23/10/2025
|| শ্রীশ্রীঠাকুরের শুভ ভ্রাতৃদ্বিতীয়া উদ্যাপন ||........................................................................
তথ্য সংকলন ও বিশ্লেষণ : পরিমল চন্দ্র দাস (সৎসঙ্গী)|!২৩ অক্টোবর ২০২৫ | সোমবার | ৬কার্তিক ১৪৩২ | তিথি :ভাইফোঁটা, ভাতৃ-দ্বিতীয়া |
----------------------------------------------------------------------
ভূমিকা—
ভারতীয় ঐতিহ্যের এক পবিত্র ও হৃদয়স্পর্শী উৎসব হলো ভ্রাতৃদ্বিতীয়া বা ভাইফোঁটা। এ দিনে বোন তার ভাইকে ফোঁটা দিয়ে দীর্ঘায়ু ও মঙ্গল কামনা করে, আর ভাই প্রতিশ্রুতি দেয় বোনের সর্বাঙ্গীন সুরক্ষার। এই পারস্পরিক প্রেম, স্নেহ ও কর্তব্যের বন্ধনই ভারতীয় পারিবারিক সংস্কৃতির অন্যতম ভিত্তি। শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র, যিনি যুগপুরুষ, প্রেমময় দয়াল ও সর্বজনের ইষ্ট, তিনি নিজ জীবনে এই ভাইফোঁটার অনুষ্ঠানে যে আচরণ ও ভাবপ্রকাশ দেখিয়েছেন, তা শুধু পারিবারিক নয়, বরং ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক তাৎপর্যে অনন্য উদাহরণ হয়ে রয়েছে।
আলোচনা প্রসঙ্গে (বিংশ খণ্ড, পৃ. ১৯১–১৯৫)
----------------------------------------------------------------------
শ্রীশ্রীঠাকুরের ভ্রাতৃদ্বিতীয়া উদ্যাপনের যে চিত্র পাওয়া যায়, তা গভীর মানবিকতা ও ঐশ্বর্যপূর্ণ ভাবের প্রতিফলন।
❝সেদিন শ্রীযুক্ত প্রমথনাথ বিশ্বাসের স্ত্রী প্রথমে শ্রীশ্রীঠাকুরকে ভাইফোঁটা দিতে আসেন। শ্রীশ্রীঠাকুর তাঁকে প্রণাম করে সাগ্রহে ফোঁটা নেন। এই দৃশ্যেই প্রকাশ পায়— ঠাকুরের বিনয়, নম্রতা ও নারী-শক্তির প্রতি শ্রদ্ধা। যিনি কোটি ভক্তের ইষ্ট, তিনি এক মায়ের কাছ থেকে ফোঁটা নিয়ে তাঁর চরণে মাথা ঠেকিয়ে বারবার প্রণাম করেন এবং দশ টাকা প্রণামী দেন—এ যেন মানবমর্যাদা ও ভক্তিসংলগ্ন সংস্কৃতির এক জীবন্ত দৃষ্টান্ত।
এরপর শ্রীশ্রীঠাকুর স্নান সেরে বড়াল-বাংলোর ঘরে এসে পুরনো পৈতা খুলে গোঁসাইদার হাতে দেন। গোঁসাইদা তাঁকে প্রথমে একটি সাদা পৈতা এবং পরে একটি সোনার পৈতা পরিয়ে দেন।❞
এই ঘটনাটি কেবল একটি আচার নয়, বরং আত্মশুদ্ধি ও নবজীবনের প্রতীক। সাদা পৈতা প্রতিফলিত করে পবিত্রতা, আর সোনার পৈতা প্রতীক হয় ঐশ্বর্য ও আধ্যাত্মিক দীপ্তির—যা শ্রীশ্রীঠাকুরের জীবনদর্শনের সঙ্গে গভীরভাবে সাযুজ্যপূর্ণ।
❞এরপর গোঁসাইদা মন্ত্রপাঠ করতে থাকেন এবং পিসীমা গুরুপ্রসাদী দেবী, যিনি শ্রীশ্রীঠাকুরের বোন, ঠাকুরকে ভাইফোঁটা দেন। এই সময় ঠাকুর ভাবগম্ভীর চিত্তে মুদ্রিত নেত্রে বসে থাকেন—এ যেন ভাইবোনের স্নেহসিক্ত সম্পর্কের মধ্যেও দিব্য ভক্তির উজ্জ্বল প্রকাশ। ফোঁটা দেবার পর পিসীমা তাঁকে নতুন কাপড় দেন; শঙ্খধ্বনি, উলুধ্বনি ও প্রণামের ধ্বনিতে পরিবেশ মুখরিত হয়ে ওঠে। এরপর পিসীমা ঠাকুরকে মধুপর্ক দেন, তিনি তা গ্রহণ করেন এবং পুনরায় পিসীমা তাঁকে প্রণাম করেন।❞
এই পুরো ঘটনাটি শুধু একটি পারিবারিক উৎসব নয়, বরং একটি আধ্যাত্মিক সাধনা—যেখানে প্রীতি, কর্তব্য, বিনয় ও ভক্তি মিলেমিশে একাকার হয়েছে। শ্রীশ্রীঠাকুর নিজ জীবনের প্রতিটি আচরণের মধ্য দিয়েই দেখিয়েছেন, কীভাবে ধর্মীয় অনুষ্ঠান মানে জীবনের প্রকাশ, সম্পর্কের পরিশুদ্ধি ও মানবিকতার বিকাশ।
। ভাইফোঁটার বিশ্লেষণাত্মক তাৎপর্য।
◑ভাইফোঁটা উৎসবের মর্মবাণী—ভাইবোনের সম্পর্ক শুধু রক্তের নয়, আত্মার বন্ধনও বটে।
◑শ্রীশ্রীঠাকুরের আচরণে দেখা যায়, তিনি নারীকে শ্রদ্ধা ও মাতৃরূপে গ্রহণ করেছেন।
◑পৈতা পরিবর্তনের মাধ্যমে তিনি দেখিয়েছেন, জীবনে নিত্য নবীকরণের সাধনা অপরিহার্য।
◑মধুপর্ক গ্রহণে প্রতিফলিত হয়েছে স্নেহ, কৃতজ্ঞতা ও ঈশ্বরের প্রীতিস্বরূপ ভোগের সংস্কার।
উপসংহার—
শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের ভ্রাতৃদ্বিতীয়া উদ্যাপন আমাদের শেখায়— ধর্ম কেবল আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং প্রতিটি সম্পর্কের মধ্য দিয়ে ভক্তি, মর্যাদা ও ঈশ্বরচেতনা প্রকাশের পথ। ভাইফোঁটার এই পবিত্র উৎসব তাই কেবল সামাজিক নয়; এটি মানবধর্মের জীবন্ত প্রতীক হয়ে চিরস্মরণীয়।
রেফারেন্স: আলোচনা প্রসঙ্গে – বিংশ খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৯১–১৯৫, প্রকাশিত ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দ।