Pritisha

Pritisha My name is Eti. Follow me my page video creator��. wish me 3rd October.

একসময় কলকাতার অলিতে গলিতে ঘুরে শাড়ি বিক্রি করতেন,পরবর্তীতে তিনিই পেলেন পদ্মশ্রী-পিঠে শাড়ি ভর্তি ব্যাগ | সেই ব্যাগ নিয়েই ...
03/02/2025

একসময় কলকাতার অলিতে গলিতে ঘুরে শাড়ি বিক্রি করতেন,পরবর্তীতে তিনিই পেলেন পদ্মশ্রী-
পিঠে শাড়ি ভর্তি ব্যাগ | সেই ব্যাগ নিয়েই একসময় কলকাতার অলিতে গলিতে ঘুরে ঘুরে শাড়ি বিক্রি করতেন বীরেন কুমার বসাক | আজ বীরেন বাবুর প্রায় ৫০ কোটি টাকার শাড়ির ব্যবসা | গোটা ভারতে ছড়িয়ে আছে বীরেনবাবুর খ্যাতি | চারশো টাকা থেকে শুরু হয় কুড়ি লক্ষ টাকার শাড়ি পাওয়া যায় বীরেনবাবুর তাঁতঘরে | হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, সত্যজিৎ রায়, অপর্ণা সেন, মৌসুমী চট্টোপাধ্যায় থেকে ওস্তাদ আমজাদ আলি খান সকলেই মুগ্ধ হয়েছিলেন বীরেন বসাকের বানানো শাড়িতে | দেশের ভিভিআইপিরা নতুন ডিজাইনের ব্যাপারে প্রায়ই খোঁজ করেন ফুলিয়ার এই তাঁতশিল্পীকে | দেশ বিদেশ থেকে পেয়েছেন বহু সম্মান | ২০২১ সালে পদ্মশ্রী সম্মান পেয়েছেন বীরেন বসাক |
বাবা বঙ্কবিহারী বসাক ছিলেন তাঁতশিল্পী | মাত্র আট বছর বয়স থেকেই বীরেন বসাক বাবার কাছেই শিখতে থাকেন তাঁতশিল্পের খুঁটিনাটি | সেই সময় থেকেই বুঝেছিলেন নতুন নতুন ডিজাইন দিলে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হবে না | নতুন ডিজাইন শেখার কাজটা শুরু করেছিলেন নীরবেই | রাজ্যের নানা জায়গায় প্রদর্শনীতে পৌঁছে যেতেন বীরেনবাবু | খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতেন নতুন ডিজাইন | আর সেই নতুন ডিজাইনকেই নিজের শাড়িতে তুলে ধরেন | খুব দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে বীরেনবাবুর নিজের বানানো শাড়ি | বাড়তে থাকে চাহিদা | চাহিদা মেটাতে কলকাতার গোলপার্কে একটি শোরুম করেন তিনি | তারপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি |
শুধু তাঁত শাড়ির গণ্ডীতে নিজেকে আটকে রাখেননি বীরেনবাবু | জোর দেন ওয়াল হ্যাঙ্গিং -এর ওপর | নিরক্ষরতা দূরীকরণের নানা বার্তা থেকে নৌকাবিলাসের নানা মুহূর্ত উঠে এসেছে ওয়াল হ্যাঙ্গিং -এ | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে নিয়েও ওয়াল হ্যাঙ্গিং রয়েছে বীরেনবাবুর | কয়েকদিন আগে জামদানির কাপড়ের ওপর কৃত্তিবাস ওঝার রামায়ণকে ফুটিয়ে তুলেছিলেন বীরেন বসাক | লিমকা বুক অফ রেকর্ডে জায়গা করে নেয় তাঁর এই শিল্পকর্ম | বেশ কিছু দিন আগে অবশ্য স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর থেকে পেয়েছেন দেশের সেরা বস্ত্রশিল্পীর পুরস্কার | বস্ত্রশিল্পী ‘সন্ত কবির’-এর নামানুসারে এই পুরস্কার দেওয়া হয়। ‘সন্ত কবির’ সেই সময় কাপড় বুনতে বুনতেই কবিতা লিখতেন। তাঁরই স্মৃতিবিজড়িত এই পুরস্কার পান বীরেনবাবু | ২০০৯ সালে পেয়েছেন বস্ত্র দফতরের বিশেষ শংসাপত্র |
কিন্তু শুধুমাত্র নিজের ব্যবসাতেই সীমাবদ্ধ থাকেননি বীরেনবাবু | হস্তচালিত তাঁতের পুনরুজ্জীবনে দিনরাত পরিশ্রম করে চলেছেন তিনি | তাঁর দাদা ধীরেন বসাক ও ছেলে অভিনবও এই লড়াইয়ে সামিল | পরবর্তী প্রজন্মকে হাতেকলমে তাঁতশিল্প সেখান বীরেনবাবু | পাশাপাশি এলাকার মেয়েদের বিনা পয়সায় নানা রকম নকশা শেখান তিনি | ফুলিয়া, হবিবপুর, শান্তিপুর, করিমপুর মিলিয়ে এই মুহূর্তের এই তাঁত উদ্যোগীর হাত ধরে প্রায় ৫ হাজার তাঁতশিল্পীর কর্মসংস্থান হয়েছে। পরোক্ষভাবেও কয়েকশো মানুষও উপকৃত | এভাবেই এগিয়ে চলুক বাঙালির তাঁতশিল্প | এগিয়ে চলুন বীরেনবাবু…
© অহর্নিশ
#সংগৃহীত
তথ্য : Yourstory
========
বাংলার ইতিহাস জানতে চান ? যদি প্রকৃত ইতিহাস জানতে চান তাহলে অবশ্যই পড়ুন ইতিহাসবিদ রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের বই "বাঙ্গালার ইতিহাস" । বাংলার ইতিহাস নিয়ে এইরকম গবেষণামূলক বই একটিও নেই ।
আমাজন লিংক : https://amzn.to/3MP7d4v

॥ এখনো সারেঙ্গীটা বাজছে...” ॥অনেক মেয়ে ছোটবেলায় পুতুল খেলে, ঘর সাজায়, রান্নাবাটি খেলে। কিন্তু ছোট্ট মেয়েটি খেলত গান-গান...
02/02/2025

॥ এখনো সারেঙ্গীটা বাজছে...” ॥

অনেক মেয়ে ছোটবেলায় পুতুল খেলে, ঘর সাজায়, রান্নাবাটি খেলে। কিন্তু ছোট্ট মেয়েটি খেলত গান-গান! কাগজ পাকিয়ে মাইকের চোঙ বানাত, তারপর উঁচু জায়গায় উঠে দাঁড়িয়ে গাইত, যেন বিশাল কোনো স্টেজে দাঁড়িয়ে পারফর্ম করছে। চারপাশে দর্শকদের কল্পনা করত, আর গান শেষে মনে মনে শুনত করতালির শব্দ!

কে জানত, সেই ছোটবেলার কল্পনার মঞ্চ একদিন সত্যিকারের বাস্তব হয়ে উঠবে! সেই স্টেজ, সেই হাততালি, সেই ভালোবাসা— সবই ধরা দেবে তার জীবনে!

সেই সময় টেলিভিশনের পর্দায় রিয়েলিটি শো-র দাপট ছিল না, ছিল না অগুনতি কচিকাঁচাদের প্রতিযোগিতা। কিন্তু প্রতিভার সন্ধান তখনও চলত, সংগীতের আঙিনায় তখনও নতুন কুঁড়িদের তুলে আনার প্রচেষ্টা ছিল জোরদার। তখনকার "ট্যালেন্ট হান্ট" গুলোয় বিশেষ গুরুত্ব পেত শাস্ত্রীয় সংগীত।

একদিন ঠিক তেমনই এক প্রতিযোগিতায় হাজির হয়েছিল বহু প্রতিযোগী। বিচারকদের সামনে একের পর এক প্রতিযোগী গান গাইছে, পরিবেশটা জমে উঠেছে। হঠাৎ করেই স্টেজে এল এক সোনামুখো ছোট্ট মেয়ে— মাত্র সাড়ে তিন বছরের! এতটুকু বয়স, অথচ কী আত্মবিশ্বাস! মাইকের সামনে দাঁড়িয়ে অবলীলায় ধরল রাগ ভূপালী।

বিচারকদের চোখ ছানাবড়া! এতটুকু মেয়ে, অথচ রাগাশ্রয়ী সংগীতে এমন দখল! বিস্ময়ে, মুগ্ধতায়, প্রশংসায় তারা প্রশ্ন করলেন— "কে শেখায় তোমায় গান?" ছোট্ট মেয়ে অবাক চোখে সরল গলায় বলল— "বাবা।"

— “তোমার বাবার নাম কী?”

— "শ্রী হরিহর শুক্লা।"

এক মুহূর্তের নীরবতা। পরক্ষণেই বিচারকদের বুঝতে এতটুকু দেরি হয়নি— এমন প্রতিভার পেছনে তো এমনই গুরু থাকতে হয়! পণ্ডিত হরিহর শুক্লার নাম শোনেনি এমন সংগীতপাগল মানুষ ছিল না তখন। আর সেই দিনের ছোট্ট মেয়েটি? সে-ই যে ভবিষ্যতের হৈমন্তী শুক্লা, তখন কে জানত!

হৈমন্তীর বাবা, পণ্ডিত হরিহর শুক্লা ছিলেন একনিষ্ঠ রাগাশ্রয়ী শিল্পী। তাঁর বাড়ির পরিবেশটাই ছিল সংগীতময়। ছাত্রছাত্রীরা আসত তালিম নিতে, প্রতিদিন চলত রেওয়াজ, আর সেই সুরের আবহেই বেড়ে উঠছিল ছোট্ট হৈমন্তী। বয়স তখন কেবল কয়েক বছর, বোঝার ক্ষমতা ছিল না, কিন্তু গানের প্রতি টান যেন জন্মগত! বাবার ছাত্রদের গান শুনতে শুনতেই তার কণ্ঠে রাগের আলাপ ফুটে উঠতে লাগল।

একদিন বাবা খেয়াল করলেন— মেয়ে যখন খেলার ছলে চিৎকার করছে, তখনও তার গলায় সুর! আর সেটাই ছিল প্রথম ইঙ্গিত— মেয়ের মধ্যে গানের ঈশ্বরপ্রদত্ত আশীর্বাদ রয়েছে। সেই থেকেই শুরু হল তালিম। গুরু অন্য কেউ নন, স্বয়ং বাবা!

হরিহর শুক্লা তখন ঠিক করে ফেললেন— মেয়েকে তৈরি করবেন শাস্ত্রীয় সংগীতের পথে। সাধনা সহজ ছিল না, কিন্তু ছোট্ট মেয়েটি যেমন আগ্রহী, তেমনি পরিশ্রমী! তারপর বাবা নিজেই তাঁকে পাঠালেন চিন্ময় লাহিড়ীর কাছে উচ্চাঙ্গ সংগীতে আরও গভীর জ্ঞান অর্জনের জন্য।

শুধু হরিহর শুক্লা বা চিন্ময় লাহিড়ী নন, হৈমন্তী শুক্লার গানের যাত্রাপথে এমন সব মহান সঙ্গীত ব্যক্তিত্বের হাত পড়েছিল, যা সত্যিই ঈর্ষণীয়! সংগীত জগতে পা রাখার পর একে একে তাঁর জীবনে এসেছেন পণ্ডিত রবিশঙ্কর, উস্তাদ আলি আকবর খাঁ, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, সলিল চৌধুরী, মান্না দে, শ্যামল মিত্রের মতো কিংবদন্তিরা। একেকজন যেন একেকটি জ্বলন্ত আলোকবর্তিকা।

তাঁদের সংস্পর্শে এসে হৈমন্তী শুধু গান শেখেননি, বরং গানের গভীরতা, তার সূক্ষ্মতা, তার সৌন্দর্যকে অনুভব করতে শিখেছেন। এই গুরুরা শুধু সুর দিয়েই তাঁকে তৈরি করেননি, গানের প্রতি এক অদ্ভুত শ্রদ্ধা এবং দায়বদ্ধতাও শিখিয়েছেন। আর সেই শিক্ষার প্রতিফলন দেখা গেছে তাঁর একের পর এক গানে।

পুলক বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় যখন একসঙ্গে কাজ শুরু করলেন, তখন তাঁদের লক্ষ্য ছিল নতুন প্রতিভাদের সুযোগ দেওয়া। সেই ভাবনা থেকেই তাঁরা ঠিক করলেন, দুটি সিনেমায় নতুন কণ্ঠকে সুযোগ দেবেন— দুষ্টু-মিষ্টি এবং বালক শরৎচন্দ্র। গানগুলোর কথা ও সুর অসাধারণ হল, কিন্তু প্রশ্ন উঠল, কে গাইবে? দুজনেই একবাক্যে বললেন— নবাগতা হৈমন্তী শুক্লার কণ্ঠেই ফুটবে এই সুরের জাদু।

এই সিদ্ধান্তই হৈমন্তী শুক্লার সংগীতজীবনে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করল। বিশেষ করে বালক শরৎচন্দ্র ছবির গানই তাঁকে এনে দিল অসামান্য জনপ্রিয়তা। আকাশ-বাতাস মুখরিত হল তাঁর কণ্ঠে—

"শিবঠাকুরের গলায় দোলে
বৈঁচি ফলের মালিকা।
তোর গলায় দড়ি কে পরাল,
বল না গৌরী বালিকা।"

এই গান হৈমন্তীর সংগীতজীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিল।

একদিন ঠিক হল, দুই কিংবদন্তি সুরকার একসঙ্গে দুটি গান তৈরি করবেন। তবে তাঁরা কি রাজি হবেন? সংশয় ছিল, কিন্তু অবাক করার মতো ব্যাপার— পণ্ডিত রবিশঙ্কর ও উস্তাদ আলি আকবর খাঁ দুজনেই প্রস্তাব গ্রহণ করলেন!

পুলক বন্দ্যোপাধ্যায় বহু আগে থেকেই পণ্ডিত রবিশঙ্করের এক সুরের ওপর বাংলা কথা লিখে রেখেছিলেন। সেই কথা শোনানোর জন্য একদিন পুলকবাবু ও হৈমন্তী পৌঁছে গেলেন রবিশঙ্করের বাড়িতে। তিনি কথা শুনেই মুগ্ধ! সঙ্গে সঙ্গে সেই সুরেই তৈরি হল গান—

"মনে পড়ে তোমারে..
কেন এত মনে পড়ে তোমারে।
ভুলে যেতে চাই, তবু কেন হায়,
মনে পড়ে তোমারে..."

এরপর রেকর্ডের অন্য পৃষ্ঠার জন্য উস্তাদ আলি আকবর খাঁ নতুন সুর দেবেন। তাঁর পুরনো বাড়িতে পৌঁছে গেলেন পুলকবাবু ও হৈমন্তী। ওস্তাদজী সরোদে একটি সুর বাজিয়ে বললেন— "এটা আমার সৃষ্টি! এবার এই সুরে গান লেখো।"

কিন্তু সমস্যা হল, ওস্তাদজী যে গাইছেন, তা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে না! তবে পুলকবাবুর অসাধারণ প্রতিভার কাছে সেটা কোনো বাধাই নয়। সেখানেই বসে তিনি লিখে ফেললেন এক চিরকালীন গান—

"স্মৃতি শুধু থাকে
সেই তো মনে রাখে...
সেই তো পিছু ডাকে
সেই তো পিছু ডাকে.."

এই রেকর্ড এতটাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল যে সত্যজিৎ রায় পর্যন্ত বলেছিলেন—

"আমাদের দেশের দুজন সর্বোচ্চ স্তরের সংগীতজ্ঞ, পণ্ডিত রবিশঙ্কর ও উস্তাদ আলি আকবর খাঁ একই গায়িকার জন্য দুটি গান রচনা করেছেন, যা এক রেকর্ডের দুই পৃষ্ঠায় প্রকাশিত হয়েছে। এমন ঘটনা বিরল!"

শুধু বাংলা নয়, হৈমন্তী শুক্লা হিন্দি, উড়িয়া, গুজরাটি, পাঞ্জাবি, অসমিয়া, ও ভোজপুরি ভাষাতেও গান গেয়েছেন। হিন্দি ছবিতেও তাঁর গান জনপ্রিয়তা পেয়েছে, পুরস্কৃতও হয়েছেন। কিন্তু তাঁর কাছে সবচেয়ে বড় পুরস্কার? শ্রোতাদের ভালোবাসা। বিশেষ করে বাঙালি শ্রোতাদের উজাড় করা স্নেহ, যা তাঁর শিল্পীসত্তাকে সবসময় বাঁচিয়ে রেখেছে।

বাংলা আধুনিক ও সিনেমার গান ছাড়াও তিনি সমান দক্ষতায় গেয়েছেন ভজন, সেমি-ক্লাসিক্যাল, রবীন্দ্রসঙ্গীত, নজরুলগীতি। ছোটবেলা থেকেই বাবার আশেপাশে বিশিষ্ট সংগীতজ্ঞদের দেখার সুযোগ হয়েছিল। তাঁদের গান শুনতে শুনতেই তৈরী হয়েছিল তাঁর সংগীতবোধ।

শৈশব থেকেই হৈমন্তী লতা মঙ্গেশকরের গান গাইতেন। একবার লতা মঙ্গেশকর কলকাতায় এলেন। আয়োজকদের মধ্যস্থতায় হৈমন্তী গেলেন তাঁর সঙ্গে দেখা করতে। কলকাতার অনুষ্ঠানে লতাজী শুরুতেই কয়েকটি বাংলা গান গাইতেন, আর সেই গানগুলো শেখানোর দায়িত্ব পড়ল হৈমন্তী শুক্লার ওপর! সেই থেকেই গড়ে উঠল লতা মঙ্গেশকর ও হৈমন্তী শুক্লার এক ভালো সম্পর্ক।

এইভাবেই একের পর এক সুরের জগতে নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন হৈমন্তী শুক্লা। সংগীতের প্রতি তাঁর নিষ্ঠা আর একাগ্রতা তাঁকে বাংলা গানের জগতে স্থায়ী আসন দিয়েছে। তাঁর গলায় যে আবেগ, যে আন্তরিকতা, তা বাংলা সংগীতকে সমৃদ্ধ করেছে আজও।

একবার পুজোর গান তৈরি হবে। গীতিকার বিশ্বনাথ দাস— আকাশবাণীতে কাজের সুবাদে বহু বিশ্বখ্যাত শিল্পীর সান্নিধ্যে এসে গানের কারিগরি দেখেছেন কাছ থেকে। কীভাবে সেখানে লিরিক লেখা হয়, কীভাবে সুর বাঁধা হয়, কীভাবে অনবদ্য গায়কীতে তা প্রাণ পায়— সবই তাঁর দেখা। এরকমই এক নষ্ট হয়ে যাওয়া জলসার অনুষঙ্গে কলম তুলে নিলেন তিনি। আর সেই কথায় সুর দিলেন অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। কেউ ভাবেনি, এই গানটা একদিন ইতিহাস গড়বে। কিন্তু কয়েকদিনের মধ্যেই তা হয়ে উঠল কালজয়ী! হৈমন্তী শুক্লার গাওয়া সেরা গানের তালিকায়ও জায়গা পেল উপরের দিকেই—

“এখনো সারেঙ্গীটা বাজছে
এখনো চেনা চেনা আতরের গন্ধ..
একি রোমাঞ্চ, শুধু রোমাঞ্চ..
নাকি আগামী দিনের কোনো
ঝড়ের আভাস বয়ে আনছে..”

একটা গান, একটা সুর— এক চিরস্থায়ী আবেগ হয়ে রয়ে গেল মানুষের মনে।

সঙ্গীতের সফরটা তাঁর কাছে ছিল এক আজীবন যাত্রা। দিকপাল শিল্পীদের সঙ্গ পেয়েছেন বহুবার, এমনকি হিন্দি ছবির সুরকাররাও তাঁর কণ্ঠের জন্য সৃষ্টি করেছেন বাংলা গান। যেমন, কিংবদন্তি সুরকার নৌশাদজী তাঁর "বোল রে পাপিহারা"-র সুরের ছায়ায় বুনেছেন এক অপূর্ব সৃষ্টি—

“বিকেল হলেই তোমায় মনে পড়ে
কত না স্মৃতি আসা-যাওয়া করে।”

সেই ১৯৭২ সাল থেকে শুরু। পথ চলতে চলতে অনেক কিছুই বদলেছে, বদলায়নি শুধু তাঁর কণ্ঠের জাদু। হৈমন্তী শুক্লা— নামটাই যেন এক মায়ার পরশ। কপালে বড় লাল টিপ, চোখে উজ্জ্বলতা, মুখে একগাল চেনা হাসি। অনেকে বলেন, তিনি এক বটবৃক্ষ— যার ছায়ায় বহু মানুষের আশ্রয়। কিন্তু যিনি এত মাতৃস্নেহে ভরা, তিনি কেন সংসার পাতলেন না?

একবার এক রিয়ালিটি শোর মঞ্চে অকপটে বলেছিলেন তিনি—
“গান ছাড়া আমার কিছুই ভালো লাগে না। গানটার সঙ্গেই গভীর প্রেম, আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছে।”

তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল—
“কখনও মনে হয়নি সংসার করলাম না?”

জবাব এসেছিল নিঃসংকোচে—
“না, কখনও না। কেন আমার বর হল না, ছেলেপুলে হল না, এসব কখনও মনে হয়নি। আসলে আমার এত ছেলেপুলে যে, লোক আমাকে মা বলে ডাকে।”

জন্ম দিলেই যে মা হওয়া যায়, তা তো নয়! তাঁর ছাত্রছাত্রীদের কাছেও তিনি মা-ই।

তাহলে প্রেম? প্রেম কি কোনওদিন আসেনি জীবনে? একটুও রাখঢাক না করে বলেছিলেন—
“কেউ হয়তো ভালোবেসেছে, আমি বুঝতে পারিনি। অনেকেই আমায় জিজ্ঞেস করেন, তুমি এত ভালোবাসার গানগুলো কাকে ভেবে গাও? আমি তখন উত্তর দিই, ওই মাইক্রোফোনটাই আমার প্রেমিক হয়ে যায় তখন।”

একটা মাইক্রোফোন, এক আকাশ গান, আর অগণিত ভালোবাসা— এটাই তো তাঁর জীবন! পুরস্কার পেয়েছেন অগুনতি, তানসেন পুরস্কার থেকে বঙ্গবিভূষণ। কিন্তু তাঁর সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি? মানুষের ভালোবাসা।

শিল্পীর জন্মদিনে একটাই কামনা— তাঁর ‘সারেঙ্গীটা’ চিরকাল বাজুক… চিরদিন....

লেখক ©️ কিছু কথা ॥ কিছু সুর
তথ্য সংগ্রহ: সারেগামা (HMV) ও অন্যান্য।
#সংগৃহীত
_____________________________
এই লেখা অথবা লেখা থেকে কোনো অংশ নিলে লেখকের অনুমতি অথবা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ বাধ্যতামূলক।

মহাসরস্বতীব্যাঘ্র নখ পলাশের বনে  বাস করে গৈরিকা  রমণী একাকী,   নিভৃতের আলিঙ্গনে। সেই বনে বসন্ত অনন্ত হয়ে   জেগে থাকে আজী...
02/02/2025

মহাসরস্বতী

ব্যাঘ্র নখ পলাশের বনে
বাস করে গৈরিকা
রমণী একাকী,
নিভৃতের আলিঙ্গনে।
সেই বনে বসন্ত অনন্ত হয়ে জেগে থাকে আজীবন কাল ।
পলাশের তীক্ষ্ণ লালে
মিশে থাকে গোধূলির ব্যথা,
হলুদ আবির ফুলে
ব্যাঘ্রবর্ণ প্রেম শ্বাপদের
মতো ঘুরে ফেরে ।
ভোরের পশম লাল
ভৈরবী রাগিণী হয়ে
বিন্দু বিন্দু আলোর কণায়
ঝরে পড়ে রমণীর
এলো চুলে, বুকের উপরে
মুক্তার মালা হয়ে দুলে ওঠে
শিশিরের নিভে আসা প্রাণ
কোমল নিষাদ সুরে ।
সে রমণী আসন পেতেছে
মহাশ্বেতা পদ্মের উপর ,
গভীর অতল এক
মহাশূন্য মাঝখানে যে
পদ্মের ফুটে ওঠা ।
সেইখানে পদ্মাসনে বসে
সেই নারী
কোলে নিয়ে ভৈরবের
একতন্ত্রী বীণা ।
অনন্ত বসন্ত বনে
অনঙ্গের নখ বোনে
বিরহের ব্যথা ।
তীব্র সে নীলাম্বরী বিষ
নিঃস্ব করে
রমণীর প্রাণ ,রমণীর প্রেম।
শিরায় শিরায় তার বয়ে চলে
ললিতের ভোর,
বৈরাগীর ঔদাসীন্য, বাগেশ্রীর ধ্যানমগ্ন কথা ।
সে রমণী বীণা বাঁধে,
সে গৈরিকা পদ্মের আঙুলে
অজস্র অসংখ্য তীব্র
তারের ঝংকারে
বাঁধে তার একতন্ত্রী বীণা
যে বীণা বাজাবে এক তারে
শতকোটি বিরহের,
আনন্দের, মিলনের ভাষা ।
দিনের আলোর স্রোত
নম্র হয় গোধূলি পেরিয়ে ।
অন্তরীক্ষ নেমে আসে
পূরবীর শেষ লালিমাতে ।
অন্ধকারে জেগে থাকে
পলাশের অগ্নিবর্ণ শিখা।
জেগে থাকে নক্ষত্রের
চোখের তারায় খণ্ড খণ্ড
হীরকের দ্যুতি ।
জেগে থাকে রাগিণীর
তীব্র স্রোতে বীণা হাতে
নীলা চূর্ণে চোখের কাজল
আঁকা বিনিদ্র যোগিনী এক,
মহাসরস্বতী!
মধুবনী
#সংগৃহীত

‘ওম শ্রীম হ্রীম সরস্বত্যৈ নমঃ’–রানা চক্রবর্তীসরস্বতী—নামটি স্মরণ করলেই শুভ্রবর্ণা, শ্বেতবসনা, হংসবাহনা, পদ্মাসনা, বীণাহস...
02/02/2025

‘ওম শ্রীম হ্রীম সরস্বত্যৈ নমঃ’
–রানা চক্রবর্তী
সরস্বতী—নামটি স্মরণ করলেই শুভ্রবর্ণা, শ্বেতবসনা, হংসবাহনা, পদ্মাসনা, বীণাহস্তা ও পদতলে গ্রন্থসম্বলিত যে লাবণ্যময়ী দেবীর মূর্তি সাধারণের চোখের সামনে ভাসে ওঠে তিনি আবহমান কাল থেকেই বিদ্যার্থী সমাজের কাছ থেকে নিয়মিতভাবে পূজা পেয়ে আসছেন। তাই নিজের এই মূর্তির মাধ্যমে তিনি বিদ্যাদায়িনী সরস্বতী হয়েছেন, কিন্তু ইতিহাস বলে যে তাঁর রূপ শুধুমাত্র একটাই নয়। বরং প্রাচীন বেদ-তন্ত্র-পুরাণে তাঁর ভিন্ন ভিন্ন রূপের প্রকাশ দেখতে পাওয়া যায়, সেসব রূপ যেমন বৈচিত্রময় তেমনি আবার চমকপ্রদও বটে।
সুদূর অতীতে জ্ঞানান্বেষণ ছিল মানব সভ্যতার প্রথম স্তর, প্রাকৃতিক সম্পদ অন্বেষণ জ্ঞান ও সম্পদকে রক্ষা করবার চেষ্টা ছিল দ্বিতীয় স্তর, আর অশুভকে বিনাশ করবার প্রচেষ্টায় শক্তি অর্জন করা ছিল তৃতীয় স্তর। তখন এই তিনটি স্তরের প্রকাশ একইসঙ্গে সেই প্রাচীন যুগে সরস্বতী নদীর তীরে ঘটেছিল, তখন যে জায়গাটি মুনি ঋষিদের জ্ঞানচর্চার একমাত্র কেন্দ্র ছিল। ওই সময়কার মানব সভ্যতার তিন স্তরের ত্রিশক্তি দেবতা যে জ্যোতির্ময়ী মূর্তিতে ঋষিদের ধ্যানমগ্ন নেত্রে ভাসে উঠেছিলেন, সেই ধ্যানমগ্ন রূপই হলেন দেবী সরস্বতী। এরপরে সরস্বতী ঐশ্বর্য-জ্ঞান-শিল্প-সাহিত্যের প্রাণদেবী হয়ে প্রতীকে রূপ পেয়েছিলেন; আর সেই রূপেই শুভ্র জ্যোতিবর্ণা শব্দসুর-বর্ণের দ্যোতক বীণা ও পুস্তক হস্তে বর্তমানে তিনি পৃথিবীর ঐশ্বর্যের স্মারক পদ্মে আসীন বলে দেখতে পাওয়া যায়। তখন তিনি একাই পৃথিবী, দুর্গা, সবিতা (সূর্য), শ্রী ও ঐশ্বর্য দেবী লক্ষ্মী হয়ে উঠেছিলেন। শুক্রনীতিসারে শুক্রাচার্যের বর্ণনায় সাত্বিক লক্ষ্মীর যে ছবি পাওয়া যায়, তাতে তিনি বীণাবাদিনী, ফল, বরাভয় ও মুদ্রাধারিনী—যা আসলে সরস্বতীরই প্রতিরূপ। দুর্গা–সরস্বতী–শ্রী। সরস্বতী অর্থে ধরা-সাবিত্রী-শ্রী। মহাশক্তি আবার লক্ষ্মী-সরস্বতীর সমন্বয়। সুতরাং দুর্গাই হলেন সরস্বতী। প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে, নবদুর্গার ধ্যানে হংসবাহিনী, ময়ূরবাহিনী সরস্বতীর উল্লেখ পাওয়া যায়। এছাড়া প্রাচীন পুরাণগুলিতে সরস্বতী বহুবার তাঁর বাহন বদল করেছেন বলেও দেখা যায়। এরফলে কখনো সিংহ, কখনো ময়ূর, তো কখনো বা মেষ তাঁর বাহন হয়েছে। আজও মহারাষ্ট্রের অনেক জায়গায় ময়ূরবাহনা সরস্বতীর পুজো করা হয়। অন্যদিকে কাশীর সরস্বতী মন্দিরের বাগীশ্বরী মূর্তি সিংহবাহিনী এবং কলকাতার জাতীয় যাদুঘরেও প্রাচীন একটি সিংহবাহনা বাগেশ্বরী মূর্তি রয়েছে। অজ্ঞানতা নাশের প্রতীকদেরতা লয়কর্তা মহেশ্বরের মূলশক্তি মহেশ্বরী সরস্বতী হলেন জ্ঞানের নবোন্মেষের সৃষ্টিকর্তা, ব্রহ্মার আরাধ্যা শক্তি ব্রাহ্মী সরস্বতী হলেন জ্ঞান-রক্ষীর স্থিতির নিয়ন্তা, আর বিষ্ণুর অন্তরশক্তি হলেন বৈষ্ণবী সরস্বতী। এই দেবী শুধু বীণার তারে সুরের ঝঙ্কার তোলেননি, তিনি জনগনের কল্যাণের জন্য শত্রুদের সঙ্গে সংগ্রামও করছেন; এমনকি দেহধংসকারী অনিষ্টকারী শত্রুকে পরাজিত করে প্রাণকে রক্ষা করছেন বলেও প্রাচীন পুরাণগুলিতে দেখা যায়। বরাবরই সুপ্রবৃত্তি ও কুপ্রবৃত্তির মধ্যে যুদ্ধ চলেছে। আর সুপ্রবৃত্তি চৈতন্যময়ী বাগ্দেবী তাঁর শত্রু কুপ্রবৃত্তিকে দমন করেছেন। তাই শত্রুবিনাশিনী এক অদ্বিতীয় দেবীরূপেও হিন্দু সংস্কৃতিতে তিনি প্রতিষ্ঠিতা। তান্ত্রিক-পৌরাণিক যুগেও নানা মূর্তিতে তিনি প্রতিভাত হয়েছেন বলে দেখতে পাওয়া যায়। অসুর সংহার কর্ত্রী বিণাবাদিনী আবার জ্ঞানদাত্রীও বটে। আর একারণেই ভিন্ন ভিন্ন নামে রণদেবী হিসাবেও সরস্বতীর আরাধনা চালু রয়েছে। তিনি হলেন বিদ্যা, বুদ্ধি, জ্ঞান ও বাক্যের অধিষ্ঠাত্রী দেবী। সিংহবাহিনী রূপে তাঁর দু’হাতে রয়েছে পরশু গদা, আর অন্য দু’হাত দিয়ে তিনি দানবের জিভ উৎপাটনে ব্যস্ত। তন্ত্রের মহাসরস্বতীর অস্ত্র হল মুষল, চক্র, ধনু, খড়্গ ও ত্রিশূল। আবার এই রণদেবী মূর্তির ভিন্ন রূপও রয়েছে, যে রূপ অন্নদাত্রীর। সবধরণের অন্ন দিয়ে তিনি সকল জীবের প্রাণরক্ষা করে থাকেন।
সরস্বতী নামের আদি সূত্র হল ‘সরস’ শব্দটি। এই ‘সরস’ শব্দের নিগূঢ় অর্থ হল জল তেজ। আর এই জল তেজই হল অন্ন উৎপাদনের প্রয়োজনীয় উপাদান। জল হল জল-স্থল, অর্থাৎ—পৃথিবী; আর তেজ হল সূর্যবশ্মি। সুদূর অতীতে এই জল স্থল তেজের সংহতি শক্তি ঋষি মন্ত্রে ‘সরস’ শব্দের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করেছিল। তাই এই জল তেজরূপিনী সরস্বতী বেদে পৃথিবী নামেও অভিহিতা হয়েছেন। অন্যদিকে তন্ত্র-পুরাণের অনেক জায়গাতেই সরস্বতীকে অন্নদাত্রী অন্নপূর্ণা আখ্যা দেওয়া হয়েছে বলে দেখা যায়। তিনি জন্মমৃত্যু ও জীবিত অবস্থার সঙ্গে বিশ্বের সৃষ্টি-স্থিতি-ধ্বংসের সংযোগ সাধন করে রেখেছেন।
আজও ভারতের কোন কোন জায়গায় এই দেবী যেমন চতুর্ভূজা ময়ূরবাহিনী, তেমনি কোথাও আবার দ্বিভুজা হংসবাহিনী, তেমনি কথার আবার তিনি অষ্টভূজা। এমনকি বেদে-উপনিষদে তন্ত্রে-পুরাণে কখনও আবার তিনি পুরুষও। আর এই নারী পুরুষের মিলিত রূপ নিয়ে তিনিই আবার অর্ধনারীশ্বর নীল-সরস্বতী। ঋগ্বেদে বাগ্দেবী নিজেকে—সমগ্র ব্রহ্ম জগতের ঈশ্বরী—বলে পরিচয় দিয়েছিলেন। সরস্বতী কিন্তু প্রথমে নিরাকারা ছিলেন। কিন্তু এরপরে ধীরে ধীরে তিনি রূপ থেকে রূপান্তরে প্রকাশমানা হয়েছিলেন।
বিষ্ণুর অন্যতমা স্ত্রী সরস্বতী হলেন বৈদিক দেবী। সুদূর অতীতকালে বৈদিক সংস্কৃতির শুরু থেকে বাংলা তাঁকে শুধু জ্ঞান ও বিজ্ঞানের অধীষ্ঠাত্রী দেবী হিসাবেই গ্রহণ করে নেয়নি, সরস্বতীকে বাংলা—‘সর্বদুঃখদারিদ্র্য পরবশয়োশান্তিনিমিত্তক’—রূপেও, অর্থাৎ—সবরকমের দুঃখ-দারিদ্র-পরবশ থেকে মুক্তিদায়িনী শান্তির দেবী হিসেবেও গ্রহণ করে নিয়েছিল। ঋগ্বেদে দেবমাতা অদিতি সৃষ্টিধাত্রী পৃথিবী ও নদীরূপা দেবী সরস্বতীর বর্ণনা রয়েছে। বাংলার সংস্কৃতিতে এই দেবী শক্তি রূপায়ণের মধ্যে দুর্গা ও তাঁর কন্যা লক্ষ্মী ও সরস্বতী সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয়া দেবী। দেবীরূপেই এই পরিকল্পনা ভারতবর্ষে অতিশয় প্রাচীন এবং এই দেবী মূর্তি হচ্ছেন মাতৃশক্তির প্রতীক। এই তিন নারী দেবতা খুব প্রাচীন এবং একারণেই বাংলায় এঁদের বিশেষ জনপ্রিয়তা দেখতে পাওয়া যায়।
লক্ষ্মী-মেধা-ধরা-পুষ্টি-গৌরী-তুষ্টি-প্রভা-ধৃতি এই আট হাত দিয়ে দেবী সরস্বতী সবাইকে যেন সর্বদা রক্ষা করেন—এই পার্থনা ভারতের নরনারী সেই প্রাচীনকাল থেকে তাঁর কাছে করে আসছেন। এখানে লক্ষ্মী অর্থ হল—রাজ্যশ্রী, সম্পদ, শোভা; মেধা—স্মৃতিশক্তি, ধারণাশক্তি; ধরা—পৃথিবী, ভূসম্পত্ত; পুষ্টি—বৃদ্ধি, সমৃদ্ধি; গৌরী—শ্বেতবর্ণা ষোড়শী নারী; তুষ্টি—সন্তোষ; প্রভা—দীপ্তি, যশ; ধৃতি—ধৈর্য্য, ধারণশক্তি; এবং তনু হচ্ছে—রূপ, মূর্তি। সরস্বতীর ধ্যানমূর্তি হল—
যিনি মুক্তাহার ধারণে শ্বেতশোভাযুক্তা, যিনি মস্তকে শশিকলায় অলঙ্কৃতা, চারহাতে যিনি বীণা, বর্ণরূপ অক্ষরমালা, মণিময় অমৃত কলস ও পুস্তক ধারণ করেন, দেবগণের দ্বারা পূজিতা, সরোবরে শতদল পদ্মে যাঁর বাস, যিনি বাক্যের অধিশ্বরী, ত্রিভুবন যাঁকে প্রণাম করছে, পদ্মের উপর উপবিষ্টা সেই মহতী দেবী সরস্বতীকে সতত বন্দনা করি।
দেবদানববন্দিতা দেবী সরস্বতী সর্বপ্রথম ভারতের বিদ্যা কাননে উদিতা হয়েছিলেন। বিজ্ঞানের পারগামী হওয়ার জন্য এবং পুত্রকন্যাদের সর্বদীনতা শান্তির জন্য জ্ঞানদায়িনী দেবী সরস্বতীকে ভারতের নরনারীরা সেই বৈদিকযুগ থেকেই আরাধনা করে আসছেন। জগতের সব মানুষ যে শক্তির আরাধনা করেন, সেই ব্রহ্মশক্তিরূপা চিৎশক্তিরূপিনী সানন্দদায়িনী সরস্বতীকে বন্দনা করলে জ্ঞান-দৃষ্টিরূপ বিভূতি লাভ হয়। “ব্রহ্মশক্তিং বীণাপানিং জ্ঞানদৃষ্টি বিভূতয়ে”।
তবে অতীতে এই দেবীর কোন মূর্তি নির্মাণ করে পূজা করা হত না; তখন তাঁর পূজা হত ঘটে এবং পুস্তকাদি ও মসপ্যাধার তাঁর অন্যতম প্রধান উপকরণ ছিল। ইতিহাস বলে যে, খৃষ্টীয় অষ্টাদশ শতক থেকে তাঁর ধ্যান দেখে মূর্তির পরিকল্পনা করা শুরু হয়েছিল। আগেই বলা হয়েছে যে—দুর্গা, লক্ষ্মী ও সরস্বতী—এই তিন নারীদেবতাই খুব প্রাচীনকাল থেকেই বাংলায় বহুল জনপ্রিয়তা লাভ করেছেন। একারণেই বাংলার অত্যন্ত জনপ্রিয় দেবতা বিষ্ণুর দয়িতা ও পার্শ্বচরীরূপে লক্ষ্মী সরস্বতীর মূর্তি তাই আজও সর্বত্রই পরিলক্ষিত হয়। অতীতের বাংলার মূর্তি নির্মাতারা এসব মূর্তিকে বাংলার অসংখ্য মন্দিরে খোদাই করে এক নতুন পরিকল্পনার প্রবর্তন করেছিলে; যেটাকে বাংলার একান্ত নিজস্ব সম্পদ বলা যেতে পারে।
অতীতে এদেশের কবি সাহিত্যিক সকলেই সরস্বতী চরণে ঐশ্বর্য-সিদ্ধি লাভ করবার জন্য প্রার্থনা করেছিলেন বলে দেখা যায়। প্রসঙ্গতঃ এখানে কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের ও স্বর্ণকুমারী দেবীর লিখিত সরস্বতী প্রার্থনার কয়েক লাইন উদ্ধৃত করা যেতে পারে। ঈশ্বর গুপ্ত লিখেছিলেন—

“হৃদয় কমলে আসি, বিনাশিয়া তমোরাশি,
প্রকাশিতা হও বিধায়িনি।
কবিতা-কমল-মধু দেহি হে মাধববধু,
বীণাপাণি বাক্য প্রদায়িনী॥”

আর বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস বিখ্যাত ‘ভারতী’ পত্রিকার সম্পাদিকা প্রসিদ্ধ মহিলা কবি স্বর্ণকুমারী দেবী তাঁর ‘গীতগুচ্ছ’ নামক গ্রন্থে বাণীসাধনার কথা নামক একটি গানে যা লিখেছিলেন, সেটা নিম্নরূপ ছিল—

“ওগো কমল আসনা—রঞ্জিনী বিণপাণি।
আমি কাহাকেও আর জানিনা ভারত
তোমাকেই শুধু জানি!
ওগো মধুরছন্দা, হৃদয়ানন্দা,
না জানি প্রভাত না জানি সন্ধ্যা,
তোমারি পর্বে অর্ঘ্য রচিয়া, জীবন ধন্য মান
আমি জানি না তো তাহা ভাল কি মন্দ,
বাসহীন কিম্বা মধুর গন্ধ,
শুধু প্রীতিপুরিত পরমানন্দ লভি গো চরনে দানি।
আমি, না জানি অন্য বিভব বুদ্ধি,
চাহি না মুক্তি চাহি না সিদ্ধি।
তোমারি প্রসাদ লভিবারে সাধ, তোমারি অমৃতবাণী।”

ব্যাসদেব মহাভারতে ও শ্রীমদ্ভাগবতের প্রতি অধ্যায়ে সরস্বতীকে উদ্দেশ্য করে লিখেছিলেন—

“নারায়ণং নমস্কৃতং নরঞ্চৈব নরোত্তমম।
দেবীং সরস্বতীং ব্যাসং তত জয়মুদীরয়েৎ॥”

এই শ্লোকের কাব্যানুবাদ করে অতীতে রাজকৃষ্ণ রায় লিখেছিলেন—

“নারায়ণ নরোত্তম নর ভারতীরে।
নমস্কার করি জয় উচ্চারিবে পরে॥”

খৃষ্টীয় ঊনিশ শতকের দ্বিতীয় দশকে বাংলাভাষা ও সাহিত্যের গঠনে জয়গোপাল তর্কালঙ্কারের অতুলনীয় ও ঐতিহাসিক অবদান রয়েছে। তিনি তাঁর ‘শিক্ষাসার’ গ্রন্থের আখ্যাপত্রে বীণাপানি সম্বন্ধে যা কিছু লিখেছিলেন, সেটা নিম্নরূপ ছিল (১৮১৮ সালের দ্বিতীয় সংস্করণ)—

“গুরুদক্ষিণা
কৃষ্ণঃ করোতু কল্যাণং কংস কুঞ্জরকেশরী।
কালিন্দী জল কল্লোল কোলাহল কুতুহলী॥ সাতে ভবতু
সুপ্রিতা দেবী শিখরবাসিনী! উগ্রেন তপস্যা লব্ধ
যয়া পশুবতি পতিঃ॥ প্রণামে জুড়িয়া পাণি
বন্দো মাতা বীণাপাণি তব পদে রহুক মোর মতি।
তোমার চরণ সেবি ব্যাস বাল্মীকি কবি তোমা বিনা
আর নাহি গতি॥ কৃপাদৃষ্টে চাহ যারে ইন্দ্রপদ দেহ
তারে তুমি মাতা সকলের সার। তব ভক্ত সেই জন
পূজে তারে ত্রিভূবন তব পদে মতি রহে যার॥ বন্দো
হর গৌরী গঙ্গা বিপদনাশিনী। একে ২ বন্দো যত
সুর সিদ্ধ মুনি॥ পঞ্চদেব নবগ্রহ আদি যত জন।
সাবধান হয়ে বন্দো সভার চরণ॥ ব্রাহ্মণ বৈষ্ণব বন্দো
করিয়া ভকতি। মাতা পিতা বন্দিলাম স্থির করি মতি॥”

আর বিদ্যাদায়িনী দেবী সরস্বতীর কৃপা লাভ করে কালিদাস কিভাবে মহাকবি কালিদাসে রূপান্তরিত হয়েছিলেন—এ কাহিনী বর্তমানে প্রায় সকলেরই জানা রয়েছে।
(চিত্রশিল্পী: দেবাশীষ মজুমদার)
#সংগৃহীত

তিনি আইআইটি মুম্বাই থেকে বি টেক এবং এম টেক ডিগ্রি অর্জন করেছেন। শুধু তাই নয়, স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পর তিনি আমেরিকা...
02/02/2025

তিনি আইআইটি মুম্বাই থেকে বি টেক এবং এম টেক ডিগ্রি অর্জন করেছেন। শুধু তাই নয়, স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পর তিনি আমেরিকা থেকে পিএইচডি স্কলারশিপ পেয়েছেন।

কিন্তু তিনি ভেবেছিলেন যে এমন কিছু তাকে করতে হবে যা সমাজের দুঃখী ও দুর্দশাগ্রস্ত মানুষদের নতুন জীবন দান করবে। তার বিচারে এটাকেই নিঃস্বার্থ ভাব, প্রকৃত ত্যাগ বা ঈশ্বরের সেবাও বলা যেতে পারে।

কুম্ভে গিয়ে প্রচারের আড়ালে থেকে তিনি প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ মানুষের জন্য নিজের হাতে খাবার রান্না করেন। সবজি কাটা, বাটনা বাটা, জল আনা, কাঠ বয়ে আনা, জ্বাল দেওয়া বা নিজে খুন্তি হাতে সারাদিন তাপের মধ্যে খিচুড়ি নাড়া সবই হাসিমুখে করেন ।

আপনাদের মধ্যে অনেকেই তাকে জানেন না, কিন্তু তিনি বর্তমানে আইআইএম নাগপুরের একজন সম্মানীয় ফ্যাকাল্টি মেম্বার। আবার একদিকে তিনি একজন গেরুয়াধারী সাধু হিসেবে নিজের জীবন অতিবাহিত করছেন.....🔱🙏🏻🚩

আমাদের বিচারে তিনিই হলেন আসল আইআইটি বাবা...., না থাক তার কুম্ভের ভাইরাল বাবার মতো রূপ, বাক চাতুরতা বা স্টাইল 🔱🙏🏻🚩 আমার মতে ভাইরাল হওয়া উচিত এই প্রচার বিমুখ মানুষটির, যিনি সমাজের প্রকৃতই একজন শিক্ষক 🔱❤️💯

#সংগৃহীত

বর্তমান সময়ে ভারতের সবচেয়েবেশি বেতন পাওয়া দুই শিল্পী। #সংগৃহীত
02/02/2025

বর্তমান সময়ে ভারতের সবচেয়ে
বেশি বেতন পাওয়া দুই শিল্পী।
#সংগৃহীত

কুয়াশা মাখা ভোরে প্রথম কলেজ যাবার দিনহঠাৎ করে বড় হবার অনুভূতির দিনপায়জামা-পাঞ্জাবিতে প্রথম অন্যরকম দিনশাড়িতে নজর আটক...
02/02/2025

কুয়াশা মাখা ভোরে প্রথম
কলেজ যাবার দিন
হঠাৎ করে বড় হবার
অনুভূতির দিন
পায়জামা-পাঞ্জাবিতে প্রথম
অন্যরকম দিন
শাড়িতে নজর আটকে যাবার
অদ্ভুত সেই দিন
হলুদ গাঁদার গন্ধে প্রথম
ব্যাকুল হবার দিন
রবীন্দ্র গানে প্রথম সেদিন
ছুঁয়ে যাবার দিন
প্রেম না পূজা কোন পর্যায়
বিবাদ শুরুর দিন
চোখের মাঝে চোখ হারিয়ে
চোখ লুকোনোর দিন
---------------------------------
✍️ Dipak Ghosh
#সংগৃহীত

জেদ ধরে জেলে সরস্বতী পুজো করিয়েছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু- ১৯২৩ সাল | ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ তখন মধ্যগগনে | বাংলার পরিস...
02/02/2025

জেদ ধরে জেলে সরস্বতী পুজো করিয়েছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু-
১৯২৩ সাল | ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ তখন মধ্যগগনে | বাংলার পরিস্থিতি তখন অগ্নিগর্ভ | ১৯২৩ সালে সুভাষচন্দ্র বসুকে বন্দি করে ব্রিটিশ পুলিশ | পরের বছর তাঁকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় বহরমপুর জেলের সাত নম্বর ঘরে | এখানেই প্রায় দুই মাস বন্দি ছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু | এখন সেটি হয়েছে মানসিক হাসপাতাল |

জেলে থাকার সময় এল সরস্বতী পুজো | সেই সময় বহরমপুর জেলে সরস্বতী পুজো হত না | জেলের ভিতরে সরস্বতী পুজো করার জন্য সুভাষচন্দ্র বসু জেদ ধরেন | প্রথমে রাজি না হলেও শেষমেশ দাবি মেনে নেয় জেল কর্তৃপক্ষ | লোকসংস্কৃতি গবেষক পুলকেন্দু সিংহ ‘মুর্শিদাবাদে সুভাষচন্দ্র’ গ্রন্থে লেখেন, ‘‘বহরমপুর জেল থেকে সুভাষচন্দ্র ৮।১২।১৯২৪ তারিখে শরৎচন্দ্র বসুকে লিখেছেন, ‘গত বুধবার আমি এখানে এসে পৌঁছেছি।’ অর্থাৎ তিনি বহরমপুরে এসেছিলেন ৩।১২।১৯২৪ তারিখে। এখান থেকে তিনি যান ২৫।১।১৯২৫ তারিখে। তখন দুর্গাপুজোর সময় নয়। সময়টি ছিল সরস্বতী পুজোর।’’ সেই সরস্বতী পুজোর সময় জেলের বাইরের বহু লোক পুজো দেখতে এসেছিলেন বহরমপুর জেলে |
মুর্শিদাবাদের সঙ্গে সুভাষচন্দ্র বসুর সম্পর্ক বহু পুরোনো | বহরমপুরে এলে হয় শশাঙ্কশেখর বা মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেস প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ব্রজভূষণ গুপ্তের বাড়িতে উঠতেন তিনি | তাঁর এই জেলায় প্রথম আসা সম্ভবত ১৬-১৭ বয়সে, ছাত্রজীবনে, ১৯১৩-১৪ সাল নাগাদ। সুভাষের বাল্যবন্ধু, কৃষ্ণনগরের হেমন্ত সরকার লিখেছেন, ‘‘কৃষ্ণনগর থকে ট্রেনে আমরা পলাশি গেলাম।…যুদ্ধক্ষেত্রে ভ্রমণ করতে করতে আমি কবি নবীন সেনের ‘পলাশীর যুদ্ধ’ আবৃত্তি করলাম। সেই আবৃত্তি শুনে সূভাষচন্দ্র চোখের জল ফেললেন।’’ পলাশি ভ্রমণের পরে সুভাষকে নিয়ে কয়েক বন্ধু যান বহরমপুরে হেমন্তকুমারের আত্মীয়ের বাড়ি়। পরদিন লালবাগ গিয়ে নবাব সিরাজের সমাধিক্ষেত্র দেখতে যান সুভাষ। ভাগীরথী সান্নিধ্যে আবৃত্তি করেন, ‘‘এই গঙ্গায় ডুবিয়াছি হায় ভারতের দিবাকর হে/ উদিবে সে রবি আমাদেরি খুনে রাঙিয়া পুনর্বার হে।’’ বহরমপুর ছাড়াও বেশ কয়েক বার নানা কর্মসূচিতে জঙ্গিপুর, রঘুনাথগঞ্জ, জিয়াগঞ্জ লালবাগ, বেলডাঙা, কান্দি, লালগোলা, গোকর্ণ, জেমো, পাঁচথুপি গিয়েছেন সুভাষচন্দ্র বসু | স্বাধীনতা সংগ্রামের তহবিল সংগ্রহের জন্য বহরমরপুরে কৃষ্ণনাথ কলেজে এসে বক্তৃতাও করেছেন তিনি | ১৯৩৯ সালে বঙ্গীয় প্রাদেশিক আইনসভার নির্বাচন। জিয়াগঞ্জের কংগ্রেস প্রার্থী তাজ বাহাদুর দুগরের হয়ে তিনি নির্বাচনী প্রচারে এসে যা বক্তৃতা দিয়েছিলেন তা পরের প্রজন্ম মনে রেখেছিল | সে বার, রাজা সুরেন্দ্রনারয়ণ সিংহকে হারিয়ে তাজ বাহাদুর বিপুল ভোটে জয়ী হন। সে বার তাঁকে জিয়াগঞ্জ থেকে রুপোর তরবারি উপহার দেওয়া হয়েছিল।

এখানেই শেষ নয় আলিপুর জেলে বন্দি থাকার সময় সেখানেও সরস্বতী পুজো করিয়েছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু | সেই সময় আলিপুর জেলে কনডেমড সেলে জীবনের শেষ দিনগুলি কাটাচ্ছিলেন বিপ্লবী দীনেশ গুপ্ত ও বিপ্লবী রামকৃষ্ণ বিশ্বাস | তারাও যোগ দিয়েছিলেন সেই সরস্বতী পুজোয় | জেলের সকল বন্দিদের জন্যে ব্যবস্থা করা হয়েছিল খিচুড়ি ভোগের |

© অহর্নিশ

মান্দালয় জেলে বন্দি থাকার সময়ও সরস্বতী পুজো ও অন্যান্য অনুষ্ঠানের জন্য বরাদ্দ ভাতা চেয়ে বার্মা সরকারের চিফ সেক্রেটারিকে জেল থেকে সুভাষচন্দ্র বসু চিঠি লিখেছিলেন |
চিফ সেক্রেটারি
বর্মা সরকার
মান্দালয়
২-২-২৬
প্রসঙ্গ : ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদির জন্য বরাদ্দ ভাতা ।
প্রিয় মহাশয়,
আমাদের দাবীদাওয়ার প্রতি আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। সরস্বতী পূজার খরচ সম্পর্কে ১৬ জানুয়ারি, ১৯২৬-এ প্রেরিত পত্রটির কোনাে জবাব এখনও আমরা পাইনি।
আমরা ইন্সপেকটর জেনারেল অব প্রিজনসকে অনেক আগেই জানিয়েছিলাম যে, তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় অনুষ্ঠান (যেমন—সরস্বতী পূজা, হােলি ও দোলপূর্ণিমা উৎসব এবং দুর্গাপূজা) আমরা এখানে পালন করতে চাই। এই প্রসঙ্গে অনুরােধ জানিয়েছিলাম, এই উৎসবাদির খরচপত্র যেন সরকার বহন করে।

#সংগৃহীত

সরস্বতী পূজানুষ্ঠান পালিত হয়েছে প্রায় একপক্ষকাল আগে, ওই বাবদ খরচ হয়েছে ৭৬ টাকা ৯ আনা। আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি এবং পরবর্তী দু-দিন হােলি উৎসব সম্পন্ন হবে, এই উৎসব বাবদ খরচ সরস্বতী পূজার চাইতে সামান্য কিছু বেশি, কিন্তু ওই অর্থের পরিমাণ কোনােমতেই ১০০ টাকার বেশি হবে না। সরস্বতী পূজা এবং দোল-উৎসব বাবদ খরচের টাকা আমাদের দেবার জন্যে অনুরােধ জানাচ্ছি।
এখানে আলিপুর সেন্ট্রাল জেলের উল্লেখ করা বােধহয় অপ্রাসঙ্গিক হবে না, ওই জেলে
খ্রিস্টান কয়েদীদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালনের জন্য বছরে ১২০০ টাকা দেওয়া হয় (১৯১৯-২০
সালের ভারতীয় জেল কমিটি বিবরণের তৃতীয় খণ্ডের ৭৪৪ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য)। বাংলার জেলকয়েদী এবং রাজবন্দীদের সরকারি খরচে ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালনের সুযােগ দেওয়া হয়—আমরা এ-তথ্যও আপনাদের জানিয়েছি। বর্মার জেলে বন্দীদের সরকারি খরচে কী কী সুবিধে দেওয়া উচিত—সে-সম্পর্কে আপনি এবার সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন আশা করি ।

অর্থবরাদ্দ করার ক্ষমতা এখন বর্মা সরকারের হাতে, সুতরাং চিঠির উত্তর পেতে আশা করি দেরি হবে না। দোল-উৎসবের প্রস্তুতি নিতে কিছু সময় লাগবে, আশা করি, এই মাসের মাঝামাঝি আপনার জবাব পাব।

বিনীত
স্বাক্ষর/এস. সি. বি.
এস. সি. এম.
টি. সি. সি.
বি: বি. জি.
এম. এম. বি.
এম. এম. জি.
এস. এস. সি.
জে. এল. সি.

© অহর্নিশ

=========
তিনি কি আদৌ অধ্যাপক ওটেনকে প্রহার করেছিলেন? প্রদর্শিত গাড়িটি কি গৃহত্যাগের সঙ্গে যুক্ত ? নেতাজি ফাইলে স্পষ্ট এমিলি, অ্যানিটা নেতাজির কেউ নয় তবু কেন অপ্রচার ? বিমান দুর্ঘটনাই হয়নি তবু চিতাভস্মের গল্প কেন? রাশিয়ায় নেতাজি হত্যার কোনাে প্রমাণ নেই তবু হইচই কেন? ফরমােজা থেকে ফৈজাবাদ—এত প্রমাণ তবু বারংবার মৃত্যু পরােয়ানা কেন? আজাদি অর্থসম্পদ লুঠ হল কেন? কেন প্রকাশ্যে এলেন না অখন্ড ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী? নেতাজি নিয়ে এমন নানা বিভ্রান্তির উত্তর—নেতাজি গবেষক ডক্টর জয়ন্ত চৌধুরীর বই ‘ক্ষমা করাে সুভাষ ' স্বাধীনতার সূর্যসারথি বাংলার বড় আপনজন সুভাষ’কে সর্বভারতীয় স্তরে উপযুক্ত প্রাপ্য মর্যাদা দেওয়া হয়নি আজও। নেপথ্যে রয়েছে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি, প্রাদেশিকতা, আর্থিক লেনদেনের কলঙ্কময় গােপন রসায়ন।
তার সৌরদীপ্ত দেশপ্রেম, পবিত্র চরিত্র ও জীবনগাথাকে আড়াল করতে নানা অপচেষ্টা এবং নানাস্তরে গভীর চক্রান্ত চলেছে দিনের পর দিন। এ ব্যাপারে সম্প্রতি পরিবর্তনের হাওয়া বইতে শুরু করেছে। নতুন প্রজন্ম যুক্তি, তর্কও তথ্যের আলােয় নেতাজি সম্পর্কে সত্য জানতে এগিয়ে আসছে। তাদের সেই স্বপ্নপূরণের তাগিদে লেখকের এই নিবেদিত অর্ঘ্য নেতাজির প্রতি 'ক্ষমা করাে সুভাষ।। সত্যের সূর্যস্নাত যে পথে সুভাষচন্দ্রকে খুঁজে পাবে আজ ও আগামী।
আমাজন লিংক : https://amzn.to/48VG7Se
====================
"কিছু সময় পরে , তুমি হয়তো একটি আশ্চর্য এবং ভয়ঙ্কর বিষাদের খবর শুনবে ; কিন্তু সে সব শুনে বিষাদগ্রস্ত হয়ো না , মুষড়ে পোড়ো না । আবার দেখা হবে । .......এসো পবিত্র !"
নেতাজির সাথে শেষ দেখায় এমনি নির্দেশ পেয়েছিলেন ড: পবিত্র মোহন রায় ।
[সূত্র : " নেতাজীর সিক্রেট সার্ভিস " - লেখক - ডঃ পবিত্র মোহন রায়]
আমরা কতজন জানি যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নেতাজীর সিক্রেট সার্ভিস টেক্কা দিত মিত্রশক্তির সিক্রেট সার্ভিসকে ? জানি না আমরা কারণ আমাদের জানতে দেওয়া হয়নি । আসল ইতিহাস জানতে গেলে পড়তেই হবে নেতাজীর আজাদ হিন্দের ইন্টেলিজেন্স অফিসার ড: পবিত্র মোহন রায়ের লেখা বই " নেতাজীর সিক্রেট সার্ভিস " ।
আমাজন লিংক : https://amzn.to/41ERsCj

🕯️|| করেন অক্ষরা নামে জগৎ উদ্ধার ||🕯️সকলকে জানাই সরস্বতী পুজোর শুভেচ্ছা  #সংগৃহীত
02/02/2025

🕯️|| করেন অক্ষরা নামে জগৎ উদ্ধার ||🕯️

সকলকে জানাই সরস্বতী পুজোর শুভেচ্ছা
#সংগৃহীত

 #মাস্টারপ্ল্যান #আতঙ্কের_ভোর সময় কেটে যায় নিজের গতিতে, রাত নেমে আসে চরাচর জুড়ে| গভীর রাতে অমাবস্যার অন্ধকার আকাশের দ...
01/02/2025

#মাস্টারপ্ল্যান

#আতঙ্কের_ভোর

সময় কেটে যায় নিজের গতিতে, রাত নেমে আসে চরাচর জুড়ে| গভীর রাতে অমাবস্যার অন্ধকার আকাশের দিকে তাকিয়ে একটার পর একটা ধোঁয়ার রিং ছেড়ে যায় সৌমাভ| অবনীশ যাই বলুক, যাই বোঝাক সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে সে| তৃষা মিউচ্যুয়াল সেপারেশন চায়, সেই সিদ্ধান্ত মেনে নেবে সে, বৈবাহিক বন্ধন থেকে মুক্ত করে দেবে তৃষাকে| এই পথ জুড়েছিল আলাদা হওয়ার জন্যই... জেদ করে আরো কিছুটা পথ একসঙ্গে হেঁটে হবেই বা কি?

ক্লান্ত শরীর ও মন নিয়ে সারারাত নিজের সঙ্গে লড়াইয়ের পর ভোরের দিকটা আপনা আপনিই চোখ বন্ধ হয়ে এসেছিল সৌম্যর| এমন সময় তুমুল হইচই, চিৎকার আর কাবেরী দেবীর কান্নাকাটির আওয়াজে চোখ খুলে গেল তার| সদ্য ভাঙা ঘুম আর কান্নাকাটি, চেঁচামেচির শব্দে প্রথমে সে বুঝতেই পারল না কোথায় আছে, মাথা প্রচন্ড ভার, কি যে হয়ে চলেছে কিছুই যেন অনুভব করতে পারছে না| চেতনা আসতেই সে দৌড়ল ড্রয়িংরুমের দিকে, মায়ের কান্নার শব্দ তো ওখান থেকেই আসছে| এসে যা দেখল তাতে মনে হল তার পা দুটো কেউ পেরেক দিয়ে মাটির সঙ্গে গেঁথে দিয়েছে|

তেমন কিছু বাড়াবাড়ি হয় নি সৌম্যদা| পাড়ার যতীন ডাক্তার ডিসপেনসারিতেই ছিল, প্রাথমিক চিকিৎসা ওখানেই করানো হয়েছে| তোমরা কেবল একটু কাকুর খেয়াল রেখ| বয়স্ক মানুষ, দুমদাম যেন বাড়ির বাইরে না বেরিয়ে যায়| পায়ে হাল্কা চোট লেগেছে, ডাক্তারবাবু বললেন কয়েকটা দিন সাবধানে থাকতে|

রুদ্ধকন্ঠে বলল সৌম্য, এসব হল কিভাবে?

জানোই তো বাইকের অত্যাচার কি বেড়েছে আজকাল| বোধহয় নতুন কোন ছেলে সদ্য চালাতে শিখেছে দিয়েছে ঠু কে| কাকু বয়স্ক মানুষ তার ওপর এক হাতে বাজারের ব্যাগ ছিল সামলাতে পারে নি, একেবারে মুখ থুবড়ে পড়েছে| থুতনিতে সামান্য একটু কেটে গিয়েছিল, পরিস্কার করে লিউকোপ্লাস্ট লাগিয়ে দিয়েছে| যদি মনে হয় আরেকবার ওয়াশ করিয়ে নিও|

গাড়ির নম্বরটা কেউ দেখেনি? দেখলে একটা কমপ্লেন লজ করা যেত|

কে দেখবে দাদা! রোববারের বাজার, সবাই টাটকা, তাজা মাছ, সব্জী ব্যাগে পুরতে ব্যস্ত| আর আজকালকার দিন তো জানো, কেউ কাউকে নিয়ে ভাবে? নেহাত আমরা কাছাকাছি আড্ডা দিচ্ছিলাম তাই, নইলে কতক্ষণ যে কাকু ওইভাবে রাস্তায় একাকী! আসি গো সৌম্যদা... একটু খেয়াল রেখো|

স্পষ্ট শুনতে পেল সৌম্য তিনটে ছেলের মধ্যে একজন বিড়বিড় করছে, এইজন্যই আজকাল মানুষের উপকার করতে ইচ্ছে হয় না| যেচে বাড়ি বয়ে মানুষটাকে দিয়ে গেলাম জল-মিষ্টি তো দূরের কথা, মুখে একটা ভাল কথা নেই, উল্টে জেরায় জেরায় জেরবার করে দিল! বিরক্ত লাগে| শানুটাকে বললাম,কেন ঝামেলা বাড়াচ্ছিস বুড়োকে নিয়ে, শুনলে তো! পরোপকারের ভূত মাথায় চাপলে এমনটাই হয়!

আজ তোমরা ছিলে বলে তোমাদের কাকাকে ফিরে পেলাম| অনেক সাহায্য করলে গো তোমরা, নইলে যে মানুষটার কি হত, পরে একদিন আসবে কিন্তু! আমি নিজে হাতে রেঁধে খাওয়াব| আজ তো কিচ্ছুটি করতে পারলাম না, ছেলের দিকে কড়া চোখে তাকিয়ে নরম সুরে বলে উঠলেন কাবেরী দেবী| সৌম্য বুঝল শুধু সে নয় মাও ওই ছেলেটার বিড়বিড়ানি শুনতে পেয়েছেন|

হাসিমুখে আসছি কাকিমা, বলে ছেলেগুলো চলে যেতেই দরজা বন্ধ করে বাবার পায়ের কাছে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ল সৌম্য| তুমি কি বোঝো না বাবা তোমায় বড্ড ভালোবাসি| বারবার বললাম এই কটা দিন বাড়ির বাইরে বেরিও না, আমার কথা শোনো| সেই শুনলে না তো? দুটো দিন থাকোই না বাড়িতে| একটুও কি আমাকে ভালোবাসো না? আজ যদি তোমার একটা কিছু হয়ে যেত মা আর আমি কি নিয়ে থাকতাম? বিবেকের কাছেই বা কি জবাবদিহি করতাম?

বিবেকের কাছে জবাবদিহি? সেসবও তাহলে করো তুমি? আমি তো ভেবেছিলাম তোমার বিবেক অনেকদিন আগেই... কঠোর স্বরে বলে উঠলেন কাবেরী দেবী| আজ তোমার পছন্দের মাছ আনতে গিয়েই তো তোমার বাবা....

সত্যি বলছি মা, তৃষার সঙ্গে আমি কোনো অন্যায় করিনি| এমনটা কি আমি করতে পারি? একদিনের চোখের দেখাকেই সত্যি বলে মেনে নিলে মা, এতদিন ধরে যেভাবে মানুষ করেছ, যেমনটা শিক্ষা দিয়েছ তার ওপর এতটুকু আস্থা নেই তোমার? ছেলেকে এতটুকু বিশ্বাস করতে পারলে না? এত অবিশ্বাস মনের কোন কোণে লুকিয়ে রেখেছিলে মা?

আছে, বিশ্বাস আছে| আসলে কি বল তো, ভয় পেয়ে গেছিলাম| বহুদিন পর সৌম্যর মাথাটা কোলে টেনে নিলেন কাবেরী দেবী| ছোটবেলার মতো চুলে বিলি কেটে দিতে লাগলেন| প্রায় ঘুম এসে যাচ্ছিল সৌম্যর, এ ঘুম শান্তির, এ ঘুম হারানো বিশ্বাস ফিরে পাওয়ার| ঠিক এমন সময় শব্দ করে কলিং বেলটা বেজে উঠল|

ঘড়ির দিকে তাকালেন কাবেরী, ওরে সৌম্য ওঠ, ওঠ| ওই বোধহয় মন্টুর মা এসে পড়ল| রান্নাবান্নাগুলো করতে হবে তো| নইলে কি ছুটির দিনে হরিমটর খেয়ে থাকবি?

মা তুই বলছে আবার! খুশিতে সে পাগল হয়ে গেল|

উঠে দাঁড়াতেই বাবার বুক পকেটের দিকে নজর গেল তার| ভেতর থেকে একটা দোমড়ানো মোচড়ানো কাগজ উঁকি দিচ্ছে না! হাত বাড়িয়ে নিতেই দেখল ছাপার অক্ষরে লেখা রয়েছে, ' এটা ট্রায়াল ছিল| বেশি ঝামেলা করলে একেবারে বৈতরণী পার করে দিয়ে আসব| '

( ক্রমশ )
#সংগৃহীত

Address

Kolkata

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Pritisha posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to Pritisha:

Videos

Share

Category