09/03/2025
পথের ধারে বসে থাকা ভিখারিকে এক টাকার কয়েন ছুড়ে দিল শ্রীকান্ত । রাস্তার নেড়ি কুকুর সব , বড়লোক দেখলেই ঘেউ ঘেউ করে মনে মনে শ্বকয়েক গালি দিলো ভিখারিকে । এদের কে পাত্তা ও দেয় না সে , নিহাতেই আজ গার্লফ্রেন্ড সঙ্গে আছে বলে নাহলে এখনি লাথি দিয়ে এই ফুটপাত থেকে ফেলে দিতো। তিতিরের দিকে তাকিয়ে মেকি হেসে বলল ,
- ওহ্ তিতির ,
রাগান্বিত চোখের তিতিরকে দেখে ভড়কে গেল শ্রীকান্ত । ও তো প্রায় ভূলেই বসে ছিল , তার গার্লফ্রেন্ড তো আবার দয়ার দেবী । মাঝে মাঝে তার মনে কি করে এই দেবীর প্রেমে পড়েছিল । কিছু মেশে না ওর সাথে , না স্ট্যাটাস আর না মনমানসিকতা । দুজনে দুই মেরুর বাসিন্দা । তবু শ্রীকান্ত কেমনে খুব সাধারণ সাদামাটা দয়ার দেবীর প্রেমে পড়েছিল তার ও অজানা । আমতা আমতা করে বলল ,
- সরি ,
তুমি তো জানো জান , আমার কাছে কেস থাকে না ।
- থাক , শ্রীকান্ত থামিয়ে তিতির বলল ,
তোমাকে এত উদার হতে হবে না ।
নিজের ছোট হ্যান্ড ব্যাগ থেকে কড়কড়ে একশো টাকার নোট ভিখারি দিয়ে বলল ,
- ক্ষমা করবেন ভাইয়া , ওর ওই রকম ব্যবহারে আমি ক্ষমা চাইছি ।
শ্রীকান্তের দিকে তাকিয়ে বলল , - ও ভিখারি নয় ।
আমার নোট দেওয়ার জন্য এতক্ষন দাঁড়িয়েছিল ।
হাসলেন ভিখারি , ওদের জন্য সহানুভূতি খুব কম মানুষরই হয় , যেখানে এই মেয়েটা একজন ।
পাশের ছেড়া চটের ব্যাগ থেকে একটা নোট বুক বের করে তিতিরের দিকে বাড়িয়ে দিলেন ।
মুচকি হাসলো তিতির ও , হাত বাড়িয়ে খাতাটা নিয়ে সাইড ব্যাগে ভরে রাখলো ।
- রিজু ঘুমিয়ে পড়েছে বোধহয় ?
বলেই , হাত ঘড়ি দেখলো তিতির ।
জীব কাটলো সে , দশটা বেজে পঁয়তাল্লিশ মিনিট।
আজ পাক্কা , বাড়ির মালকিন তাকে বের করে দেবে।
ঠোঁট টেনে হেসে বলল ,
- আজ একটু দেরি হয়ে গেছে , আজ আসছি ভাইয়া ।
ফিরে তাকাতেই দেখতে পেল বড়ো বড়ো চোখে তাকিয়ে থাকা শ্রীকান্তকে ।
- আমাকে এই ভাবে চোখ দিয়ে না গিলে পা চালাও বদলোক ।
এতক্ষণে গেট বন্ধ করে দিয়েছে ওই বজ্জাত মহিলা নিশ্চিত। বিড়বিড়িয়ে ওঠে যথাসম্ভব জোরে পা চালালো তিতির ।
পেছনে ছুটলো শ্রীকান্ত ও ।
মুখে চোখে ঝরে পড়ছে বিরক্তি ।
-তোমাকে কত বার বলেছি আমাকে বদলোক বলবে না । আমার মতো করে এত সুন্দর করে ডাকতে পারো না ,
জান , বেবি , সুইটহার্ট , মাই লাভ ...
- চুপ করো তো তুমি ।
রেস্টুরেন্ট মালিকের ছেলে রেহানের খারাপ নজর খুব পড়েছে , প্রতিদিন এড়িয়ে চললেও আজ সবার সামনে অপদস্থ করলো তাকে । তাতে মেজাজ বিগড়ে আছে তার ,এরপর এতো দেরি বজ্জাত মহিলা আজ নিশ্চিত তাকে মাথায় তুলে নাচাবে । তার উপর এর জ্বালাতন ।
- খুবই বিরক্তিকর তুমি , জানো ।
- না বেইবি , আমি বিরক্তিকর নয় । তুমি বিশ্বাস করবে না কত মেয়ে আমাকে পাওয়ার জন্য সুইসাইড এটেন্ড করে । একটা রাত কাটানোর জন্য হত্বে ...
আচমকা তিতিরকে দাঁড়িয়ে পড়তে দেখে অবাক হয়ে তাকালো। তিতিরের তাকাতেই দেখতে পেল তিতিরের বিনাশিনী রুপ । অগ্নিদগ্ধ চোখ , মুষ্টিবদ্ধ শক্ত হাত দেখে অজান্তেই ঢোক গিললো শ্রীকান্ত ।
- আমি পৌঁছে গেছি , এবার তুমি যাও ।
এখনি ওই দজ্জাল মহিলা শ্রীমতী রিম্পা বাগচী দেখলে , আমাকে মাথায় নিয়ে নাচবে।
নতুন গলির বাসাটা পেয়ে গেলে ওই রিম্পা বাগচীকে ষষ্টাঙ্গে প্রনাম করে বিদেয় হব।
পিছন ফিরল তিতির । শ্রীকান্তকে ভ্রু কুঁচকে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে , হাঁসফাস করে উঠলো সে তাড়া দিয়ে বলল ,
- যাও ।
শ্রীকান্তকে বিদেয় করে নীড়কুঞ্জের গেট খুলে ভেতরে গেল । ওই বকবকম মহিলা এতক্ষন তার এই অপেক্ষায় করছিল বোধহয় । নীচতলার বারান্দা থেকে কেমন বড়ো বড়ো চোখে তাকিয়ে রুমে ঢুকে দড়াম করে দরজা দিয়ে দিলো সে ।
তার প্রতি এই রকম ব্যবহারের কোন কারণ খুঁজে পাই না তিতির ।
রুমের তালা খুলে ভিতরে গিয়ে দরজা দিয়ে তার একছত্র বেডে ব্যাগ ছুড়ে মেরে , রুম সঙ্গে এটাচ্ বাথরুমে ঢুকে পড়ল সে । ঠান্ডা জলে ধুয়ে মুছে বের হলো তিতির । বিছানা ঝেড়ে শরীর এলিয়ে দিলো । পুরো দিনের ক্লান্তি নিমিষেই ভিড় করলো দুই চোখে ।
চলবে....
#মনবাড়িয়েছুঁই