05/11/2022
গ্রহণ নিয়ে অন্ধবিশ্বাস আজ থেকে না। প্রতিটা গ্রহণের আগে যেখানে একপক্ষ বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে এর বৈজ্ঞানিক কারণ দেখিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করতো, সেখানেই আবার অন্য পক্ষ এটা বোঝাত যে এই গ্রহণ কতটা খারাপ এবং সেই সময় কোনো শুভ কাজ কেন করা উচিত না।
কিন্তু কে জানত এই গ্রহণের অন্ধকারই আলোকিত করবে বিজ্ঞানের এক নতুন অধ্যায়কে।
সময়টা ১৯১৫, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, আইনস্টাইন পাবলিশ করলেন General theory of relativity. বললেন এই গ্র্যাভিটি কোনো force না, এটা স্পেস টাইমে curve এর ফলাফল। সহজ ভাষায় স্পেস হলো একটা চাদরের মত এবং সেই চাদরে একটা ভারী বস্তু রেখে দিলে সেটার চারপাশে curve এর সৃষ্টি হবে। এবার সেই curve এর পাশে যদি অপেক্ষাকৃত হালকা কোনো বস্তু রেখে দি তাহলে সেটা ঘুরতে ঘুরতে সেই ভারী বস্তুটার কাছে যেতে থাকবে। এটাই হলো গ্র্যাভিটি। যেখানে স্পেস হলো সেই চাদর এবং সূর্য, অন্য নক্ষত্র, ব্ল্যাকহোল হলো ভারী বস্তু।
এই থিওরির দ্বারা আইনস্টাইন সরাসরি কাউন্টার করলেন স্যার আইজ্যাক নিউটনের দীর্ঘ ২০০+ বছরের থিওরিকে।
মজার বিষয় হচ্ছে আইনস্টান যেটুকু প্রমাণ করে গেছিলেন সেটা হলো ম্যাথামেটিক্যালি। কারণ একটা ল্যাবে তো এরকম আর স্পেস, সূর্য, গ্রহ, নক্ষত্র নিয়ে আনা সম্ভব না। আর এখানেই হলো আসল সমস্যা।
প্রথমেই বলেছিলাম সময়টা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের। আইনস্টইন ছিলেন জার্মানির লোক কিন্তু আইজ্যাক নিউটন ছিলেন ব্রিটিশ। সেই সময় ব্রিটিশ - জার্মানি বিরোধী দেশ। একজন জার্মান বিজ্ঞানীর থিওরি তাঁরা কীভাবে মেনে নেয়! দীর্ঘ ২০০ বছরের সম্মান তো অনেকটা খর্ব হয়ে যাবে।
তাহলে শুধু মাত্র কটা কাগজের মধ্যেই থেকে যাবে মহাবিশ্বের এত বড় একটা রহস্য? তা কী করে হয়! আইস্টাইনের এই থিওরিকে প্রমাণ করার দায়িত্ব নিলেন একজন ব্রিটিশ বিজ্ঞানীই। Arthur Stanley Eddington, জেনারেল থিওরি অফ রিলেটিভিটি পড়ার পর বুঝতে পেরেছিলেন আইনস্টাইন একটা বিশাল বড় জিনিসের দরজায় এসে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। শুধু সেটা খোলার অপেক্ষা।
1917, প্ল্যানিং শুরু হলো এই থিওরি প্রমাণ করার। কিন্তু কীভাবে?
আইনস্টাইনের থিওরি অনুযায়ী গ্র্যাভিটি হলো স্পেস টাইমে curve এর ফলাফল। রাতের আকাশে যে নক্ষত্রগুলো আমরা টিমটিম করতে দেখি সেটার আলোও এই স্পেস বা চাদরের ওপর দিয়েই আসে। তাই সেই আলো আমাদের চোখে আসার পথে কোথাও curve এর সৃষ্টি হলে আলো সেটার মধ্যে দিয়েই আসবে। অর্থাৎ সেই আলো সরাসরি আসলে একরকম পথ, curve মধ্যে দিয়ে গেলে একরকম পথ। ঠিক হলো Hyades star cluster রাতের আকাশে এবং দিনের আকাশে ছবি তোলা হবে। কিন্তু দিনের আকাশে তারার ছবি কীভাবে তোলা সম্ভব?
একটাই উপায় সূর্যগ্রহণ। সঙ্গে আকাশ থাকতে হবে পরিষ্কার। সাল 1919, মে মাসের সূর্যগ্রহণ এর দিন এই experiment করা হবে বলে ঠিক হলো। উপযুক্ত স্থান হিসাবে ঠিক করা হলো ২টি জায়গা যেখান থেকে তোলা হবে গ্রহণের ছবি। জায়গা দুটি হলো আফ্রিকার Principe এবং ব্রাজিলের Sobral. ইংল্যান্ড থেকে রওনা দিল দু'টি দল। একদল Sobral এর উদ্দেশে এবং অন্যদল Principe যার নেতৃত্বে ছিলেন Eddington. সঙ্গে ছিল পাওয়াফুল টেলিস্কোপ, ফটোগ্রাফিক প্লেট যার দ্বারা তোলা হবে ছবি।
29th May, 1919 Experiment এর দিন। গ্রহণের সময় ছিল দুপুর 2 টো। এদিকে সকাল থেকে আকাশ জুড়ে কালো মেঘ সঙ্গে মুষলধারে বৃষ্টি। গ্রহণ যেন প্রতি মুহূর্তে জানান দিচ্ছে কেন সে অশুভ। কিন্তু কোন শক্তির সাধ্যি বিজ্ঞানকে আটকে রাখার? সময় তখন দুপুর ১.৩০, থামলো বৃষ্টি, দেখা দিল ছিটেফোঁটা সূর্যের আলো। আশাহত হয়ে বসে থাকা Eddington এর কাছে যেন সেটাই সহস্র সূর্যের মতো। হাতে খুবই স্বল্প সময়, শেষ চেষ্টা তো করতেই হবে। সময়ের আগেই সেট করে ফেললেন সমস্ত যন্ত্র। শুরু হলো গ্রহণ। পাল্টে চলেছেন একের পর এক ফটোগ্রাফিক প্লেট। সব মিলিয়ে মোট ১৬টি ছবি তোলা হয়েছিল গ্রহণের। যার মধ্যে শেষের দিকের কয়েকটি ছবিতেই পরিষ্কার ভাবে ফুটে উঠেছিল সূর্যের পেছনে থাকা Hyades star cluster. এরপর যখন দিন এবং রাতের ছবির measurement করা হলো তখন দেখা গেল তারা দের পজিশন এর পার্থক্য রয়েছে। আর সেই পার্থক্য আইনস্টাইন যতটা বলেছিলেন তার খুব কাছাকাছি। ব্যাস এখান থেকেই বদলে গেল গ্রাভিটির প্রতি আমাদের ধারণা।
Eddington এর এই experiment সফলতার কথা প্রথম পাবলিশ হয় The Times of London এ 1919 এর 7th November. গোটা বিশ্ব জানলো আলবার্ট আইনস্টাইনকে।
🦉🪶