24/09/2023
Tomorrow is a big day for me!
আগামীকাল থেকে আমার একটা নতুন যাত্রা শুরু হতে যাচ্ছে। তার আগে আমি আমার প্রথম এবং সবচেয়ে প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে জীবনের সবচেয়ে সেরা মুহুর্তের কিছু স্মৃতির বাকিটুকু আমার টাইমলাইনে রেখে দিতে চাই।
ছোটবেলা থেকে 'গোল্ড মেডেল' নামের জিনিসটা নিয়ে অনেক শুনেছি, দেখেছি। পড়াশোনা আমার জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু আমি কখনো পড়াশোনার জন্য গোল্ড মেডেল পেয়ে যাবো, ভাবলেই স্বপ্ন স্বপ্ন লাগে।
সেই মুহুর্তটা আমি আমার মা, বাবা আর বোনের সাথে মিলে উদযাপন করতে পেরেছি এটাও স্বপ্নের মতোন।
Graduation, Post Graduation মিলিয়ে দীর্ঘ সাত বছর ধরে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে আমার official সম্পর্ক। আমাদের ফ্যাকাল্টির শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের সাথে যে স্মৃতিগুলো আমার জন্য অবিনশ্বর সেগুলো আমি একটু বলতে চাই আর আমার শিক্ষকদের আমি যে নামে ডেকে অভ্যস্ত সেভাবেই লিখলাম।
Department of Anatomy & Histology:
আমাদের এনাটমির হাতে খড়ি রবি স্যার আর জুয়েল স্যারের কাছে। রবি স্যার ক্লাসে বলতেন যতোই উপরের ক্লাসে উঠবে, পড়ালেখা ততোই সহজ হয়ে যাবে।
আসলেই তাই।
আওয়াল স্যারের ক্লাসে বান্ধবীদের সাথে ৩২ টা দাঁত বের করে হাসার কারণে বিরাট ধমক খেয়েছিলাম, প্রথম হিস্টোলজি ভাইভাতে স্যারের কাছে ১০ এ ৯ পাওয়া।
আমার প্রিয় তিনজন ম্যাম শান্তা ম্যাম, মারিয়া ম্যাম আর সোনালী ভক্ত ম্যাম- উনাদের প্রথম ব্যাচ ছিলাম আমরা। খুব ভালো করে Anatomy & Histology আয়ত্ত করতে পেরেছিলাম এই স্যার, ম্যামদের জন্যেই।
খুব সম্ভবত আমরা ছিলাম প্রয়াত বারী স্যারের Last Batch.
Dept. of Biochemistry:
যদিও এটা Direct আমাদের ডিপার্টমেন্ট
না, আমাদের কিছু course ছিলো, Biochem আমার খুব ভালো লাগতো।
বায়োকেমিস্ট্রির হান্নান স্যার এতো সুন্দর করে পড়াতেন,আনোয়ার স্যারের ক্লাসে বোর্ডে গিয়ে প্রথম গ্লুকোজ ফ্রুক্টোজের Structure আঁকা। তখন first year, স্যার ভাইভাতে জিজ্ঞেস করেছিলেন, আমি কি determined কিনা যে আমি veterinary medicine নিয়েই পড়বো, আমি স্যারকে বলেছিলাম, without any doubt, Sir.
Dept. of Microbiology:
সুকুমার স্যারের ভাইভাতে আমি আমার ছোটবেলার (Class 10) প্রথম বানানো গান গেয়েছিলাম, ভাইভাতে তেমন কিছুই পারি নাই কিন্তু গান গেয়ে বেঁচে গিয়েছিলাম।
খান স্যারের কাছে আমাদের প্রথম Virus এর আদ্যোপান্ত শেখা,
তোফাজ্জ্বল স্যারের অবাক করা বিষয় হচ্ছে তিনি সবার রোল মনে রাখেন, একবার ফাইনাল এক্সামের ভাইভাতে আইডি কার্ড নিয়ে যাই নাই, স্যার বাসায় পাঠিয়ে আইডি কার্ড আনিয়ে ভাইভা শেষ করেছিলেন।
নাজির স্যার একটা event বানিয়েছিলেন যেখানে সবার নিজের এলাকার খাবার নিয়ে আসতে হতো, স্যারের প্রথম প্র্যাক্টিক্যাল ক্লাসে স্যার তাঁর ছোটবেলার কথা বলেছিলেন, আমি সেগুলো লিখে রেখেছিলাম, স্যার বলেছিলেন লেখাটা দেয়ার জন্য, সেটা আর সম্ভব হয় নাই।নাজির স্যারের কাছেই প্রথম ব্যাকটেরিয়ার colony দেখা।
তানভীর স্যারের সাথে রাস্তায় দেখা হলে সবসময় সালামের উত্তর দিয়ে বলতেন, কেমন আছো।
মিনারা ম্যামের ফুড হাইজিন ক্লাস আমার অনেক প্রিয় ছিলো আর অমৃতা ম্যামের দিকে শুধু তাকিয়েই থাকতাম।
Dept. of Parasitology:
নুরজাহান ম্যাম ছিলেন মায়ের মতোন,
তাহসিন ফারজানা ম্যামের ক্লাসে আমি শুধু ম্যামের ড্রেস দেখতাম, পরের ক্লাসে অপেক্ষা করতাম ম্যাম কি পরে আসেন দেখার জন্য।
আলিম স্যারের ছাত্রছাত্রীদের প্রতি ডেডিকেশন অন্য লেভেলের, স্যারের ক্লাস করে পরীক্ষায় খারাপ করার কোনো উপায় ছিলো না।
Dept. of Pharmacology:
পূর্বা ম্যামকে আমরা খুব কম পেয়েছি, কিন্তু উনার কাছেই প্রথম Laboratory Safety নিয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানা,পূর্বা ম্যামের বাড়ি গফরগাঁওয়ে, আমার দাদারবাড়ি গফরগাঁও, পূর্বা ম্যাম গফরগাঁওয়ের কেউ আছে কিনা জিজ্ঞেস করেছিলেন ক্লাসে, একমাত্র আমিই দাঁড়িয়েছিলাম, ম্যাম বলেছিলেন, সবাই সাবধানে থাকিস 😁
পূর্বা ম্যামের 'তুই' ডাকটা অনেক আদরের, আমার খুব ইচ্ছা ম্যামকে জড়িয়ে ধরার।
সব্যসাচী স্যারের প্রত্যেক লেকচারের পর life learning quote ছিলো আর জান্নাতুল ফেরদৌস ম্যামের Straightforwardness.
সিকদার স্যারের সাথে প্রথম পরিচয় কালচারাল প্রোগ্রামের রিহার্সালে, He is an asset to our university.
প্রয়াত মাহবুব মোস্তফা স্যার ভাইভাতে একদিন বলেছিলেন, চলো আনিকা আমরা একদিন কবিতা লিখি।
Dept. of Physiology:
কামরুল স্যারের কাছে প্রথম WBC, RBC count শেখা, একদিন রাত ৮ টা পর্যন্ত ভাইভা হচ্ছিলো আমাদের, স্যারের ভাইভাতে Hemolytic Anemia নিয়ে একটা সহজ প্রশ্নের উত্তর পারি নাই দেখে আমার এখনো আফসোস হয়।
ইলিয়াস স্যারের কাছ থেকে প্রথম শিখেছিলাম, রোজার সময় আমাদের শরীরের মেটাবলিজম টা ঠিক কিভাবে run করে।
ফিজিওলজি ডিপার্টমেন্টে আমার সবচেয়ে প্রিয় নাজিম স্যার, স্যারের একটা সুন্দর টুপি ছিল, নেপালী টাইপ, স্যারের এক ক্লাস টেস্টে আমি ব্লাড প্রোটিনের নামের spelling নিয়ে খুব চিন্তায় ছিলাম, খাতা দেওয়ার দিন স্যার আমাকে ক্লাসে দাঁড় করিয়ে বলেছিলেন, এই পিচ্চিটা Highest পেয়েছে।
Dept. of Medicine:
মাহবুব স্যার ক্লাসে সব লিখাতেন, সিদ্দিক স্যার বলতেন আনিকা তোমার বাসার কাছে একটা চ্যাম্বার দিবে, আনিস স্যারের ক্লাসে কেউ কথা বললে স্যার তাদের বলতেন 'মাফিয়া', এই শব্দটা আমাদের জীবনে যোগ হওয়ার পর আমাদের পুরো third year টাই হয়ে গিয়েছিলো মাফিয়াময়, রেস্টুরেন্টে খেতে গেলেও বলতাম, 'হালকা মাফিয়া খানাপিনা'!
তৌহিদ স্যারের ভাইভাতে আমরা একবার কিছুই পারি নাই, স্যার বললেন, পড়া শেষ করে আবার আসতে, স্যার আবার ভাইভা নিলেন, একটা প্রশ্নের উত্তর দিয়ে বেঁচেছিলাম সেদিন।
মাহিন স্যারের ক্লাসে দৌঁড়াদৌঁড়ি করে যেতাম কারণ ১ মিনিট দেরি হলেই জরিমানা। স্যার আমার অনেক প্রিয়।
Dept. of Surgery & Obstetrics:
মিজান স্যার কিছু Surgical term শিখিয়েছিলেন, contusion term টা প্রথম উনার কাছে শেখা,
বারী ম্যামের কাছে প্রথম AI এর বিস্তারিত জানা, রফিক স্যারের Radiology class ছিলো আমার সবচেয়ে প্রিয়, ডার্করুমের কথা মনে হলে এখনো মনের মধ্যে একটা অদ্ভুত fascination জাগে।
সকালের ক্লাসে অনেক সময়ই ঘুমিয়ে যেতাম, চোখ খুলে দেখতাম জয়ন্ত স্যার তাকিয়ে আছেন।
রুনা ম্যামকে কখনো কাউকে বকা দিতে দেখি নাই, জুয়েনা ম্যামের কাছে প্রথম C-section দেখা।
মইনুল স্যারের Humbleness ছিলো অনেক উঁচু পর্যায়ের।
মাহমুদুল স্যার প্রতিদিন পড়া ধরতেন, কত রকমের Horse নিয়ে যে পড়িয়েছেন এখন মনে পড়লেও মাথা আওলিয়ে যায়, সার্জারীতে আমাদের একটা কঠিন সংজ্ঞা ছিলো, লিখতে গেলে পৃষ্ঠা শেষ হয়ে যেতো।
আমাদের হসপিটালে মাঝেমধ্যে আমি এপ্রনের পকেটে হাত দিয়ে ঘুরতাম, একটা ডাক্তার ডাক্তার ভাব আসতো, তবে সেটা স্যার ম্যাডামদের সামনে না, মাহমুদুল স্যার একদিন দেখে ফেলে বলেছিলেন, আনিকা, আর যেনো কখনো পকেটে হাত দিতে না দেখি।
Dept of Pathology:
আমার সবচেয়ে প্রিয় ডিপার্টমেন্ট যেখানে আমি দুই বছর মাস্টার্স করেছি।
আমাদের প্যাথোলজি ডিপার্টমেন্ট ভাগ্যবান কারণ আমাদের রফিক স্যার আছেন।
বারী স্যারের Tuberculosis class আমার সবচেয়ে প্রিয়, এমদাদুল হক স্যারের Biotechnology, মকবুল স্যারের Sense of Humour, সেন্টমাটিনে যাওয়ার পথে জাহাজে বসে মিথুন ম্যামের PCR ক্লাস করা, Happy Ma'am এর poutry pathology, খোকন স্যারের কাছে প্রথম Pathology Lab দেখা, রুবা ম্যাম বলতেন ম্যাম সবকিছু খুব Detail এ সময় নিয়ে পড়েন।
আর রুবা ম্যামের হাতে প্র্যাক্টিক্যাল খাতায় Good পেয়ে আত্মার শান্তি পাওয়া আর মুমু ম্যামের কাছে online এ fungal disease এর ক্লাস।
বিনা ম্যামের মতোন helpful teacher অনেক বেশি দরকার।
এখন আমি যে তিনজন মানুষের কথা বলবো তাঁরা আমার অনেক বেশি আপন।
সাজেদা ম্যাম শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কিন্তু ম্যাম যখন পিএইচডি করছিলেন তখন আমি নতুন মাস্টার্স স্টুডেন্ট। এমন অনেক কিছু আছে যা ম্যাম শিখিয়েছিলেন, একদিন দুপুরবেলা ম্যাম আমাকে খুব মজার একটা বার্গার খাইয়ে ছিলেন, সেই খাবার আর আদর এখনো আমার মনে লেগে আছে।
Undergrad এ হাদী স্যার ক্লাসে বলতেন, বিদেশে চলে আসতে, বিদেশে ছাত্রছাত্রীরা কোনো কাজকেই ছোট মনে করে না, কথাটার প্রমাণ আমি এখন চোখের সামনে দেখি। হাদী স্যার আমার Supervisor মাস্টার্স থেকে, কিন্তু স্যারের ক্লাস পেয়েছি Third Year থেকে, স্যার পড়ানোর পাশাপাশি জীবন গঠনের যে কথা বলতেন সেগুলো সবার জন্য Best Life Lesson.
Last but not the least, বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সবচেয়ে প্রিয় মানুষ, আমার মুনমুন ম্যাম। মাস্টার্সে ম্যাম ছিলেন আমার Co-supervisor.
মুনমুন ম্যামকে প্রথম পেয়েছিলাম ফাইনাল ইয়ারে, প্যারাসাইটোলজি আমাদের সেকেন্ড ইয়ারের সাবজেক্ট, কিন্তু আমার প্যারাসাইটোলজির হাতেখড়ি মুনমুন ম্যাম।
শিক্ষকদের কথা আসলে আমার মা বাবার নাম নিতেই হয়, তার সাথে সাথে আমার সেই শিক্ষকদের কথা আমি মনে করতে চাই যাদের জন্য আমি লিখতে পারি, বলতে পারি, যারা আমায় এতোদূর বড় করেছেন।
আমার সব শিক্ষকদের অনুপ্রেরণায় আমি এখন বিদেশী আকাশ দেখে ঘুম থেকে উঠি। আগামীকাল থেকে আমার সবসময় সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে যে শিক্ষা আমার দেশের শিক্ষকরা আমায় দিয়েছেন, যতোবার সুযোগ পাই সেগুলো যেনো অনেক গর্ব নিয়ে কাজে লাগাতে পারি 🌿