19/08/2025
আজকের দিনে কনটেন্ট বানানো খুব সহজ হয়ে গেছে। একটা ভালো ক্যামেরা বা স্মার্টফোন হাতে থাকলেই কেউ একজন ছবি তুলছে, রিল করছে, মিম বানাচ্ছে বা লম্বা পোস্ট লিখছে। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম আর টিকটকে প্রতিদিন লাখ লাখ নতুন কনটেন্ট আপলোড হচ্ছে।
এগুলোর কিছু হয়তো ভাইরাল হচ্ছে, কিছু মানুষের মনেও জায়গা করে নিচ্ছে। কিন্তু যে উদ্যোক্তা বা ব্যবসায়ী তার প্রোডাক্ট বিক্রির জন্য এই কনটেন্ট বানাচ্ছেন, তার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটা একটাই
“এত কনটেন্ট বানানোর পরও আমার সেল আসছে না কেন?”
এই প্রশ্নের উত্তরটা তেমন সহজ নয়। কারণ কনটেন্ট বানানো আর কনটেন্টকে সেলসে রূপান্তর করা এই দুই কাজ সম্পূর্ণ আলাদা। একটা কনটেন্ট সুন্দর হতে পারে, ভাইরালও হতে পারে, কিন্তু সেটা যদি সঠিক মেসেজ না দেয়, সঠিক অডিয়েন্সের কাছে না পৌঁছায়, বা কাস্টমারের মনের দ্বিধা ভাঙতে না পারে, তাহলে সেটা সেলস জেনারেট করবে না।
অনেক ব্যবসা তাই ফাঁদে পড়ে যায়। তারা ভাবে, যত বেশি কনটেন্ট তত বেশি সেল। অথচ বাস্তবতা হলো, অগণিত কনটেন্ট তৈরি করার পরও বিক্রি শূন্য থেকে যায়।
বড় মার্কেট রিসার্চ কোম্পানি HubSpot-এর এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, ৬০ শতাংশ মার্কেটার মনে করেন কনটেন্ট ব্র্যান্ড গ্রোথের জন্য অপরিহার্য। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, মাত্র ২০ শতাংশ ব্র্যান্ড তাদের কনটেন্টকে সেলসে রূপান্তর করতে সক্ষম।
এই তথ্যটা আমাদের চোখ খুলে দেয় সমস্যাটা কনটেন্টে নয়, সমস্যাটা কনটেন্টের স্ট্র্যাটেজিতে।
তাহলে সমস্যা আসলে কোথায়? সবচেয়ে বড় ভুলটা হয় অডিয়েন্স রিসার্চ ছাড়া কনটেন্ট বানানোর মধ্যে। ব্যবসায়ীরা ধরে নেয়, তাদের প্রোডাক্ট সবারই লাগবে। কিন্তু বাস্তবে প্রতিটি কাস্টমারের আলাদা প্রয়োজন, আলাদা ভয়, আলাদা আশা।
যদি সেই মনস্তত্ত্ব বোঝা না যায়, তাহলে কনটেন্ট যতই সুন্দর হোক না কেন, সেটি মানুষকে প্রভাবিত করবে না। আরেকটা সাধারণ ভুল হলো ভ্যালু না দেওয়া। অনেকেই শুধু প্রোডাক্ট শো-কেস করে। সুন্দর ছবি, ঝকঝকে ভিডিও কিন্তু কোথায় সেই গল্প, যা বলবে প্রোডাক্টটা কেনার পর জীবনে কী বদল আসবে? মানুষ প্রোডাক্ট কেনে না, মানুষ কেনে সেই সমাধান যা প্রোডাক্টটা দিতে পারে।
ডিজিটাল মার্কেটিং লিডার নীল প্যাটেল একবার বলেছিলেন, “People don’t buy products, they buy better versions of themselves.” অর্থাৎ কাস্টমার প্রোডাক্ট দেখে না, সে দেখে তার নিজের ভবিষ্যত এই প্রোডাক্ট কিনে আমি কেমন দেখাবো, কেমন অনুভব করবো, কীভাবে উপকার পাবো। যদি কনটেন্ট সেই ছবি আঁকতে না পারে, তাহলে সেলসও আসবে না।
আরেকটা সমস্যা হলো Call-to-Action এর অভাব। লাইক, কমেন্ট, শেয়ার হয়তো প্রচুর আসছে, কিন্তু মানুষকে সঠিকভাবে কেনার দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে না। ধরুন একজন দেখলো সুন্দর একটা শাড়ির ভিডিও। তার ভালো লাগলো, কমেন্টে লিখলো “ওয়াও”। কিন্তু সে জানলোই না, কোথায় অর্ডার করতে হবে, কীভাবে পেমেন্ট করতে হবে, বা অফারটা কতক্ষণ থাকবে। তাহলে কি সে কিনবে? না।
সবশেষে আসে বিশ্বাসযোগ্যতার বিষয়। আজকের কাস্টমার অনেক সচেতন। সে বিজ্ঞাপনের কথায় সহজে বিশ্বাস করে না। সে প্রমাণ দেখতে চায়। রিভিউ, টেস্টিমোনিয়াল, বাস্তব ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা এসব কিছু ছাড়া শুধু ফটোশুট করা প্রোডাক্টের ছবি দেখে সে টাকা খরচ করতে চাইবে না।
তাহলে সমাধান কী? সমাধান হলো কনটেন্টকে ভাইরাল নয়, স্ট্র্যাটেজিক করা। কনটেন্ট বানাতে হবে এমনভাবে, যাতে সেটা অডিয়েন্সের আসল সমস্যা টার্গেট করে। কাস্টমারের বয়স, লাইফস্টাইল, চাহিদা বুঝে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট তৈরি করতে হবে।
শুধু প্রোডাক্ট নয়, দেখাতে হবে কীভাবে সেই প্রোডাক্ট কাস্টমারের সমস্যার সমাধান করছে। কনটেন্টে স্পষ্টভাবে বলতে হবে পরবর্তী ধাপ কী কীভাবে অর্ডার করতে হবে, কতদিন অফার থাকবে, আর কোথায় যোগাযোগ করতে হবে।
সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, কনটেন্টে বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি করতে হবে। মানুষের রিভিউ, আগে-পরে তুলনা, কাস্টমারের গল্প এসব কনটেন্টে যুক্ত হলে অডিয়েন্সের মনে একটা ট্রাস্ট তৈরি হয়। আর মজার ব্যাপার হলো, মাঝে মাঝে একটু মিম বা হালকা মজা কনটেন্টে ঢুকিয়ে দিলে সেটি আরও বেশি রিলেটেবল হয়। কাস্টমার তখন শুধু তথ্যই পায় না, কনটেন্টের সাথে একটা আবেগীয় কানেকশনও তৈরি করে।
গ্যারি ভি বলেন, “Content is king, but context is God.” অর্থাৎ শুধু কনটেন্ট বানালেই হবে না, সেই কনটেন্টকে সঠিক সময়ে, সঠিক প্রেক্ষাপটে, সঠিক অডিয়েন্সের সামনে হাজির করতে হবে। এই কনটেক্সট ছাড়া কনটেন্ট যতই সুন্দর হোক না কেন, সেটি ফলাফল আনবে না।
শেষ পর্যন্ত আমরা যদি দেখি, তাহলে কনটেন্ট আসলে একধরনের ব্রিজ একদিকে আছে আপনার ব্যবসা, অন্যদিকে আছে কাস্টমারের প্রয়োজন। কনটেন্ট সেই ব্রিজ হয়ে কাজ করে, যাতে কাস্টমার আপনার কাছে আসতে পারে। কিন্তু যদি ব্রিজটা অর্ধেক হয়, অথবা দুর্বল হয়, তাহলে মানুষ মাঝপথে থেমে যাবে।
তাহলে কনটেন্টকে বিক্রিতে রূপান্তর করার মূল চাবিকাঠি হলো: অডিয়েন্সকে বোঝা, ভ্যালু দেওয়া, ট্রাস্ট তৈরি করা এবং স্পষ্টভাবে পরবর্তী ধাপ দেখানো। ভাইরাল হওয়া একটা বাড়তি সুবিধা, কিন্তু মূল লক্ষ্য সবসময় হওয়া উচিত কাস্টমারকে কিনতে অনুপ্রাণিত করা।
আপনার কনটেন্ট যদি অনেক ভিউ আর লাইক পাচ্ছে, কিন্তু সেল আসছে না, তাহলে সময় এসেছে স্ট্র্যাটেজি পাল্টানোর। কারণ সঠিক পরিকল্পনা ছাড়া কনটেন্ট শুধু দেখাবে, কিন্তু বিক্রি করবে না।