15/09/2024
শাশুড়ির খাবার পরিবেশন দেখে আমি তেলেবেগুনে জ্বলে উঠছিলাম। তিনি একে একে ফার্মের মুরগীর তরকারি, ডিম ভুনা, লাল শাক, মাছের ভর্তা ও ডাল এনে টেবিলে রাখলেন। এরপর স্বীয় আঁচলে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে বললেন,
- জামাই, অহন খাওন শুরু কইরা দেও। তানুর বাপ বাজারে দেশি মোরগ পায়নাই। আমিও এর ওর বাড়িতে ম্যালা খুঁজ করছি। পাইনাই। ঘরে যে দুইডা মোরগ আছিলো দুইডারেই হিয়ালে খাইয়া ফালাইছে। বিয়ালে আরো খুঁইজা দেহুমনে কারোর বাড়িতে ফাওন যায় কিনা।
বিয়ের পর এনিয়ে দ্বিতীয়বার শশুরবাড়িতে আসা। প্রথমবার আদর আপ্যায়ন ভালোই ছিলো। গরু, খাসি, দেশি মোরগ, রুই মাছ, সে আরো কতো রকমের তরকারি। তবে আজকের খাবার দেখে মেজাজটাই বিগড়ে গেলো একদম। কোনরকম নিজের রাগ সামলে জিজ্ঞেস করলাম,
- আপনি এতো কষ্ট করছেন যে। তানু কোথায়? ওকে বললেই তো পারতেন।
জবাবে শাশুড়ী মুচকি হেসে বললেন,
- কি যে কও জামাই। কষ্ট কীয়ের আবার। তুমি আমার পোলার মতো। আল্লায় আমারে কোন ছেলে সন্তান দেয়নাই। তানুর বিয়ার পর থিকা আমি আর তানুর বাপ তোমারে নিজেগোর পোলার মতোই দেখি। খাও বাজান। খাও।
উনার পীড়াপীড়িতে খাওয়া শুরু করলাম। যদিও উনি বলেননি তানু কোথায় গিয়েছে। আমার আবার দুপুরে খাবার পর একটু গড়াগড়ি না করলে হয়না। তাই খাওয়া শেষে বিছানায় গিয়ে শুরে পড়লাম। এরপর কখন যে চোখদুটো লেগে গিয়েছে টেরও পাইনি। যখন ঘুম ভাঙে তখন প্রায় সন্ধা নেমে এসেছে।
বিছানায় বসে আছি। তানুকে আশেপাশে কোথাও দেখতে না পেয়ে পাশের রুমে থাকা শাশুড়িকে জিজ্ঞেস করলাম,
- তানু কি আসেনি এখনো?
- আইছে। উডানেই আছে। খাঁড়াও, ডাইকা দিতাছি।
জবাব দিতে দিতে আমার রুমের দরজা অবদি তিনি আসলেন। এরপর আবার চলে গেলেন। এরপর হাঁক ছেড়ে তানুকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
- তানু! এ্যাই তানু! তাড়াতাড়ি ঘরে আয়। জামাই ঘুম থিকা উইঠা গ্যাছে।
ভেতরের রাগটা এখনো কমেনি আমার। তানু বলেছিলো দিন চারেক থাকবে। কিন্তু দুপুরে খাবার-দাবারের যা অবস্থা দেখলাম তাতে একদিনের বেশি থাকার আর কোন ইচ্ছেই নেই আমার। মনস্থির করলাম; তানু আসলেই বিষয়টা নিয়ে কথা বলবো।
বিছানায় বসে নাক ফুলিয়ে লম্বা লম্বা শ্বাস নিচ্ছিলাম আমি। তা দেখেই তানু বুঝে ফেললো কোনকিছু নিয়ে রেগে আছি। মৃদু পায়ে কক্ষে প্রবেশ করতে করতে ভীত স্বরে বললো,
- কিছু হয়েছে কি?
আমি শক্ত গলায় বললাম,
- কী আবার হবে। ভাগ্যিস এমন একটা শশুর বাড়ি জুটেছে আমার। কি আপ্যায়ন। আসার পর থেকেই খালি খোরমা-পোলাও আর খোরমা-পোলাও খাচ্ছি। আমার তো ইচ্ছে হচ্ছে মাস খানেক অন্তত থাকবো তোমাদের বাড়িতে। তুমি কী বলো হুহ?
আমার মুখে এসব কথা শুনে তানু মাথা নিচু করে বিছানায় পায়ের দিকে এসে বসলো এবার। এরপর নিচু গলায় বললো,
- শশুর বাড়ির অবস্থা জেনে শুনেই আপনি আমাকে বিয়ে করেছিলেন। তাছাড়া, আমার বাবার অবস্থাও এখন ভালো নয়। আপনার যদি খাবার-দাবারের সমস্যা হয় তাহলে বলুন। কাল সকালেই চলে যাব।
তানুর রূপ ও গুণে মুগ্ধ হয়েই ওকে বিয়ে করি আমি। তখন শশুর বাড়ির অবস্থার দিকে এতোটা নজর দিইনি। নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার হলেও ঐসব আমলে নিইনি। তানুর এমন অসহায় আত্মসমর্পণ মনে যেনো এক ধরনের পৈশাচিক আনন্দ অনুভূত হলো আমার। তাচ্ছিল্যের হাসিতে তানুকে উদ্দেশ্য করে বললাম,
- হয়েছে হয়েছে। এখন আর ন্যাকামি করতে হবেনা। আমি কালই চলে যাব। তোমার যতদিন খুশি থেকে যেও বাপের বাড়ি।
তানু আর কোন জবাব দিলোনা। চুপচাপ উঠে দরজার দিকে পা বাড়ালো। এমন সময় আমি পেছন থেকে ডাকলাম ওকে। ফিরে তাকালো। জিজ্ঞেস করলাম,
- দুপুরে কোথায় ছিলে?
- পুষ্পদের বাড়িতে গিয়েছিলাম। কাল ওর বিয়ে।
- এখন কোথায় যাচ্ছো?
- দেখা যাক, রাতের খাবারের কী ব্যবস্থা করা যায়। মা বলছিলেন মোরগ খুঁজতে যাবেন। পেলেন কিনা দেখি।
- আচ্ছা যাও।
তানু কক্ষ থেকে বেরিয়ে গেলো। আবার ডাকলাম ওকে। তানু! তানু! ফিরে আসলো ও। দরজায় কাঁচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো,
- জি, বলুন!
আমি নবাবজাদার মতো কিছুটা গম্ভীর স্বরে বললাম,
- দিনের বেলায় গিয়েছ ভালো কথা। রাতের বেলায় ঐ বিয়েবাড়িতে যাবানা একদম। কথাটা যেনো মনে থাকে।
- আচ্ছা ঠিক আছে।
- যাও এবার।
রাত দশটার দিকে শাশুড়ি খাবার খেতে ডাকলেন। তানু তখনো রান্নাঘরে ব্যস্ত সময় পার করছে। খেতে এসে দেখি খাবারের পদ বেড়েছে। মাছের ভাজি, দেশি মোরগের তরকারি, মাছের তরকারি, শাক, ডাল, আলু ভাজি আর ডিম ভুনা। দেশি মোরগের তরকারি দেখে মনটা আনন্দে নেচে উঠলো আমার। চেয়ারে বসতে বসতে তানুকে ডাকলাম,
- তানু! এ্যাই তানু! খাবে এসো।
আমি ডাকামাত্র রাজ্যের কাজ ফেলে হলেও ও এসে হাজির হবে। এবারো এলো। হাতে মশলা লেগে আছে। ঘামছেও খুব। ঘামের কারণে নাকের ডগায় মুক্তোর দানার মতো দেখাচ্ছে ওর। আমি ওকে কিছু বলবো তখনি বাইরে থেকে শোরগোল ভেসে আসে। অনেকের মাঝে কেউ একজন চিৎকার করে বলছিলো, 'হাই হাই রে! সর্বনাশ অইয়া গেছে। বারেক আলীর মাইয়্যা পুষ্প গলায় দড়ি দিছে রে...! হাই হাই রে.....!!'
এসব শুনে শাশুড়ী তড়িঘড়ি করে কক্ষ থেকে বেড়িয়ে গেলো। যেতে যেতে তানুকে বলে গেলো,
- তানু, তুই জামাইয়ের কাছে থাক। আমি দেইখা আহি কী হইছে।
তিনি চলে গেলেন। আমি বুঝতে পারছিলাম না কী করবো। যতদূর জানি, পুষ্প তানুর বান্ধবী। একসাথেই নাকি ওরা পড়তো। পুষ্প গলায় দড়ি দিয়েছে শুনে ও আমাকে খাবার টেবিলে একা রেখে যাবে নাকি যাবেনা সে দ্বিধায় ভুগছিলো। আবার কিছু বলতে সাহসও পাচ্ছিলো না। ওর মনের অবস্থা বুঝতে পেরে বললাম,
- তুমিও যাও৷ দেখে এসো কী হয়েছে।
অনুমতি পেয়ে তানুও চলে যায়। আমিও আর খাওয়া শুরু করতে পারিনি। আমার শশুর বাড়ি ফিরেননি তখনো। বারান্দায় এসে যখন দাঁড়ালাম তখন দেখি ছুটোছুটি করে বহু মানুষ পুষ্পদের বাড়ির দিকে যাচ্ছে। আহারে! মেয়েটার নাকি কাল বিয়ে হবার কথা ছিলো! ভাবতেই খারাপ লাগছে।
বারান্দায় পায়চারি করছি। অপেক্ষা করছি ওদের ফেরার। পায়চারি করতে করতে পাশের কক্ষের সামনে যখন এলাম বাতাসের ধমকা হাওয়ায় চাপিয়ে রাখা দরজাটা তখন খুলে যায়। এ কক্ষে আমার শশুর-শাশুড়ি থাকেন। দরজাটা আঁটকে দিতে যখন সামনে এগোই তখন আমার নজর চলে যায় ভেতরে বিছানার পাশে থাকা ছোট্ট টেবিলটির উপর। প্লেট দিয়ে কয়েকটি বাসন ঢেকে রাখা আছে। কৌতুহল বশত এগিয়ে গিয়ে প্লেটগুলো সরিয়ে দেখি, একটায় ভাত, আরেকটায় আলু ভর্তা, আরেকটায় এক টুকরো মোরগের গোশতের সাথে হালকা ঝোল ও অন্যটিতে ডাল। দেখে আর বুঝতে বাকি রইলো না যে, এগুলো আমার শশুরের জন্য রাখা। রাতে যখন তিনি ফিরবেন তখন তাঁকে খেতে দেয়া হবে।
বেশ কিছুক্ষণ পর শাশুড়ি ফিরে আসেন। উনার চোখে পানি দেখে জিজ্ঞেস করলাম,
- কী ঘটেছে ওখানে?
- আর কইয়ো না, মাইয়্যাডা গলয়া দড়ি দিয়া মইরা গেলো। এহনো ফ্যানের লগে ঝুইল্যা রইছে। ফুলিশ আইয়্যা নাকি নামাইবো।
- কেনো এমন করলো জানেন কিছু?
তিনি এবার কিছুটা সামনে এসে ফিসফিস করে বললেন,
- মাইনসে কইতাছে, হের নাকি বিয়াতে মত আছিলো না। বাপ-মায় জোর কইরা বিয়া দিতাছিলো।
- এজন্য মরে যেতে হবে?
- কী জানি। তয়, মাইয়্যা ডা বড়ই বালা আছিলো। ইশ!
কিছুক্ষণ পর তানু ফিরে আসে। ওর চোখমুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছিলো অনেক কেঁদেছে। ওকে কিছু জিজ্ঞেস করবো এসময় শশুর চলে আসেন। উনার হাতে একটা ব্যাগ। পাশে দাড়িয়ে থাকা তানুর হাতে ব্যাগটা দিয়ে তড়িঘড়ি করে রওয়ানা হন পুষ্পদের বাড়ির দিকে। তানু ব্যাগে কী আছে একবার দেখে নিলো। আমারো কৌতূহল হলো জানার। বললাম,
- কী আছে ব্যাগে?
- আপনার খুশি।
বেশ অবাক হলাম এমন জবাবে। বললাম,
- আমার খুশি মানে?
- কাপড়।
- কী কাপড় দেখি তো!
ওর হাত থেকে ব্যাগটা নিয়ে দেখতে লাগলাম। প্যান্ট ও শার্ট পিস দেখা যাচ্ছে। বেশ ভালো মানের। কিন্তু, শুশুর-শাশুরির জামা-কাপড় বলেনা তারা এসব মানের কাপড়ের সাথে অভ্যস্থ। এরপর জানিনা আমার সে রাতে কী হয়ে গিয়েছিল। খেতে ইচ্ছে করেনি।
পরদিন ভোরে গাঁয়ের হাঁটে গেলাম চা খেতে। গাঁয়ের জামাই হিসেবে মানুষ বেশ সম্মান করে। চায়ের স্টলে মাঝবয়সী এক লোকের সাথে দেখা। আমাকে দেখেই বেঞ্চ থেকে উঠে দাঁড়ায়। এরপর উচ্চস্বরে বলে,
- আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন জামাই?
- ওয়ালাইকুমুসসালাম। জি ভালো। আপনি কেমন আছেন?
- জি আলহামদুলিল্লাহ্। তা এতো সকালে হাঁটে আসলেন যে!
- এইতো চা খেতে চলে আসা।
- বেশ তো। আসুন, বসুন এখানে।
কথাবার্তায় বুঝা যাচ্ছিলো লোকটা শিক্ষিত। পাশে গিয়ে বসতেই জানতে চাইলো,
- কী চা খাবেন? দুধ চা নাকি রং?
- রং চা।
- এই সগীর, দুইটা রং চা দে তো।
দোকানিকে উদ্দেশ্য করে বললো লোকটা। এরপর আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,
- তা, প্যান্ট আর শার্টের পিসগুলো কি পছন্দ হয়েছে আপনার?
লোকটার প্রশ্নে আমি কিছুটা অবাক হলাম। বললাম,
- জি, হয়েছে। আপনি কি করে জানেন?
- ফয়জুর চাচা কাল এসেছিলো আমার কাছে। বলছিলো, 'জামাইয়ের লাইগ্যা কাপড় কিনন লাগবো। তুমি লগে আও বাজান।' না গিয়ে তো উপায় নেই। এরপর চেয়ারম্যানের দেয়া নতুন দোকান থেকে ঢাকা থেকে আসা সদ্য চালানের কাপড়গুলো থেকে বাছাই করে সেগুলো নিই। আসলে, ফয়জুর চাচার ভাগ্য খুব ভালো। আপনার মতো একজনের কাছে মেয়ে বিয়ে দিতে পেরেছেন। লোকটা সারাজীবন শুধু কষ্ট আর কষ্টই করে গেলো। সে যাইহোক, আপনি কিন্তু আমাদের গাঁয়ের উপরে জামাই। এমন সম্ভ্রান্ত ঘরে এ গাঁয়ের আর কোনো মেয়ের বিয়ে হয়নি। এটা আমাদের জন্য গৌরবের।
লোকটা অদ্ভুতভাবে নিজে থেকে এতো এতো কথা বলে যাচ্ছিলো দেখে কিছুটা বিরক্তি লাগছিলো আমার। ততক্ষণে চা শেষ হয়ে যাওয়ায় বিল দিয়ে বেরোতে চাইলেও সেটা দিতে দিলোনা লোকটা। আমি বেরিয়ে কাঁচা বাজারের দিকে এগুলাম। অনেকের ভিড়ে শশুরকে নজরে পড়লো আমার। মাছ বিক্রেতার সাথে দর দাম করছেন বলে মনে হলো। দূর থেকে পর্যবেক্ষণ করলাম উনাকে। বেশ কিছুক্ষণ পর মাছ না কিনেই অন্য দিকে চলে গেলেন। আমি এগিয়ে যেয়ে মাছ বিক্রেতাকে জিজ্ঞেস করলাম,
- ভাই, উনি মাছ নিলেন না কেনো?
লোকটা বিরক্তির স্বরে বললো,
- আর কইয়েন না। গত কাইলও মাছ নিলো বাকিতে। আইজও আইছে বাকি নিতে। কয় টেকার ব্যবসা আমার। মাছ বাকিতে দেওন যায়?
লোকটার কথা শুনে ভিড়ের মাঝে শশুরকে খুজতে থাকে আমার চোখদুটো। কয়েক মুহুর্ত পর তাঁকে আবিষ্কার করতে সক্ষম হই। জীর্ণ পোশাকে ব্যাগ হাতে হন্যে হয়ে বাজারের এদিক থেকে ওদিক ছুটে বেড়াচ্ছে লোকটা। ছুটে বেড়াচ্ছে শুধুমাত্র মেয়ের জামাইকে দু'বেলা ভালো খাবার খাওয়াবে বলে। আন্তরিকতার কোনো কমতি নেই তাঁর মাঝে। মনটাও বিশাল। তবে, তাঁর স্বাদ থাকলে কি হবে, সাধ্য যে নেই।
এগিয়ে গেলাম শশুরের দিকে। তরকারির একটা দোকানের সামনে তিনি দাঁড়িয়ে। দরদাম করছেন। পাশে দাঁড়িয়ে উনার কাঁধে হাত রেখে বললাম,
- বাজার করতে এসেছেন?
উনি আঁতকে উঠলেন। পরক্ষনেই আমাকে দেখে মুচকি হাসলেন। বললেব,
- হ জামাই। তা তুমি এইহানে?
- ব্যাগটা দিন আমার কাছে।
- ব্যাগ দিয়া তুমি কি করবা?
- দিন তো।
আমার পীড়াপীড়িতে ব্যাগটা দিতে বাধ্য হলেন উনি। ব্যাগ নিয়ে সবজির দোকানিকে বললাম,
- আমরা আসছি একটু পর।
- জ্যা, ঠিক আছে।
দোকানি বললো।
শশুরকে নিয়ে মাছ ওয়ালার কাছে এলাম। তার কাছে থাকা সবচেয়ে বড় মাছটা কিনে নিলাম। এরপর গরুর গোশত। সবজি ও অন্যান্য মশলাদিও কিনে নিলাম। পুরোটা সময় ধরে শশুর আমার সাথে ছিলেন। আমাকে বারবার দেখছিলেন বিস্মিত হয়ে।
নয়টার দিকে বাড়ি ফিরি আমরা। আমার হাতে বাজারের ব্যাগ দেখে তানুর চোখ একেবারে ছানাবড়া। বারান্দা থেকে নেমে আমাদের দিকে এগিয়ে এসে বলে,
- কী ব্যাপার! সকাল থেকে কোথায় ছিলেন? আর এসব কী আপনার হাতে? বাবা, এসব কি?
শশুর ও আমাকে উদ্দেশ্য করে এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে তানু। আমি ব্যাগ রেখে ওকে নিয়ে রুমে চলে আসলাম। এরপর কাঁধে হাত ও কাজল মাখা দুটো মায়াবী চোখে চোখ রেখে বললাম,
- আজ থেকে তুমি তোমার স্বামীকে নতুনভাবে দেখবে। তুমি এখানে যতদিন থাকতে চাও থাকবে এবং আমার সাথেই থাকবে। আমার জন্য তোমাকে আড়ালে আর কখনো এই মায়াবী চোখ দুটো ভেজাতে হবেনা। ভিজতে দিবো না আমি।
কথাগুলো শুনে তানুর চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়তে লাগলো। আর আমিও নিজের দায়িত্ব পালনে ব্যস্ত হয়ে গেলাম - যেভাবে একজন যোগ্য স্বামী হিসেবে এমন অবস্থায় নিজের স্ত্রীর প্রতি দায়িত্ব পালন করতে হয়, তাঁকে ভালোবাসতে হয়।