15/04/2024
স্কুল মাঠে হাঁটাহাঁটি করছিলাম। এক মুরুব্বি এসে একটা স্লিপ ধরিয়ে বললেন, “বাবা, এই কাগজটা ধরে এখানে দাঁড়াও। আমার পিচ্চি নাতিকে খুঁজে পাচ্ছি না। ওরে একটু খুঁজে নিয়ে আসি।”
কীসের স্লিপ দেখার আগেই মুরুব্বি হনহন করে চলে গেলেন। স্লিপের মধ্যে দেখি লেখা, “ ৫৫. আব্দুল মান্নান” মানে একটা সিরিয়াল নম্বর।
একটু পর খেয়াল হলো, দেখি পাশেই এক জায়গায় কিছু লোক যাকাতের কাপড় বিতরণ করছে। আর সেটার সিরিয়াল নম্বর হচ্ছে এই কাগজ।
তার কিছুক্ষণ পরেই দেখি মাইকে ডাকাডাকি করছে, “৫৫. আব্দুল মান্নান” এদিকে ঐ মুরুব্বির আসার নামগন্ধ নাই। আমি একবার স্লিপের দিকে তাকাচ্ছি আরেকবার কতৃপক্ষের দিকে। যাকাত দাতা একজন দেখলাম আমার দিকে ছুটে আসছে। এসে আমার স্লিপ দেখে বললো, “আরে তুমি তো আব্দুল মান্নান। স্লিপের লেখা পড়তে পারো না? আচ্ছা সমস্যা নেই, আসো আমার সাথে।”
আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই আমাকে ধরে স্টেজে নিয়ে গেলো। তারপর আমার হাতে একটা লুঙ্গি ধরিয়ে দিয়ে কয়েক এঙ্গেলে কিছু ছবি তুলে ছেড়ে দেওয়া হলো।
লুঙ্গি নিয়ে আসার সময় একজনকে বলতে শুনলাম, “এরকম দামড়া পোলাপান যদি আমাদের যাকাতের কাপড়ে ভাগ বসাতে আসে, তাহলে ভবিষ্যতে তো আমরা যাকাতই পাবো না আর। এরা তো কাজ কাম কইরাও খেতে পারে। এটাই আসলে শেষ জামানা।”
এদিকে লুঙ্গি নিয়ে আমি ঐ মুরুব্বিকে খুঁজতেছি। কী এক বিপদে পড়লাম। হঠাৎ পেছন থেকে কেউ একজন এসে ঝাপটে ধরলো। দেখি ঐ মুরুব্বি আর তার পিচ্চি নাতি। আমি কিছু বলার আগেই মুরুব্বি বলতে লাগলেন, “আরে মিয়া, তোমারে বলে গেলাম ওখানে দাঁড়াতে। আর তুমি কী না আমার স্লিপ দেখায়ে আমার লুঙ্গি নিয়ে চলে যাচ্ছো। এই মানুষের প্রতি মানুষের বিশ্বাস?” বলে এক ঝাপটায় আমার থেকে লুঙ্গিখানা নিয়ে নিলেন।
আমি আর উনার কাছে বিষয়টা ব্যখ্যা না করে তাড়াতাড়ি স্থান ত্যাগ করলাম। মানুষ জড়ো হলে গণধোলাই খাবো।
মাঠ পেরিয়ে রাস্তায় আসতেই দেখলাম এক ভদ্রলোক এসে আমার পথ আটকে দাঁড়ালেন। বললেন, “আসো আমার সাথে।” তারপর আমাকে হাত ধরে নিয়ে গেলেন এক কাপড়ের দোকানে। আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই উনি দোকানীকে বললেন, “ভালো দেখে পাঁচটা লুঙ্গি দেও তো।”
আমি বললাম, “লুঙ্গি কেন?”
“আরে লজ্জা পেয়ো না। আমি সব দেখেছি। জানি, তোমরা মুখ ফুটে কিছু বলতে পারো না। তোমাদের অভাব আমি বুঝি। এই পাঁচটা লুঙ্গি রাখো। ভুলেও আর মুরব্বিদের সাথে লুঙ্গি নিয়ে কাড়াকাড়ি করো না। খারাপ দেখায়। আমি দেখেছি তো সব।” বলে আমার হাতে লুঙ্গির ব্যাগ দিয়ে লোকটা চলে গেল।
এরমধ্যে বাসা থেকে কল আসলো। আব্বু ওপাশ থেকে বলতেসেন, “তোর কোনো চাওয়াই তো কোনোদিন অপূর্ণ রাখিনি। তুই কীভাবে পারলি যাকাতের লুঙ্গি আনতে? একটাবার আমার সম্মানের কথা ভাবলি না। আজকে বাসায় আয়। তোর লুঙ্গি পরা আমি শেখাবো।”
তাড়াতাড়ি ফেসবুক খুলে দেখি ওই যাকাত কমিটি আমার ছবি সহ পোস্ট দিয়েছে। পোস্টে দেখি আমার ছাত্রেরও রিয়েক্ট আছে। এসব দেখতেসি, হঠাৎ ইনবক্সে বন্ধু একটা পোস্টের লিংক দিলো। লিংকে ঢুকে দেখি, আরেকটা পোস্ট। যেখানে আমার হাতে পাঁচটা লুঙ্গি সহ একটা ছবি। সাথে মুচকি হাসি দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আমাকে একটু আগে লুঙ্গি কথা কিনে দেওয়া ঐ লোকটা। ক্যাপশনে লেখা, “আলহামদুলিল্লাহ। আজকে এক অভাবী ছেলেকে পাঁচটা লুঙ্গি দিলাম। আসলে মানুষের চেহারা দেখে বুঝা যায় না তারা কতটা অভাবী। সবার উচিত এসব মুখ ফুটে বলতে না পারা অভাবী মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ানো।”
এসব দেখে লজ্জায় আমার মরে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে। কী করবো ভেবে পাচ্ছি না। হাতে এখনো পাঁচটা লুঙ্গি। আনমনে হাঁটতেসি। দেখি, স্কুল মাঠে থাকা কিছু লোক যাকাতে লুঙ্গি না পেয়েই খালি হাতে চলে যাচ্ছে। ভাবলাম ওদের দিয়ে দেই লুঙ্গিগুলো। এরমধ্যে একজন আমাকে দেখে চিনতে পেরে বললো, “দেখছেন কারবার? এই হারামজাদা আগেও লুঙ্গি নিছে, এখনো কার থেকে লুঙ্গি আনছে। এরা একাই এতগুলো লুঙ্গি নিয়ে নিলে আমরা পাবো কেমনে? ছি ছি... শেষ জামানা এতটা খারাপ হবে ভাবি নাই।.. ”
রম্য : যাকাতের লুঙ্গি
কপি পোস্ট।