17/06/2023
আমি_ক্লান্ত
পর্ব_০৩_০৪
দেখতে দেখতে কেটে গেলো পনেরো দিন,, এই পনেরো দিনে আমার পরিবারের কেউ আমার খুজ খবর রাখে নাই,, শুধু মাএ ছোট বোন মোন্তাহা ছাড়া এক কথায় আমি বাড়িতে যে আমি আছি সবাই ভুলে গিয়েছে,, মোন্তাহা সব সময় আমার খবর রাখে,, আমি এই কয় দিন ঘয় থেকে বাহিয়ে যাই নাই,, বাহিরে গিয়ে কি যেখানে আমার কোনো মূল্য নেই,, সকাল বেলা,, ছোট বোন আমার রুমে আসে,, এসে বলে
মোন্তাহা : ভাইয়া বাবা তোমাকে ডাকে বাহিয়ে
— কেনো
মোন্তাহা : জানি নাহ্,, হয়তো তোমার সাথে কথা বলবে
— ও আচ্ছা তুই যা আস্তেছি
ছোট বোন চলে গেলো আমি ও বাহিয়ে আসলাম,, দেখি সবাই বসে আছে,, তখন বাবা বললো
আব্বু : নিলয় কি খবর তোর
— বাবার কথা শুনে অনেক টা অবাক হলাম,, কারণ এই কয় দিনে একবার ও দেখা করে নাই,, আর এখন জিজ্ঞেস করছে, কি খবর,, একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললাম,, এইতো ভালো বাবা
আব্বু : আচ্ছা শুনো তোকে যেই জন্য ডাকা
— বুঝতে পারলাম প্রয়োজন পরছে তাই এতো দিন পর মনে পড়েছে,, জ্বী বলেন
আব্বু : তোর রিটার্ন টিকিট কবে,,
— কেনো বাবা
আব্বু : কেন মানে তোর জন্য কেনা কাটা করতে হবে নাহ্,, তাই জিজ্ঞেস করছি,, তোর রিটার্ন টিকিট কবে
— আসলে বাবা অনেক বছর পড়ে বাড়িতে আসলাম,, এই হলো কিছু দিন,, আরো কয়েক মাস পড়ে যাবো,, আর যদি এখানে একটা কিছু করতে পারি,, তাহলে আর যাবো নাহ্,, দেশের বাহিরে,,
আমার কথা শুনে,, আমার পরিবারের সবাই এমন ভাবে তাকালো যেনো তাদের উপর অনেক বড় একটা বোঝা এসে পড়েছে,, তখন মা বললো
আম্মু : নিলয় তুই এখানে কি করবি,, আর মাসে বা কতো টাকা ইনকাম করবি,,
— কেন মা ব্যাবসা করবো,,
আব্বু : বুঝলাম ব্যবসা করবি,, কিন্তু ব্যাবসা করতে হলে টাকা লাগবে এতো টাকা আছে তোর কাছে,,
— কেনো এতো বছরের টাকা গুলো কই,, আমি তো প্রতি মাসে টাকা পাঠিয়ে দিয়েছিলাম
আব্বু : এতো বছরের টাকা মানে,, সেই গুলো তো সংসারে পিছনে খরচ হয়ে গেছে,, তাহলে টাকা আসবে কই থেকে
— বাবা আমাদের সংসারে প্রতি মাসে,, ৭০ হাজার টাকা খরচ হয় সেই টা আমার জানা ছিলো নাহ,,
আব্বু : আমি বলেছি পুরো টাকা শুধু আমার খেয়ে ফেলেছি,, এই টাকা দিয়ে,, তোর ছোট ভাই ছোট বোন পড়া লেখা চালিয়েছে,, একটা ঘর উঠাতে অনেক টাকা খরচ হয়েছে,,
— ওওও
আব্বু : শুনো তুই যত তারাতাড়ি পারিস চলে যা তোর ছোট কাকা আমাদের,, কাছে তিন লক্ষ টাকা পাওনা
— কি সের তিন লক্ষ টাকা পাওনা,, আমাদের তো কোনো লেনাদেনা ছিলো নাহ,, তাহলে
আব্বু : আরে তোর ছোট ভাই কে একটা বাইক কিনে দিয়ছি,, তিন লক্ষ টাকা দিয়ে,, সেই টাকা আর কি
— কই বাবা আমাকে তো বলো নাই,,
আব্বু : এখানে তোকে বলার কি আছে,, ও তোর ছোট ভাই,, আর আমি ভেবে ছিলাম তুই এখন দেশে আসবি নাহ্,,
— ওওও
আব্বু : হুম আর শুনো তোর রিটার্ন টিকিট তারাতাড়ি কেটে ফেল,,
এই বলে সবাই চলে গেলো,, কি আজব আমার মা বাবা,, মানুষ তার ছেলে মেয়েকে কাছে রাখতে চায় আমার বাবা মা আমাকে দৃরে ঠেলে দিচ্ছে,, যদি বাড়িতে না আসতাম হয় তো বা এই গুলো কখনো জানা হতো নাহ্,, আর আমার পরিবার যে আমাকে শুরু টাকার জন্য মনে রেখেছে সেই ও টা জানা হতো নাহ্,, তবে ভালো ভাবে বুঝতে পেরেছিলাম আমার আর এই দেশে বেশি দিন থাকা হবে নাহ্,, কারণ সাবাই চায় আমি চলে যাই,, কেটে গেলো আরো এক মাস এক মাস পর বাবা আমার রুমে আসে,, বলে
আব্বু : কিরে নিলয় তোকে সেই কবে বললাম কখন যাবি আমাকে বলতে তোর কোনো খোঁজ খবর নাই
— বাবা আমি তো চার মাসের ছুটি নিয়ে আসছি,, ছুটি শেষ হলে চলে যাবো,,
আব্বু : আমি বলি কি,, চার মাস থাকতে হবে নাহ্,, তুই এখন চলে যা আবার না হয় তিন চার বছর পড়ে চলে আসবি,, দেখতে তো পতেছিস সংসারে অবস্থা,, তার পড়ে আবার তোর ভাই কে একটা চাকরি দিতে হবে,, অনেক টাকা লাগবে,, মোন্তাহা কে বিয়ে দিতে হবে,, সেখানে ও অনেক টাকা লাগবে,,
— আচ্ছা বাবা দেখি,,
বাবা চলে গেলো কি মা বাবা আমার আমি বাড়িতে চার মাস থাকলে তাদের সমস্যা,, কথা গুলো ভাবতে হাসি পায়,, মা তো আমাকে ভুলেই গিয়েছে,, ওহ একটা কথা,, আমার পরিবারের কেউ আমার সাথে ভালো কথা বলে নাহ্,, কথা বলা দৃরের কথা,, আমার সাথে কেউ বসে খাবার খায় না,, মোন্তাহা কে দিয়ে খাবার পাঠিয়ে দেয়,,, তার দুই দিন পর,, আম্মু বলে
আমি ক্লান্ত
পর্ব_০৪
মা তো আমাকে ভুলেই গিয়েছে,, আমার সাথে কেউ বসে খাবার খায় না,, মোন্তাহা কে দিয়ে খাবার পাঠিয়ে দেয়,,, যখন সাবাই খাবার খেতে বসে তার আগে আমার রুমে আমার জন্য খাবার পাঠিয়ে দেয়,, হয়তো বা যেনো তার সাথে খাবার না খাই সেই জন্য,, কেটে গেলো দুই দিন,, দুই দিন পর আম্মু আমার রুমে আসে হঠাৎ আম্মু কে আমার রুমে দেখে কিছু টা অবাক হলাম,,, কারণ এই দুই মাসে আম্মু আমার একবার ও খবর নেয় নাই,, আম্মু আমার কাছে এসে বলে
আম্মু : বাবা নিলয় কি করসি
— কিছু না মা
আম্মু : বাবা তুই কি আমাদের উপর রেগে আচ্ছিস
— রেগে থাকবো কেন মা তোমার তো কিছু করো নাই
আম্মু : নাহ তোর ছোট ভাই তোর আগে বিয়ে করে ফেলছে তাই
— নাহ্ মা রাগ করবো কেনো,, তোমরা যা ভালো মনে করছো তাই করছো এখনে রাগ করার কি আছে,,
আম্মু : আসলে বাবা আমারা ভেবে ছিলাম,, তুই এখন দেশে আসবি না তাই ওকে বিয়ে করিয়ে ফেলি,, আর ঘরে অনেক কাজ এই কাজ গুলো আমি একা একা করতে পারি নাহ্,, তাই বিয়ে করি দিয়েছি
— হুম মা বুঝতে পারছি,, সমস্যা নাই,, ভালো হইছে
আম্মু : বাবা তুই কবে যা আবার,, অনেক দিন তো হলো
— আম্মু কথা শুনে অনেক অবাক হলাম,, নিজের অজান্তে চোখ পানি চলে আসছে,, নিজেকে সামলে নিয়ে,, বললাম,, কেনো মা আমার এখানে থাকাতে কি তোমাদের সমস্যা হয়
আম্মু : না সমস্যা না আসলে তুই দেশে আসলি অনেক দিন হলো তাই জিজ্ঞেস করলাম,, কখন যাবি
— আমি চলে যাবো মা চিরদিনের জন্য,, তখন চাইলে ও আর ফিরতে পারবো নাহ্,, আর মাএ কিছু দিন,,
আম্মু : আচ্ছা যত তারাতাড়ি পারিস চলে যা,, সংসারে এখন অনেক টাকার দরকার,, তোর ছোট চাচা টাকা চাচ্ছে,, ওনার টাকা দিতে হবে,, আবার মোন্তাহা কে বিয়ে দিতে হবে,, অনেক টাকা লাগবে বুঝতে পারছিস তুই ছাড়া টাকা দিবে কে
এই বলো আম্মু চলো গেলো,, আম্মুর কথা গুলো তীরের মতো আমার বুকে এসে বিদলো প্রথমে ভেবে ছিলাম আম্মু মনে হয় সান্ত্বনা দিতে এসেছে,, এখন বুঝলাম আম্মু সান্ত্বনা না আমি কতো দিন এখানে আছি তা জানতে এসেছে,, ভেবে ছিলাম সাবাই যদি এক রকম হয় মা হয়তো আমাকে আগলে রাখবে,, কিন্তু আমি ভুল ছিলাম কারণ সাবাই টাকার পাগল টাকা দিতে পাড়লে সাবাই আপন হয় থাকে,, যখন টাকা থাকে না,, তখন নিজের মা বাবা ভাই বোন সবাই পর হয়ে যায়,,
সাবাই শুধু নিজের সার্থ খুঁজে,, সার্থ ছাড়া দুনিয়া অচল,, রাতের খাবার খেয়ে বসে আছি,, তখন বড় আপু আব্বু আম্মু আমার রুমে আসে,, আব্বু চেহারায় অনেক টা বিরক্ত ভাব বুঝতে পারছি,, হয়তো কিছু বলতে চায়,, তখন বড় আপু বললো
বড় আপু : নিলয় তুই কি বিয়ে করবি,,
— নাহ্ আপু বিয়ে করবো নাহ্,, হঠাৎ এই কথা কেনো
বড় আপু : নাহ্ অনেক দিন হলো, দেশে আসলি তাই জিজ্ঞেস করছি,, বিয়ে করবি নাকি
— নাহ্ আপু বিয়ে করবো নাহ্,,
বড় আপু : তাহলে একটা কাজ কর তুই কিছু দিনের মধ্যে চলে যা বাড়িতে থেকে কি করবি,, অনেক দিন তো হলো
আব্বু : নিলয় তোর আপু কিন্তু ঠিক বলছে যদি বিয়ে না করিস তাহলে এখানে থেকে কি করবি
— ওহ তোমার তাহলে এই জন্য আমার কাছে আসছো
বড় আপু : হুম তারাতাড়ি চলে যা অনেক দিন হলো,,
— হুম আপু চলে যাবো আর পাচ দিন পর
তারপর সবাই চলে গেলো আমার থকে কেউ জিজ্ঞেস করে নাই আমি কেমন আছি,, বা আমি কি চাই সাবাই শুধু আমি কবে যাবো তা নিয়ে ব্যস্ত,, পাচ দিন পর ছোট বোন যখন আমার খাবার নিয়ে আসে এসে দেখে আমার নাক মুখ দিয়ে রক্ত পরছে,, রক্তে পরিমাণ এতো যে সারা ঘরে রক্ত ছড়িয়ে আছে,, এইটা দেখে ছোট এক চিৎকার দিয়ে বেহুশ,, ছোট বোন এর চিৎকার শুনে সাবাই চলে এলো
এসে দেখা এই অবস্থা,, মা ও এক চিৎকার দিয়ে বেহুশ হয় পড়ে,,কারণ নিলয় এর দেহটা এক দম সাদা হয়ে গিয়েছে সারা বিছানায় রক্ত লেগে আছে,, ছোট ভাই দেখে নিলয় নিশ্বাস নিচ্ছে না,,হয়তো বা অনেক আগে মারা গেছে নিলয় নিলয় এর ছোট ভাই যখন নিলয় কাছে যায় দেখে তার মাথার পাশে একটা চিরকুট,, চিরকুটা হাতে নিলো,, চিরকুট এর উপরে লেখা আমার পরিবার,, এইটা দেখে ছোট ভাই এই বার পড়তে শুরু করলো,,
চলবে.......