24/09/2021
দারসুল কোরআন
সুরা যুমার ৮-১০ আয়াত।
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ
﴿وَإِذَا مَسَّ الْإِنسَانَ ضُرٌّ دَعَا رَبَّهُ مُنِيبًا إِلَيْهِ ثُمَّ إِذَا خَوَّلَهُ نِعْمَةً مِّنْهُ نَسِيَ مَا كَانَ يَدْعُو إِلَيْهِ مِن قَبْلُ وَجَعَلَ لِلَّهِ أَندَادًا لِّيُضِلَّ عَن سَبِيلِهِ ۚ قُلْ تَمَتَّعْ بِكُفْرِكَ قَلِيلًا ۖ إِنَّكَ مِنْ أَصْحَابِ النَّارِ﴾
৮) মানুষের ওপর যখন কোন বিপদ আসে তখন সে তার রবের দিকে ফিরে যায় এবং তাঁকে ডাকে৷ কিন্তু যখন তার রব তাকে নিয়ামত দান করেন তখন সে ইতিপূর্বে যে বিপদে পড়ে তাঁকে ডাকছিলো তা ভুলে যায় এবং অন্যদেরকে আল্লাহর সমক্ষ মনে করতে থাকে যাতে তারা আল্লাহর পথ থেকে তাকে গোমরাহ করে৷ (হে নবী,) তাকে বলো, তোমার কুফরী দ্বারা অল্প কিছুদিন মজা করে নাও৷ নিশ্চিতভাবেই তুমি দোযখে যাবে৷
﴿أَمَّنْ هُوَ قَانِتٌ آنَاءَ اللَّيْلِ سَاجِدًا وَقَائِمًا يَحْذَرُ الْآخِرَةَ وَيَرْجُو رَحْمَةَ رَبِّهِ ۗ قُلْ هَلْ يَسْتَوِي الَّذِينَ يَعْلَمُونَ وَالَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ ۗ إِنَّمَا يَتَذَكَّرُ أُولُو الْأَلْبَابِ﴾
৯) (এ ব্যক্তির আচরণই সুন্দর না সে ব্যক্তির আচরণ সুন্দর) যে অনুগত, রাতের বেলা দাঁড়ায় ও সিজদা করে আখেরাতকে ভয় করে এবং নিজের রবের রহমতের আশা করে ? এদর জিজ্ঞেস করো যারা জানে এবং যারা জানে না তারা কি পরস্পর সমান হতে পারে? কেবল বিবেক-বুদ্ধির অধিকারীরাই উপদেশ গ্রহণ করে৷
﴿قُلْ يَا عِبَادِ الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا رَبَّكُمْ ۚ لِلَّذِينَ أَحْسَنُوا فِي هَٰذِهِ الدُّنْيَا حَسَنَةٌ ۗ وَأَرْضُ اللَّهِ وَاسِعَةٌ ۗ إِنَّمَا يُوَفَّى الصَّابِرُونَ أَجْرَهُم بِغَيْرِ حِسَابٍ﴾
১০) [হে নবী, (সা)] বলো, হে আমার সেসব বান্দা যারা ঈমান গ্রহণ করেছো তোমাদের রবকে ভয় করো
নামকরণ
আয়াত নম্বর ৭১ ও ৭৩ থেকে সূরাটির নাম গৃহীত হয়েছে। এর অর্থ এটি সে সূরা যার মধ্যে ‘ যুমার ’ শব্দের উল্লেখ আছে।
নাযিলের হওয়ার সময় কাল
এ সূরা যে হাবশায় হিজরত করার পূর্বে নাযিল হয়েছিল , সে ব্যাপারে ১০ নম্বর আয়াত থেকে স্পষ্ট ইংগিত পাওয়া যায়। কোন কোন রেওয়ায়াতে একথা সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে , হযরত জাফর ইবনে আবী তালেব ও তার সংগী সাথীগণ হাবশায় হিজরতের সংকল্প করলে তাদের সম্পর্কে এ আয়াত নাযিল হয়েছিল (রূহুল মায়ানী , ২৩ তম খণ্ড , পৃষ্ঠা , ২২৬ )
বিষয়বস্তু ও মূল বক্তব্য
হাবশায় হিজরতের কিছু পূর্বে মক্কার পরিবেশ ছিল জুলুম – নির্যাতন এবং শত্রুতা ও বিরোধিতায় ভরা। ঠিক এ পরিবেশে এ গোটা সূরাটিকে একটি অত্যন্ত মনোজ্ঞ ও মর্মস্পর্শী বক্তৃতারূপে পেশ করা হয়েছে। এটা একটা নসীহত। এতে মাঝে মধ্যে ঈমানদারদের সম্বোধন করা হলেও বেশীরভাগ কুরাইশ গোত্রের কাফেরদের সম্বোধন করা হয়েছে এবং হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দাওয়াতের উদ্দেশ্য বর্ণনা করা হয়েছে। আর সে উদ্দেশ্যটি হচ্ছে , মানুষ যেন একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর দাসত্ব গ্রহণ করে এবং তার আল্লাহপ্রীতিকে অন্য কারো দাসত্ব ও আনুগত্য দ্বারা কলুষিত না করে। এ মৌলিক নীতিকে বারবার বিভিন্ন ভঙ্গিতে উপস্থাপন করে অত্যন্ত জোরালো পন্থায় তাওহীদের সত্যতা এবং তা মেনে চলার উত্তম ফলাফল আর শিরকের ভ্রান্তি ও তা আঁকড়ে ধরে থাকার মন্দ ফলাফল অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে । তাছাড়া মানুষকে ভ্রান্ত আচরণ পরিত্যাগ করে আল্লাহর রহমতের দিকে ফিরে আসার জন্য আহবান জানানো হয়েছে। এ প্রসংগে ঈমানদারদেরকে পথনির্দেশনা দেয়া হয়েছে যে , যদি আল্লাহর দাসত্বের জন্য একটি জায়গা সংকীর্ণ হয়ে গিয়ে থাকে তাহলে তাঁর এ পৃথিবী অনেক প্রশস্ত। নিজের দীনকে রক্ষা করার জন্য অন্য কোথাও চলে যাও। আল্লাহ তোমাদের ধৈর্যের পুরস্কার দান করবেন । অন্যদিকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলা হয়েছে যে , কাফেরদের জুলুম- নির্যাতন একদিন না একদিন তোমাদেরকে এ পথ থেকে ফিরিয়ে আনতে পারবে , এমন দুরাশা কাফেরদের মন থেকে দূর করে দাও এবং পরিস্কারভাবে বলে দাও যে , আমার পথ রোধ করার জন্য তোমরা যা কিছু করতে চাও করো , আমি আমার কাজ চালিয়েই যেতে থাকবো।
ব্যাখ্যা
৩৯:৮ وَ اِذَا مَسَّ الۡاِنۡسَانَ ضُرٌّ دَعَا رَبَّهٗ مُنِیۡبًا اِلَیۡهِ ثُمَّ اِذَا خَوَّلَهٗ نِعۡمَۃً مِّنۡهُ نَسِیَ مَا کَانَ یَدۡعُوۡۤا اِلَیۡهِ مِنۡ قَبۡلُ وَ جَعَلَ لِلّٰهِ اَنۡدَادًا لِّیُضِلَّ عَن سَبِیۡلِهٖ ؕ قُلۡ تَمَتَّعۡ بِکُفۡرِکَ قَلِیۡلًا ٭ۖ اِنَّکَ مِنۡ اَصۡحٰبِ النَّا ا م﴿۸﴾
আর যখন মানুষকে স্পর্শ করে দুঃখ-দুর্দশা, তখন সে একাগ্রচিত্তে তার রবকে ডাকে, তারপর তিনি যখন তাকে নিজের পক্ষ থেকে নিআমত দান করেন তখন সে ভুলে যায় ইতঃপূর্বে কি কারণে তাঁর কাছে দোয়া করেছিল, আর আল্লাহর সমকক্ষ নির্ধারণ করে, তাঁর পথ থেকে বিচ্যুত করার জন্য। বল, ‘তোমার কুফরী উপভোগ কর ক্ষণকাল; নিশ্চয় তুমি জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত।’ আল-বায়ান
দুঃখ-মুসিবত যখন মানুষকে স্পর্শ করে তখন সে তার প্রতিপালককে ডাকতে থাকে তাঁর প্রতি বড়ই একনিষ্ঠ হয়ে। অতঃপর তিনি যখন নিজ পক্ষ থেকে অনুগ্রহ দিয়ে তাকে ধন্য করেন, তখন পূর্বে সে যেজন্য তাঁকে ডেকেছিল তা ভুলে যায় এবং অন্যদেরকে আল্লাহর সমকক্ষ দাঁড় করায় তাঁর পথ থেকে পথভ্রষ্ট করার জন্য। বলে দাও, কুফুরীর জীবন কিছুকাল ভোগ করে নাও, (অতঃপর) তুমি তো হবে জাহান্নামের অধিবাসী। (এ ব্যক্তি ভাল, না ঐ ব্যক্তি) তাইসিরুল
মানুষকে যখন দুঃখ দৈন্য স্পর্শ করে তখন সে অনুতপ্ত হয়ে একনিষ্ঠভাবে তার রাব্বকে ডাকে। কিন্তু পরে যখন তিনি তার প্রতি অনুগ্রহ করেন তখন সে বিস্মৃত হয়ে যায় পূর্বে যাকে সে ডেকেছিল তাঁকে এবং সে আল্লাহর সমকক্ষ দাঁড় করায়, অপরকে তাঁর পথ হতে বিভ্রান্ত করার জন্য। বলঃ কুফরীর জীবন অবস্থায় তুমি কিছু কাল উপভোগ করে নাও। বস্তুতঃ তুমিতো জাহান্নামেরই অধিবাসী। মুজিবুর রহমান
৮. আর মানুষকে যখন দুঃখ-দৈন্য স্পর্শ করে তখন সে একাগ্রচিত্তে তার রবকে ডাকে। তারপর যখন তিনি নিজের পক্ষ থেকে তার প্রতি অনুগ্রহ করেন তখন সে ভুলে যায় তার আগে যার জন্য সে ডেকেছিল তাকে এবং সে আল্লাহ্র সমকক্ষ দাঁড় করায়, অন্যকে তার পথ থেকে বিভ্ৰান্ত করার জন্য। বলুন, কুফরীর জীবন তুমি কিছুকাল উপভোগ করে নাও। নিশ্চয় তুমি আগুনের অধিবাসীদের অন্তর্ভুক্ত।
তাফসীরে জাকারিয়া
(৮) মানুষকে যখন দুঃখ-দৈন্য স্পর্শ করে, তখন সে একনিষ্ঠভাবে তার প্রতিপালককে ডাকে; পরে যখন তিনি তার প্রতি অনুগ্রহ করেন, তখন সে যার জন্য তাঁকে ডাকছিল তা ভুলে বসে[1] এবং সে আল্লাহর পথ হতে অন্যকে বিভ্রান্ত করার জন্য আল্লাহর অংশী ঠিক করে নেয়। বল, ‘অবিশ্বাস অবস্থায় তুমি কিছুকাল জীবনোপভোগ করে নাও, বস্তুতঃ তুমি জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত।’
[1] অর্থাৎ, সেই দু’আ ভুলে বসে। অথবা সেই কষ্ট ভুলে বসে, যা দূর করার জন্য সে অন্যদেরকে ছেড়ে আল্লাহর নিকট দু’আ করত। অথবা সেই প্রভুকে ভুলে বসে, যাকে সে ডাকত ও তার সামনে কাকুতি-মিনতি করত, অতঃপর সে পুনরায় শিরক করতে আরম্ভ করে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান
اَمَّنۡ هُوَ قَانِتٌ اٰنَآءَ الَّیۡلِ سَاجِدًا وَّ قَآئِمًا یَّحۡذَرُ الۡاٰخِرَۃَ وَ یَرۡجُوۡا رَحۡمَۃَ رَبِّهٖ ؕ قُلۡ هَلۡ یَسۡتَوِی الَّذِیۡنَ یَعۡلَمُوۡنَ وَ الَّذِیۡنَ لَا یَعۡلَمُوۡنَ ؕ اِنَّمَا یَتَذَکَّرُ اُولُوا الۡاَلۡبَابِ
যে ব্যক্তি রাতের প্রহরে সিদজাবনত হয়ে ও দাঁড়িয়ে আনুগত্য প্রকাশ করে, আখিরাতকে ভয় করে এবং তার রব-এর রহমত প্রত্যাশা করে (সে কি তার সমান যে এরূপ করে না) বল, ‘যারা জানে আর যারা জানে না তারা কি সমান?’ বিবেকবান লোকেরাই কেবল উপদেশ গ্রহণ করে। আল-বায়ান
যে রাত্রির বিভিন্ন প্রহরে সেজদা ও দন্ডায়মান অবস্থায় বিনয় ও শ্রদ্ধা-ভক্তি প্রকাশ করে, আখিরাতকে ভয় করে, আর তার প্রতিপালকের অনুগ্রহ প্রত্যাশা করে? বল- যারা জানে আর যারা জানে না, তারা কি সমান? বিবেক-বুদ্ধিসম্পন্ন লোকেরাই কেবল উপদেশ গ্রহণ করে থাকে। তাইসিরুল
যে ব্যক্তি রাতের বিভিন্ন সময়ে সাজদাহবনত হয়ে ও দাঁড়িয়ে আনুগত্য প্রকাশ করে, আখিরাতকে ভয় করে এবং তার রবের অনুগ্রহ প্রত্যাশা করে সে কি তার সমান যে তা করেনা? বলঃ যারা জানে এবং যারা জানেনা তারা কি সমান? বোধশক্তি সম্পন্ন লোকেরাই শুধু উপদেশ গ্রহণ করে।
৯. যে ব্যক্তি রাতের বিভিন্ন প্রহরে(১) সিজদাবনত হয়ে ও দাঁড়িয়ে আনুগত্য প্রকাশ করে, আখিরাতকে ভয় করে(২) এবং তার রবের অনুগ্রহ প্রত্যাশা করে, (সে কি তার সমান, যে তা করে না?) বলুন, যারা জানে এবং যারা জানে না, তারা কি সমান? বোধশক্তি সম্পন্ন লোকেরাই শুধু উপদেশ গ্ৰহণ করে।
(১) (آنَاءَ اللَّيْلِ) এর অর্থ রাত্রির প্রহরসমূহ। অর্থাৎ রাত্রির শুরুভাগ, মধ্যবর্তী ও শেষাংশ। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেনঃ যে ব্যক্তি হাশরের ময়দানে সহজ হিসাব কামনা করে, তার উচিত হবে আল্লাহ যেন তাকে রাত্রির অন্ধকারে সেজদারত ও দাঁড়ানো অবস্থায় পান। তার মধ্যে আখেরাতের চিন্তা এবং রহমতের প্রত্যাশাও থাকা দরকার। কেউ কেউ মাগরিব ও এশার মধ্যবর্তী সময়কেও آنَاءَ اللَّيْلِ বলেছেন। [ইবন কাসীর, তাবারী]
(২) তবে মৃত্যুর সময় আশাকে প্রাধান্য দিতে হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যাক্তির মৃত্যুর সময় তার কাছে প্রবেশ করে বললেন, তোমার কেমন লাগছে? লোকটি বলল, আমি আশা করছি এবং ভয়ও পাচ্ছি। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ দুটি বস্তু অর্থাৎ আশা এবং ভয় যে অন্তরে এ সময় একত্রিত হবে আল্লাহ তাকে তার আশার বিষয়টি দিবেন এবং ভয়ের বিষয়টি থেকে দূরে রাখবেন। [তিরমিযী: ৯৮৩]
তাফসীরে জাকারিয়া
(৯) যে ব্যক্তি রাত্রিকালে সিজদাবনত হয়ে এবং দাঁড়িয়ে ইবাদত করে, পরকালকে ভয় করে এবং তাঁর প্রতিপালকের অনুগ্রহ প্রত্যাশা করে, (সে কি তার সমান, যে তা করে না?)[1] বল, ‘যারা জানে এবং যারা জানে না তারা কি সমান? [2] বুদ্ধিমান লোকেরাই কেবল উপদেশ গ্রহণ করে।’[3]
[1] উদ্দেশ্য হল যে, কাফের ও মুশরিকের তো এই অবস্থা যা বর্ণনা করা হল। পক্ষান্তরে আর এক ব্যক্তি যে সুখে-দুঃখে, আল্লাহর সামনে অক্ষমতা ও আনুগত্য প্রকাশের মাধ্যমে সিজদা ও কিয়াম অবস্থায় রাত্রি যাপন করে। তার মন আখেরাতের ভয়ে ভীত এবং সে প্রভুর রহমতের আশাধারী হয়। অর্থাৎ ভয় ও আশা উভয় অবস্থাই তার মধ্যে পাওয়া যায়; যা প্রকৃত ঈমান। এরা দুইজন কি সমান হতে পারে? না, কক্ষনই না। ভয় ও আশা সম্পর্কে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, আনাস (রাঃ) বলেন, একদা রসূলুল্লাহ (সাঃ) মুত্যু মুখে পতিত এক ব্যক্তির নিকট গেলেন। তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘‘তোমার অবস্থা কি?’’ সে ব্যক্তি বলল, ‘আমি আল্লাহর নিকট আশা রাখছি এবং স্বকৃত পাপের জন্য ভয়ও করছি।’ রসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, ‘‘এই অবস্থায় যদি কোন বান্দার মনে এই দু’টি কথা একত্রিত হয়, তাহলে আল্লাহ তাআলা তাকে ঐ বস্তু প্রদান করবেন, যে বস্তুর সে আশা করে এবং সেই বস্তু থেকে বাঁচিয়ে নেবেন, যার সে ভয় করে।’’ (তিরমিযী -ইবনে মাজাহ)
[2] অর্থাৎ, সেই ব্যক্তি যে জানে যে, আল্লাহ শান্তি ও শাস্তির যে ওয়াদা করেছেন তা সত্য এবং ঐ ব্যক্তি যে এ কথা জানে না, এরা দুইজন সমান হতে পারে না। একজন বিজ্ঞ এবং অপরজন অজ্ঞ। যেমন শিক্ষা ও মূর্খতা এক নয়, অনুরূপ শিক্ষিত ও মূর্খ সমান নয়। হতে পারে যে, এখানে আলেম ও জাহেলের উদাহরণ দিয়ে এ কথা বুঝানো হয়েছে যে, যেমন এরা দুইজন সমান নয়, অনুরূপ আল্লাহর বাধ্য ও অবাধ্য বান্দা, দুইজনে সমান হতে পারে না। কেউ কেউ এর অর্থ এই বর্ণনা করেছেন যে, আলেম (জ্ঞানী) বলে ঐ ব্যক্তিকে বুঝানো হয়েছে, যে তার ইলম (জ্ঞান) অনুযায়ী আমল করে। কারণ সেই (প্রকৃত আলেম যে তার) ইলম দ্বারা উপকৃত হয়। আর যে নিজ ইলম অনুযায়ী আমল করে না, সে ঠিক যেন অজ্ঞ। এই অর্থ অনুযায়ী এখানে আমলকারী ও বেআমল ব্যক্তির উদাহরণ দেওয়া হয়েছে যে, এরা দুইজন এক সমান নয়।
[3] যারা মু’মিন, কাফের নয়; যদিও তারা নিজেদেরকে জ্ঞানী ও বুদ্ধিমান ভাবে। যখন তারা নিজ জ্ঞান-বুদ্ধি দ্বারা চিন্তা-ভাবনাই করে না এবং শিক্ষা ও নসীহতই অর্জন করে না, তখন তারা ঠিক যেন চতুষ্পদ জন্তুর মত জ্ঞান-বুদ্ধি থেকে বঞ্চিত।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান
قُلۡ یٰعِبَادِ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اتَّقُوۡا رَبَّکُمۡ ؕ لِلَّذِیۡنَ اَحۡسَنُوۡا فِیۡ هٰذِهِ الدُّنۡیَا حَسَنَۃٌ ؕ وَ اَرۡضُ اللّٰهِ وَاسِعَۃٌ ؕ اِنَّمَا یُوَفَّی الصّٰبِرُوۡنَ اَجۡرَهُمۡ بِغَیۡرِحِسَاب﴿۰
বল, ‘হে আমার মুমিন বান্দারা যারা ঈমান এনেছ, তোমরা তোমাদের রবকে ভয় কর। যারা এ দুনিয়ায় ভাল কাজ করে তাদের জন্য রয়েছে কল্যাণ। আর আল্লাহর যমীন প্রশস্ত, কেবল ধৈর্যশীলদেরকেই তাদের প্রতিদান পূর্ণরূপে দেয়া হবে কোন হিসাব ছাড়াই।’ আল-বায়ান
বল, হে ঈমানদারগণ! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর। এ দুনিয়ায় যারা ভাল কাজ করবে, তাদের জন্য আছে কল্যাণ। আল্লাহর যমীন প্রশস্ত (এক এলাকায় ‘ইবাদাত-বন্দেগী করা কঠিন হলে অন্যত্র চলে যাও)। আমি ধৈর্যশীলদেরকে তাদের পুরস্কার অপরিমিতভাবে দিয়ে থাকি। তাইসিরুল
বলঃ (আমার এই কথা) হে আমার মু’মিন বান্দারা! তোমরা তোমাদের রাব্বকে ভয় কর। যারা এই দুনিয়ায় কল্যাণকর কাজ করে তাদের জন্য আছে কল্যাণ। প্রশস্ত আল্লাহর পৃথিবী, ধৈর্যশীলদেরকে অপরিমিত পুরষ্কার দেয়া হবে।
১০. বলুন, হে আমার মুমিন বান্দাগণ! তোমরা তোমাদের রবের তাকওয়া অবলম্বন কর। যারা এ দুনিয়াতে কল্যাণকর কাজ করে তাদের জন্য আছে কল্যাণ। আর আল্লাহর যমীন প্রশস্ত(১), ধৈর্যশীলদেরকেই তো তাদের পুরস্কার পূর্ণরূপে দেয়া হবে বিনা হিসেবে।(২)
(১) মুজাহিদ বলেন, আল্লাহর যমীন যেহেতু প্রশস্ত সুতরাং তোমরা তাতে হিজরত কর, জিহাদ কর এবং মূর্তি থেকে দূরে থাক। আতা বলেন, আল্লাহর যমীন প্রশস্ত সুতরাং তোমাদেরকে যদি গুনাহর দিকে ডাকা হয় তবে সেখান থেকে চলে যেও। [ইবন কাসীর]
(২) অর্থ সবরকারীদের সওয়াব কোন নির্ধারিত পরিমাণে নয়- অপরিসীম ও অগণিত দেয়া হবে। কেউ কেউ এর অর্থ বর্ণনা করেছেন যে, দুনিয়াতে কারও কারও কোন প্ৰাপ্য থাকলে তাকে নিজের প্রাপ্য দাবী করে আদায় করতে হয়। কিন্তু আল্লাহর কাছে দাবী ব্যতিরেকেই সবরকারীরা তাদের সওয়াব পাবে। ইমাম মালেক রাহেমাহুল্লাহ এ আয়াতে صَابِرِيْنَ এর অর্থ নিয়েছেন, যারা দুনিয়াতে বিপদাপদ ও দুঃখ-কষ্টে সবর করে। কেউ কেউ বলেন, যারা পাপকাজ থেকে সংযম অবলম্বন করে, আয়াতে তাদেরকে صابر বলা হয়েছে। কুরতুবী বলেন صَابِرُونَ শব্দকে অন্য কোন শব্দের সাথে সংযুক্ত না করে ব্যবহার করলে তার অর্থ হয় পাপকাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখার কষ্ট সহ্যকারী৷ পক্ষান্তরে বিপদাপদে সবরকারী অর্থে ব্যবহার করা হলে তার সাথে সে বিপদও সংযুক্ত হয়ে উল্লেখিত হয়। তবে সত্যনিষ্ঠ একদল মুফাফসিরের মতে এখানে صابر বলে সাওম পালনকারীদের বোঝানো হয়েছে। [দেখুন: কুরতুবী, তাবারী]
তাফসীরে জাকারিয়া
(১০) ঘোষণা করে দাও (আমার এ কথা), হে আমার বিশ্বাসী দাসগণ! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর।[1] যারা এ পৃথিবীতে কল্যাণকর কাজ করে, তাদের জন্য আছে কল্যাণ।[2] আর আল্লাহর পৃথিবী প্রশস্ত।[3] ধৈর্যশীলদেরকে তো অপরিমিত পুরস্কার দেওয়া হবে।[4]
[1] তাঁর আনুগত্য করে, পাপকর্ম থেকে বিরত থেকে এবং ইবাদত ও আনুগত্য বিশুদ্ধভাবে একমাত্র তাঁরই জন্য সম্পাদন করে।
[2] এটা তাকওয়ার (আল্লাহ-ভীতির) উপকার। ‘কল্যাণ’ বলতে জান্নাত ও তার চিরস্থায়ী নিয়ামতকে বুঝানো হয়েছে। অনেকে فِيْ هَذِهِ الدُّنْيَا শব্দটিকে حَسَنَةٌ এর ‘মুতাআল্লিক’ (সম্পৃক্ত) ভেবে অর্থ করেছেন ‘‘যারা কল্যাণকর কাজ করে তাদের জন্য এ পৃথিবীতে আছে কল্যাণ।’’ অর্থাৎ, আল্লাহ তাআলা তাদেরকে পৃথিবীতে সুস্থতা ও নিরাপত্তা, বিজয় ও গনীমত ইত্যাদি প্রদান করে থাকেন। তবে পূর্বের অর্থই অধিক সঠিক।
[3] এখানে এই কথার ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, যদি স্বদেশে থেকে ঈমান ও তাকওয়ার উপর অটল থাকা বা শরীয়তের হুকুম-আহকাম পালন করা দুষ্কর হয়, তবে সে স্থানে বসবাস করা অপছন্দনীয়। বরং সেখান থেকে হিজরত করে এমন স্থানে চলে যাওয়া দরকার, যেখানে আল্লাহর বিধান অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করা সহজ হবে এবং যেখানে ঈমান ও তাকওয়া অবলম্বনের পথে কোন বাধা থাকবে না।
[4] ঈমান ও তাকওয়ার পথে কষ্ট অনিবার্য এবং প্রবৃত্তি ও আত্মার চাহিদাকেও কুরবানী করা অবধারিত। যার জন্য ধৈর্যের দরকার। এই জন্য ধৈর্যশীলদের মাহাত্ম্যও বর্ণনা করে দেওয়া হয়েছে যে, তাদেরকে তাদের ধৈর্যের প্রতিদান এমন অপরিসীম ও অগণিত রূপে দেওয়া হবে যা কোন ওজন বা হিসাবের যন্ত্র দ্বারা ওজন বা হিসাব করা সম্ভব হবে না। অর্থাৎ তাদের পুরস্কার অপরিমিত হবে। কারণ যার হিসাব করা যায়, তার একটি সীমা থাকে আর যার কোন সীমা ও শেষ নেই,তা গণনা করা অসম্ভব। এটি ধৈর্যের এমন বৃহৎ মাহাত্ম্য যা অর্জন করার চেষ্টা প্রত্যেক মুসলিমকে করা উচিত। কারণ অধৈর্য হয়ে হা-হুতাশ, ক্ষোভ প্রকাশ বা কান্না-কাটি করে কষ্ট ও বিপদ দূর করা যায় না, যে কল্যাণ ও বাঞ্ছিত জিনিস লাভে বঞ্চনা আসে, তা অর্জন করা যায় না এবং যে অপছন্দনীয় অবস্থা এসে যায়, তা দূর করা সম্ভব হয় না। অতএব মানুষের উচিত, সবর করে সেই বৃহৎ সওয়াবের অধিকারী হওয়া, যা আল্লাহ তাআলা সবরকারীদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন।