17/01/2025
িনের_সম্বলপুর_ট্যুর_প্ল্যান_হিরাকুঁদ_ও_ডেবরিগড়_স্যাঞ্চুয়ারী...
ওড়িশা মানেই বাঙালির প্রিয় পুরী। সমুদ্রের পাড়ে বসে থাকা আর জগন্নাথ দেবের দর্শন করা। কিছু হলেই এক ছুটে পুরী চলে যান সকলে। কিন্তু কেউ কি জানেন পুরী ছাড়াও ওড়িশায় রয়েছে অসংখ্য পর্যটন কেন্দ্র। বিশেষ করে বর্ষার সময় সেগুলি আরো মনোরম হয়ে ওঠে। এরকমই একটা জায়গা হল #সম্বলপুর । নাম হয়তো অনেকেই জানেন কিন্তু কখনো বেড়ানোর কথা ভাবেননি বা ভাবলেও কোনো কারণে আসা হয়নি। সম্বলপুরে রয়েছে পাহাড়, জঙ্গল, নদী ও ঝর্নার সহাবস্থান। তাও মাত্র দুদিনে, অর্থাৎ এক রাত দুদিনে। এত কম সময়ের মধ্যে যদি এত কিছু দেখে ফেলতে পারেন তাহলে কেনো আসবেন না, যাদের হাতে ছুটির সংখ্যা খুবই কম, এবং যারা উইক এন্ড ছাড়া খুব একটা ছুটি পান না , তাদের জন্য প্রকৃতির মাঝে দুদিন কাটিয়ে নিজেদের রিফ্রেস করার সেরা ঠিকানা কিন্তু এই সম্বলপুর।
©️ ভ্রমন পিপাসু
সম্বলপুর উড়িষ্যার ৩০টি জেলার মধ্যে অন্যতম একটি জেলা, যার সদর শহর সম্বলপুর, একাধারে উড়িষ্যার চতুর্থ বৃহত্তম শহর( ভুবনেশ্বর. কটক, রৌরকেলার পরেই) সম্বলপুর নামটি এসেছে এই এলাকার কুলদেবী মা সমলেশ্বরীর নামে, যা এই অঞ্চলের প্রধান মন্দির, এছাড়াও সম্বলপুরের আশেপাশে আরো অনেক পুরনো মন্দির আছে যেগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা পরের পয়েন্ট গুলোতে করবো। যাইহোক মা সমলেশ্বরীর নামে কিন্তু একটি ট্রেনও আছে আপনারা হয়তো অনেকেই জানেন, যেটি হাওড়া থেকে ছত্রিশগড়ের জগদলপুরের মধ্যে চলাচল করে। এই ট্রেনেই কিন্তু আপনাদের সম্বলপুর যেতে ও ফিরতে হবে। মানে টাইমিং হিসেবে এই ট্যুরের জন্য একদম আদর্শ।
এই সম্বলপুর কিন্তু তিনটে কারণে গোটা ভারতে বিখ্যাত,
এক সকলের পরিচিত, ছোটোবেলায় ভূগোল বইতে পড়া হিরাকুঁদ বাঁধ,মহানদী নদীর ওপর তৈরি এই বাঁধ মাটির তৈরি পৃথিবীর দীর্ঘতম মাটির বাঁধ, দৈর্ঘ্যে প্রায় ১০ কি.মি। মহানদীর বন্যার হাত থেকে উড়িষ্যাকে বাঁচাতে স্বাধীনতার আগেই বহুমুখী নদী পরিকল্পনার আন্ডারে এই বাঁধ নির্মানের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। স্বাধীন ভারতের এটিই প্রথম বহুমুখী নদী পরিকল্পনা।
আরো যে দুটো কারণে এই সম্বলপুর বিখ্যাত সেটা হল - সম্বলপুরী গান ও সম্বলপুরী শাড়ি, সম্বলপুরী ভাষায় তৈরি সম্বলপুরী গান সম্প্রতি খুবই ভাইরাল হয়েছে। আর সম্বলপুরে আসলে এখানকার সম্বলপুরী শাড়ি নিয়ে যেতে ভুলবেন না যা GI ট্যাগ ও পেয়েছে। চলুন এবার পয়েন্টের আকারে এক রাত দু দিনের সম্বলপুর ট্যুর নিয়ে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা যাক..
#সম্বলপুরে_আসার_প্ল্যান_কোন_সময়ে_করবেন :- গরমের সময়টা বাদ দিয়ে আপনি সারাবছরই এই সম্বলপুরে আসতে পারবেন। তবে এখানে আসার সেরা সময় বর্ষাকাল অর্থাৎ - আগস্ট থেকে শুরু করে অক্টোবর। এই অঞ্চলে গরম প্রচন্ড থাকার জন্য অনেকে শীতকালকে বেছে নেয়। নভেম্বর থেকে মার্চ এই সময়ে এখানে মনোরম পরিবেশ বিরাজ করে তাই অনেক শান্তিতে ঘোরা যায়, কিন্তু বর্ষাতে এই অঞ্চল তার প্রাণ যৌবন ফিরে পায়, তাই গরমকে একটু সহ্য করতে পারলে আমি বলবো বর্ষাতেই আসুন।
#সম্বলপুরের_দর্শনীয়_স্থান :- আপনারা এক রাত দুদিনের ট্যুরে এসে সম্বলপুরে কোন কোন জায়গা গুলো ঘুরে দেখবেন সেগুলো সম্পর্কে যদি ধারনা থাকে তাহলে প্ল্যান মাফিক দর্শনীয় স্থান গুলো ঘুরে আসতে আপনাদের বিশেষ কোনো অসুবিধে হবে না, এটাও মাথায় রাখতে হবে, হাতে মাত্র দুদিন - তাই একটু গন্ডগোল হলেই আপনাদের সময়, পয়সা সবকিছুই নষ্ট, তাই আসুন দেখেনি এই দুদিনে কোন কোন স্পট গুলো দেখে নেবেন....
১. হিরাকুঁদ বাঁধ।
২. গান্ধী মিনার ( হিরাকুঁদ)
৩. জহর মিনার (হিরাকুঁদ)
৪. জিরো পয়েন্ট মেরিন ড্রাইভ ( হিরাকুঁদ)
৫. বুরলা ওয়াটার স্পোর্টস পয়েন্ট (হিরাকুঁদ)
৬. ডেবরিগড় স্যাঞ্চুয়ারী ।
৭. ডেবরিগড় বোটিং পয়েন্ট ।
৮. জঙ্গল সাফারি, ডেবরিগড়।
৯. সম্বলপুরী শাড়ি হাব, বড়গড়।
১০. মা ঘন্টেশ্বরী মন্দির ।
১১. হুমা লিনিং/হেলানো মন্দির।
১২. সমলেশ্বরী মন্দির ( লাইট & সাউন্ড শো যদি সময় পান)
১৩. মহানদী ভিউ পয়েন্ট।
#আসবেন_কি_ভাবে :- এই সম্বলপুরে আসার সরাসরি সবচেয়ে সহজ উপায় হলো ট্রেন, হাওড়া থেকে সম্বলপুরের সরাসরি ৩ টের মত ট্রেন আছে, কিন্তু সবচেয়ে ভালো টাইমিং যদি বলেন সেটা হল সমলেশ্বরী এক্সপ্রেসের যেটা প্রতিদিন হাওড়া থেকে রাত ১০.২০ তে ছেড়ে সকাল ৮.৩০ এ আপনাকে সম্বলপুরে পৌঁছে দেবে। একইরকম ভাবে সম্বলপুর থেকে সন্ধ্যা ৬.২০ তে ছেড়ে পরের দিন ভোর ৫.৩০ এ আপনাকে হাওড়া পৌঁছে দেবে।
এছাড়াও শালিমার স্টেশন থেকেও আপনারা সম্বলপুর আসার জন্য ট্রেন পেয়ে যাবেন - মহিমা-গোসাই এক্সপ্রেস, শালিমার-সম্বলপুর সুপারফাস্ট....
এর পাশাপাশি আপনি যদি টিকিট না পান তাহলে ঝারসুগরা জং নেমেও এই সম্বলপুরে চলে আসতে পারেন। অনেক বেশি ট্রেনের অপশন পাবেন আর সম্বলপুর থেকে ঝারসুগরার দূরত্ব ৫০ কি.মি আগে। ঝারসুগরা থেকে ট্রেন,গাড়ি বাস পেয়ে যাবেন সম্বলপুরে আসার জন্য।
#ট্যুর_প্ল্যান :- হাওড়া থেকে সকালে আসার যে দুটো ট্রেন আছে, ট্রেন গুলো মোটামোটি আপনাকে খুব একটা সকালে না, ৮.৩০ - ৯ টার মধ্যে আপনাকে সম্বলপুরে পৌঁছে দেবে তাই এই পুরো দিনটা আপনাদের ঘুরতে বিশেষ কোনো অসুবিধে হবে না। গাড়ি দুদিনের জন্য আগে থেকে অবশ্যই বলে রাখবেন যে গাড়ি আপনাদের প্রথম দিন স্টেশন থেকে পিকআপ করে দুদিন ঘুরিয়ে আবার আপনাদের নেক্সট দিন বিকেলে সম্বলপুর স্টেশনে ড্রপ করে দেবে, যদি অন্য কোনো প্ল্যান না থাকে, এই সম্বলপুর থেকে আপনি চাইলে আরো একটা দারুন জায়গায়, এক দুদিনের জন্য যেতে পারেন অবশ্যই সেটা বর্ষাতে, সেটা নিয়ে নেক্সট পোস্টে আলোচনা করবো, এখন সম্বলপুরে ফিরে আসি..
#প্রথম_দিন :- প্রথম দিনের প্ল্যানটা দুরকম হতে পারে আপনাদের, স্টে এর ওপরে যেটা নির্ভর করবে। দুটো প্ল্যানই আমি এই পয়েন্টে আলোচনা করবো। আপনারা দুটো জায়গায় থাকতে পারেন এক, একটু অন্য ভাবে প্রকৃতির মাঝে থাকতে চাইলে আমি অবশ্যই বলবো - ডেবরিগড় স্যাঞ্চুয়ারির ভেতরে নেচারপার্কে থাকুন, এখানে দু ধরনের থাকার অপশন আছে, সবচেয়ে ভালো বাইসন ব্লকে থাকুন, এখানে মোটামোটি ৮ টি থাকার রুম পেয়ে যাবেন। ভাড়া মোটামোটি ৬৩০০ টাকার মতো, এর মধ্যে ইনক্লুড থাকছে দুজনের এন্ট্রি টিকিট, থাকা, ৩ বেলা খাওয়া এবং টিফিন, সাথে ড্রাইভারের থাকা ও খাওয়া, হিরাকুঁদ ড্যামের জলে বোটিং এর সুবিধা সাথে ট্যাক্স। এর ওপরে উপরি পাওনা রুমের ব্যালকনি বসে লেকের সৌন্দর্য উপভোগ করার পাশাপাশি হরিন এবং বাইসনের লড়াই দেখারও সৌভাগ্য হতে পারে। এত কিছু পাচ্ছেন তাহলে কেনো থাকবেন না, একদিনের তো ব্যাপার। দ্বিতীয় যেটা করতে পারেন সম্বলপুর শহরের যেকোনো হোটেলে থাকতে পারেন, খরচা অনেকটা কমে যাবে, ১২০০ থেকে ২০০০ টাকার মধ্যে ভালো হোটেল পেয়ে যাবেন।
আপনারা ডেবরিগড় নেচার ক্যাম্পে থাকছেন এটা ধরে নিয়েই প্ল্যান টা বলছি, স্টেশন থেকে ফ্রেশ হয়ে, ব্রেকফাস্ট করে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ুন, প্রথমেই চলে আসুন হিরাকুঁদ ড্যামে, হিরাকুঁদে কিন্তু দেখার মত অনেকগুলো জায়গা আছে সেটা আমি আগেই উল্লেখ করেছি। সম্বলপুর থেকে হিরাকুঁদের দূরত্ব প্রায় ১৮ কি.মি, আপনাকে প্রথমে যেতে হবে গান্ধী মিনারে, হিরাকুঁদ ড্যামের দুদিকে দুটো মিনার আছে একটি গান্ধী মিনার এবং একটি জহর মিনার। দুটো মিনারের মধ্যে দূরত্ব ২৫ কি.মি। এই দুটো মিনার থেকেই হিরাকুঁদ ড্যামের এক অসাধারণ ভিউ উপভোগ করতে পারবেন। গান্ধী মিনারের আসার জন্য আপনাদের প্রথমে ১০ টাকার টিকিট কেটে জওহর পার্কের ভেতরে প্রবেশ করতে হবে, এখান থেকেই আপনারা গান্ধী মিনারের ওপরে ওঠার জন্য রোপওয়ের টিকিট পাবেন। টিকিট - ৮৪ টাকা। রোপওয়ে থেকে নেমে কিছুটা পথ সিঁড়ি দিয়ে একবারে গান্ধী মিনারের টপে পৌঁছে যাবেন, এখান থেকে হিরাকুঁদ ড্যামের ৩৬০ ডিগ্রি ভিউ উপভোগ করে চলে আসুন নিচে।
এবার এখান থেকে সোজা চলে আসুন ড্যামের অপর সাইডে অর্থাৎ জহর মিনারে, এই মিনার থেকেও গান্ধী মিনারের মত সেম ভিউ পাবেন, তবে এই মিনারে ওঠার কোনো টিকিট নেই, আপনি গাড়ি নিয়ে সরাসরি চলে আসতে পারবেন এখানে, কেবলমাত্র গাড়ি পার্কিং ফি বাবদ লাগবে ৪০ টাকা। এবার এখান থেকে চলে আসুন কিছু দূরেই বুরলার ওয়াটার স্পোর্টস এরিয়াতে, আপনারা যদি ওয়াটার স্পোর্টস করতে চান তাহলে এখানে আসবেন। এখানে বিভিন্ন ধরনের ওয়াটার স্পোর্টস চাইলে করতে পারেন যেমন - Jetski, Parasailing, Kayaking, Speed Boat, Paddle Boat Cruise Boat প্রভৃতি। বুরলা থেকে এবার মেরিন ড্রাইভ ধরে চলে আসুন জিরো পয়েন্টে, এই রোড জার্নিটা কিন্তু খুবই উপভোগ্য, জিরো পয়েন্ট থেকে পুরো ড্যামের এক সুন্দর ভিউ এনজয় করতে পারবেন।
এবার সময় নষ্ট না করে সোজা চলে আসুন একবারে ডেবরিগড়ে। হিরাকুঁদের ডেবরিগড় ওয়াইল্ড লাইফ স্যাঞ্চুয়ারি, আমাদের দেশের হাতে গোনা এমন কয়েকটি জঙ্গলে মধ্যে পড়ে, যা কিন্তু সারাবছরই খোলা থাকে। তাই আপনি এখানে সারাবছরই আসতে পারবেন, বর্ষাতে আসলে ভালো ভিউ পাবেন কিন্তু শীতে আসলে বনের জন্তুদের দেখার সম্ভাবনা বেশি থাকে। ডেবরিগড় জঙ্গলের প্রধান আকর্ষন ভারতীয় গৌড় বা বাইসন, সাম্বার ডিয়ার, এবং ময়ুর। এগুলো দেখার জন্য আপনাকে জঙ্গল সাফারি অবশ্যই করতে হবে।
যাইহোক ভেতরে ঢুকে রুম বুকিং কপি এবং সাফারি বুকিং দেখিয়ে এন্ট্রি করতে হবে। আপনাদের বুক করা বাইসন কটেজ গুলো এন্ট্রি গেট থেকে প্রায় ৩ কি.মি দূরে। তাই গাড়ি করেই আপনাদের যেতে হবে, কটেজের ভেতরে গাড়ি পার্কিং এর সমস্ত ব্যবস্থা আছে। রুমে ঢুকে স্নান, লাঞ্চ করে কিছুটা সময় রেস্ট নিয়ে বিকেলে দিকে চলে আসুন বোটিং করতে। হিরাকুঁদ ড্যামের লেকটি একদমই নেচার ক্যাম্পের লাগোয়া, এই নেচার ক্যাম্প বুক করলে বোটিং এর জন্য এক্সট্রা কোনো চার্জ দিতে হবে না। এই লেকটা যেহেতু আকারে বৃহৎ তাই এই লেকের মাঝে বেশ কিছু ছোটো ছোটো দ্বীপ জেগে উঠেছে। তাই বোটিং করতে করতে প্রথমেই আপনাদের নিয়ে যাওয়া হবে ব্যাট আইল্যান্ডে এই দ্বীপে প্রচুর বাদুর থাকার জন্য এরকম নামকরন করা হয়েছে। কিছু মৎসজীবিও বসবাস করে এই দ্বীপে। এরকমই কিছু দ্বীপ আছে যেমন - সানসেট আইল্যান্ড, বোট আইল্যান্ড, ডগ আইল্যান্ড, এগুলো দেখে আবার ফিরে চলে আসুন ক্যাম্পে। ক্যাম্পে ফিরে এসে সন্ধ্যার টিফিন ও রাতের ডিনার করে খুবই তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ুন কারন নেক্সট দিন আপনাদের খুবই সকাল সকাল উঠতে হবে সাফারির জন্য।
এবার আপনারা যদি নেচার ক্যাম্পে না থেকে হোটেলে থাকেন তাহলে আপনাদের প্ল্যানে সামান্য চেঞ্জ করতে হবে আর সেটা ডেবরিগড়ে। ডেবরিগড়ে এন্ট্রি টিকিট কেটে ভেতরে ঢোকার পর বিকেলের সাফারিটা করে নিতে হবে। কারন সকাল ও বিকেল সাফারির জন্য উত্তম সময়। সাফারি এবং বোটিং করে নিয়ে ফিরে আসুন সম্বলপুরের হোটেল, এভাবেই আপনাদের প্রথম দিনের ইতি ঘটবে।
#দ্বিতীয়_দিন :- দ্বিতীয় দিনটা আপনাদের খুবই সকাল সকাল শুরু করতে হবে, কারণ হল জঙ্গল সাফারি। সকালের জঙ্গল সাফারিতে অনেক লাভ আছে। দিনে ৪টি করে সাফারি হয়। অনলাইনে বুক করার সময়ে সব দেখিয়ে দেবে। সাফারির গাড়ি ৩ ধরনের আছে....
৪ সীটার গাড়ি নিলে ২১০০ টাকা
৮ সীটার গাড়ি নিলে ৩১০০ টাকা
১২ সীটার গাড়ি নিলে ৪২০০ টাকা
পুরো ২ ঘন্টা ৩০ মিনিটের সাফারি হয়, যাতে আপনি বাইসন, লুপ্তপ্রায় হরিন, ময়ুর, বন্য শুয়োর প্রভৃতি দেখতে পাবেন। সাফারি এসে রুমে ফিরে এসে ব্রেকফাস্ট করে নিন তারপর ব্যাগপত্র গাড়িতে তুলে বেরিয়ে পড়ুন সম্বলপুরের উদ্দেশ্যে। দ্বিতীয় দিন আপনারা সম্বলপুর শহর ও আশেপাশের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান গুলো দেখে নিবেন সম্বলপুরে যাওয়ার আগে চলে আসুন বড়গড়ে, এই বড়গড়ে আসবেন কেনো তার কারণ হল GI ট্যাগ পাওয়া সম্বলপুরী শাড়ির জন্য। এই সম্বলপুরী শাড়ি কিন্তু এই বড়গড়ের বাড়ি বাড়িতে হাতে তৈরি হয় তারপর চলে যায় সম্বলপুরে। এখানে আসলে নিজের চোখে শাড়ি বানানো দেখা ছাড়াও হাব থেকে শাড়ি কিনতেও পারেন। যদি ইন্টারেস্ট না থাকে তাহলে এটা বাদ ও দিতে পারেন।
বড়গড় থেকে সম্বলপুরে যাওয়ার পথে পেয়ে যাবেন দুটো মন্দির একটি চিপলিমার মা ঘন্টেশ্বরী মন্দির এবং একটি হুমার লিনিং মন্দির।
বড়গড় থেকে প্রথমে চলে আসুন চিপলিমার মা ঘন্টেশ্বরী মন্দিরে। মহানদীর তীরে অবস্থিত এই ঘন্টেশ্বরী মন্দির। মন্দিরে আসলেই প্রচুর ঘন্টা বাঁধা দেখতে পাবেন, ভক্তরা তাদের মনস্কামনা পুরনের জন্য এই ঘন্টা গুলো বেঁধে যান। মন্দিরের পাশেই একটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প ও আছে, সময় পেলে এখানেও যেতে পারেন। এবার এখান থেকে চলে আসুন হুমার লিনিং বা হেলানো মন্দিরে এরকম হেলানো মন্দির বারানসীতে আছে আমরা সকলেই জানি কিন্তু সম্বলপুরের কাছে হুমাতেও এরকম একটা যে মন্দির আছে সেটা অনেকেই প্রায় জানে না। ঘন্টেশ্বরী মন্দির থেকে নদীর ঠিক উল্টো দিকেই এই মন্দিরটি, কিন্তু মাঝে কোনো নদী ব্রীজ না থাকার জন্য আপনাদের অনেকটা পথ ঘুরে এখানে যেতে হবে। এটি মূলত একটি শিব মন্দির। এই মন্দিরের আসেপাশে আরো কিছু মন্দির আছে । এই মন্দিরের কিন্তু পুরনো এক ইতিহাস আছে।
এবার হুমা থেকে আবার ফিরে যেতে হবে সম্বলপুরের দিকে দ্বিতীয় দিনের শেষ স্পট মা সমলেশ্বরী মন্দিরে। হুমা থেকে সমলেশ্বরী মন্দিরের দূরত্ব প্রায় ৩০ কি.মি। এই মন্দির ও কিন্তু বাকি মন্দির গুলোর মত মহানদীর তীরে অবস্থিত। উড়িষ্যা ও ছত্তিশগড়ের মানুষের মধ্যে এটি খুবই পরিচিত মা সমলেশ্বরী পীঠ। সমলেশ্বরীকে দেবী দুর্গার রূপে পূজা করা হয়। দেবী 'শ্রী শ্রী সমলাই দেবী' বা 'মা সামালাই' নামে পরিচিত। মা সামলাইয়ের মূর্তিটি গ্রানাইট শিলা দিয়ে তৈরি। মন্দির থেকে মা সামলাইয়ের দর্শন করে চলে আসুন পার্শ্ববর্তী মহানদী ভিউ পয়েন্টে বিকেলটা এখানে কাটিয়ে তারপর ফিরে আসুন সম্বলপুর স্টেশনে। একটা কথা বলে রাখা ভাল আপনারা যদি রাতটা সম্বলপুরে থেকে পরেরদিন সকালের কোনো ট্রেনে ফিরেন তাহলে সমলেশ্বরী মন্দিরের লাইট & সাউন্ড শো টা কিন্তু অবশ্যই দেখে নিতে পারেন, প্রায় ৪০ মিনিটের এই লাইট & সাউন্ড শো আপনাদের বেশ ভালোই লাগবে। যদি সন্ধ্যা ৬.২০ এর সমলেশ্বরী এক্সপ্রেস ধরে ফিরতে চান তাহলে এটা সম্ভব না কারন বিকেল ৫.৩০ এর মধ্যে আপনাকে স্টেশনে চলে আসতে হবে। যাইহোক দুদিনের সম্বলপুর ভ্রমনের সুখকর স্মৃতিকে মনে মধ্যে নিয়ে নিজ নিজ বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিয়ে পরের দিনই চলে আসুন হাওড়া।
#সম্বলপুরের_হোটেল :- আমি যে প্ল্যান টা দিয়েছি সেটা এক রাত দু দিনের, অর্থাৎ আপনাকে একটা রাত থাকতে হচ্ছে সম্বলপুরে, বাকি দুরাত ট্রেনে। এই এক রাত থাকার জন্য আমি সাজেস্ট করবো ডেবরিগড় স্যাঞ্চুয়ারির ভেতরে অবস্থিত..
১. ডেবরিগড় নেচার ক্যাম্পের বাইসন ব্লক - অনলাইন বুকিং
যোগাযোগ, শ্রীকান্ত - 9337523983
কম খরচে থাকতে চাইলে সম্বলপুরে অনেক হোটেল আছে..
২. হোটেল চন্দ্রমনি - 9437642165/9238817083
৩. হোটেল নর্মদা রেসিডেন্সি - 7855842405
৪. হোটেল অপ্সরা - 9178961555
৫. OTDC - পান্থনিবাস
#গাড়ি_বুকিং :- দুদিন ঘোরার জন্য আপনাদের তো একটি গাড়ির প্রয়োজন অবশ্যই হবে। আপনি সম্বলপুরে নেমেও স্টেশনের সামনে থেকে গাড়ি বুক করে নিতে পারেন, কিন্তু ট্রেন যেহেতু অনেকটা দেরিতে ঢুকছে তাই আমার মতে গাড়ি আগে থেকেই বুক করে আসা ভালো। এখানকার গাড়ি বুক করার সিস্টেম হল - বড় গাড়ি ( বোলেরো, ইনোভা) হলে ১২০০-১৩০০ টাকা দিন প্রতি, তার সাথে সাথে ১২ টাকা প্রতি কি.মি তে। একইরকম ভাবে ছোটো গাড়িতে ১০০০ টাকা, এবং কি.মি তে ১০ - ১২ টাকা।
গাড়ি আগে থেকে বুকিং করে আসার জন্য আমি কিছু গাড়ির ড্রাইভারের ও এজেন্সির নাম্বার আপনাদের সুবিধার্থে দিয়ে দিচ্ছি...
১. Biswanath Pradhan - 9937495045
২. DK Tour and Travels - 8455032829
৩. A-ONE TRAVEL - 7008821092
#খরচা :- এবার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট, সেরা হল খরচের ব্যাপারে। যদিও খরচের ব্যাপারটি ওই ভাবে বলা যায়না, তাও আপনাদের সুবিধার্থে আমি একটা আইডিয়া দিতে পারি। যদিও এই ট্যুরটা মাত্র দুদিনের তাই খুব একটা বেশি খরচ আপনাদের হবে না। খরচ একমাত্র বাড়বে অথবা কমবে, যখন আপনারা হোটেলে থাকবেন না ডেবরিগড় নেচার ক্যাম্পে থাকবেন তার ওপরে নির্ভর করবে, যদি সম্বলপুরের হোটেলে থাকেন তাহলে খরচা আরো কমে যাবে।
হোটেল খরচ - ডেবরিগড় নেচার পার্কে - 6300 টাকা
হোটেল - 1200 - 2000 মধ্যে।
গাড়ি ভাড়া - ছোটো গাড়ি - 1000-1100 টাকা প্রতি দিন এবং কি.মি প্রতি 10 টাকা।
বড় গাড়ি - 1200-1300 টাকা প্রতিদিন , আর কি.মি প্রতি 12 টাকা।
খাওয়ার খরচ - 700 - 800 টাকা।
এর বাইরেও কিছু এক্সট্রা খরচ আছে যেমন - ট্রেন ভাড়া, বিভিন্ন অ্যাক্টিভিটি করা, পার্কিং ফি, এন্ট্রি ফি এবং কেনাকাটা।
সব কিছু ধরে যদি 4 জনের গ্রুপে আসেন তাহলে আপনাদের জন প্রতি 6 - 7 হাজার টাকার মতো খরচা হবে।
আশাকরি এক রাত দুদিনের সম্বলপুর ট্যুর নিয়ে করা এই পোস্টটি আপনাদের বেশ ভালোই লেগেছে এবং আপনাদের যথেষ্ট কাজে লাগবে। ধন্যবাদ সকলে ভালো থাকবেন...
©️ভ্রমন_পিপাসু
Source: Santanu Adak
゚