27/04/2020
দুয়া কবুল হওয়ার কিছু সময় ও আমল
রাত ও দিনে কিছু কিছু সময় আছে বা এমন কিছু দুয়া আছে যা আল্লাহ কবুল করে থাকেন। একজন ইমানদার মুসলিম হিসেবে আমাদের এই দুয়াগুলো আমল করা উচিত। তবে হালাল খাবার ভক্ষন ছাড়া দুয়া কবুল হবেনা, মুুমিন বান্দা হওয়া লাগবে- সেটাও মনে রাখতে হবে। এরকম কিছু দুয়া ও সময় নিচে বর্ননা করছি ঃ -
১. তাহাজ্জুদ নামাজের সময় ঃ
তাহাজ্জুদের সময় যে দুয়া করা হয় আল্লাহ সেটা সব চাইতে বেশি কবুল করেন। এই দুয়া করার জন্য সর্বোত্তম হচ্ছে, রাতের বেলা তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যাওয়া। রাতের শেষ তৃতীয়াংশে ঘুম থেকে উঠে তাহাজ্জুদের নামায পড়ে আল্লাহর প্রতি ভয়, বিনয়, আশা ও দুয়া কবুল হবে এমন দৃঢ়তা নিয়ে কান্নাকাটি করে দুয়া করা। মা-বোনেরা ঋতুকালীন অসুস্থতার সময় নামায না পড়েও দুয়া করতে পারবেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “রাতের এমন একটা সময় আছে যখন মুমিন বান্দা আল্লাহর কাছে দুনিয়া ও আখিরাতের যা কিছু চায় আল্লাহ তা দিয়ে দেন। আর এ সময়টা প্রতি রাতেই। Ñসহীহ মুসলিম
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন, “প্রতি রাতে যখন রাতের এক তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকে, তখন আমাদের প্রতিপালক পৃথিবীর নিকটবর্তী আকাশে অবতরণ করেন। তখন তিনি বলেন, “কে আছে আমার কাছে দুআ করবে, আমি তার দুয়া কবুল করব? কে আমার কাছে তার যা দরকার প্রার্থনা করবে, আমি তাকে তা দিয়ে দেব? কে আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে, আমি তাকে ক্ষমা করে দেব। Ñ সহীহ বুখারী
২. ফরয নামাযে সালাম ফেরানোর পূর্বে ঃ
প্রত্যেক ফরয নামাযের শেষ অংশে (দুয়া মাসুরা হিসেবে) যে দুয়া করা হয় তখন দুয়া কবুলের শ্রেষ্ঠ সময়। এই সময় ‘দুয়া মাসুরা’ বা হাদীসে বর্ণিত যেই দুয়াগুলো আছে সেইগুলো পাঠ করা ভালো। এছাড়া কেউ দুনিয়া আখেরাতের কল্যানের জন্য অন্য যেকোনো দুয়া করতে পারবেন। বিশেষ করে নিজের জন্য নিজের মাতা-পিতা, ভাই-বোন, বা যেকোনো মুসলিমের জন্য দুয়া করতে পারেন। ‘নামাযের শেষে’ অর্থ হচ্ছেঃ প্রত্যেকে ফরয নামাযের তাশাহুদ ও দুরুদ পড়ার পরে সালাম ফেরানোর আগে দুয়া মাসুরার সময় যেই দুয়াগুলো করা হয় সেই সময়, সালাম ফিরানোর পরে না, আগে। শায়খ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমিন (রহঃ) বলেছেন, দুয়া করতে হবে তাশাহুদ (আত্তাহিয়্যাতু ও দুরুদ পড়ার) পরে ও সালাম ফেরানোর আগে। আর সালাম ফেরানোর পরে করতে হবে মাসনুন যেই যিকিরগুলো আছে সেইগুলো। যেমনটা আদেশ করা হয়েছে, “অতঃপর যখন তোমরা নামায শেষ কর, তখন দাঁড়িয়ে, বসে ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহর যিকির কর”। Ñ(সুরা নিসা)।
৩. আযান ও ইকামতের মাঝখানে ঃ
আযান ও ইকামতের মাঝখানে যে সময়, সেই সময়ের দুয়া কবুল করা হয়। অধিকাংশ মসজিদেই সাধারণত আযানের ১৫/২০ মিনিট পরে ইকামত দেওয়া হয়। আর মাগরিবের ওয়াক্ত ছোট হওয়ায় আযানের ৪-৫ মিনিট পরেই ইকামত দেওয়া হয়। আযানের জবাব দেওয়ার পরে নামায শুরুর আগে ঐ সময়ে বেশি বেশি দুয়া করা উচিত। রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ের দুআ ফিরিয়ে দেওয়া হয়না”। Ñতিরমিযী, আবু দাউদ
৪. নামাযের সিজদার সময় ঃ
ফরয, সুন্নত, নফলসহ নামাযের সিজদাতে দুনিয়া বা আখেরাতের কল্যানের জন্য সিজদার তাসবীহগুলো পড়ার পরে দুয়া করা যায়। আরবীতে দুয়া করতে পারলে ভালো। এইজন্য আরবীতে কুরআন ও হাদীস থেকে কিছু দুয়া মুখস্থ করা উচিত। কিন্তু কেউ আরবী না জানলে তিনি নফল ও সুন্নাত নামাযে বাংলায় তার যা প্রয়োজন সেই দুয়া করতে পারবেন।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “বান্দা সিজদার অবস্থায় প্রভুর সর্বাধিক নিকটবর্তী হয়। অতএব তোমরা অধিক মাত্রায় (ঐ অবস্থায়) দো‘আ কর।” মুসলিম , নাসায়ী, আবূ দাউদ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন, “রুকুতে তোমরা রবের বড়াই বর্ণনা কর (অর্থাৎ ‘সুবহানা রাবিবয়্যাল আযীম’ পড়)। আর সিজদায় দো‘আ করতে সচেষ্ট হও। কারণ, তোমাদের জন্য সে দো‘আ কবূল হওয়ার উপযুক্ত”। Ñমুসলিম , নাসায়ী , আবূ দাউদ ৮৭৬, ইবনু মাজাহ
৫. যে কোনো প্রয়োজনে দুয়া ইউনুস ঃ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যেকোনো প্রয়োজনে কোনো মুসলিম যদি দুয়া ইউনুস পড়ে, আল্লাহ তার দুয়া কবুল করবেন”। অন্য হাদীস অনুযায়ী, “দুয়া ইউনুস পড়লে আল্লাহ তার দুঃশ্চিন্তা দূর করে দেবেন”।
উচ্চারণ ঃ লা ইলা-হা ইল্লা-আনতা, সুবহা’-নাকা ইন্নি কুনতু-মিনায-যোয়ালিমিন।
অর্থঃ “(হে আল্লাহ) তুমি ছাড়া আর কোনো মা’বুদ নাই, তুমি পবিত্র ও মহান! নিশ্চয় আমি জালেমদের অন্তর্ভুক্ত।Ñসুরা আল-আম্বিয়া
৬. রাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলে ঃ
রাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলে দুয়া কবুলের একটা সময় আছে। এই জন্য মাঝরাতে ঘুম ভাংলে বা তাহাজ্জুদের জন্য ঘুম থেকে উঠার পরে প্রথমে একটা দুয়া পড়ে, পরে দুনিয়া বা আখেরাতের যেকোনো কল্যানের জন্য দুয়া করলে আল্লাহ সেই দুয়া কবুল করে নেন।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি রাতে ঘুম থেকে জেগে উঠে বলে, “লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্’দাহ লা-শারীকালাহু, লাহুল মুলকু, ওয়ালাহুল হামদু, ওয়াহুয়া আ’লা কুল্লি শায়ইন ক্বাদীর। সুবহা’-নাল্লাহি, ওয়ালহা’মদু লিল্লাহি, ওয়া লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু, ওয়াল্লা-হু আকবার। ওয়া লা- হা’ওলা ওয়ালা- ক্বুওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হিল আ’লিয়্যিল আ’যীম। রাব্বিগফির লী”। তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হবে। যদি সে দোআ’ করে, তবে তার দোআ’ কবুল হবে। যদি সে উঠে ওযু করে নামায পড়ে, তবে তার নামায কবুল করা হবে”। বুখারী, ইবন মাজাহ্
৭. নামাযের আযানের সময় ঃ
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ ঃ “দুটো সময় এমন যাতে দুআ ফেরত দেয়া হয় না অথবা খুব কম ফেরত দেয়া হয়। আযানের সময়ের দুআ এবং যখন যুদ্ধের জন্য মুজাহিদগণ শক্রের মুখোমুখি হয়”। Ñআবু দাউদ
৮. বৃষ্টির সময় ঃ
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ বলেছেনঃ “দুইটি বিষয় আছে এমন যেইগুলো ফিরিয়ে দেওয়া হয়না, আযানের সময় দুয়া ও বৃষ্টির সময়ে দুয়া”। Ñ আবু দাউদ
৯. মোরগ ডাকের সময় ঃ
যখন মোরগ ডাকে তখন দুয়া কবুল হয়। কারণ মোরগ আল্লাহর রহমতের ফেরেশতাদের দেখতে পেয়ে ডাকে।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ “যখন তোমরা মোরগের ডাক শুনবে, তখন তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ চাইবে, কেননা সে একটি ফেরেশতা দেখেছে। আর যখন তোমরা কোনো গাধার স্বর শুনবে, তখন শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইবে, কেননা সে শয়তান দেখেছে”। Ñ বুখারী, মুসলিম
১০. রোযাদারের ইফতারীর সময় ঃ
রোযার সারা দিনই দুয়া বেশি কবুল কর হয়। নবী করীম সাল্লাল্লাহ আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তিন ব্যক্তির দুআ’ ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। ১. রোযাদার ব্যক্তি ইফতার করা পর্যন্ত, ২. ন্যায়পরায়ণ ইমাম বা রাষ্ট্রপতি, ৩. মযলুম ব্যক্তির দো‘আ।
এই তিনি ব্যক্তিদের দুআ’ আল্লাহ আকাশে মেঘমালার উপরে তুলে নেন এবং এর জন্য আকাশের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয় এবং আমাদের মহান রব বলেন, “আমার ইযযত ও মাহাত্ম্যের কসম করে বলছি! অবশ্যই আমি তোমাকে সাহায্য করবো, কিছু সময় পর হলেও।Ñ আহমাদ, তিরমিযী
রোযার সারা দিনের মাঝে ইফতারির আগে ও পরে আরো দুয়া করা আরো বেশি ফযীলতপূর্ণ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “রোযাদার ব্যক্তির ইফতারির সময় দুয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয়না।Ñইবনে মাজাহ
এছাড়াও লাইলাতুল ক্বদরের সময় দুয়া, যমযম পানি পান করার আগে দুয়া, মজলুমের দোয়া, অসুস্থ ব্যক্তির দুয়া, সন্তানের জন্য পিতার দুয়া, আরাফার দিবসে দুয়া, অসহায় বিপদগ্রস্থের দুয়া, জুমুয়ার দিনে বিশেষ একটা সময়ের দোয়া, অনুপস্থিত মুসলিমের জন্য যে দুয়া করা হয়, সেটাও কবুল করা হয়।
আসুন আমরা দুনিয়াবী ব্যস্ততার মধ্যেও সুযোগ মত দোয়া ও আমল করতে সচেষ্ট হই। অপরকে উৎসাহিত করি। আল্লাহ আমাদের সকলের কল্যাণ ও মঙ্গল করুন। আমিন!
collected