03/10/2022
আলহামদুলিল্লাহ,
আল্লাহর অশেষ রহমতে পাঁচজন সফর সঙ্গী Sk Ehtashamul Haque, Shahin Shekh, Mubarak Hossain এবং মুন্সি বিপ্লব ভাইকে নিয়ে কোরিয়ার সফর শেষ করলাম।
স্বল্প সময়ে বিস্তর অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরে আসলাম জাপানে। ভ্রমনের শুরু থেকে শেষ অবধি নানা অভিজ্ঞতা পয়েন্টে আকারে আপনাদের সাথে শেয়ার করার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।
ভিসা ,টিকেট, হোটেলবুকিংঃ- অনলাইন ভিসা এপ্লিকেশন ফরম ডাউনলোড, রিকুয়ারমেন্ট পেপারস্ এবং এম্বাসি এপোয়েনমেন্ট নিয়ে পেপারর্স জমা দিলে মেইলে ভিসা চলে আসবে। ভিসা,টিকেটের ব্যপারে বিস্তারিত জানতে ড্রিম ট্রাভেলস্ এর সাথে যোগাযোগ করুন।
খাবারঃ- কালচারগত বহু মিল থাকলেও রাতের সিওল জাপান থেকেও একটু বেশিই সজাগ মনে হলো। রেস্টুরেন্ট , বার, বাহারি স্ট্রিট ফুডের সাথে নাচ-গান, আমোদ-প্রমোদে বেশ এগিয়ে কোরিয়ানরা। সিওলে হালাল খাবার মোটামুটি এভেইলেবল হলেও রাত ১০টায় হোটেলে পৌঁছে খাবারের সন্ধানে বের হলে অনিগিরি (Rice ball) আর জুস ছাড়া রিজিকে আর কিছুই জোটেনি। তবে,আমাদের নিয়ে যাওয়া শুকনো খাবারগুলো বেশ কাজে দিয়েছে। কোরিয়ান অনেক হালাল মার্ক করা কাপ নুডুলস্ জাপানে এভেইলেবল হলেও কোরিয়াতে তা দুর্লভ। তাই তুর্কি, পাক-বাঙ্গালী রেস্টুরেন্ট গুলোই ছিল আমাদের ভোজের স্থল।
ট্রন্সপোটেশনঃ- সিওলের প্রধান ট্রান্সপোর্ট ব্যবস্থা সাবওয়ে ট্রেন নির্ভর। জাপানের আদলে গড়ে উঠায় বুঝতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি। কোরিয়া ট্যুর কার্ড অথবা দিন ভিত্তিক প্যাকেজ কার্ড নিয়ে পুরো সিওল ঘুরেছি খুবই সাচ্ছন্দে। এক কোরিয়ানের সহযোগিতায় সাবওয়ে ট্রেনের এ্যাপ ডাউনলোড করে নিই, যা আমাদের চলার পথ আরো সুগম করেছে।
এছাড়া পুরো শহর ঘুরে বেড়ানোর মত শাটল বাস থাকলেও আমরা নিজেদের মত ঘুরবো বলেই সিদ্ধান্ত নিই।
দর্শনিয় স্থানঃ- এশিয়ার প্রযুক্তি উৎকর্ষের অন্যতম এই সিটিতে ঘুরতে মনে হয় অর্ধমাস লেগে যেতে পারে। সল্পসময়ে যেসব স্থান আমাদের ঘুরে দেখার সৌভাগ্য হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হল কোরিয়া সেন্ট্রাল মসজিদ। অত্যন্ত ভালো লাগার এই মসজিদটি নিয়ে বিস্তারিত আরেকটি পোষ্টে লিখবো ইনশাআল্লাহ।
এছাড়া, স্যামসাং সিটি, ইউটিউবের সেই বিখ্যাত গ্যাংনাম স্টাইল স্ট্যাচু, পৃথিবীর ষষ্ঠতম উঁচু লট্টো টাওয়ার, সিওল টাওয়ার, Gyeongbokgung প্যালেস, Deoksugung , Namdaemun Market , Seoul Museum of History , সেইম্বল অব সিওল, পার্ক সহ নাম না জানা আরো কিছু স্থান।
খরচঃ- সিজনের উপর নির্ভর করে কম-বেশি হতে পারে। তবে, মোটামুটি তিন দিনের জাপানের ওকিনাওয়া ট্রিপের মতই, যার পরিমান সবমিলিয়ে ৮-১০মান। টাকায় যার পরিমান ৬০-৮০হাজারের প্রায়।
কোরিয়ার পন্যের দাম প্রায় জাপানের মত বা কিছুটা কম হলেও ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হলো, কোরিয়ার মুদ্রা উয়ন এর মান কম হওয়ায়, মানি ট্রান্সফারে ২০ হাজার ইয়েন(জাপানের মুদ্রা) দিয়ে আমরা পেলাম ১লক্ষ ৯০হাজার উয়ন, যা পেয়ে বেজায় খুশি ছিলাম আমরা।😁
এই হাসি মুখগুলো মলিন হয়ে গেলো তখনই, যখন একটা অনিগিরি কিনলাম ১৫০০ উয়ন, আর দুপুরের খাবার বিল দিতে হলো প্রায় ১ লাখ উয়ন! 😂
এক বাঙ্গালি ভাইয়ের দোকানে কাপড় কিনতে গিয়ে বললাম, এটার দাম কত? তিনি বললেন ৫০হাজার! আবার নিজের থেকেই বললেন, আপনারা দেশী ভাই, দুটাকা কম দেন😕!
পরে বুঝলাম দুটাকা মানে উনি ২ হাজার উয়ন বুঝিয়েছেন। 😜
ব্যতিক্রমী ও ভালো ও অবাক লাগার কিছু বিষয়ঃ-
*কোরিয়ার মানুষ মোটামুটি ফ্রেন্ডলি এবং অনেক হেল্পফুল, ইংরেজিও ভালো বুঝে।দুএকটা কোরিয়ান শব্দ শিখে গিয়েছিলাম, উচ্চারণের কারণে আমাদের কথা আমরাই বুঝিনি😉।
*শহরের ভিতরে এলিভেটেড এক্সপ্রেস এওয়ে না থাকলেও আছে দানব আকৃতির রাস্তা ও প্রসস্থ ফুটপাত। কিন্তু যত্রতত্র পার্কিং ছিল অবাক করার মত যা জাপানে অসম্ভব।
* জাপানে যেমন টয়োটার একচ্ছত্র আধিপত্য , ঠিক তেমনি কোরিয়াতে রয়েছে বিখ্যাত হোনডাই কম্পানির গাড়ির আধিপত্য।
* ভৌগলিক অবস্থানের দিক থেকে জাপান ভূমিকম্পর দেশ হলেও কোরিয়া রয়েছে ভিন্ন প্লেটে। ভূমিকম্প কম হওয়ায় শহরজুড়ে রয়েছে প্রচুর আকাশচুম্বী ভবন। মনে হলো, সোওল বোধয় এদিক থেকে টোকিওর চেয়ে এগিয়ে।
* প্রথম 5G এর দেশ দক্ষিন কোরিয়ার শহরজুড়ে রয়েছে ফ্রি ওয়াইফাই, যা অত্যন্ত গতিসম্পন্ন।
সসবমিলিয়ে সুন্দর, নিরাপদ ও প্রাণবন্ত এই ভ্রমনটি সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ায় আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। ধন্যবাদ ড্রিম ট্রাভেলস্ এর সত্তাধিকারী … ভাই এবং সফর সঙ্গীদের।
এইচ এম আরাফাত।