হয়! অনলাইনে এফিলিয়েট করা খুব সহজ। বাইরের প্রায় সব সাইটেরই এফিলিয়েশন সিস্টেম আছে। ওয়েবসাইট ভিজিট করে ফুটার থেকে এফিলিয়েট হবার আবেদন করবেন। ওরা ভ্যারিফিকেশনের পর আপনাকে ট্র্যাকিং লিংক দিবে। আপনি সেই লিংক মার্কেটিং করে তাদের সেল এনে দিবেন। বুম! ৫%-২০% কমিশন ইজিলি পেয়ে যাবেন। যেমন কয়েকদিন আগে আমি নেমচিপ থেকে পেয়েছি।
এফিলিয়েটের জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম হচ্ছে “আমাজন এসোসিয়েটস”। নাম শুনেই বুঝতে পারছেন এটা ই-কমার্স জায়ান্ট আমাজনের এফিলিয়েট প্রোগ্রাম। পন্যভেদে ৩%-৮% কমিশন দেয় ওরা। মজার ব্যাপার হচ্ছে, আপনার লিংকের মাধ্যেমে কেউ গিয়ে ওই সাইটে সাথেসাথে প্রোডাক্ট না কিনে ২৪ ঘন্টার মধ্যে যেকোনো কিছু কিনলেও আপনি কমিশন পাবেন। কারণ যখন কেউ আপনার লিংকের মাধ্যমে আমাজনের ওয়েবসাইটে যাবে, তখন আমাজন সেই ব্যক্তির ব্রাউজারে কিছু কোড সেইভ করে দেয়, যেটাকে “কুকি” বলে। এই কুকির মেয়াদ ৭-৯০ দিন পর্যন্ত থাকে। তারমানে এই সময়ে কিছু কিনলেই কমিশন!
২০১৮ সালের দিকে আমার দুইটা রিভিউ সাইট দিয়ে আমি আমাজন এফিলিয়েট শুরু করি, প্রতিমাসে মিনিমাম ১০০ ডলার থেকে ১৪০০ ডলার পর্যন্ত আসতো। ৮ মাসের মাথায় সাইট দুইটা মোট ২১০০০ ডলারে (একুশ হাজার ডলার! ঠিকই পড়েছেন) সেল করে দেই ফ্লিপ্পায়। সাইট সেল নিয়ে এর পরের পয়েন্টে কথা বলছি। নিশ সাইটের জন্য ৬-৭ মাস এবং অথোরিটি সাইটের জন্য ১০-১২ মাস টানা সময় দিতে পারলে এটা আপনার ক্যারিয়ারের জন্য একটা বেস্ট অপশন হতে পারে। এটা কিন্তু একটা প্যাসিভ ইনকাম। সাইট বানানোর পর ৬-১২ মাস কষ্ট করে একবার সেল আশা শুরু করলে বাকি সময় শুধু একটু দেখাশোনা করেই বেশ ভালো আয় করতে পারবেন।
৫। ওয়েবসাইট ফ্লিপিংঃ
ওয়েবসাইট ফ্লিপিং মানে হচ্ছে, ওয়েবসাইট বিক্রি করে দেয়া। ধরে নিলাম আপনার একটা ট্রাভেল রিলেটেড ওয়েবসাইট আছে। যেখানে প্রচুর মানুষ আপনার ব্লগ পড়ে। আপনি এডসেন্স বা এফিলিয়েট প্রোডাক্ট সেলের মাধ্যমে প্রতি মাসে ২০০-৫০০ ডলার আয় করেন। যখন আপনি ওয়েবসাইট ফ্লিপ বা সেল করবেন তখন আপনার ওয়েবসাইটের সেলিং ভ্যালু হবে ২৫-৩০ গুণ বা ৬০০০-১৫০০০ ডলার।
উপরের পয়েন্টকে এক্সাম্পল হিসেবে ধরে নিন এখানে। ফ্লিপ্পা বা এম্পায়ার ফ্লিপার্সের মতো মার্কেটপ্লেসে আপনি ইজিলি আপনার ওয়েবসাইট বিক্রি করতে পারেন।
আমি এখন পর্যন্ত ৬টা সাইট সেল করেছি। আমাজনের দুইটা বাদে বাকি ৪টা ছিলো নিশ সাইট। যেগুলো এডসেন্সের উপর বেইজ করে ছিলো। আমার সাজেশন শুরুতে নিশ সাইট দিয়েই কাজ করুন, তারপর আস্তে আস্তে অথোরিটি সাইটে যাবেন। কিভাবে শুরু করবেন বুঝতে পারছেন না? কোর্স আসছে, অপেক্ষা করুন।
৬। ফ্রিল্যান্স রাইটিংঃ
এই যে, এতোক্ষণ ধরে যে সাইটের কথা বলছি। তারজন্য তো কন্টেন্ট বা আর্টিকেল লাগবে। নিজে একা তো সব লিখতে পারবেন না বা অনেকের রাইটিং স্কিল খুব একটা ভালো না। এদের কন্টেন্ট কারা লিখবে? এদের কন্টেন্ট লিখবে ফ্রিল্যান্স কন্টেন্ট রাইটাররা। একটু কষ্ট করে গুগল করলেই অনেক ওয়েবসাইট পাবেন যারা কন্টেন্ট রাইটার হায়ার করে বা ফাইভার/আপওয়ার্কের মতো মার্কেটপ্লেসেও দেখতে পারেন।
আয় ডিপেন্ড করবে আপনার লেখার মানের উপর। এক্ষেত্রে আমার সাজেশন দুইটা, নিজের একটা ব্লগ বানিয়ে ফেলুন যেটা আপনার পোর্টফোলি হিসেবে কাজ করবে বা কোথাও ইন্টার্ন হিসেবে কাজ শুরু করতে পারেন। আমার এজেন্সী কিন্তু প্রতি ৪-৬ মাস পরপর ইন্টার্ন নেয়। চাইলে আমার সাথেও কাজ করতে পারেন।
আমার শুরুটা এই ফ্রিল্যান্স রাইটিং নিয়ে। এখন আর খুব একটা লেখি না, এজেন্সীতে ৩ জন পার্মানেন্ট রাইটার এবং ২ জন ইন্টার্নই আমার কাজ করে দেয়। একটা সময় প্রচুর লেখালেখি করেছি। এখনো মনে আছে, আমার প্রথম কন্টেন্ট ছিলো “কিভাবে কুকুরের শরীরের যত্ন নিতে হবে!” ১ ডলার পেয়েছিলাম লিখে। ক্লাস টেনে পড়া একজনের জন্য ৭০-৭৫ টাকা অনেক। মজার ব্যাপার হচ্ছে, আমি আসলে টাকার জন্য লিখতাম না, লিখতাম শখের বসে কারণ কিছু লিখতে গেলে প্রচুর রিসার্চ করতে হতো। আর এই কাজটায় ভয়াবহ আনন্দ পেতাম আমি। কন্টেন্ট লিখতে ১ ঘন্টা সময় দিলেও, সেটা নিয়ে ৩-৪ ঘন্টা রিসার্চই করতাম।
নতুন কোনো টপিকে কেউ ফ্রি তে লিখে দিতে বললেও লিখে দিতাম। এতে করে আমার রাইটিং এবং রিসার্চ স্কিল অনেক ইম্প্রুভ হয়েছে, যেটার ফল আমি পেয়েছিলাম ইউনিভার্সিটি তে। আপনারা যারা জানেন না, তাদের জন্য বলছি। আমি ইংলিশ লিটারেচারে ব্যাচেলর ডিগ্রি নিয়েছি। তাত্ত্বিক পড়াশোনার ঘোরবিরোধী আমি শুধুমাত্র এই দুইটা স্কিলের উপর বেইজ করেই কিছু না পড়েই কোনোমতে পাশ করে বের হয়েছি!
৭। পডকাস্টিংঃ
আমাদের দেশে খুব একটা জনপ্রিয় না হলেও বাহিরের দেশে পডকাস্টের চাহিদা প্রচুর। মূলত, একটা ভিডিও/ব্লগের অডিও ভার্শনই হচ্ছে পডকাস্ট। মানুষের জীবন দিন দিন একটা নির্দিষ্ট সার্কেলে চলে আসছে, যেখানে সবারই সময় কম। চিন্তা করে দেখুন তো একবার, আপনি ছোট থাকতে বছর বা দিন খুব ধীরে যাচ্ছে বলে মনে হতো না?
আর এখন মনে হয়, “আরেহ, বছর শেষ? এইতো সেদিন নতুন বছর আসলো!”
আসলে সময় ধীরে/দ্রুত কোনোভাবেই চলছে না। সবকিছুই আগের মতো আছে কিন্তু আপনি বড় হয়ে গিয়েছেন এবং সময় পার হবার ব্যাপারটায় অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছেন। ফিলোসফিক্যাল কথাবার্তা বাদ, কাজের কথায় আসি।
একটা ভিডিও দেখতে বা একটা ব্লগ পড়তে আমাদের সেটায় পূর্ণ মনোযোগ দিতে হয় কিন্তু পডকাস্টে? জাস্ট ইয়ারফোন কানে গুঁজেই আপনি অন্য কাজ করতে করতে একটা ভিডিও/ব্লগের অডিও ভার্শন শুনে ফেলতে পারবেন।
টেক দুনিয়া কিছুটা প্রেডিক্টেবল। তাই আমার প্রেডিকশন, আগামী ২-৩ বছরের মধ্যেই আমাদের দেশে পডকাস্ট খুবই জনপ্রিয় হবে। একটা অডিয়েন্স বেইজ ক্রিয়েট করে নিবেন প্রথমে। আপনার শো’য়ের মান ভালো হলে তা এমনিতেই ছড়িয়ে যাবে। তারপর সেই পডকাস্ট স্পটিফাই, গুগল পডকাস্ট, ফেইসবুক, ইউটিউবে (পরের পয়েন্টে লিখছি) শেয়ার করে রেভিনিউ জেনারেট করতে পারবেন।
এখনো বুঝেননি কিভাবে আয় হবে? আসেন একটা উদাহরণ দিয়ে বুঝাই। আনিকা স্কিন কেয়ারের উপর অনেক কিছু জানে এবং সে খুবই প্যাশনেট এসব নিয়ে। সে স্কিনকেয়ারের উপর একটা পডকাস্ট শুরু করে বিভিন্ন টিপস এন্ড ট্রিক্স শেয়ার করবে এবং তার ফ্যান ফলোয়ারদের কোয়েশ্চেনের আন্সার দিবে। একটা সময় সে তার পডকাস্টে বিভিন্ন এড দিতে পারে বা চাইলে বিভিন্ন কোম্পানীর প্রোডাক্ট সেল করতে পারে। আশাকরি বুঝাতে পেরেছি।
আমি পডকাস্ট করিনি কিন্তু ইচ্ছা আছে করবো। আস্তে আস্তে আমার সব কাজ ডিসেন্ট্রালাইজ করে একটা স্টুডিও সেটাপ করবো এবং ইউটিউব বা পডকাস্ট শুরু করবো। ব্যাপারটা পুরোপুরি প্যাশন থেকে। আপনি প্যাশনেট হলে পডকাস্ট শুরু করতেই পারেন।
৮। ইউটিউবিংঃ
বর্তমানে দেশের জনসংখ্যার চেয়ে ইউটিউবারের সংখ্যা বেশী কিন্তু তাদের কয়জন সফল? হাতে গোনা কয়েকজন। কেন বলুন তো? কারণ তারা টাকা আয়ের চিন্তা থেকেই ইউটিউবে জার্নি শুরু করে এবং অল্প কয়েকদিনেই হতাশ হয়ে যায়। আপনি যেকোনো কিছু জানলেই সেটা ইউটিউবে শেয়ার করতে পারেন। যেমনঃ ট্রাভেল ভ্লগ, রান্না, আর্টস এন্ড ক্রাফটস ব্লা ব্লা ব্লা।
জাস্ট ৩টা জিনিস মাথায় রাখবেন। ইউনিক কন্টেন্ট, কোয়ালিটি আর ধৈর্য। আপনি সফল হবেন গ্যারান্টি দিলাম আমি।
ফাইজাকে চিনেন না? ওই যে “ক্ষুধা লাগসে” ওর শুরুতেই কিন্তু এতো ফ্যান ফলোয়ার ছিলো না। আর এখন? ও চাইলেই শুধু এড রেভিনিউ বাদ দিয়ে বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট বা ফ্যাশন ব্র্যান্ডের সাথে কোল্যাব করে ভালো আয় করতে পারে। একদিন লাইভে নিয়ে আসবো নে ওকে। ওর মুখেই ওর স্ট্রাগলে গল্প শুনবেন।
আমি নিজেও ট্রাভেলিং এ প্যাশনেট। ট্রাভেল ভ্লগ শুরু করবো ইনশাআল্লাহ্। আপনি আপনার প্যাশন খুঁজে বের করে শুরু করে দিন না। বসে থাকলে কিছুই হবে না।
৯। ভার্চুয়াল এসিস্ট্যান্টঃ
দিনদিন অনলাইনভিত্তিক ব্যবসা বেড়েই চলছে। কেউ একটা ব্যবসাও করতে পারছে না আবার অনেকে অনেক ব্যবসা একসাথে সামলাতেও পারছে না। এই সমস্যা সমাধাণের পথ হচ্ছে ভার্চুয়াল এসিস্ট্যান্ট হায়ার করা। যে আপনার হয়ে, আপনার কাজ করে দিবে। বিনিময়ে আপনি তাকে টাকা দিবেন। অনেক সেলেব্রেটিরাও এখন ভার্চুয়াল এসিস্ট্যান্ট হায়ার করে তাদের সোশাল মিডিয়া একাউন্টগুলো হ্যান্ডেল করার জন্য।
এই কাজ আমি করিনি কিন্তু আমার আন্ডারে কয়েকজন কাজ করে। ওরা সবাই আমার পরিচিত। আপনি আশেপাশে খোঁজ নিলেই পেয়ে যাবেন আশাকরি। সবচেয়ে সহজ উপায় কারো আন্ডারে কাজ করা বা ইন্টার্নশিপ করা। ইন্টার্নশিপকে অনেকেই খারাপ চোখে দেখে অবশ্য! কেউ আপনাকে কাজ শেখাবে, বিনিময়ে আপনি ফ্রি তে তার কাজ করে দিবেন। আমি এটায় দোষের কিছু দেখি না।
১০। সোশাল মিডিয়া কনসালটেন্টঃ
উপরের পয়েন্টের মতোই কিন্তু এটা জাস্ট সোশাল মিডিয়াকে ফোকাস করে কাজ করবে। এখানে আপনার কিছু প্র্যাক্টিক্যাল নলেজও থাকতে হবে। আপনার ডিজিটাল মার্কেটিং এর উপর পুরোপুরি একটা ধারণা রাখতে হবে। বাকিটা কাজ শুরু করলেই বুঝতে পারবেন।
আমার সাজেশন যেকোনো একটা দিকে ফোকাস করুন। ফেসবুক মার্কেটিং, ইউটিউব মার্কেটিং, ইন্সটাগ্রাম মার্কেটিং, স্পটিফাই মার্কেটিং। হাজার হাজার দরজা খোলা আপনার জন্য। কোন দরজায় কড়া নাড়বেন সেটা আপনি নিজেই ঠিক করুন।
আমি ইন্ডিয়ান দুইজন সেলেব্রেটি এবং বাংলাদেশী একজন ক্রিকেটারের সোশাল মিডিয়া কনসালটেন্ট হিসেবে বেশ অনেকদিন কাজ করেছি। সুতরাং, এতোটুকু আশ্বাস দিতে পারি। কাজ জানলে আপনাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হবে না।
শেষকথা, অনলাইন দুনিয়া দিনদিন কম্পিটেটিভ হচ্ছে। শুধু উপরের ১০টা কাজ করেই যে আপনি আয় করতে পারবেন তা না। হাজার হাজার পথ খোলা রয়েছে। এই লেখাটার মূল লক্ষ্য আপনাকে অনলাইন দুনিয়ায় আসার জন্য আগ্রহী করে তোলা। এমন আরো অনেক আইডিয়া এবং কেস স্টাডি পাবেন আগামী বইমেলায় আমার বইয়ে। নাম পরে বলবো!
অনলাইন দুনিয়ায় আসার জন্য আপনাকে কিছুটা আগ্রহী করে তুলতে পেরেছি, তাই না? আসেন এখন একটু ডিমোটিভেট করি। আসলে ব্যাপারগুলো আমি যতো সহজে বললাম, বাস্তব জীবনে তা এতোটা সহজ না। আপনার যদি লাখ লাখ টাকা আয়ের চিন্তা থেকে কাজ করার ইচ্ছা জাগে, তাহলে আপনি এক টাকাও আয় করতে পারবেন না। আবার যদি একসাথে অনেককিছু শুরু করতে চান তাও আপনি বেশীদূর যেতে পারবেন না। আমি নিজে যদি টাকা আসবে এই চিন্তা থেকে এসব করতাম তাহলে আজকের অবস্থানে জীবনেও আসতাম না। আপনার প্যাশন এবং কাজের প্রতি ভালোবাসাই আপনাকে টাকা এনে দিবে। দরকার একটু ধৈর্য।
এবার আমার কিছু ব্যর্থতার কথা বলি।
২০১৩ সালে টাকা’র মোহে পাগল হয়ে আমি আমার প্যাশন হারিয়ে ফেলি। আলটিমেটলি আমার ৫০০ ডলার/মাস এর চাকরি চলে যায়।
তারপর দেখলাম, হ্যাকিং আমাকে পাগলের মতো টানে। টানা ২ বছর সময় দিলাম। নিজেকে সার্টিফাইড ইথিক্যাল হ্যাকার হিসেবে গড়ে তুললাম। চাকরিও পেয়ে গেলাম কিন্তু অনেকবার ইথিকস এর বাইরে কাজ করতে হয়েছে, চাকরি ছেড়ে দিলাম। আমার কলিগরাই আমার পেছনে লাগলো। নিজের জমানো সব টাকা হারালাম ওদের জন্য।
নিজেকে সামলে এফিলিয়েট মার্কেটিং শিখলাম। একটু ভুলে ৮ মাস কষ্ট করে বানানো সাইট গুগল প্যানাল্টি দিলো। লাখখানেক টাকা হারালাম।
আবার ইথিক্যাল হ্যাকিং এ মনোযোগ দিলাম। এবারও ইথিকসের বাইরে গেলো কাজ। চাকরি ছেড়ে দিলাম। লাখ টাকার চাকরি, একটুও খারাপ লাগেনি। কারণ নিজেকে জিতিয়েছি, আমার ইথিকসকে সম্মান দিয়েছি। পরিবারের সাথে দূরত্ব বাড়লো, ভালোবাসার মানুষ হারালাম, ইউনিভার্সিটি থেকে ড্রপ আউট হলাম। সর্বোপরি, খেই হারিয়ে ফেললাম এবার। নিজের জমানো সব টাকা একসাথে করে ঘুরতে বের হলাম। ৬৪ জেলা চষে বেড়ালাম, নিজেকে খুঁজলাম। পেয়েও গেলাম। ৬৪ জেলায় ৬৪,০০০ মানুষের গল্প শুনেছি। ফিরে এলাম নিজের মধ্যে।
বুঝলাম এভাবে আর হবে না, আমার একটা দিকে ফোকাস করতে হবে। মার্কেটিং এর ভালোবাসা টের পেলাম, নিজেকে ঢেলে দিলাম মার্কেটিং এর অসম্ভব মজার দুনিয়ায়। ফেরত আসতে পারলাম না আর। এই ভালোবাসাটাকেই এতোদিন খুঁজে ফিরছিলাম। এখন আমি কাজ করি না, আমার পছন্দের কাজ করি। সপ্তাহে ৮০-৮৫ ঘন্টা কাজেও একটুও ক্লান্তি আসে না।
ও হ্যাঁ, মাঝে স্টার্টআপের প্ল্যান করি কিন্তু শুরু শেষ কোনোটাই মন মতো হয় না। বাদ দেই। ভালোবাসার কাছেই ফিরে যাই। আমি আমার কাজকে ভালোবাসি এখন। আমি জানি আমি কি করছি, আমি জানি আমার পরিকল্পনা কি, আমি জানি কখন আমার থামতে হবে।
এমন হাজারটা ব্যর্থতা আছে আমার জীবনে। আমার সাজেশন, আপনি নিজের প্যাশন খুঁজে বের করুন, টাকার পেছনে দৌড়বেন না। কিছুই পাবেন না।
কমেন্টবক্সে জানিয়ে দিন আপনি কোনটায় আগ্রহী। তারপর সেটা নিয়ে একেবারে এ টু জেড লিখা লিখে ফেলবো। ভালোবাসা সবার জন্য ❤
© Mashfique Miraz