Shadhinotar Chatonai Houk Agamir Prerona-Joy Bangla/Heroic Late Md Nazmul

  • Home
  • Shadhinotar Chatonai Houk Agamir Prerona-Joy Bangla/Heroic Late Md Nazmul

Shadhinotar Chatonai Houk Agamir Prerona-Joy Bangla/Heroic Late Md Nazmul Contact information, map and directions, contact form, opening hours, services, ratings, photos, videos and announcements from Shadhinotar Chatonai Houk Agamir Prerona-Joy Bangla/Heroic Late Md Nazmul, Publisher, .

Bir-Muktijudda Late Md Nazmul Hussain Lelu On Behalf of :Admin: Md Tafazzul HussainTopu Master Quarter Raznoger Road P/O P/S Upazilla & Zilla Habiganj -Village Bosina P/O Mirpur Upzilla Bahubol Zilla Habiganj - MEMORIAL - - MEMOIRS

12/02/2023

৫ ই ফেব্রুয়ারি বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস।

আজ পহেলা ফেব্রুয়ারি ভাষার মাস শুরু :আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি: অ  আ  ক  খ :আ -মরি বাংলা ভাষা- একুশে ফ...
12/02/2023

আজ পহেলা ফেব্রুয়ারি ভাষার মাস শুরু :
আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি:
অ আ ক খ :আ -মরি বাংলা ভাষা-
একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে সামনে রেখে সকল ভাষা শহীদদের প্রতি রইল বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি।

একুশের চেতনা বলতে আমরা কি বুঝব?
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির চেতনা ও আদর্শ বুঝতে হলে আমাদের হবে এর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে ও ভাষা প্রাসঙ্গিক কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ব্রিটিশ সরকারের সুপরিকল্পিত ভারত কূটনীতির অংশ হিসাবে মুসলমানদের জন্য গণতন্ত্র ও একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের রাজনীতিকে ত্বরান্বিত করতে ১৯০৬ সালে প্রথমে আগা খানের নেতৃত্বে ও পরে মোহম্মদ আলী জিন্নাহর নেতৃত্বে মুসলিম লীগের জন্ম হয়। মুসলিম লীগের জাতীয়তাবাদের আদেশপত্রের পর মুসলমানরা ১৯৪০ সালে লাহোর প্রস্তাবের মাধ্যমে নিজেদের স্বতন্ত্র রাষ্ট্রের দাবি জানায়। তৎকালীন ভারতে হিন্দু-মুসলিম বিভেদ সমাধানে ব্রিটিশ সরকার ১৯৩৫ সালের শাসন আইন প্রবর্তনের ফলে ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলন বৃদ্ধি পায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ (১৯৩৯-১৯৪৫) চলাকালীন ব্রিটিশ সরকার কিন্তু অনৈক্য ও সাম্প্রদায়িক বিভেদ সমাধান করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয় ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান -ভারতের স্বাধীনতা দেয় এবং পাকিস্তান ও ভারত নামের দুটি পৃথক অভ্যুদয় ঘটে।

১৯৪৭ সালের পাকিস্তান, যা পশ্চিম পাকিস্তান (বর্তমান পাকিস্তান) পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ) নিয়ে গঠিত হয় এবং মাঝে থাকে ভারত । এখানে উল্লেখ্য, পূর্ব পাকিস্তানের এবং পশ্চিম পাকিস্তানের ভৌগোলিক দূরত্ব ১০০০ মাইলের বেশি। তৎকালীন পাকিস্তানে মোট পাঁচটি প্রদেশ (বেলুচিস্তান, খাইবার পাখতুনখাওয়া, পাঞ্জাব, সিন্ধু ও পূর্ব পাকিস্তান) ও পাঁচটি ভাষ (পাঞ্জাবি, পশতু, সিন্ধি, বেলুচি ও বাংলা) ছিল।

পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্মের সাত মাস পর, ১৯৪৮ সালে তৎকালীন পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল, মুসলিম লীগ ও গণপরিষদের সভাপতি মো জিন্নাহ তার জীবনের প্রথম ও শেষবারের মতো তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সফর করেন। নয় দিনের এ সফরে জিন্নাহ ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন সভায় ইংরেজিতে দেওয়া বক্তব্যে পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় ভাষা উর্দু হবে বলে পাকিস্তানের রাস্ট ভাষা ব্যক্ত করেন। তিনি আরও বলেন যে 'কেউ যদি আপনাদের বিভ্ৰান্ত করার চেষ্টা করে, তাহলে সে আসলে পাকিস্তানের শত্রু। এ সফরের এক পর্যায়ে মোহম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে তার ভাষণে বললেন 'পাকিস্তানের প্রদেশগুলো নিজেদের সরকারি কাজে যেনো ভাষা ব্যবহার করতে পারে, তবে রাষ্ট্রীয় ভাষা হবে এটি এ সময় কার্জন হলে উপস্থিত কয়েকজন তার 'না' 'না' বলে চিৎকার করে প্রতিবাদ করেন ও পরে মোহম্মদ আলী জিন্নাহকে একটি স্মারকলিপিও দেন, যাদের অনেকেই ছিলেন তৎকালীন জিন্নাহর মুসলিম লীগের সদস্য স্মারকলিপিতে বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবি-সংবলিত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উদাহরণ দেওয়া হয়, যেখানে একাধিক রাষ্ট্রভাষা যোগ্যতা পেয়েছে।

এভাবেই উর্দুকে পাকিস্তানের জাতীয় ভাষা করা হয়। উর্দু ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাবর্গের অন্তর্গত ইন্দো-ইরানীয় উপগোত্রের একটি ভাষা, যাতে আরবি ও ফার্সি শব্দ সংযোজিত হওয়ার পর তা আধুনিক উর্দু ভাষার রূপান্তরিত হয়েছে। উর্দু ভাষায় কয়েকজন বিখ্যাত কবির মধ্যে আপ্লামা ইকবাল, জাগুন এলিয়া, ফয়েজ আহমেদ ফয়েজ, মির্জা গালিব, মীর তাকী, আজমল খট্রক, পারভীন শাকির প্রমুখ উল্লেখযোগ্য। তেমনিভাবে আমরা সবাই অবগত, পাঞ্জাবি, পশতু, সিন্ধি, বেলুচি ও বাংলাভাষায় অসংখ্য বিশ্বখ্যাত কবি, সাহিত্যিক, নাট্যকার, ঔপন্যাসিক, গীতিকার জন্ম নিয়েছেন, যারা এ ভাষাগুলো ও তাদের জাতিসত্তাকে বিশ্বের দরবারে উচ্চাসনে করেছে। পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা উর্দু হওয়ার নেপথ্যে যারা ইন্ধন জোগান ও প্রস্তাব দেন, তাদের মধ্যে চৌধুরী খালেকুজ্জামান ও আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য জিয়াউদ্দিন আহমদ অন্যতম। এদিকে এ প্রস্তাবের বিপক্ষে সোচ্চার ও প্রতিবাদী ন অনেক বাঙালি বুদ্ধিজীবী, যাদের মধ্যে জ্ঞানতাপস ও

ভাষাবিজ্ঞানী ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ অন্যতম। পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দিনের উর্দু এবং একমাত্র উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা', এ কথার প্রতিবাদে ১৯৫২ সালের ৩১ জানুয়ারি সব রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক দলের যৌথ উদ্যোগে ও কাজী গোলাম মাহবুবকে কনভেনর করে সর্বদলীয় । কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ' গঠিত হয়। এ সংগ্রাম পরিষদ ২১ ফেব্রুয়ারিকে 'রাষ্ট্রভাষা দিবস' ঘোষণা দিয়ে সারা দেশে হরতাল ডাকে। অন্যদিকে, তৎকালীন নুরুল আমিন সরকার ২১ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা জারি করে বর্তমান ঢাকা মেডিকেল কলেজ প্রাঙ্গণে সমবেত ছাত্র-জনতার ওপর অন্যায়ভাবে ও অগণতান্ত্রিকভাবে গুলিবর্ষণ করে এবং এতে শহিদ হন রফিক উদ্দিন আহমেদ, আবুল বরকত, আবদুল জব্বার, আবদুস সালাম, শফিউর রহমান ও অহিউল্লাহ নামের এক বালক, যাকে পুলিশের গুলিতে জীবন দিতে হয়েছে ঢাকার নবাবপুর রোডে। এরপর ১৯৫২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি এক রাতের মধ্যেই প্রথম শহিদ মিনার নির্মাণ করা হয় এবং শহিদ শফিউরের পিতা তা উদ্বোধন করেন। পরে ১৯৫৪ সালে পাকিস্তানের গণপরিষদে বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসাবে স্বীকৃতিসহ ১৯৫৬ সালে সাংবিধানিকভাবে বাংলাভাষাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেওয়া হয়, যা বাঙালি জাতির গৌরবের ইতিহাসের এক অন্যতম অর্জন। পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার (যা মূলত
পাঞ্জাবি শাসকগোষ্ঠী) উর্দু ভাষাকে রাষ্ট্রীয় ভাষা করার আড়ালে ইসলামের নামে যে ভেদ-বৈষম্যনীতি ও শোষণনীতি চাপিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করে, তা অচিরেই পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্রসমাজ, বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিবিদরা বুঝতে পারেন। এ ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে উর্দু ভাষাভাষী পাঞ্জাবি শাসকগোষ্ঠী পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও চাকরি ক্ষেত্র থেকে বঞ্চিত ও পূর্ব পাকিস্তানের উন্নয়নকে ব্যাহত করার এক সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণ করে। উল্লেখ্য, তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের ৪০ শতাংশের কিছু বেশি লোক পাঞ্জাবি ভাষা ব্যবহার করত, অন্যদিকে উর্দু ছিল মাত্র ৪ শতাংশের ভাষা।

মোহম্মদ আলী জিন্নাহ ছিলেন গুজরাটি। ইংরেজি ভাষায় অত্যন্ত দক্ষ হলেও উর্দু ভাষা ভালো জানতেন না। তার প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ যে বাংলা ভাষায় কথা বলে, এ সম্পর্কে তার ধারণা যে অত্যন্ত সীমিত ছিল, তা সহজেই অনুধাবন করা যায়। পাকিস্তান আন্দোলনের শীর্ষনেতাদের বেশিরভাগই ছিল পাঞ্জাবি, তাই শাসনক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে যায় পশ্চিম পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশ। শিক্ষা, প্রশাসন, প্রতিরক্ষাসহ সবক্ষেত্রে বাড়তে থাকে পাঞ্জাবের সঙ্গে পাকিস্তানের বিভিন্ন প্রদেশের মধ্যে বৈষম্য ও বিভেদ। পাঞ্জাব প্রদেশে জনসংখ্যার আধিক্য ও বেশি উর্বরা কৃষি জমি থাকায় সেনাবাহিনী, সরকারি চাকরি ও আমলাতন্ত্রের ক্ষেত্রে পাঞ্জাবিদের প্রতিনিধিত্ব
ছিল বেশি। পাঞ্জাবিরা বাঙালিদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক মনে করতেন এবং ভাবতেন বাঙালিদের যুদ্ধ করার কোনো শক্তি নেই, যদিও পাকিস্তানের উরস্থান প্রকল্পে পূর্ব পাকিস্তান থেকে তহবিলের মোটা অঙ্কের টাকা জোগান দেওয়া হতো প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা (১৯৫০-৫৫), তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় (১৯৬৫-৭০) কেন্দ্রীয় সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পে পূর্ব পাকিস্তানকে যথাক্রমে ২০ শতাংশ ও ৩৬ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় সরকারের এ বৈষম্যমূলক অর্থনীতির শিকার হয়ে দিন দিন পূর্ব পাকিস্তান শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ও অবকাঠামোর দিক থেকে দুর্বল হয়ে পড়ে। রাষ্ট্রভাষা উর্দু না বাংলা হবে, সে সংঘাতের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের জন্ম হয়। পাকিস্তান সৃষ্টির আন্দোলনে বাঙালি মুসলমানদের প্রত্যাশা ছিল, মুসলমানদের জন্য স্বতন্ত্র দেশ হলে তারা জমিদার ও সাম্রাজ্যবাদীদের হাত থেকে মুক্ত হয়ে নিজেদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে পারবে। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনসংখ্যা মোট জনসংখ্যার ৫৬ শতাংশ হলেও পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকশ্রেণির (পাঞ্জাবি) বৈষম্যনীতি অচিরেই রাজনীতি, অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা, প্রশাসন, শিক্ষাসহ প্রায় সর্বক্ষেত্রে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। পশ্চিম পাকিস্তানের মাথাপিছু আয় পূর্ব পাকিস্তানের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধিসহ, অচিরেই পূর্ব পাকিস্তান হয়ে ওঠে পশ্চিম পাকিস্তানের বাজার ও কাঁচামালের জোগানদাতা।

এমতাবস্থায়, আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোরে বিরোধী রাজনৈতিক দলের এক সম্মেলনে ঐতিহাসিক ছয় দফা পেশ করেন। ঐতিহাসিক ছয় দফা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন ও পরে বাংলাদেশ জন্মের ঘোষণাপত্র বা সনদপত্র। ছয় দফা দাবির মূল উদ্দেশ্য ছিল পাকিস্তানকে যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটি ফেডারেল রাষ্ট্রে পরিণত করা আর প্রতিটি অঙ্গরাজ্যকে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন দেওয়া। আমার মতে, ১৯৬৬ সালে দেওয়া ছয় দফা সনদপত্রের প্রস্তাবগুলো আজকের আধুনিক বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর চিন্তার চেয়েও উন্নত। যুক্তরাষ্ট্র নিজের দেশের প্রগতির স্বার্থে বরাবরই সঠিক পথ অবলম্বন করে। কিন্তু পাকিস্তানের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র সেদিন সদুপদেশ দিয়ে ছয় দফা বাস্তবায়নে সহযোগিতা করলে দেশটি সত্যিকার বন্ধুত্বের পরিচয় দিত। এভাবেই ইসলাম ধর্মের লেবাসে পাকিস্তানের ভেদ-বৈষম্যনীতি ও শোষণনীতি অচিরেই বাঙালি মুসলমানদের স্বাধীনভাবে বাঁচার প্রত্যাশাকে রুদ্ধ করেছিল, যার পরিণতিতে গণআন্দোলন তৈরি হয় এবং একটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হয়।

এখানে স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে, উমাইয়া রাষ্ট্রনীতিভিত্তিক তথাকথিত ইসলাম ধর্মের লেবাসে পাকিস্তান বরাবরই পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীদের দলভুক্ত। পাকিস্তান ও তার অনেক সাম্রাজ্যবাদী মনিব বর্তমানে গরিব অনেক মুসলিম দেশকে বিভ্রান্ত ও বিপথে পরিচালনা করে সেসব দেশের ভীষণ ক্ষতি সাধন করছে। ইসলামি শিক্ষা পদ্ধতির নামে বিশ্বের অনেক গরিব ইসলামিক দেশ মাদ্রাসা ও মসজিদে আমাদের নবি ও নবি বংশের বিরুদ্ধে অপপ্রচারসহ বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় ইসলামিক সংস্কৃতিকে ধ্বংস করছে। আমাদের দেশের ধর্মালয় ও তার সঙ্গে সম্পৃক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে অর্থনৈতিকভাবে আত্মনির্ভরশীল করার লক্ষ্যে আমাদের কৃষি, পোশাক খাত, গণপরিবহণ, বিদ্যুৎ, পোলট্রি, মৎস্যচাষ ইত্যাদির সঙ্গে সেগুলোকে সম্পৃক্ত করে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে হবে। ভাষা আন্দোলন ও এর ধারাবাহিকতায় যে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে, বিজ্ঞান ও কারিগরি ক্ষেত্রে উৎকর্ষ অর্জনের যুদ্ধে আমরা জয়ী হতে না পারলে সেই দেশকে সত্যিকার অর্থে মুক্ত দেশ বলা যাবে না।
(সংগৃহীত)

12/02/2023

৪ঠা জানুয়ারী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ঐতিহাসিক এগারো দফা দাবি পেশ দিবস।

আজ ২৭ জানুয়ারী ২০২৩সাল এ এম এস কিবরিয়া সাহেবের ১৮ তম মৃত্যুবার্ষিকী।২০০৫সালের ২৭ জানুয়ারি বিকেলে হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বৈ...
30/01/2023

আজ ২৭ জানুয়ারী ২০২৩সাল এ এম এস কিবরিয়া সাহেবের ১৮ তম মৃত্যুবার্ষিকী।২০০৫সালের ২৭ জানুয়ারি বিকেলে হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বৈদ্যের বাজার নামক স্থানে এক জনসভায় প্রধান অতিথি হিসাবে যোগ দিলে দুষ্কৃতকারীদের দুটি আর্জেস গ্রেনেড হামলায় গুরুতর আহত হলে ঢাকা নেওয়ার পথে মাধবপুরে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

শাহ এ এম এস কিবরিয়া ১৯৫২ ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে গ্রেফতার হন এবং দীর্ঘ দেড় মাস কেন্দ্রীয় কারাগারে কারাভোগ করেন।তিনি অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন জীবনের সব পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম -দ্বিতীয় কোনোটিতে হন নাই।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশ যুদ্ধের সময় ওয়াশিংটন ডিসিতে পাকিস্তান দূতাবাসে কর্মরত ছিলেন। ১৯৭১সালের ৪ঠা অগাস্ট পাকিস্তান দূতাবাসের চাকুরী ত্যাগ করে বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের প্রতি আনুগত্য দেখান-পাকিস্তানের(যেকোনো বাঙালির জন্য তৎকালীন লোভনীয়) চাকুরীর মায়া ত্যাগ করে।তিনিই ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ মিশন প্রতিষ্ঠা করেন- বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগী ভূমিকা পালন করে।

তিনি জাতিসংঘের (এসকাপের)আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল পদে দীর্ঘদিন কর্মরত ছিলেন। উনার পূর্বে কোন বাঙালি এত উচ্চপদে আসীন হন নাই।

তিনি ১৯৯২ সালে সেপ্টেম্বর মাসে হবিগঞ্জ টাউনহলে একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আওয়ামীলীগে যোগদান করেন।ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা নিযুক্ত হন। রেওয়াজ আছে -তিন জন ব্যক্তি নাকি ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় এনেছিলেন(জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আওয়ামী লীগ বিরুদ্ধ শক্তিকে - - - - না হয় আরো অনেক দেরিতে ক্ষমতায় আসতে হতো বা আদৌ আসা-হত কিনা সন্দেহ আছে) তন্মধ্যে প্রধান ছিলেন জনাব কিবরিয়া-অবশ্য তিন জনই সাবেক আমলা ছিলেন ।

তিনি ১৯৯৬থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১সালের ১লা অক্টোবর অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি-হবিগঞ্জ ৩-আসন(হবিগঞ্জ সদর -লাখাই উপজেলা)সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।হবিগঞ্জ শহরের বাসাঃ মুসলিম কোয়াটারে। ঢাকার বাসাঃ "মালঞ্চ" ধানমন্ডি- নব্বই দশকে বাসাটি রাজনৈতিক অঙ্গনে খুবই পরিচিত ছিল ।

তিনি ১৯৩১ সালের ১লা(পয়লা) মে নবীগঞ্জ উপজেলার ১০ # দেবপাড়া ইউনিয়নের জালালসাব গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতাঃ শাহ ইমতিয়াজ আলী(জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা) ছিলেন সিলেট অঞ্চলের প্রাথমিক শিক্ষা প্রসারের অন্যতম অগ্রদূত।

মৃত্যুঃ২০০৫সালের ২৭ জানুয়ারি বিকেলে হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বৈদ্যের বাজার নামক স্থানে এক জনসভায় প্রধান অতিথি হিসাবে যোগ দিলে দুষ্কৃতকারীদের দুটি আর্জেস গ্রেনেড হামলায় গুরুতর আহত হলে ঢাকা নেওয়ার পথে মাধবপুরে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।অবশ্য দ্রুত ঢাকা নেওয়ার উদ্দেশ্যে তৎকালীন সরকারের (বিএনপি-জামাত) নিকট হেলিকপ্টার যাওয়া হলে দিতে অপারগতা প্রকাশ করে।
মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে উনার বীরত্বপূর্ণ অবদান বাংলাদেশ চিরদিন স্মরণ রাখবে।

মহান বীরের প্রতি রইলো বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি

২৪ শে জানুয়ারী ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থান দিবস।১৯৬৯ সালের ২৪ জানুয়ারিতে ঐতিহাসিক গণ অভ্যুত্থান এর ফলে এর স্বৈরাচারী আইয়ুব খ...
30/01/2023

২৪ শে জানুয়ারী ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থান দিবস।১৯৬৯ সালের ২৪ জানুয়ারিতে ঐতিহাসিক গণ অভ্যুত্থান এর ফলে এর স্বৈরাচারী আইয়ুব খানের পতন ঘটে। ঐতিহাসিক গণ অভ্যুত্থান এর শহীদদের প্রতি রইল বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি।

“জয় বাংলা" রক্তে শিহরন জাগানো একটা শ্লোগান।
এটি কোন দলের নিজস্ব শ্লোগান নয়। "জয় বাংলা " বাঙালী জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে, বাংলার ন্যায় সংগত দাবী দাওয়া ভিত্তিক আন্দোলনকে ধাপে ধাপে বাঙালীর স্বাধীনতা আন্দোলনে রূপান্তরের মূল শ্লোগান। "জয় বাংলা" শুধুই শ্লোগান নয়, “জয়বাংলা" বাঙ্গালী জাতির স্বাধিকার আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের শানিত অস্ত্র। " জয় বাংলা " একটি দর্শন।কিন্তু কিভাবে আসলো, "জয় বাংলা" শ্লোগান? বাংলার মাটিতে সর্বপ্রথম " জয় বাংলা" শ্লোগান :

১৯৬৯ সালের ১৭ই সেপ্টেম্বর শিক্ষা দিবস উপলক্ষে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ১৫ থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী কর্মসূচী ঘোষণা করে। কর্মসূচীর অংশ হিসেবে প্রথম দিন অর্থাৎ ১৫ সেপ্টেম্বর ঢাবি ক্যাম্পাসের মধুর ক্যান্টিনে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের একটা সাধারণ ছাত্র সভা ডাকা হয়। সভা চলাকালীন অনেকটা হঠাৎ করেই সবাইকে চমকে দিয়ে চিৎকার করে “জয় বাংলা" শ্লোগান দিলেন জিন্নাহ হলের ছাত্র (সূর্যসেন হল) ছাত্রলীগের আফতাব উদ্দিন আহমেদ, পরক্ষণেই সেই শ্লোগানের রিপ্লাই দিলেন ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সম্পাদক চিশতী শাহ হেলালুর রহমান। এরপরে কিছুক্ষণ ঐ শ্লোগান চললো। সেটাই এই বাংলার বুকে প্রথম “জয় বাংলা” শ্লোগান উচ্চারণ করা। এই দুই ছাত্রনেতাই ছিলেন নিউক্লিয়াস সদস্য। যদিও এর আগে “ স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ হাতে লেখা তিন পাতার একটি পত্রিকায় কয়েকটি সংখ্যা প্রকাশ করে, যার নাম ছিল “জয় বাংলা"।

* জনসম্মুখে এ শ্লোগান প্রথম উচ্চারিত হয় ১১ জানুয়ারি ১৯৭০ পল্টন ময়দানে আওয়ামী লীগের জনসভায়। সভায় একমাত্র বক্তা ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। মঞ্চের সামনের দিকে ‘জয় বাংলা’ লেখা একটি ব্যানার টানানো হয়, যা উপস্থিত জনতাকে আকৃষ্ট করে। বঙ্গবন্ধু বক্তৃতা দেয়ার আগে ছাত্রনেতা সিরাজুল আলম খান বেশ কয়েকবার ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিলেন। উপস্থিত জনতাও শ্লোগানে সাড়া দিলেন এবং সভাশেষে ‘জয় বাংলা’ শ্লোগান দিতে দিতে বাড়ি ফিরলেন।

ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের প্রতিচ্ছবি হয়ে ওঠা এই বিখ্যাত ছবিটি তুলেছিলেন, কিংবদন্তী আলোকচিত্রী রশিদ তালুকদার। ছবির শিশুটি সেদিন গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন। সম্প্রতি মোঃ হোসেন আলী নামের এক ব্যাক্তিকে নিয়ে ইতিহাসবিমুখ মিডিয়া ঢালাও প্রচারণা চালিয়েছে এই বলে যে, ছবির শিশুটি জনৈক হোসেন আলী।

দাবীটি সম্পূর্ণ মিথ্যে। শ্রদ্ধেয় রশিদ তালুকদার স্বয়ং তাঁর জীবদ্দশায় জানিয়েছেন এই শিশুটি সেদিন শহীদ হন। (তাঁর বক্তব্যের ভিডিও আমাদের হাতে আছে) বাংলাদেশ পৃথিবীর একমাত্র রাষ্ট্র যাদের মিডিয়া মৃত মানুষকেও বাস্তবে হাজির করেন। বিনয়ের সাথে বলি, ইতিহাসকে রেহাই দিন আপনারা। কষ্ট হলেও, সামান্য সময় পড়াশুনা করুন, এতে 'লাভ আছে ক্ষতি নাই'।

১০ ই জানুয়ারী জাতির পিতা মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস।
30/01/2023

১০ ই জানুয়ারী জাতির পিতা মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস।

30/01/2023
30/01/2023

১২ ই মার্চ ভারতীয় সেনাবাহিনী মিত্রবাহিনীর প্রত্যাহার দিবস।

30/01/2023

৬ ই ডিসেম্বর ভারত সরকার বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান দিবস।

৩রা ডিসেম্বর যৌথ কমান্ড গঠন দিবস।১৯৭১ সালের  ৩রা ডিসেম্বর  মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় সেনাবাহিনীর যৌথ কমান্ড গঠন করে। ফলে এ ...
30/01/2023

৩রা ডিসেম্বর যৌথ কমান্ড গঠন দিবস।১৯৭১ সালের ৩রা ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় সেনাবাহিনীর যৌথ কমান্ড গঠন করে। ফলে এ স্বাধীনতা যুদ্ধ ত্বরান্বিত হয়।

২২ শে ডিসেম্বর প্রবাসী সরকার বা মুজিবনগর সরকারের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস।
30/01/2023

২২ শে ডিসেম্বর প্রবাসী সরকার বা মুজিবনগর সরকারের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস।

১৪ ই ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী হত্যা দিবস।
30/01/2023

১৪ ই ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী হত্যা দিবস।

৫ ই ডিসেম্বরবাংলাদেশের নামকরণ দিবস।
30/01/2023

৫ ই ডিসেম্বরবাংলাদেশের নামকরণ দিবস।

৬ ই ডিসেম্বর হবিগঞ্জ মুক্ত দিবস উপলক্ষে বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ নাজমুল হোসেন লিলুর পরিবারের পক্ষ থেকে বিজয়ের শুভেচ্ছা।
07/12/2022

৬ ই ডিসেম্বর হবিগঞ্জ মুক্ত দিবস উপলক্ষে বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ নাজমুল হোসেন লিলুর পরিবারের পক্ষ থেকে বিজয়ের শুভেচ্ছা।

গণতন্ত্রের মানসপুত্র হুসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকী আজ ৫ই ডিসেম্বর ২০২২।    উপমহাদেশের বরেণ্য রাজনীতিবিদ হোসেন...
07/12/2022

গণতন্ত্রের মানসপুত্র হুসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকী আজ ৫ই ডিসেম্বর ২০২২।

উপমহাদেশের বরেণ্য রাজনীতিবিদ হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ৫৯তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ ৫ ডিসেম্বর। ১৯৬৩ সালের এই দিনে লেবাননের একটি হোটেলে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

দিবসটি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন। গতকাল রোববার এক বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা ও মানুষের কল্যাণে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর জীবন ও আদর্শ আমাদের সব সময় সাহস ও প্রেরণা জোগায়। জাতি এই মহান নেতার অবদান সব সময় শ্রদ্ধার সঙ্গে
স্মরণ করবে।'

সোহরাওয়ার্দী ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন তৎকালীন আওয়ামী মুসলিম লীগ (পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ) প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। আজ সোমবার সকাল আটটায় সুপ্রিম কোর্টসংলগ্ন মরহুমের সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, ফাতেহাপাঠ ও মোনাজাতের কর্মসূচি গ্রহণ করেছে আওয়ামী লীগ।

গতকাল এক বিবৃতিতে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এই নেতার মৃত্যুবার্ষিকী যথাযথ মর্যাদায় পালন করতে সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান।

ডিসেম্বর মাস বিজয়ের মাস- বাঙালির গর্বের মাস।১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর নিয়াজীর আত্মসমর্পণের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রথম সূর্...
07/12/2022

ডিসেম্বর মাস বিজয়ের মাস- বাঙালির গর্বের মাস।১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর নিয়াজীর আত্মসমর্পণের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রথম সূর্যোদয় হয়। বিজয় দিবস উপলক্ষে বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ নাজমুল হোসেন লিলুর পরিবারের পক্ষ থেকে আগাম বিজয়ের শুভেচ্ছা।

বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ নাজমুল হোসেন লিলুর ৪০ তম মৃত্যুবার্ষিকী যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত।
14/08/2022

বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ নাজমুল হোসেন লিলুর ৪০ তম মৃত্যুবার্ষিকী যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত।

09/03/2022

মুক্তিযুদ্ধে নারীদের ভূমিকা ছিল অসামান্য কিন্তু স্বীকৃতি কোথায়?

23/01/2022
06/01/2022

বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ নাজমুল হোসেন লিলুর নামে বিভিন্ন জাতীয় দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন সময়ের কাপ।

26/12/2021

২৫ ডিসেম্বর ১৯৭১
মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারী চীনের দূতাবাস বন্ধ।
ইজরাইল বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেবে।

26/12/2021

যুদ্ধ শেষে প্রকাশিত প্রথম সীমানা নির্ধারনী মানচিত্র
রেফারেন্সঃ
দৈনিক যুগান্তর, ২৭ ডিসেম্বর ১৯৭১
অন্যান্য খবরের লিঙ্ক
https://songramernotebook.com/archives/category/1971-12-27

24/12/2021

শত্রুর কলমে একাত্তর
মে. জেনারেল খাদিম হুসেইন রাজা
======================
খাদিম হুসেইন রাজা ১৯৭১ সালের প্রথম দিকে পূর্ব পাকিস্তানে অবস্থিত ১৪ ডিভিশনের জিওসি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। খাদিম হােসেন ১৯২২ সালে পাকিস্তানের ঝিলম জেলার হারানপুরে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪২ সালে তিনি ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান আর্মিতে যােগ দেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে তিনি মেজর জেনারেল পদ লাভ করেছিলেন। খাদিম হুসেইন রাজা ১৯৯৯ সালে মৃত্যুবরণ করেন। ২৫ মার্চের দিবাগত রাতে বাঙালিদের ওপর পরিচালিত ‘অপারেশন সার্চলাইট’-এর আদেশটি প্রণয়নে খাদিম হুসেইন রাজার সম্পৃক্ততা ছিল। আদেশটি কীভাবে প্রণীত হয়েছিল, তা তিনি তাঁর আ স্ট্রেঞ্জার ইন মাই ওন কান্ট্রি (অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, ২০১২) বইয়ে উল্লেখ করেছেন। নিচে সেই অধ্যায়গুলাে থেকে প্রযােজ্য অংশের অনুবাদ তুলে ধরা হলাে।
প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান পূর্বাঞ্চলীয় (পূর্ব পাকিস্তান) কমান্ডের প্রধান হিসেবে লে. জেনারেল টিক্কা খানকে লে. জেনারেল ইয়াকুব খানের স্থলাভিষিক্ত করেন। পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের প্রধান হিসেবে তাঁর এই অভিষেক, প্রেসিডেন্টের দিক থেকে একটি আপসমূলক পদক্ষেপ ছিল এমনটি নয়। বরং এর মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্টের নীতি পরিবর্তনের দিকটিই পরিষ্কার হয়ে ওঠে। পূর্ব পাকিস্তানে তিনি ঘুঘুর স্থলাভিষিক্ত করলেন 'বাজপাখি’কে।
লে. জেনারেল টিক্কা খান ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বিকেল চারটার দিকে নীরবে ঢাকা বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। টিক্কা খানকে স্বাগত জানাতে ইয়াকুব ও আমি সেদিন বিমানবন্দরে যাই। টিক্কা খানের থিতু হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে ১৫ মার্চ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ঢাকায় আসেন। উপদেষ্টা ও শীর্ষ কর্মকর্তারা ছাড়াও জেনারেল আবদুল হামিদ খান [পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রধান] প্রেসিডেন্টের সফরসঙ্গী ছিলেন। ওই সন্ধ্যায়ই প্রেসিডেন্ট সভা ডাকেন। আমি সভায় উপস্থিত থেকে বিরাজমান পরিস্থিতি তুলে ধরি। কেউ কেউ কিছু মন্তব্য ও পরামর্শ দিলেও বিশেষ কেউ মুখ খােলেননি। এরপর বিমানবাহিনীর কমান্ডার এয়ার কমােডর মাসুদ [এয়ার কমােডাের মুহাম্মদ জাফর মাসুদ] বক্তব্য দেন এবং চলমান সংকট মােচনে সামরিক শক্তি প্রয়ােগের বিপক্ষে তাঁর ক্ষুরধার যুক্তি তুলে ধরেন। তিনি উল্লেখ করেন, এখানে (পূর্ব পাকিস্তান) বিপুলসংখ্যক বিহারি রয়েছে। এখানে বসবাসকারী পশ্চিম পাকিস্তানির সংখ্যাও অনেক। সামরিক শক্তি প্রয়ােগ করা হলে তাদের জানমাল ও সহায়-সম্পত্তি ঝুঁকির মুখে পড়বে। তাঁদের মর্যাদা, জানমাল ও সম্পত্তি রক্ষার পুরাে দায়দায়িত্ব প্রেসিডেন্টকে নিতে হবে। এয়ার কমােডর মাসুদ যথেষ্ট দৃঢ়তা ও আবেগের সঙ্গে এসব কথা বলেন। তাঁর বক্তৃতা চলাকালে পিনপতন নীরবতা বিরাজ করে। শেষমেশ নীরবতা ভেঙে প্রেসিডেন্ট বলেন, আমি এসব বিষয়ে পুরােপুরি ওয়াকিবহাল। এরপর তাড়াহুড়া করে সভা মুলতবি করা হয়। কয়েক দিনের মধ্যেই এয়ার কমােডর মাসুদের স্থলাভিষিক্ত হন এয়ার কমােডর। (পরে এয়ার মার্শাল) ইনাম-উল-হক। কয়েক সপ্তাহ পর এয়ার কমােডর মাসুদ অবসরে যান। এটি ছিল তাঁর মতাে বিমানবাহিনীর অত্যন্ত প্রতিভাধর একজন মানুষের পেশাজীবন থেকে বেদনাদায়ক আগাম বিদায়ের ঘটনা। তাঁর দক্ষতা ও দুঃসাহসিকতার জন্য পাকিস্তান বিমানবাহিনীতে তাঁর সুনাম ছিল।
প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ১৬ মার্চ শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সমঝােতা আলােচনায় বসেন। তাঁর দলীয় উপদেষ্টাদের একটি দলও এতে অংশ নেয়। পরদিন গণমাধ্যমে আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে একে খুব মামুলি আলােচনা হিসেবে তুলে ধরা হয়। ওই দিন বিকেলে আমি টিক্কা খানের সঙ্গে দেখা করি। তার কাছে জানতে চাই, সমঝােতা আলােচনা কী রকম চলছে? তিনি সরলভাবে উত্তর দিলেন, দৈনিক পত্রিকা পড়ে আমি যত দূর জেনেছি, তিনিও ততটুকু জেনেছেন, এর বেশি কিছু নয়। কী কী ঘটছে, সে সম্পর্কে অবহিত থাকার জন্য আমি তাকে প্রেসিডেন্ট হাউসে যেতে অনুরােধ করি। আমি তাঁকে অবহিত করি যে বর্তমান পরিস্থিতি মােকাবিলা করার জন্য আমাদের কোনাে পরিকল্পনা নেই। পরিকল্পনা করতে ও নির্দেশ দিতে যথেষ্ট সময়ের দরকার হবে, যাতে সমন্বিতভাবে পুরাে প্রদেশে (পূর্ববঙ্গে) তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়। আমি তাঁকে এ কথাও জানিয়ে দিই যে জেনারেল ইয়াকুব খান ও অ্যাডমিরাল আহসান [পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর] পৃথকভাবে আমাকে বলেছিলেন, প্রেসিডেন্ট কখনাে তাঁদের ওপর আস্থা রাখতে পারেননি, বরং
পৃষ্ঠা: ১৪
তিনি তাঁর উপদেষ্টাদের সঙ্গে আলােচনা করতেন। এটি একটি অদ্ভুত বিষয় যে প্রেসিডেন্ট পূর্ব পাকিস্তানে তার শীর্ষ লােকদের হেলাফেলা করছেন আর তার ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টাদের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করছেন।
১৭ মার্চ সকাল তখন প্রায় ১০টা বাজে। টিক্কা খান আমাকে ও মেজর জেনারেল ফরমানকে [মে. জেনারেল রাও ফরমান আলী, পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নরের সামরিক উপদেষ্টা] কমান্ড হাউসে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে খবর পাঠান। খবর পেয়ে আমরা দুজন টিক্কা খানের সঙ্গে দেখা করি। গিয়ে দেখি, সেখানে জেনারেল আবদুল হামিদ খানও রয়েছেন। টিক্কা খান আমাদের বলেন, প্রেসিডেন্টের সঙ্গে শেখ মুজিবের সমঝােতা আলােচনা ইতিবাচক দিকে এগােচ্ছে না। প্রেসিডেন্ট চান, আমরা যেন সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি গ্রহণ করি এবং সে অনুযায়ী একটা পরিকল্পনা তৈরি করি। এ ছাড়া আর কোনাে মৌখিক বা লিখিত নির্দেশনা আমরা পাইনি। আমাদের বলা হয় যে পরদিন ১৮ মার্চ বিকেলে আমরা দুজন যেন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ-আলােচনা করে ওই পরিকল্পনা চূড়ান্ত করি।
ফরমান ও আমি ১৯৭১ সালের ১৮ মার্চ সকালে আমার কার্যালয়ে ওই পরিকল্পনা নিয়ে আলােচনার সিদ্ধান্ত নিই। আমি আমার স্ত্রীর সাহায্য নিয়ে আমার বাঙালি এডিসিকে ব্যস্ত ও আমার কার্যালয় থেকে দূরে রাখি। আমি চাইনি, আমার কার্যালয়ে সারাটা সকাল ফরমান আমার সঙ্গে কী করছেন, এ বিষয়ে তাঁর মনে সন্দেহ উঁকি দিক। কারণ, সময়টা এ ধরনের সভার জন্য উপযুক্ত ছিল না। সময়ের আগেই আমরা পরিকল্পনার বড় দিকগুলাের ব্যাপারে একমত হই। এরপর আমরা আমাদের সংশ্লিষ্ট অংশ লিখতে বসি। ফরমান ঢাকা সেনানিবাসের অভিযান তত্ত্বাবধান করবেন আর আমাকে দেওয়া হয় এর বাইরে গােটা প্রদেশের দায়িত্ব। এরপর অভিযানের ভূমিকা আর ঢাকায় কী করে অপারেশন চলবে, তা ফরমান লিখলেন। প্রদেশের বাকি অংশে সেনাবাহিনীকে কী কী দায়িত্ব পালন করতে হবে, এ বিষয়ে আমি বিস্তারিত লিখি। আগের আয়ােজন অনুযায়ী, আমরা আবার ১৮ মার্চ বিকেলে কমান্ড হাউসে মিলিত হই। সেখানে আমি চূড়ান্ত প্রস্তাব ও পরিকল্পনা উপস্থাপন করি। কোনাে আলােচনা ছাড়াই এই পরিকল্পনা অনুমােদন করা হয়। যা-ই হােক, প্রেসিডেন্টকে ঘিরে গােপনীয়তার বিষয়টি আমরা যেভাবে ভেবেছিলাম তা গৃহীত হলাে না, তাঁর ছিল নিজস্ব পরিকল্পনা। তিনি সামরিক অভিযান শুরুর আগে আগে ঢাকা ত্যাগ করার মতলব এঁটেছিলেন।
ফরমান ও আমি যে নতুন অভিযানের পরিকল্পনা করি, এর নাম দেওয়া হয় ‘সার্চলাইট'। নামকরণের বিশেষ কোনাে কারণ ছিল না। নির্দেশ পেলে
পৃষ্ঠা: ১৫
ওই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য আমরা ততক্ষণে প্রস্তুত হয়ে গেছি। কিন্তু সমস্যা দেখা দিল, কীভাবে নিরাপদে আমাদের অধস্তন কর্মকর্তাদের কাছে এই বার্তা পৌঁছে দেব। নানামুখী সীমাবদ্ধতা ছিল। এদিকে আমাদের হাতে সময় ছিল না বললেই চলে, আর সমঝােতা আলােচনা কোনােমতে টেনে নেওয়া হচ্ছিল। আমাদের দ্রুত প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হচ্ছিল, যাতে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সারা দেশে প্রয়ােজনীয় সরঞ্জামাদি নিয়ে অভিযান চালাতে পারি। ঠিক হলাে যে আমি কুমিল্লা হয়ে চট্টগ্রাম যাব এবং যথাক্রমে ব্রিগেডিয়ার ইকবাল (কুমিল্লায় ব্রিগেড কমান্ডার] শফি ও ২০ বালুচের অধিনায়ক লে. কর্নেল ফাতেমিকে নির্দেশ দেব। এ ছাড়া চট্টগ্রামে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টাল সেন্টারের উপ-অধিনায়ক কর্নেল শিগ্রি ও চট্টগ্রামে ৮ ইস্ট বেঙ্গলের অধিনায়ক লে. কর্নেল জানজুয়াকেও যত দূর সম্ভব বিস্তারিত জানানাে দরকার। অবস্থা জটিল হয়ে গেল যখন তিনজন স্টাফ অফিসারসহ জেনারেল হেডকোয়ার্টারের মাস্টার জেনারেল অব অর্ডিন্যান্স মেজর জেনারেল ইফতিখার খান জানজুয়া আমার সঙ্গী হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তখনাে তিনি আসন্ন সার্চলাইট অভিযান সম্পর্কে ঘুণাক্ষরেও কিছু জানেন না। কারণ, প্রয়ােজন হলে জানানাে হবে’–এমন কৌশলের আওতায় এসব তথ্য ছিল সংরক্ষিত। লজিস্টিক এরিয়ার কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার আনসারি আমাদের সঙ্গী হলেন। তাঁর দায়িত্ব ছিল চট্টগ্রামে সৈন্যদের দিয়ে এমভি ‘সােয়াত’ জাহাজ থেকে গােলাবারুদ ও অস্ত্রশস্ত্র খালাসের ব্যবস্থা করা। এমভি ‘সােয়াত’ সাত হাজার টন গােলাবারুদ ও অন্যান্য সমরাস্ত্র বহন করছিল। পূর্ব পাকিস্তানে তিন মাসের মজুত ঠিক রাখতে এটি ছিল নিয়মিত চালান। এদিকে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি স্থগিত করার পর আওয়ামী লীগ বন্দরের শ্রমিকদের জাহাজ থেকে মালামাল খালাস না করার আহ্বান জানায়। ঘাের অবিশ্বাস আর সন্দেহজনক ওই পরিস্থিতিতে শ্রমিকেরা এই আহ্বানে সাড়া দেয়। ফলে এর তাৎক্ষণিক প্রভাব পড়ে। জাহাজটি বন্দরের জেটিতে কয়েক সপ্তাহ অলস নােঙর করা থাকে।
আমি চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা দেওয়ার আগে, চট্টগ্রামের ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট সেন্টারের কমান্ড্যান্ট [ব্রিগেডিয়ার] এম আর মজুমদারের সঙ্গে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে আলােচনা করি। পূর্ব পাকিস্তানে তিনিই ছিলেন সবচেয়ে উচ্চপদস্থ বাঙালি কর্মকর্তা। প্রদেশটির বাঙালি কর্মকর্তারা, বিশেষ করে ইউনিট কমান্ডাররা, তাঁর দিকনির্দেশনার জন্য মুখিয়ে ছিলেন। তিনি হয়ে উঠেছিলেন বাঙালিদের সামরিক কর্মকাণ্ড ও আকাঙ্ক্ষার কেন্দ্রবিন্দু। আর চট্টগ্রাম ছিল আমাদের ক্ষুদ্র অথচ এড়ানাে যায় না, এমন এলাকা। এটি বঙ্গোপসাগরের তীরে পাহাড়ঘেরা একটি অঞ্চল, যা নানা দিক দিয়ে
পৃষ্ঠা: ১৬
গুরুত্বপূর্ণ ছিল। বিশেষ করে, ভারতের আকাশসীমার ওপর দিয়ে বিমান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারির পর চট্টগ্রামের গুরুত্ব অনস্বীকার্য হয়ে ওঠে। সেখানে বিশাল সেনানিবাস থাকা সত্ত্বেও পশ্চিম পাকিস্তানি সেনাদল হিসেবে ছিল শুধু ২০ বালুচ রেজিমেন্ট। দলটি এ সময়ে পশ্চিম পাকিস্তানে চলে যাওয়ার অপেক্ষায় ছিল। আমার ধারণা, সংকটের পূর্বে, অগ্রবর্তী দল হিসেবে সাতজন কর্মকর্তা ও ২০০ সদস্য পশ্চিম পাকিস্তানের উদ্দেশে যাত্রা করেছিল। খণ্ডিত ব্যাটালিয়নটি চট্টগ্রাম আগলে রাখা ও বন্দর চালু রাখার জন্য যথেষ্ট ছিল না। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিই যে কিছুটা শঠতার সাহায্য নেব এবং মজুমদারকে আমার সঙ্গে নিয়ে আসব।
এই জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ অভিযানের অংশ হিসেবে আমি কুমিল্লার উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করি। ব্রিগেডিয়ার আনসারিকে বলি, সে যেন গােলাবারুদ ও অন্য সরঞ্জামাদির মজুত দেখতে মেজর জেনারেল ইফতিখার জানজুয়া ও তার দলবলকে নিয়ে যায়। এ ছাড়া ৫৩ ফিল্ড রেজিমেন্টের কমান্ডার লে. কর্নেল মােহাম্মদ ইয়াকুবকে খবর পাঠাই যেন আমার ব্রিফিং শােনার জন্য ব্রিগেডিয়ার ইকবাল শফিকে সঙ্গে নিয়ে আসে। আমি তাদের পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে ব্রিফিং করি। পূর্বপরিকল্পনার অংশ হিসেবে, ব্রিগেডিয়ার শফি তার ব্রিগেডের একটি শক্তিশালী সেনাদল নিয়ে চট্টগ্রামের নিয়ন্ত্রণ নেবে। লে. কর্নেল ইয়াকুব মালিক তাঁর নিজের রেজিমেন্ট ও আশপাশের পশ্চিম পাকিস্তানি সেনাদের নিয়ে কুমিল্লা ও এর আশপাশের এলাকা নিয়ন্ত্রণে নেবে।
কুমিল্লায় আমার ব্রিফিংয়ে সংগত কারণেই আমি সন্তুষ্ট বােধ করি। পরে সদলবলে চট্টগ্রামের উদ্দেশে কুমিল্লা ত্যাগ করি। সেখানে পৌঁছার পর ব্রিগেডিয়ার মজুমদারকে বলি, তিনি যেন ব্রিগেডিয়ার আনসারিকে সঙ্গে নিয়ে এমভি ‘সােয়াত’ থেকে মালামাল খালাসের উদ্যোগ নেন। তাঁকে এও বলি, উপযুক্ত কমান্ডিং অফিসার না থাকায় জয়দেবপুরে সেকেন্ড ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। এ কারণে কর্মকর্তা ও সদস্যদের সঙ্গে কথা বলার জন্য, পাপা টাইগার' হিসেবে তাঁর আমার সঙ্গে ঢাকায় যাওয়া উচিত। আমার কথায় তিনি অনুপ্রাণিত হলেন এবং গুরুত্ব দিলেন। এরপর থেকে তার সঙ্গে আর কোনাে কিছু নিয়ে সমস্যা হয়নি। ঢাকায় ফেরার পর তাকে নিরাপত্তা হেফাজতে নেওয়া হয়। পরে সেখান। থেকে পাঠানাে হয় পশ্চিম পাকিস্তানে। এরপর প্রত্যাবাসনের আগ পর্যন্ত তিনি সেখানেই ছিলেন।
চট্টগ্রামের ব্রিফিং ছিল জটিল। ২০ বালুচের লে. কর্নেল ফাতেমিকে পূর্ণাঙ্গভাবে ব্রিফ করাটা ছিল খুবই জরুরি। কারণ, তার অধীনে ছিল পশ্চিম
পৃষ্ঠা: ১৭
পাকিস্তানি সেনারা, যাদের অভিযানে অংশগ্রহণ ছিল জরুরি। ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট সেন্টারের কর্নেল শিগ্রি ও লে. কর্নেল জানজুয়া বাঙালি সৈন্যদের অধিনায়কত্বে অসহায় ছিলেন। যা-ই হােক, তাঁদের নিজেদের এবং পশ্চিম পাকিস্তানি সহকর্মী ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তার জন্য প্রয়ােজনীয় তথ্য জানা দরকার ছিল। আমি ফাতেমির কাছে যাই এবং তাঁকেও বিস্তারিত ব্রিফ করি। কর্নেল শিগ্রির সঙ্গে আমার কয়েক মুহূর্ত কাটানাের সুযােগ হয়। খুব বুদ্ধিমান না হওয়ার কারণে সে আমার কথা শুনে হতবুদ্ধি হয়ে পড়ে। আমার কথার গুরুত্ব সে বুঝল কয়েক দিন পর, যখন ব্রিগেডিয়ার ইকবাল শফি তার সেনাদল নিয়ে চট্টগ্রাম যায় এবং নিয়ন্ত্রণে নেয়। শিগ্রি নিজেকে রক্ষা করতে পেরেছিল, কিন্তু জানজুয়া সৌভাগ্যবান। ছিলেন না। তাঁর উপ-অধিনায়ক মেজর (পরে জেনারেল ও বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি) জিয়াউর রহমান ব্যাটালিয়নের অন্য দুই পশ্চিম পাকিস্তানি কর্মকর্তাসহ তাঁকে হত্যার আয়ােজন করেন।
অন্যত্র নির্দেশ পাঠানাে সহজ ছিল। আমি কুমিল্লার দিকে রওনা হলে ফরমান গেলেন যশােরের দিকে এবং ১০৭ ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার দুররানিকে নির্দেশ পৌছে দিলেন। পরের দিন আমার রংপুর ও রাজশাহী আর ফরমানের সিলেট যাওয়ার কথা। কিন্তু যেকোনাে ধরনের সম্ভাব্য জরুরি। অবস্থা মােকাবিলার জন্য টিক্কা খান আমাদের ঢাকায় আটকে দেন। আমার পরিবর্তে কর্নেল সাদুল্লাহ খানকে [এম সাদুল্লাহ খান, পরে ব্রিগেডিয়ার, সিলেটে ব্রিগেড অধিনায়ক] রংপুর ও রাজশাহী পাঠানাে হয়। সাদুল্লাহ খান তাঁর দায়িত্ব পালন করলেন এবং ২৭ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের অধিনায়ক লে. কর্নেল শাফকাত বালুচকে তিনি রাজশাহীতে নামিয়ে দেন। ব্রিগেডিয়ার আলী এল ইদ্রুস [ব্রিগেডিয়ার আলী এল ইদ্রুস পূর্বাঞ্চল কমান্ডের চিফ অফ স্টাফ] সিলেটের দিকে উড়ে গেলেন এবং ৩২ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের অধিনায়ক লে. কর্নেল সরফরাজ মালিককে ব্রিফ করলেন। অপারেশন সার্চলাইটের জন্য কোনাে লিখিত আদেশ দেওয়া হয়নি। মৌখিক নির্দেশেই এর বাস্তবায়ন হয়। যা-ই হােক, আমার ব্যক্তিগত কপি আমার সংগ্রহে ছিল, যা পরিশিষ্ট হিসেবে সংযুক্ত করলাম (মূল বইয়ে পরিশিষ্টটি সংযুক্ত আছে, এই রচনার সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়নি। আদেশসমূহ গাইডলাইন হিসেবে দেওয়া হয়েছিল, আর সবকিছু ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল কমান্ডার ও তাদের উদ্যোগের ওপর। রাজশাহী ও যশাের সেক্টরের চুয়াডাঙ্গায় বড় ধরনের বিপর্যয় দেখা দেয়। সেখানকার কমান্ডাররা বুঝতে ব্যর্থ হন যে তাঁরা সহিংস পরিস্থিতি মােকাবিলা করছেন। আপাতদৃষ্টিতে তাঁদের মনে হয়েছিল, তাদের কাজ হবে ‘বেসামরিক কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করা। দুই বছর ধরে তাঁরা এমনটি
পৃষ্ঠা: ১৮
করতেই অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। যদিও এর পরিণামে অহেতুক প্রাণহানির ঘটনা ঘটে, দায়ী কর্মকর্তারা কেবল আগাম অবসরে গিয়ে এই হত্যাকাণ্ডের দায় এড়িয়ে যান।
প্রদেশের আটটি স্থায়ী এবং অস্থায়ী সেনানিবাসজুড়ে সৈন্যদের মােতায়েন করা হয়েছিল। সেনানিবাসগুলাে হলাে ঢাকা, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, সিলেট, যশাের, রাজশাহী, সৈয়দপুর ও রংপুর। এ ছাড়া ২ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ঢাকা থেকে কয়েক মাইল দূরে, জয়দেবপুরে অবস্থান করছিল। পূর্ব পাকিস্তানে যখন সমস্যা দানা বেঁধে উঠছিল, তখন প্রতিটি ব্রিগেডের সঙ্গে সংযুক্ত ইস্ট বেঙ্গল ব্যাটালিয়নগুলাে নিয়ে আমি চিন্তিত ছিলাম। ১ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ছিল যশােরে, ২ ইস্ট বেঙ্গল ছিল ঢাকার বাইরে, ৩ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ছিল রংপুরের কাছে সৈয়দপুরে, ৪ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ছিল কুমিল্লাতে, ৮ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ছিল চট্টগ্রামে এবং ১০ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট গড়ে তােলা হচ্ছিল ঢাকায়, আমার সদর দপ্তরের একেবারে কাছেই। কোনাে না কোনাে অজুহাতে আমি তাদের তাদের স্থায়ী অবস্থান থেকে কোম্পানি গ্রুপ ইত্যাদিতে বিভক্ত করে অন্যান্য জায়গায় সরিয়ে দিই। এ কারণেই তারা সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়ার শক্তি হারিয়ে ফেলে, যত দিন না তারা প্রকাশ্যে বিদ্রোহ করে ব্যাটালিয়ন হিসেবে পুনরায় একত্র হয়। এর ফলে আমরা মূল্যবান কিছু সময় পেয়েছিলাম, যা আমাদের জন্য ছিল খুব প্রয়ােজনীয়।
আমাদের পরিকল্পনার গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলাে ছিল :
ক. যেকোনাে অভ্যুত্থানকে সরাসরি বিদ্রোহ হিসেবে দেখা হবে এবং কঠোর হস্তে দমন করা হবে।
খ. সফলতা নিশ্চিত করার জন্য চমক এবং ধোকার গুরুত্ব অপরিসীম। আমরা প্রেসিডেন্টকে এই চাতুরীতে শরিক হতে ও সহায়তা করার জন্য প্রস্তাব করি।
গ. পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বাঙালি সৈন্য এবং পুলিশকে নিরস্ত্র করতে হবে। বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল বিদ্রোহীদের মধ্যে বিতরণ হওয়ার আগেই পিলখানায় ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস, রাজারবাগে রিজার্ভ পুলিশের অস্ত্রাগার এবং চট্টগ্রামের অস্ত্রাগারে থাকা ২০ হাজার রাইফেলের দখল নেওয়া।
ঘ. অপারেশনের শুরুতে সব ধরনের বহিঃ এবং আন্তযােগাযােগব্যবস্থা বন্ধ করে দিতে হবে। নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটি পুনরায় চালু করা হবে।
ঙ. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসগুলাে ঘিরে ফেলতে হবে এবং অস্ত্র ও চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের খুঁজে বের করতে হবে।
পৃষ্ঠা: ১৯
চ. শেখ মুজিবকে জীবিত ধরতে হবে। প্রায় পনেরাে জন আওয়ামী লীগ এবং কমিউনিস্ট পার্টির নেতার বাড়ি তল্লাশি করতে হবে এবং তাঁদের পাওয়া গেলে গ্রেপ্তার করা হবে।
আলাপ-আলােচনার মাধ্যমে সমাধানে পৌছানাের সব আশা শেষ হয়ে এল। আমাকে ১৯৭১ সালের ২৫ ও ২৬ মার্চের মধ্যরাতে ‘অপারেশন সার্চলাইট’ কার্যকর করার নির্দেশ দেওয়া হলাে। ২৫ মার্চ দুপুরের পরপরই ‘অগ্রসর হও’ সংকেতটি দেওয়া হলাে। এটা ছিল একটি গুরুতর সিদ্ধান্ত এবং দেশের জন্য আমার খুব খারাপ লাগছিল। দেশের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ দেশটিকে গৃহযুদ্ধে নিমজ্জিত করার সিদ্ধান্ত নিল, যার ফলাফল আগে থেকেই বােঝা যাচ্ছিল। ভারতের অভিজ্ঞ স্ট্র্যাটেজিস্ট সুব্রামনিয়াম এই সিদ্ধান্তকে আখ্যায়িত করেন পাকিস্তানকে ভাঙার জন্য ‘সহস্র বছরের মধ্যে একটি সুযােগ’ বলে। আমি আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিলাম এই ভেবে যে কত নির্লিপ্তভাবে এ রকম একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হলাে, একেবারে হালকা মেজাজে। দৃশ্যত প্রেসিডেন্ট পূর্ব পাকিস্তানকে আস্তাকুঁড়ে ফেলে দেওয়ার এবং একে এর নিজের পথ বেছে নিতে সিদ্ধান্ত নিলেন। তিনি শুধু তাঁর নিজের নিরাপত্তার কথাই ভেবেছিলেন। এ জন্য ২৫ মার্চ সন্ধ্যা সাতটার দিকে গােপনীয়তার আচ্ছাদনে তিনি ঢাকা ত্যাগ করলেন, যেটা সম্ভবত তাকে ছাড়া আর কাউকেই বােকা বানাতে পারেনি। আমি নিজেকে যতটা সম্ভব প্রফুল্ল আর স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করলাম।
প্রেসিডেন্ট চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ঢাকার রাস্তায় ব্যারিকেড এবং অবরােধ শুরু হয়। ইতিমধ্যেই সাধারণ অধিবাসীরা রাস্তায় অবরােধ তৈরির কৌশল আয়ত্ত করে ফেলেছে। যাহােক, সৈন্যরা ব্যারাকে প্রস্তুত হতে থাকল। স্বাভাবিক পদাতিক বাহিনী ছাড়াও পিটি ৭৬ ট্যাংকের একটি টুপকে সক্রিয় করা হয়। এ ছাড়া কঠিন লক্ষ্যবস্তুগুলাের জন্য আমাদের ১০৬ মিলিমিটার রিকয়েললেস রাইফেল প্রস্তুত ছিল। গােলন্দাজ বাহিনী ব্যবহারের সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়। ৩ কমান্ডাে ব্যাটালিয়নের লেফটেন্যান্ট কর্নেল জেড এ খান ৪০ জন সেনাসহ শেখ মুজিবুর রহমানকে জীবিত গ্রেপ্তার করার অভিযান সফলভাবে সম্পন্ন করতে প্রস্তুত ছিলেন। আমার কাছে অপেক্ষার ব্যাপারটা ছিল পীড়াদায়ক। স্বাভাবিকত্ব রক্ষার খাতিরে অভিযান শুরুর আগ পর্যন্ত আমি বাসাতেই অবস্থান করছিলাম। আমার হেডকোয়ার্টার পুরােপুরি সচল এবং কার্যকর রাখা হয়। প্রায় মধ্যরাতে কুমিল্লা থেকে ব্রিগেডিয়ার ইকবাল শফি টেলিফোন করলেন। তিনি আমাকে জানালেন, তাঁর সেনাদলটি চট্টগ্রাম যাত্রার জন্য প্রস্তুত। তবে তাঁর গােয়েন্দা জানিয়েছে যে চট্টগ্রাম যাওয়ার পথে ফেনীর
পৃষ্ঠা: ২০
কাছাকাছি দুটি কাঠের সেতু জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং এই পথে বড় বাধা সষ্টি করা হয়েছে। আমি তাকে বললাম, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তিনি। যেন তাঁর সেনাদলটি নিয়ে চট্টগ্রামের পথে রওনা দেন। শহরটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়া এবং বন্দরটি পুনরায় সরবরাহের জন্য চালু করা আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
২৫ ও ২৬ মার্চের মধ্যবর্তী রাতে লেফটেন্যান্ট কর্নেল জেড এ খান বেশি হতাহতের ঘটনা ছাড়াই শেখ মুজিবকে গ্রেপ্তার করতে সফল হন। শেখ মুজিব অক্ষত ছিলেন এবং তাঁকে নিরাপদে জিওসির বাসার কাছাকাছি একটি বালিকা বিদ্যালয়ে রাখা হয়। পাহারাদারদের সংখ্যা কমিয়ে আনার জন্য আমি তাকে কমান্ড হাউসের অতিথিকক্ষে সরিয়ে নিই। শেষ রাতে কিছু কঠিন লক্ষ্যবস্তুর ওপর ভারী অস্ত্র প্রয়ােগ করা হয়।
২৬ মার্চ সকালে খবর আসা শুরু হয়। ঢাকায় অপারেশন ভালাে হয়েছে। উভয় পক্ষে ১০ জনের কম হতাহতের বিনিময়ে পিলখানায় ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস এবং রাজারবাগে রিজার্ভ পুলিশকে নিরস্ত্র করা হয়েছে। যাহােক, গােলাগুলির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলাে থেকে শক্ত প্রতিরােধ হয়। এ অবস্থায় হতাহতের সংখ্যা কমাতে সৈন্যরা রিকয়েললেস রাইফেল এবং পিটি ৭৬ ট্যাংক ব্যবহার করে। এভাবে ঢাকায় নিয়ন্ত্রণ আনা হয় এবং সকালের মধ্যেই শহর শান্ত হয়ে যায়।
যশােরে ১ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের (বাঙালি) সদস্যরা সম্ভবত আগেই সতর্ক ছিল এবং কিছু গেলাগুলির পর তারা তাদের ভারী অস্ত্রশস্ত্রসহ সেনানিবাস ত্যাগ করে। অবশ্য ব্রিগেড কমান্ডার তার নিজের উদ্যোগে যে [অবাঙালি] কোম্পানিটি চুয়াডাঙ্গায় [চুয়াডাঙ্গা নয়, এটি ছিল কুষ্টিয়া] পাঠিয়েছিল, তা ভয়ানক বিপদে পড়ে। কোম্পানিটিকে হকচকিত করে। অতর্কিতে চারদিক থেকে বিদ্রোহী বাঙালি সৈন্যরা ঘিরে ফেলে। শেষ পর্যন্ত। তাদের বেশির ভাগই মারা যায়। শুধু অল্প কয়েকজন নিরাপদে যশাের শহরে পৌছাতে সক্ষম হয়েছিল। যশাের শহরও বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়, আর এয়ারপাের্ট এবং রানওয়ে তাদের গােলাগুলির আওতায় পড়ে। কিছু ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্য বেনাপােল দিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে যশােরের দিকে ১৫ মাইল অগ্রসর হয়েছিল।
সিলেটে লেফটেন্যান্ট কর্নেল সরফরাজ মালিকের অধীন ৩১ পাঞ্জাব পার্শ্ববর্তী পাহাড়গুলাে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বিমানবন্দরটি দখলে রাখতে পেরেছিল। খুলনায় কমান্ডিং অফিসার দৃঢ়তার সঙ্গে তাঁর দায়িত্ব পালন করেন এবং ভালােভাবেই কঠিন পরিস্থিতি মােকাবিলা করেন। রাজশাহীতে কমান্ডিং অফিসার কর্নেল শাফকাত বালুচ বিচারবুদ্ধিহীনতার পরিচয় দেন।
পৃষ্ঠা: ২১
তার বাহিনীতে যে শতকরা ২৫ শতাংশ বাঙালি রয়েছে, সেটা তিনি চিন্তায়ও নেননি। তাঁর নিজের দুর্ভাগ্য বয়ে আনতে বাঙালি একজন সেকেন্ড ইন কমান্ডের অধীনে তার ব্যাটালিয়নের অর্ধেক পাবনা অভিযানে পাঠান। এর ফলাফল দাঁড়াল এই যে তার ইউনিটের বাঙালি সৈন্যরা অস্ত্রসহ পালিয়ে গেল। শেষ পর্যন্ত ১৫০ বা এর কাছাকাছি সংখ্যার পাঞ্জাবি সৈন্যের মধ্যে ২০ জন বাদে প্রায় সবাইকে হত্যা করা হয়েছিল। এই ২০ জন রাজশাহীতে পালিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছিল। রাজশাহীতে বিদ্রোহীরা ক্যাম্প ঘিরে ফেলে। এমনকি বিমান ও মর্টারও মেশিনগানের গােলার আঘাতের সম্মুখীন হয়। রাজশাহীতে সৈন্য বৃদ্ধি করা খুব কঠিন হচ্ছিল, এমনকি হেলিকপ্টারের মাধ্যমেও সম্ভব হচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত শাফকাত বালুচকে অব্যাহতি দিতে আমি বাধ্য হই।
রংপুরে ব্রিগেডিয়ার (পরে মেজর জেনারেল) আবদুল্লাহ মালিক বিচক্ষণতার সঙ্গে কাজ করেন এবং মাথা ঠান্ডা রাখেন। তিনি লালমনিরহাট বিমানপােত দখল করার জন্য অভিযান পরিচালনার কাজ শুরু করেছিলেন। তিনি এখানকার প্রতিরােধ জয় করেন, যা পরবর্তী সময়ে উত্তরবঙ্গে সৈন্য বৃদ্ধিতে আমাদের সহায়তা করেছিল। পিটি ৭৬ ট্যাংকসজ্জিত ২৯ ক্যাভালরি ছিল একটি মিশ্র বাহিনী, যাতে প্রায় শতকরা ৫০ ভাগ ছিল বাঙালি। অবশিষ্ট ৫০ শতাংশকে আমরা দুর্বল করেছিলাম ঢাকায় এক টুপ ট্যাংক পাঠিয়ে। রংপুরে এটাই একমাত্র বড় ইউনিট ছিল। এর কমান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল (পরে লে. জেনারেল) সগির হুসেইন সাঈদ বিচক্ষণতার সঙ্গে কাজ করেন এবং এ ইউনিটের ৫০ শতাংশ বাঙালিকে কোনাে গােলাগুলি ছাড়াই নিরস্ত্র করতে সক্ষম হন। সৈয়দপুরে দুটি ব্যাটালিয়নকে অস্থায়ী বাসস্থানে রাখা হয়। সেখানে ফ্রন্টিয়ার ফোর্স ব্যাটালিয়ন পরিচালনা করতেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল (পরবর্তী সময়ে মেজর জেনারেল) হাকিম আরশাদ কোরেশী এবং ৩ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট পরিচালনা করতেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল (পরবর্তী সময়ে লেফটেন্যান্ট জেনারেল এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি) হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ [তথ্যটি সঠিক নয়, লেফটেন্যান্ট কর্নেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এ সময় পশ্চিম পাকিস্তানে অপর একটি ইউনিটের অধিনায়ক ছিলেন]। কিছু গােলা বিনিময়ের পর আর কোনাে প্রতিরােধ ছাড়াই বাঙালি ব্যাটালিয়ন অস্ত্রসহ ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে যায়।
কুমিল্লায় লেফটেন্যান্ট কর্নেল ইয়াকুব মালিক [৪ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধিনায়ক] সাহসের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখেন। ৪ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট উত্তরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সিলেট
পৃষ্ঠা: ২২
রােডে অবস্থান করছিল। সেকেন্ড ইন কমান্ড মেজর খালেদ মােশাররফ, একজন পূর্ব পাকিস্তানি, শােভনীয় আচরণ করলেন। যখন পরিস্থিতি সবার কাছে আর গােপন থাকল না, তখন তিনি তাঁর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মালিক থেকে ইউনিটের নেতৃত্ব নিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। লেফটেন্যান্ট কর্নেল মালিকসহ আরও দুজন পশ্চিম পাকিস্তানি অফিসারকে নিরাপত্তা হেফাজতে নেওয়া হয়। খালেদ মােশাররফ শেষ পর্যন্ত তাঁদের আগরতলায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দিয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনীকে অনুরােধ করেন যে তাঁদের যেন যুদ্ধবন্দী হিসেবে যথাযথ মর্যাদা দেওয়া হয় এবং যুদ্ধ শেষে নিরাপদে পাকিস্তানে ফেরত দেওয়া হয়। যুদ্ধ শেষে লেফটেন্যান্ট কর্নেল মালিক খালেদ মােশাররফের যথেষ্ট প্রশংসা করেন।
চট্টগ্রাম থেকে আসা সংবাদ ছিল হতাশ হওয়ার মতাে। আমি ইতিমধ্যেই উল্লেখ করেছি যে জায়গাটি আমাদের টিকে থাকার জন্য ছিল। খুবই গুরুত্বপূর্ণ—আমাদের জন্য বন্দর খােলা রাখা এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলের সঙ্গে যােগাযােগ রক্ষার জন্য চট্টগ্রাম ছিল অপরিহার্য। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০ বালুচ অগ্রসর হয় এবং কিছু গােলাগুলি বিনিময়ের পর মজুত গােলাবারুদসহ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টাল সেন্টারের অস্ত্রাগার দখল করে নেয়। তারপর তারা শহরের দিকে অগ্রসর হয়, কিন্তু যখন তারা রেলক্রসিংয়ের কাছে পৌছায় তখন তীব্র বাধার সম্মুখীন হয়। ইতিমধ্যে। মেজর জিয়াউর রহমান দুজন পশ্চিম পাকিস্তানি অফিসারসহ তাঁর অধিনায়ককে হত্যা করেন। তিনি একটি প্রতিরক্ষামূলক অবস্থান নেন এবং সেনানিবাসকে শহর থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেন। এর ফলে শহর অনেকাংশ। থেকে যায় বিদ্রোহীদের হাতে।
নৌবাহিনী পরিচালনা করছিলেন কমােডর মুমতাজ। তিনি মারাত্মক সমস্যার সম্মুখীন হন। নেভাল বেজে প্রায় শতকরা ৫০ ভাগ বাঙালি ছিলেন, যাঁদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন গুরুত্বপূর্ণ পদে। তাদের তখনাে নিরস্ত্র করা হয়নি এবং শহরের বাইরে এয়ারপাের্টে যাওয়ার পথে একটি ক্যাম্পে বাস করছিলেন তাঁরা। নেভাল কমিউনিকেশন সেন্টার ছিল সার্কিট হাউস থেকে অনতিদূরে শহরের টাইগারপাস এলাকায়। এটা স্থায়ী ছিল বলে এটিকে নড়ানাে সম্ভব হয়নি। এ ব্রিগেডিয়ার ইকবাল শফির কলামের সঙ্গে আমাদের যােগাযােগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তার অবস্থান জানা ছিল না আমাদের। তারা ফেনী ও চট্টগ্রামের মাঝামাঝি কোনাে জায়গায় ছিল। ধ্বংসপ্রাপ্ত সেতু এবং বিদ্রোহী সৈন্যদের কারণে তাদের থামতে হয়েছিল।
পৃষ্ঠা: ২৩
২৬ মার্চ সব বিবরণ শােনার পর আমি ব্যক্তিগতভাবে পরিস্থিতি মূল্যায়ন এবং যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য চট্টগ্রাম পরিদর্শনের সিদ্ধান্ত নিই। একটি এমআই৮ হেলিকপ্টারে করে চট্টগ্রাম রওনা হই, যদিও এটির অনেক আগেই রক্ষণাবেক্ষণের দরকার ছিল। পার্শ্ববর্তী পাহাড় থেকে আমাদের ওপর গুলি করা হলেও আমরা নিরাপদেই ২০ বালুচের লাইনে পৌছে যাই। আমাদের ভাগ্য ভালাে যে আমরা আক্রান্ত হইনি। লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফাতেমি পরিস্থিতি সম্পর্কে যা জানতেন, তা আমাকে খুলে বললেন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলসের বিদ্রোহীরা এয়ারপাের্টটি দখলে নেয় এবং এটি তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে। পার্শ্ববর্তী পাহাড় থেকে টাইগারপাসে অবস্থিত নেভাল কমিউনিকেশন সেন্টারে আক্রমণ করা হয়। মূল বাহিনী থেকে এটি বিচ্ছিন্নভাবে আলাদা একটি জায়গায় হওয়ায় তারা মারাত্মক সমস্যায় ছিল। ৩১ পাঞ্জাব কোম্পানির সদস্যরা, যারা এমভি সােয়াত থেকে গােলাবারুদ খালাস করতে সহযােগিতা করেছিল, তারা গােলাবারুদ এবং জাহাজের সুরক্ষায় ডকে অবস্থান করছিল। পুরাে চট্টগ্রাম শহরই ছিল আওয়ামী লীগ স্বেচ্ছাসেবকদের হাতে। সৌভাগ্যবশত মুজাহিদ ও আনসারদের জন্য পুলিশ লাইনে রাখা ২০ হাজার অস্ত্র বিতরণের কথা কেউই ভাবেনি। চট্টগ্রামে ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলসের উইং হেডকোয়ার্টার্স বিদ্রোহের সিদ্ধান্ত নেয়। তারা তাদের অফিসের ওপর বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়েছিল এবং মরিচা, বাংকারসহ শক্তিশালী প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা নিয়েছিল।
এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতি অনুধাবন করে আমি ২৭ মার্চ রাতে চট্টগ্রাম ফিরে এসে নিজে সরাসরি কমান্ড হাতে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। আমি যখন আমার হেলিকপ্টারে করে ফিরে আসছিলাম, তখন আমি আমাদের হেলিকপ্টারের পাইলট মেজর (পরে ব্রিগেডিয়ার) লিয়াকত ইসরার বুখারিকে নির্দেশ দিয়েছিলাম ইকবাল শফির কলামকে খোঁজার জন্য কুমিল্লা সড়কের বরাবর হেলিকপ্টার চালাতে। আমরা যখন ব্রিগেড কলামকে খোজার জন্য মেঘের আচ্ছাদন ভেদ করে মুহূর্তের জন্য একটু নিচে নেমে আসি, শিলাবৃষ্টির মতাে মেশিনগানের গােলা দিয়ে আমাদের স্বাগত জানানাে হলাে। মেশিনগানের গােলা হেলিকপ্টারের গায়ে লাগে। স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে পাইলট হেলিকপ্টারকে ওপরে উঠিয়ে আবার মেঘের মধ্যে নিয়ে গেলেন। আমি দ্রুতই ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণ করি। আমাদের ওয়্যারলেস সিস্টেম আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছিল এবং কাজ করছিল না। কিন্তু একটুর জন্য ফুয়েল ট্যাংক রক্ষা পায়। বুলেটের দ্বিতীয় আঘাত পেছনের পাইপে লেগেছিল, কিন্তু নিয়ন্ত্রণ তার (control wire) অক্ষত ছিল। কিছুটা
পৃষ্ঠা: ২৪
সন্ত্রস্ত হলেও ক্

Address


Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Shadhinotar Chatonai Houk Agamir Prerona-Joy Bangla/Heroic Late Md Nazmul posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Shortcuts

  • Address
  • Alerts
  • Videos
  • Claim ownership or report listing
  • Want your business to be the top-listed Media Company?

Share