13/08/2022
টাইটানিক ডুবে যাওয়ার ১৪ বছর আগেই যে এই ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বই লিখা হয়েছিলো জানেন???
মনে করুন, এটা ২০২২ সাল। আপনি একটা বই লিখছেন। গল্পে লিখলেন ২০৩৬ সালে দুনিয়ায় মহাপ্রলয় শুরু হবে। মহাপ্রলয় শুরু হওয়ার পূর্বের ঘটনা এবং মহাপ্রলয় নিয়ে বিস্তারিত লিখে গেলেন। ২০৩৬ সালে মানুষ যেয়ে দেখলো তখন আসলেই মহাপ্রলয় শুরু হয়ে গিয়েছে। আপনার লিখা বইয়ের সাথে বাস্তবেই অনেক কিছু মিলে যাচ্ছে। কেমন হবে ব্যাপারটা?
“She was the largest craft afloat and the greatest of the works of men. In her construction and maintenance were involved every science, profession, and trade known to civilisation. On her bridge were officers, who, besides being the pick of the Royal Navy, had passed rigid examinations in all studies … they were not only seamen, but scientists.
Unsinkable – indestructible, she carried as few [life] boats as would satisfy the laws.
In view of her absolute superiority to other craft … she would steam at full speed in fog, storm, and sunshine, and on the Northern Lane Route, winter and summer…”
এই অংশটুকু পড়ে কোন জাহাজের কথা মনে পড়ছে? আপনারা সবাই বলবেন "ছ্যাহ এটা আবার প্রশ্ন করার কিছু হলো?? এটা টাইটানিক আজকালকার আন্ডাবাচ্চারাও জানে। "
- না ভাই, এটা টাইটানিকের বিবরণ না। এটা কাল্পনিক এক জাহাজের বিবরণ, নাম তার টাইটান।
১৮৯৮ সাল। মর্গান রবার্টসনের লিখা নভেলা " THE FUTILITY / The Wreck of the Titan" প্রকাশ পায়। বইয়ে যে জাহাজের কথা বলা হয় সেটা বইয়ের ভাষায় তৎকালীন সময়ের সবচেয়ে বড় জাহাজ। নাম টাইটান। দুটোই বৃটিশ যাত্রীবাহী জাহাজ। টাইটান আর টাইটানিকের আকৃতি মোটামুটি একরকমই ছিলো। টাইটান আসল টাইটানিকের চেয়ে মাত্র ২৫ মিটার ছোট ছিলো। দুটো জাহাজই ঘন্টায় ২০ নটের উপরে ছুটতে পারতো।
টাইটানিকের মত টাইটানকেও বইয়ে ঘোষণা করা হয় এই জাহাজ কখনোই ডুববে না। সেলুকাস! দুটো জাহাজের কোনোটাই এই নিশ্চয়তা রক্ষা করতে পারেনি।
টাইটানিকের মত টাইটানও আইসবার্গে ধাক্কা খেয়ে ডুবে যায়। নাকি এইক্ষেত্রে বলা উচিৎ টাইটানের মত টাইটানিকও আইসবার্গের সাথে ধাক্কা খেয়ে ডুবে যায়? মজার ব্যাপার হচ্ছে দুটো জাহাজই মধ্যে এপ্রিলের দিকে ডুবে যায়। এবং দুটো জাহাজই নর্থ আটলান্টিক মহাসাগরে ডুবে যায়!
টাইটানে হাজারের উপরে যাত্রী থাকলেও লাইফবোট ছিলো সে তুলনায় খুবই কম। আমরা যারা টাইটানিক মুভি দেখেছি বা এই সংক্রান্ত ব্যাপারে পড়াশোনা করেছি তারা সবাই জানি টাইটানিকেও হাজারের উপরে যাত্রী থাকার পরেও লাইফবোট ছিলো সে তুলনায় খুবই কম।
১৮৯৮ সালের ঘটনা হচ্ছে ফিকশন। মন গড়া গল্প। ১৯১২ সালের ঘটনা নির্জলা সত্য ঘটনা। অদ্ভুত মিল না?
অনেকেই এই ঘটনার পর মর্গান রবার্টসনকে অলৌকিক জ্ঞানপ্রাপ্ত ভাবতে থাকেন। তবে অনেক গবেষকের মতেই এটা ছিলো কাকতালীয় ব্যাপার। তারা বলেছেন মর্গান দূরদর্শী ছিলেন।
পল হেয়ার নামে উইলফ্রিড লরিয়ের ইউনিভার্সিটির একজন প্রফেসর, যিনি টাইটানিক বিশেষজ্ঞ হিসেবেও পরিচিত তিনি এটা মানতে নারাজ। তিনি যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করেছেন দুটো ঘটনা সম্পর্কে। রবার্ট ছিলেন সমুদ্র ও জাহাজ বিষয়ে অভিজ্ঞ মানুষ। নাবিক হিসেবেও কাজ করেছেন। তিনি দেখেছিলেন জাহাজের আকৃতি দিনে দিনে বড় হচ্ছে। আর জাহাজ যত বড় হবে আইসবার্গের সাথে ধাক্কা খাওয়ার সম্ভাবনা ততই বাড়বে।
রবার্ট ছিলেন সমুদ্র জাহাজ সম্পর্কে অভিজ্ঞ লোক। সাথে ছিলো দূরদৃষ্টি এবং চমৎকার কল্পনা করার ক্ষমতা। যেটা দিয়ে তিনি চমৎকার একটা গল্প লিখে ফেলেছিলেন। বইয়ের সাথে আসল ঘটনার অনেক কিছুই মিল নেই। কারণ বইটা ছিলো ফিকশনাল। যুক্তি দিয়ে বিচার করলে এটাই মেনে নেয়া উচিৎ। কিন্তু মিলগুলো কিন্তু অগ্রাহ্য করার মত নয়। শেক্সপিয়ার তো বলেই গিয়েছেন "There are more things in heaven and Earth, Horatio, Than are dreamt of in your philosophy." এখন কোনটা মেনে নিবেন সেটা বেছে নেয়ার ভার আপনার উপরেই থাকলো।
সোর্সঃ associated press/timedotcom/interestingliteraturedotcom/rmgdotco.uk/
Credit : অন্বয় আকিব