09/01/2024
টাইম মেশিন
অর্ধেন্দু চক্রবর্তী
প্রফেসর উবের- আজ আমরা কেনো এই গুরুত্বপূর্ণ সেমিনারের আয়োজন করেছি তা আর কারো কাছে অজ্ঞাত নয় । আমারা বিগত ১০০০বছরেরও বেশি সময় ধরে করোনা ভাইরাসের সাথে লোড়ে চলেছি । আমাদের পৃথিবীরতে টিকে থাকতে হলে যা যা করার আমরা সমস্ত রকম চেষ্টা করে ফেলেছি । কিন্তু আমারা এখনো করোনা ভাইরাসের সঙ্গে পেরে উঠতে পাড়িনি । আমি দেখতে পাচ্ছি আর কয়েক বছরের মধ্যে পৃথিবী থেকে মানুষের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে । তাই আমাদের এখন একটা কঠিন এবং শেষ সিদ্ধান্তে এসে উপনীত হতে হয়েছে । আমরা গবেষনা করে দেখেছি পৃথিবীতে করোনা ভাইরাসের বাড়বাড়ন্ত ২০১৯/২০ সাল থেকে, মানে আজ থেকে প্রায় এক ১০০০ বছর আগে । তাই আমার ঠিক করেছি টাইম মেশিন ইউজ করে আমরা একজনকে ১০০০বছর পিছনে পাঠাবো । সে সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার কাজ করবে এক বছর ধরে, যদিও কাজ করার জন্য আট মাস সময় পাওয়া যাবে, কারন ১০০০বছর পিছনে পৌঁছাতে টাইম লাগবে দু'মাস আর ফিরে আসতে দু'মাস । ওই এক বছড়ে যদি করোনার স্প্রেড আটকানো যায় তাহলে আমাদের ধারনা আমাদের এই ৩০২১সাল আবার সোনালী প্রভাত দেখবে । আর এই কাজটা করার জন্য প্যানেলে ১০জনের নাম ছিল তার মধ্যে থেকে আমরা মাস্ক ভট্টানগর কে বেছে নিয়েছি । সাবাই মাস্ক'কে ওয়েলকাম করো আরো প্রে করো সে জেনো সফল হয়ে ফিরে আসে ।
-গোটা সেমিনার করতালিতে ফেটে পড়ল । মাস্ক উঠে দাঁড়িয়ে সেই অভিবাদন সসন্মানে গ্রহন করল ।
প্রফেসর উবের-মাস্ক কালকে ১১টায় আমার কেবিনে এসো, আমি তোমার সঙ্গে এই অপারেশনের ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা করব ।
মাস্ক-ওকে স্যার ।
- নীল আকাশের পৃথিবী এখন ধুসর, মানুষের ভুলের জন্য এখন পৃথিবীর বুক থেকে মানুষের অস্তিত্ব মুছে যেতে চলেছে । গোটা পৃথিবীকে আজ করোনা গ্রাস করেছে । করোনা যেনো পৃথিবী থেকে মানুষ নিশ্চিহ্ন করার এক কঠিন সংকল্পে ব্রতী । রোজ কয়েক কোটি করে মানুষ এই লড়াইয়ে হেরে গিয়ে মৃত্যু বরন করছে । তাদের শরীর পড়ে থাকছে রাস্তায়, ড্রেনে । সেই মানুষ গুলোর দেহ পচে গোলে মাটি হয়ে যাচ্ছে, কেউ সৎকার করার লোক নেই। পৃথিবীটা পরিনত হয়েছে একটা দুর্গন্ধের গোলোকে । মাস্ক এখন ভিষন একসাইটেড, একটা অন্য রকম অ্যাডভেঞ্চারের দ্বায়িত্ব তার কাঁধে । আজ তার প্রফেসর উবের সঙ্গে সেই নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ মিটিং । মাস্ক জানেনা পরবর্তিতে তার সামনে কি অপেক্ষা করে আছে, কিন্তু তাও একটা চাপা উত্তেজনা তাকে তাতিয়ে তুলছে অবিরত ।
মাস্ক- মে আই কামিং স্যার
প্রফেসর উবের- আসো আসো মাস্ক, কি তুমি মানোসিক ভাবে তৈরিতো ?
মাস্ক-ইয়েস স্যার
প্রফেসর উবের- শোনো আগে তোমাকে ব্যাপারটা ভালো করে বুঝিয়ে দিই, সকল প্রকার করোনাভাইরাসের সর্বপ্রথম সাধারণ পূর্বপুরুষ এর উৎপত্তি ঘটে আনুমানিক ৮০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে। তার পর অনবরত মিউটেড হতে হতে এই ভয়ংকর মারন শক্তি তৈরি করে । আমি আগেও বলেছি যে করোনার বারবারন্ত শুরু ২০১৯/২০ তে, তাই আমার তোমাকে ওই সময় পাঠাবো । এক বছর তুমি সেখানে থাকবে, পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেবে । কিন্তু সাবধান একটা কথা মাথায় রেখো তুমি যাচ্ছো এক হাজার বছর পিছনের অতীতে, তাই কোনো ঘটনা তুমি আঁটকানোর চেষ্টা করবেনা, কারন তুমি যেটা আটকাতে যাবে সেটা অলরেডি আগে ঘোটে গেছে । সময়ের নিয়ম আমরা পরিবর্তন করতে পারিনা তাই যা করবে ভেবেচিন্তে, না হলেই ধ্বংস অনিবার্য ।
মাস্ক-একটু যদি ডিটেলসে বলেন..
প্রফেসর উবের- শোনো, তুমি সেখানে যাবার পর দেখলে যে দু দেশের মধ্যে যুদ্ধ বেঁধেছে, ১০০০বছর আগে মানুষের কাছে পরমানু বোমাই ছিলো আধুনিকতম অস্ত্র, কারন তারা তখন বজ্রপাত কে ধরতে শেখেনি, কিন্তু এখনতো আমাদের কাছে বজ্রপাত ধরে তা থেকে সুপার লাইটিং ব্লাস্ট ঘটানো মামুলি ব্যাপার । আর একটা সুপার লাইটিং ব্ল্যাস্টে ক্ষমতা তুমিতো জানোই, একটা ব্লাস্ট সাত সাতটা উনিভার্স ধ্বংস করার ক্ষমতা রাখে, এখন তুমি ১০০০বছর আগে গিয়ে তাদের যদি এই টেকনোলজি শিখিয়ে দাও, বুঝতে পারছো কি অনর্থ ঘটবে ?
মাস্ক-বুঝেছি, আমি এই সব এড়িয়ে চলবো ।
প্রফেসর উবের-হ্যা ..যা ঘটছে তা ঘটতে দেবে আর করোনার স্প্রেডিং কমানোর যাবোতিয় ব্যাবস্থা গ্রহন করবে । তাহলে কালকে সকাল ছয়টায় আমার তোমাকে ১০০০বছর অতীতে পাঠাচ্ছি, মেন্টালি তৈরি হয়ে নাও।
- মাস্ক লুমর্বাগিন ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির অফিস থেকে বেড়িয়ে মুন লাইট স্ট্রিটের উদ্দেশ্য রওনা দিলো, এখন আর রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করা যায়না কারন রাস্তায় এলোমেলো ভাবে ছড়িয়ে থাকে করোনা আক্রান্ত মৃতের লাশ, তাই সাধারন ট্যাক্সি চলাচল বন্ধ, আকাশ পথই এখন একমাত্র যোগাযোগের মাধ্যম । মাস্ক তার পার্শনাল ড্রোনে কোরে সোজা মুন লাইট স্ট্রিটের বাঁ দিকে যে মার্স রঙের বাড়িটা আছে তার টপ ফ্লোরে ল্যান্ড করল । এটা মাস্কের বান্ধবী লুসিয়ানার বাড়ি, যাবার আগে একবার দেখা করাটা তার কর্তব্য ।
মাস্ক-লুসিয়ানা, তোমার টেনশন হচ্ছে না?
লুসি-এক দম না, তুমি মহৎ কাজে যাচ্ছ এটাতো আমার গর্বের ।
মাস্ক- যদি ফির না আসি !
লুসি- এমনিতেই মৃত্যু আমাদের দুয়ারে দাঁড়িয়ে আছে, ভবিষ্যৎ কি তুমিও জানো না , এই পৃথিবীতে হিউম্যান লাইফ আর কতদিন ? দু বছর কি আরো বেশি হলে পাঁচ বছর, কিন্তু তুমি সফল হয়ে ফিরলে শুধু আমাদের নয় সারা পৃথিবীর আকাশে আবার রেনবো দেখাযাবে ।
- দাঁতে দাঁত চিপে কথাগুলো বলতে বলতে চোখে জল চোলে এলো লুসিয়ানার । মাস্কের ইচ্ছে হলো একবার তাকে জরিয়ে ধরে কপালে আলতো একটা চুম্বন এঁকে দিতে, কিন্তু রোগ যে ভয়ংকর, দশ ফুটের দুরত্ব একে অপরের যেন সব সময় বজায় থাকে । এখন আর বাচ্চা দের তার মা'রা নিজের হাতে খাইয়ে দেয়না এমনকি বাচ্চা জন্ম দেওয়ার উপায়ও এখন একমাত্র টেস্ট টিউব, কেউ কারো কাছে যায় না, কেউ আর কারো সুখ দুঃখের কথা শোনেনা, সবাই শুধু প্রতিক্ষা করে, মৃত্যুর ।
প্রফেসর উবের- মাস্ক, টাইম ট্রাভেলারে উঠে স্মার্ট হেলমেট পরে রেডি থাকো, আর এই আল্ট্রা রেডিয়েটর রিস্ট ওয়াচটা হাতে পড়ে নাও, এটা দিয়ে আমরা তোমার সাথে কন্টাক্ট করতে পারবো, আর হ্যা এই নাও সেই সময়ের কারেন্সি, এগুলোকে টাকা বলা হতো, তোমার সারভাইবের জন্য কাজে লাগবে । ছটা বাজার সঙ্গে সঙ্গে আমরা মেসিন স্টার্ট দেবো । এভরিওয়ান হাররি আপ, কুইক ।
- ঠিক ছটা বাজার সঙ্গে সঙ্গে টাইম মেশিন চলতে শুরু করলো, মুহুর্তের মধ্যে মাস্কের চোখ ঝাপসা হতে শুরু করল, তারপর ম্যাস্কের চোখের সামনে পৃথিবী উল্ট দিকে ঘুরতে শুরু করল । কতক্ষন এই প্রসেস চললো তা সঠিক বলা না গেলেও বেশ খানিকক্ষণ পর মাস্ক দেখলো সে একটা ফাঁকা মাঠের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে । পশ্চিমে অস্তমিতো সূর্যের রোদ রাস্তায় পরে চিকচিক করছে ৷আকাশে বক,হাঁসুলী উড়ে যাচ্ছে তাদের গন্ত্যবের দিকে, বিশ্রাম হিন ভাবে, যদিও এসব দেখা মাস্কের কাজ নয় ৷ কোনো প্রকৃতি প্রেমি, বা সাহ্যিতিকের কাছে এইসব দৃশ্যের মূল্য অনেক, সময় নষ্ট না করে সামনের রাস্তার দিকে এগিয়ে গেলো, রাস্তার উপরেই একটা ছোটো চায়ের দোকান । সেখানে বেশ কয়েক জন লোক ভিড় করে চা খেতে খেতে টিভি দেখছেন ।
মাস্ক- দাদা, একটা চা দেবেন ।
চা- এই ফুঁটছে,স্যার পাঁচ মিনিট বসুন দিচ্ছি ।
-সামনে টিভি তে দুটো রাজনৈতিক দলের তরজা চলছে আর সেটাই বেশ মজিয়ে মজিয়ে গোগ্রাসে গিলছে উপস্থিত লোক জন । নিচে দিয়ে হেডলাইন যাচ্চে আজ করনা আক্রান্তের সংখ্যা পাঁচ, এমন সময় এক ভদ্রলোক বলে উঠল
ভোম্বল- হ্যারে পাঁচু কালকে যেনো কতো জনের করোনা হয়েছিল?
পাঁচু- তিন জনের, আরে এটা ওই সামান্য জল সর্দি, সিজেন চেঞ্জে এরকম হামেশাই হয়, ছাড়োতো ওসব কথা, বুঝলে ভোটতো আর তিন মাস বাকি, তা কি হালচাল বুঝছো ভোম্বল দা ।
মাস্ক- আপনাদের এই কেয়ার লেসিংএর জন্য আজ পৃথিবীর এই অবস্থা, আপনারা এক একজন ক্রিমিনাল মাইন্ডেড । আপনারা জানেন এই আজ পর্যন্ত ৯০০০কোটি মানুষ মারা গেছে পৃথিবীতে ।
ভোম্বল- অ্যা্ঃ .. বলি পৃথিবীতে মোট মানুষের সংখ্যা জানা আছে ? দেখে তো শিক্ষিত মনে হয় এরকম আলটপকা কথা বলে কি...
পাঁচু-আরে পাতাটাতা খেয়ে আছে বুঝলে ।
- মাস্ক বুঝলো সে বড় একটা ভুল করে ফেলেছিলো । কারন তার পেড়িয়ে আসা অতীত এই সব মানুষের সেটা ভবিষ্যৎ । আর কোনো কথা না বাড়িয়ে চা খাওয়ায় মনযোগ দিলো । ঠিক তখনি টিভিতে বড় বড় করে হেডলাইন এলো চোদ্দদিন সম্পূর্ণ লকডান, বন্ধ থাকবে পরিবহন, দোকান পাসাড়ি সব । মাস্ক মনে মনে ভাবলো তাকে এখুনি স্বাস্থ সংস্থার উচ্চ দপ্তরে যোগাযোগ করতে হবে সেইমতো পড়ের দিন মাস্ক ওয়ার্ড হেলথ এশোশিয়েশান জেনেভায় একটা এপ্যয়ন্টমেন্ট ফিক্স করল ।
মাস্ক- স্যার আমি করোনা ভাইরাস নিয়ে রিসার্চ করে যেটা বুঝেছি আমাদের এখুনি সাবধান হতে হবে, না হলো খুব বড় বিপদ আমাদের সামনে অপেক্ষা করছে । এই নিন আমার যাবতীয় রিপোর্ট ।
তেদরস- হ্যা, সেটা বুঝতে পাড়ছি, রোগটার ভংঙ্কর সংক্রমক । কিন্তু এর মারন ক্ষমতা খুবই কম ।
মাস্ক- না না, আমার রিপোর্টটা দেখুন, এই ভারইরাস ঘন ঘন মিউটেড হয়ে এক অপরাজেয় শক্তিতে রূপান্তরিত হবে, একে আমাদের সমূলে বিনাশ করতে হবে ।
তেদরস- হুম, আপনার রিপোর্টে যা দেখছি সত্যি যদি এমনটা হয় তাহলে তো ঘোর বিপদ ।
- মাস্ক আর ওয়াল্ড হেলথ এশোশিয়েশানের সিইওর এই আলোচনার মাঝেই একজন কর্মরত মহিলা এগিয়ে এসে বললেন
লেডি অফিসার- স্যার ইটলিতে আজ ভংঙ্কর অবস্থা, প্রচুর মানুষ এফেক্টেট হয়েছে, আর তাদের অধিকাংশই বৃদ্ধ ।
মাস্ক- দেখলেন আমার রিপোর্টে আমি তাই দেখিয়েছি, প্রথমে অধিকাংশ বয়স্করা এফেক্টটেড হবেন, তার পর আস্তে আস্তে সমাজের নানা স্তরে ছড়িয়ে পড়বে, পরপর ওয়েভ আসতেই থাকবে ।
তেদরস- কোনো সমাধান?
মাস্ক- আছে, আমাকে একটু খালি সাহায্য করূন, আমি কালকে ইতালি যাবো তারপর ওখানে মানুষের মধ্যে মুখে আবরন ঢেকে বাইরে চলাফেরা করার অভ্যেস তৈরি করব ।
তেদর্রস- কিকরমক আবরন?
মাক্স- বিশেষ কিছুই নয় একটা কাপরের লেয়ার যেটা ভাইরাসকে হিউম্যান বডিতে এন্ট্রি হতে দেবে না, আর হ্যা কালকেই আপনি এটাকে মহামারী রোগ ঘোষণা করে দেবেন । সর্বত্র লক ডাউনের পরামর্শ দিন ।
- মাস্ক পরদিন থেকে বিরাম হিন ভাবে মুখ বন্ধ কাপর মানুষের মধ্যে বিতরণ করতে শুরু করল আর তার সাথে সচেতনা মূলক প্রচার । পৃথিবীর কোনায় কোনায় ঘুরে ঘুরে সবার মধ্যে মুখোবন্ধ পড়ার অভ্যাস তৈরি করতে লাগল ।
মাস্ক- দাদা এটা সব সময় মুখে পড়ে থাকবেন, আর বাড়ির সকলকেও পড়াবেন, শুধু মাত্র খাবার সময় মুখ থেকে খুলে হাত ধুয়ে খাবেন আবার তারপর মুখ ঢেকে নেবেন । তাহলেই আমরা এই লড়াই জিততে পাড়ব ।
দাদা- নাম কি ?
মাস্ক- মাস্ক ।
দাদা- মানে সবসময় আমাদের মাস্ক পড়ে থাকতে হবে ।
মাস্ক- আরে আমি ভাবলাম আমার নাম জিজ্ঞেস করলে, না না এই বস্তুর নাম মাস্ক নয় ।
দাদা- তবে কি
মাস্ক- সে যাইহোক একটা নাম দিয়ে দেবেন । নামে কি আসে যায়, কামেই পরিচয় ।
দাদা- তবে এটাকেও মাস্কই নাহয় বললাম ।
মাস্ক- হে হে তা নাহয় বলবেন ।
- এভাবেই মাস্কের নাম অনুসারে মুখোবন্ধ কাপড়ের বস্তুটির নামও মাস্ক হয়ে উঠল । আর মাস্কের আক্লান্ত প্রচেষ্টায় দশ'মাসের মধ্যেই করানার প্রভাব কমতে লাগল । মাস্ক মনে মনে ভাবল নিশ্চয় এর সুফল সে ফিরে গিয়ে দেখতে পাবে । আজ অনেকদিন পরে একটু বিশ্রাম নিতে বড্ড মন চাইলো মাস্কের । পায়ে হেঁটে একটা নির্জন রাস্তাদিয়ে এলোমেলো ভাবে হাঁটতে হাঁটতে আসে পাশের পরিবেশ দেখতে লাগল । এই সবুজাভ পরিশেষে সে আগে কখনোই দেখেনি, কারন তার সময়ে পৃথিবীতে উদ্ভিদের কোনো অস্তিত্ব আর নেই সবটা ক্রঙ্কিটের চাদরে ঢেকে গেছে, চরা দামে অক্সিজেন কিনতে হয় । আর এখন যেমন নদী দিয়ে অবিরাম জলের স্রোত বোয়ে যায়, সমুদ্রে জোয়ার ভাটা খেলে কিন্তু তাদের এখন জল হাইড্রোজেন আর অক্সিজেনের বিক্রিয়া ঘটিয়ে তৈরি করতে হয়, নদী সমুদ্র তো দুর কোনো ছোটো জলাশয়ে অস্তিত্বও নেই । সামনে আবার সেই চায়ের দোকানটা দেখতে পেয়ে তার টেবিলে বোসে একটা চায়ের অর্ডার করল । এখন টিভিতে একটা স্টেজ শো চলছে, গায়ক মঞ্চের মাঝে দাঁড়িয়ে গাইতে শুরু করল (আজ থেকে এক হাজার শীত বসন্ত শেষে এই পথেই যদি আসি আবার…সঙ্গে সেই স্মৃতি ভার রঙ চটা সেই গীটার।। সেই অহংকার আগুন সেই জোয়ার, হয় তো সব থাকবে সেই আগেকার মতই পাব কি দেখা রাজশ্রী তোমার……) ম্যাস্কের মাথা কিছুক্ষনের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেল, গায়ক বলে কি! মাস্ক ভাবল তাহলে সে নিজেই তো ১০০০বছর পিছিয়ে এসেছে, মানে গায়ক যেটা বললেন তার উল্টো হলেও এমটাতো হতেই পারে, সেও কি এখন তার কোনো পুরনো প্রেম খুঁজে পাবে, তার রাজর্ষির দেখা পাবে । আবার পরক্ষনেই নিজের মনে হেঁসে উঠে ভাবলো "হুস এসব আবার হয় নাকি" । সঙ্গে সঙ্গে হাতের ওয়াকিটকি রিসর্ট ওয়াচটা টিং টিং করে বেজে উঠলো, মাস্ক চায়ের দোকান থেকে একটু দুরে সরে গিয়ে বলল ।
মাস্ক- হ্যালো স্যার
প্রফেসর উবের- কি ভাবছিলে মাস্ক, তোমার অতীত দেখতে পাবে কিনা?
মাস্ক- এটা যদি সম্ভব হতো মন্দ হতো না
প্রফেসর উবের- সম্ভব সম্ভব, আমি স্কিপ করে দেখলাম তোমার অতীত তোমার সামনেই আছে ।
মাস্ক- মানে
প্রফেসর উবের- এই রাস্তা ধরেই সাজা চলে যাও, তারপর একটা বড় অশত্ব গাছের নিচে একটা পুরনো ডাক বাক্স দেখতে পাবে ওখানে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করো । আর হ্যা যেটা দেখতে চলেছ তার জন্য মনকে শক্ত করো ।
মাস্ক- স্যার বলছিলাম আমার কাজ কেমন দেখলেন? ভালো কিছু আশা করতেই পারি কি ।
প্রফেসর উবের- একসেলেন্ট জব মাস্ক, আশাকরি তুমি ফিরে এসে নিলাভ পৃথিবী দেখতে পাবে, ও হ্যা কাল সকালে তোমার ফেরার দিন তৈরি থেকো, কারন ফিরতে তো আবার দু মাস লাগবে
- চা ওয়ালা দোকান থেকে মুখ বাড়িয়ে মাক্সকে চায়ের জন্য ডাকলেন..
চা- স্যার কোথায় গেলেন.. চা রেডী ।
- মাস্ক অনেকটা কৌতুহলের সঙ্গে তারাতারি করে চা খেয়ে প্রফেসরের কথামত হাঁটা শুরু করল । বেশ খানিকটা যাওয়ার পর চোখে পড়ল একটা প্রাচিন অশ্বথ্ব গাছ আর তার নিচে ছোটো একটা পিলারে ঝুলছে মড়চে পড়া একটা ডাকবাক্স । ম্যাক্স অশত্ব গাছের নিচে বাঁধানো চাতালে বসে অপেক্ষা করতে লাগলো । কিছুক্ষণের মধ্যেই একজন মেয়ে ডাকবাক্সের পাশে এসে দাঁড়াল, ভেনাস রংয়ের কুর্তি, তার সাথে ম্যাচিং করা বাদবাকি সমস্ত সাজপোশাক, এমনকি মুখোবন্ধনী মানে যার মাস্কের নামে নাম দিয়েছে মানুষে সেই মাস্কও ম্যাচিংকরা, সে কাকে জেনো ফোন করে তারাতারি আসার জন্য বলতে লাগল ।
মাধবী লতা- কই তুমি, তুমি সব সময় কেনো লেট করো বলোতো ?
- আরো বেশ খানিকক্ষণ পরে একজন ছেলে এলো, জিন্স প্যান্ট আর প্লুটো কালার টি শার্ট, এসেই সামনের মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরে বলল..
দ্রাবীন- সরি মাধবি, একটু লেট হয়ে গেলো, আসোলে এটিএমে ভির ছিল তাই.. মাসিমা কেমন আছেন ।
মাধবী লতা- এখনতো ঠিকই আছে, টাকাগুলো না জমা দিলে নার্সিংহোম থেকে ডিসচার্জ করবেনা ।
দ্রাবীন- এই নাও এতে পঞ্চাশ হাজার আছে ।
মাধবী লতা- থ্যাঙ্কিউ, দ্রাবীন । লক ডাউনের জন্য বাবার কাজটা চলে গেলো আর এই সময়েই মায়ের শরীরটাও খারাপ হলো, বিপদ যে কখন কোন দিক দিয়ে আসে কেউ জানেনারে । তুমি সারা জীবন এভাবেই পাশে থাক ।
দ্রাবীন- নিজের লোককে কেউ থ্যাংস বলে । বলছি শোনো না
মাধবী লতা- বলো
দ্রাবীন- একটা কিসি্
মাধবী লতা- সোনা এখন আমার মানসিক অবস্থা ঠিক নেই আর এই রাস্তায় কি অস্যভতামি ।
দ্রাবীন- প্লিজ
- দ্রাবীনের আর্জিতে মাধবিলতা সাড়া না দিয়ে থাকতে পাড়লো না, রাজপথের উপরে মিলে গেলো দুটো ঠোঁট । মাস্ক এতক্ষণ দুর থেকে সবটা দেখছিলো, চুম্বনের দৃশ্য দেখে মাস্কের চোখ ঝাপসা হয়ে গেলো, চোখ বন্ধ করে দেখতে পেলো একদল লোক এসে দ্রাবীনকে গুলি করে টাকাপয়সা কেড়ে নিয়ে বাইকে করে চলে যাচ্ছে । তারপরে ঘটনা সব মনে পড়ে গেলো মাস্কের । সঙ্গে সঙ্গে মাস্ক দ্রাবিনকে বাঁচানোর জন্য যেই দৌড়ে তার কাছে যেতে গেলো ঠিক তখনই হাতের ওয়াকিটকি রিসর্ট ওয়াচটা টিং টিং করে বেজে উঠল ।
প্রফেসর উবের- মাস্ক, যা ঘটবে ঘটতে দাও, তুমি কোনো ভবিতব্য বদলাতে পারোনা ।
মাস্ক- কিন্তু আমি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে নিজের মৃত্যু কি করে দেখব ? মাধবীর এখন আমাকে খুবই প্রয়োজন
প্রফেসর উবের- মাস্ক তুমি এখন দ্রাবীনকে বাঁচিয়ে দিলে অনেক কিছুই ঘটতে পারে, তুমি এই মুহূর্তে মাস্কের যায়গায় নাও থাকতে পারে, সময়ের চাকা তখন অন্যভাবে ঘুরবে । ছেলে মানুষি করোনা ।
মাস্ক-তাহলে এখন আমি কি করব! যারা মারতে আসছে তারাই বা কেন আসছে !
প্রফেসর উবের- দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নিজের মৃত্যু দেখার সুযোগ আজ পর্যন্ত কারোর হয়েছে কি আমার জানানেই, তোমার সামনে সেই সুযোগ এসেছে, উপভোগ করো । আর যারা আসছে তারা সব লক ডাউনে কাজ হারানো মানুষ, ওদের বাড়িতেও ছোট ছোট বাচ্চা আছে, তারা ঠিকমত খেতে পাচ্ছেনা তাদের মুখের দিকে দেখে এইসব লোক এই লুঠপাঠের পথ বেচেছে, শুধু মাত্র বেঁচে থাকার তাগিদে ।
-দুটো বাইক নিয়ে চারজন লোক এসে মাধবীলতা আর দ্রাবীনের চারপাশে গোল গোল করে পাকখাওয়া শুরু করল ।
১ম লুঠেরা- এই বের কর যা মাল পত্র আছে
২য় লুঠেরা- ভালোয় ভালোয় বের কর নাতো ঠুকে দিয়ে চলে যাব ।
মাধবী লতা- কারা আপনারা ? আমাদের কাছে কিছুই নেই ।
৩য় লুঠেরা- চুপকর, আমরা সব দেখেছি তোর সাথে যে আছে ও এই মাত্র এটিএম থেকে মোটা মাল নিয়ে বেড়িয়েছে ।
৪র্থ লুঠেরা-অতো কথা না বাড়ি দুটোকেই ভোগে পাঠিয়ে দিই কি বলিস ।
দ্রাবীন-ভদ্রভাবে কথা বলুন, যান এখান থেকে নাহলে পুলিশে খবর দেবো ।
- সঙ্গে সঙ্গে একজন দ্রাবীনের পায়ের উপর দিয়ে বাইক চালিয়ে দিল, আর একজন মাধবী লতার হাত থেকে টাকার ব্যাগটা কেড়ে নিলো, মাধবীলতা কাঁদতে কাঁদতে করুন ভাবে বলল..
মাধবী লতা- প্লিজ এরোকম করবেননা এগুলো আমার মায়ের চিকিৎসার টাকা ।
- দ্রাবীন খোঁড়াতে খোঁড়াতে বাইকের পিছনে বসা একজনকে জড়িয়ে ধোরে নিলো ঠিক তখনই অপর বাইকের পিছনে যে বসেছিল সে দ্রাবীনের দিকে বন্দুকের নল ঘুরিয়ে ফায়ার করে দিল । তারপর সশব্দে বাইক চালিয়ে চোলে গেলো, রাস্তায় কাটা মুরগীর মতো ছটপট করতে করতে একসময় হৃদস্পন্দন থেমে গেলো দ্রাবীনের । চারটে চোখ দিয়ে বিরাম হীন চোখের জল গড়িয়ে পড়ছে অনবরত, দুটো মাধবী লতার আর দুটো দুরে দাড়িয়ে থাকা মাস্কের । মাস্ক আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলোনা, এর পর মাধবী লতার কি হলো সে কৌতুহল আর তার মধ্যে নেই কারন কারো কষ্টে দেখে সে কিছুই করতে পারবেনা, তাকে সবটা শুধুই দেখেই যেতে হবে । এই সবের জন্যই দায়ি একমাত্র করোনা ভাইরাস, এই ছোট্ট ভাইরাসের জন্য এরকম বহু মানুষ কাজ খুইয়ে এই অন্ধকার পথের অনুসারী । এতো খারাপ লাগার মাঝেও মাস্কের ভালো লাগার কারনও যথেষ্ট কারন কালকেই সে তার বর্তমানে ফিরে যাবে, একটা নির্মল পৃথিবী গড়ে উঠবে । লুসিয়ানা কে জড়িয়ে ধরতে পারবে, লুসিয়ানার কোলে মাথা রেখে শুতে পারবে । পরদিন মাস্ক তার ফিরে যাওয়ার রাস্তা ধরল, দু মাস পরে সে ৩০২১এ পৌঁছে যাবে ।
টাইম মেশিন বেশ কয়েক বার আওয়াজ করে অপরেশন টাইম ওভার বলে থেমে গেলো ।
মাস্ক- কি ব্যাপর স্যার? সবার মুখ এরকম গম্ভির কেন? আমাদের অপরেশন কি সাকসেসফুল হয়নি ? আমি কি কিছু ভুল করেছি?
প্রফেসর উবের- না মাস্ক তুমি যথাসাধ্য চেষ্টা করেছ এরজন্য আমরা খুব গর্বিত, কিন্তু..
মাস্ক- কিন্তু কি স্যার
প্রফেসর- দোষটা সমগ্র মানব জাতির, তারা নিজেরাই নিজেদের বিলুপ্তির কারন, তুমি ওদের মধ্যে যে মুখোবন্বনী পড়ার ভালো অভ্যাস তৈরি করে এসেছিলে সেটা তারা ঠিকমতো পালন করেনি, যে যার মত কেয়ার লেস হয়ে মুখোবন্ধনী খুলে ঘুরে বেড়িয়েছে, পার্টি করেছে, উৎসব করেছে, মিটিং মিছিল সব সব, করোনাকে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য ঠিক যা যা প্রয়োজন ছিল মানুষ সব করেছে । ওয়েল ডান মাস্ক তুমি তোমার বেস্ট দিয়েছো । এখন যাও একবার লুসিয়ানাকে শেষ বারের জন্য দেখে আসো, ওর প্রান এখনো তোমাকে একটি বার দেখার জন্য সচল আছে, দেরি করোনা যাও । করোনা ওকেও গ্রাস করেছে ।
মাস্ক-লুসিয়ানা !
- যতদ্রুত সম্ভব মাস্ক লুসিয়ানার কাছে গেলো, লুসিয়ানা এখন একটা কাঁচের সুপার টেকনোলজি আস সি ইউ বেডে শুয়ে, মাস্ক প্রায় পাগলের মতো চিৎকার করে উঠল..
মাস্ক- লুসিয়ানাআআআআআআআআ
-কাঁচের ওপার থেকে লুসিয়ানা কোমল ভাবে একবার মাস্কের দিকে দেখলো তারপর মুখে একটা বাঁকা হাসি নিয়ে বলল
লুসিয়ানা- মাস্ক আমরা আমাদের অতীত পরিবর্তন করতে কখনই পারবোনা, যা ঘটে গেছে তা গেছেই, কিন্তু ভবিষ্যত আমরা চাইলেই সুগম করতে পারি, কারন বর্তমানের কর্মের ফলই ভবিষ্যতে, তাই তোমার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করার পথ তৈরি করো । খামখা অতীত নিয়ে পড়ে থেকোনা, আমি চললাম, আমার পথচলা এখানেই শেষ, বাকিটা তোমাকে একাই করতে হবে । আমি জানি তুমি পারবে, আমি তোমাকে বিজয়ী দেখতে চাই, কিন্তু কিভাবে করোনার সাথে জীতবে সেই পথ তোমাকে ঠিক করতে হবে । আমি দুর থেকে তোমাকে দেখব আর যেদিন তুমি জয়ী হবে আমি না হয় একাই সেলিব্রেট করব ।
@
*গল্পের মধ্যে বানান গত বা ভাষা গত ত্রুটি থাকতে পারে, কারন এটি এখন কোনো প্রকাশক সংস্থা বিশ্লেষণ করেনি অথবা টাইপিং দ্বারা ভুল হতে পারে ।
*কপিরাইট না থাকলে গল্পের কনোরুপ প্রকাশন, বৈদ্যুতিং সংস্করণ এবং সেটা শেয়ার করা কপিরাইট অ্যাক্টে দন্ডনীয় অপরাধ ।
*গল্পে উল্লেখিত স্থানগুলি বাস্তবিক হলেও, মূল গল্পটি কাল্পনিক ।
কপিরাইট হ'ল এক ধরণের বৌদ্ধিক সম্পত্তি যা তার মালিককে সাধারণত সীমাবদ্ধ সময়ের জন্য সৃজনশীল কাজের অনুলিপি তৈরি করার একচেটিয়া অধিকার দেয়। সৃজনশীল কাজটি একটি সাহিত্যিক, শৈল্পিক, শিক্ষামূলক বা সংগীত আকারে হতে পারে।