আলো রংপুর

  • Home
  • আলো রংপুর

আলো রংপুর NewZ74

15/02/2024
 #@@@ ছবি টি ভালো করে খেয়াল করে বলুন তো এদের মধ্যে সিঙ্গেল কে?????????????????
20/11/2023

#@@@ ছবি টি ভালো করে খেয়াল করে বলুন তো এদের মধ্যে সিঙ্গেল কে?????????????????

23/07/2023
17/01/2023

😁vairal #@

26/10/2022

আমি নতুন একটু সাপোর্ট করেন ভাই ও বোনেরা🙄

12/06/2022

ইসলামের জন্য জিবন দিতে প্রস্তুত! , আমি ইসলাম কে ভালো বাসি, আল্লাহ কে ভালোবাসি আমার নবী কে ভালোবাসি! আমার নবী কে নিয়ে কেও অপমান করলে তাকে দুনিয়ায় থেকে বিদায় করে দিবো!

12/06/2022

#বিশ্ব নবী অপনাম সয়বে না রে মুসলমান 💚

24/05/2022
17/03/2022

আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক ভাবে রমজান মাসে ৩০ টি রোজা রাখা তৌফিক দান করুক 😴 আমিন!

মুসলিম দের  পরিচয় পএ!.
03/01/2022

মুসলিম দের পরিচয় পএ!.

আসসালামু  আলাইকুম............?সকল  কে জানাই নতুন বছর  "2022" শুভেচ্ছা । জন্ম  পর হতে আমাদের কাছ থেকে অনেক বছর কেটে গেছে ...
31/12/2021

আসসালামু আলাইকুম............?
সকল কে জানাই নতুন বছর "2022" শুভেচ্ছা । জন্ম পর হতে আমাদের কাছ থেকে অনেক বছর কেটে গেছে । কিন্তূ আমরা এক বারের জন্য কি পিছে তাকিয়ে দেখেছি । হতো অনেকি দেখেনি যে তাদের পিছে অনেক "দুঃখ , কষ্ট ,সুখ , রাগ , আভিমান " ইত্যাদি দিয়ে কেটে গেয়েছে পিছের কত গুলো দিন ।

"""""""""""আমি আপনাদের কে শুধু একটা প্রশ্ন করতে চায়....................?
¿¿¿¿¿¿ আপনারা বলুন তো পিছনের কেটে যাওয়া দিনে কত বার "আল্লাহ" পদে চলাচল করতে গিয়ে সফল হয়েছেন । কিন বা কত বার "আল্লাহর" নাম পড়ছেন ??????
""আশা করি উওর টা পাবো সবার কাছ থেকে""?????

আসুন ইসলাম দিনের পথে!
31/12/2021

আসুন ইসলাম দিনের পথে!

29/12/2021
29/12/2021
29/12/2021

ঘোড়া ওপর ওঠে দৌড়ে জিতলেন 🥰😍😍🥰😍😍🥰🥰😍😍🥰🥰😍🥰😍🥰😍

29/12/2021

অনেক দিন পর নৌকায় ওঠলাম!,😍

12/06/2020

সময় বড়ই মূল্যবান!!!... ।।
সকালে সূর্য্য ওঠে, সন্ধ্যায় আস্ত যায়!
এর মাঝে সময়ের পেরিয়ে যাওয়ার কিছু মুহুর্ত গুলো কারো না কারো জন্যও কাটিয়ে যায়! আবার কোনো না কোনো ব্যস্ততায় ফুরিয়ে যায়"!...
জিবনে সময় টা অনেক মুৃল্যবান!...
যে ঠিক মূহুর্তে সময়ে কাজে লাগাবে! সেই সফলতার চাবি কাঠি হাতে পাবে!.......
তাই আসুন সবাই,
সময় কে ঠিক মতো কাজে লাগাই,,,সফলতার চাবি কাঠি হাতে পাই!!!....
জনসচেতনতাই.................!
@!.Nayim islam.

02/05/2020

ছদ্মবেশ
October 8, 2019
ছদ্মবেশী
যে ঘটনাটি বলতে যাচ্ছি তা আমার নানীর মুখে শোনা।ঘটনায় আসি।আমার নানারা ছিলেন ২ ভাই। পুরান ঢাকায় নিজেদের পৈতৃক বাড়িতে তারা তাদের পরিবার নিয়ে যৌথভাবে বাস করতেন।তাদের বৃদ্ধ মা তাদের সাথে থাকতেন।ঘটনাটি ঘটে আমার বড় নানার সাথে।নানারা যে বাড়িতে থাকতেন তার পূর্ব-দহ্মিণ বরাবর টয়লেট ছিল,এর পাশেই ছিল এক বেলগাছ।বাড়িতে একটি মাত্র টয়লেট থাকায় এবং অনেক মানুষ তা ব্যবহার করার কারনে স্বাভাবিকভাবেই তা নোংরা হত।বড় নানা প্রতিদিন ফজরের ওয়াক্তে উঠে টয়লেট পরিষ্কার করতেন।ঘটনাটি যেদিন ঘটে সেদিন ছিল পূর্নিমা।
চাঁদের আলোয় চারদিক ভেসে যাচ্ছিল।হঠাত্ কোন কারনে নানার ঘুম ভেঙে যায়।তিনি বাইরে তাকিয়ে দেখেন চারদিক ফর্সা হয়ে আছে।তিনি মনে করেছিলেন ফজরের ওয়াক্ত হয়ে গেছে।তো একটি ঝাড়ু,এক বালতি পানি ও একটি হারিকেন নিয়ে টয়লেট পরিষ্কার করতে গেলেন।চোখে ঘুম থাকার কারনে তিনি বুঝতেই পারেননি তখনও ভোর হতে অনেক দেরি।টয়লেটের কাছাকাছি গিয়ে তিনি দেখেন তার মা টয়লেটের সামনে বসে আছে আর গোঙাচ্ছে।তিনি বললেন,মা এত রাতে এখানে কি কর? তার মা বলল, বাবা আমি টয়লেটে এসেছিলাম, ফেরার পথে পরে গেছি।হারিকেনটা রেখে আমার কাছে এসে আমাকে টেনে তোল ।নানা হারিকেন রেখে তার মার দিকে যেতে লাগলেন।হঠাত্ পেছনদিক থেকে তার মা তাকে ডাক দিল, ইউসুফ কার সাথে কথা বলছিস? এত রাতে টয়লেট পরিষ্কার করতে এসেছিস কেন? কেবল রাত ২টা বাজে।তিনি পিছনদিকে ঘুরে দেখেন তার মা হারিকেন হাতে দাঁড়িয়ে আছে।টয়লেটের দিকে তত্হ্মনাত্ ঘুরে দেখেন সেখানে কেউ নেই।সাথে সাথে তিনি মাথা ঘুরে পড়ে যান।তার অনেক জ্বর আসে।৩ দিন পর তার জ্বর কমে যায়।এরপর একজন হুজুর ডেকে আনা হয়।তিনি বাড়িতে ঢুকেই বলেন এখানে খারাপ একটা জিনিস আছে।টয়লেটের পাশের বেলগাছটাই ওটার আস্তানা।সেদিন রাতে নানার মা যদি নানাকে না থামাতেন তাহলে জিনিসটার কাছে গেলেই তা নানাকে মেরে ফেলত।এরপর তিনি বাড়িটা বন্ধক করে দেন এবং বেলগাছটি কেটে ফেলতে বলেন।বেলগাছটি তার কথা অনুযায়ী কেটে ফেলা হয়।এরপর আর কোন সমস্যা দেখা দেয়নি।
বিঃদ্রঃ এটি একটি সত্য ঘটনা। বিশ্বাস করা না করা আপনাদের ব্যাপার!

02/05/2020

ভূত নিয়ে তৃতীয় সত্যেও ঘটনা
October 6, 2019
যারা ভূতে বিশ্বাস করেন না, বা করতে চান না তাদের কে আজ কে আবার একটা সত্য ঘটনা শুনাব-
আমি ঢাকা আসার পর গ্রামের বান্ধবীদের সাথে চিঠি দিয়ে যোগাযোগ করতাম। চিঠি পাঠাতাম আমার এক বন্ধুর ঠিকানায়। ঐ সব চিঠি বান্ধবীদের কাছে পৌছাইয়া দিত। তখন আমাদের এলাকায় মোবাইলে ভাল নেটওয়ার্ক পাওয়া যেতনা। যে এক-দুইজনের মোবাইল ছিল তারা গাছের মগডালে উঠে নেটওয়ার্ক খুজত।
একবার হলো কি আমি একটা চিঠি পাঠাইলাম ঐ বন্ধুর ঠিকানায়। আগে থেকেই হিসেব করে রাখতাম চিঠি কবে গিয়ে পৌছাবে। তো যেদিন চিঠি পৌছানোর কথা তার আগের দিন সন্ধায় আমার বন্ধু ঢাকা এসে ফোন করল আমিতো ঢাকা। মাথায় যেন কেউ হাতুড়ি দিয়ে বাড়ি মারল। এলাকায় আমার যে শত্রু কার হাতে না কার হাতে পড়ে যায়। আর শালার পিয়নও হইলো এলাকার। তাছাড়া চিঠি যদি ঐ বন্ধুকে না পেয়ে তার বাসায় রেখে আসে। খুব ভয় পাইলাম। সিদ্ধান্ত নিলাম রাত্রেই বাড়িতে যাব। মহাখালী থেকে ময়মনসিংহের বাস পেলাম। ময়মনসিংহ যেতে যেতে রাত ১টা। হালুয়াঘাটের কোন বাস না পেয়ে শেষে হালুয়াঘাটগামী একটি ট্রাকে উঠে পড়লাম।
যখন নাগলা নামলাম তখন রাত দুইটা। কোন রিক্সা নাই। একটি দোকান খোলা পেয়ে এক প্যাকেট বেনসন আর একটা ম্যাচ নিয়ে হেটেই রওনা হলাম। ঐ খান থেকে আমার বাসা ১৫ কি.মি.। তার মাঝে ৫ কি.মি. পাকা রাস্তা, বাকী১০ কি.মি. কাচা রাস্তা। হঠাৎ একটি রিক্সা দেখে পুলকিত হলাম। কিন্তু রিক্সাওয়ালা শুধু পাকা রাস্তাটি যেতে রাজি হলো। কাঁচা রাস্তায় অনেক কাঁদা তাই যাবেনা। আমি পাকা রাস্তাটি ১০ টাকা দিয়ে গেলাম। তারপর প্যান্ট উল্টিয়ে হাটু পর্যন্ত তুলে রওনা হলাম।
মাঝে মাঝেই চাঁদটা মেঘের আড়ালে ঢাকা পড়ছে। তখন চারদিকে অন্ধকার হয়ে যায়। মনে হচ্ছে এই বুঝি চাঁদটাকে কোন দৈত্য তাড়িয়ে নিয়ে গেছে। পাশের ধানক্ষেত থেকে একটি ব্যাঙ থেমে থেমে করুন সুরে ডেকে যাচ্ছে। বুঝতে পাড়লাম হয়তো কোন সাপ ঐ ব্যাঙটিকে ধরেছে।
আমি হেটেই চলছি। আমাকে যে সকালেই বাজারে পৌছাতে হবে। মাঝে মাঝে সিগারেট ধরিয়ে এক-দুইটা ফুক দিচ্ছি। আসলে সিগারেট খাওয়ার চেয়ে হাতে সিগারেটের আগুন রাখাই মূখ্য উদ্দেশ্য। দূর থেকে দুটি শেয়াল দেখতে পেলাম। আমাকে দেখে যেন অবাক হয়ে গেছে। কাছে যেতেই এক দৌড়ে পাশের ধানক্ষেতে মিলিয়ে গেল।
আমদের ইউনিয়নে ঢুকে পড়লাম। আর মাত্র সাড়ে চার কি.মি.। আকাশের চাদটা মাঝে মাঝেই উকি দিয়ে হারিয়ে যাচ্ছে। যেন আমার সাথে লুকোচুরি খেলছে, আর তারাগুলো যেন মিটিমিটি করে হাসছে।
পেশাবের খুব চাপ দিল। ভাবলাম ব্রীজটার উপরে উঠেই...। হাতের সিগারেট টা এইমাত্র শেষ হয়েছে। আমি ব্রীজের উপরে দাড়ানো।
হঠাৎ....হঠাৎ.... ব্রীজের নিচ থেকে একটি মেয়ের হাসি শোনা গেল। আমিতো অবাক। ভাবলাম নিশ্চয় কেউ ঐখানে........। এইভেবে চিন্তা করলাম দেখি আসি কে ঐখানে........।
তখনই মনে পড়ল আরে এখন না বর্ষাকাল। ব্রীজের নিচেতো পানি। সাথে সাথেই কি যেন পায়ের তলা দিয়ে সোজা মাথায় উঠে গেল। চিনচিন করে মাথাটা ব্যাথাটা করছে। আমি যখন খুব ভয় পায় তখন আমার ঐ রকম লাগে। আমি ব্রীজ থেকে নেমে সোজা হাটা শুরু করলাম।
- দাঁড়াও
পিছনে তাকিয়ে দেখি ঠিক ব্রীজের মাঝখানে একটি সাদা শাড়ীপড়া যুবতী মেয়ে দাড়ানো আছে।
-আমাকে তুমি চিননা
চমকে উঠলাম দেখি অর্পনা। ভাল করে তাকালাম। এখন কিন্তু আর অর্পনা মনে হচ্ছেনা। অর্পনার কথা খুব মনে পড়ে গেল।
-আমি বললাম না চিনিনা।
-তুমি আমারে লইয়া যাও।
-আমি আপনাকে কোথায় নিয়া যাব
ভয়ংকর ভয়ংকর সে চিৎকার। যেন কানের পর্দা ছিড়ে যাবে। আমি দৌড়দিলাম। চিৎকার যেন বেড়েই চলছে। পানিতে ঝাপ দেওয়ার শব্দ শুনা গেল। আমি পিছনে তাকাবার সাহস পেলাম না। সামনে বাতি আর মানুষ দেখতে পেয়ে থেমে গেলাম।
-কি হয়েছে চিয়ারম্যানের পুত।
আমি সব খুলে বললাম। সাথে এও বললাম আমি তো আর একলা একলা বাসায় যেতে পারবনা।
তারপর তারা সবাই মিলে আমাকে বাসা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসল। আমি আব্বা-আম্মাকে কিছু বলতে নিষেধ করলাম"!

02/05/2020

কাল্পনিক ভূতের গল্প
October 8, 2019
এক লোক রাতের অন্ধকারে একা জঙ্গলের পথধরে বাড়ি ফিরছিল। হাতে টিমটিম করে জ্বলা হারিকেন। চলতে চলতে হঠাৎ সে লক্ষ্য করলো - হারিকেনের আলো পড়ে রাস্তার পাশে কি যেন ঝিলিক দিয়ে উঠলো। কৌতুহলী হয়ে লোকটা এগিয়ে গেল সেই দিকে। গিয়ে দেখল এক তরুনী মেয়ের লাশ পড়ে আছে। সে ভয় পেলেও ঠিকই দেখলো মেয়েটির ডান হাতের মধ্যম আঙুলে একটি হীরার আংটি জ্বল জ্বল করছে। একটু ইতস্তত করে সে হারিকেনটা পাশে নামিয়ে রেখে লাশেরআঙুল থেকে আংটিটা খোলার চেষ্টা করলো। কিন্তু আঙুল ফুলে ওঠায় কিছুতেই ওটা খুললো না। লোকটা তখন তার পকেট থেকে একটি ছুরি বের করলো। তারপর সেই ছুরি দিয়ে পুচিয়ে পুচিয়ে লাশের আঙুলটা কেটে ফেলল। ঠিক তখনই রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙে কাছাকছি কোথাও একটা শেয়াল ডেকে উঠলো। লোকটা প্রচন্ড ভয় পেয়ে ঐ আঙুল সহ আংটি পকেটে পুরে ছোটা শুরু করলো। এক ছুটে বাড়িতে এসে কাউকে কিছুনা বলে সে ঐ রাতেই চুপে চুপে আঙুল থেকে আংটি ছাড়ালো। তারপর আংটিটা লুকিয়ে রেখে আঙুলটা পুঁতে ফেলল মাটিতে। এরপর অনেক দিন প্রায় দশ ববছর কেটে গেছে। ঐ আংটিটা বেচে ব্যাবসা করে লোকটা এখন অনেক টাকার মালিক। লোকটা সেই মেয়েটির কথা প্রায় ভুলে গেছে। এক অমাবস্যা রাতে সে তখন বাড়িতে একা। চারিদিকে শুনশান নিরবতা। হঠাত্ বাইরে দরজার কড়া নড়ে উঠলো - খট্ খট্ খট্ খট্। সে একটু বিরক্তি নিয়ে গিয়ে দরজা খুললো। দেখলো দরজার সামনে শাদা শাড়ি পড়ে এক তরুনী দাঁড়িয়ে আছে। মাথায় ঘোমটা দেয়া থাকলেও তাতে তার রূপ ঢাকা পড়ছে না এতটুকু। লোকটা গদ গদ হয়ে প্রশ্ন করলো - কি ব্যাপার ? কাকে চান? তরুনী কেমন খসখসে গলায় বলল - ভাই আমি অনেক দূর থেকে এসেছি। যাবো আপনাদের পাশের গ্রামে। কিন্তু এতরাতে অন্ধকারে পথ হারিয়ে ফেলেছি। এদিকে প্রচন্ড ক্ষুধা পেয়েছে। আমাকে যদি আজরাতে একটু আশ্রয় দিতেন, একটু খাবার দিতেন! লোকটা যেন এমন সুযোগের অপেক্ষাতেই ছিল। বাড়িতে সে একা তায় আবার এমন সুন্দরী মেয়ে। সে বলল - আসুন আসুন, কোন চিন্তা নেই। সব ব্যবস্থা হবে। সে মেয়েটিকে বসতে দিয়ে খাবার নিয়ে এল। মেয়েটি খাবারের থালা টেনে নিয়ে খাবার মাখাতে লাগলো। লোকটা তখন লোভাতুর চোখে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ সে চমকে উঠলো। দেখলো মেয়েটি যে হাত দিয়ে খাবার মাখাচ্ছে সে হাতে চারটি আঙুল। মধ্যমা আঙুলটা যেখানে থাকার কথা সেখান থেকে রক্ত ঝরছে। লোকটির আত্মা কেঁপে উঠলো। সে ভয় পাওয়া গলায় জানতে চাইলো - আ..আপনার হাতের আঙুলের কি হয়েছে!? তখনই মেয়েটা সরাসরি লোকটার দিকে তাকিয়ে একটা বিকট হাসি দিল। যা দেখে লোকটা প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেল। এবং ভয়ের একটা অদ্ভুত শিরশিরানি তার মেরুদন্ড বেয়ে নেমে গেল। মনে হল মেয়েটাকে সে কোথাও দেখেছে। তখনই মেয়েটা কথা বলে উঠলো, আপনিই তো জানেন আমার আঙুলের খবর। লোকটা ভয়ে ভয়ে বলল মানে? মেয়েটা ভয়ংকর একটা হাসি দিয়ে বলল মনে পড়ে আজ থেকে দশ বছর আগে রাস্তার পাশে একটা মেয়ের লাশ পড়ে থাকতে দেখেছিলেন? আপনি লাশের মূল্যবান অলংকার গুলো নিয়ে সরে পড়েছেন সাথে লাশটার মধ্যমা আংটির জন্য আঙুলটাও। মনে পড়ে আপনার? আপনি যদি লোকজনকে লাশটার কথা অন্তত বলতেন তাহলে অন্তত শিয়াল কুকুর একটা মুসলিম, অসহায় এবং পরিস্থিতির শিকার মেয়ের লাশ চিড়ে চিড়ে খেতোনা। আপনিইতো আংটির লোভে লাশটার একটা আঙুল পর্যন্ত কেটে ফেলেছেন। এখন আমায় ঐ আঙুলটা দিন। মধ্যমার আঙুল না থাকলে কত যে অশুবিধা সেটা বলে বোঝানো যাবেনা। তখনই লোকটার দশ বছর আগে দেখা লাশের চেহারাটার কথা মনে পড়ে গেল। এই মেয়েটার লাশ থেকেইতো সে ঐ আংটিটা পেয়েছে। তাহলে এ এখানে এলো কোথ্যেকে? আর কিছু ভাবতেই পারলোনা তার আগেই জ্ঞান হারালো। সকালে বাড়ির লোকজন ফিরে এসে অনেক ডাকাডাকি করেও দেখলো যখন কেউ দরজা খুলছেনা তখন দরজা ভেঙে বাসায় ডুকে দেখে লোকটার নিস্তেজ দেহ। যেনো প্রবল আতঙ্কে হা হয়ে আছে। ডাক্তাররা পরীক্ষা করে বলে অতিরিক্ত মানষিক চাপের ফলে স্ট্রোক করে মারা গেছে। আর লোকটা যেখানে ঐ আঙুলটি পুঁতে রেখেছিলো সেখানে কেউ যেনো মাটি খুড়ে রেখে গেছে। আসল ঘটনাটা কেউ বুঝতেই পারলোনা এটা যে লোকটার পাপের শাস্তি। সম্পাদিত কেমন লাগলো গল্পটা অবশ্যই জানাবেন। সাথে থাকার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ

02/05/2020

অনুভুতিহীন ভূত
October 8, 2019
বাড়িটি ভাড়া নিলাম। বিরাট বড় বাড়ি। বাড়িটার বাইরের পরিবেশ দেখলেই গাঁ ছমছম করে। বাড়ির দক্ষিণ দিকে বড় বাঁশ ঝাড়, উত্তর দিকে বেশ বড়সড় একটা পুকুর। পুকুরটার পানি খুবই পরিষ্কার। গরমের সময়। তাই বেছে বেছে দক্ষিণ দিকের রুমটাই থাকার জন্য ঠিক করলাম। আমাকে সব সময় সাহায্য করার জন্য গ্রামে একটা সাহসি ছেলেকে কাছে রাখলাম। ১৭ বছর বয়সি ছেলেটার নাম কাদের। সুঠাম দেহ। কোন কাজেই অনিহা নেই। সারা দিন কাজ করলেও ক্লান্তি তার শরীরে ভর করতে পারে না। ও আমার পাশের রুমটাতে থাকে। ৫-৭ দিন বেশ নির্বিঘ্নেই কাটিয়ে দিলাম। প্রথম অস্বাভাবি ঘটনার কথা বলছি। সেদিন অফিস থেকে ফিরলাম সন্ধ্যা ৭টার দিকে। এসে জামা কাপড় ছেড়ে বেসিনে গেলাম চোখে মুখে পানি দিতে। পানি ছেড়ে আয়নাতে তাকাতেই মনে হল একটা আলোর রেখা পিছন থেকে সরে গেল। পিছনে তাকিয়ে কিছুই পেলাম না। ভাবলাম দেখার ভুল। কিন্তু কিছুক্ষণ পর একই ঘটনা আবার ঘটল। আলোটা একদেয়াল থেকে অন্য দেয়ালে যেয়ে মিলিয়ে গেল। যেহেতু এটা ছিল আমার দেখা প্রথম অস্বাভাবিক ঘটনা তাই কেমন জানি একটা শিহরণ অনুভব করলাম। কাদের একটু পরেই বাজার থেকে আসল। দুজন মিলে রান্নার কাজটা সেরে খাওয়া দাওয়া করতে সাড়ে ১০টা বেজে গেল। খাওয়া শেষ করেই ও ঘুমাতে গেল। শুয়ে শুয়ে সন্ধ্যার ঘটনার পিছনে কারণ সন্ধান করছি। এমন সময় কারেন্ট চলে গেল। আমার খাটটা উত্তর দক্ষিণ ভাবে সে করায় দক্ষিণ দিকে পা দিয়ে শুয়ে আছি। কারেন্ট যাওয়া বাইরে থেকে চাঁদের আলো দক্ষিণ দিকের জানালা দিয়ে ভিতরে এসে একটা অদ্ভুত সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি হল জানালা দিয়ে বাইরের পরিবেশটা দেখতে খুবই সুন্দর লাগছে। বাঁশ বাগানের আলো ছায়ার খেলা দেখতে দেখতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম জানি না। আমার একটা অভ্যাস হল শত গরমের মধ্যেও ঘুমানোর সময় হাটু পর্যন্ত কাথা টেনে ঘুমানো। ঘুমে এক পর্যায়ে টের পেলাম পায়ের উপর কাথা নেই, সরে গেছে। কাথাটা হাটু পর্যন্ত টেনে আবার চোখ বুজলাম। কিছুক্ষণ পর মনে হল কাথাটা ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে। শরীরের ক্লান্তির জন্য চোখুলতে ইচ্ছা হল না। ভাবলাম মনের ভুল। কিন্তু হঠাত্ করেই মনে হল কাথাটা দ্রুত সরে যাচ্ছে। ধড়ফড় করে উঠে বসতেই জানালায় চোখ গেল। মনে হল একটা ছায়া দ্রু সরে গেল। কাথার একটা অংশ জানালার মধ্যে ঢুকে আছে। হেচকা টানে কাথা ভিতরে নিয়ে নিলাম। সাথে সাথে বাঁশ বাগানের ভিতর থেকে খলখল হাঁসির শব্দ ভেসে এল।মেরুদণ্ডের উপর দিয়ে একটা ঠাণ্ডা শ্রোত বয়ে গেল। সারা শরীর অবস হয়ে আসছে। মনে হচ্ছে আমি মারা যাচ্ছি। অসাড় দেহ নিয়ে আমি জানালা দিয়ে তাকিয়ে আছি। এসময় দুরে বাঁশবাগানের মধ্যে একটা স্পষ্ট নারী ছায়ার সরে যাওয়া দেখলাম। হারিয়ে যাওয়ার শেষ মুহূর্তে সে আমার দিকে একঝলক তাকালো। তার চাহনিতে যেন ক্রোধ ফুটে উঠেছে। আমি ঠিক বুঝতে পারছি না এ মুহূর্তে আমার করণীয় কি। এনেকক্ষণ যাবত চুপচাপ বসার পর একটু নড়েচড়ে বসলাম। ঠিক তখনই দেখলাম পাশের চেয়ারে ঘটে চলা অপার্থিব এক ঘটনা। চেয়ারটা ১ইঞ্চি উপর দিয়ে ভেসে ভেসে নড়াচড়া করছে। একটা ছন্দে চেয়ারটা ঘুরছে। হঠাত্ করে চেয়ারটা ফুট দুয়েক উপরে উঠে গেল এবং চেয়ারটার পিছনে থাকা অদৃশ্য কেউ চেয়ারটাকে স্বশব্দে মাটিতে ছুড়ে দিল। গলা থেকে একটা ভয়াল আর্তচিত্কার বেরিয়ে এল। সাথে সাথে পাশের রুম থেকে কাদের ছুটে এল। কি হইছে ভাইয়া, খারাপ স্বপ্ন দেখছেন? আমি কোন কথা বলতে পারছিনা। কোন রকমে উচ্চারণ করলাম পানি। পানি খাওয়ার পরপরই কারেন্ট এসে গেল। কাদের রুমে চলে গেল। জানালা বন্ধ করে বাতি জ্বালিয়ে সারা রাত মিউজিক শুনলাম। বিষয়টা জানতে পারলে কলিগদের মধ্যে হাসির রোল পড়ে যাবে। এটা ভেবেই আমি কাউকে কিছু বললাম না এমনকি কাদেরকে ও না। বিকালে বাসায় ফিরে যতক্ষণ সম্বব কাদেরের সাথে থাকার চেষ্টা করলাম। রাত ১১টার দিকে কাদের শুতে গেল। আজ জানালা বন্ধ রাখলাম এবং সারা রাত বাতি জ্বালানো ব্যবস্থা করলাম। সে রাতে বিশেষ কিছু ঘটলনা। তবে একটা অদ্ভুত স্বপ্ন দেখলাম। পরের দিন বিকালে অফিস থেকে ফিরে যথারীতি বেসিনে হাতমুখ ধুতে গেলাম। ট্যাপ ছাড়লাম কিন্তু পানি পড়ছে না। ভাবলাম পানি নেই। কাদেরকে মটরটা ছাড়তে বলব তখন দেখি ফুল স্পিডে পানি পড়ছে। পানিতে হাত দিতেই পানি পড়া বন্ধ হয়ে গেল। ট্যাপ বন্ধ করে যখন রুম থেকে বেরিয়ে যাচ্ছি তখন কোথা থেকে একঝাপটা পানি এসে সমস্ত শরীর ভিজিয়ে দিল। আমি দ্রুত রুমে চলে গেলাম। ভয়ে গলা শুকিয়ে আসছে। কাদেরকে ডেকে একটু কথা বলায় ভয়টা হালকা কমলো। রাত ১১টার দিকে কাদের ঘুমাতে যাওয়ার পর আমারো হালকা তন্দ্রা আসলো। একটা অদ্ভূত শব্দে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল। মনে হল কেউ নুপুর পায়ে হাটছে। প্রায় ১ঘন্টা জেগে শব্দটি আবার শোনার জন্য অপেক্ষা করলাম। কিন্তু কোন শব্দ শুনলাম না। এবার ঘুমানোর চেষ্টা করবো ঠিক তখন স্পষ্ট শুনলাম আমার মাথাথেকে একটা নুপুরের শব্দ পায়ের পাশদিয়ে জানালা পর্যন্ত যেয়ে থেমে গেল। সারা রাতে আর কিছুই ঘটেনি। তবে সেই অদ্ভুত স্বপ্নটা আজো দেখলাম। ৬-৭ টা রাত পার হয়ে গেলো। রাত গুলোতে মাঝে মাঝে আমি গভীর কান্নার শব্দ শুনেছি। তবে প্রতিরাতেই আমি ঐ অদ্ভুত স্বপ্নটা দেখেছি।স্বপ্নটা ছিল এরকমঃ বাড়িটার সামনে শতশত লোক। সবার চোখে মুখে আতঙ্ক। বাড়িয়লার চোখ অশ্রুসিক্ত। সে সবাইকে কিছু একটা বলছে। এই স্বপ্নটাই প্রতিদিন দেখেছি। তবে আজ রাতের স্বপ্নটার কথা মনে হলেই গা শিউরে উঠছে, অস্থিরতা বেড়ে যাচ্ছে। আজ দেখলামঃ বাড়িটার সামনে শতশত লোক। সবার চোখে মুখে আতঙ্ক। বাড়িয়লা অশ্রুসিক্ত চোখে বলছে আমি ওকে বাড়ি ভাড়া দিতে চাই নি, আমার কথা শোনে নি, এখানে আসার পর এত কিছু ঘটলকিন্তু আমাকে কিছুই জানায় নি” সবাই দুটি কাফনে মোড়া লাশকে ঘিরে দাড়িয়ে আছে। কারো কারো মুখে বেশ কয়েকবার সুইসাইট কথাটা শুনলাম। সবচেয়ে স্পষ্ট যে কথাটা শুনলাম সেটা হল অমাবস্যা । কেউ কেউ বলছে অমাবস্যা রাতে এ বাড়িতে এমনই হয়। স্বপ্নটা দেখে আমার অন্তরাত্মা কেঁপে উঠল। কপালে হাত দিয়ে বুঝলাম জ্বর হয়েছে। থার্মোমিটারে ১০৪ ডিগ্রী শো করল। অসুস্থ্য শরীর নিয়েই অফিসে গেলাম। কোন কাজেই মন বসাতে পারলাম না। থেকে থেকে আমার শুধু অমবস্যা রাতের কথা মনে আসছে। আমার এক ঘনিষ্ট কলিগকে জিগগেস করলাম ” আচ্ছা ভাই, অমবস্যা রাত কবে বলতে পারবে?” “কেন ভুত ধরবা নাকি” বলে হাসতে হাসতে চলে গেল। বিকালে বাসায় ফিরে দেখি কাদের বাজার করেই ফিরেছে। আমি জামা কাপড় ছেড়ে ওর কাছে গিয়ে বসলাম। আচ্ছা এই বাড়িতে কি ঘটেছিল জানো? হুম, এখানে একটা বড় ফ্যামিলি থাকত। রাতুল সাহেব, তার স্ত্রী, ২ ছেলে ও ১মেয়ে। অভাব অনাটন সব সময় লেগেই থাকত। মেয়েটা কলেজে পড়ত। টাকার অভাবে বেতন দিতে পারত না। সংসারে সারা দিন অশান্তি লেগেই থাকত। তারপর এক অমাবস্যা রাতে সবাই এক সাথে সুইসাইট করল। বাবা মা আর মেয়েটা গলায় দড়ি দিল। ছেলে দুইটাকে বিষ খাওয়ানো হয়েছিল। কাহিনিটা একনিঃশ্বাসে বলে থামল কাদের। প্রতিক্রিয়া দেখার জন্য আমার দিকে তাকাল। ভয়ে চাদরটা জোরে আকড়ে ধরে আছি। কাপাকাপা গলায় জিগগেস করলামঃ “তোমার ভয় করেনা?” “নাঃ” “এতো দিন এখানে থাকলে, কিছু দেখেছো?” “হুম” “কি দেখেছ?” “পায়ের ছাপ। প্রায় প্রতিদিন সকালেই অসংখ্য ছোট বাচ্চার পায়ের ছাপ দেখেছি।” “আর?” “কান্নার শব্দ শুনতাম। বাচ্চার কান্নার শব্দ।” “আচ্ছা, অমাবস্যা রাতে এ বাড়িতে অনেক কিছু ঘটে তাইনা?” “হুম” “আমাদের তো মেরেও ফেলতে পারে তাই না?” “হুম” আমি আর একটা কথা অনেক সাহস করে জিগগেস করলাম “অমাবস্যা কবে?” এ প্রশ্নে ও কিছুটা চমকে উঠল। বেশকিছু সময় পর মাথা নেড়ে বলল “জানি না” সাড়ে ১০টার দিকে শুয়ে পড়লাম। বাইরে একটা ডাহুক পাখি ঘনঘন ডাকছে। ১১টার দিকে কারেন্ট চলে গেল। উঠে মোমবাতিটা জ্বালিয়ে শুয়ে পড়লাম। চোখে ঘুম ঘুম ভাব এসেছে। ঠিক তখনই মনে হল আমার মাথার কাছে কেউ ফিসফিস করে কথা বলছে। আমি নড়েচড়ে উঠলাম। এসময় চোখ গেল ফ্যানের দিকে। দেখি সেটার পাখা গুলো জোরে জোরে কাপছে। ঠিক এমন সময় পাশের রুম থেকে কাদেরের ভয়াল চিত্কার শুনে আমিও চিত্কার করে ওর রুমে ছুটে গেলাম। যেয়ে দেখি ও মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে আর ওর কানের নিচ দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। আমাকে দেখামাত্রই আমার পা জড়িয়ে ধরে বলল “ওরা আমাকে মেরে ফেলবে আমাকে বাচান”। শক্ত কিছুদিয়ে মারার চিহ্ন দেখলাম। ওকে আমার রুমে নিয়ে এসে ক্ষত জায়গাটা গামছা দিয়ে বেধে দিলাম। দুজন পাশাপাশি বসে আছি। কারো মুখে কোন কথা নেই। পাশে টেবিলে রাখা মোমবাতিটা টিম টিম করে জ্বলছে। হঠাত্ করে দরজার পাশ দিয়ে নুপুরের স্পষ্ট শব্দ শোনা গেল। মনে হল নুপূর পায়ে কেউ দৌড়ে গেল। ও আমার আরো কাছে সরে এল। সাথে সাথে পাশের ঘরের আয়নাটা সশব্দ ভেঙে পড়ল। আবার নুপুরের শব্দ শোনা যাচ্ছে। আমার দরজা পর্যন্ত এসে থেমে গেল। এবার মনে হচ্ছে আমাদের দিকেই আসছে। ঝুম ,ঝুম, ঝুম। হঠাত্ করেই মোমবাতিটা নিভে গেল। অন্ধকারের একছত্র অধিপত্য কায়েম হল। অন্ধকারের বুকচিরে আবার নুপুরে শব্দ এদিকেই এগিয়ে আসছে। কাদের আমাকে জড়িয়ে ধরল। হঠাত্ কাদের গগন বিদারি চিত্কার দিয়ে রুম থেকে ছুটে বেরিয়ে গেল।মোবাইলের আলো জ্বেলে ওর পিছনে দৌড়াতে যেয়ে কিছু একটাতে বেধে পড়েই জ্ঞান হারালাম। যখন জ্ঞান ফিরল দেখি মোবাইলের টর্চটা তখনো জলছে। চারিদিকে গাঢ় অন্ধকার। একটা ভেজা ফ্লোরে আমি পড়ে আছি। প্রচণ্ড দূর্বল শরীরটাকে কোন রকমে টেনে তুললাম। টর্চের আলোতে দেখি ফ্লোরটা রক্তে ভিজে গেছে। কপালে প্রচণ্ড ব্যাথা। ধীরে ধীরে কাদেরের রুমে ঢুকলাম। ঢুকে এক বিভত্স দৃশ্য দেখে চিত্কার দিয়ে বেরিয়ে এলাম। কি মনে করে ঐ ঘরে আবার ঢুকলাম।ফ্যানের সাথে দড়ি দিয়ে ঝুলে আছে দেহটা। চোখ দুটো কোটর থেকে বেরিয়ে পড়েছে। জিহ্বাটা ইঞ্চি তিনেক বাইরে বেরিয়ে আছে। মাথাটা ঘুরে নিচে পড়ে গেলাম। একটা সাদা কাগজের উপর মোবাইলটা ছিটকে পড়ল। সেখানে অস্পষ্ট ভাবে লেখা “আপনি পালান, আজই অমাবস্যা” অনুভূতিহীন চোখে mobile screen এ দেখলাম battery low shut down. আবার অন্ধকার নেমে এল।অন্ধকারের বুক চিরে নুপুরের শব্দটা আবার শোনা যাচ্ছে! আবার নেই"!

18/03/2020

ভুয়া ফেসবুক বা টুইটার আইডি খুলে হয়রানি

কেউ আপনার নামে ভুয়া ফেসবুক বা টুইটার আইডি খুলে বিব্রত করলে বা খারাপ মন্তব্য করলে কিংবা সম্মানহানিকর কিছু পোস্ট করলে সংশ্লিষ্ট থানায় গিয়ে জিডি করুন। সমস্যাটি গুরুতর হলে প্রয়োজনে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে কিংবা পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা করতে পারেন। আর প্রমাণ হিসেবে উক্ত ভুয়া আইডির স্ক্রিনশর্ট নিন ও সংশ্লিষ্ট পেইজটি সেভ করে রাখুন, যেন পরবর্তীতে আপনার অভিযোগের ভিত্তিটা মজবুত হয়।

18/03/2020

বাংলাদেশের সংবিধানে মৌলিক অধিকার কোনগুলো?

সমাজে মর্যাদাপূর্ণভাবে বেঁচে থাকতে একজন মানুষের যেসব অধিকার দরকার, সেগুলো মানবাধিকার হিসেবে বিবেচিত হয়। একটি রাষ্ট্রের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে এসবের মধ্য থেকে কিছু অধিকারকে মৌলিক হিসেবে ঘোষণা করে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই মৌলিক অধিকার ভঙ্গ হলে রাষ্ট্র প্রতিকার দিতে বাধ্য থাকে। সংক্ষেপে বলতে গেলে, মানবাধিকার মানুষের জন্মগত। আর মৌলিক অধিকার হলো আইনগতভাবে স্বীকৃত।

বাংলাদেশের সংবিধানে মৌলিক অধিকার : প্রতিটি দেশের সংবিধানেই মৌলিক অধিকারের বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। বাংলাদেশ সংবিধানের তৃতীয় ভাগে মৌলিক অধিকার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। সংবিধানের ২৬ থেকে ৪৭ (ক) অনুচ্ছেদগুলো মৌলিক অধিকার সংশ্লিষ্ট। তৃতীয় ভাগের শুরুতে অর্থাৎ ২৬ নম্বর অনুচ্ছেদেই বলা হয়েছে, মৌলিক অধিকারের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ কোনো আইন করা যাবে না। আর যদি করা হয়, তবে তা বাতিল হয়ে যাবে। সরকার বা মন্ত্রিপরিষদ ইচ্ছা করলেই মৌলিক অধিকার পরিপন্থী আইন তৈরি করে এর ব্যত্যয় ঘটাতে পারবে না।

আইনের দৃষ্টিতে সমতা : নাগরিকদের কীভাবে দেখা হয়, সে বিষয়ে বলা হয়েছে সংবিধানের ২৭ নম্বর অনুচ্ছেদে বিদ্যমান আইনে। এই অনুচ্ছেদে বলা আছে, আইনের দৃষ্টিতে প্রতিটি নাগরিক সমান।

অবস্থানগত কারণে বৈষম্য : ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, বাসস্থান বা পেশাগত কারণে কোনো নাগরিকের প্রতি বৈষম্য করা যাবে না। মৌলিক এ অধিকারের বিষয়ে সংবিধানের ২৮ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে।

সরকারি চাকরিতে অধিকার : ২৯ নম্বর অনুচ্ছেদে সরকারি চাকরিতে সবার সমান সুযোগ আছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
আইনের আশ্রয়লাভের অধিকার : রাষ্ট্রের যেকোনো নাগরিকের আইনের আশ্রয়লাভের অধিকার আছে উল্লেখ করে সংবিধানের ৩১ ও ৩২ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, সুস্পষ্ট কারণ ছাড়া কোনো নাগরিকের বিরুদ্ধে এমন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না- যাতে তাঁর জীবন, স্বাধীনতা, দেহ, সুনাম বা সম্পদের ক্ষতি হয়।

বিনা বিচারে আটক : কোনো ব্যক্তিকে আটক করা নিয়ে নির্দেশনা আছে ৩৩ নম্বর অনুচ্ছেদে। এতে বলা হয়েছে, বিনা কারণে কাউকে আটক করা যাবে না। কোনো কারণে কাউকে আটক করা হলে সেটির কারণ জানিয়ে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ দিতে হবে। কোনো অবস্থায় তাকে ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় হাজতে রাখা যাবে না। আটকের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পার্শ্ববর্তী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আটক ব্যক্তিকে হাজির করে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।

জোরপূর্বক শ্রম : ফৌজদারি অপরাধের সাজাপ্রাপ্ত আসামি না হলে অথবা জনগণের বৃহৎস্বার্থে আবশ্যক না হলে কাউকে জোর করে কোনো কাজ করানো যাবে না। এ বিষয়টি বলা হয়েছে ৩৪ নম্বর অনুচ্ছেদে।

বিচার ও দণ্ড সম্পর্কে রক্ষণ : কেউ কোনো অপরাধ করলে তার বিচার অবশ্যই ওই সময়ে প্রচলিত আইনে করতে হবে বলে ৩৫ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে। এক অপরাধের জন্য একাধিকবার শাস্তি দেওয়া যাবে না। এ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রতিটি নাগরিকের স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচারের অধিকার রয়েছে। কাউকে নিজের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করা যাবে না এবং নিষ্ঠুর, অমানুষিক বা লাঞ্ছনাকর দণ্ড দেওয়া যাবে না।

সমাবেশ, সংঘটন ও চলাফেরার স্বাধীনতা : জনস্বার্থে আইনের মাধ্যমে আরোপিত যুক্তিসংগত বাধা-নিষেধ ছাড়া দেশের যেকোনো স্থানে অবাধ চলাফেরার, দেশত্যাগ ও পুনঃপ্রবেশের স্বাধীনতা রয়েছে নাগরিকদের। ৩৬, ৩৭ ও ৩৮ নম্বর অনুচ্ছেদে বিষয়গুলোর উল্লেখ করা হয়েছে। এ অনুচ্ছেদগুলোতে জনস্বাস্থ্য ও জনশৃঙ্খলার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে যেকোনো সমাবেশ বা সংগঠনের অধিকার প্রতিটি নাগরিকেরই রয়েছে বলে জানানো হয়েছে।

চিন্তা, বিবেক ও বাকস্বাধীনতা : রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, জনশৃঙ্খলা, শালীনতা ও নৈতিকতার স্বার্থে আইনের মাধ্যমে যুক্তিসংগত বাধানিষেধ সাপেক্ষে প্রতিটি নাগরিকের চিন্তা, বিবেক ও বাকস্বাধীনতা রয়েছে। ৩৯ নম্বর অনুচ্ছেদে এ বিষয়ের উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, সংবাদপত্রগুলোকেও এ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে।

পেশা নির্বাচনের স্বাধীনতা : যেকোনো নাগরিক আইন অনুযায়ী যেকোনো কাজকে নিজের পেশা হিসেবে বাছাই করতে পারবে বলে ৪০ নম্বর অনুচ্ছেদে উল্লেখ করা হয়েছে।

ধর্মীয় স্বাধীনতা : প্রতিটি নাগরিকের নিজ নিজ ধর্ম পালনের স্বাধীনতা থাকবে বলে ৪১ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, কাউকে জবরদস্তি করে কোনো ধর্ম পালনে বা পাঠদানে বাধ্য করা যাবে না।

সম্পত্তির অধিকার : আইনের মাধ্যমে আরোপিত বাধা-নিষেধ সাপেক্ষে প্রতিটি নাগরিক সম্পত্তি অর্জন, ধারণ, হস্তান্তর করতে পারবে বলে ৪২ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে।

গৃহ ও যোগাযোগের অধিকার : রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, জনশৃঙ্খলার স্বার্থে আইনের মাধ্যমে আরোপিত বাধা-নিষেধ সাপেক্ষে প্রতিটি নাগরিকের নিজ গৃহে নিরাপত্তা লাভের অধিকার থাকবে। ৪৩ নম্বর অনুচ্ছেদে বিষয়টির উল্লেখ করে বলা হয়েছে, নাগরিকদের চিঠিপত্র ও যোগাযোগের গোপনীয়তা রক্ষা করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।

25/01/2020

মোবাইল ফোন হারালে বা চুরি হয়ে গেলে কী করবেন?

সময়ের পরিক্রমায় মোবাইল ফোন এখন এক অতি প্রয়োজনীয় বস্তুতে পরিণত হয়ে পড়েছে। দ্রুত যোগাযোগের ক্ষেত্রে মোবাইল ফোন এখন অপরিহার্য। কারণ, এতে রয়েছে নানা ধরনের সুবিধা। কেউ চাইলেই পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তের মানুষের সঙ্গে মুহূর্তের মধ্যেই যোগাযোগ করতে পারেন মোবাইল ফোনের মাধ্যমে। বস্তুত, মোবাইল ফোনের ব্যবহার বিশ্বকে মানুষের হাতের নাগালে এনে দিয়েছে। এর সবচেয়ে বড় যে সুবিধা তা হলো দ্রুত যোগাযোগ। বর্তমানে স্মার্ট মোবাইল ফোন কথা বলা ছাড়াও ডিজিটাল ক্যামেরা, অডিও-ভিডিও রেকর্ডার, মাল্টিমিডিয়া মেসেজিং, ই-মেইল, ইন্টারনেট ব্যবহার, ভিডিও গেম সুবিধা, উপাত্ত পর্যবেক্ষণ, গান শোনা, টিভি দেখা, ভিডিও দেখা, বারকোড রিডারসহ নানা কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। আর এই ধরনের দরকারি একটি জিনিস চুরি হয়ে গেলে কিংবা হারিয়ে গেলে দুশ্চিন্তার অন্ত থাকে না। পাশাপাশি বেশি দুশ্চিন্তা থাকে যে, কেউ যদি ওই মোবাইল ফোনটির কোনো অপব্যবহার করে থাকে। মোবাইল ফোন হারানোর দুঃখ কেবল ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিই ভালো বলতে পারবেন। মোবাইল ফোন চুরি হলে মনে জাগে, চোর বুঝি মোবাইল ফোনে রক্ষিত সব তথ্য পড়ে ফেললো। আর অপরদিকে চোর ভাবে, চোরাই ফোন বিক্রি করে যদি কিছু কামানো যায়। মোবাইল ফোন চালু রাখা ও বন্ধ রাখার প্রযুক্তি রয়েছে। কিন্তু দূর থেকে মোবাইল ফোন অকেজো করে ফেলার কার্যকর কোনো পদ্ধতি এখন পর্যন্ত নেই। প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন বসে নেই চুরি ঠেকাতে নিত্য নতুন প্রযুক্তি বা সফটওয়্যার তৈরিতে, তেমনি চোরেরাও প্রতিনিয়ত বের করছে নানান ফন্দি-ফিকির। যদি আপনার মোবাইল ফোন চুরি হয়ে যায়, তাহলে নিম্নোক্ত তিনটি ধাপ অনুসরণ করুন-

১. আপনার মোবাইল ফোনের আইএমইআই (International Mobile Equipment Identity) নম্বর উল্লেখ পূর্বক নিকটস্থ থানায় জিডি করুন। প্রত্যেক ব্যক্তিরই নিজ নিজ মোবাইল ফোনের আইএমআই নম্বর শুরু থেকেই জেনে রাখা প্রয়োজন। উল্লেখ্য, আপনার মোবাইলের "কি" (key) বাটনে গিয়ে * #০৬ # চেপে আপনার মোবাইল ফোনের আইএমআই নম্বর জানতে পারবেন। উক্ত নম্বরটি জানার পর উপযুক্ত কোনো জায়গায় লিপিবদ্ধ করে রাখুন, কারণ পরে এটি কাজে লাগতে পারে।
২. উক্ত জিডির একটি কপিসহ র‌্যাব (RAB) বরাবর অভিযোগ করুন।
৩. জিডির কপিতে উল্লেখ করা অফিসারের সাথে যোগাযোগ রাখুন এবং তার মাধ্যমে ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চ (ডিবি)- এর ট্র্যাকিং টিমের সহায়তা নিন।
অনেক সময় দেখা যায়, আইটিতে দক্ষ ইউজার নিজেই ট্র্যাক করে বের করে ফেলেছেন মোবাইলের অবস্থান। এরকম হলে ডিবির জন্য বসে থেকে লাভ নেই, লোকেশনসহ জিডিতে উল্লিখিত অফিসারের সহায়তা নিয়ে মোবাইল ফোন চোরকে ধরতে এগিয়ে চলুন। দেখা গেছে, থানায় জিডি করে বেশিরভাগ সময়েই ফোন ফেরত পাওয়া যায় না। এর কারণ হচ্ছে, আমাদের ট্র্যাকিং টিম মূলত অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের কেইসগুলোর ক্ষেত্রে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন এবং মোবাইল ট্র্যাকিং করেন। খুন, সন্ত্রাস, বড় ধরনের অপরাধ ইত্যাদি সংশ্লিষ্ট মোবাইল ট্র্যাক করাই যেন এদের মূল কাজ। তাই সাধারণ জনগণের ক্ষেত্রে এরা তেমন একটা গুরুত্ব দেওয়ার সময় পান না অথবা গুরুত্ব দিতে চান না। যদিও সকলের ক্ষেত্রেই এই টিমের গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।

তবুও জিডি করবেন কেন?
১. আপনার মোবাইল ব্যবহার করে কেউ অপকর্ম, অন্যায়-অপরাধ করলে সেগুলো যেন আপনার ঘাড়ে না বর্তায়। আপনার হারিয়ে যাওয়া মোবাইলে সংরক্ষিত তথ্য ব্যবহার করে কেউ যদি অপকর্ম করে, জিডির কপি দেখিয়ে সেটার দায় থেকে আপনি রক্ষা পেতে পারবেন।
২. হঠাৎ জিডির দ্বারা ট্র্যাকিং করে মোবাইল পাওয়া গেলেও যেতে পারে।

সাবধানতা : মোবাইল ফোনে এমন কোনো ছবি রাখা ঠিক হবে না, যেটা প্রকাশ হলে আপনার জন্যে সামাজিক এবং অন্যান্য ক্ষতি বয়ে আনতে পারে। অন্তরঙ্গ মুহূর্তে কেউ ওরকম ছবি তুলতে চাইলে সতর্ক থাকুন। কারণ, এ ধরনের ‘ভালোবাসা’ আপনার সারা জীবনের জন্য কাল হয়ে দাঁড়াতে পারে।

26/12/2019

রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট ,মূল রচনা: উইলিয়াম শেকসপিয়র!
October 4
ইতালি দেশের এক সুন্দর শহর ভেরোনা—প্রাচীনত্ব আর ঐতিহ্যপূর্ণ। রাজা ছাড়াও এদেশে রয়েছে আরও দুটি অভিজাত পরিবার, ধন-সম্পত্তি আর ক্ষমতার দিক দিয়ে রাজার চেয়ে তারা কোনও অংশে কম নয়। এ দুটি বংশের একটি ক্যাপুলেট, অন্যটি মন্টেগু।
বংশ দুটি ধনী ও অভিজাত হলেও তাদের মধ্যে রয়েছে চিরকালীন শত্রুতা। এ শত্রুতা যে কবে শুরু হয়েছিল তা সবার অজানা। উভয়ের সম্পর্কটা ঠিক সাপে-নেউলের মতো। উভয় পরিবারের শত্রুতার প্রভাব তাদের চাকর-বাকরদের মধ্যেও পড়েছে। রাস্তা-ঘাটে যখনই যেখানে দেখা হয়, কোনও না কোনও অজুহাতে একে অপরের সাথে ঝগড়া বাধায়, মারামারি করে—যার পরিসমাপ্তি হয় রক্তপাতে।
একদিন সাতসকালে ক্যাপুলেট পরিবারের দুই চাকর স্যামসন আর গ্রেগরি এসে হাজির হল শহরের এক জনবহুল ব্যস্ত এলাকায়—তাদের উদ্দেশ্যে মন্টেগু পরিবারের চাকরদের সাথে ঝগড়া বাধানো।
বিরক্তি মেশান স্বরে গ্রেগরিকে বলল স্যামসন, ‘আমি তোকে পরিষ্কার বলে দিচ্ছি গ্রেগরি, এভাবে প্রতিদিন কয়লার বোঝা বইতে পারব না আমি।’
‘ঠিকই বলেছি,’ বলল গ্রেগরি, ‘ও কাজ করলে আমরা সবাই আমাদের কয়লাখনির কুলি-কামিন বলবে।’
গলাটা সামান্য চড়িয়ে বলল স্যামসন, ‘দেখ গ্রেগরি! তুই কিন্তু ভুলে যাস না আমি বেজায় রাগী। রাগ হলেই আমি তলোয়ার বের করি।’
‘যা! যা! তোর আবার রাগ আছে নাকি’—স্যামসনকে ইচ্ছে করে তাতিয়ে বলল গ্রেগরি।
‘দ্যাখ গ্রেগরি! ভালো হচ্ছে না কিন্তু’—খেঁকিয়ে বলল স্যামসন। ‘জানিস! মন্টেগুদের বাড়ির একটা কুকুর আজ আমার মেজাজ বিগড়ে দিয়েছে।’
জবাবে কী যেন বলতে চাচ্ছিল গ্রেগরি, এমন সময় তার চোখে পড়ল মন্টেগু বাড়ির দুজন বয়স্ক চাকর, আব্রাহাম আর বালথাজার তাদের দিকেই এগিয়ে আসছে।
‘ওরে স্যামসন! মন্টেগু বাড়ির ধেড়ে চাকর দুটি যে এদিকেই আসছে। নে! এবার তো তলোয়ার বের কর’—বলল গ্রেগরি।
একটি ভেবে নিয়ে স্যামসন বলল, ‘নারে! আগে ওদেরই শুরু করতে দে। তাহলে আইন আমাদের পক্ষে থাকবে।’
‘বেশ তাই হলে’—বলল গ্রেগরি। ‘চল, আমরা ওদের পাশ কাটিয়ে চলে যায়। যেতে যেতে আমি কিন্তু বারবার ভ্রু কুঁচকিয়া এক চোখ বুজে ওদের ভ্যাভাব।’
‘উঁহু, ওতে কোনও কাজ হবে না,’ বলল স্যামসন। ‘বরঞ্চ ওদের দিকে আমি বুড়ো আঙুল নাচাব। দেখবি, ঠিক কাজ হবে তাতে।’
তাদের উদ্দেশ্য করে বুড়ো আঙুল নাচানো দেখে মন্টেগুদের একজন বয়স্ক চাকর আব্রাহাম এগিয়ে এসে বলল, ‘ওহে ছোকরা! তুমি আমাদের বুড়ো আঙুল দেখাচ্ছ?’
‘বেশ করেছি, দেখাবই তো’, গলা চড়িয়ে বলল স্যামসন। ঠিক তখনই তাকে পেছন থেকে চিমটি কাটল গ্রেগরি। চিমটি খেয়েই সুর পালটে বলল স্যামসন, ‘না, ঠিক তোমাদের নয়, আমি এমনই বুড়ো আঙুল নাচাচ্ছি।’
গ্রেগরি জানতে চাইল, তোমরা কি আমাদের সাথে ঝগড়া বাধাতে চাও?’
‘ঝগড়া। তোমাদের সাথে?’ অবাক হয়ে বলল আব্রাহাম, ‘বলা নেই, কওয়া নেই, অহেতুক ঝগড়া করতে কেন যাব?’
একগুঁয়ের মতো বলল স্যামসন, ‘ধরো, ভুলবশতই তোমরা ঝগড়া করতে চাইছ আমাদের সাথে। তাহলে কিন্তু ছেড়ে দেব না তোমাদের। আমরাও জানি কীভাবে বিবাদ বাধাতে হয়।’
পরিহাসের সুরে বলল আব্রাহাম, ‘আমার মতো বলছে কেন, আমার চেয়ে বেশি জান না বোধ হয়?’
কানে কানে স্যামসনকে বলল গ্রেগরি, ‘অকে বলে দে তোমার চেয়ে ভালো জানি।’
‘ঠিক বলেছিস’ বলেই নির্বোধের মতো আঙুল নাচাতে নাচাতে বলল স্যামসন, ‘তোমার চেয়ে ভালো জানি কী করে ঝগড়া বাধাতে হয়।’
এতক্ষণে রেগে গিয়ে বলল আব্রাহাম, ‘ওহে মিথ্যেবাদী ছোকরা! আমার সাথে ঝগড়া করার মুরোদ নেই তোমার।’
কথা শুনে ফুঁসে উঠে বলল স্যামসন, ‘দাঁড়াও, আমাকে মিথ্যেবাদী বলার মজা দেখাচ্ছি তোমায়’, বলেই খাপ থেকে তলোয়ার বের করে ঝাঁপিয়ে পড়ল আব্রাহামের উপর। আত্মরক্ষার জন্য আব্রাহামও বাধ্য হল তলোয়া বের করতে। ওদিকে স্যামসনের দেখাদেখি গ্রেগরিও তলোয়ার হাতে ঝাঁপিয়ে পড়ল বালথাজারের উপর।
ওদের এভাবে লড়াই করতে দেখে ছুটে এলেন সেনর বেলভোলিও। নিজের তলোয়ার বের করে ওদের থামাতে থামাতে বললেন, ‘ওরে গাধার দল! কী করছিস তা জানিস তোরা। ফেলে দে তলোয়ার। থামা তোদের লড়াই।’
ঠিক সেসময় ক্যাপুলেট গিন্নির ভাইপো টিবল্ট এসে হাজির সেখানে। বেনভোলিওকে দেখে সে বলল, কী হে বেনভোলিও। এসব ছোটোলোক চাকর-বাকরদের ব্যাপারে তুমি আবার নাক গলিয়েছ কেন? লড়ার ইচ্ছে হলে আমার সাথে লড়। বের কর তোমার তলোয়ার। চিরদিনের মতো তোমার সাধ মিটিয়ে দেব।’ বলেই তলোয়ার হাতে টিবল্ট ছুটে এল বেনভোলিওর দিকে।
বেনভোলিও জবাব দিলেন, ‘তুমি ভুল করছ টিবল্ট। আমি ওদের মিটমাটের চেষ্টা করছি।’
‘কী বললে, খোলা তলোয়ার হাতে শান্তিরক্ষা?’ হেসে উঠে বললেন টিবল্ট, ‘শুনে রাখ, মন্টেগু পরিবারের সবাইকে আমি চরম ঘৃণা করি। তোমরা শেয়াল-কুকুরের চেয়েও হীন। নাও, এবার মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হও’—বলেই খোলা তলোয়ার হাতে বেনভোলিওর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল টিবল্ট। এবার শুরু হয়ে গেল লড়াই। খোলা রাস্তার উপর ক্যাপুলেট আর মন্টেগু পরিবারের দুই সদস্য ও দু-জোড়া চাকর নিজেদের মধ্যে লড়াইয়ে মেতে উঠল। নিমেষের মধ্যে রটে গেল ক্যাপুলেট আর মন্টেগুরা ফের শুরু করেছে নিজেদের মধ্যে লড়াই। খবর পেয়ে শান্তিরক্ষক তার কয়েকজন কর্মচারীকে সাথে নিয়ে সেখানে এলেন। দাঙ্গাবাজদের নিরস্ত করতে কয়েকজন স্থানীয় নাগরিকও সেখানে গেলে অস্ত্র হাতে।
নাগরিকদের উদ্দেশ্য করে শান্তিরক্ষক বললেন, ‘ধর ব্যাটাদের। মেরে শেষ করে দে সব কটাকে। এমন শিক্ষা দিবি যাতে চিরকালের জন্য ওদের মারামারির শখ মিটে যায়।’
‘মন্টেগু আর ক্যাপুলেট, দুপক্ষই নিপাত যাক’—বলে সমস্বরে চেঁচিয়ে উঠল নাগরিকরা। দাঙ্গাবাজ দু-পক্ষকে কেন্দ্র করে ধীরে ধীরে জমে উঠল লোকের ভিড়, হই-হট্টগোল আর চিৎকার-চেঁচামেচি। মারামারির খবর পেয়ে ক্যাপুলেটদের বুড়ো কর্তা স্ত্রীকে নিয়ে হাজির হলেন সেখানে। গোলমাল দেখে স্ত্রীকে বললেন, ‘শয়তানগুলো বুঝি আবার মারামারি শুরু করেছে?’ যাও তো, কাউকে বাড়ি পাঠিয়ে আমার তলোয়ারগুলি নিয়ে আসতে বল। তারপর দেখাচ্ছি ওদের মজা।
বুড়োকর্তার স্ত্রী বললেন, ‘তুমি বুড়ো মানুষ। তলোয়ার দিয়ে কী করবে? তার চেয়ে বরং সেই ঠেঙ্গোটা পাঠিয়ে দেই যাতে ভরে দিয়ে তুমি চলা-ফেরা কর।’
‘নাঃ নাঃ ঠেঙ্গোতে হবে না, তলোয়ারই চাই আমার। দেখছ না, বুড়ো মন্টেগু তার স্ত্রীকে নিয়ে এসেছে ওরও হাতে রয়েছে তলোয়ার।’
ক্যাপুলেটদের বুড়ো কর্তাকে দেখামাত্রই হেঁকে উঠলেন মন্টেগুদের বুড়ো কর্তা, ‘অ্যাই বদমাস ক্যাপুলেট! যদি বাঁচতে চাস তো ওখানেই দাঁড়িয়ে থাক। মোটেই বাধা দিবি না আমার কাজে।’
স্বামীর সাথে তাল মিলিয়ে মন্টেগু গিন্নিও বলে উঠলেন, ‘সাবধান করে দিচ্ছি তোদের। আর একপাও এগুবি না।’
এবার ঝগড়া শুরু হয়ে গেল দু’পক্ষের বুড়ো-বুড়িদের মাঝে।
সে সময় ভেরোনার রাজা এসকেলাস তার সভাসদদের নিয়ে সে পথ দিয়েই যাচ্ছিলেন। গণ্ডোগোল আর চিৎকার-চেঁচামেচি শুনে ঘোড়া থামিয়ে তিনি সেখানে দাঁড়ালেন। তারপর দাঙ্গাবাজদের উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘আবার তোমরা রাস্তায় দাঙ্গা-হাঙ্গামা বাধিয়েছ? ভালো চাও তো সবার হাত থেকে তলোয়ার ফেলে দাও।’ রাজার আদেশে সবাই তলোয়ার ফেলে দিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল।
এরপর মন্টেগু আর ক্যাপুলেট—দুই বুড়োর দিকে চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে রাজা বললেন, ‘আপনারা দুজনেই বয়স্ক লোক, কোথায় আপনারা থামাবেন, তা নয়, তলোয়ার হাতে দুজনেই ছুটে এসেছেন। এই নিয়ে পরপর তিনবার এরূপ কাণ্ড ঘটল শহরে। আমি আপনাদের সাবধান করে দিচ্ছি ভবিষ্যতে এরূপ কাণ্ড ঘটলে আমি বাধ্য হব আপনাদের সবার প্রাণদণ্ড দিতে। যান! হাতের তলোয়ার ফেলে নিজ নিজে কাজে চলে যান।’ এরপর ক্যাপুলেটদকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘আপনি চলুন আমার সাথে। আর হ্যাঁ মন্টেগু, আপনি আজ দুপুরের বিচারসভায় যাবেন। আমার যা বলার সেখানেই বলব’—বলেই সঙ্গী-সাথীদের নিয়ে ঘোড়া ছুটিয়ে চলে গেলেন রাজা।
সবাই চলে যাবার পর মন্টেগু পরিবারের বুড়ো কর্তা জিজ্ঞেস করলেন তার ভাইপোকে, ‘আচ্ছা, বলতো কী হয়েছিল? কে আবার নতুন করে ঝগড়াটা বাধাল?’
কাকার প্রশ্নের জবাবে সেনর বেনভোলিও বললেন, ‘সে সময় আমি এপথ দিয়েই যাচ্ছিলাম। হঠাৎ দেখি দু বাড়ির কয়েকজন চাকর তলোয়ার নিয়ে লড়াই করছে। আমি ওদের ছাড়াতে গেছি এমন সময় কোথা থেকে খবর পেয়ে টিবল্ট এসে হাজির সেখানে। টিবল্টের হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্য বাধ্য হয়ে আমাকেও তলোয়ার বের করতে হয়। এরপরই শুরু হল বেজায় লড়াই। ভাগ্যিস সে সময় এপথ দিয়ে আসছিলেন রাজামশাই। তিনি সাবধান করে দিলেন সবাইকে। নইলে দেখতে পেতেন দু-চারটে লাশ রাস্তায় গড়াগড়ি দিচ্ছে।’
‘ঈশ্বরকে ধন্যবাদ, রোমিও ছিল না সেখানে—’ বললেন মন্টেগু গিন্নি, ‘তুমি জান এখন সে কোথায়?’
বেনভোলিও বললেন, ‘আমার মনটা ভারাক্রান্ত ছিল। খুব সকালে সূর্য ওঠার আগেই আমি বেরিয়েছিলাম পথে। হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছে গিয়েছিলাম শহরের পশ্চিম অঞ্চলে। তখন দেখলাম একটা গাছের নিচে পায়চারি করছে রোমিও। আমাকে দেখেই পা চালিয়ে জঙ্গলে ঢুকে পড়ল সে। সেসময় নিজের চিন্তা-ভাবনা নিয়ে বিব্রত ছিলাম আমি। আতি ওকে আর ডাকিনি। শুনতে পেলাম রোমিওকে নাকি প্রায়ই এই বনে ঘোরা-ফেরা করতে দেখা যাচ্ছে।’
বৃদ্ধ মন্টেগুর একমাত্র ছেলে রোমিও। সে একজন সুন্দর-সুপুরুষ-স্বাস্থ্যবান যুবক। সে শুধু সুন্দরই নয়, আচার-আচরণেও খুব ভদ্র। তার মতো সাহসী, বীর সে অঞ্চলে খুব কমই আছে। এক কথায় সে একজন আদর্শ তরুণ।
বেশ ক’দিন ধরেই মন খারাপ রোমিওর। এর কারণ এক রূপসি যুবতি—নাম রোজালিন। রোমিও চায় তাকে বিয়ে করতে কিন্তু রোজালিন মোটেও খুশি নয় তার উপর। বেশ কিছুদিন ধরে রোজালিন না আসায় রোমিওর মন এতই খারাপ যে বন্ধু-বান্ধবদের সাথে পর্যন্ত দেখা করছে না সে। পাগলের মতো শুধু বনে বনে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তার দুজন অন্তরঙ্গ বন্ধুর মধ্যে একজন মন্টেগু কর্তার ভাইপো সেনর বেনভোলিও, অপরজন রাজার আত্মীয় মার্কুলিসও। দাঙ্গা বন্ধ হবার পর রোমিওকে খুঁজতে খুঁজতে তারা এসে হাজির হল সেই গভীর জঙ্গলে।
অনেক খোঁজাখুঁজির পর তারা দেখা পেল রোমিওর। যার জন্য রোমিওর এ অবস্থা, সেই রোজালিনকে নিয়েও হাসি-ঠাট্টা করল তারা। কিন্তু তাতে দমে না গিয়ে বন্ধুদের অনুনয় করে বলল রোমিও, ‘ভাই, যে ভাবেই হোক তোরা ব্যবস্থা করে দে যাতে অন্তত একবার তার দেখা পাই।’
অরণ্য থেকে বেরিয়ে এসে যখন তারা রাস্তায় কথাবার্তা বলছিল, সে সময় একজন লোক এসে একটা কাগজ মেলে ধরল তাদের সামনে। কাগজটা আর কিছু নয় একটা তালিকা। তারা পড়ে দেখলে ওতে রয়েছে ভেরোনার সব সম্ভ্রান্ত বংশের নারী-পুরুষদের নাম, বাদ গেছে শুধু মন্টেগু পরিবার। যে লোকটা কাগজ নিয়ে এসেছিল সে ক্যাপুলেটদের বাড়ির চাকর—সম্পূর্ণ নিরক্ষর। কাগজে কী লেখা তা সে জানেনা—ক্যাপুলেট বাড়ি কর্তা-গিন্নিরও জানা নেই সেটা। তারা ওর হাতে কাগজটা ধরিয়ে দিয়েই বলেছেন—’এতে যাদের যাদের নাম লেখা আছে তাদের সবাইকে নিমন্ত্রণ করে আসবি। তাদের বিনীতভাবে বলবি তারা যেন আজ রাতে আমাদের বাড়িতে নৈশভোজনের আসরে যোগ দেন। সেই সাথে নাচ-গানের ব্যবস্থার কথাটাও বলে আসবি।’
‘তাই হবে কর্তা’—বলে কাগজখানা হাতে নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে সে। সে যে সম্পূর্ণ নিরক্ষর একথাটা লজ্জায় জানাতে পারেনি মনিবকে। কাজেই রাস্তা-ঘাটে যাকে পাচ্ছে, তাকে দিয়েই কাগজটা পড়িয়ে নিচ্ছে। ক্যাপুলেটদের সাথে মন্টেগুদের চিরকালীন রেষারেষির ব্যাপারটা জানত চাকরটি। কিন্তু রোমিও ও তার দু-বন্ধুকে জানতে না সে। জানলে কখনই সে কাগজটি তাদের পড়তে দিত না।
তালিকায় চোখ বুলিয়ে নিয়ে বলে উঠল রোমিও, ‘আরে! এযে দেখছি চাঁদের হাট বসাবার ব্যবস্থা হয়েছে। শহরের সম্ভ্রান্ত বংশীয় স্ত্রী-পুরুষ কেউ বাদ নেই এতে।’ লোকটিকে কাগজটা ফিরিয়ে দিয়ে রোমিও বলল, তা ভাই এদের কোথায় নিয়ে যাবার ব্যবস্থা হয়েছে?’
লোকটি উত্তর দিল, ‘আজ্ঞে হুজুর, উপরে।’
‘কী বললে, উপরে! তা সে জায়গাটা কোথায়?’ জানতে চাইল রোমিও।
‘আজ্ঞে, রাতের বেলা আমাদের বাড়িতে খাওয়া-দাওয়ার নিমন্ত্রণ করা হয়েছে এদের সবাইকে। কর্তা বলেছেন নাচ-গানের ব্যবস্থাও করা হয়েছে’—উত্তর দিল লোকটি।
‘তা তোমার মনিবটি কে বাপু?’ জানতে চাইল রোমিও।
‘ক্যাপুলেটদের বুড়ো কর্তাই আমার মনিব’—বলল লোকটি, তবে আপনি যদি মন্টেগুদের কেউ না হন, তাহলে অনায়াসে সেখানে যেতে পারেন বন্ধুদের নিয়ে। সেখানে গিয়ে রাতে খাওয়া-দাওয়া করবেন। আচ্ছা হুজুর! তাহলে আসি’—বলে চলে গেল লোকটি।
রোজালিন নামটাই বারবার ঘুরতে লাগল রোমিওর মাথায়। ঐ তালিকায় রোজালিনের নামও রয়েছে। সে স্থির করল যা হয় হোক, শুধু রোজালিনকে দেখতেই ক্যাপুলেটদের নৈশ ভোজের আসরে যাবে। রোমিওর ভাবনা আন্দাজ করে তাকে ঠাট্টা করে বলল বেনভোলিও, ‘আরে এরে ভাববার কী আছে। রোজালিনের জন্য মন যখন এতই খারাপ, তখন ঝুঁকি নিয়েই ক্যাপুলেটদের বাড়ি গিয়ে দেখে এস তাকে।’
বন্ধু যে ঠাট্টা করছে তা বুঝতে না পেরে রোমিও বলল, ‘যাবই তো, গিয়ে প্রাণ ভরে দেখে আসব তাকে।’
বেনভোলিও বলল, ‘বেশ তো, যাও। হয়তো আজই তোমার শেষ দিন। রোজালিনকে দেখার পর এককোপে তোমার গর্দান নামিয়ে দেবে ক্যাপুলেটরা।
কার্কুসিও বলল, ‘যত ঝুঁকি আর বিপদের ভয় থাকুক না কেন, তোমার কিন্তু সেখানে যাওয়া উচিত। ভেরোনার সুন্দরীরা সেজেগুজে জড় হবে সেখানে। তাদের মধ্যে কাউকে মনে ধরে গেলে রোজালিনকে ভুলে যাবে তুমি—কেটে যাবে তোমার মোহ।’
রোমিও স্থির করল মোহ কাটাতে নয়, প্রাণভরে রোজালিনকে দেখার জন্যই ঝুঁকি সত্ত্বেও ক্যাপুলেটদের বাড়ির নৈশভোজের আসরে যাবে সে। তবে সে একা যাবে না, সাথে থাকবে দু-বন্ধু মার্কুসিও আর বেনভোলিও। তিন বন্ধু স্থির করল শত্রুর চোখে-ধুলো দেবার জন্য তারা ছদ্মবেশ ধরে যাবে।
ফুল আর আলোর রোশনাইয়ে সেজে উঠেছে ক্যাপুলেটদের প্রাসাদসম বাড়িটা। ভেরোনার অল্পবয়সি ছেলে-মেয়েরা নাচ-গানে মেতে উঠেছে ভিতরের বিশাল হলঘরে। তাদের দেখলে মনে হবে রূপ-যৌবন যেন উপচে পড়েছে তাদের দেহে—তারা যেন মর্তের মানুষ নয়, রূপকথার কাল্পনিক স্বর্গ থেকে যেন তারা নেমে এসেছে। দামি পোশাক পরিধান করে ক্যাপুলেটদের বুড়োকর্তা দাঁড়িয়ে রয়েছেন হলঘরের দরজায়। তার একপাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে বাড়ির একজন সুন্দরী পরিচারিকা—তার হাতের সাজিতে সাজানো রয়েছে একগুচ্ছ ফুটন্ত গোলাপ কুঁড়ি।
কিছুক্ষণ বাদে সেখানে এসে পৌঁছালেন কাউন্ট প্যারিস। তাকে আপ্যায়ন করতে ব্যস্থ হয়ে পড়লেন বুড়োকর্তা। কাউন্ট শুধু দেখতে সুন্দর নন, প্রচুর ধন-সম্পত্তির মালিক তিনি। তার সাধ হয়েছে বুড়োকর্তার একমাত্র মেয়ে জুলিয়েটকে বিয়ে করার।
বহুদিন হল মারা গেছে বুড়োকর্তার অন্যান্য ছেলেমেয়েরা। বেঁচে আছে শুধু চোদ্দ বছর বয়সি জুলিয়েট। কাউন্ট প্যারিসের সাথে জুলিয়েটের বিয়েতে আপত্তি নেই বুড়োকর্তার, কিন্তু তিনি চান না এখনই বিয়ে হয়ে যাক এই ছোট্ট মেয়েটার। তিনি কাউন্টকে বলেছেন মেয়েটার ষোলো বছর বয়েস হলে তিনি তার বিয়ে দেবেন। দু-বছর যথেষ্ট সময়। কাউন্ট ইচ্ছে করলে এ সময় জুলিয়েটের সাথে মেলামেশা করতে পারেন। বুড়োকর্তার তরফে এ নিয়ে কোনও আপত্তি নেই। আর এ মেলামেশার ফলে কাউন্টকে ভাবী স্বামী বলে মেনে নেবার জন্য মানসিক দিক দিয়ে তৈরি হতে পারবে। এ কথা অবশ্য ঠিক যে জুলিয়েটের মতো বয়েসে তার গিন্নি অনেকগুলি সন্তানের মা হয়েছিলেন।
গায়ক-বাদকদের ছদ্মবেশে অতিথিদের মধ্যে মিশে গিয়ে রোমিও ও তার দু-বন্ধু এক সময় ঢুকে পড়ল ক্যাপুলেটদের প্রাসাদের ভিতরে। এরা কেউ ক্যাপুলেট পরিবারের সদস্যদের ধারেকাছেও ভেড়েনি। বাড়ির মেয়েরা যেখানে সমবেত হয়েছে, তাদের তিনজোড়া চোখ সেখানেই খুঁজে বেড়াচ্ছে রোজালিনকে। কিন্তু রোজালিনকে খুঁজতে গিয়ে এমন ঘটনা ঘটে যাবে তা কল্পনাও করতে পারেনি রোমিও আর তার দুই বন্ধু।
তার দু-বন্ধু বারবার তাকে সাবধান করে দিয়ে বলেছে, ‘ওভাবে একজায়গায় দাঁড়িয়ে থক না, সামনে এগিয়ে চল।’ কিন্তু সেদিকে কোনও হুঁশ নেই রোমিওর। পলকহীন দৃষ্টিতে মেয়েটার দিকে সে চেয়ে আছে আর মাঝে মাঝে বন্ধুদের বলছে, ‘কে-রে ভাই ওই মেয়েটা? দোহাই তোদের, ওর নামটা একবার জেনে আয় না।’
কিন্তু মন্দ ভাগ্য রোমিওর। তাই মেয়েটির পরিচয় জানার আগেই ক্যাপুলেটরা জেনে গেল রোমিওর আসল পরিচয়। তার পরিচয়টা যে জানল সে হল ক্যাপুলেট পরিবারের সবচেয়ে শয়তান লোক টিবল্ট—মন্টেগুদের নাম শুনলে যে তেলে-বেগুলে জ্বলে ওঠে। সে একটা চাকরকে ডেকে বলল, ‘যা দৌড়ে গিয়ে, আমার তলোয়ারটা নিয়ে আয়।’
চাকরটা তলোয়ার আনতে যাবে এমন সময় সেখানে এসে পৌঁছলেন ক্যাপুলেট বাড়ির বুড়োকর্তা। টিবল্ট যে চাকরকে ডেকে তলোয়ার আনতে বলেছে সে কথাটা শুনেছেন তিনি আর তাতেই বুঝে গেছেন কোনও একটা গুরুতর ব্যাপার ঘটেছে।
বুড়ো কর্তা টিবল্টকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কী হয়েছে রে তোর? অযথা কেন মাথা গরম করছিস আজকের দিনে?’
দূর থেকে রোমিওকে দেখিয়ে বলল টিবল্ট, ‘আমি অযথা মাথা গরম করছি না। ওই যে বাজনাদারের পোশাক পরা ছেলেটিকে দেখছ, ও হল মন্টেগু বাড়ির রোমিও। নিশ্চয়ই ওর কুমতলব আছে, নইলে ছদ্মবেশে আসবে কেন। আমি ওর কান দুটো কেটে নেব তলোয়ার দিয়ে।’
টিবল্টের দিকে চোখ পাকিয়ে তাকালেন বুড়োকর্তা, তারপর বললেন, ‘তোমার সাবধান করে দিচ্ছি আমি। রাজার ধমক খাবার পরও তোর শখ মেটেনি লড়াই করার? আমি তো নিজে দেখেছি রোমিওকে। কী সুন্দর ওকে দেখতে। তাছাড়া শত্রু হওয়া সত্ত্বেও সে নিজে যখন আমাদের বাড়িতে এসেছে তখন সে আমাদের অতিথি। তাকে সম্মান না হয় না জানালি, তাই বলে তার কান কেটে নিবি? এ কেমন কথা? ক্যাপুলেট বাড়ির ছেলের মুখে এ কথা সাজেনা। আমার সাবধানবাণী সত্ত্বেও যদি তুমি ওর গায়ে হাত তোল, তাহলে তার ফল তুমি একাই ভোগ করবে। বিচারের সময় আমি কিন্তু তোমাকে বাঁচাতে যাব না। সে কথা মনে রেখ।’ বুড়োকর্তার ধমকানিতে শেষমেষ ঠাণ্ডা হল টিবল্ট।
ক্যাপুলেটরা যে রোমিওকে চিনতে পেরেছে সে কথা কিন্তু তখনও পর্যন্ত বুঝে উঠতে পারেনি সে। তার মন পড়ে রয়েছে সেই অল্পবয়সি সুন্দরী মেয়েটির দিকে। সে জানে সুন্দরী মেয়েদের মন জয় করার উপায় হল সাহসে ভরে করে তাদের সাথে যেতে আলাপ করা। কিছুদূর গিয়ে বন্ধুদের চোখের আড়ালে পাঁচিল টপকে সে লাফিয়ে পড়ল ক্যাপুলেটদের বাগানে। এতসব হই-হট্টগোলের মাঝেও সে যেচে গিয়ে আলাপ করছে মেয়েটির সাথে। মেয়েটি বেশ ভালোভাবেই কথাবার্তা বলেছে তার সাথে। তাই দেখে রোমিও ধরে নিল মেয়েটিরও নিশ্চয় পছন্দ হয়েছে। কিন্তু অসুবিধা এই মেয়েটির নাম পর্যন্ত জানে না সে। সেটাই সবসময় খোঁচাতে লাগল। কিছুক্ষণ বাদে মেয়েটির ধাই-মা এসে ‘জুলিয়েট’ বলে ডাকল তাকে। আর তখনই রোমিও জানতে পারল মেয়েটির নাম ‘জুলিয়েট’। ধাই-মাকে জিজ্ঞেস করে রোমিও জানতে পারল জুলিয়েট সবে তেরো ছেড়ে চোদ্দে পা দিয়েছে—আর ক্যাপুলেট কর্তার একমাত্র কন্যা সে।
মনে মনে আক্ষেপ করে রোমিও বলল, ‘হায় ভগবান। একি হল? এই পরমাসুন্দরী মেয়েটি কিনা আমাদের চিরশত্রু ক্যাপুলেট কর্তার একমাত্র মেয়ে?’ কিন্তু শত্রুর মেয়ে হলে কী হবে? প্রথম দেখা থেকেই রোমিও এত ভালোবেসে ফেলেছে জুলিয়েটকে, যে তার পক্ষে কোনও মতেই সম্ভব নয় জুলিয়েটকে ছেড়ে থাকা।
আবার একই সমস্যার মাঝে পড়েছে জুলিয়েট। রোমিওকে দেখে, তার কথাবার্তা শুনে খুবই ভালো লেগে গেছে জুলিয়েটের। এখন নিজের উপরই রাগ হচ্ছে কেন সে সময় ছেলেটির নাম জেনে নেয়নি। তবে সে লক্ষ করেছে ছেলেটি ধাইমাকে আড়ালে ডেকে নিয়ে গিয়ে তার সাথে কথা বলছিল। তাই সে ধাইমাকে ডেকে জিজ্ঞেস করল, ‘আচ্ছা ছেলেটির নাম কী?’
কোন ছেলেটির কথা জুলিয়েট জানতে চাইছে সেটা বুঝতে প্রেও মুখে বলল ধাইমা, ‘কার কথা বলছ মেয়ে? অনেক ছেলেই তো এসেছিল। নেচে-গেয়ে, খেয়ে-দেয়ে তারা সবাই বিদায় নিল।’
আদুরে মেয়ের মতো ধাইমার গলা জড়িয়ে বলল জুলিয়েট, ‘ওই যে গো ধাইমা, রাজপুত্তুরের মতো দেখতে সেই সুন্দর ছেলেটা—যার পরনে ছিল বাজনাদারের পোশাক, আবার নাচিয়েদের মতো রংও মেখেছিল মুখে। আমি সেই ছেলেটার কথা বলছি যখন আমায় ডাকতে এসে তুমি তার সাথে কথা বলছিলে।’
ধাইমা বলল, ‘এত ছেলে এল গেল, সে সব বাদ দিয়ে ওকেই কিনা তোর পছন্দ হল’ বলেই নিজেকে সামলিয়ে নিলে সে। তারও একদিন রূপ-যৌব ছিল। সে জানে অপরিচিত ছেলের নাম জানার জন্য কমবয়সি মেয়েরা কত না আগ্রহী হয়। ধাইমার মনে হল আগে রোমিওর পরিচয় জানিয়ে দিলে তার উপর থেকে জুলিয়েটের আকর্ষণ আপনা থেকেই উবে যাবে।
জুলিয়েটের কানের কাছে মুখটা নিয়ে ধাইমা বলল, ‘তুমি ওই ছেলেটার নাম জানতে চাইছ? ও হল আমাদের চিরশত্রু মন্টেগুদের একমাত্র বংশধর—নাম রোমিও। তোমায় সাবধান করে দিচ্ছি এ বাড়িতে ওর নাম উচ্চারণ করবে না তুমি। তাহলে কিন্তু হিতে বিপরীত হয়ে যাবে। রোমিও এ বাড়িতে আসায় ওর কান কেটে নিতে চেয়েছিল টিবল্ট। অনেক বকাঝকা করে তাকে ঠাণ্ডা করেছেন বুড়োকর্তা।
ভেরোনার অল্পবয়সি ছেলেদের মাঝে রোমিওর মতো সুপুরুষ, স্বাস্থ্যবান, সুন্দর যুবক আর কেউ নেই সে কথা জানে জুলিয়েট। তার মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল যখন সে জানতে পারল রোমিও তাদের পরম শত্রু মন্টেগু বাড়ির ছেলে।
গভীর রাত। শত চেষ্টা করেও ঘুমোতে পারছে না জুলিয়েট। বারবারই তার মনে পড়ছে রোমিওর কথা, সেই সাথে কেটে যাচ্ছে ঘুমের রেশ। বিছানায় কিছুক্ষণ এপাশ-ওপাশ করে শেষে বিরক্ত হয়ে উঠে পড়ল সে। চেয়ে দেখল একপাশে কাত হয়ে ঘুমোচ্ছে ধাইমা। সে যাতে টের না পায় এমনভাবে খাট থেকে নেমে এল জুলিয়েট। মোববাতির ক্ষীণ আলোতে মোটেও দেখা যাচ্ছে না খোলা জানালার নিচে বিশাল বাগান, গাছপালা, ফুল, আর লতাপাতা। এতক্ষণে রোমিও আর মন্টেগুদের কথা ভেবে মাথা গরম হয়ে উঠেছিল তার। বাগানের এক ঝলক ঠাণ্ডা হাওয়ার স্পর্শে জুড়িয়ে গেল তার মন।
কখন যে তার অজান্তে আক্ষেপের সুরে কথাগুলি বেরিয়ে এল জুলিয়েটের মুখ থেকে, ‘রোমিও! কেন তুমি জন্মেছিলে মন্টেগু বংশে? তুমি কি জান না সেতাই আমাদের মিলনের পথে প্রধান অন্তরায়? তুমি যদি নামটা পালটে নাও তাহলে এমন কী ক্ষতি হবে তোমার? তুমি কি জান না যে নামে কিছু আসে যায় না—গোলাপকে যে নামেই ডাক, তার সুগন্ধ নষ্ট হয় না?’
অনেক আগেই রাতের খাওয়া-দাওয়া সেরে ক্যাপুলেটদের প্রাসাদ থেকে বেরিয়ে এসেছে রোমিও ও তার দু-বন্ধু। কিছুদূর যাবার পর বন্ধুদের অজান্তে ক্যাপুলেটদের প্রাচীর টপকে বাগানের ভেতর লাফিয়ে পড়ল রোমিও। রোমিওকে না দেখে তার দু-বন্ধু বেনভোলিও আর মার্কুসিও বহুক্ষণ ডাকাডাকি করল তাকে। কিন্তু কোন সাড়া পেল না। আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পরও রোমিও ফিরে না আসায় তারা যে যার বাড়িতে চলে গেল।
বাগানে নেমে ঘুরতে ঘুরতে এক সময় সে এসে পৌঁছাল জুলিয়েটের ঘরের জানালার নিচে। এমন সময় উপর থেকে জুলিয়েটের আক্ষেপ তার কানে এল। সে মুখ তুলে উপর দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ঠিকই বলেছ। এখন থেকে রোমিও না বলে ‘প্রিয়তম’ বলে ডেক আমাকে।’
রোমিওর গলার আওয়াজ পেয়ে চমকে উঠে জুলিয়েট বলল, ‘কে তুমি নিচে দাঁড়িয়ে আড়ি পেতে আমার কথা শুনছ?’
রোমিও বলল, ‘নিজের পরিচয়টা না হয় গোপনই থাক। কারণ নিজের নামটাকে ঘেন্না করি—ওটাই আমার পরম শত্রু।’
খুশিভরা গলায় বলল জুলিয়েট, ‘তুমি না বললেও আমি চিনতে পেরেছি তোমায়। তুমি নিশ্চয়ই রোমিও, তাই না?’
রোমিও উত্তর দিল, ‘যদি ও নামটা তোমার পছন্দ না হয়, তাহলে ধরে নাও ওটা আমার নাম নয়।’
জুলিয়েট জানতে চাইল, ‘আমাদের বাগানের এত উঁচু পাঁচিল টপকে কীভাবে ভেতরে এলে তুমি?’
রোমিও বলল, ‘কোনও বাধাই প্রেমিককে ঠেকাতে পারে না। সাহস থাকলে প্রেমিক যে কোনও কাজ করতে পারে।’
জুলিয়েট বলল, ‘তুমি তো জান আমার পরিবারের লোকদের, তোমায় পেলে তারা খুন করে ফেলবে।’
আবেগ মেশানো গলায় বলল, ‘সে ভয় নেই আমার। তোমাকে দেখার জন্য তলোয়ারের আঘাত সইতেও রাজি আমি।’
এমন সময় ঘুম ভেঙে গেল ধাইমার। জুলিয়েটকে বিছানায় দেখতে না পেয়ে খুবই চিন্তিত হয়ে পড়ল সে।
জুলিয়েটের নাম করে বেশ কয়েকবার ডাকল ধাইমা। সে আওয়াজ কানে যেতে রোমিওকে সাবধান করে দিয়ে দ্রুত এসে বিছানায় শুয়ে পড়ল জুলিয়েট। কিন্তু শুয়েও ছটফট করতে লাগল সে। বারবার ছুটে এল জানালার সামনে। নিচে তখনও রোমিও দাঁড়িয়ে। সারারাত জেগে তার সাথে ভালোবাসার অনেক কথা বলল জুলিয়েট। ভোর হবার সাথে সাথে বাগান থেকে বেরিয়ে গেল রোমিও। যাবার আগে জুলিয়েটের কাছ থেকে কথা আদায় করে নিল রোমিও যে সে তাকে ভালোবাসে, বিয়ে করতেও রাজি আছে তাকে। জুলিয়েট প্রতিশ্রুতি দিল বেলা হবার আগে সে ধাইমাকে পাঠিয়ে দেবে তার কাছে—রোমিও তার মারফত জানিয়ে দেবে কখন কোথায় তাদের বিয়ে হবে।
সময় পেলেই শহরের বাইরে বেরিয়ে আসে রোমিও—চলে যায় লরেন্স নামে সংসার ত্যাগী এক সন্ন্যাসীর কাছে—নানা বিষয়ে আলোচনা হয় তাদের মধ্যে। সন্ন্যাসীও খুব ভালোবাসেন রোমিওকে। সেদিন শেষরাতে ক্যাপুলেটদের বাগান থেকে বেরিয়ে বাড়িতে না ফিরে রোমিও গিয়েছিল সন্ন্যাসীর কাছে। জুলিয়েটকে সে ভালোবাসে এবং বিয়ে করতে চায়—সে কথা সন্ন্যাসীকে বলেছিল রোমিও। আর এও বলেছিল এ ব্যাপারে তারা পরস্পরকে প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে। কিন্তু ব্যাপারটা সারতে হবে গোপনে। জানাজানি হলে সর্বনাশ হয়ে যাবে—কারণ ক্যাপুলেট আর মন্টেগু, উভয় পরিবারের লোকেরাই চেষ্টা করবে সর্বশক্তি দিয়ে এ বিয়ে বন্ধ করার। হয়তো দু-চারটে লাশও পড়ে যেতে পারে।
রোমিও সন্ন্যাসীকে অনুরোধ করে বলল, ‘প্রভু! সব কথাই তো আপনাকে খুলে বললাম। এবার আপনি বিয়ে দেবার দায়িত্ব নিয়ে আমাদের বাঁচান। সন্ন্যাসী ভেবে দেখলেন ক্যাপুলেট আর মন্টেগু, দুই পরিবারের মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্ক গড়ে উঠলে হয়তো অবসান হবে তাদের চিরশত্রুতার। সে সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে তিনি রাজি হলেন রোমিওর অনুরোধে। সন্ন্যাসীর কথায় আশ্বস্ত হয়ে রোমিও ফিরে গেল বাড়িতে। সারারাত খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে থাকার দরুন প্রচণ্ড ক্লান্ত তার শরীর, ঘুমে জড়িয়ে আসছে চোখ, ব্যথায় ছিঁড়ে যেতে বসেছে তার শরীর। কিন্তু এত বাধা-বিপত্তির মাঝেও সন্ন্যাসীর কাছ থেকে তার ও জুলিয়েটের বিয়ের আশ্বাস পেয়ে সব কিছুকে তুচ্ছ করে এগিয়ে চলেছে রোমিও।
বেলার দিকে জুলিয়েট তাই ধাইকে পাঠিয়ে দিল রোমিওর কাছে। ধাই মারফত রোমিও জানাল জুলিয়েটের সাথে তার বিয়ের সব ব্যবস্থা পাকা হয়ে আছে। বিকেলের দিকে যদি সন্ন্যাসী লরেন্সের ওখানে যায়, তাহলে সেদিনই তাদের বিয়ে হয়ে যাবে—সন্ন্যাসী নিজে দাঁড়িয়ে থেকে তাদের বিয়ে দেবেন। ফিরে গিয়ে ধাই সবকথা জানান জুলিয়েটক। গির্জায় যাবে বলে মার অনুমতি নিয়ে সে দিন বাড়ি থেকে বেরিয়ে এল জুলিয়েট। সবার অলক্ষে গিয়ে হাজির হল সন্ন্যাসী লরেন্সের ডেরায়। বিয়ের জোগাড় যন্তরের সব ব্যবস্থা আগে থেকেই করা হয়েছিল। এবার সন্ন্যাসী লরেন্স বিয়ে দিয়ে দিলেন রোমিও-জুলিয়েটের।
বিয়ের ক’দিন বাদেই দুর্ভাগতের ছায়া নেমে এল রোমিওর জীবনে। বেনভোলিও আর মার্কুসিওর সাথে হঠাৎ রাস্তায় দেখা হয়ে গেল টিবল্টের। সেদিন উৎসবের রাতে রোমিওকে হাতের কাছে পেয়েও শায়েস্তা করতে না পারায় মনে মনে খুব ক্ষোভ ছিল টিবল্টের। আজ রাস্তায় রোমিওর দু-বন্ধু বেনভোলিও আর মার্কুসিওকে দেখতে পেয়ে বেজায় গালাগালি দিতে লাগল টিবল্ট। সে যে সহজে তাদের নিষ্কৃতি দেবে না একথা বুঝতে পেয়ে তারা চেষ্টা করলেন টিবল্টকে নিরস্ত করতে, ঠিক সে সময় সেখানে এসে হাজির হল রোমিও। তাকে দেখতে পেয়ে খাপ থেকে তলোয়ার বের করল টিবল্ট।
সব সময় বিবাহিত রোমিওর চোখের সামনে ভেসে বেড়াচ্ছে স্ত্রী জুলিয়েটের কচি লাবণ্যভরা মুখখানি। টিবল্ট আবার সম্পর্কে জুলিয়েটের ভাই। তাই তাকে তো আর চট করে আঘাত করা যায় না। টিবল্টের কথায় রেগে না গিয়ে সে চেষ্টা করল তাকে শান্ত করতে, কিন্তু উলটো ফল হল তাতে। টিবল্ট ধরে নিল রোমিও একজন কাপুরুষ। তাই সে ইচ্ছে করেই মন্টেগু বংশের সবার নামে গালাগালি দিতে লাগল।
টিবল্টকে শায়েস্তা করা মোটেই শক্ত কাজ নয় রোমিওর পক্ষে। কিন্তু টিবল্ট যে জুলিয়েটের ভাই, সে কথা মনে ভেবে চুপ করে রইল সে। কিন্তু মার্কুসিওর কাছে অসহ্য মনে হল টিবল্টের ব্যবহার। সে তলোয়ার হাতে তেড়ে গেল টিবল্টের দিকে।
এবার সমস্যায় পড়ে গেলেন রোমিও—একদিকে জুলিয়েটের ভাই টিবল্ট, অন্যদিকে তার প্রধান বন্ধু মার্কুসিও, এদের যে কেউ আহত বা মারা গেলে চরম ক্ষতি হবে তার। তাদের বাঁচাতে রোমিও ঝাঁপিয়ে পড়লেন উভয়ের উদ্যত তলোয়ারের মাঝে। সাথে সাথে তার তলোয়ার সরিয়ে নিল মার্কুসিও, কিন্তু টিবল্ট তা করল না। রোমিওকে ঢালের মত ব্যবহার করে সে সজোরে আঘাত হানল মার্কুসিওর বুকে। মার্কুসিও আহত হয়ে মাটিতে পড়ে যাবার কিছুক্ষণ বাদেই মৃত্যু হল তার।
এভাবে মার্কুসিওকে মরতে দেখে খুন চেপে গেল রোমিওর মাথায়। তখন জুলিয়েটের কথা আর মনে রইল না রোমিওর। সে তলোয়ার হাতে ঝাঁপিয়ে পড়ল টিবল্টের উপর। তার তলোয়ার সোজা গিয়ে বিঁধল টিবল্টের হৃৎপিণ্ডে। সে আঘাতে রাস্তায় পড়ে গিয়ে ছটফট করতে করতে মারা গেল রক্তাক্ত টিবল্ট।
টিবল্টের মৃত্যু দেখে হুঁশ ফিরে এল রোমিওর। সে নিজেকে ধিক্কার দিতে লাগল উত্তেজনার বশে এরূপ কাজ করার জন্য। কিন্তু এবার কী হবে? কোন মুখে সে দাঁড়াবে জুলিয়েটের সামনে?
রাস্তার উপর পাশাপাশি পড়ে রয়েছে মার্কুসিও আর টিবল্টের মৃতদেহ দুটি। এদিকে কৌতূহলী জনতার ভিড়ও ক্রমশ বেড়ে উঠছে। অনেক দিনই ভেরোনার রাজা আদেশ দিয়েছিলেন রাজপথে যে দাঙ্গা বাধাবে তার প্রাণদণ্ড হবে। কার এত দুঃসাহস রাজাদেশ লঙ্খন করে ভর দুপুরে এমন কাণ্ড বাধাল! খবর পেয়ে রাজা নিজেই ছুটে এলেন ঘটনাস্থলে। রাজাকে সব কথা খুলে বললে বেনভোলিও। সে আরও জানান ক্যাপুলেট বাড়ির টিবল্টই প্রথম আক্রমণ শুরু করেছিল। মার্কুসিওর হত্যাকারী সে। আত্মরক্ষার খাতিরেই প্রতি-আক্রমণ করতে হয়েছিল রোমিওকে, তারই ফলে মারা যায় টিবল্ট। সে কথা শুনে প্রাণদণ্ডের পরিবর্তে রোমিওকে নির্বাসন দণ্ড দিলেন রাজা। রাজাদেশ তৎক্ষণাৎ ভেরোনা ছেড়ে মান্টুয়ায় আশ্রয় নিতে হল রোমিওকে। এমনকি জুলিয়েটের সাথে দেখার করার সময়টুকু পর্যন্ত তাকে দিলেন না রাজা।
এই তো সবে বিয়ে হয়েছে রোমিও-জুলিয়েটের। এরই মধ্যে রোমিওর হাতে টিবল্টের মৃত্যু ও তার পরিণতিতে রোমিওর নির্বাসন দণ্ডের খবর শুনে যার-পর-নাই ভেঙে পড়ল জুলিয়েট। নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে দিয়ে সর্বদাই সে কাঁদতে লাগল। বাবা, মা, বাড়ির সবাই নানাভাবে বোঝালেন তাকে—তা সত্ত্বেও জুলিয়েটের চোখের জল বাঁধা মানল না।
একমাত্র মেয়ের এরূপ অবস্থা দেখে বুড়ো ক্যাপুলেট বড়োই উদ্বিঘ্ন হয়ে উঠলেন। তার মনের শান্তি নষ্ট হয়ে গেল, রাতের ঘুম যে কোথায় পালিয়ে গেল তা কে জানে। শেষ অনেক ভেবেচিন্তে স্ত্রীর সাথে আলোচনা করে একটা উপায় খুঁজে পেলেন তিনি। তিনি তো কাউন্ট প্যারিসকে আগেই কথা দিয়েছেন যে জুলিয়েটের বিয়ে দেবেন। তিনি স্থির করলেন অযথা কাল-বিলম্ব না করে কাউন্টের সাথে জুলিয়েটের বিয়েটা চুকিয়ে দেবেন। স্বামী-স্ত্রী ধরে নিলেন বিয়ের আনন্দে টিবল্টের কথা ভুলে যাবে জুলিয়েট।
এবার জুলিয়েটের বিয়ের জোরদার আয়োজন শুরু হল। পরিবারের সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়ল। ঘর-দোর সাজানো, রাতারাতি জুলিয়েটের জন্য গহনা গড়ানো, এ সবই হয়ে গেল। ব্যাপার-স্যাপার দেখে খুবই চিন্তিত হয়ে পড়ল জুলিয়েট। এর তো সবে মাত্র বিয়ে হয়েছে তার, আর তাও কিনা চিরশত্রু মন্টেগু পরিবারের রোমিওর সাথে—মরে গেলেও এ খবর তিনি জানাতে পারবেন না কাউকে। সে মিনতি জানিয়ে বাবা-মাকে বলল তার মনটা বড়োই চঞ্চল হয়ে আছে। এসময় তার বিয়ে দিলে বিয়ের কোনও আনন্দই উপভোগ করতে পারবে না সে।
কিন্তু জুলিয়েটের কাতর মিনতি ও চোখের জল সত্ত্বেও তার বাবার মন গলল না। তার অনুরোধের কোনও মূল্য দিলেন না তার বাবা। তিনি জুলিয়েটকে ডেকে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিলেন যে কাউন্ট প্যারিসের সাথেই তার বিয়ে হবে। এতে জুলিয়েট রাজি না হলে একবস্ত্রে তাকে বের করে দেবেন বাড়ি থেকে। আর যতদিন বেঁচে থাকবেন তার মুখদর্শন করবেন না।
একগুঁয়ে বাপের সিদ্ধান্ত

Address


Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when আলো রংপুর posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to আলো রংপুর:

Videos

Shortcuts

  • Address
  • Alerts
  • Contact The Business
  • Videos
  • Claim ownership or report listing
  • Want your business to be the top-listed Media Company?

Share