02/02/2023
হামেশা দেখা যেত তিনি গোড়ায় খেয়েছেন পায়েস,তারপর আলুভাজা,পরে মোচার ঘন্ট,আরও পরে একটু দই ভাত,শেষে লুচি আর একটু ঝোল৷
রবীন্দ্রনাথ যখন খেতে বসতেন তখন নানা জিনিস তাঁর টেবিলে সাজিয়ে দেওয়া হত৷ তিনি এটা থেকে একটু ওটা থেকে কিছু চামচ দিয়ে তুলে নিতেন৷কোনওটা ষোলো আনা খেতেন না অথবা আহারের প্রচলিত রীতি সত্যি বলতে বড় একটা অনুসরণ তিনি করতেন না৷
এসব ব্যতিক্রম দেখে একবার নন্দলাল সেনগুপ্ত এর কারণ রবীন্দ্রনাথের কাছে জানতে চেয়েছিলেন৷
কবি বলেছিলেন এসব নাকি তাদের অভ্যাসের গোঁড়ামি৷ আরও কিছু বলেছিলেন সেকথায় আবার ফিরব৷ মাঝে আর একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করতে ইচ্ছা করছে৷
শুনুন সেই গল্প৷
রবীন্দ্রনাথের সাথে একবার এক ভদ্রলোক মধ্যাহ্ন ভোজনে বসেছেন৷ দুজনকে খাদ্যবস্তু পরিবেশন করা হচ্ছে সমান ভাবে,তবে একটি পদ কবিকে আলাদা দেওয়া হল,তিনি যা থেকে বাদ পড়েছেন৷ ভদ্রলোক কিন্তু তখন থেকে বোঝার চেষ্টা করছেন কি ওই পদ৷
রবীন্দ্রনাথের রসিকতাবোধ নেহাত কম ছিল না বরং হয়ত সাধারণের তুলনায় একটু বেশি মাত্রায় ছিল তিনি বুঝতে পেরে বললেন এইসব পক্ষপাতিত্ব একদম পছন্দ করেন না৷ আমি গুরুদেব বলে অমনি টপ করে একপ্রস্ত বেশি দিলে৷ তা এই ...ওরে,দে,দে,বাবুকে ওইটা একটু৷ দেওয়া হল৷ মুখে দিয়ে বাবুর হাসিমুখ নিমেষে উধাও৷ হবে না কেন! বিশেষ পদটি যে ছিল খাঁটি নিমপাতা বাটা৷
আবার রবীন্দ্রনাথের খাবার রীতি নিয়ে শুরু হোক,নন্দগোপাল সেনগুপ্তকে কবি বললেন তোমরা মনে কর রসনার এক-এক রকম স্বাদের ওপর এক-এক ধরনের পক্ষপাত আছে তার ক্রম ভঙ্গ হলে মনে হয় আহারের আনন্দ মাঠে মারা গেল৷
তিনি অবশ্য মনে করেন শারীর-প্রকৃতির নানা বিরুদ্ধ অবস্থার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার ক্ষমতা আছে সেটা আমরা অভ্যাসের অন্ধতায় ভুলে বসি,একটা রীতির দাসত্ব করি৷
নন্দগোপাল কবিকে সবিনয়ে বললেন: আহারের ব্যাপারে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের অভ্যাস বিরোধীতা ছিল৷ আগে দুধ-মিষ্টি খেয়ে তারপর তিনি এক-এক সময় তিতো খেতেন৷ বিহারীলাল সরকারের বইয়ে পড়েছেন সেকথা৷ রবীন্দ্রনাথ এবার রসিকতার সুযোগ ছাড়লেন না বললেন তুমি দেখছি প্রত্মতাত্ত্বিকদের পিশেমশাই,খুঁজে খুঁজে বার করেছো৷ জানতাম না৷ কোন দিন আমার কথা লিখে বসবে না তো..? 🌿
গ্রন্থঋণ ~ রঙ্গপ্রিয় রবীন্দ্রনাথ (ড. নিতাই বসু)