Dropout's Canvas

  • Home
  • Dropout's Canvas

Dropout's Canvas Welcome to DROPOUT'S CANVAS. We will collect valuable writings and repost with credit in our page.

15/12/2024

নিজের অজান্তেই আমি মায়ার ঠোঁটে আলিঙ্গন করি। আমি কখনো ভাবতে পারিনি আজকের এই দিনটি এবং এই মুহূর্তে আমি এমন কিছু একটা করবো। মায়ার চোখ দুটি নিভু নিভু করছে। মায়া এটার জন্য প্রস্তুত ছিল না। মায়ার কথা কি বলবো আমি নিজেই বুঝতে পারিনি মায়ার ঠোঁট এভাবে স্পর্শ করবো।

মায়া আমার জাস্ট ফ্রেন্ড। জাস্ট ফ্রেন্ড থেকে বেস্টফ্রেন্ড। নাহ জাস্ট ফ্রেন্ড বললে ভুল হবে। এই মুহূর্ত পর্যন্ত সম্ভবত জাস্ট ফ্রেন্ড ছিল। কিন্তু এখন অনুভব করছি আমি মায়াকে প্রচন্ড ভালোবাসি। মায়াকে ছাড়া আমি ভালো থাকতে পারবো না। মায়ার সঙ্গ আমার বেশ প্রয়োজন।

মায়া আমার বুকে মাথা গুজে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করছে। ওর কান্নার ঢেউ আমার বুকে আঘাত দিচ্ছে। আমার নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। ওকে হারানোর বড্ড ভয় হচ্ছে কেনো জানি।

আমাকে ছেড়ে দিয়ে শুধু বললো ‘যাই’।

আমি ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছি। এক নজরে মায়ার চলে যাওয়া দেখছিলাম। যতদূর পর্যন্ত ওকে দেখা যায় ততদূর পর্যন্ত এক নজরে তাকিয়ে ছিলাম। এই প্রথম কাউকে হারিয়ে ফেলার যন্ত্রণা আমার বুকে তোলপাড় করে দিচ্ছে। বুকের তীব্র ব্যথা আমাকে দম আটকে যাচ্ছে।

কি হচ্ছে আমার সাথে? আমার এমন লাগছে কেন? এত দিন তো ওর প্রতি ভালোবাসা জন্মায় নি। একসাথে তিনটা বছর পড়াশোনা করলাম।ভার্সিটিতে আসার পরেই মায়া ছিল আমার বেস্টফ্রেন্ড। ছেলে-মেয়ে কখনো কখনো জাস্ট ফ্রেন্ড হতে পারে না। কেউ না কেউ অপর পাশের মানুষটার প্রেমে পড়বেই।

রাতে মায়াকে ফোন দিলাম। ওর ফোন বন্ধ। রাত দেড়টা বাজে প্রায়। সেই মুহূর্তে আবারো কল করলাম। কিন্তু মায়ার ফোন সুইচড অফ। আমি সাতপাঁচ না ভেবে বাইক নিয়ে বের হলাম ওর বাসার উদ্দেশ্য।

আগামীকাল ওর গায়ে হলুদ। বাড়ি সাজসজ্জায় রাঙ্গিয়ে তুলছে। আমার কেনো জানি প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে। আমি আগে কেনো অনুভব করলাম না মায়াকে ভালোবাসি। মায়া,মায়া বলে কয়েকটা চিৎকার দিলাম। মায়া বেলকনিতে এসে দেখে আমি নিচে দাঁড়িয়ে আছি। মায়া হাতের ইশারা দিলে বললো ’আসছি’।

নিচে এসে জানতে চাইলো...

- এত রাতে এখানে কেনো?

- তোরে দেখতে ইচ্ছা করছিলো,তাই চলে আসলাম।

- পাগল নাকি? মানুষ দেখলে কি বলবে। আর পাত্রপক্ষের মানুষ আমার বাসায় আছে। এখন চলে যা, কাল আমার গায়ে হলুদ।

- মায়া শোন প্লিজ।

- দেখ রাত দুইটা বাজে,প্লিজ এমন করিস না আবিদ,কাল তোর সাথে কথা বলবো।

মায়া এক দৌড়ে বাসার ভেতর চলে গেলো। আমি স্থির ভাবে দাঁড়িয়ে আছি। নাটক সিনেমার মত আমার জীবনেও এমন ঘটবে আমি কখনো ভাবতে পারিনি।

বাসায় চলে আসার পরে চোখে ঘুম নেই। আজ বিকেলে আমার হাতে বিয়ের কার্ডটি যখন দেয় তখন মায়ার চোখ দুটি পানিতে চিক চিক করছিলো। আর ঠিক সেই মুহূর্তে আমার বুকের ভেতর ঝড় বেয়ে গেলো। ওর চোখের পানি ঠোঁট গড়িয়ে পরছিলো। আমি ওর কাঁপা ঠোঁটে আমার ঠোঁট দিয়ে স্পর্শ করার পরে আমাকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।

মায়ার গায়ে হলুদের সময় দূর থেকে দেখছিলাম। ওর চোখ দুটি যেন আমার দিকে। অপলক চাহনিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি নিজেকে ধরে রাখতে না পেরে সেই সময় চলে আসলাম। কিছুক্ষণ পরে মায়া আমাকে কল দেয়.....

- কই তুই? তোকে কোথাও দেখছি না যে।

- আমি চলে আসছি।

- তুই যেখানেই থাকিস না কেনো ,আমার বাসায় আয়। তোর সাথে আমার কথা আছে।

- আর কখনো তোর সামনে আমি যেতে পারবনারে। তাহলে নিজেকে সামলাতে পারব না।

- ভুলভাল বকিস না প্লিজ। তুই দশ মিনিটের মাঝে আমার সামনে আসবি।

আমি মায়ার উদ্দেশ্যে ছুটে চললাম। দুর্বার গতিতে ছুটে চললাম। আমি ওর সামনে গিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি। মায়া আমার হাতটি ধরে এক সাইডে নিয়ে যায়।

- আবিদ এই মূহুর্তে এসব করা কি ঠিক?

- দেখ আমি এতদিন বুঝিনি তোকে আমি এতটা ভালোবেসে ফেলেছি। আমি এতদিন ভাবতাম তুই আমার শুধু বেস্ট ফ্রেন্ড। কিন্তু নিজের অজান্তেই কখন কিভাবে তোকে আমি ভালোবেসে ফেলেছি আমার জানা নেই। কাল যখন তুই আমাকে তোর বিয়ের কার্ড দিস,তখনই আমার ভেতরটা খালি খালি অনুভব করলাম। তোকে হারিয়ে ফেলার ভয় ঢুকে গেলো। এতদিন খুনসুটি, মারামারি, রাগারাগি, ঝগড়া আবার দিন শেষে সব কিছু ভুলে গিয়ে হেসে দিয়ে সব কিছু ভুলে ফ্রেন্ডশিপ কন্টিনিউ রাখা হত। তোর বিয়ের কথা শুনে আমার মনে হলো কেউ তোকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিচ্ছে।

- আমার বিয়ে ঠিক হওয়ার আগে তো তুই বুঝলি না। আমি তো তোকে ভালোবাসতাম। তোকে কতবার বুঝানোর চেষ্টা করেছি তুই বুঝিস নি। তোর কি এটা বুঝা উচিৎ ছিলা না,কেন আমি তোকে অন্য মেয়েদের সাথে মিশতে দিতাম না,তোকে রিলেশনে যেতে দিতাম না।

- আমি তখন বুঝিনিরে মায়া। প্লিজ তুই কিছু একটা কর।

- আমার হাতে এখন কিছুই করার নেই। তোর হাতে যথেষ্ট সময় ছিলো,কিন্তু তুই কোনো গুরুত্ব দিস নি।

- তখন আমি বুঝিনি তোকে এতটা ভালোবাসি। এই শোন না চল আমরা পালিয়ে যাই।

- দেখ ছোট মানুষের মত কথা বলিস না। এখন পাগলামি করার সময় নয়। আর তাছাড়া ফ্যামিলিকে আঘাত দিয়ে আমি কিছু করতে পারবো না। ফ্যামিলিকে কষ্ট দিয়ে আরেকজনের হতে পারব না।

- আমি যে কষ্ট পাবো, সেটা তোর কাছে কষ্ট না?

- তোকে ছাড়া আমি অন্য কারো সাথে সারাজীবন কাটিয়ে দিব এর চাইতে বড় কষ্ট বোধহয় নেই। তোকে তো আমি ভাল বাসতাম। তোকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতাম। এতদিন ভেবে বসেছিলাম তুই হয়তো আমাকে ভালোবাসার কথা বলবি। তা আর হলো কই।তবুও মেনে নিতে হচ্ছে।

আমি আর কিছুই বললাম না। আমার গলা যেনো পাকিয়ে যাচ্ছে। করুন দৃষ্টিতে মায়ার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। ছোট একটা হাসি দিয়ে মায়াকে বলে আসলাম। "তুই হয়তো আমার ভাগ্য নেই,যদি ভাগ্যে লেখা থাকতি তাহলে আগে কেনো বুঝলাম না তোকে আমি ভালোবাসি। ঠিক আছে আমি মেনে নিলাম।"

মায়াকে এই কথাগুলো বলেছিলাম ঠিকই আবার বুকের ভেতরটা তোলপাড় করে তুললো। আর মায়া তো ঠিকই বললো, আমি তো ওর ভালোবাসার গুরুত্ব দেইনি। আর তাছাড়া পরিবারকে কাঁদিয়ে মায়াকে আমার করা সম্ভব না।

আজ মায়ার বিয়ে। ভেবেছিলাম শেষবারের মত ওকে বধুবেসে দেখবো। কিন্তু সাহস পেলাম না। ওই মুহূর্তে মায়াকে দেখলে আমি সহ্য করতে পারবো না। ফোনটা সুইচড অফ করে স্লিপিং পিল খেয়ে সারাদিন ঘুমালাম। আমার ভেতর বাচ্চাসুলভ আচরণ চলে আসলো। নাহলে কেউ এভাবে ঘুমের ঔষধ নেয়? কিন্তু আমি যে কোনো ভাবেই মেনে নিতে পারছি না মায়া আমার থেকে চলে যাচ্ছে। ঘুমের মধ্যেও প্রচন্ডরকম বুকে ব্যথা অনুভব করলাম।

ঘুমের মধ্যে সন্ধ্যায় কারো হাতের স্পর্শ অনুভব করলাম। আমার কপালে হাত বুলিয়ে ছোট ছোট করে মায়ার কন্ঠ আমার কানে আসছে। ঘুমের নেশায় চোখের পাতা যেনো মেলছিলো না।

শুধু মায়ার বলা কথা গুলো আমি শুনতে পাচ্ছি

” এভাবে অভিমান করলে হয় পাগল? দেখো আমি তোমার কাছে আসছি। তোমার জন্য বিয়ে ভেঙ্গে দিয়েছি। তুমি তো কিছুই করতে পারলে না। আমি মেয়ে হয়ে তোমার কাছে ছুটে আসলাম। একবার তাকিয়ে দেখো না আমি তোমার কাছে।"

আমি মায়ার হাতটা শক্ত করে ধরে আমার বুকের সাথে মিলিয়ে নিলাম।

(সমাপ্ত)

#মায়ার_গল্প
Md. Nazmul Huda .

10/12/2024

আমার প্রাক্তনের মেয়েটা পেছন থেকে এসে বললো...
"আমার মাম্মাম তোমাকে ডাকছে আঙ্কেল।"

-কে তোমার মাম্মাম,মামুনি?

- ওই যে বসা।

আমি আস্তে আস্তে হেঁটে গেলাম। গিয়ে পেছনে দাঁড়ালাম।

-আমাকে ডেকেছেন?

পেছন ঘুরতেই কিছুটা অবাক হলাম। এতো মায়া। মায়াকে দেখে আমি পিছু হটতে গেলাম। মায়া বলে উঠলো...

- দাঁড়াও।

- কিছু বলবে?

-হ্যা, আমাকে কিছুক্ষণ সময় দেওয়া যাবে? তাহলে কিছু কথা বলতাম।

- হ্যা বলো কি বলতে চাও?

- তোমাকে আমি তিনটা বছর ধরে খুঁজে বেড়াচ্ছি। তুমি সেই যে এই শহর ছেড়ে চলে গেলে, তোমাকে কোথাও খুঁজে পেলাম না। তুমি কোথায় চলে গিয়েছিলে?

- যে শহরে আমার কোন অস্তিত্ব নাই। যে শহরে আমার জন্য দেয়ালে দেয়ালে বেদনার ছাপ লেগে আছে। সেই শহরে আমি কি করে থাকি?

- তোমার কি কখনো জানতে ইচ্ছে হয়নি, আমি কেমন আছি, কোথায় আছি, কিভাবে আছি?

- আমার মন তো অনেক কিছু জানতে চায়, তবুও নিজেকে সংযত রেখে নিজের মতো করে চলতে শিখেছি।

- তুমি অনেক পাল্টে গেছো আবিদ।

- পাল্টে গেছি এটা সত্য। যেদিন নতুন করে জীবন ফিরে পেয়েছি সেদিন থেকেই নিজেকে নতুন করে করে গড়ে তোলার চেষ্টা করছি।

- তোমার ফোন নম্বরটা কি আমাকে দেওয়া যাবে? সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। আমার ফিরতে হবে।

- তোমার নাম্বারটা আমাকে দাও, যখন আমার সময় হবে তখন আমি তোমাকে কল দিব।

বিগত চার বছর পরে মায়ার সাথে আমার দেখা। মায়া আমার জীবন থেকে হঠাৎ করেই হারিয়ে গেল। বিনা অজুহাতে বিনা কারণেই। আমি মায়াকে আর খুঁজে পেলাম না। কয়েক দিন পরে আমি জানতে পারি মায়ার বিয়ে হয়ে গিয়েছে। তখন আমি অনেক ভেঙ্গে পড়েছিলাম। সুইসাইড করতে গিয়ে কোনো ক্রমে আমি বেঁচে ফিরি। আমাকে ছেড়ে যাওয়ার কারণটা যদি মায়া আমাকে বলতো, তাহলে আমার এত কষ্ট লাগতো না। কিন্তু না বলেই আমার জীবন থেকে মায়া চলে গেল। এই কষ্ট আমার বুকের ভেতর চেপে রাখতে রাখতে পাথরের মত হয়ে গিয়েছি।

আমি যখন ভার্সিটিতে পড়াশোনা করতাম। সেই ভার্সিটিতেই মায়ার সাথে আমার পরিচয় হয়েছিল। মায়া ছিল আমার এক ব্যাচ জুনিয়র। কিন্তু আমাদের বাসা পাশাপাশি হওয়ার কারণে ভালো একটা সখ্যতা তৈরি হয়। যে সখ্যতা থেকে তৈরি হয় ভালোবাসা। খুব বেশি না, আমাদের সম্পর্ক ছিল মাত্র দুই বছরের।

বলা নেই কওয়া নেই, হুট করে মায়া গায়েব। ভার্চুয়ালের সমস্ত জায়গা থেকে আমাকে ব্লক। এবং হুট করেই মায়ার বিয়ে হয়ে যায়।

আমি বড্ড অভিমান নিয়ে সেই শহর থেকে আমি চলে আসি। যে শহরে আমার ভালোবাসা নেই, যে শহরে ভালোবাসার স্মৃতি জড়িয়ে আছে, সেই শহরে আমি মৃত ভালোবাসা জড়িয়ে কি করে থাকবো? আমি পড়ালেখাটা পর্যন্ত ছেড়ে দেই। দিব্যি পাগলের মত হয়ে গিয়েছিলাম। লেখাপড়ায় মন বসলো না। কিছুই ভালো লাগত না। শেষ পর্যায়ে বুঝলাম আমার দ্বারা আর পড়ালেখা হবে না। আমি নিজের চেষ্টায় একটা ব্যবসা করতে শুরু করি।

আজ হঠাৎ করেই মায়ার মেয়েটি আসে। সে আমাকে ডেকে নিয়ে যায় মায়ার কাছে৷ মেয়েটি হয়েছে একেবারে ওর মায়ের মত। চোখ মুখে মায়ার ছাপ লেগে আছে।

আমি প্রথমে ভেবেছিলাম মায়ার সাথে কথা বলবো না। ওর থেকে দূরে চলে যাব , কিন্তু মায়া আমার সাথে কথা বলতে চাইলো।

আমি জানি না এখানে কেন মায়া এসেছে? হতে পারে আমার খোঁজে বা আমাকে দেখতে পেয়ে ওর মেয়েটিকে আমার কাছে পাঠিয়েছে।

গভীর রাতে মায়াকে ভাবতে ভাবতে আমার ইচ্ছা জাগলো মায়াকে একটা ফোন করি, অন্তত এতোটুকু জানতে চাই যে কেনো আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল?

ফোন দিতেই মায়া ফোনটা রিসিভ করল। আমি কোন কিছু বলার আগেই মায়া বলে উঠলো...

- আবিদ আমি তোমার ফোনটার অপেক্ষায় ছিলাম।

- হঠাৎ করে আমার সামনে কেন আসলে? কেনই বা আমার সাথে যোগাযোগ করতে চাইলে?

- যে অভিমান নিয়ে তুমি আমাকে এখনো ভুল বুঝে আছো সেই অভিমানটা আমি ভেঙ্গে দিতে চাই। তুমি অন্তত আমাকে কিছুটা সময় দাও।

- দেখো আমি নতুন করে কোন কিছু জানতে চাই না। শুধু বলো কেন হঠাৎ করে আমার জীবন থেকে হারিয়ে গেলে?

- বাধ্য হয়ে আমার বিয়েটা করতে হয়।

- ব্যাস! আমি আর কিছু জানতে চাই না। বাধ্য হয়ে বিয়ে করেছো এটাই আমার জানতে বাকি ছিল।

-আর কিছু জানতে চাইবে না?

- না। নতুন করে আর কোন কিছুই জানতে চাচ্ছি না , তবে হঠাৎ করে তুমি আমার সামনে না আসলেও পারতে।

- তোমার সামনে আসাটা কি আমার খুবই অপরাধ হয়ে গিয়েছে?

- অপরাধ হয়েছে কিনা আমি জানিনা তবে তোমাকে দেখলে আমি না কোনভাবেই নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারিনা। সত্য কথা বলতে আমার এখনো মনে হয় তুমি আমার সেই মায়া হয়েই আছো।

-বিগত তিন বছর পরে আমি অস্ট্রেলিয়া থেকে বাংলাদেশে ফিরেছি। আজ চার দিন হল দেশে এসে তোমাকে খুঁজতে আমি তোমার শহরে এসেছি।

- বেশ ভালো করেছো। তুমি এখান থেকে চলে যাও। তাহলে আমি খুশি হব।

- হ্যাঁ আমি কাল চলে যাব তার আগে কি তুমি আরেকটাবার আমার সামনে আসতে পারবে?

- আমি আর চাইনা তোমার সামনে যেতে।

- প্লিজ আবিদ! প্লিজ একটা বার তুমি আমার সামনে আসো আমি তোমাকে কিছু কথা বলতে চাই।

-আচ্ছা ঠিক আছে কখন এবং কোথায় আসতে হবে?

- আগামীকাল দুপুরে রেলস্টেশনে চলে এসো।

পরের দিন আমি মায়ার সাথে দেখা করতে রেলস্টেশনে যাই। এক কর্ণারে মায়া ওর মেয়েটির হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে। সম্ভবত আমার অপেক্ষা করছে। দূর থেকে লক্ষ্য করলাম মায়া এক নজরে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমাকে দেখেই যেন ওর অপেক্ষার প্রহর টা শেষ হল।

মায়ার পাশে গিয়ে বসলাম। আমার পাশে এসে একটা হাত ধরে বলল...

-আমাকে তুমি ক্ষমা করে দিও। তোমার সাথে যেদিন আমার শেষ দেখা হয় সেদিনই আমার কাছ থেকে আমার বাবা ফোনটা নিয়ে নেয়। এবং সেদিন রাতেই আমাকে বিয়ে দিয়ে দেয় এক প্রভাবশালীর ছেলের সাথে।

আমি কি করবো তখন বুঝতে পারছিলাম না। আমি রাগে ক্ষোভে সেদিন অনেকগুলো ঘুমের ওষুধ খেয়ে ফেলি। এরপর আমাকে নিয়ে যাওয়া হয় হসপিটালে। প্রায় দুই সপ্তাহ আমি হসপিটালে ভর্তি ছিলাম। তারপর আমি তোমার সাথে অনেক যোগাযোগ করার চেষ্টা করি। কিন্তু আমি পারিনি। তুমি কষ্ট পাবা ভেবে পরে আর যোগাযোগ করতে চাইনি।

- ব্যাস,হয়েছে তোমার কথা?

- "আমাকে বলতে দাও আবিদ। আমার বিয়ের তিন মাস পরেই ওর বাবার সাথে আমার অস্ট্রেলিয়া চলে যেতে হয়। ছয় মাসের মাথায় আমি জানতে পারি,আমি প্রেগন্যান্ট। এটা শুনে আমার যতটা খুশি হওয়ার কথা ছিল তার চেয়ে বেশি কষ্ট পেলাম। কারণ কি জানো? কারণ হলো ওর বাবা অস্ট্রেলিয়ার মেয়েদের সাথে মেলামেশা করতো। পার্টি করত, মদের ক্লাবে যেত। আমি ভেবেছিলাম আমার এই ছোট্ট মেয়েটি পৃথিবীতে আসলে বোধহয় ভালো হয়ে যাবে। তা আর হলো না উল্টো আরো খারাপ হতে শুরু করল। আমার মেয়ে নায়শা এই পৃথিবীতে আসার এক বছর পরে আমাদের সেপারেশন হয়ে যায়, আইমিন ডিভোর্স।

এরপরে আমি আমার মতো করে চলতে শুরু করলাম। অস্ট্রেলিয়াতে ছোট্ট একটা জব করি। আমি এবং আমার মেয়েকে নিয়ে নতুন করে বাঁচতে শিখলাম। তোমার ফোন নম্বর আমি অনেক খুঁজেছি। তোমার সাথে যোগাযোগ করতে চেয়ছি অনেকবার, কিন্তু তোমাকে আর খুঁজে পাইনি।

এক মাসের ছুটিতে আমি বাংলাদেশে এসেছি। আমার পরিবারের কাছে একদিনও থাকিনি বাবা মায়ের কাছেও দেখা করতে যাইনি। দেশে এসে তোমার খোঁজে বেরিয়ে পড়েছি। তাইতো কাল তোমাকে খুঁজে পেলাম। এক মাসের ছুটি নিয়ে দেশে এসেছিলাম, কিছুদিন পরে আমি আবার চলে যাবো অস্ট্রেলিয়াতে। আমি শুধু তোমার কাছে ক্ষমা চাইতে এসেছি, তুমি কি আমাকে ক্ষমা করে দিবে? "

এসব বলে মায়া আমার দুটি হাত ধরে অঝোরে কান্নার শুরু করলো। আমি মায়ার হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে বললাম...

- আমি তো তোমাকে অনেক আগেই ক্ষমা করে দিয়েছি। ভালোবাসার মানুষের উপরে কি রাগ অভিমান করে থাকা যায়? আমি যদি তোমাকে ক্ষমা না করি তাহলে তো তোমার উপরে আমার অভিশাপ দেওয়া হবে। কখনো চাইনি তুমি খারাপ থাকো। আমি চাই তুমি সব সময় ভালো থাকো।

কিছুক্ষণ পরেই ট্রেন চলে আসলো। মায়া ট্রেনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তখন আমার খুব ইচ্ছে করছিল মায়ার হাতটি ধরে বলি...

"প্লিজ মায়া তুমি আমার হয়ে থেকে যাও। যা হওয়ার হয়েছে। চলোনা আমরা আবার নতুন করে শুরু করি। "

কিন্তু পারলাম না। যদি কখনো মায়া আমার জীবনে ফিরে আসে আমি সেদিন মায়াকে সাদরে গ্রহণ করে নিব। আমি যে মায়াকে বড্ড ভালোবাসি।

(সমাপ্ত)

#এদিন_সেদিন
Md. Nazmul Huda

10/12/2024

কালো পাজেরোটা আমার টং দোকানের সামনে এসে দাঁড়ালো। দরজা খুলে ভেতর থেকে বেরিয়ে এলেন সুদর্শন একজন মানুষ। বয়স ৫০- ৫৫ হবে। চৈত্র মাসের এমন গরমের দিনেও লোকটা গায়ে কোট পরে আছেন। চোখে পরেছেন বেগুনি রঙের সান গ্লাস। গোঁফ এবং মাথার চুল মেহেদী দিয়ে লাল ফেলেছেন। হাতে একটা ইংরেজি পত্রিকা। ভদ্রলোক সরাসরি আমার দোকানের খালি চেয়ারে এসে বসলেন।

আমার দিকে তাকিয়ে ভদ্রলোক গম্ভীর কণ্ঠে বললেন, " তোমার কাছে বেনসন সিগারেট আছে?"
- জ্বি স্যার, আছে।
- দুধ, চিনি ছাড়া এক কাপ কড়া লিকার দিতে পারবে?
- অবশ্যই স্যার, চিনি কিছুটা লিকারে দেয়া আছে। তবে কড়া হবে।

ভদ্রলোক চোখের ইশারায় চা দিতে বলে পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করলেন। ভদ্রলোকের পকেটে সিগারেটের প্যাকেট থাকা সত্বেও কেন সিগারেট চাইলেন বুঝলাম না। কড়া লিকারে চুমুক দিয়েই সিগারেট ধরালেন। সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে বললেন, " তোমার নাম রফিক , না?"

- জ্বি স্যার, আমার নাম রফিক।

-আর টিকটকে তোমার আইডির নাম মাইকেল রফিক রোজারিও , না?

উত্তর না দিয়ে লাজুক একটা হাসি দিলাম।

এই রকম স্যুটেট বুটেট একজন ভদ্রলোক আমার আসল নাম, আমার টিকটক আইডির নাম জানে ভাবতেই আনন্দে আমার চোখে পানি এসে যাওয়ার উপক্রম হলো।

-" এই চা দোকান এবং টিকটক করা ছাড়া আর কী কী করো?"

মৃদু একটা হাসি দিয়ে বললাম," স্যার, টিকটক তো করি আনন্দের জন্য। আর রুটি-রুজির জন্য তো এই চা দোকানটা করছি। তবে স্যার এই টং দোকান আর বেশিদিন করবো না। আপনাদের দোয়ায় চৌমুহনীতে ড্রাইভিং শিখতেছি। শেখা এখন প্রায় শেষের দিকে। সামনের মাসে ড্রাইভিং টেস্ট। লাইসেন্সটা পেয়ে গেলেই চা দোকান ছেড়ে দিবো"।

ভদ্রলোক আরেক কাপ লিকারের অর্ডার করলেন। এই সময়টাতে এমনিতেই আমার দোকানে কাস্টমার একটু কম থাকে। আজ একদম দোকান ফাঁকা। তায় ভদ্রলোকের সাথে কথা বলতেও ভালো লাগছে। ভদ্রলোকও নিশ্চয় আমার ভিডিও দেখেন। গরীব একজন টিকটকার চা দোকানীর বড় লোক ভক্ত কার না ভালো লাগবে?

ভদ্রলোক চায়ের দাম দিয়ে উঠে যেতে যেতে বললেন, " আমি - ব্যারিস্টার ইনতিখাব হাসান। ইফতির বাবা। তোমার সাথে কিছু দরকারি কথাবার্তা ছিল কিন্তু আমাকে এখন উঠতে হচ্ছে। আবার দেখা করবো আমি ক'দিন পর"।

আমি নামকরা কোন টিকটিক সেলিব্রিটি নই। ইফতি ছাড়া অন্য কোন ভক্তের সাথে আমার যোগাযোগ নেই। আমার টিকটক আইডিটা খুলেছি বছর খানেক হয়েছে। আমার ভিডিওগুলোর যে খুব একটা ভিউ হয় তাও কিন্তু না। ইফতি কেন জানি আমার ভিডিওর জন্য অন্য রকম পাগল। ইফতির পাগলামিটা শুরুতে টিকটকের গন্ডিতে সীমাবদ্ধ থাকলেও অল্প সময়ের মধ্যে সেটা প্রেমে রুপ নিয়েছে।

ইফতির সাথে আমার পরিচয়টা হয়েছে কিছুটা নাটকীয়ভাবে। একদিন দুপুরে ওয়াসার মোড়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করছি। হুট করে আমার সামনে একটা সাদা রঙের গাড়ি এসে থামলো। গাড়ি থেকে নেমে এলো স্কুল ড্রেস পরা অপরুপ সুন্দরী এক কিশোরী। উত্তেজনায় মেয়েটার গলা কাঁপছে। মুখ দিয়ে যেন কথাই বেরুতে চাইছে না।

- এক্সিউজ মি, আমি ইফতি। ইফতি হাসান। চিটাগং গ্রামার স্কুলে ক্লাস নাইনে পড়ছি। আমি আপনাকে চিনি। আপনার সাথে একটু কথা বলতে পারি?

- হুম, বলেন।

- রফিক ভাই, আমি আপনার টিকটক ভিডিওগুলোর নিয়মিত একজন দর্শক। আপনার ভিডিওগুলো জাস্ট অসাম। ভিডিওর শেষে আপনি একটা হাসি দেন না? বিশ্বাস করেন ভাইয়া, আমি পুরাই ফিদা। আমি আপনার একজন ফ্যান। ক্রেজি ফ্যান বলতে পারেন। যেদিন আপনার নতুন ভিডিও আসে সেদিন আমার কাছে ঈদের মতো লাগে। আপনার একটা ভিডিও আছে না " অপরাধী মাইয়া" ভিডিওটা আমি হাজার বারের উপর দেখেছি, বিলিভ মি।

- ধন্যবাদ, ধন্যবাদ।
- যদি মাইন্ড না করেন তাহলে একটা জিনিস চাইবো।
- কী?
- আপনার ফোন নাম্বারটা দিবেন?

প্রশ্নটা শুনে কিছুটা অপ্রস্তুত হলাম। একটা সুন্দরী মেয়ে এই রকম রাস্তায় দাঁড়িয়ে আমার ফোন নাম্বার চাইবে কোন দিন স্বপ্নেও ভাবিনি। এমন সুন্দরী একটা মেয়ে ভক্তকে না করি কেমনে?ফোন নাম্বারটা দিয়ে দিলাম।

শুরু হলো আমাদের কথাবার্তা। রাতে ঘন্টার পর ঘন্টা আমরা কথা বলছি। ইফতি সম্পর্কে অনেক কিছুই জানলাম ধীরে ধীরে। তার ঘরের কথা, স্কুলের কথা, ভালো লাগার কথা কিছুই বলতে সে বাকী রাখেনি। স্কুলে কতজন ছেলে তার উপর ক্রাশ খেয়েছে, কতজন প্রপোজ করেছে সব বললো আমাকে।

ফোনে সারাক্ষণ সে বকবক করতো আমি শুধু শুনতাম। ঘন্টায় ঘন্টায় আমার খবরাখবর নিতে লাগলো। দুপুরে খেয়েছি কি-না? রাতে ভাত কী দিয়ে খেলাম? আমি না খেলে সেও খাবে না- এই ধরনের আহ্লাদ দেখাতে লাগলো।

প্রথম প্রথম ইফতির সাথে মেলামেশা করার সময় আমার মনের মধ্যে হীনমন্যতা কাজ করতো। কোথায় আমি একজন এস.এস.সি পাশ গরীব চা -ওয়ালা আর কোথায় ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ুয়া বড়লোকের মেয়ে ইফতি। চট্টগ্রাম শহরে যাদের দুইটা বিল্ডিং আছে। তিনটা গাড়ি আছে। যাদের ঘরের প্রায় প্রতিটা রুমেই এ.সি, অন্যদিকে আমার ঘরে এ.সি তো দুরের কথা ইলেকট্রিক মিটারও নেই। এমন বড়লোকের সুন্দরী মেয়ের সাথে কি আমার যায়?

কিন্তু মেয়েটার চোখে আমার প্রতি গভীর মমতা দেখতাম। আমার মতো গরীব চা ওয়ালাকে সে নিঃশর্তে ভালোবাসছে। তার অমায়িক আচরণে আমার হীনমন্যতা ধীরে ধীরে কাটতে লাগলো।
কিছু দিনের মধ্যেই আমিও পুরাদস্তুর ইফতির প্রেমে মজে গেলাম।

আমার জন্য মেয়েটার পাগলামি কী পরিমাণ সেটা কেউ না দেখলে বিশ্বাস করতে পারবে না।
একবার আমার ফোনের ব্যাটারি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় দুই দিন তার সাথে যোগাযোগ বন্ধ ছিল।
পরের দিন জানতে পারলাম ইফতি হাত টাত কে*টে ফেলেছে।

ইফতির বাবা - মা ইফতিকে আমার সাথে মেলামেশা না করার জন্য অনেক বুঝিয়েছে। এবং বরাবরই তাঁরা ব্যর্থ হয়েছেন। বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান ইফতি, বেশি শাসন ও করতে পারেন না। মেয়েটা অভিমানী এবং জেদি। পরিবারের সাথে অনেকটা বিদ্রোহ করেই আমার সাথে সম্পর্ক চালিয়ে যাচ্ছে।

দিন দিন আমার প্রতি ইফতির প্রেমটা মাতলামির স্তরে চলে যাচ্ছে। কখনো কখনো স্কুল ফাঁকি দিয়ে বলা নেই কওয়া নেই আমার দোকানে এসে বলে, " এখনই দোকান বন্ধ করো, আমার সাথে চলো"।

আমি রাগ দেখাতে পারি না। তার সাথে বেরিয়ে যাই। বস্তুত তার সাথে রাগ দেখিয়েও লাভ নেই। প্রচন্ড ঘাড় ত্যাঁড়া একটা মেয়ে কিছুই বুঝতে চায় না।

ইদানীং তার মধ্যে একটা ভয় কাজ করছে। সেটা হচ্ছে আমাকে হারানোর ভয়। ইনিয়ে বিনিয়ে আমাকে সেটা বুঝাতে চায়। আমি বুঝেও না বুঝার ভান করে থাকি।

ইফতির সাথে প্রেম হবার পর আমি আর টিকটকে আগের মতো ভিডিও দিতে পারছি না। চা দোকান সামলানো, ড্রাইভিং শেখা, ইফতিকে সময় দেয়া এগুলোতে ব্যস্ত হয়ে গেলাম। ভবিষ্যতের জন্য টাকা পয়সাও জমাতে শুরু করলাম।

আমরা দুজন মিলে ভবিষ্যতের সুনির্দিষ্ট কিছু পরিকল্পনা করে রেখেছি। প্রথমত; ইফতির বাবা -মা যদি আমাদের সম্পর্ক মেনে নিয়ে আমাদের বিয়ে দিয়ে দেন তাহলে তো আর কোন কথা নেই।
আর যদি সম্পর্কটা না মানেন তাহলে আমরা দুজন পালিয়ে যাবো। ততোদিনে আমার ড্রাইভিংটা ও শেখা হয়ে যাবে। একটা চাকরিবাকরি নিশ্চয় জুটে যাবে।

ইফতি ও যেহেতু ইংলিশ মিডিয়ামে পড়াশোনা করছে নিশ্চয় সেও কিছু একটা করতে পারবে। ছোট খাটো একটা ঘর ভাড়া করে আমাদের দাম্পত্য জীবনের সূচনা করবো। আমাদের সংসারে টাকা পয়সার অভাব থাকলেও ভালোবাসার অভাব থাকবে না। ইফতির পরীক্ষা শেষ হওয়া মাত্রই আমরা আমাদের একশান নিয়ে ফেলবো। যা হবার হবে।

গতকাল রাত দুইটায় ইফতি হঠাৎ ফোন দিয়ে বললো," আমি মামার সাথে আমাদের সম্পর্কের ব্যাপারে কথা বলেছি। মামা আমার কথা মন দিয়ে শুনেছেন। মামা তোমার সাথে কথা বলতে চান। মামা সম্ভবত আমার আব্বু আম্মুর সাথে এই ব্যাপারে আলাপ করেছেন। মামা আমাকে গ্রিন সিগনাল দিয়েছেন। মামার সিদ্ধান্তই আমাদের ঘরের চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত। আমি ঠিকানা দিচ্ছি। আগামীকাল বিকেল ৪টায় তুমি মামার বাসায় চলে যাবে"।

ইফতির মামা পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকতা। তিন দিনের ছুটিতে এখন চট্টগ্রাম আছেন।

ইফতির মামার বাসায় যখন পৌঁছলাম তখন বিকেল ৪টা। ড্রয়িং রুমে তিনি একা বসে আছেন। অত্যন্ত বিনয়ের সাথে আমাকে বসতে বললেন।

- "রফিক মিয়া, চা খাবে না-কি কফি?"

বললাম," না মামা, কিছুই খাবো না"।

- আমার একমাত্র ভাগ্নীর হবু জামাইকে এভাবে খালি মুখে যেতে দিবো নাকি? আমার আপা মানে ইফতির আম্মু আমাকে আগেও তোমাদের রিলেশনের কথা বলেছিল। তখন আমি বিষয়টা হেসে উড়িয়ে দিয়েছিলাম। গতকাল ইফতি আমাকে বিস্তারিত সব কিছু বলেছে। এখন বুঝতে পারছি বিষয়টা সিরিয়াস। চলো চা খেতে খেতে তোমাদের বিয়ে নিয়ে আমার পরিকল্পনাটা বলছি।

চায়ে চুমুক দিয়ে ইফতির মামা লম্বা বক্তৃতা দিলেন," শোন রফিক। ইফতি আমাদের কলিজার টুকরো একমাত্র ভাগ্নী। ইফতির বাবা -মা'র বিয়ের দশ বছরের মাথায় ইফতির জন্ম। পরে আর কোন সন্তান হয়নি তাঁদের। বুঝতেই পারছো আমাদের সবার কাছে ইফতি কতটুকু প্রিয়।

আমি যতটুকু বুঝতে পেরেছি তোমরা দুজন দুজনকে ছাড়া বাঁচবে না। আমরাও আমাদের একমাত্র ভাগ্নীকে হারাতে চাই না। আমি ইফতির বাবা- মা'র সাথে এ ব্যাপারে কথা বলেছি। এবং আমরা ইনস্ট্যান্ট সিদ্ধান্ত নিয়েছি আজ সন্ধ্যার মধ্যেই তোমাদের বিয়ে দিয়ে দিবো। তবে বিয়েটা হবে একদম ঘরোয়াভাবে। বছর দুয়েক পরে ঢাকঢোল পিটিয়ে বিয়ের অনুষ্ঠান করবো। তুমি রাজি আছো তো?"

ইফতির মামার কথাগুলো শুনেই আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি। ডুকরে কেঁদে উঠলাম।

পুলিশ অফিসার মামা ফোনে মুহুর্তের মধ্যেই বিয়ের বন্দোবস্ত করতে লাগলেন। ইফতির বাবা আমাকে নেয়ার জন্য গাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন।

আমার নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে ইফতির পুলিশ অফিসার মামা খুলশী থানা থেকে দুই গাড়ি পুলিশও আনিয়েছেন। গাড়িতে উঠে বসলাম। আমার সামনেও পুলিশের গাড়ি পেছনেও পুলিশের গাড়ি। নিজেকে এখন ভি.আই.পি জামাই মনে হচ্ছে। এখনো তাদের জামাই'ই হয়নি এর মধ্যেই আমার নিরাপত্তা নিয়ে তারা চিন্তিত! আমার লজ্জা ও লাগছে আবার ভালোও লাগছে। বড় লোকের এলাহী সব কান্ড কারখানা!

আমার দু-চোখে এখন ইফতিকে নিয়ে স্বপ্ন। আমরা ঠিক করেছিলাম আমাদের প্রথম সন্তান ছেলে হলে নাম রাখবো ফাহিম বিন রফিক, আর মেয়ে হলে রাখবো ফাহিমা বিনতে রফিক। স্বপ্ন দেখেছিলাম প্রথম সন্তান ছেলে হলে তাকে বানাবো ইঞ্জিনিয়ার, আর মেয়ে হলে ডাক্তার।

এতো তাড়াতাড়ি আমাদের স্বপ্ন পূরণ হয়ে যাবে কোন দিন কল্পনাও করিনি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, ইফতির বাবা- মা তাদের একমাত্র মেয়ের ভালোবাসার মানুষকে কখনোই ফেলে দিবেন না। কিছুটা বকাঝকা দিয়ে শেষমেশ আমাদের ঘরে তুলে নেবেন। আমি তো অযোগ্য ছেলে না। মেট্রিক পাশ করেছি, ড্রাইভিং জানি, সেক্ষেত্রে আমার হবু শ্বশুর তাঁর তিন জন ড্রাইভারের একজনকে বিদায় করে আমাকে ও নিয়োগ দিতে পারেন। জামাই কাম ড্রাইভার, মন্দ কী?

কিন্তু এখন মনে হচ্ছে হবু শ্বশুর আমাকে ড্রাইভার নয়, আমাকে তাঁর বিশাল সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকার বানিয়ে ফেলছেন। হবু শ্বশুরের প্রতি আমার শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা মূহুর্তের মধ্যেই বহুগুণ বেড়ে গেলো।

আমাদের গাড়ি এখন জি.ই.সি মোড়ে আছে। পুলিশের সতর্ক দৃষ্টি আমার উপর। শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে পুলিশ ভাইয়েরা আমাকে নিয়ে যাচ্ছে শ্বশুরালয়ে।

এই মূহুর্তে ইফতির কেমন লাগছে জানতে তাকে অনেকবার ফোন দিলাম। কিন্তু বারবার মোবাইল বন্ধ পাচ্ছি। মনে হয় আমাকে সারপ্রাইজ দেয়ার জন্য সে ফোন বন্ধ করে রেখেছে। বড্ড পাজি মেয়েটা।

আমার হবু শ্বশুরকে অন্য দিনের তুলনায় আজ হয়তো একটু বেশিই গম্ভীর দেখাবে। হয়তো উনার মন সাংঘাতিক রকমের খারাপ থাকবে। একমাত্র আদুরে মেয়ের বিয়ে বলে কথা। হবু শ্বাশুড়ি মা নতুন জামাইর জন্য ভালো মন্দ রান্না বান্না নিয়ে ব্যাস্ত থাকবেন। নতুন শাড়ি পরে ইফতিও নিশ্চয় এতোক্ষণে আমার অপেক্ষায় বারান্দায় পায়চারি করছে।

রাস্তায় এখন বিশাল জ্যাম। আমার চরম বিরক্ত লাগছে। শালার শ্বশুর বাড়ির রাস্তাটা যেন শেষ'ই হচ্ছে না!!

# টিকটকারের স্বপ্ন
# Md Faisal Arifin

10/12/2024

আমি পৃথিবীর সবচেয়ে সুদর্শন পুরুষ। আমার চেয়ে অল্প একটু কম সুন্দর হয়ে দ্বিতীয় সুদর্শনের তালিকায় আছেন আফ্রিকা মহাদেশের 'রুয়ান্ডা' দেশের রাস্ট্রপতি। উনার নাম 'পল কাগামে'। ছয় ফুট দুই ইঞ্চি উচ্চতার কাগামে নাকের উপর চশমা পরিধান করলেও আমি চোখে ভালো দেখার কারণে চশমা পরতে হয় না।
যেদিন থেকে বুঝতে পেরেছি আমি এত সুদর্শন একজন পুরুষ, তখন থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি আগে বাংলাদেশের রাস্ট্রপতি হবো, তারপর বিয়ে করব। তার আগে নয়। আমার চেয়ে কম সুদর্শন হয়েও পল কাগামে রাস্ট্রপতি। তার চেয়ে আমি কোনো অংশে কম নই। শুধু নাকের উপর চশমা পরা বাকি। রাস্ট্রপতি হওয়ার জন্য চশমা পরতেও রাজী আছি।

সুদর্শন হওয়ার কারণে আমাকে কম ঝামেলা পোহাতে হয় না। বিশেষ করে উঠতি বয়সের তরুণীরা প্রায়ই বিরক্ত করে। গতকাল এক মেয়ে এসে তো মহা ঝামেলা শুরু করে দিয়েছে। রেলস্টেশনে বসে বাদাম খাচ্ছি। অমনি মেয়েটা এসে আমার সামনে দাঁড়িয়ে গেল। মেয়েটাকে অসুন্দর বলব না। পৃথিবীর সকল মেয়েই আমার কাছে অপরূপ সৌন্দর্যের মনে হয়। যে সংসারে মেয়ে নেই, সেই সংসার যেন ফুল ছাড়া ফুলের বাগান।
মেয়েটিকে একনাগারে তাকিয়ে থাকতে দেখে আমিই বললাম,
"আপনি কি আমাকে কিছু বলতে চান?"
মেয়েটি যেন আকাশ থেকে মাত্র নিচে পতিত হলো। বড়ো বড়ো চোখ করে বলল,
"তুমি আমাকে চিনতে পারছ না শ্রাবণ? আমি লাভলী। প্রাইমারী স্কুলে পড়ার সময় সামসুন্নাহার ম্যাডামের কাছে আমরা একই ব্যাচে মাস তিনেক প্রাইভেট পড়েছিলাম। এবার চিনতে পেরেছো?"

আমি সুদর্শন হলেও স্মৃতিশক্তি ততোটা প্রখর নয়। সৃষ্টিকর্তা একজন মানুষকে সবকিছু দেন না। প্রাইমারী স্কুলে থাকতে কোন কোন শিক্ষক শিক্ষিকার কাছে পড়েছি, কোথায় আমার সাথে কোন মেয়ে তিন মাস পড়েছিল, এটা মনে করতে হলে আইনস্টাইনের কাছে স্মৃতি ও বুদ্ধি ধার করা ছাড়া উপায় নেই। পরক্ষণেই আইনস্টাইন যেন কানের কাছে ফিসফিস করে আমাকে একটি বুদ্ধি দিলো। সেই বুদ্ধিটাই মেয়েটির কাছে প্রয়োগ করলাম। মুচকি হাসি দিয়ে বললাম,
"আসলে চার মাস আগে আমি বেখেয়ালে পথ চলতে গিয়ে বৈদ্যুতিক খুঁটির সাথে জোরে মাথার ঠুস লেগেছিল। রক্ত বের হয়েছে, আমাকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। আমি সুস্থ হলেও পুরোনো অনেক স্মৃতি ভুলে গেছি। এজন্য হয়তো মনে করতে পারছি না। আপনি যেহেতু বলছেন, তাহলে হয়তো ঠিকই আমরা একসাথে পড়েছিলাম। কিন্তু স্মৃতি হারিয়ে ফেলাতে মনে করতে পারছি না।"

বুঝলাম না মেয়েটা মুখ ভেংচি দিয়ে চলে গেল কেন! আইনস্টাইনের বুদ্ধি কাজে লেগেছে ভেবে মনে মনে আমি খুশি। দশ টাকার বাদাম মনে হয় বিশটা দিয়েছে। দুইটা বাদাম এক টাকা। এজন্যই বাদামের খোসাসহ খাচ্ছি। মাটির একটা ঘ্রাণ যেন লেগে আছে বাদামে। খোসাসহ খাওয়াতে আমি আশেপাশে অপরিষ্কার করছি না। একজন সুদর্শন পুরুষ হয়ে আশেপাশে বাদামের খোসা ফেলে নোংরা করাটা অবশ্যই বেমানান।

রেলগাড়ি আসার পর নিজের আসন গ্রহণ করলাম। আমার মাঝে মধ্যেই হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে অজানায়। আজ আমার হারিয়ে যাওয়ার দিন। কর্ণফুলি লোকাল ট্রেণ প্রায় প্রতিটি রেলস্টেশনে থামে। যেদিন হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে, সেদিন রেলগাড়িতে চড়ে অচেনা কোনো এক রেলস্টেশনে নেমে যাই। সারাদিন ঘুরে ফিরে সন্ধ্যার পর ফিরে আসি। এই হারিয়ে যাওয়া এবং নতুন একটি জায়গা ও নতুন মানুষদের দেখার মাঝে এক অন্যরকম সুখ খুঁজে পাই।
হঠাৎ খেয়াল হলো, পাশের সিটের এক নারী আমার দিকে তাকিয়ে আছে। সুদর্শন পুরুষের দিকে তাকিয়ে থাকাটা দোষের কিছু না। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে তিনি আমার গালের দিকে তাকিয়ে আছেন। আমি কিছু কল্পনা করে যখন মুচকি হাসছিলাম, হয়তো আমার গালের টোলের দিকে উনার চোখ পড়েছে। একে তো সুদর্শন, তার উপর আবার গালে টোল। কলকাতার 'দিদি নাম্বার ওয়ান' অনুষ্ঠানে একবার ছোট্ট এক মেয়ে নিজের গালের টোলকে 'বিউটি স্পট'' বলে আখ্যায়িত করেছিল। আমার বিউটি স্পটের দিকে নারীর তাকিয়ে থাকাটা আমাকে বিব্রত করছে। জানালা দিয়ে মুখ বের করে দৃশ্য দেখছি। কিছুক্ষণের মধ্যেই ভৈরব নদী পাড়ি দিবে ট্রেণ। আমি পকেট থেকে মোবাইল বের করলাম নদী ও নৌকার ছবি তুলব ভেবে। রেলব্রীজের উপর দিয়ে ট্রেণ যাওয়ার সময় গতি কিছুটা কমে যায়। আমি দুইটা তিনটা ছবি তোলার পর খেয়াল করলাম আমার হাতে আর মোবাইল নেই। রেলব্রীজে থাকা মোবাইল চোর ছোঁ মেরে আমার মোবাইল নিয়ে গেল। আমি সাময়িক সময়ের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেলাম। দূরে তাকিয়ে দেখি মোবাইল চোর দাঁত কেলিয়ে হাসে। মাত্র সাত মাস আগে মোবাইলটি যাত্রাবাড়ি ফুটপাত থেকে কিনেছিলাম।
ফুটপাতে মোবাইল বিক্রি দেখে আমি এই মোবাইলটা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখছিলাম। তেমন পছন্দ হয়নি, ফুটপাতে কী আর ভালো মোবাইল পাওয়া যাবে? দুই জায়গায় গ্লাস ফেটে গেছে। মোবাইল রেখে আসার সময় আর আমাকে আসতে দেয় না। আমাকে নাকি একটা দাম হলেও বলতে হবে। তারপর আসতে দিবে। কী আজব দেশে বসবাস করি! আমিও কম যাই না। দাম বললাম, পাঁচশত টাকা। হায় হায়, লোকটি বলল টাকা দেন।
পাঁচশ টাকায় কেনা মোবাইল সাত মাস পর চোরে নিয়ে গেছে, এতে এত দুঃখ করে লাভ নেই। সুদর্শন হলেও আমি ধনী নই। আবারও যাত্রাবাড়ি যেতে হবে একটা মোবাইলের জন্য।

হঠাৎ পাশের সিটে থাকা নারী বলে উঠল,
"আমার বমি পাচ্ছে। আমাকে কি একটু জানালার পাশে বসতে দিবেন?"
অনিচ্ছা থাকার পরও উঠতে হলো। নয়তো দেখা গেল আমার উপরেই অঝরে বজ্রসহ বৃষ্টি হবে। জানালার পাশের সিট ছেড়ে উঠতে হলো তার চেয়ে বড়ো দুঃখ এই নারী তাহলে এতক্ষণ আমার বিউটি স্পটের দিকে তাকিয়ে থাকেনি। জানালার পাশের সিট দখলের জন্য ফন্দি এঁটেছে। এই যে তিনি দিব্যি বসে আছে, কোনো বমি নেই। বাতাসে চুল উড়িয়ে মনের সুখে আয়েশ করে বসেছে। একজন সুদর্শন ভবিষ্যত রাস্ট্রপতির মর্ম তিনি বুঝতে পারেননি।

ছোটো বোন শরীরে পানি ছিটিয়ে দেওয়াতে লাফিয়ে উঠলাম বিছানায়। ছোটো বোন বলল,
"মা তোমাকে আধা ঘণ্টা ধরে ডাকছে। মরার মতো ঘুমালে বাজার করবে কে? দুপুরে খেতে হবে না?"
আমার সাথে কেন এমন হয় বুঝি না। এমন মজার স্বপ্নে কেউ পানি ছিটায়? উফপ রাস্ট্রপতি একবার হয়ে যেতাম তারপর নাহয় পানি ছিটিয়ে ঘুম ভেঙে দিতো।
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে খেয়াল করলাম আজ একটু বেশি কালো লাগছে। দুইটা ব্রণ নতুন গজিয়ে উঠে গরম তেলে ভাজা শিঙারার মতো উঁকি দিচ্ছে। স্নো কিনে এনেছিলাম যাতে একটু কম কালো মনে হয়। খোঁচা খোঁচা দাঁড়ির ফাঁক ফোকরে স্নোর অস্তিত্ব বুঝা যায়। মুখ ধুয়ে রওনা দিলাম বাজারের দিকে।
তোমাদের রাস্ট্রপতি কি বাজার করতে বাজারে যায়?
ছোটো বাচ্চারা গান ধরেছে, "কালিয়া রে কালিয়া, কোথায় যাস চলিয়া।"
আমিও একদিন সুদর্শন রাস্ট্রপতি হবো। সেদিন থেকে তোদের গানই বন্ধ করে দেব। দেশে তখন কালিয়া নামক কোনো গান কাউকে গাইতে দেব না, এই আমি বলে দিলাম।

সুদর্শন রাস্ট্রপতি
ওমর ফারুক শ্রাবণ

10/12/2024

-আপনি কি রায়হান সাহেব বলছেন?
-জ্বি
-চিফ মিনিস্টার আপনাকে মিনিস্টার হিসেবে শপথ নেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। আজ সন্ধ্যা সাতটায় প্রেসিডেন্ট ভবনে শপথ। দয়া করে ঠিক ছয়টার মধ্যে উপস্থিত থাকবেন।
রায়হান ফোনটা কেটে দিলো। সোফায় বসে ভাবতে লাগল এই সকালবেলায় কে তার সাথে মশকরা শুরু করেছে? হয়তো কোন বন্ধু-বান্ধব হবে?
যাই হোক, এসব ভাববার সময় এখন তার নেই । সে একটা উপন্যাস লেখায় হাত দিয়েছে, তার মনপ্রান পুরো ডুবে আছে উপন্যাসে!
লেখার টেবিলে গিয়ে বসলো রায়হান । এমন সময় তার ছোট মেয়ে দৌড়ে এসে বলল -বাবা, তোমার নাম না টিভিতে দেখাচ্ছে!
-কে বলল?
-আমি দেখেছি বাবা!
-তুমি না সারাক্ষণ কার্টুন দেখো!!
-বাংলাদেশি একটা চ্যানেলে ভালো কার্টুন হয়, ওটাই দেখছিলাম। হঠাৎ নিচে দেখি সাহিত্যিক রায়হান হোসেন নাম। তুমি ছাড়া রায়হান হোসেন নামে আর কোন লেখক আছে?
-আমার জানামতে নেই।
- তাহলে ওটা তুমিই হবে বাবা। চলো গিয়ে দেখবে।
মেয়ে হাত ধরে টানতে টানতে রায়হানকে টিভির সামনে নিয়ে গেল। টিভির স্কলে দেখাচ্ছে 'মিনিস্টার হিসেবে শপথ নেওয়ার ডাক পেয়েছেন সাহিত্যিক রায়হান হোসেন'।তার মানে কতক্ষণ আগে যে ফোনটা এসেছিল সেটা সত্যি!
সে চ্যানেল পাল্টিয়ে দেখতে লাগল। সব চ্যানেলেই দেখাচ্ছে তার নাম।
রায়হান নিজের রুমে ফিরে এলো। ব্যালকনিতে গিয়ে তাকাল আকাশের দিকে। স্বচ্ছ নীল আকাশ, সাদা মেঘের খেলা। আকাশের দিকে তাকিয়ে মনের সাথে কতক্ষণ যুদ্ধ করল ,তারপর সিদ্ধান্ত নিলো সে মিনিস্টার হিসেবে শপথ নিবে না! তার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিলো সরকারের কাছে। মুহূর্তে টিভি চ্যানেল গুলি ব্রেকিং নিউজ দিতে লাগলো "মিনিস্টার হিসেবে শপথ নিচ্ছেন না সাহিত্যিক রায়হান হোসেন "!
টিভি চ্যানেল ও বিভিন্ন সংবাদপত্রের সাংবাদিকরা ভীড় করল তার বাসায়। সাংবাদিকরা তার কাছে জানতে চাইলো কেন সে শপথ নিচ্ছে না। উত্তরে সে বলল - ছোটকাল থেকে আমার মনছবি ছিল লেখক হওয়ার,সেটা আমি হয়েছি। মিনিস্টার হওয়ার স্বপ্ন আমি কখনো দেখিনি, আমি আমার স্বপ্নের পরিধির বাইরে যেতে চাই না।
- কিন্তু মানুষ তো সব সময় বড় হতে চায়? একজন সাংবাদিক বলল।
ওই সাংবাদিককে উদ্দেশ্য করে রায়হান বলল -আপনি কি মনে করেন মিনিস্টারের স্থান লেখক এর উর্ধ্বে?
-অবশ্যই! একজন মিনিস্টারের নাম সারা দেশের মানুষ জানে। ক্ষমতা প্রতিপত্তি সবই থাকে।
-তাহলে আপনাকে একটা উল্টো প্রশ্ন করি?
-বলুন
- শেক্সপিয়ারের আমলের একজন মিনিস্টারের নাম বলুন?
সাংবাদিক উত্তর দিতে পারল না। এবার রায়হান মুচকি হেসে বলল -ক্ষমতা, প্রতিপত্তি এগুলো ক্ষণস্থায়ী। আর সৃষ্টিশীলতা হচ্ছে চিরস্থায়ী।
.............
"লেখক"
~মুহাম্মদ মোজাহিদুল ইসলাম

09/12/2024

আমাদের শিক্ষায় একটা মিথ‍্যে বড়োলোকি আছে। ফাঁপা একটা অহম আছে। আমাদের শিক্ষাটাই হলো মিথ‍্যে অহংবোধের।

আমরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গর্বে মাটিতে পা রাখি না। আমরা পদবীর গর্বে কর্মকে ভুলে যাই। পদের গর্বে মানুষকে ভুলে যাই। এটা সামাজিক ব‍্যাধি। জ্ঞানের মহিমার চেয়ে প্রতিষ্ঠানের গর্বই আমাদের আবৃত করে রাখে। জ্ঞানের চেয়ে ডিগ্রি আর কর্মের চেয়ে পদবীকেই আমরা দিন-রাত তাবিজের মতো গলায় ঝুলিয়ে হাঁটি। সেই গর্ব, যে যার নিচের শ্রেণীর সাথে ফলাতে যাবে।

ঢাবি বলবে, ওরাই সেরা। পাবলিক বলবে প্রাইভেট তুচ্ছ। পাবলিকের স্টুডেন্ট জাতীয় বিশ্ববিদ‍্যালয়ের সাথে ফলাবে। এক প্রাইভেট আরেকটার সাথে ভাব নিবে। শহরের স্কুল গ্রামের স্কুলের সাথে ফলাবে। —এবং এই জাতভেদ শুধু শিক্ষার্থীদের মধ‍্যেই সীমাবদ্ধ না। কারণ ওরাই তো একসময় প্রফেশনে যাবে। তখনও এই জাতভেদ থেকে যায়।

এই মিথ‍্যে অহংবোধ আমাদেরকে চোখ খুলতে দেয় না। আমাদের নৈতিকতায়, আচারে কোন পরিবর্তন আনে না। আমরা শুধু একটা সার্টিফিকেট অর্জন করি। এখানে সহযোগিতার পরিবর্তে তৈরি হয় ইগো। অন‍্যের যোগ‍্যতাকে অকৃপণের মতো তুলে ধরতে পারি না আমরা। আমার চেয়ে বেশি যোগ‍্যকে ভয় পাই। নয়তো জায়গা দেই না। এ এক অদ্ভুত সংস্কৃতি! অথচ পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী ফিলোসফি হলো—Dissolve your ego and learn from anyone and anywhere.

আমাদের ভিতরে একটা মিথ‍্যে এলিটিজম কাজ করে। একটা ফাঁপড়বাজির এলিটিজম। এজন‍্যই সর্বত্র গ্রুপ। সবর্ত্র দল। সবর্ত্র বর্ণবাদ। এ থেকে মুক্তির জন‍্য চাই আরো সময়। আরো আধুনিক মনের উদ্ভব। আরো সত‍্য সাহসী কণ্ঠ। চাই সকল ট‍্যাগ আর ট‍্যাবু ভেঙ্গে ফেলার সাহস।
………………......
(Rauful Alam স্যারের টাইমলাইন থেকে কপি-পেষ্ট)

Address


Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Dropout's Canvas posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to Dropout's Canvas:

Shortcuts

  • Address
  • Alerts
  • Contact The Business
  • Claim ownership or report listing
  • Want your business to be the top-listed Media Company?

Share