17/07/2023
. ❤️অজান্তা ও ইলোরা❤️
আমার সংস্কৃতি ,আমার ঐতিহ্য
©®Copyright Protected
জানেন আমরা কতটা সমৃদ্ধ ? উত্তর হলো "শূন্য" । এমনকি এই "শূন্য" ও আমাদের নয় । ভাবছেন হঠাৎ করে এমন একটা জটিল প্রশ্ন কেন? কারন আমাদের শিক্ষা ,সংস্কৃতি, স্থাপত্য,শিল্পকলা ও ইতিহাস , আমায় এই প্রশ্নটা করছে । না আমাদের এই তথাকথিত আধুনিক শিক্ষা ,সংস্কৃতির, স্থাপত্যের কথা বলছি না । বলছি ১৪০০ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া প্রাচীন ভারতবর্ষের দুটো অসাধারন শিল্পকলার কথা -
"অজন্তা ও ইলোরা"
সাধারনত আমার লেখায় ইতিহাস ও সাহিত্যের খুব বেশি জায়গা হয় না । প্রাচীন ভারতবর্ষ ঠিক কতটা সমৃদ্ধ ছিলো সেই ইতিহাস জানতে হলে দুটো জায়গা ঘুরে আসতে হবে । এখানে কীভাবে ঘুরবেন সেটাই জানা যাক?
পরিকল্পনা:
প্রথমদিন : কলকাতা থেকে জালগাও জং । হাওড়া - মুম্বাই CSMT মেল (১২৩২১) এই ট্রেন ধরতে পারেন । একদিন পরে সকাল ৫ টায় জালগাও জং পৌঁছে রওনা দিন আওরঙ্গবাদের উদেশ্যে।
দ্বিতীয়দিন : জালগাও থেকে আওরঙ্গবাদ । বিকেলে আওরঙ্গবাদ লোকাল সাইটসিন।
তৃতীয়দিন : ইলোরা দর্শন ও Grishneshhwar Temple
চতুর্থদিন: আওরঙ্গবাদ থেকে অজন্তা ।
পঞ্চমদিন : অজন্তা থেকে জালগাও জং ।
পুনে থেকে ঔরঙ্গাবাদ : ২৪০ কিমি (৫ ঘণ্টা)
ঔরঙ্গাবাদ থেকে অজন্তা :১১০ কিমি (তিন ঘণ্টা)
ঔরঙ্গাবাদ থেকে ইলোরা :৩০ কিমি (৪৫ মিনিট )
জালগাও থেকে আওরঙ্গবাদ : ১৬৫ কিমি (৪ ঘণ্টা)
ছুটি কম থাকলে , ভোররাতের ফ্লাইট ধরে ঔরঙ্গাবাদ পৌঁছে যান। হোটেল চেকইন করে ফ্রেশ হয়ে লাঞ্চ সেরে বেরিয়ে পড়ুন ঔরঙ্গাবাদ লোকাল সাইটসিন করতে । পরেরদিন সকালে অজন্তা চলে যান । তৃতীয়দিন সারাদিন ইলোরাতে সময় দিন । চতুর্থদিন কিছুটা সময় ঔরঙ্গাবাদ লোকাল সাইটসিন করে রাতে ফ্লাইট ধরে ফিরে আসুন ।
অজন্তা
প্রাচীন ভারতবর্ষের শিল্পকলার এক অভূতপূর্ব নিদর্শন। খ্রিস্টীয়পূর্ব ২০০ থেকে ৬০০ খ্রিস্টাব্দে এই শিল্পকলার নির্মাণ সময়। এর প্রায় ১২০০ বছর পর ১৮১৯ সালে ব্রিটিশকর্তা জন স্মিথ এটি কে পুনরায় জনসমক্ষে আনেন । সব মিলিয়ে ৩০ টি মন্দির ও মঠ রয়েছে । এরমধ্যে মাত্র পাঁচটি হলো চৈত্য (বাসগৃহ) ২৫টি হলো বিহার (মঠ)। মূলত এটি হলো বৌদ্ধদের মঠ।
সাধারনত পাঁচটি চৈত্য মন্দিরেই বেশিরভাগ ছবি রয়েছে । এই গুহাগুলোর নম্বর হলো ৯,১০,১৯,২৬,২৯ ।এই কয়েকটি গুহার চিত্র গুলোকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা চলছে। অন্য গুহাগুলোতে চিত্রগুলো প্রায় নষ্ট হয়ে গেছে । এর প্রধান কারন অবশ্যই বৃষ্টির জল ।
প্রবেশ :
পার্কিং এর জায়গায় গাড়ি রেখে ,হেঁটে চলে আসুন MTDC এর বাস কাউন্টারে । পার্কিং থেকে অজন্তা কেভ ৪ কিমি রাস্তা । ১৫ মিনিট পর প্রবেশ পথে এসে টিকিট কেটে ঢুকে পড়ুন ।
বিশেষ কথা :
১.প্রত্যেক সোমবার বন্ধ থাকে।
২. সব মিলিয়ে প্রায় ৫-৬ কিমি হাঁটতে হয় । তাই সময় নিয়ে বেরোবেন ।
৩. অজন্তা গুহায় সাধারনত গুহাচিত্র ই বেশি । স্থাপত্য ইলোরতে দেখা যায় ।
৪.গুহায় যাওয়ার বাসের ভাড়া ৩০ টাকা করে ।
৫.চেষ্টা করবেন ৫ টার আগে নেমে আসতে। লাস্ট বাস মিস করলে অশেষ দুঃখ আছে ।ভুলে যাবেন না ,এই কেভ পুনরুদ্ধারের আগে বাঘেদের আখড়া ছিল।
৬.কেভে ঢোকার মূল্য ১০ টাকা ।
৭.. কেভের কাছে MTDC এর একটাই রেস্টুরেন্ট আছে । তাই চেষ্টা করবেন ড্রাইফুড সঙ্গে রাখতে ।
৮. পর্যাপ্ত জল রাখবেন । নাহলে দুঃখের শেষ থাকবে না ।
৯. এখানে সরকারি গাইড পাওয়া যায় । নির্ধারিত মূল্য ১২০০ টাকা । তবে আমার বাঙালি বুদ্ধি বলে ,কাউন্টার থেকে একটু এগিয়ে গেলে ৮০০-৯০০ টাকায় গাইড পেয়ে হবেন । অথবা বিশেষ কেভ গুলোতে যারা ডিউটিতে আছে তাদের অনুরোধ করলে তাদের থেকে ভালো গাইড হয় না
১০. ছবি তুলতে পারেন , ফ্ল্যাশ না জ্বেলে তুলতে হবে । ভুলেও ভিডিও তুলবেন না ।
১১. পাহাড়ের উপর ,তাই সবসময় রোদের তীব্রতা ভালোই থাকে ।
১২. পার্কিংয়ের আসে পাশে প্রচুর পসরার দোকান আছে । এদের থেকে একটু সাবধান । মিষ্টি করে এমন গলা কাটবে বুঝতে পারবেন না 😆।
ইলোরা
অজন্তা যদি শিল্পকলা হয় ,ইলোরা হলো স্থাপত্যের এক উজ্জ্বল নিদর্শন । হিন্দু ,বৌদ্ধ, ও জৈন ,এই তিন ধর্মের মন্দির রয়েছে এখানে ।
বৌদ্ধদের১২ টি (১-১২ নম্বর গুহা) , হিন্দুদের ১৭ টি (১৩-২৮ নম্বর গুহা) ও জৈনদের ৫টি (২৯-৩৪ নম্বর গুহা) মন্দির রয়েছে । বেশীরভাগ মন্দির গুলো রাষ্ট্রকূট আমলে তৈরি ।
ইলোরা প্রধান আকর্ষন হলো ,গুহা নম্বর ১৬ । কৈলাশনাথ মন্দির । এছাড়া বিশেষ গুহাগুলো হলো ৭,১০,১১,২৯,৩০,৩৪ নম্বর গুহা । জৈন ধর্মের গুহা (২৯-৩৪ নম্বর ) যেতে গেলে গাড়িতে করে ২কিমি যেতে হয় । আপনারা চাইলে হেঁটে ও যেতে পারেন ।
প্রবেশ :
পার্কিং থেকে হেঁটে কাউন্টারে টিকিট কেটে ঢুকে পড়ুন । একজন গাইড নিন । সামনেই কৈলাশ মন্দির ।
বিশেষকথা :
১.মঙ্গলবার বন্ধ থেকে
২. সময় ম্যানেজ করা এখানে সবথেকে বড় বিষয় । মনে রাখবেন সবমিলিয়ে ১০ কিমি হেঁটে ঘুরে দেখতে হবে । তাই ঘড়ির দিকে নজর জরুরী ।
৩. খাওয়ার জল খুব জরুরি ।
৪. দালাল থেকে সাবধান ।
৫. ২৯-৩৪ নম্বর গুহা গুলো অনেকটা দূরে । তাই চেষ্টা করবেন ওগুলো আগে কমপ্লিট করতে । কৈলাশ মন্দির একদম সামনে ,ফলে আগে ওগুলো করে নেবেন । গাইড আপনাকে বলবে ওগুলো অনেক দূর ।কিন্তু ওইগুলো সবথেকে বেশি আকর্ষনীয় ।
৬. কেভের পাশেই হোটেল কৈলাশ । খুব ভালো হোটেল ।
আওরঙ্গবাদ
"City of gate" হ্যাঁ ঠিক এই নামে ডাকা হয় ঔরঙ্গাবাদকে । সব মিলিয়ে ৫২ টি গেট আছে পুরো শহর জুড়ে । শহরজুড়ে ছড়িয়ে আছে শিবাজী ও ঔরঙ্গদেবের আমলে তৈরি অসংখ্য স্থাপত্য ।
বিবি কা মাকবারা, দৌলতবাদ ফোর্ট, পাঞ্চিকি, ছত্রপতি শিবাজী মহারাজ মিউজিয়াম, চাঁদমিনার ,সেলিম আলী লেক আরো অনেক দ্রষ্টব্য রয়েছে ।
বিশেষকথা :
১. সব জায়গায় গাইড নিতে হবে এমন কোনো ব্যাপার নয় । কিছুটা ইতিহাস জ্ঞান বই বা গুগল পড়ে,আর বাকিটা লোকাল পাবলিকের থেকে জেনে নিয়ে কিছু জায়গা ঘোরাই যায় ।
২. পাঞ্চিকী খুব ঘনবসতি পূর্ন এরিয়া তে পড়ে । তাই ভিড় এড়াতে অনেকে যায় না । মনে রাখবেন ভারতীয় দের ইঞ্জিনিয়ারিং কতটা উন্নত ছিল সেই সময় তার নিদর্শন এখনো বর্তমান ও সচল ।
৩. পক্ষীবিদ সেলিম আলী নামাঙ্কিত লেকে অবশ্যই যাবেন ।
৪. চেষ্টা করবেন পুনে কে সঙ্গে নিয়ে প্ল্যান করতে । তাতে দিন অনুপাতে বাজেট তুলনামূকভাবে কমে আসবে ।
৫. আমি এই বছর (২০২১) মার্চ মাসে ঘুরে এসেছি ।তাই খরচের হিসেব টা ওই সময়কার ।
৬. আমি পুনে ঘুরে অজন্তা ঘুরেছি । তাই ঔরঙ্গাবাদের লোকাল গাড়ির ড্রাইভারের নম্বর দেওয়া সম্ভব নয় ।তবে যে গাড়ির এজেন্সি থেকে গাড়ি নিয়েছি তার নম্বর অবশ্যই দেবো । সারা মহারাষ্ট্রে গাড়ি চলে ঘন্টা/ কিমি বেসিসে।
খরচ :
গাড়ী দিনপ্রতি ৪২০০/- টাকা (৩০০কিমি)
হোটেল ভাড়া ১৪০০/-( ট্রিপল)
কলকাতা থেকে পুনে ফ্লাইট : ৪০০০/-
খাওয়া : ৬০০ টাকা জনপ্রতি
ডিটেলস :
হোটেল রাজ : 9373377748 / 9326444177
হোটেল কৈলাশ : 9049375443 (ইলোরা)
হোটেল ভিউ পয়েন্ট : 9657044278 (অজন্তা)
MTDC : 9223594601 (Whatsapp)
MTDC হোটেল সব জায়গায় আছে ।
ড্রাইভার : 86688 10374 (প্রকাশ)
ছবি : সৌমিত্র মন্ডল ও কল্যাণ মান্না
তথ্যসূত্র : দিব্যাঙ্ক ত্রিবেদী
এই পোস্টটির কপিরাইট সম্পুর্ণ রূপে Traveller Bittu (Kalyan Manna) পেজ কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত । আপনি এই পেজের পোস্ট সরাসরি শেয়ার করতে পারেন । কপি করে নিজের নামে পোস্ট করলে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে ।।
** চলুন জানি নতুন কিছু তথ্য লেন্সের চোখে ।
ধন্যবাদ
Traveller Bittu