08/04/2024
আল্লাহর সৃষ্টির মাঝে যাদের নাফস আছে তারা হল-
১। ফিরিস্তা
২। মানুষ ও জ্বীন/শয়তান
৩। হায়াওয়ানাত(পশুপাখি)
ফিরিস্তাদের মাঝে আল্লাহ শাহাওয়াত অর্থাৎ চাহিদা দেন নাই, তাদেরকে দিয়েছেন শুধু আক্বল, মানুষ, জ্বীন, শয়তানকে দিয়েছেন আক্বল ও শাহাওয়াত দুটোই। আর হায়াওয়ানাতকে দিয়েছেন শুধুই শাহাওয়াত।
ফিরিস্তাদের কোনো চাহিদা নাই, তাদের আক্বল আছে যা দ্বারা তাঁরা বুঝেন কিসে নাজাত আছে, তাই সেই আক্বলকে তাঁরা ইবাদাতে কাজে লাগিয়েছেন।
হায়াওয়ানাতদের কোনো আক্বল নাই, শুধু আছে শাহাওয়াত, তাই ক্ষুধা নিবারণের জন্য খাদ্য খুঁজে, ঘুমের জন্য আরামদায়ক জায়গা, তাদের জীবনের কোনো লক্ষ্য নাই। শিকার, খাওয়া, ঘুম, বংশবিস্তার- একের পর এক চাহিদা পূরণ করতে করতে তারা এক সময় মারা যায়।
আর মানুষ রয়েছে এই দুইয়ের মাঝে, তাদের হালত সবচেয়ে করুণ। একটু ব্যালেন্স করে না চললেই তারা সরল পথ হারিয়ে এবড়োখেবড়ো পথে আছড়ে পড়বে।
জীবনে যদি কোনো গন্তব্য না থাকে, উপকারী কাজকর্ম না থাকে, যাচ্ছেতাই করে বেড়ায়, ঘুমের টাইমটেবিল ঠিক না থাকে, খাবারদাবার+এক্টিভিটিস ঠিক না থাকে, সময়মত ইবাদাত না থাকে, তবে বুঝতে হবে সে তার আক্বলকে আলমারিতে ভাজ করে রেখে শাহাওয়াতের পিছে দৌড়াচ্ছে। অর্থাৎ তার আর হায়াওয়ানাতের মাঝে কোনো তফাৎ নাই।
অপর দিকে মানুষ যদি সব ধরণের আজাইরা কাজ বাদ দিতে পারে, অর্থাৎ সময়মত ঘুম+ওঠা, সময়মত ইবাদাত, পর্যাপ্ত খাবার, শরীর চর্চা, ফিটফাট ও এক্টিভনেস, কর্মে ব্যস্ত, জীবনের একটা অর্থবোধক গন্তব্য সাজিয়ে সেই লক্ষ্যে এগুতে পারে, নিজের সমস্যা আলসেমি, নাফসের বেহুদা খায়েস যেমন আড্ডাবাজি, খেলাধুলা, বন্ধুমহল বা গেইমস নিয়ে পড়ে থাকা, যখন যা মন চায় তাই খাওয়া দাওয়া, যখন তখন ঘুম ইত্যাদি বাদ দিতে পারে তবে সেই মানুষ অবশ্যই নাফসকে পা দিয়ে চেপে রেখে নিজের আক্বলকে কাজে লাগিয়ে ফিরিস্তাদের মত চিন্তাভাবনা করতে পারবে, বুঝতে পারবে কিসে তার বিজয়! কিংবা সে তার লক্ষ্যে পৌঁছুতে পারবে।
কিন্তু দুঃখের বিষয় আমরা আমাদের আশেপাশে মানুষরূপি হায়াওয়ানাত দেখি বেশি। কিছু বিড়াল প্রজাতির অর্থাৎ আলসে ও হার্মলেস, আর কিছু হায়েনা প্রজাতির অর্থাৎ ধুরন্ধর ও হার্মফুল।
হায়াওয়ানাতের মত চলা খুব সহজ, এই লাইফস্টাইলে শয়তানের সাহায্য পাওয়া যায়, আর ফিরিস্তাদের মত চলতে চাওয়ার পথ খুব কঠিন কারণ এই পথে শয়তানরা বিশাল বড় বড় কাটা হয়ে অপেক্ষমাণ থাকে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুবই চমৎকার একটা কথা বলেছেন মানুষের এই শাহাওয়াত নিয়ে। তিনি বলেছেন-
" আগুনকে শাহাওয়াত দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে, আর জান্নাতকে ঘিরে রাখা হয়েছে ঘৃণা/না চাওয়া দিয়ে।” বা “ আগুনকে শাহওয়াতের পর্দা দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে ও জান্নাতকে ঘৃণা বা নাফস চায়না এমন সব কাজের পর্দা দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে”
অর্থাৎ মানুষ ও আগুনের মাঝখানের পর্দা হচ্ছে শাহাওয়াত, কেউ যদি এই পর্দা জয় করতে পারে বা ভেদ করতে পারে তবে সে আগুনে যাবে। অর্থাৎ সে যদি নিজের নফসের গোলামি করে, নিজেকে কন্ট্রোল না করে, সাধারণত নাফস আম্মারাতু বিস সু' অর্থাৎ সমস্ত গুনাহের কাজের প্রতি মানুষকে আকর্ষিত করে, যেমন- জিনা করা, গান শোনা, ইবাদাতে অবহেলা করা, হাসি মজাকে সময় কাটানো ইত্যাদি, তো মানুষ যখন এইসব কাজ করে সে মূলত তার ও জাহান্নামের মাঝের যে বাধা সেটাকে অতিক্রম করে জাহান্নামের আগুনে নিজেকে ফেলে দেয়।
অপর দিকে নাফস যেসব কাজ করতে চায়না বা আলসেমি করে, বা ঘৃণা করে, যেমন- অনেক বেশি ইবাদাত, সারাক্ষণ আল্লাহর ফিকিরে থাকা, মউতের ফিকিরে থাকা, নিজের লজ্জাস্থান, জবান, চোখ, কান, হাত, কদমকে গুনাহ থেকে হিফাজত করে রাখা, রাতে সময়মত ঘুম, সকাল ও দিনে জাগরণ, সময় মত ইবাদাত, দান-সাদাকা করা, সুদ-ঘুষ থেকে বিরত থেকে হালালের উপর থাকা, অর্থাৎ সমস্ত ভাল কাজগুলো, যেগুলো করতে খুব কষ্ট হয়, আলসেমি হয় বা কখনো ঘৃণা হয়, জান্নাতকে মূলত এসব কাজ দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে, বা মানুষ ও জান্নাতের মাঝের বাধা বা পর্দা হচ্ছে এই কাজগুলো, কেউ যখন এই বাধা অতিক্রম করতে সক্ষম হয় অর্থাৎ নাফসের বিরুদ্ধে চলে, মন না চাইতেও কষ্ট করে এই কাজগুলো করে তখন সে নিজেকে জান্নাতে নিয়ে যায়।
কী চমৎকার একটা হাদিস ও তার ব্যাখ্যা তাই না?
এই কথাগুলো আমাদের ইয়াং জেনারেশনের জন্য খুবই জরুরী। সন্তান তরবিয়তের মাঝে সবচেয়ে কঠিন কাজ হল সন্তানকে তার শাহাওয়াত থেকে বিরত রাখা! বাচ্চারা নামাজে আলসেমি করে, প্রচুর খেলাধুলা করতে চায়, হাবিজাবি খাবার খেতে চায়, বন্ধুদের নিয়ে মেতে থাকতে চায়। ডিভাইসে বা স্ক্রিনে এমন ভাবে বুদ হয়ে থাকে, এদের দিকে তাকালে তখন মনে হয় এদের জীবনে কোনো লক্ষ্য নাই, কোনো প্লান নাই। যা মন চাচ্ছে করছে। এই তো ছোটো থেকেই অভ্যস্ত হচ্ছে নাফসের গোলামী করার।
আমরা মা-বাবারা হতাশ হই কারণ তাদেরকে কন্ট্রোল করতে পারি না। অনেক সময় হাত ধুয়ে ফেলি তাদের ওপর থেকে। অথচ সন্তানের ৩/৪ বছর থেকেই শেখানো উচিৎ কীভাবে সে তার নাফসুল আম্মারাতু বিস সু'কে দমিয়ে রাখবে। কিভাবে সে তার সমস্ত শাহাওয়াতকে নিজের কন্ট্রোলে নিয়ে আসবে।
তার চোখদুটোতে জান্নাতের স্বপ্ন এঁকে দেওয়া তো মা বাবারই কাজ।