17/11/2024
'আশির দশকের কবি নবারুণ ভট্টাচার্য এরকম ভাবনা ব্যক্ত করেছিলেন তাঁর কবিতায় 'এই মৃত্যু-উপত্যকা আমার দেশ না।' আর সাদাত হোসেন মান্টোর ছোটোগল্প 'টোবা টেক সিং' এর এক চরিত্র বিষেন সিং দেশ ছেড়ে আসার সময় নো ম্যানস ল্যান্ডে খুঁটি হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছিল। তার সামনে কাঁটাতারের বেড়া পেছনেও তা-ই। বিয়েন সিং-কে কেউ নড়াতে পারে না সেই নো ম্যানস ল্যান্ড থেকে। টোবা টেক সিং এর প্রতীক হয়ে সে ওইখানেই মৃত্যু বরণ করে। বরাক উপত্যকার অধিবাসীরাও প্রতীত নো ম্যানস ল্যান্ডে দাঁড়িয়ে! বছর আসছে বছর যায়- নেতা আসে নেতা যায় কিন্তু আজ পর্যন্ত বরাকবাসীর আত্মপরিচয় নির্দিষ্ট হল না। কেন হল না? এই প্রশ্ন আজ কঠোর বাস্তব হয়ে বরাকবাসীর সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। দেশ-বিভাগের ফলে তদানীন্তন পূর্বপাকিস্তান থেকে প্রচুর উদ্বাস্তু এখানে এসেছে। ১৯৭১ এর বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের পর বহু মানুষ আর্ত হয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছে। নেহেরু-লিয়াকত চুক্তি ও মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি মেনে কিছু সংখ্যক উদ্বাস্তুকে পুনর্বাসনও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তিনপুরুষ অতিক্রান্ত হওয়ার পরও তাদের নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠছে কেন? শ্রীহট্টীয় বাঙালিদেরে অসমিয়া উগ্র জাতীয়তাবাদীরা বারবার নির্যাতন করেছে! কখনও, বঙাল খেদা আন্দোলন, কখনও বিদেশি খেদা আন্দোলন আর এখন নাগরিক পঞ্জীয়নের নামে এক গোলকধাঁধার সৃষ্টি করেছে। নাগরিকতার সংজ্ঞা নতুন করে তৈরি হচ্ছে বাঙালিদের জন্যে! বাংলা-ভাগের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে অনেক তথ্য বেরিয়ে আসে। একটিমাত্র উদাহরণ এখানে তুলে ধরছি।
প্রবাসী ১৩৫৫, ৪৮ ভাগ ১ম আষাঢ় সংখ্যায় প্রকাশিত আসাম সরকারের কার্যকলাপ সম্বন্ধে উপস্থাপিত হয়েছে 'আসাম সরকারের কার্যকলাপে ভারতরাষ্ট্রের পক্ষে একটা জটিলতার সৃষ্টি হইয়াছে। অসমীয়াদের বাঙালি-বিদ্বেষ রাষ্ট্রে নাগরিক অধিকার সঙ্কুচিত করিতেছে- ভারতরাষ্ট্রের নাগরিকবর্গের আসাম প্রদেশে বসবাস করিবার অধিকার নিয়ন্ত্রিত করিবার শক্তি কোন প্রদেশের আছে কিনা, এই প্রশ্ন তুলিয়া চূড়ান্ত মীমাংসা করিবার সময় আসিয়াছে। শীঘ্রই গণপরিষদের যে অধিবেশন আরম্ভ হইবে সেই সময়ে বাঙালি সাম্যবর্গের অগ্রণী হইয়া এই বিষয়ে একটা সুষ্ঠু মীমাংসার চেষ্টা করা উচিত। কেবল আসাম প্রদেশেই এই সমস্যা দেখা দেয় নাই। বিহারেও তাহার একটা নগ্ন মূর্তি আমাদের জাতীয়তাবাদকে বিদ্রূপ করিয়া যাইতেছে।'
'বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ এবং প্রাবন্ধিক তপোধীর ভট্টাচার্যেয সম্পাদনায় 'বিপন্ন বাঙালি' গ্রন্থটিতে বাঙালি, বঙ্গসমাজ, বাংলা ভাষার বিপন্নতা সম্পর্কিত অনেক তথ্য উঠে আসে। বাঙালির পরিচয় আজ বিপন্ন। দেশ তাদের অস্বীকার করতে চাইছে। বাঙালির কলমে নেমে আসে প্রতিবাদ।
"তাঁর অপরাধ তিনি বাংলা ভাষায় কথা বলেন, অতএব তাঁকে জল্লাদরা তুলে নিয়ে গেল ডিটেনশন ক্যাম্পে, নীল আকাশ ক্রমশ ঘোলাটে হয়ে এল সুব্রত দে-র, এভাবে হাজার হাজার সুব্রতরা ভাসছেন বেনো জলে, আলোহীন কুৎসিত ভূখণ্ডে, মাতৃভাষায় কথা বলা অপরাধ? বাংলা কী অপরাধীর ভাষা?" -দেবাশিস চন্দের 'বধ্যভূমি' কবিতার একটি অংশে স্পষ্ট সেই স্ফুলিঙ্গ।
এই গ্রন্থটিতে প্রাবন্ধিক তপোধীর ভট্টাচার্য বাঙালির ক্ষোভের মশাল একত্রিত করেছেন।
::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::
📚 বই -:) বিপন্ন বাঙালি
✍🏽 লেখক -:) তপোধীর ভট্টাচার্য (সম্পাদক)
💰মুদ্রিত মূল্য -:) ৪৫০ টাকা
🖨প্রকাশনা -:) অভিযান পাবলিশার্স
::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::
বইটি সংগ্রহ করতে আপনাকে আসতে হবে অভিযান বুক ক্যাফে তে (পশ্চিমবঙ্গের প্রথম থিম্যাটিক বুক শপ)। চলে আসুন ১/১এ, বঙ্কিম চ্যাটার্জি স্ট্রিট, কলেজস্ট্রিট, মহাবোধি সোসাইটি ও প্যারামাউন্ট শরবতের দোকানের ঠিক মাঝখানে (কলকাতা – ৭০০০৭৩)।
আমাদের যোগাযোগের নম্বর-৮০১৭০৯০৬৫৫, খোলা থাকে সোমবার থেকে শনিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত এবং রবিবার সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। আমরা আছি আপনার জন্য সারাদিনই।