11/09/2021
_____বিদ্বজ্জন কী বলেন?
___________________
লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, ভালবাসা বা প্রেম স্বরূপ তিনি। তাঁর প্রেমের আকর্ষণেই লক্ষ লক্ষ মানুষ ছুটে আসছে, বাঁধা পড়ছে সেই প্রেমডোরে। টাকা দিয়ে বা অন্য কোন প্রলোভন দেখিয়ে শ্রীশ্রীঠাকুর মানুষ সংগ্রহ করেননি। তাঁকে কেন্দ্র ক'রে আজ যে বিরাট গণজাগরণ, তার মূলে আছে তাঁর ঐশী প্রেমের আকর্ষণ। ঐ আকর্ষণে ছুটে এসেছে ভারতের সর্ব্বস্তরের মানুষ, এসেছে সাগরপারের নরনারী। তাহলে এককথায় তাঁর উত্তরটি বলতে গেলে— তিনি ভালবাসা ব্যয় ক'রে মানুষ আয় (সংগ্রহ) করেছেন। ছোট্ট দুটি শব্দ, কিন্তু কী বিশাল অর্থবাহী, কত সুন্দর ও সার্থক এর প্রয়োগ।
আমরা বিরক্ত হলে অনেক সময় মানুষকে তার মুখের উপর কড়া কথা ব’লে দিই। তাতে তার মনে কতখানি ব্যথা লাগল কি লাগল না তা' নিয়ে আমরা মাথা ঘামাই না। কিন্তু শ্রীশ্রীঠাকুরকে ঐ জাতীয় কড়া কথা বলতে কখনও শোনা যায়নি। বিরক্ত তাঁকে কম লোকে করেনি, এমনকি তাঁর সঙ্গে দুর্ব্ব্যবহারও করেছে। কিন্তু শ্রীশ্রীঠাকুর কখনও উলটে দুর্ব্ব্যবহার করেননি। বরং তাদের সাথে এমন সদব্যবহার করেছেন, এমন দরদী ভাষায় কথা বলেছেন যে ঐ খারাপ ব্যবহার করার কথা মনে ক'রে তাদের অন্তরে অনুতাপ জেগে উঠেছে। শ্রীশ্রীঠাকুর প্রায়ই বলতেন, 'আমি কাউকে কড়া কথা বলতে পারি নে, বলতে গেলেই মনে হয়, ও যদি কাল ম'রে যায় তবে তো আমার বড় হবে।' কড়া কথা না বলতে পারার পিছনে এতখানি মৰ্ম্মস্পর্শী ভাবনার কথা কি আমাদের স্বপ্নেও মনে আসে?
এই সব কথা একদিন চলাকালে সৎসঙ্গের প্রবীণ কৰ্ম্মী শরৎচন্দ্র হালদার বললেন, ‘হজরত রসুলের জীবনীতে পাওয়া যায়, তিনি কখনও কারো সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেননি। তাঁর চাকর বলত, আমি কত ভুল করেছি, কত অন্যায় করেছি, তা সত্ত্বেও প্রভু কোনদিন আমাকে বকাঝকা করেননি।' শুনে শ্রীশ্রীঠাকুর উৎফুল্ল হয়ে ব’লে উঠলেন, ঐ দ্যাখ্, রসুলের যে নিজস্ব চাকর, যে তাঁর সঙ্গে সবসময় থাকত, সেও বলেছে যে রসুল কোনদিন দুর্ব্ব্যবহার করেননি।' নিজ আচরণের এই সমর্থনটি পেয়ে শ্রীশ্রীঠাকুর বেশ খুশি হয়েছিলেন।
একদিন আশ্রমের দুইটি কর্ম্মীর মধ্যে বচসা হচ্ছে। হ'তে হ'তে রাগের মাথায় ক-বাবু খ-বাবুর মাথায় খড়ম দিয়ে সজোরে মারলেন। মাথা কেটে গিয়ে রক্তপাত হ’ল। মনঃকষ্টে খ-বাবু এসে শ্রীশ্রীঠাকুরের কাছে সব জানালেন। পিছনে-পিছনে ক-বাবুও এসেছেন। এতক্ষণে তিনি বুঝতে পেরেছেন তাঁর ওরকম মারাটা ঠিক হয়নি। ঠাকুর সব শুনে খ-বাবুকে দেখিয়ে ক-বাবুকে বললেন, ‘তুই জানিস নে ওর মা পাগল?’ ক-বাবু বললেন, “আজ্ঞে জানি।' বেদনাহত কণ্ঠে শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন, “তাহলে? তোদের কাছ থেকে কি আমি এতটুকু সহানুভূতি আশা করতে পারি নে?' ক-বাবু লজ্জায় অধোবদন৷ শ্রীশ্রীঠাকুরের কথাগুলি তাঁর ভিতরটা ওলট-পালট ক'রে দিয়ে গেছে। তিনি নীরবে অশ্রু বিসর্জ্জন করতে লাগলেন।
সামান্য কয়েকটি শব্দপ্রয়োগের দ্বারা অপরাধীকে অনুতাপদগ্ধ ক'রে তোলার এমন হৃদয়গ্রাহী উদাহরণ জগতে একমাত্র পরমপুরুষের সন্নিধানে ছাড়া আর কোথাও কি পাওয়া সম্ভব?
ইং ১৯৬২ সালে পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন অর্থমন্ত্রী শঙ্করদাস ব্যানার্জ্জী ঠাকুর -দর্শনে আসেন। আশ্রমের বিপুল খরচ কিভাবে নির্ব্বাহ হয় তা' জানার উদ্দেশ্যে তিনি শ্রীশ্রীঠাকুরকে জিজ্ঞাসা করলেন, 'আপনার আয় কী?’
শ্রীশ্রীঠাকুর জবাব দিলেন, 'আয় আমার মানুষ। উত্তরটা প্রশ্নকর্তার কতটা বোধগম্য হ’ল তিনিই জানেন। একটু পরে তিনি আবার জিজ্ঞেসা করলেন, 'আর আপনার ব্যয়?’ সঙ্গে সঙ্গে ঐ একই সুরে শ্রীশ্রীঠাকুরের উত্তর---- ''ব্যয় আমার ভালবাসা।''
-----***-----
Compiler : Sri Mridul Bhowmik
Basugaon
Assam.
( ----শ্ৰীদেবীপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় লেখা ---- "প্রিয়পরম" --শ্রীশ্রী ঠাকুরের জীবনকথা" গ্ৰন্থ থেকে নেওয়া।)
*
ঠাকুর বাড়ির আঙিনায়....
___ মণিলাল চক্রবর্তী।
সহজিয়া
______________________________
পরমপিতা কে?
শ্রীশ্রীঠাকুর সকাল সাড়ে সাতটার সময় নিরালা-নিবেশে ব'সে আছেন। ৩রা ডিসেম্বর, ১৯৬৪। সুশীল বসুদা,বব কামিংদা, এবং আরো অনেকে আছেন।বব কামিংদা বললেন--- শুনেছি ছোটবেলায় মা আপনাকে মারতেন আপনি তখন কী করতেন?
শ্রীশ্রীঠাকুর---আমি মা ছাড়া থাকতে পারতাম না। আবার মায়ের কাছেই ছুটে যেতাম। মায়ের গুরুদেব ছিলেন হুজুর মহারাজ। তাঁকে তিনি পরমপিতা বলতেন, মায়ের দেখাদেখি আমিও তাঁকেই পরমপিতা বলতাম। তাঁর ফটোও ছিল।
বব কামিংদা--- পরমপিতা কে?
ঠাকুর ঃ পরমপিতা মানে Supreme Father (পরমপিতা) যার থেকে আমরা সবাই এসেছি। (তামাক খেতে খেতে) আমি অনেক সময় ঐ ফটোর কাছে গিয়ে কাঁদতাম। মানুষের দুঃখকষ্টের কথা জানাতাম।বসতাম, ঐ ফটোর সামনে চোখ বুজে। আমার মনে হত আমি সেই ফটোর ভিতরে ঢুকে পড়তাম। আবার বের হতাম। পিছনে,বামে,ডানে সব দিক দিয়ে ঢুকে পড়তাম। অবশ্য এটা আমার vision (দর্শন)। কি কই পাগলের মত!
নিজের এই কথাগুলিকে পাগলের মত বলে চালানোর চেষ্টা করলেও আদতে তা' কিন্তু না। বরঞ্চ, এই কথাগুলি চরম ইঙ্গিতবাহী। পরমপিতার স্বরূপ যে ঠাকুরই। সেটাই আবার একটু অন্যভাবে বুঝিয়ে দিয়ে গেলেন দয়াল।
★★■ ব্যবসার তুক ও শ্রীশ্রীঠাকুর ■★★★
ব্যবসায়ে উন্নতি করতে গেলে প্রধান বুদ্ধি হ'লো সেবাবুদ্ধি। তুমি যদি কেবল নিজের লাভের দিকে লক্ষ্য রেখে চল, তাতে কিন্তু কৃতকার্য্য হতে পারবে না। তোমার সবসময় লক্ষ্য রাখতে হবে,যাতে মানুষের প্রয়োজন পরিপূরণ করে তার ভিতর-দিয়ে তুমি লাভবান হতে পার। আর আমি যে বলেছি ' মানুষ আপন, টাকা পর/ যত পারিস মানুষ ধর'-- ব্যবসায়ীদের এই জিনিষটা খুব রপ্ত করা দরকার। তোমার কাছে এসে মানুষ যদি আপনজনের মতো ব্যবহার পায়,তাহলে কিন্তু খরিদ্দাররা আপনার থেকে তোমার দোকানে ছুতে আসবে। মানুষ যদি মানুষ হয়, তাহলে তার কোনদিন পয়সার অভাব হয় না। আমি বলি--"দেখিবে কর্তব্য যাহা জ্ঞানের আলোকে/সেই ধর্ম্ম সেই পূণ্য,চল লক্ষ্য করি সেই পথ।"
(আঃপ্রঃ-১৯/২৩-০৭-১৯৫০)
■ ব্যবসা চাকরী যে যা' করুক
ইষ্টকৃষ্টি কুলমর্য্যাদা-
বলি দিয়ে বৃত্তিলোলুপ
হয় যে জানিস্ִ ইতরজাদা।(১)
■ খেটে-খুটে আয় যে করে
মা লক্ষ্মী তা'য় আগলে ধ'রে।(২)
■ লাভ দেখিয়ে করলে কাজ
অর্থ পরায় মাথায় তাজ।(৩)
■ সময়-মতন ভালো জিনিস্
অল্প দরে নিস্ִ রে কিনে,
প্রয়োজনটি দেখলে চড়া
সুবিধায় দিস্ִ বাজার চিনে। (৪)
■ ব্যবসাই যদি করতে চাস্ִ
ব্যবহার আগে শেখ্ִ ,
মানুষে করিস্ִ স্বস্তিভরা
র'বে না দুঃখের রেখ্ִ। (৬)
■ মানুষ সম্পদ না ক'রে তুই
টাকা-স্বার্থী হ'বি যত,
দুঃখ অভাব-দুর্ব্বিপাকে
ততই রে তুই থাকবি রত। (৭)
■ হাতে মজুত না থাকলে তুমি
বাঁধা-ওয়াদা করবে না,
ওয়াদা খেলাপ হ'লেই কিন্তু
প্রত্যয়ের মান থাকবে না। (৮)
■ মাথার ঘাম পায়ে ফেলে
লাভ দেখালে পয়সা মেলে। (১১)
■ আসল ভেঙ্গে যে-জন খায়
ব্যবসায়ে সে চুলোয় যায়। (১৩)
■ লাভের বেশী ক'রলে খরচ
টিকতে জেনো পারবে না,
দেনায় ব্যবসা ডুবেই যাবে
নিজেরও কিছু রইবে না। (১৪)
■ লাভের আধা করবি খরচ
সেইটি জানিস্ִ সমীচীন,
এ না ক'রে ধরলে ব্যবসা
দিনে-দিনে হ'বিই ক্ষীণ। (১৮)
■ কর্জ্জ দিয়ে উপকার
সুদের লোভে চুরমার।(২০)
■ ধার যদি দিস্ এমন দিবি
লাগবে না গায়ে কোনদিন,
ব্যবসা-পথে চললে এমন
হ'বিই নাকো শক্তি হীন। (২২)
(অনুশ্রুতি-১/ব্যবসায়)
■ অর্দ্ধেক ব্যবসা থেকে
দরকার হলে নিতে পারিস্ִ
এরও বেশী প্রয়োজনে
ঋণ না করে খেটে তুলিস্ִ।
■ যে-ব্যবসায় যার জীবিকা
বৈদ্য,উকীল,মহাজন
ইষ্টগুরুর সেবা বিমুখ
হলেই জানিস্ִ তার পতন।
(অনুশ্রুতি)
[ব্যবসায়ের পঞ্চনীতি]
১) নিয়মিত ইষ্টভৃতিপরায়ণ হ'য়ে ভিতর-বাইরে মিষ্ট সেবাপ্রাণ সদ্ব্যবহার।
২) দৈনন্দিন হিসাবপত্র সহ উন্নতিমুখী লাভজনক পরিচালনা।
৩) প্রত্যক্ষ পর্য্যবেক্ষণ।
৪) কথার খেলাপ না করা।
৫) লাভের অন্ততঃ ১/৪ অংশ নিয়মিত মূলধনে যোগ করা।
#প্রশ্ন: # ইষ্টপ্রাপ্তির_ক
থা_যে_বলা_হয়_সেটা_কি
#শ্রীশ্রীঠাকুর: --প্রাপ্তি মানে আপ্তি। তাঁর হয়ে যাওয়া। তাঁকে আপন করে নেওয়া তাঁকে সেবা করা, সুখী করা, তাঁর নীতি-বিধি, চলন-চরিত্র নিজ বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী আয়ত্ত করা, আর এতেই উৎকর্ষ হয়।।
#সুত্র:- [ #আঃপ্রঃ; ১৪/১০,৯,১৯৪১]। .
\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\
# প্রশ্ন: # ইষ্টে_টান_হলে_ক
েমন_হয়_মানুষ ?
# শ্রীশ্রীঠাকুর:—ইটে টান হ'লেই, তাঁতে লেগে থাকতে ইচ্ছা করে, যুক্ত থাকতে ইচ্ছা করে। তার অন্তরায় যা' তাকে কিছুতেই মানুষ আমল দেয় না। ভক্ত সর্বদা তাঁর পরিপালন,পরিপােষণ ও পরিপূরণে ব্যাপৃত থাকতে না পারলে অস্বস্তি বােধ করে।আর এগুলি করে সে কায়মনােবাক্যে। সতী স্ত্রী যেমন স্বামীময় হ'য়ে স্বামী ও তার পরিবেশের সেবা করে, সে-ও তেমনি ইষ্টময় হ'য়ে যেমন ইষ্টসেবা করে, তেমনি সেবা সহানুভূতি ও যাজনে পরিবেশকে মুগ্ধ করে সবাইকে ইষ্টে যুক্ত ক'রে তুলতে আপ্রাণ হয়। ভক্তিতে যােগ, কর্ম, জ্ঞান আপসে আপ হয়। আত্মনিয়ন্ত্রণের জন্য কসরত করা লাগে না। সমস্ত বাধাকে সে অতিক্রম ক'রে চলে—তা’ কি ভিতরের কি বাইরের।।
# সুত্র:- [ # আঃপ্রঃ ;