10/10/2024
প্রশ্ন:
মৌখিক বা লিখিতভাবে কাউকে গালি দেওয়ার শাস্তি ও ইসলামিক বিধান কী? কিছু মানুষ আছে যারা মজা করে সব কথার মধ্যে গালি ব্যবহার করে। এ সম্পর্কে শরিয়তের নির্দেশনা কী?
উত্তর:
ইসলামের দৃষ্টিতে, গালি দেওয়া—মৌখিক হোক বা লিখিত—একটি মারাত্মক গুনাহ এবং এটি ইসলামে নিষিদ্ধ। একজন মুমিনকে গালি দেওয়া "কবিরা গুনাহ" হিসেবে বিবেচিত হয়, যা মানুষকে পাপের দিকে নিয়ে যায় এবং একজন মুনাফিকের বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করে।
১. মুমিনকে গালি দেওয়ার নিষেধাজ্ঞা:
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
"মুমিনকে গালি দেওয়া হলো ফিস্ক (গুনাহের কাজ), এবং তার বিরুদ্ধে লড়াই করা হলো কুফর"।
[সহিহ বুখারী: ৪৮, সহিহ মুসলিম: ৬৪]
এই হাদিসে গালি দেওয়াকে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে, এবং এটিকে ফিস্ক তথা গুরুতর অন্যায় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
২. গালি দেওয়া মুনাফিকের বৈশিষ্ট্য:
গালি দেওয়া এমন একটি কাজ, যা মুনাফিকদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন:
"মুনাফিকের চারটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে: যখন সে কথা বলে, তখন মিথ্যা বলে; যখন সে প্রতিশ্রুতি দেয়, তখন তা ভঙ্গ করে; যখন তাকে আমানত দেওয়া হয়, তখন সে বিশ্বাসঘাতকতা করে; এবং যখন সে ঝগড়া করে, তখন গালি দেয়।"
[সহিহ বুখারী: ৩৩]
৩. গালি গালাজের শাস্তি:
গালি দেওয়ার পাপের শাস্তি গালি দেওয়ার প্রথম ব্যক্তির উপর বর্তায়, যতক্ষণ না মজলুম (অন্যায়ভাবে গালি পাওয়া ব্যক্তি) প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য তার সীমা অতিক্রম করে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
"যারা একে অপরকে গালি দেয়, তাদের মধ্যে প্রথম যে গালি দেয় তার ওপর পাপ বর্তাবে, যতক্ষণ না মজলুম প্রতিশোধ নিতে গিয়ে সীমা অতিক্রম করে।"
[সহিহ মুসলিম: ২৫৮৭]
৪. কোরআনের নির্দেশনা:
কোরআনে আল্লাহ তাআলা স্পষ্টভাবে মানুষকে অন্যদের সাথে সুন্দরভাবে কথা বলার আদেশ দিয়েছেন এবং গালিগালাজ থেকে বিরত থাকতে বলেছেন:
"তোমরা নিজেদের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ সকল প্রকার অশ্লীলতা থেকে বেঁচে থাকো।"
[সূরা আনআম: ১৫১]
"তোমরা তাদের সাথে সুন্দরভাবে কথা বলো।"
[সূরা বাকারা: ৮৩]
৫. মজা করে গালি দেওয়ার প্রভাব:
অনেক সময় মানুষ মজা করার জন্য গালি দেয়, কিন্তু ইসলামে এর কোন জায়গা নেই। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
"তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি হলো সেই ব্যক্তি, যার ভাষা এবং হাত দ্বারা অন্যরা নিরাপদ থাকে।"
[সহিহ মুসলিম: ৪১]
৬. ফিকহী দৃষ্টিকোণ:
গালি দেওয়ার মধ্যে রয়েছে:
1. অহংকার ও গর্ব প্রকাশ, যা ইসলামে নিষিদ্ধ।
2. অন্যকে অপমান করে আত্মতৃপ্তি লাভ করা, যা একজন মুমিনের আদর্শের সাথে সম্পূর্ণ বিরোধী।
ইসলামের দৃষ্টিতে গালি দেওয়া এবং অন্যকে অপমান করা এমন একটি কাজ, যা মানুষের মনুষ্যত্ব এবং ইসলামের মূল শিক্ষাকে লঙ্ঘন করে।
৭. গালি দেওয়ার কবিরা গুনাহ:
গালি দেওয়া ইসলামে একটি বড় গুনাহ। এমনকি মজা করেও গালি দেওয়া শরিয়তের দৃষ্টিতে গুরুতর অপরাধ। তাই, যে ব্যক্তি গালি দেওয়ার অভ্যাসে অভ্যস্ত, তার উচিত তাৎক্ষণিকভাবে তওবা করা এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা।
উপসংহার:
ইসলামে গালি দেওয়া কঠোরভাবে নিষিদ্ধ, এবং এটি মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্যের অন্তর্ভুক্ত। যেকোনো পরিস্থিতিতে, মুমিনদের উচিত তাদের জিহ্বা ও কলম দিয়ে অন্যদের প্রতি সম্মানজনক ভাষা ব্যবহার করা। গালি দেওয়ার পাপ বড় এবং তাৎক্ষণিকভাবে তওবা করা উচিত। আল্লাহর নির্দেশিত পথে চলা এবং সুন্দর ভাষার চর্চা করা প্রত্যেক মুসলিমের দায়িত্ব।
واللہ اعلم بالصواب