09/01/2024
ইউনেস্কো ২০১৫ সালে এই পরিত্যক্ত দ্বীপটিকে বিশ্বের অন্যতম ঐতিহাসিক স্থাপনা ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ’ হিসেবে ঘোষনা দেয়। বর্তমানে পর্যটকরা সেখানে ঘুরতে যান। জাপানের এই দ্বীপটি একই সঙ্গে জাপানের অর্থনৈতিক অগ্রহতির সহায়ক এর পাশাপাশি অনেক শ্রমিকের নির্মম মৃত্যুর জন্য সর্বত্রই স্মরণীয়।
অনেক আগেই সবাই এই দ্বীপটি পরিত্যাগ করলেও মিৎসুবিসি কোম্পানিটি এখনো এই দ্বীপের মালিকানা রাখে। ভাঙ্গা দেয়ালগুলোকে পুনঃনির্মাণ করে এখানে পর্যটকদের আসার বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছে। দ্বীপটির প্রাচীন ঘরবাড়িগুলো ও সমুদ্রের সৌন্দর্য পর্যটকদের আগ্রহের স্থান। তাছাড়াও এই দ্বীপটির স্থাপনা সবগুলোই প্রাচীন রোমান স্থাপনার আদলে নির্মিত হওয়ায় বাইরের পর্যটকদের কাছেও অনেক জনপ্রিয়। ২০১১ সালের একটি গবেষণার পর জানা গেছে, হাসিমা দ্বীপটির ক্ষয় হওয়া স্থাপনাগুলো টিকিয়ে রাখা সম্ভব।
# ঐতিহাসিক হাসিমা দ্বীপঃ
কোনো এক কালে প্রায় ছয় হাজার মানুষের বসতি ছিলো জাপানের বিখ্যাত এই পরিত্যক্ত দ্বীপটিতে। দ্বীপটিতে ১৫ টি এপার্টমেন্ট আর প্রায় ১০০টি ছোট দোকান ছিলো। দ্বীপের উপর থেকে দেখলে এখনো মনে হবে নিশ্চয় এখানে মানুষের বসবাস আছে। কিন্তু বাইরে থেকে যা দেখতে পাওয়া যায় আসলে তা না। সেখানে কোনো মানুষের বসবাস নেই। নাগাসাকি থেকে মাত্র নয় মাইল দূরে অবস্থিত দ্বীপটি একসময় কয়লা উত্তোলনের জন্য বিখ্যাত ছিলো যা জাপানের শিল্পায়নের সঙ্গে যুতসই ছিলো।
হাসিমা দ্বীপটি গুনকানজিমা নামেও বেশ পরিচিত। গুনকানজিমা অর্থ হচ্ছে যুদ্ধজাহাজ দ্বীপ। কারণ বাইরে থেকে এই দ্বীপটি দেখতে ঠিক একটা যুদ্ধজাহাজের মতোই। দ্বীপটিতে ১৮৮৭ সাল থেকে কয়লা উত্তোলন শুরু হয়। জাপানের মিৎসুবিসি ১৮৯০ সালে দ্বীপটি ক্রয় করে নেয় এবং সমুদ্রের নিচের খনি থেকে কয়লা উত্তোলন শুরু করে। প্রায় ১৫ দশমিক ৭ মিলিয়ন টন কয়লা উত্তোলন করে জাপানের এই কোম্পানিটি। তখন এই হাসিমা দ্বীপের উত্যোলিত কয়লা জাপানের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখে। পরবর্তী ৫৫ বছরে এখানে থাকা উত্তোলক ও তাদের পরিবারের সুবিধার্থে অনেক এপার্টমেন্ট, স্কুল, হাসপাতাল, টাউন হল ও একটি কমিউনিটি সেন্টার নির্মিত হয়। তাছাড়াও বিনোদনের জন্য একটি ক্লাব হাউস ও সিনেমা হল পর্যন্ত নির্মিত হয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় চাইনিজ বন্দীদের এখানে অনেক কঠিন সময়ের মুখোমুখি হতে হয়। তাদের জোরপূর্বক দ্বীপটিতে রেখে শ্রমিক হিসেবে কাজ করানো হতো। সেই শ্রমিকরা অনেক দুর্যোগপ্রবণ অবস্থায় খনিতে কাজ করতো। তাছাড়াও তারা নিজেদের ন্যায্য অধিকার না পাওয়ার কারণে অপুষ্টিজনিত অনেকেই মারা যায়। তাছাড়াও অনেকে সুমুদ্রের নিচ থেকে কয়লা উত্তোলনের সময় দূর্ঘটনায় পানির নিচেও মারা যায়। তখন সেখানে শ্রমিকদের উপযোগী তেমন কিছুই ছিলো না। উলটো তাদের ছিলো দুর্ভোগ। সেখানে প্রায় এক হাজার শ্রমিক মারা যায়। অনেকের মতে এই সংখ্যা আরো বেশি (প্রায় ১৩০০ শ্রমিক)। ১৯৬০ সালের দিকে পেট্রোল জ্বালানী হিসেবে কয়লার স্থান দখল করলে এই জায়গাটি আগের মতো গুরুত্ব হারিয়ে ফেলে। তাই কোম্পানিও এখানের শ্রমিকদের রেহাই দেয়। তখন সবাই দ্বীপটি ছেড়ে অন্যত্র পাড়ি জমায়।
"""""***"" শেষ কথাঃ
১৮০০ সালের শুরুর দিকে এই দ্বীপের কাছে প্রায় ১৬ একর জায়গায় কয়লার খনি আবিষ্কৃত হয়। সেই সময় পশ্চিমা বিশ্বের সমৃদ্ধ ও দ্রুতগতির সঙ্গে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে তাল মেলানোর জন্য জাপান কয়লা উত্তোলনের উদ্যোগ গ্রহণ করে। তাছাড়াও কয়লাই ছিলো তখনকার প্রধান জ্বালানী। তাই এই দ্বীপটি ছিলো জাপানের অর্থনীতির জন্য আশীর্বাদস্বরুপ। ১৮৯০ সালে মিৎসুবিসি এই দ্বীপ ক্রয় করার পর অনেক স্থাপনা তৈরি হতে থাকে। তখন এই হিসিমা দ্বীপই ছিলো জাপানের অন্যতম প্রধান সমুদ্রের নিচে থাকা কয়লা খনি। ১৯১৬ সালে প্রথম এখানে ৮তলা এপার্টমেন্ট তৈরি করা হয়। এর প্রধান লক্ষ্য ছিলো দ্বীপটির শ্রমিকদের টাইফুন ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে বাঁচানো। ১৯৫৯ সালের দিকে এই দ্বীপের জনসংখ্যা সর্বোচ্চ প্রায় ছয় হাজারে উন্নীত হয়। ঠিক তার পরেই ১৯৬০ সালে পেট্রোল জ্বালানী হিসেবে কয়লা স্থান দখল করে। ১৯৭৪ সালের জানুয়ারিতে মিৎসুবিসি কোম্পানিটি চিরতরে এই জায়গা থেকে কয়লা উত্তোলন বন্ধ করে দেয়। শ্রমিকরা কাজ না পেয়ে দ্বীপটি চিরতরে ত্যাগ করে। মাত্র তিন মাসের মধ্যেই পুরো দ্বীপটি জনমানবশূন্য হয়ে যায়। *********