15/12/2024
নিজের অজান্তেই আমি মায়ার ঠোঁটে আলিঙ্গন করি। আমি কখনো ভাবতে পারিনি আজকের এই দিনটি এবং এই মুহূর্তে আমি এমন কিছু একটা করবো। মায়ার চোখ দুটি নিভু নিভু করছে। মায়া এটার জন্য প্রস্তুত ছিল না। মায়ার কথা কি বলবো আমি নিজেই বুঝতে পারিনি মায়ার ঠোঁট এভাবে স্পর্শ করবো।
মায়া আমার জাস্ট ফ্রেন্ড। জাস্ট ফ্রেন্ড থেকে বেস্টফ্রেন্ড। নাহ জাস্ট ফ্রেন্ড বললে ভুল হবে। এই মুহূর্ত পর্যন্ত সম্ভবত জাস্ট ফ্রেন্ড ছিল। কিন্তু এখন অনুভব করছি আমি মায়াকে প্রচন্ড ভালোবাসি। মায়াকে ছাড়া আমি ভালো থাকতে পারবো না। মায়ার সঙ্গ আমার বেশ প্রয়োজন।
মায়া আমার বুকে মাথা গুজে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করছে। ওর কান্নার ঢেউ আমার বুকে আঘাত দিচ্ছে। আমার নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। ওকে হারানোর বড্ড ভয় হচ্ছে কেনো জানি।
আমাকে ছেড়ে দিয়ে শুধু বললো ‘যাই’।
আমি ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছি। এক নজরে মায়ার চলে যাওয়া দেখছিলাম। যতদূর পর্যন্ত ওকে দেখা যায় ততদূর পর্যন্ত এক নজরে তাকিয়ে ছিলাম। এই প্রথম কাউকে হারিয়ে ফেলার যন্ত্রণা আমার বুকে তোলপাড় করে দিচ্ছে। বুকের তীব্র ব্যথা আমাকে দম আটকে যাচ্ছে।
কি হচ্ছে আমার সাথে? আমার এমন লাগছে কেন? এত দিন তো ওর প্রতি ভালোবাসা জন্মায় নি। একসাথে তিনটা বছর পড়াশোনা করলাম।ভার্সিটিতে আসার পরেই মায়া ছিল আমার বেস্টফ্রেন্ড। ছেলে-মেয়ে কখনো কখনো জাস্ট ফ্রেন্ড হতে পারে না। কেউ না কেউ অপর পাশের মানুষটার প্রেমে পড়বেই।
রাতে মায়াকে ফোন দিলাম। ওর ফোন বন্ধ। রাত দেড়টা বাজে প্রায়। সেই মুহূর্তে আবারো কল করলাম। কিন্তু মায়ার ফোন সুইচড অফ। আমি সাতপাঁচ না ভেবে বাইক নিয়ে বের হলাম ওর বাসার উদ্দেশ্য।
আগামীকাল ওর গায়ে হলুদ। বাড়ি সাজসজ্জায় রাঙ্গিয়ে তুলছে। আমার কেনো জানি প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে। আমি আগে কেনো অনুভব করলাম না মায়াকে ভালোবাসি। মায়া,মায়া বলে কয়েকটা চিৎকার দিলাম। মায়া বেলকনিতে এসে দেখে আমি নিচে দাঁড়িয়ে আছি। মায়া হাতের ইশারা দিলে বললো ’আসছি’।
নিচে এসে জানতে চাইলো...
- এত রাতে এখানে কেনো?
- তোরে দেখতে ইচ্ছা করছিলো,তাই চলে আসলাম।
- পাগল নাকি? মানুষ দেখলে কি বলবে। আর পাত্রপক্ষের মানুষ আমার বাসায় আছে। এখন চলে যা, কাল আমার গায়ে হলুদ।
- মায়া শোন প্লিজ।
- দেখ রাত দুইটা বাজে,প্লিজ এমন করিস না আবিদ,কাল তোর সাথে কথা বলবো।
মায়া এক দৌড়ে বাসার ভেতর চলে গেলো। আমি স্থির ভাবে দাঁড়িয়ে আছি। নাটক সিনেমার মত আমার জীবনেও এমন ঘটবে আমি কখনো ভাবতে পারিনি।
বাসায় চলে আসার পরে চোখে ঘুম নেই। আজ বিকেলে আমার হাতে বিয়ের কার্ডটি যখন দেয় তখন মায়ার চোখ দুটি পানিতে চিক চিক করছিলো। আর ঠিক সেই মুহূর্তে আমার বুকের ভেতর ঝড় বেয়ে গেলো। ওর চোখের পানি ঠোঁট গড়িয়ে পরছিলো। আমি ওর কাঁপা ঠোঁটে আমার ঠোঁট দিয়ে স্পর্শ করার পরে আমাকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
মায়ার গায়ে হলুদের সময় দূর থেকে দেখছিলাম। ওর চোখ দুটি যেন আমার দিকে। অপলক চাহনিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি নিজেকে ধরে রাখতে না পেরে সেই সময় চলে আসলাম। কিছুক্ষণ পরে মায়া আমাকে কল দেয়.....
- কই তুই? তোকে কোথাও দেখছি না যে।
- আমি চলে আসছি।
- তুই যেখানেই থাকিস না কেনো ,আমার বাসায় আয়। তোর সাথে আমার কথা আছে।
- আর কখনো তোর সামনে আমি যেতে পারবনারে। তাহলে নিজেকে সামলাতে পারব না।
- ভুলভাল বকিস না প্লিজ। তুই দশ মিনিটের মাঝে আমার সামনে আসবি।
আমি মায়ার উদ্দেশ্যে ছুটে চললাম। দুর্বার গতিতে ছুটে চললাম। আমি ওর সামনে গিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি। মায়া আমার হাতটি ধরে এক সাইডে নিয়ে যায়।
- আবিদ এই মূহুর্তে এসব করা কি ঠিক?
- দেখ আমি এতদিন বুঝিনি তোকে আমি এতটা ভালোবেসে ফেলেছি। আমি এতদিন ভাবতাম তুই আমার শুধু বেস্ট ফ্রেন্ড। কিন্তু নিজের অজান্তেই কখন কিভাবে তোকে আমি ভালোবেসে ফেলেছি আমার জানা নেই। কাল যখন তুই আমাকে তোর বিয়ের কার্ড দিস,তখনই আমার ভেতরটা খালি খালি অনুভব করলাম। তোকে হারিয়ে ফেলার ভয় ঢুকে গেলো। এতদিন খুনসুটি, মারামারি, রাগারাগি, ঝগড়া আবার দিন শেষে সব কিছু ভুলে গিয়ে হেসে দিয়ে সব কিছু ভুলে ফ্রেন্ডশিপ কন্টিনিউ রাখা হত। তোর বিয়ের কথা শুনে আমার মনে হলো কেউ তোকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিচ্ছে।
- আমার বিয়ে ঠিক হওয়ার আগে তো তুই বুঝলি না। আমি তো তোকে ভালোবাসতাম। তোকে কতবার বুঝানোর চেষ্টা করেছি তুই বুঝিস নি। তোর কি এটা বুঝা উচিৎ ছিলা না,কেন আমি তোকে অন্য মেয়েদের সাথে মিশতে দিতাম না,তোকে রিলেশনে যেতে দিতাম না।
- আমি তখন বুঝিনিরে মায়া। প্লিজ তুই কিছু একটা কর।
- আমার হাতে এখন কিছুই করার নেই। তোর হাতে যথেষ্ট সময় ছিলো,কিন্তু তুই কোনো গুরুত্ব দিস নি।
- তখন আমি বুঝিনি তোকে এতটা ভালোবাসি। এই শোন না চল আমরা পালিয়ে যাই।
- দেখ ছোট মানুষের মত কথা বলিস না। এখন পাগলামি করার সময় নয়। আর তাছাড়া ফ্যামিলিকে আঘাত দিয়ে আমি কিছু করতে পারবো না। ফ্যামিলিকে কষ্ট দিয়ে আরেকজনের হতে পারব না।
- আমি যে কষ্ট পাবো, সেটা তোর কাছে কষ্ট না?
- তোকে ছাড়া আমি অন্য কারো সাথে সারাজীবন কাটিয়ে দিব এর চাইতে বড় কষ্ট বোধহয় নেই। তোকে তো আমি ভাল বাসতাম। তোকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতাম। এতদিন ভেবে বসেছিলাম তুই হয়তো আমাকে ভালোবাসার কথা বলবি। তা আর হলো কই।তবুও মেনে নিতে হচ্ছে।
আমি আর কিছুই বললাম না। আমার গলা যেনো পাকিয়ে যাচ্ছে। করুন দৃষ্টিতে মায়ার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। ছোট একটা হাসি দিয়ে মায়াকে বলে আসলাম। "তুই হয়তো আমার ভাগ্য নেই,যদি ভাগ্যে লেখা থাকতি তাহলে আগে কেনো বুঝলাম না তোকে আমি ভালোবাসি। ঠিক আছে আমি মেনে নিলাম।"
মায়াকে এই কথাগুলো বলেছিলাম ঠিকই আবার বুকের ভেতরটা তোলপাড় করে তুললো। আর মায়া তো ঠিকই বললো, আমি তো ওর ভালোবাসার গুরুত্ব দেইনি। আর তাছাড়া পরিবারকে কাঁদিয়ে মায়াকে আমার করা সম্ভব না।
আজ মায়ার বিয়ে। ভেবেছিলাম শেষবারের মত ওকে বধুবেসে দেখবো। কিন্তু সাহস পেলাম না। ওই মুহূর্তে মায়াকে দেখলে আমি সহ্য করতে পারবো না। ফোনটা সুইচড অফ করে স্লিপিং পিল খেয়ে সারাদিন ঘুমালাম। আমার ভেতর বাচ্চাসুলভ আচরণ চলে আসলো। নাহলে কেউ এভাবে ঘুমের ঔষধ নেয়? কিন্তু আমি যে কোনো ভাবেই মেনে নিতে পারছি না মায়া আমার থেকে চলে যাচ্ছে। ঘুমের মধ্যেও প্রচন্ডরকম বুকে ব্যথা অনুভব করলাম।
ঘুমের মধ্যে সন্ধ্যায় কারো হাতের স্পর্শ অনুভব করলাম। আমার কপালে হাত বুলিয়ে ছোট ছোট করে মায়ার কন্ঠ আমার কানে আসছে। ঘুমের নেশায় চোখের পাতা যেনো মেলছিলো না।
শুধু মায়ার বলা কথা গুলো আমি শুনতে পাচ্ছি
” এভাবে অভিমান করলে হয় পাগল? দেখো আমি তোমার কাছে আসছি। তোমার জন্য বিয়ে ভেঙ্গে দিয়েছি। তুমি তো কিছুই করতে পারলে না। আমি মেয়ে হয়ে তোমার কাছে ছুটে আসলাম। একবার তাকিয়ে দেখো না আমি তোমার কাছে।"
আমি মায়ার হাতটা শক্ত করে ধরে আমার বুকের সাথে মিলিয়ে নিলাম।
(সমাপ্ত)
#মায়ার_গল্প
Md. Nazmul Huda .