20/12/2021
কবিতা স্বপ্নে আসে। কবিতার নাম ধাম আবাস অবধি পাওয়া যায়। এমনকি scientist ও খুঁজে পান আলোর ঠিকানা,স্বপ্নেই।
লেখাটি পড়ুন যাদের এ বিষয়ে সন্দেহ আছে।
"মনোভূমি
Arpita Acharya
রত্নদীপা দে ঘোষ একজন অনুভূতিশীল কবি । তিনি আমার ফেসবুক বন্ধু । তার কবিতার ব্যাপ্তি ও গভীরতা বিস্মিত করে বারবার। তার সাম্প্রতিক শেয়ার করা একটি কবিতায় তিনি বলেছেন, কবিতাটি তার 'স্বপ্নে পাওয়া'।
কীভাবে একজন কবি স্বপ্নে কবিতা পেতে পারেন? খুব সরল ভাবে বললে কবিতা তো স্বপ্নপূরণ । বাস্তবে যা পাওয়া যায় না, যা বলা সম্ভব নয়, যা এমনকি কখনো কখনো কল্পনাও করা সম্ভব নয় তা স্বপ্নে আসে । আবার কবিতাতেও আসে । কিন্তু শুধুমাত্র এটুকুই পুরোটা নয় । এর পেছনে রয়েছে আরও কিছু জটিল মনোপ্রক্রিয়া ।
জার্মান নোবেল লরিয়েট Otto Loewi সম্পর্কে প্রচলিত কথা এই যে, তিনি নাকি তার এই সম্পূর্ণ আবিষ্কারের আইডিয়াটি স্বপ্নে পেয়েছিলেন । এক রাত্রে হঠাত্ করেই তার ঘুম ভেঙে যায়, আর মাথার মধ্যে জ্বলে ওঠে ফ্ল্যাশ বাল্ব । একটা কাগজ কলম নিয়ে তাড়াতাড়ি তিনি সেটা টুকে রাখেন । তারপর ঘুমিয়ে পড়েন । পরের রাতে আবার একই ঘটনা ঘটে। এভাবে বেশ কয়েকদিন ধরে অর্ধ ঘুমে অর্ধ জাগরণে তিনি আয়ত্ত করেন এক বিশেষ প্রজ্ঞা, যা তাকে চিকিৎসা বিদ্যায় নোবেল এনে দেয় ।
Rapid Eye Movement (REM) ঘুম বা 'চোখ নড়া ঘুম' হচ্ছে আমাদের ঘুমের একটা বিশেষ স্টেজ । সাধারণত ঘুমানোর ঘন্টা দেড়েক পরে আমরা সেই স্তরে যাই । এসময় মস্তিষ্ক থাকে এক্টিভ, যেন জাগ্রত অবস্থার মতোই । প্রশ্বাস থাকে দ্রুত ও অনিয়মিত । স্মৃতির কনসোলিডেশান এসময়ই ঘটে । আর আমাদের স্বপ্নও আসে এসময়ই । আশ্চর্য ভাবে দেখা গেছে বহু সৃষ্টিশীল চিন্তার উন্মেষ এসময়টাতেই আমাদের মাথায় আসে।
সারাদিন যা যা ঘটেছে (সাম্প্রতিক অতীতেও) সব কিছুর সমন্বয় হয় এই সময়, অতীতের ধারণাসমূহের সঙ্গে তুলনা করা, সাদৃশ্য বৈসাদৃশ্য বার করা ও নতুন স্মৃতি-নিউরন সংযোগে তাকে সংরক্ষণ করা এই সময়তেই ঘটে থাকে । এসিটাইকোলাইন নামে নিউরোট্রান্সমিটারেরর সিক্রেশনে যে পরিবর্তন সূচিত হয়, এর ফলে হিপ্পোক্যাম্পাস ও নিউরোকর্টেক্স এর মধ্যে সংযোগে কিছুটা বিচ্ছিন্নতা আসে, ফলে চিন্তা হয়ে ওঠে অনেকটাই সংযোগহীন, অর্গলমুক্ত, ফ্লেক্সিবল । এর ফলে, আপাতভাবে সংযোগহীন বিচ্ছিন্ন উদ্দীপকগুলির মধ্যে সাদৃশ্য বার করে তাদের নতুন ভাবে প্রসেসিং করার কাজটা সোজা হয়ে যায় । আর চেতনা তখন অচেতন ভাবে তাইই করতে থাকে । বিভিন্ন উদ্দীপকের মধ্যে সংযোগের যে জায়গাগুলো জাগ্রত অবস্থায় চিহ্নিত করা প্রায় সম্ভবই ছিলো না সেই সব অমূর্ত সংযোগও তখন সম্পন্ন হয়ে যেতে পারে এক লহমায় । অঘোর ঘুমের মধ্যে এই কারণেই ক্রিয়েটিভ আইডিয়া স্বপ্নের মতো আসে । ঘুমের সাইকেলে 'চোখ নড়া' আর 'চোখ না নড়া ঘুম' মোটামুটি নব্বই মিনিটের ব্যবধানে যাওয়া আসা করে । চোখ না নড়া ঘুমের সময় ধারণার ক্ষুদ্র অংশগুলি extract হয়, আর চোখ নড়া ঘুমের সময় সেগুলির সংযোগ সাধিত হয় । সেই সংযোগ কিছুটা হলেও বাস্তবের শৃঙ্খলতাহীন, আর সেই কারণেই নতুন সৃজনের ইঙ্গিতবাহী ।
Remote Association Test নামে একটি টেস্টের মাধ্যমে মনোবৈজ্ঞানিক পরীক্ষা করে দেখা গেছে অন্য যে কোন অবস্থার তুলনায় (জাগ্রত, বা nonREM ঘুম ) REM ঘুম ভাঙার পরপরই মানুষ সবচেয়ে বেশি সৃজন করতে সমর্থ হয় ।
REM ঘুম চলাকালীনই কিন্তু আমরা স্বপ্ন দেখে থাকি । মেকানিজম প্রায় সদৃশ, আর স্বপ্ন ও ক্রিয়েটিভিটির মধ্যে সম্পর্কের কথা তো আমরা মনোসমীক্ষায়ও বারবার শুনেছি । স্যামুয়েল টেইলর কোলরিজ 'কুবলা খান' লিখেছেন আফিম আচ্ছন্ন স্বপ্ন থেকে অর্ধজাগ্রত অবস্থায় । দালি তার সুররিয়্যাল ছবির আইডিয়া পেয়েছেন স্বপ্নে, মেরি শেলি বলেছেন স্বপ্নই তার ফ্র্যাঙ্কেনষ্টাইন লেখার অনুপ্রেরণা । পল ম্যাককার্টনি বলেন, তার 'ইয়েস্টার্ডে' গান এর প্রাপ্তি নাকি স্বপ্নেই।
ঘুম ভেঙে ঠিক জেগে ওঠার মুহূর্তে হতে পারে হিপনোগগিক হ্যালুসিনেশন , যে সময় কোনো অলীক প্রত্যক্ষণ সম্ভব । এই অলীক প্রত্যক্ষণ থেকেও সৃষ্টি হতে পারে সৃজনাত্মক কাজের বীজ ।
আমরা যখন ঘুমাই তখন আসলে আমাদের মস্তিষ্ক পুরোপুরি ঘুমন্ত হয় না, তার বেশ কিছু কাজ জারি থাকে । এসময়ই নতুন স্মৃতিগুলি সংরক্ষিত হয় , অপ্রয়োজনীয় স্মৃতিরা মুছে যায়, যেন মস্তিষ্কের রান্নাঘরের ধোয়া মোছা , পরিচ্ছন্নতার প্রতিদিনের কাজটুকু চলতে শুরু করে । REM ঘুমের সময় মস্তিষ্ক তার জীবনের বিভিন্ন অভিজ্ঞতাগুলি, যেগুলোর মধ্যে আপাতভাবে কোনো সংযোগ থাকতে পারে বলে চেতন প্রক্রিয়ায় আমরা কখনো ভাবিনি , সে সবের মধ্যে যোগাযোগ তৈরি করে । হঠাত্ করে যদি ঘুম ভেঙে যায়, খানিকটা সময়ের জন্য তা আমাদের মনে পড়তে পারে । মানসিক বিবর্তনের এক জটিল প্রক্রিয়ায়াও কিন্তু এসময়ই চলে । অভিজ্ঞতার মধ্যে যে সংযোগ সম্পূর্ণ জাগ্রত অবস্থায় কিছুতেই সম্ভব ছিলো না , সেই ডেলিকেট সংযোগ স্থাপন ঘটে এসময় । কগনিটিভ অবস্থান তার পূর্বতন স্থান পরিবর্তণ করে উন্নততর অবস্থানে যায় । সমস্যার জটিল সূত্রগুলির মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে নিয়ে এর সমাধান করার প্রক্রিয়াও তাই গভীর ঘুমের এই পর্যায়টিতেই ঘটে থাকে । যেহেতু ঘুমের প্রায় দেড় ঘন্টা পর এই REM স্তরের একটি ফেজ পূর্ণতা প্রাপ্ত হয় , তাই পর্যাপ্ত ঘুম সৃজনশীলতার জন্য অবশ্যই প্রয়োজনীয় । ওই নির্দিষ্ট সময়টুকু না পেরোলে, মস্তিষ্ক তার প্রয়োজনীয় এসিমিলশানের কাজটুকু করতে পারবে না, ফলে সমস্যার নতুনতর সমাধানও সম্ভব হবে না ।
প্রচলিত সামাজিক ও সংস্কৃতিগত নিয়ম অনুসরণ করে আমরা সারাদিন কাজ করি, নিয়ম মেনেই রাতে নির্দিষ্ট সময় শুয়ে পড়ি । ঘুমের জন্য নিজেকে তখন প্রস্তুত করি । মস্তিষ্ক যেন সিগন্যাল পায়, 'অনেক তো পরিশ্রম করেছো, এবার ঘুমিয়ে পড়ো' । আর ঠিক এই সময়ই আমাদের ওয়ার্কিং মেমরি একটু অন্যরকম ভাবে কাজ করা শুরু করে দেয় ।"
আর কবি রত্নদীপা দে ঘোষের লেখা এই স্বপ্নে পাওয়া কবিতাদেরকে মলাট বন্দি করে পাঠকের দরবারে নিয়ে আসছি আমরা "মিসিসিপির মেঘ" পাবলিকেশন্স। পাওয়া যাবে আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলা, ২০২২ সালে। অত্যন্ত মেধাবাহী কবিতাগুলি আশাকরি পাঠকপ্রিয়ও হবে।
প্রকাশক : মিসিসিপির মেঘ,
কলকাতা - ৭০০০৭৮,
যোগাযোগ : 6291575408/
9874984169