25/07/2022
(১)
সফল ব্যক্তিদের কথা দুনিয়ার সকলেই আগ্রহভরে শুনতে চায়। বিল গেটস থেকে শুরু করে স্টিভ জবস— ক্যারিয়ারে সফল হওয়ার কারণে তারা তাবৎ দুনিয়ার বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আমন্ত্রিত হতেন হরহামেশাই।
ব্যর্থ হতে হতে যারা একদিন সফলতা পায়, যদি আমি প্রচলিত বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিসনের গল্পটার কথা বলি— পড়াশুনায় মনোযোগ নেই বলে যাকে স্কুল থেকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছিলো শিক্ষক, মায়ের নিবিড় তত্ত্বাবধানে একদিন সেই বালক তার আবিষ্কার দিয়ে তাক লাগিয়ে দেয় গোটা দুনিয়াকে!
ছোটবেলায় পাঠ্যপুস্তকে পড়া রাজা রবার্ট ব্রুসের গল্পটার কথাও যদি বলি— শত্রুর কাছে হারতে হারতে যে বিলীন হতে বসেছিলো, একদিন গুহার মধ্যে একটা ছোট্ট মাকড়সা যার অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠে এবং যে শেষপর্যন্ত উদ্ধার করতে সমর্থ হয় তার হারানো সাম্রাজ্য— এসবগুলোই ব্যর্থতার পথ পাড়ি দিয়ে সফলতার সোপানে পৌঁছানোদের গল্প।
কিন্তু যে ছেলেটার সত্যিই পড়ালেখায় কোনোদিন মনোযোগ ছিলো না, যাকেও একদিন স্কুল শিক্ষক তাড়িয়ে দিয়েছিলেন তিরস্কার করে এবং যে শেষ পর্যন্ত টমাস আলভা এডিসনের মতো একজন বিজ্ঞানী হতে পারেনি,
অথবা,
যে রাজা বারংবার হারতে হারতে একদিন সত্যিই বিলীন হয়ে গিয়েছে ইতিহাসের পাতা থেকে, যার জীবনে অনুপ্রেরণা হয়ে ধরা দেয়নি কোন মাকড়সা, যার কোনোদিন হয়ে উঠা হয়নি ইতিহাস-গড়া বীর রবার্ট ব্রুস,
কিংবা
যে ছেলেটা পেরুতে পারে না বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি,
গ্র্যাজুয়েশান শেষ করেও যে ছেলেটা বেকারত্বের অভিশাপ মাথায় নিয়ে ধুঁকে ধুঁকে মরছে,
অহংকার করে বলার মতো যে ছেলেটার সিজিপিএ নেই,
এদের কাউকেই ইতিহাস মনে রাখে না। এদের কাউকেই বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ডাকা হয় না। অনুপ্রেরণা লাভের জন্য এদের কেউ স্থান পায় না পাঠ্যপুস্তকের মাঝে।
কারণ— ইতিহাস শেষ পর্যন্ত বিজয়ীরাই লিখে আর সকলে কেবল বিজয়ীদের কথা শুনতেই পছন্দ করে।
(২)
উঁহু, একটু ভুল বলেছি।
দুনিয়ার সকলেই কেবল বিজয়ীদের গল্প শুনতে চাইলেও, আসমানে একজন আছেন যিনি সর্বদা অপেক্ষা করে থাকেন তাঁর অ-সফল বান্দারা, হারতে হারতে মিলিয়ে যাওয়ার একেবারে দ্বারপ্রান্তে এসে যাওয়া বান্দারা, যে বান্দাটার ঝুলিতে দুনিয়ার কোন অর্জন নেই— নেই তাক লাগানোর মতো সিজিপিএ কিংবা ক্যারিয়ার, নেই মোটা অঙ্কের স্যালারি কিংবা স্ট্যাটাস— তিনি অপেক্ষা করেন তাদের গল্পগুলোও শুনবার জন্যে...
গুনাহ করতে করতে ক্ষয়ে যাচ্ছে যাদের হৃদয়, পাপের ভারে নুইয়ে পড়েছে যাদের অন্তর, প্রবৃত্তির তাড়নায় পথভ্রান্ত হয়ে যারা তলিয়ে যাচ্ছে জাহিলিয়াতের অতল তলে— তাদের গল্পগুলো তাদের মুখ থেকে শোনার জন্যে, সেই অন্ধকার থেকে তাদেরকে টেনে তুলতে, ধুয়ে-মুছে সাফ করে দিতে তাদের কলুষিত অন্তর— কতো অধীর অপেক্ষাই না তিনি করেন!
সূরা আয-যুমারে তিনি বলেছেন,
'বলো, আমার বান্দারা! যারা নিজেদের ওপর জুলুম করেছো (পাপের দ্বারা), আল্লাহর রহমত থেকে তোমরা নিরাশ হয়ে যেও না৷ আল্লাহ সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন। তিনি অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু'।- আয-যুমার ৫৩
আল্লাহর ডাকটা খেয়াল করেছেন একবার?
তিনি কিন্তু বলেননি— 'আমার মুমিন বান্দারা', অথবা 'আমার মুত্তাকী বান্দারা'...
তিনি বলেছেন— 'আমার বান্দারা...'
এই 'আমার বান্দা' ডাকটার মাঝে দুনিয়ার সমস্ত আস্তিক-নাস্তিক-কাফির-মুশরিক, পাপী-তাপী-ঈমানদার-মুত্তাকী— আমরা সকলে অন্তর্ভুক্ত।
শিরক করে ফেলেছেন? নিরাশ হবেন না। আল্লাহর দিকে ফিরে আসুন— তিনি ক্ষমা করে দেবেন।
এমন কোন গুনাহ করে ফেলেছেন যা ভাবছেন ক্ষমার অযোগ্য?
একবার আল্লাহর কাছে দিল খুলে তাওবা করুন। নিজের ভুলটাকে স্বীকার করে তাঁর দরবারে কেবল দুই ফোঁটা অশ্রু ফেলুন— তিনি আপনার সমস্ত অপরাধ, যদি তা আসমানও ছোঁয়, ক্ষমা করে দেবেন।
বিভ্রান্ত, বিপর্যস্ত, ব্যর্থ আর নিরাশাবাদীদের গল্প দুনিয়ার কেউ শুনতে না চাইলেও, আমরা এমন একজন রবের ইবাদাত করি যিনি সকলের কথা, সকলের গল্প সমান আগ্রহভরে শোনেন৷
এমন দয়ার সাগর যে রব, তাঁকে ভালো না বেসে পারা যায়, বলুন?
'কুরআন থেকে নেওয়া জীবনের পাঠ-১১'
কপি পোস্ট আরিফ আজাদ