12/10/2023
একজন ফ্রিল্যান্সার-এর ভবিষ্যৎ কেমন? দেখা যায়, কয়েক বছর ফ্রিল্যান্সিং করে অন্য পেশায় নিয়োজিত হয়ে যায়। কেন?
ব্যাক্তিগতভাবে আমি গত ২ বছর সরাসরি ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ক ট্রেনিং এবং স্টুডেন্ট ম্যানেজমেন্ট নিয়ে কাজ করি। প্রতি মাসে অন্তত নতুন এবং পুরাতন মিলে ৭/৮০০ শিক্ষার্থী ম্যানেজ করতে হয়। তাদের কাছ থেকে দেখা এবং অভিজ্ঞতা থেকে আমি যা ভাবি বা যে বুঝি তাই শেয়ার করছি--

ফ্রিল্যান্সিং এর সাথে যেহেতু দেশের বাজার ব্যবস্থার কোনো প্রকার সম্পৃক্ততা নেই, তাই এই পেশাটি অনেকটা সেইফ এবং এখান থেকে অনেক আয় করা যায়, যদি আপনার অভিজ্ঞতা এবং কাজের স্কিল সেরকম হয় থাকে।
একেকজন অভিজ্ঞ ফ্রিল্যান্সার প্রতিমাসে কম হলেও ২ হাজার ডলার থেকে শুরু করে ৪/৫ হাজার ডলার আয় করেন। ক্ষেত্র বিশেষে তা বেশি-কমও হতে পারে। এখন কথা হলো প্রতি মাসে যদি ২/৩ হাজার ডলার উপার্জন হয়, তাহলে কি দরকার শুধু শুধু ফ্রিল্যান্সিং বাদ দিয়ে অন্যের কোম্পানীতে জব করা বা নিজে কোম্পানী খোলা।
এই ধরনের ফ্রিল্যান্সাররা একটা সময় এতো কাজের অর্ডার পান যে নিজে একা করতে পারেন না। কারন তাদের প্রোফাইলগুলো ক্লায়েন্টদের কাছে কাংখিত বস্তু হয়ে উঠে। প্রতিদিন দেখা যায় ৫/৭/১০ টার মতো কাজ ক্যান্সেল করতে হয়। এভাবে মাসে হয়তো দেখা যায় ১০০ এর বেশী কাজ বাতিল করতে হয়। এই ধরনের পরিস্থিতি যখন নিয়মিত হতে থাকে তখনই তাদের মনে হয় একটা ছোটো-খাটো টিম করে কাজ করলে এই আয়গুলো যোগ হবে। তাই তারা অনেক সময় নিজে কাজ বাদ দিয়ে অধিনস্থ ফ্রিল্যান্সার নিয়োগ করেন।
আবার অনেকে কাজ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়েন। নিয়মিত কম্পিউটারে ১২/১৫ ঘন্টা কাজ করে একটা সময় এসে চোখ, মেরুদন্ডে সমস্যায় ভোগেন। তাই দেখা যায় ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার ৫/৭ বা ১০ বছর পর কাজ বন্ধ করে অন্য কোনো কাজ বা ব্যবসায় নেমে পড়েন। তবে তারা যাই করেন না কেনো ফিক্সড কিছু ক্লায়েন্ট এর কাজ নিয়মিত করেন যাতে একটা নির্দিষ্ট পরিমান টাকা তার একাউন্টে প্রবেশ করে।
ভবিষ্যতের কথা যদি বলি ফ্রিল্যান্সিং এর ভবিষ্যত খুবই ভালো। বর্তমানে এশিয়ান দেশগুলোতে ফ্রিল্যান্সিং এর জনপ্রিয়তা আকাশ্চুম্বি যদিও তা আমেরিকা, ইউরোপ এবং ওশেনিয়ার দেশগুলোতে বহুকাল ধরে চলে আসতেছে। আমরা জানি যে এশিয়ান দেশগুলো বিশেষ করে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, ভিয়েতনাম এ কাজের মজুরি উন্নত দেশগুলোর তুলনায় অনেক কম। ফ্রিল্যান্সিং মার্কেট এর ৯০ শতাংশ কাজই যেহেতু উন্নতদেশগুলোর উপর নির্ভর, তাই কাজ কাজের স্কিল যদি ভালো থাকে, তাহলে কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
দেশের ভিতরে যতোই গন্ডগোল আর গোলযোগ থাকুক না কেনো, ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ করতে কোনো সমস্যা নেই। শুধু আপনার ইন্টারনেট কানেকশন থাকলেই চলবে।
যদি আপনি আপনার দক্ষতা আপ-টু-ডেট রাখেন, তাহলে ফ্রিল্যান্সিংয়ে কাজ পেতে আপনাকে তেমন বেগ পেতে হবেনা। আপনার স্কিল মোটামুটি মানের হলে প্রতি মাসে ৫০০ ডলার আয় করা যায়, আর স্কিল আরো ভালো হলে ১০০০ ডলার নিয়মিতভাবে আয় করা তেমন কিছু না।
আমি এমন অনেককেই চিনি যারা দেশের শীর্ষস্থানীয় ভার্সিটি থেকে অনার্স, মাস্টার্স করে পরবর্তীতে গ্রাফিক ডিজাইন বা ওয়েব ডিজাইন বা এ্যাপস ডেভেলপমেন্ট নিয়ে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করছেন।
তবে আপনাকে হতে হবে আত্মবিশ্বাস, দক্ষ, নিয়মানুবর্তী আর পরিশ্রমী। তাহলেই আপনি ফ্রিল্যান্সার হিসেবে একটি সফল ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে পারবেন।