সপ্তডিঙা পত্রিকা

সপ্তডিঙা পত্রিকা বাঙালি আত্মপরিচয়ের সন্ধানে, বাঙালিয়?
(1)

"যে কোনো মিউজিয়ামে যখনই আপনি যাবেন খেয়াল করবেন অজস্র দেবদেবীর মূর্তি। কোনোটা গুপ্ত যুগের কোনোটা কুষান যুগের, কোনোটা পা...
01/07/2023

"যে কোনো মিউজিয়ামে যখনই আপনি যাবেন খেয়াল করবেন অজস্র দেবদেবীর মূর্তি। কোনোটা গুপ্ত যুগের কোনোটা কুষান যুগের, কোনোটা পালযুগের ইত্যাদি। কিন্তু চন্দ্রকেতুগড়ে প্রাপ্ত কোনো মূর্তিকেই দেবদেবীর মূর্তি হিসাবে রাখা হয়নি। কোনোটাকে যক্ষী, কোনো মূর্তিকে যক্ষ, অপ্সরা ইত্যাদি নামে পরিচয় করানো হয়েছে। বাঙালির ও বাংলার ইতিহাসের প্রতি এই বঞ্চনা আজকের নয়। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, বিদেশিদের বর্ণনায় গঙ্গারিডাইয়ের কথা থাকলেও ভারতের মহাকাব্য, পুরাণে ব্রাত্য থেকে গেছে। সারা পৃথিবীতে যেখানে যত প্রাচীন মূর্তি পাওয়া গেছে তার উপর ভিত্তি করে লেখা হয়েছে সেই অঞ্চলের প্রাচীন ধর্মের ইতিহাস। ব্যতিক্রম কেবল বাংলা। স্পষ্ট প্রমাণ করা সম্ভব হলেও চন্দ্রকেতুগড়ে পাওয়া মূর্তির ভিত্তিতে প্রাচীন কাল থেকে আজ পর্যন্ত বাঙালির ধর্মচেতনার একটা সামগ্রিক রূপরেখা নির্মাণ করা সম্ভব কিন্তু সে ইতিহাসকে ব্রাত্য করে রাখা হয়েছে এবং আজও হচ্ছে"।

তাহলে কেমন ছিলো আমাদের পূর্ব মানুষের ধর্মচিন্তা? তারি উত্তর খোঁজা হয়েছে এই প্রবন্ধে।
লিখেছেন- ঋতুপর্ণা কোলে

সপ্তডিঙা উল্টোরথ ১৪৩০, নবম বর্ষ প্রথম সংখ্যা, ISSN 2395 6054 ডঃ ঋতুপর্ণা কোলে মা কালী ও তন্ত্র কোর্স গবেষণা সন্দর্ভ “Over their 60,000...

সপ্তডিঙা পত্রিকার নতুন সংখ্যা অনলাইনে প্রকাশিত হল আজ উল্টোরথে। পুরোটা এই লিঙ্কে পড়া যাবে https://shoptodina.wordpress.co...
28/06/2023

সপ্তডিঙা পত্রিকার নতুন সংখ্যা অনলাইনে প্রকাশিত হল আজ উল্টোরথে। পুরোটা এই লিঙ্কে পড়া যাবে https://shoptodina.wordpress.com

এই সংখ্যার সূচী

★ সম্পাদকীয়

★ মা কালী ও তন্ত্র কোর্স গবেষণা সন্দর্ভ সংগ্রহ

গঙ্গারিডাই সভ্যতায় মাতৃধর্ম – ডঃ ঋতুপর্ণা কোলে

দুর্গাতত্ত্বে নিহিত কালরূপা মাতৃকার তত্ত্বঃ হরপ্পা থেকে বর্তমান কাল – ডাঃ রক্তিম মুখার্জি

মধ্যযুগেশ্বরী মা কালী – অরুন্ধতী রায়

মাতৃকা দূষণ – সুপ্রতীম ঘোষ

দশমহাবিদ্যার প্রতীকী অর্থ সন্ধানে – দেবলীনা রায়চৌধুরী ব্যানার্জি

মাতৃকা দূষণের সেকাল একাল – জয়ন্ত মুখার্জি

শ্রী শ্রী চণ্ডী ও মা কালী – চৈতালী সিনহা

বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মাধ্যমে কীভাবে মাতৃকাদূষণ হয়েছে – সুমন কুমার ঘোষ

সেনযুগের তন্ত্রধর্মঃ দশমহাবিদ্যা – অনীকা স্বাতীপ্রভা

চন্দ্রকেতুগড় গঙ্গারিডাই সভ্যতার মাতৃকা উপাসনা – সমীরণ সরকার

সেনযুগের তন্ত্রধর্মঃ দশমহাবিদ্যা তত্ত্ব – সুনয়কান্তি মণ্ডল

শাক্তধর্মঃ অদ্বয়বাদ – অরিন্দম পাল

★ নিয়মিত প্রবন্ধ

বাঙালির লক্ষ্মীপুজো – ডাঃ রক্তিম মুখার্জি

বাঙালি বৈষ্ণব আসলে শাক্ত – সুমন কুমার ঘোষ

বাংলা কথাসাহিত্যে দেবীমাতৃকা প্রসঙ্গ – নীলাঞ্জনা চক্রবর্তী

প্রত্নতাত্ত্বিক ব্যাখ্যায় শশাঙ্কের সময়কার অর্থনীতিঃ মুদ্রা ও লিপি বিশ্লেষণ – শুভ্রাংশু সিংহ

চৈত্রহাটির শৃঙ্গারগৌরী – আকাশ সাহা

অমর্ত্য সেন এবং ভারতের নিখোঁজ নারীরা – অনুজ বিশ্বাস

শ্রীরামপুরের রাধাবল্লভ জিউ – দেবজিৎ গুহ

ক্ষীরবাস – রণদাপ্রসাদ তালুকদার

বাঙালি কবে থেকে বাংলায় কথা বলে? – রণজিৎ গুহ

★ প্রচ্ছদ ফিচার

শৈশবের রথযাত্রা – নিবেদিতা মুখার্জি

★গল্প

রক্তিম দিগন্তরেখা – রামকৃষ্ণ বড়াল

পুব আকাশে অস্ত রবি – অভিযান ভট্টাচার্য

★ কবিতা

আমি এবং আমিই – তানিয়া সেনগুপ্ত

রাজলক্ষ্মী বাসবদত্তা – রামকৃষ্ণ বড়াল

সপ্তডিঙা। বাঙালিচর্চার সারস্বত উদ্যোগ। ISSN 2395 6054

29/04/2023

শারদীয়া মাতৃকা উৎসব বহু প্রাচীন: রামের অকাল বোধন কাহিনী মধ্যযুগের উদ্ভাবন।

ষষ্ঠ শতকে রচিত শ্রীশ্রীচণ্ডীতে দেবী স্বয়ং বলছেন শরৎকালে তিনি পূজিত হন। তাই মধ্যযুগে পঞ্চদশ শতকে কৃত্তিবাসী রামায়ণে রামের অকাল বোধনের গপ্প জনপ্রিয় হওয়ার অনেক আগে থেকেই দেবী শরৎকালে পূজিত হতেন। শ্রীশ্রীচণ্ডীতে কোথাও রামকে দেখা যায় না, দেখার কথা নয়। আবার বাল্মীকি রামায়ণে কোথাও রামের অকাল বোধনের উল্লেখ নেই, থাকার কথা নয়। রাম রাবণের যুদ্ধ শরৎকালে হয়নি। রামের অকাল বোধন মধ্যযুগের দুয়েকটি পুরাণ এবং কৃত্তিবাসের কবিকল্পনা।

শ্রীশ্রীচণ্ডীতে রাজা সুরথ দুর্গাপুজো সূচনা করেন বলে যে কাহিনী আছে, সেটা শারদীয়া নয়, সেটা বাসন্তী পুজো - এরকম কোনও তথ্য শ্রীশ্রীচণ্ডী আদৌ দেয়না। কৃত্তিবাসী অকাল বোধনের সঙ্গে শ্রীশ্রীচণ্ডীর যাতে বিরোধ না ঘটে সেজন্য এই সুরথকে বাসন্তী পুজোর সঙ্গে জোর করে সংযুক্ত করা হয়েছে। আসলে শ্রীশ্রীচণ্ডী শারদীয়া দুর্গোৎসবের কথাই জানায়। মা নিজেই শরৎকালে তাঁর পূজিত হওয়ার ঘোষণা করেছেন শ্রীশ্রীচণ্ডীতে, এবং সুরথ রাজা শরৎকালেই মায়ের পুজো করেন।

লেট মি রিপিট। শারদীয়া দুর্গাপুজো শ্রীশ্রীচণ্ডীতে উল্লিখিত। পালযুগেও শরৎকালে উমা পুজোর কথা জানা যাচ্ছে। কিন্তু রামের শারদীয়া অকাল বোধনের কাহিনী মধ্যযুগে লিখিত দুয়েকটি পুরাণ ও কৃত্তিবাসের আগে কোথাও উল্লিখিত নয়।

ওদিকে শ্রীশ্রীচণ্ডী রচিত হওয়ার আটশ বছর আগে থেকে, খ্রিষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতকের ভারতে মহিষমর্দিনী মূর্তি পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু মাতৃকা উপাসনার তন্ত্রধর্ম এবং সেই তন্ত্রাশ্রয়ী উৎসবে মহিষমেধ আরও অনেক প্রাচীন, পাঁচ হাজার বছর আগে হরপ্পা সভ্যতা থেকেই প্ৰচলিত। আজকের দুর্গাপুজোর কেন্দ্রীয় অংশ সন্ধিপুজো, সন্ধিপুজোর বলিতে সেই পাঁচ সহস্র বছরের প্রাচীন ইতিহাসের ছোঁয়া আছে।

রাম এমনকি অষ্টম শতকে সম্রাট ধর্মপালের সময়েও দেবতা নন। রাজা পৃথু, রাজা নল, রাজা রাম অনেকদিন বিগত, কিন্তু এক সম্রাট ধর্মপালকে দর্শন করলেই তাদের তিনজনকে দেখার ফল লাভ হয়, পালযুগের একটি শাসনলেখ জানাচ্ছে। স্পষ্টই, সম্রাট ধর্মপাল রামের থেকেও বড়, এই ইঙ্গিত আছে। বারোশ বছর আগেকার কথা।

বাঙালি নিজের ইতিহাস জানে না, তাকে স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে জানতে দেওয়া হয় না, মূলধারার মিডিয়া জানতে দেয় না। অথচ পুরোনো ইতিহাস না জানালে আমরা যারা মায়ের নাম নিয়ে তন্ত্রের শেকড় পুনরুদ্ধার করার সংগ্রামে ব্রতী, আমাদের সমস্যা হচ্ছে।

প্রকৃতপক্ষে রামের গৌরব বাড়াবেন বলে মধ্যযুগে এক শ্রেণীর উদ্যোগে দুর্গাপুজোর প্রাচীন ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে। এটা অন্যায়।

দুর্গাপুজো এক আবহমান উৎসব। পৃথিবীর প্রথম সিংহবাহিনী মূর্তি নব্য প্রস্তর যুগের, প্রায় দশ হাজার বছর পুরোনো। হরপ্পা সভ্যতায় মহিষমেধ এবং মাতৃকা উপাসনা পাঁচ হাজার বছর পুরোনো। ঊষা পূজিত হতেন প্রাচীন বেদপূর্ব ব্রাত্য তন্ত্রাশ্রয়ী সভ্যতায় অর্থাৎ হরপ্পা সভ্যতায় (ডি ডি কোসাম্বি), এবং এই ঊষার শারদীয়া বোধন হত (সুকুমার সেন) এবং ঊষাকে বেদে দশভুজা বলা হয়েছে (হংসনারায়ণ)।

রামের জনপ্রিয় উপাসনা সারা ভারতে, এমনকি রামায়েত ধর্মের ভরকেন্দ্র উত্তর ভারতে মেরে কেটে হাজার বছর ধরে হচ্ছে, তার বেশি নয়। রাধাকৃষ্ণময় গৌড়ীয় বৈষ্ণব এবং উত্তর ভারতের রামায়েত বৈষ্ণব একেবারেই অর্বাচীন। প্রাচীন বৈষ্ণব ধর্মের সঙ্গে তার সম্পর্ক বেশ কম। জিজ্ঞেস করুন, মহাকাব্যিক চরিত্র রামের কটি মূর্তি পেয়েছেন এরা প্রাচীন যুগে? গুপ্তযুগ বা তার আগে রামের উপাসনার প্রমাণ কোথায়?

আসলে বাসুদেবকেন্দ্রিক একটা বৈষ্ণব ধর্ম ছিল আগে। গুপ্তযুগের শেষে সেই আদি ভাগবত বা আদি বৈষ্ণব ধর্ম সঙ্কটে পড়ে (সুধাকর চট্টোপাধ্যায় দ্রষ্টব্য), যখন শৈব ধর্মের বিপুল উত্থান ঘটে, শিবের সঙ্গে নীলাবতী বা উমা/পার্বতীর বিবাহ পরিকল্পনা হয়। এই সঙ্কট থেকে বেরোতে সীতারাম এবং রাধাকৃষ্ণ কেন্দ্রিক এক নতুন বৈষ্ণব ধর্ম তৈরি হয় গুপ্তোত্তর ভারতে, মূলত আদি মধ্য যুগে, যার স্ফুরণ অন্তিম মধ্য যুগে বাংলায় কৃত্তিবাস আর উত্তর ভারতে তুলসীদাস।

এদের রাম মূলত মধ্যযুগে উঠেছেন। আমার জগন্মাতার উপাসনা প্রাচীন প্রস্তর যুগেও ছিল। লাল সিঁদুর দিয়ে গর্ভবতী জগন্মাতা অথবা জগৎপ্রসূতা জগদকারণ জগন্মাতার উপাসনা হত এমনকি সেই প্রাচীন প্রস্তর যুগেও, আজ থেকে চল্লিশ হাজার বছর আগে।

যে কথাটি জানানোর। তন্ত্র কোর্স করার পর এবার বৈষ্ণবধর্মের ইতিহাস, তত্ত্ব ও প্রয়োগ নিয়ে অক্সফোর্ডের সেন্টার ফর হিন্দু স্টাডিজে পড়াশোনা শুরু করলাম।

অদ্বৈত বেদান্তবাদী আদি শঙ্কর বলেছিলেন, সাংখ্য প্রধানমল্ল। অর্থাৎ বেদান্তের জন্য সাংখ্য প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। আজকে আমি মনে করছি, গেরুয়া গোবলয় রামায়েত বৈষ্ণব ধর্ম আমাদের মাতৃকা উপাসনার ধর্মের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী, তাই এদের অনৈতিহাসিক এবং অনৈতিক কাজের প্রতিবাদ করতেই হবে, কিন্তু সেই সঙ্গে পরম নিষ্ঠায় এদের ইতিহাস ও তত্ত্ব এবং প্রয়োগ অধ্যয়ন করাও অত্যন্ত জরুরি।

রামায়েত বৈষ্ণবরা নিজেদের অঞ্চলে সীমাবদ্ধ থাকুন, তাতেই সবার মঙ্গল। তাঁদের ধর্মকে বিজেপি এবং সঙ্ঘ পরিবার অপব্যবহার করছে এবং বাংলার মাতৃকা উপাসক তন্ত্রাশ্রয়ী মাটিতে জোর করে চাপাতে চাইছে রামকে। এতে করে রামায়েত বৈষ্ণব ধর্মের কোনও উপকার হবে না। বিজেপি রামের নাম নিয়ে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরি করে ভোট পেতে চাইছে। কিন্তু বাংলার শাক্ত নিজের মাটি ধরে রাখতে জানে। আমাদের তন্ত্র ধর্মের রক্ষা করেন স্বয়ং মহাকাল ভৈরব। পালযুগে সম্রাট ধর্মপালের আদলে মহাকাল মূর্তি নির্মিত হত, এজন্য মহাকালের আরেক নাম ধর্মপাল।

যিনি শূদ্রের মুণ্ডচ্ছেদ করেন এবং স্ত্রীর অগ্নিপরীক্ষা নেন, সেই রাম কোনোমতে তন্ত্রাশ্রয়ী মাতৃকা উপাসক বাঙালি জাতির আদর্শ বা উপাস্য হতে পারেন না। এমনিতেও মা কালী ছাড়া কলিযুগে অপর উপাস্য নেই, কলৌ কালী কলৌ কালী নান্যদেবঃ কলৌ যুগে। তাছাড়া মা কালী বাংলার একমাত্র অধিষ্ঠাত্রী: কালিকা বঙ্গদেশে চ।

জয় মা কালী। জয় জয় মা।

© তমাল দাশগুপ্ত Tamal Dasgupta

গতকাল উধারবন্দে মা কাঁচাকান্তির মন্দিরে গেছিলাম মাকে দর্শন করতে। মা কাঁচাকান্তি কাছাড় অধিষ্ঠাত্রী। কাছাড়, যা কিনা ঈশান বাংলা। মা কাঁচাকান্তি সম্পর্কে আগেও লিখেছি। ছবিটি গতকাল আমার তোলা।

11/03/2023
16/02/2023

শক্তিপীঠ।

১. শক্তিপীঠধারণা অত্যন্ত প্রাচীন। খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতকে মহাভারতে বনপর্বে তীর্থযাত্রা অধ্যায়ে তিনটি শক্তিপীঠ উল্লিখিত, এর মধ্যে দুটি ছিল জগন্মাতার যোনিকুণ্ড: একটি পঞ্চনদের বাইরে ভীমাস্থানে এবং অন্যটি উদ্যতপর্বত নামক পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত ছিল। এছাড়া একটি স্তনকুণ্ড ছিল, গৌরীশিখর নামক পাহাড়চূড়ায়।

এই ভীমাস্থান মহাভারত রচনার এক হাজার বছর পরেও সপ্তম শতকে হিউয়েন সাং দেখে গেছেন এবং লিপিবদ্ধ করে গেছেন। ভীমা দেবীর গাঢ় নীল প্রস্তর মূর্তি দেখেছিলেন তিনি।

বোঝা যায়, উপমহাদেশের তন্ত্রনির্ভর মাতৃকা উপাসনায় শক্তিপীঠের ধারণা আবহমান: প্রাচীন যুগ থেকেই ছিল, এবং অনেক হাজার বছর ধরে একটানাভাবে আছে।

২. কিন্তু বিষ্ণুচক্র কর্তৃক সতীর দেহ খণ্ড বিখণ্ড করে শিবের তাণ্ডব থামানোর কাহিনীটি একেবারেই প্রাচীন নয়, সেটি প্রথম পাওয়া যায় দ্বাদশ ত্রয়োদশ শতকে সেনযুগে রচিত বৃহদ্ধর্ম পুরাণে। এই কাহিনী অন্যত্র নেই। বেশিরভাগ পুরাণে সতী দক্ষযজ্ঞে তনুত্যাগ করেন, অথবা অগ্নিপ্রবেশ করেন, এবং তাঁর পুনর্জন্ম ঘটে পার্বতী রূপে। সে ভিন্ন প্রসঙ্গ, কিন্তু তাঁর দেহকে বিষ্ণুচক্র কর্তৃক খণ্ড বিখণ্ড করা পরবর্তী যুগের পৌরাণিক কল্পনা।

৩. খণ্ড সমাধি (ফ্র্যাগমেন্ট বেরিয়াল) উপমহাদেশের প্রাচীন তান্ত্রিক প্রথা। পাঁচ হাজার বছর আগে হরপ্পা সভ্যতায় খণ্ড সমাধি দেখা গেছে। চার হাজার বছর আগে পাণ্ডু রাজার ঢিবি, যা ছিল মাতৃকা উপাসক, এবং পশ্চিমবঙ্গের সর্বপ্রাচীন প্রত্ন সভ্যতা, সেখানেও খণ্ড সমাধি দেখা গেছে। এই ধারাতেই কোনও পূজ্য আদি মাতার দেহখণ্ড উপমহাদেশের বিভিন্ন স্থানে প্রোথিত করা হয়ে থাকবে।

তিব্বতের তন্ত্র ধর্মে এখনও খণ্ড সমাধি দেখা যায়। গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ উপমহাদেশের বিভিন্ন স্থানে যখন রক্ষিত হয়েছিল, তা অবশ্যই এই তন্ত্রধর্মের প্রথার অনুসরণ ছিল।

৪. শক্তিপীঠ কিন্তু কেবল খণ্ড সমাধির স্মৃতিবাহী নয়। সবথেকে প্রাচীন, যেমন মহাভারতের শক্তিপীঠ উল্লেখ খণ্ড সমাধিরই প্রথা, সেটা বোঝা যায়। কিন্তু বেশিরভাগ সময়ই বিভিন্ন স্থানেশ্বরী অধিষ্ঠাত্রী দেবীকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা তীর্থস্থান শক্তিপীঠের আখ্যা পেয়েছিল। ইতিহাসবিদ নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য মনে করেছেন যে আঞ্চলিক মাতৃকাদের উপাসনা এক বিশ্বজনীন মাতৃধর্মে সুসংহত করার পদ্ধতি হিসেবে শক্তিপীঠ তত্ত্বের উত্থান ঘটেছিল।

৫. এই প্রসঙ্গে শক্তিপীঠ তত্ত্বের পেছনে উপমহাদেশের আরেকটি তন্ত্রধর্মীয় প্রথাও স্মর্তব্য: একাধিক মাতৃকার উপস্থিতি, যেমন হরপ্পা সভ্যতা থেকে পূজিত সপ্ত মাতৃকা, যেমন পৌরাণিক কাহিনীর কৃত্তিকা। মহাভারতে শল্য পর্বে ষটচত্বারিংশ অধ্যায়ে মাতৃকাগণের নামের একটি তালিকা আছে: বিশালাক্ষী, ভদ্রকালী, কালিকা, চতুষ্পথরতা, চতুষ্পথনিকেতা - এরকম অনেক নাম সেখানে পাওয়া যায়। নাম দেখে বোঝা যায় এঁরা অনেকেই গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ত প্রাচীন পথের স্ট্র্যাটেজিক ইন্টারসেকশনে পূজিত হতেন, কারণ দেবী নগরেশ্বরী অধিষ্ঠাত্রী হন। আজও আমরা দেখি মাতৃমন্দির স্থাপনার স্থানগুলি ব্যস্ত নাগরিক পথের নিকটে হয়, যদিও নির্জন সাধনস্থানেও মাতৃমন্দির স্থাপনার প্রথা আছে (বিজাতীয় আগ্রাসনের অন্ধকার নেমে এলে নির্জন স্থানে মাতৃমন্দির স্থাপনের কিছু কৌশলগত প্রয়োজন বৃদ্ধি হয়ে থাকবে)।

যোগিনীর সংখ্যা চৌষট্টি, এই প্রসঙ্গে অগ্নিপুরাণের বক্তব্য বেশ চিত্তাকর্ষক। মাতৃকা আট জন, এবং প্রত্যেকের আট রকম প্রকাশ, তাই পূজিত মাতৃকার সংখ্যাটা চৌষট্টি, অগ্নি পুরাণে বলা হয়েছে।

৬. বৃহদ্ধর্ম পুরাণে প্রদত্ত একান্ন শক্তিপীঠের সংখ্যা কিন্তু অন্যান্য গ্রন্থে দেওয়া তালিকার সঙ্গে মেলে না। কিন্তু বলা দরকার এই একান্ন শক্তিপীঠের বেশিরভাগ বাংলায় অবস্থিত। সবথেকে বিখ্যাত শক্তিপীঠ অবশ্যই কলকাতা, যা কালীক্ষেত্র, যেখানে কালীঘাট অবস্থিত, যেখানে দেবীর ডান পায়ের আঙুল আছে।

৭. দেবী ভাগবত পুরাণে ভারত জুড়ে শক্তিপীঠ এবং সেখানে পূজিত শক্তিপীঠেশ্বরীর তালিকা আছে, সেখানে বৃন্দাবন শক্তিপীঠে পূজিত শ্রীরাধার উল্লেখ আছে!

সবশেষে বলা দরকার, তন্ত্রধর্মের রাষ্ট্রধারণা, ভৌগলিক ও সাংস্কৃতিক চেতনায় আমাদের জগন্মাতা আছেন। দেবী বলেছেন অহং রাষ্ট্রী। এই শক্তিপীঠগুলি আমাদের শক্তিকেন্দ্র, আমাদের জাতির রাষ্ট্রবিন্দু। বীরভূমে লাভপুরে দেবী ফুল্লরা, নলহাটিতে দেবী নলাটেশ্বরী, মুর্শিদাবাদে দেবী কিরিটেশ্বরী সহ অনেকগুলি শক্তিপীঠ আছে পশ্চিমবঙ্গে। আমাদের ভূমি শাক্তভূমি, আমরা জয় মা ধ্বনি দিয়ে নিজেদের বাঙালি জন্ম সার্থক করি।

জয় মা কালী। জয় জয় মা।

© তমাল দাশগুপ্ত Tamal Dasgupta

মায়ের ছবি পিন্টারেস্ট থেকে।

12/02/2023

ভদ্রকালী তত্ত্বে দুর্গা কালী অভিন্নতা পাই। আমরা জানি দুর্গার প্রণাম মন্ত্রে কালী ভদ্রকালী কপালিনী পূজিত হন: জয়ন্তী মঙ্গলা কালী ভদ্রকালী কপালিনী।

★ মার্কণ্ডেয় পুরাণে শ্রী শ্রী চণ্ডী গ্রন্থে দুর্গা ও ভদ্রকালী অভিন্নতা ঘোষিত হয়েছে, মহিষাসুর বধের পর দেবী যখন পুনরাবির্ভাবের প্রতিশ্রুতি দিয়ে অন্তর্হিত হলেন, তখন তাঁকে ভদ্রকালী বলে সম্বোধিত করা হয়েছে।

★ কাশীতে ভদ্রকালী দর্শন করলে জীবনে অভদ্র-অমঙ্গল আর কিছু ঘটে না, এরকম বলা হয়েছে স্কন্দ পুরাণে। এটি লক্ষ্য করার মত যে কাশী সাধারণত অন্নপূর্ণা বা বিশ্বেশ্বরীর স্থান, তিনিই অধিষ্ঠাত্রী স্থানেশ্বরী। ভদ্রকালীর সঙ্গে অতএব তাঁরও অভিন্নতার ইঙ্গিত আছে।

★ মনুসংহিতা গ্রন্থেও ভদ্রকালী পূজার বিধান দেখা যায়।

★ কালিকা পুরাণে ভদ্রকালী ও দুর্গার অভিন্নতা ঘোষিত। দেবী মহিষাসুরমর্দিনীর একটি নির্দিষ্ট মূর্তিরূপ হলেন ভদ্রকালী। তিনটি সৃষ্টিকল্পে তিনবার মহিষাসুরবধ করেছিলেন মা দুর্গা, কালিকা পুরাণ অনুযায়ী। এর মধ্যে প্রথম সৃষ্টিতে তিনি ভদ্রকালী রূপে অসুর বধ করেন।

★ দেবী পুরাণে দুর্গার অন্যতম নাম ভদ্রকালী। সকল কালে তিনি ভদ্র অর্থাৎ মঙ্গল করেন, এজন্য ভদ্রকালী নাম - এই ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে দেবী পুরাণে।

★ ভদ্রকালীর ষোড়শভুজা মূর্তি বর্ণিত হয়েছে কালিকা পুরাণে। তাঁর বর্ণ অতসী পুষ্পের মত। মাথায় জটাজুট এবং গলায় নাগহার ও স্বর্ণহার। দেবী সিংহবাহিনী, মহিষাসুরকে শূলবিদ্ধ করছেন। দেবীর ডানদিকের আটটি হাতে শূল, চক্র, খড়্গ, শঙ্খ, বাণ, শক্তি, বজ্র, দণ্ড আছে। বামদিকের আটটি হাতে আছে খেটক, ঢাল, ধনু, পাশ, অঙ্কুশ, ঘন্টা, পরশু এবং মুষল।

★ তবে তন্ত্রসারে ভদ্রকালীর অন্য ধ্যানমূর্তি, সেখানে তাঁর মূর্তি গুহ্যকালীর মত। সারদা তিলকে এবং প্রপঞ্চসার তন্ত্রে ভদ্রকালী ধ্যানমূর্তি মা কালীর মতই।

ভদ্রকালী এভাবে দুর্গা ও কালীর অভিন্নতা প্রকাশ করেন।

জয় মা ভদ্রকালী। জয় জয় মা।

© কালীক্ষেত্র আন্দোলন

মায়ের ছবি ইন্টারনেট থেকে।

জয় মা....

আমাদের পেজটি লাইক করুন, পেজের নাম কালীক্ষেত্র আন্দোলন। পেজের লিংক: https://www.facebook.com/profile.php?id=100088854411804&mibextid=ZbWKwL
নিয়মিত আপডেট পেতে আমাদের গ্রূপে সংযুক্ত হন, গ্রূপের নাম জয় মা কালী আন্দোলন- কালীক্ষেত্র চিরন্তন। গ্রূপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/1208680915856872/?ref=share&mibextid=NSMWBT
আমাদের ওয়েবসাইট হল রিক্লেম কালীক্ষেত্র, ওয়েবসাইট লিংক https://reclaimkalikhetro.data.blog/

ইনস্টাগ্রাম https://instagram.com/kalikhetro?igshid=YmMyMTA2M2Y=

টুইটার
https://twitter.com/kaliksetra?t=I1p4w6-fMfEnvjA-ExJ_-w&s=09

05/02/2023

দেবী শীতলার আজ স্নানযাত্রা

শীতলা দেবী কেবল বাংলা নয় বাংলার বাইরে ভারতের নানা প্রদেশে, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, নেপালেও অত্যন্ত জনপ্রিয়। চীনদেশে, জাপানেও বৌদ্ধধর্মের হাত ধরে দেবী শীতলা সেখানেও পূজিতা। আসলে বৌদ্ধধর্মের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দেবী হারীতীই হলেন দেবী শীতলা। আবার এটাও মনে করা হয় যে বৌদ্ধ দেবী পর্ণশবরীর যোদ্ধা হলেন দেবী শীতলা। অনেকে দেবী দূর্গা, দেবী ষষ্ঠী, দেবী চন্ডীর সঙ্গে দেবী শীতলাকে একাত্ম করে দেখেন। এর প্রধান কারণ উক্ত দেবীদের মতোই দেবী শীতলা তাঁর সন্তানকে রক্ষা করেন। কিন্তু এই রক্ষা করার মধ্যে বিশেষত্ব আছে। শীতের মাঝামাঝি সময় থেকে গরমের শুরু পর্যন্ত সময় এককালে সমগ্র উত্তর ও পূর্বভারতের মানুষের কাছে ছিলো আতঙ্কের কাল। এসময় শুরু হতো গুটিবসন্ত। গ্রামের পর গ্রামকে শেষ করে দিত এই রোগ। এই রোগাক্রান্ত বাচ্চাদের কোনোভাবেই রক্ষা সম্ভব ছিলো না আর বড়োরা কোনোভাবে বেঁচে গেলেও সারাজীবন শরীরে বয়ে বেড়াতে হত বীভৎস দাগ, অনেকে চোখ নষ্ট হয়ে যেত। এরোগের কোনো ওষুধ ছিলো না। ১৯৭০ সালে এর টীকা আবিষ্কারের আগে অবধি দেবী শীতলাই ছিলেন সাধারণ মানুষের একমাত্র আশ্রয়। এ রোগের কোনো বিশেষ ব্যাখা না পেয়ে সাধারণ মানুষ এই রোগকে ব্যাজস্তুতি করে "মায়ের দয়া" বলতেন। তন্ত্র ধর্মের মাতৃকাদের পাশাপাশি দুই ধর্ম বিরাজমান। একদিকে রক্ষা করেন অন্যদিকে সংহার করেন। দেবী মনসার রোষানল ও সেখান থেকে পুজো লাভের কাহিনি সকলেরই জানা। তেমনি অনেকের ধারণা দেবী শীতলাকে শান্ত রাখতে না পারলে গুটিবসন্ত নামক ভয়ানক রোগটি দেশকে ছাড়খার করে দেবে। বৌদ্ধধর্মের হারীতী একদিকে শিশুঘাতিনী অন্যদিকে শিশুর রক্ষিয়িত্রী এই বিশেষ বৈশিষ্ট্যই মিলে যায় দেবী শীতলার সঙ্গে।

মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী তিথি থেকেই শুরু হয়ে যায় দেবী শীতলার আরাধনা। চলে চৈত্র মাস পর্যন্ত। এই সময়কালের মধ্যে নানা স্থানে চলে দেবী শীতলার বিশেষ আরাধনা। তেমনি একটা দিন হলো মাঘীপূর্ণিমার দিন। এদিন হুগলি, হাওড়াসহ বাংলার নানাস্থানে দেবী শীতলার স্নানযাত্রার আয়োজন করা হয়। এর পাশাপাশি এসময় দেবী মূর্তিকে মন্দিরের গর্ভগৃহ থেকে বের করে নগর ভ্রমণে নিয়ে যাওয়া হয় যাতে দেবী তাঁর সন্তানদের বাস্তবিক অবস্থা অবলোকন করে প্রকৃতই দয়া বর্ষণ করেন। এই অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য হাওড়ার সালকিয়া অত্যন্ত বিখ্যাত।

এবার আসা যাক দেবীর মূর্তি প্রসঙ্গে। দেবী শীতলার ধ্যানমন্ত্র থেকে দেবী রূপের স্পষ্ট প্রকাশ লক্ষ্য করা যায়।
ওঁ নমামি শীতলাং দেবীং রাসভস্থাং দিগম্বরীম্। মার্জ্জনীকলসোপেতাং সূর্পালঙ্কৃতমস্তকাম্।
অর্থাৎ শীতলা দেবীকে নমস্কার করি। তিনি রাসভ তথা গাধার পিঠে আসীনা। দিগম্বরী। ঝাঁটা ও কলসি হাতে। মাথায় উজ্জ্বল কুলো।

লক্ষ্যনীয় দেবী শীতলার বাহন হলো গাধা বা গর্দভ। একদিকে গাধা সহিষ্ণুতা ও সেবাপরায়ণাতার প্রতীক অন্যদিকে প্রাচীন আয়ুর্বেদশাস্ত্র অনুযায়ী গর্দভীর দুগ্ধ গুটিবসন্ত প্রতিরোধী। এমনকি রোগাক্রান্তের জন্যেও ফলদায়ী। যেকোনো রোগমুক্তির প্রথম শর্ত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা। দেবীর হাতের ঝাঁটা সে বার্তাই প্রকাশ করে। "কুলোর বাতাস" প্রবাদের কথা সকলেরই জানা যা দিয়ে সমস্ত অশুভ শক্তিকে দূর করা হয় সেই কুলোকে দেবী মস্তকে ধারণ করেন। দেবীর অন্যহাতে কলস তথা অমৃত কলস।

দেবী শীতলার ভোগের সঙ্গে শারীরিক সুস্থতার যোগ ওতপ্রোত। সবার প্রথমেই বলতে হয় গোটাসেদ্ধর কথা। নানা সব্জী ডাল সহযোগে সেদ্ধ। এই স্যুপজাতীয় জিনিসটি যে খুবই স্বাস্থ্যকর তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এছাড়া যে সমস্ত ফল শরীরকে ঠান্ডা করে সেগুলিই দেবী শীতলাকে প্রদান করা হয়।

জয় মা....
© কালীক্ষেত্র আন্দোলন

আমাদের পেজটি লাইক করুন, পেজের নাম কালীক্ষেত্র আন্দোলন। পেজের লিংক: https://www.facebook.com/profile.php?id=100088854411804&mibextid=ZbWKwL
নিয়মিত আপডেট পেতে আমাদের গ্রূপে সংযুক্ত হন, গ্রূপের নাম জয় মা কালী আন্দোলন- কালীক্ষেত্র চিরন্তন। গ্রূপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/1208680915856872/?ref=share&mibextid=NSMWBT
আমাদের ওয়েবসাইট হল রিক্লেম কালীক্ষেত্র, ওয়েবসাইট লিংক https://reclaimkalikhetro.data.blog/

ইনস্টাগ্রাম https://instagram.com/kalikhetro?igshid=YmMyMTA2M2Y=

টুইটার
https://twitter.com/kaliksetra?t=I1p4w6-fMfEnvjA-ExJ_-w&s=09

02/02/2023

সরস্বতী পুজোয় জোড়া ইলিশ রান্নার প্রথা আছে পূর্ববঙ্গীয়দের মধ্যে। সম্ভবত এর পেছনে একজন বিস্মৃত আদি মাতৃকা আছেন, চন্দ্রকেতুগড় গঙ্গাল সভ্যতায় তার মূর্তিফলক পাওয়া গেছে। এই দেবীর হাতে জোড়া মাছ, এঁর মাথার পেছনে দশটি ধানের শীর্ষ। সময়কাল আনুমানিক তেইশ শো বছর পুরোনো।

যখন কোথাও আর অন্য কোনও দেবতা ছিলেন না, শিব ছিলেন না, বিষ্ণু ছিলেন না, যখন পৌরাণিক ত্রিদেব ছিলেন না, আর হ্যাঁ, যখন রাম আর আল্লার বাংলায় আসতে ঢের, ঢের দেরি, তখনও হরপ্পা সভ্যতা থেকে পাণ্ডু রাজার ঢিবি থেকে চন্দ্রকেতুগড়ের আদিমাতারা ছিলেন। তাঁদের ধ্যানমন্ত্র নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে, তাঁদের ইতিহাস বিলুপ্ত। তাঁদের তন্ত্রাশ্রয়ী উপাসনা পদ্ধতি খুঁজে বের করা আজ নষ্টকোষ্ঠী পুনরুদ্ধার করার মত কঠিন। কিন্তু মায়ের নাম নিয়ে এই কাজে অগ্রসর হতেই হবে। কালীক্ষেত্র আন্দোলন মা কালীর নামে জয়ধ্বনি করে তাঁদের সকলকে পুনসংস্থাপিত করবে বাঙালির হৃদয় মাঝে।

জয় মা কালী। জয় জয় মা!

© কালীক্ষেত্র আন্দোলন

এই মাতৃ মূর্তিটি ক্যালিফোর্নিয়ার সান্তা বারবারা মিউজিয়াম অভ আর্টে আছেন। মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষ এঁকে সমৃদ্ধির দেবী বলেছেন। অবশ্যই বসন্ত পঞ্চমীর আরেক নাম শ্রীপঞ্চমী, কাজেই এদিন শ্রী বা সমৃদ্ধিদেবীর উপাসনারও প্রথা ছিল।

আমাদের পেজটি লাইক করুন, পেজের নাম কালীক্ষেত্র আন্দোলন। পেজের লিংক: https://www.facebook.com/profile.php?id=100088854411804&mibextid=ZbWKwL
নিয়মিত আপডেট পেতে আমাদের গ্রূপে সংযুক্ত হন, গ্রূপের নাম জয় মা কালী আন্দোলন- কালীক্ষেত্র চিরন্তন। গ্রূপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/1208680915856872/?ref=share&mibextid=NSMWBT
আমাদের ওয়েবসাইট হল রিক্লেম কালীক্ষেত্র, ওয়েবসাইট লিংক https://reclaimkalikhetro.data.blog/

ইনস্টাগ্রাম https://instagram.com/kalikhetro?igshid=YmMyMTA2M2Y=

টুইটার
https://twitter.com/kaliksetra?t=I1p4w6-fMfEnvjA-ExJ_-w&s=09

18/01/2023

বামাকালীর বামাচারে উপাসনা এবং পঞ্চ ম-কার ব্যাখ্যা: খুব সহজে সূক্ষ্ম বামাচারে যে কেউ পুজো করতে পারেন। শেষ অবধি পড়ুন।

বামাচার সম্পর্কে বিভ্রান্তি কাটাতে এই পোস্টটি করছি। বামাচার তন্ত্রের অতীব গুরুত্বপূর্ণ মার্গ, বামাকালীর উপাসনা (বামাকালী ধ্যানমন্ত্র জানতে আমার পেজে স্ক্রোল ডাউন করুন, কিছুদিন আগেই দিয়েছি) এই বামাচারী মতে ঘটে যেখানে পঞ্চ ম-কার ব্যবহার করা হয়। তন্ত্র যে বেদবাহ্য বলে খ্যাত সে অনেকটাই বামাচারী পঞ্চ ম-কারের জন্য। ইতিহাসে জানা যায় আদি শঙ্করাচার্য কাঞ্চীর মন্দিরে বামাচারী পুরোহিতকে বহিষ্কার করে একজন স্মার্ত ব্রাহ্মণকে নিযুক্ত করেন।

বামাচারী মতের পঞ্চ ম-কারের একটি নির্দিষ্ট রূপই তারাপীঠে বশিষ্ঠদেবের কাছে চীনাচার বলে প্রতিভাত হয়েছিল কারণ সেই যুগে আদি বামাচার সম্ভবত ভারতে এবং বাংলায় প্রবল বৈদিক ব্রাহ্মণ্য সনাতনী বিরোধিতার কারণে বিলুপ্তপ্রায়, যদিও তিব্বতে তা সুপ্রচলিত। তন্ত্র পূর্ব ভারত/গৌড়বঙ্গ থেকেই তিব্বতে গেছিল, সেটা তিব্বতের ইতিহাসবিদরা সবাই বলেন। বাঙালিরা যুগে যুগে তিব্বতে গিয়ে তন্ত্র প্রচার করেন। তারাপীঠে কিংবদন্তীর বশিষ্ঠ সম্ভবত মধ্যযুগের একজন সাধক যাঁর সময় বাংলায় বামাচারী সাধনা চীনাচার নামে পুনরায় ফিরে এসেছিল। ইতিহাসে যুগে যুগে এমন প্রায়ই ঘটে। আপনারা কেউ কেউ জানেন, আমি এখন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তন্ত্র কোর্স অনুশীলন করছি, বাংলায় অনুরূপ তন্ত্র কোর্স চালু করার লক্ষ্যে। সঙ্গে থাকুন।

★★★

বামাচার সম্পর্কে প্রথমেই বলা দরকার, একাধিক উপচার সহযোগে পূজার প্রক্রিয়া উপমহাদেশে তন্ত্রধর্মে সুপ্রাচীন হরপ্পা সভ্যতা থেকেই প্ৰচলিত আছে বলে বোঝা যায়। পঞ্চ ম-কার আসলে পাঁচ উপচার, পাঁচ অঙ্গ বিশিষ্ট মাতৃকা উপাসনা, এবং জগন্মাতার আবাহন করতে পাঁচটি রিচুয়াল বা আচার হিসেবেই এর তাৎপর্য।

মদ্য, মাংস, মৎস্য, মুদ্রা, মৈথুন - এই পাঁচটি হল পঞ্চ ম-কার। নামগুলোর স্থূল অর্থ স্পষ্ট, কাউকে বোঝাতে হবে না। আমরা সূক্ষ্ম অর্থে যাব, সেই অর্থও সমান প্রাসঙ্গিক, তবে তার আগে এই বামাচারী সাধনমার্গের তাৎপর্য আলোচনা করব।

◆■■◆ প্রথম তাৎপর্য: তন্ত্র হল ভুক্তি এবং মুক্তির সামঞ্জস্য বিধান। তন্ত্রে পবিত্র এবং অপবিত্রর বিভাজন থাকে না, উচ্চ নিচ বিভাজন নেই, দেহ এবং চৈতন্য তন্ত্রে পৃথক নয়। তন্ত্র হল বস্তু এবং ভাবের সমন্বয়। কাজেই সমদৃষ্টি অবলম্বনের জন্য তন্ত্রে কতগুলি অনুশীলন আছে। বামাচার হল এমন একটি অনুশীলন। গূঢ়তম ভাব, নিরেট বস্তু। নির্বাণ এবং ভোগ। মোক্ষমার্গ, প্রবৃত্তি। উপভোগ, আনন্দ যেখানে সাধনার অঙ্গ।

তন্ত্র কষ্টসাধ্য ক্লেশময় সাধনার পক্ষপাতী নয়,সেটা বোঝাতেও পঞ্চ ম-কার।

◆■■◆ দ্বিতীয় তাৎপর্য: তন্ত্রমার্গ সংসারত্যাগী নয়, সংসারে নিবৃত্তি শেখায় না। নির্বাণপ্রয়াসী বা ব্রহ্ম-অন্বেষণকারী যথাক্রমে বৌদ্ধ বা ঔপনিষদিক ধর্মকে পরিত্যাগ করার আহ্বান জানানোর কারণেও তন্ত্রে পঞ্চ ম কার। উঁচু নিচ বিভেদ, ব্রাহ্মণ শূদ্র বিভেদ, পবিত্র অপবিত্র বিভেদ, বস্তু ভাব বিভেদ, দেহ আত্মা বিভেদ, নারী পুরুষ বিভেদ এবং সর্ব প্রকার বৈষম্য পরিত্যাগ করার আহ্বান জানায় তন্ত্র। এজন্যও পঞ্চ ম-কার। বর্ণবাদ এবং শুচিবাই নিয়ে সাধনা হয় না, শীল হয় না, এজন্য পঞ্চ ম-কার একটা সুতীব্র শক থেরাপি।

◆■■◆ তৃতীয় তাৎপর্য: বামাচার শব্দের দুটি প্রধান অর্থ। বাম অর্থাৎ বাঁদিকের পথ। দ্বিতীয়ত বামা হল আমাদের জগন্মাতা মা কালীর অন্যতম শাস্ত্রীয় নাম, এই নামটি মা তারার উদ্দেশ্যেও ব্যবহার করা হয়। অতএব বামাচার হল কালীপথ বা তারাপথ।

কিন্তু বাঁদিক কেন? বাম শব্দের একটি অর্থ হল বিপরীত। যেমন বিধি বাম মানে বিপরীত বিধি। এই অর্থে বাম মার্গ নেগেটিভ অর্থ, কারণ বিপরীত পথ। কিন্তু বিষে বিষে বিষক্ষয় হয়, তাই বামাচার দুই নেগেটিভ মিলে পজিটিভ তৈরির আদর্শ।

বাম অর্থ বিভ্রান্তিও হয়। এক্ষেত্রে বামাকালীর অন্যতম তাৎপর্য হল যিনি বিভ্রান্তি দূর করে দেন। যেমন দক্ষিণাকালীর তাৎপর্য: যাঁর ভয়ে দক্ষিণদিকের অধিপতি যম পালিয়ে যান।

আবার সাংখ্যর সঙ্গে তন্ত্রের প্রাচীন যোগাযোগ আছে। সংখ্যা গণনা আদিযুগে বামদিকে হত: অঙ্কস্য বামা গতি। যেহেতু তন্ত্রর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ ছিল সংখ্যাবিজ্ঞান, সেজন্যও বাম মার্গ নাম হতে পারে।

◆■■◆ চতুর্থ তাৎপর্য: মা কালীর বামাচার আদি প্রস্তর যুগ থেকে, ঠিকঠাক বললে চল্লিশ হাজার বছর আগে যখন থেকে প্রথম মাতৃকা মূর্তি পাওয়া যায়, তখন থেকে প্ৰচলিত আদিম মাতৃসাধনার সুবিশাল আন্তর্জাতিক ঐতিহ্য বহন করে। অনেক আদিম জাতি মাতৃকা উপাসনা করত, মাতৃধর্মের উৎসব হত। এবং যেহেতু মদ্য ও মাংস পৃথিবীর যে কোনও জায়গায় আদিমকালে উৎসবে ব্যবহার করা হত, তাই অনেক গবেষক মনে করেন যে বামাচার সেই আদিম স্মৃতিবাহী।

মনে রাখতে হবে, স্থূলভাবে এই পাঁচটি ম আনন্দ, সম্পদ এবং প্রাণসৃষ্টির কারণ। মা আদ্যা। তিনি আদি থেকে আছেন। আমরা সুসভ্য একুশ শতকের মানুষ যেমন তাঁর সন্তান, আদিম মানুষও আদিম উপায়ে তাঁর উপাসনার সমান অধিকারী ছিল।

◆■■◆ পঞ্চম তাৎপর্য: অর্থাৎ স্থূল অর্থে বামাচারের প্রয়োগ তন্ত্রের বাইরে নয়, সম্পূর্ণভাবে তন্ত্র অনুমোদিত। কিন্তু সূক্ষ্ম অর্থে বামাচারের প্রয়োগ বর্তমান সভ্য সমাজে, গৃহী ব্যক্তি অনেক সহজে করতে পারেন। মা আদ্যা এবং নিত্যা। কিন্তু আমরা তাঁর সীমাবদ্ধ সন্তান, আমরা প্রাচীন প্রস্তরযুগের মত অথবা আদিম মাতৃকা উপাসক জাতিগুলোর মত অবাধ নই, কারণ সভ্যতা অগ্রসর হলে আমাদের কিছু কিছু নিয়ম শৃঙ্খলা মেনে চলতে হয়।

আসুন, বামাচারের পঞ্চ ম-কারের সূক্ষ্ম তাৎপর্য জানি এবার।

★★★★★ প্রথম ম-কার: সূক্ষ্ম অর্থে বামাচারে মদ্য হল সাধক যখন অতিশয় আনন্দে থাকেন, অথবা খেচরী মুদ্রা অভ্যাস করেন, তখন মুখের মধ্যে নিঃসৃত লালা। সুস্থ মানুষের মুখের মধ্যে লালা নিঃসৃত হয়েই থাকে, মুখ শুকিয়ে গেলেই সেটা চিন্তার, ডাক্তার দেখাতে হয় অনেকসময়। কাজেই এইভাবে প্রথম ম-কারে মায়ের আবাহনে কঠিন কিছু নেই।

লালা কেন মদ্যের প্রতীক? অতিশিশু এবং অতিবৃদ্ধরা বেসামাল থাকেন, লালা সামলাতে পারেন না। মানুষ বিবশ হলে লালাক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। মদ্য অনুরূপভাবে আমাদের নিয়ন্ত্রণহীনতা বা অবশতার প্রতীক। সেজন্য লালা হল সূক্ষ্ম মদ্য।

★★★★★দ্বিতীয় ম-কার: মাংস হল জিহ্বা থেকে উদ্গাত মাতৃমন্ত্র।

জিহ্বা তো মাংসল অঙ্গ বটেই, সচেতন মাংস। জিহ্বা সেই মাংস যা মন্ত্রপূত, মন্ত্রপ্রবিষ্ট, মন্ত্রের উচ্চারক। মায়ের মন্ত্র উচ্চারণ তো সবাই করেন পূজার সময়, কাজেই দ্বিতীয় ম-কারে কঠিন কিছুই নেই।

★★★★★ তৃতীয় ম-কার: মৎস্য হল চক্ষু। চর্মচক্ষু বা মানসচক্ষু দিয়ে মায়ের মূর্তি দর্শন বা ধ্যান করাই মৎস্য উপচারে মায়ের পুজো। এটাও আমরা করে থাকি অবলীলায়।

মাছকে চক্ষুর সঙ্গে তুলনা করা হয় প্রাচীন কাল থেকেই। মীনাক্ষী হল মহাদেবীর অন্যতম নাম। মাছের মতোই আমাদের চক্ষু যেন চঞ্চলভাবে সাঁতার কাটে, ডুবে যায়, ভেসে ওঠে, বিহার করে, কামনার বড়শিতে আটকে যায়, আবার কখনও কখনও পরিযান করে এক জলরাশি থেকে আরেক জলরাশিতে। তা আপনার চোখ মৎস্য এখন কি করছে পাঠক?

★★★★★ চতুর্থ ম-কার: মুদ্রা হল আমাদের শরীরের নানা রকম অঙ্গভঙ্গি এবং অবশ্যই যোগমুদ্রা। আপনি মাকে নমস্কার করলে দুহাত জড়ো করে যা করছেন, তাও মুদ্রা। মায়ের সামনে পদ্মাসনে উপবিষ্ট হয়ে পুজো করছেন, সেটা মুদ্রা। অষ্টাঙ্গ প্রণাম করলেও মুদ্রা। হরপ্পা সভ্যতায় নানারকম যোগমুদ্রা প্ৰচলিত ছিল, প্রত্ন প্রমাণ আছে।

★★★★★ পঞ্চম ম-কার: মৈথুন হল কুণ্ডলিনী সাধনা। কুণ্ডলিনী তত্ত্ব তন্ত্রের অন্যতম কেন্দ্রীয় তত্ত্ব। এবং দেহে মূলাধার চক্র থেকে সহস্রার চক্র পর্যন্ত কুণ্ডলিনী গমন করলে সেখানে কুণ্ডলিনী শক্তির সঙ্গে চেতনা/পুরুষতত্ত্ব/কনশাসনেসের মৈথুন ঘটে।

শেষ করি এই বলে। পঞ্চ ম-কার তন্ত্রের বলিষ্ঠ বস্তুনিষ্ঠতার প্রতীক। স্থূল হোক বা সূক্ষ্ম, পঞ্চ ম-কার আমাদের বস্তুজগৎ থেকে উৎপন্ন, সংশ্লিষ্ট, সম্পৃক্ত ভাব। মা জগদকারণ। তিনিই বিশ্বচরাচর। তাই জীব ও জড়, ভাব ও বস্তু, দেহ এবং চেতনা আলাদা নয়। পঞ্চ ম-কার সেই শিক্ষা দেয়।

মা রূপে সেই অব্যক্ত প্রকৃতির ধ্যান করি, আবাহন করি, সেজন্যও আরাধনায় ম অক্ষরের এত প্রাবল্য।

★★■★★ এবং সবথেকে বড় কথাটা সব শেষে বলি। ওই সূক্ষ্ম পঞ্চ ম-কার সম্পর্কে সবথেকে আশ্চর্য বিষয় কি জানেন? মায়ের পুজো তো আসলে নিজের দেহে করতে হয়। মা আমাদের হৃদয়ে প্রতিষ্ঠিত আছেন। স্থূল পঞ্চ ম-কার বাহ্যিক। কিন্তু সূক্ষ্ম পঞ্চ ম-কার আসলে আমাদের দেহকে ব্যবহার করেই মায়ের পুজো। সেজন্য পঞ্চ ম-কারের এই সূক্ষ্ম অর্থে লালা (মদ্য), জিভ (মাংস) চোখ (মৎস্য), সমগ্র শরীর (মুদ্রা) এবং কুণ্ডলিনী (মৈথুন) সহযোগে মাতৃকার ধ্যান আসলে আমাদের দেহ মন্দিরেই মায়ের পুজো। এবং মায়ের ভক্ত মাত্রেই অনায়াসে এই পুজোর অধিকারী। এই যে একটা ধারণা আছে যে বামাচার হল দুরূহ, কেবলমাত্র গুহ্য, কেবলমাত্র সংসারত্যাগী, কেবলমাত্র তান্ত্রিকদের - এটা ঠিক নয়। স্থূল বামাচার অসামাজিক হতে পারে, কিন্তু সূক্ষ্ম বামাচার সকলের জন্যই সহজ ও ঋজুপথে মাতৃসাধনা সুগম করে। তাই মায়ের সন্তান মাত্রেই বামাচারে মা বামাকালীর পুজো করতে পারেন। বরং সূক্ষ্ম বামাচার, সূক্ষ্ম পঞ্চ ম-কারেই মায়ের পুজো অনেক বেশি তদ্গত ও তন্নিষ্ঠ হয়, কারণ এক্ষেত্রে দেহমন্দিরেই মায়ের ঐশ্বর্যের আবাহন ও উদযাপন হয়, বাহ্যিক আড়ম্বর ছাড়া।

© তমাল দাশগুপ্ত Tamal Dasgupta

জয় মা বামাকালী। জয় জয় মা।

মায়ের ছবি পিন্টারেস্ট থেকে।

14/01/2023

মা কালী ও তন্ত্রসাধনার সম্পর্ক কি?

তন্ত্র, যা তনুকে ত্রাণ করে। এছাড়া তন্ত্র শব্দের প্রাচীন অর্থ তাঁত বা বয়ন-এর সঙ্গে যুক্ত: অনেক তন্তু একত্রিত করে যেমন একটি বস্ত্র, তন্তুবয়নের মত সেভাবেই বিভিন্ন ধারণা ও তত্ত্বকে একত্রিত করে যে ডিসকোর্স, সিস্টেম, এপিস্টেমোলজি, সেটাই তন্ত্র। এই অর্থে তন্ত্রের ব্যাপক ব্যবহার আজও হয়, যেমন বিষ্ণুশর্মার পঞ্চতন্ত্র, শশাঙ্কের গৌড়তন্ত্র: এছাড়া ধনতন্ত্র সমাজতন্ত্র বাস্তুতন্ত্র।

প্রথম অর্থে তন্ত্র ব্যক্তির সমস্ত ফ্যাকাল্টির অনুশীলন। বঙ্কিমের অনুশীলন তত্ত্ব দ্রষ্টব্য। যোগাসন, প্রাণায়াম, কুণ্ডলিনী সাধনা - এ সবই আমাদের শারীরিক এবং মানসিক বৃত্তির চর্চা। পাঠ, প্রগাঢ় গবেষণা অথবা ধ্যান, তপস্যা, এগুলোও আমাদের মন, মস্তিষ্ক, মেধা এবং শরীরকে একসূত্রে গেঁথে সর্বাঙ্গীণ উন্নতির পথ দেখায়।

একসূত্রে গাঁথা খুব জরুরি কারণ কালী জগদকারণ প্রকৃতি। কালী থেকে বিশ্বচরাচর উৎপন্ন। আমরা সবাই তাঁর সন্তান, জীব জড় নির্বিশেষে সমস্ত জগৎ তাঁর উপাদান। তাই মন ও শরীরের সুষম ভারসাম্য, পরিবেশ ও মানবসভ্যতার সুষম ভারসাম্য, সমাজ এবং অর্থনীতির ভারসাম্য, তত্ত্বজ্ঞান এবং ব্যবহারিক প্রয়োগের ভারসাম্য - সবই তন্ত্রের আওতায়।

কালীর তন্ত্রে ভুক্তি এবং মুক্তি দুইই সমান গুরুত্বপূর্ণ। ভোগ এবং মোক্ষ - এ দুয়ের বিরোধ নেই। ধর্ম অর্থ কাম মোক্ষ - চতুর্বর্গ মা কালীর তন্ত্রে সুষম ভারসাম্যে অবস্থান করে।

সমাজদেহ এবং তত্ত্ব প্রজ্ঞা পরস্পর নির্ভরশীল। দেহ এবং মন অবিচ্ছেদ্য। তন্ত্র দেহভাণ্ডে ব্রহ্মাণ্ড দর্শন করে, দেহের অতীত হওয়ার শিক্ষা দেয় না, এই দেহেই মায়ের অধিষ্ঠান, আমাদের দেহই মায়ের মন্দির।

মা কালীর তন্ত্রে দক্ষিণ এবং বাম মার্গে সুষম ভারসাম্য থাকে, যেমন ইড়া পিঙ্গলার মধ্যে সুষুম্না। মা কালীর মন্ত্র আমাদের ধ্যান এবং মনোসংযোগ করতে সাহায্য করে, যা আমাদের বিপুল মানসিক শক্তিকে সেভাবে কাজে লাগায় যেন পারমাণবিক শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ।

মা কালী হলেন তন্ত্রের প্রকৃতি। তিনি অব্যক্ত, বোঝার সুবিধার জন্য, ধ্যানের সুবিধার জন্য এই মাতৃমূর্তিকল্প রচিত হয়েছে। জগদকারণ, তাই তাঁকে জগন্মাতা বলে ডাকি। তিনি আল্লা ঈশ্বর গডের মত মানবকল্পনা নন।

মা কালীর তন্ত্রের সঙ্গে বিজ্ঞানের বিরোধ নেই। পশ্চিমী জগতে তন্ত্র সম্পর্কে আগ্রহ ক্রমশঃ বাড়ছে। সারস্বত তত্ত্ব ও দর্শন হিসেবে এবং দৈহিক-মানসিক অনুশীলন হিসেবে তন্ত্রের কোনও বিকল্প নেই।

এবং তন্ত্র গৌড়ে প্রকাশিতা বিদ্যা। কালিকা বঙ্গদেশে চ। অর্থাৎ কালী আমাদের ভূমির অধিষ্ঠাত্রী। মা কালীর তত্ত্ব এই তন্ত্র, এবং কালীক্ষেত্র এই বঙ্গভূমি। মা কালীর নামে যে বাঙালি জাতি সংজ্ঞায়িত হয়, সেই বাঙালির সবথেকে বড় সম্পদ হল তন্ত্র।

শেকড়বিচ্ছিন্ন আত্মবিস্মৃত বাঙালির মধ্যে তন্ত্র সম্পর্কে যাবতীয় বিভ্রান্তি কাটিয়ে দিতে আমাদের উদ্যোগে তন্ত্রবিদ্যা কোর্স চালু হতে চলেছে শীঘ্রই। অনলাইনে এই তন্ত্রবিদ্যা কোর্স করা যাবে। তন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনার উদ্দেশ্যে আন্তর্জাতিক মানের তন্ত্রবিদ্যা গবেষণা ও চর্চা কেন্দ্র গড়ে তোলার শপথ নিয়েছি আমরা। মা কালীর জয়ধ্বনি দিয়ে সঙ্গে থাকুন, আন্দোলনে যোগ দিতে চাইলে (91) 9717468046 নম্বরে যোগাযোগ করুন।

© কালীক্ষেত্র আন্দোলন

মায়ের ছবি পিন্টারেস্ট থেকে

জয় মা কালী
11/01/2023

জয় মা কালী

আনন্দময়ী কালী, কালীপুজো আনন্দের সাধনা

মা কালীর পূজা আর কৃচ্ছ্রসাধনকে অনেকেই এক করে ফেলেন। কালীপূজা মানেই সমস্ত দিন উপবাস, কঠোর বিধিনিয়ম, সংযমের আতিশয্য, শরীর পাতনের সংকল্প। এমনটাই ধারণা আমাদের সমাজের সিংহভাগ মানুষের। কিন্তু .... মায়ের পূজার তন্ত্রোক্ত বিধি কি আদৌ তাইই বলে?

বাঙালির তন্ত্রের কেন্দ্রে আছেন মা কালী। কলৌ কালী কলৌ কালী কলৌ কালী ন সংশয়:। আর কালীকেন্দ্রিক এই তন্ত্রধর্মের নামকরণের অগণিত ব্যাখ্যার একটি হল : " তনুকে ত্রাণ করা।" যদিও এটি অপেক্ষাকৃত অর্বাচীন ব্যাখ্যা। তন্ত্রের আদি অর্থ তন্তু বা weaving এর সাথে সংযুক্ত। প্রকৃতির সমস্ত শৃঙ্খলা, মানবদেহ ও চেতনার সমস্ত নিয়মের নির্যাসই এই তন্ত্রধর্মের প্রাণ। তাই যে ব্যাখ্যাই ধরি না কেন; তন্ত্রে সব অর্থেই দেহকে যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

তন্ত্র মতে:
"ব্রহ্মাণ্ডে যে গুণা সন্তি তে তিষ্ঠন্তি কলেবরে"
বাঙালি সাধকের ভাষায়:
যাহা আছে ব্রহ্মাণ্ডে তাহাই আছে দেহভাণ্ডে
এই দেহ মায়ের অধিষ্ঠান। কালীকিঙ্কর কবিরঞ্জন রামপ্রসাদের পদে আমরা তার সোচ্চার ঘোষণা শুনি:
"আনন্দে রামপ্রসাদ রটে মা বিরাজে সর্বঘটে
ঘটে ঘটে যত রূপ মা আমার সে রূপ ধরে"

উপমহাদেশে যত সুপ্রাচীন শক্তিপীঠ আছে; তন্ত্র তাদের প্রতিটির দ্যোতনা খুঁজে পেয়েছে মানবদেহে। এই তত্ত্বটি কৌলাচারে তোড়লতন্ত্রে এভাবে প্রকাশিত হয়েছে:

মূলাধারে কামরূপ, হৃদয়ে জলন্ধরপীঠ, তার ঊর্ধ্বে পূর্ণগিরি ও উড্ডিয়ান। ভ্রূমধ্যে বারাণসী। নেত্রে জ্বালামুখী। মুখে মায়াবতী।

এ হেন তন্ত্রমার্গে মা কালীর উপাসনা কখনোই শরীরকে ক্লেশ দিয়ে সম্ভব নয়।

রামপ্রসাদের পদে আমরা দেখি:

চব্য চোষ্য লেহ্য পেয় যত রস এ সংসারে
আহার করো মনে করো আহুতি দেই শ্যামা মা'রে

এটাই হল তন্ত্রের মানসপূজার তত্ত্ব। তোমার দেহে মায়ের অধিষ্ঠান। যা কিছু তোমার প্রিয়; তোমার শরীরের পুষ্টির জন্য আবশ্যক; তার আস্বাদনের মাধ্যমেই জগতজননীকে তৃপ্ত করো। অনাবশ্যক উপবাস, অতি অল্পাহারের ক্লেশ এই পথে একান্তই নিরর্থক। বরং এই জগতে আনন্দের যে অপূর্ব ধারা বয়ে যাচ্ছে; তার বারংবার আস্বাদন এবং তার গভীরে যে অপূর্ব প্রজ্ঞা নিহিত আছে; বারংবার তার উপলব্ধির পথেই তন্ত্রে কৈবল্যের বিধান আছে। কৌলমার্গের সেই সুবিখ্যাত শ্লোক এই প্রসঙ্গে স্মরণ করি:
পিত্বা পিত্বা পুনঃ পিত্বা পপাত ধরণীতলে
উত্থিত্বা চ পুনঃ পিত্বা পুনর্জন্মং ন বিদ্যতে

কৌলমার্গে তো এমন নির্দেশও আছে যে উপবাসক্লিষ্ট অশক্ত দেহে যে কালীপূজা করে সে কখনোই অভিষ্ট লাভ করে না।

সহজযানের সিদ্ধাচার্যরাও একই কথা বলেছেন। সরহবজ্র জটিল ধর্মাচরণের অনর্থক পরিশ্রমকে তিরস্কার করে বলেছেন:

এস জপ হোমে মণ্ডল কম্মে
অনুদিন আচ্ছসি বাহিউ ধম্মে
তো বিন তরুণী নিরন্তর নেহে
বোহি কি লবভই প্রণ বি দেহে

এই হোম, মণ্ডল রচনার কঠিন বিধি তোমাকে ধর্মের বহিরঙ্গেই আটকে রাখে। এই দেহে বোধিলাভ তখনই সম্ভব; যখন সেই তরুণী স্নেহধারা বর্ষণ করেন। এই তরুণীই অদ্বৈতা আদিমাতৃকা; বাঙালির মা কালী।

আমাদের তন্ত্রধর্ম; আমাদের মা কালীর সাধনা আমাদের নিঃশ্বাসের মতোই জীবনের অপরিহার্য অঙ্গ। জগতবিচ্ছিন্ন হয়ে; প্রকৃতির স্বাভাবিক গতির বিরুদ্ধাচরণ করে মর্কট বৈরাগ্যকে তন্ত্র সযত্নে পরিহার করেছে। এই পথ এতটাই জীবনসম্পৃক্ত যে অনায়াসেই বস্তুবাদী ধারণা আর গূঢ় তত্ত্বকে আমরা একাকার করতে পারি। ঐহিক চেতনায় যা সুখদায়ক বলে পরিচিত; সেই মদ্য, মাংস, মৎস্য, মুদ্রা ও মৈথুনকেই আমরা পঞ্চ ম কারের তত্ত্বে মাতৃসাধনার সোপানে পরিণত করি। আমাদের চর্যাপদের কবি পদ্মার খালে বজ্রনৌকা চালনা করে আত্মোপলব্ধির সর্বোচ্চ পর্যায়কে বঙ্গালী নাম দেন।

পুণ্যের জন্য সুদূর তীর্থে পাড়ি দেওয়াকেও তন্ত্রে অপ্রয়োজনীয় বলা হয়েছে।
তীর্থভ্রমণ দুঃখসাধন মন উচাটন হয়ো না রে
তুমি আনন্দত্রিবেণীর মূলে শীতল হও না মূলাধারে

সাধক কবি রামপ্রসাদ গেয়েছিলেন।

আবার সাধক কমলাকান্তের মৃত্যুকালে যখন বর্ধমানের রাজা তেজশ্চন্দ্র তাঁকে গঙ্গাতীরে নিয়ে যেতে চান; তখন সাধক কমলাকান্ত বলেছিলেন:

আমি কেন কি কারণে গঙ্গাতীরে যাব?
কেলে মায়ের ছেলে হয়ে বিমাতার কি শরণ লব?

অর্থাত সহজ পথে স্থির থাকো। কালীতত্ত্বে অটল থাকো। আর কিছুই দরকার নেই। এই পথে চলেই রাণী রাসমণি কাশীযাত্রা না করে বাংলার বুকে তন্ত্রপীঠ দক্ষিণেশ্বরের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

সংক্ষেপে বলতে গেলে শারীরিক ক্লেশ, জটিল আচার, ক্লান্তিকর যাত্রা কোনো কিছুই তন্ত্রের অপরিহার্য অঙ্গ নয়। মায়ের এই সাধনমার্গ বড়ো সরল; বড়ো ঋজু। অহেতুক জটিলতার দুর্গম পথে তাঁকে পাওয়া যায় না। কালী ধরা দেন প্রকৃতির স্বাভাবিক গতিতে; একান্ত সহজ পথেই।

উজুরে উজু ছাড়ি মা জাহু রে বঙ্ক
নিঅড়ি বোহি মা জাহু রে লঙ্ক

© কালীক্ষেত্র আন্দোলন

আমাদের পেজটি লাইক করুন, পেজের নাম কালীক্ষেত্র আন্দোলন। পেজের লিংক: https://www.facebook.com/profile.php?id=100088854411804&mibextid=ZbWKwL
নিয়মিত আপডেট পেতে আমাদের গ্রূপে সংযুক্ত হন, গ্রূপের নাম জয় মা কালী আন্দোলন- কালীক্ষেত্র চিরন্তন। গ্রূপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/1208680915856872/?ref=share&mibextid=NSMWBT
আমাদের ওয়েবসাইট হল রিক্লেম কালীক্ষেত্র, ওয়েবসাইট লিংক https://reclaimkalikhetro.data.blog/

ইনস্টাগ্রাম https://instagram.com/kalikhetro?igshid=YmMyMTA2M2Y=

টুইটার
https://twitter.com/kaliksetra?t=I1p4w6-fMfEnvjA-ExJ_-w&s=09

Address

Uttarpara, Makhla
Uttarpara
712258

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when সপ্তডিঙা পত্রিকা posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to সপ্তডিঙা পত্রিকা:

Videos

Share

Category


Other Magazines in Uttarpara

Show All