12/09/2023
🌕প্রিয় সাথি,
২৪ শে মার্চ, ২০২৩ সন্ধ্যা থেকেই পশ্চিম আকাশে কাস্তের মতো পাতলা একচিলতে লালচে চাঁদের ঠিক নিচে জ্বলজ্বল করছিলো রুপোলি রঙের সন্ধ্যাতারা, অর্থাৎ শুক্রগ্রহ। ঠিক যেন চন্দ্রহারের সাথে দুলছে একটি ছোট্ট লকেট। পৃথিবীবাসী অবাক হয়ে দেখলো মহাজাগতিক এই অপূর্ব দৃশ্য। যাঁরা আকাশে এই দৃশ্য দেখেননি, তাঁরা দেখেছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়, এমন বিরল দৃশ্য না দেখতে পেরে আফসোস করেছেন।
🌕গলার হার কানের দুল যাই বলো না তুমি/ছাদহীনতা মনখারাপি দেখা পাই নি আমি।/রূপের ডালি সাজিয়ে নিয়ে সন্ধ্যাকাশে চাঁদ/খোলা আকাশ নেই তাইতো পরেছি আমি বাদ!/মুখবই এ তোমায় দেখে মন কেমন করে/নানা জনের নানান কথা মন ভরলো পড়ে।/শুক্র চাঁদের কাছে আসায় এই রূপের ডালি/ধরা দেয়নি আফসোস যে চাঁদেরই এক ফালি।
(🌝আফসোস🖋️নূপুর রায় রিনঝিন)
🌕কল্পনাপ্রবণ ও সৌন্দর্যপিয়াসী মানুষ এ দৃশ্য ক্যামেরাবন্দী করেছে, কবিতা লিখেছে, গল্প লিখেছে। সেদিন চন্দ্র ও শুক্র- এই দুই মহাজাগতিক বস্তুর মধ্যে ব্যবধান ছিলো ৬.৫ ডিগ্রী। ঘটনাটি সোজা বাংলায় বলতে গেলে- চাঁদের ওপর দিয়ে শুক্র পার হয়ে গিয়েছে। রমজানের প্রথম সন্ধ্যা রাতের আকাশে এমন দুর্দান্ত ও মন-মুগ্ধকর মহাজাগতিক দৃশ্যের সাক্ষী থাকলো সবাই। শুক্র তখন চাঁদের উত্তরে অবস্থান করছিলো। এ দৃশ্য দেখে কবি কাজী নজরুল ইসলামের সেই গানের কথা মনে পড়ে গেলো---
🌕 "মোর প্রিয়া হবে এসো রানী দেব খোঁপায় তারার ফুল
কর্ণে দোলাব তৃতীয়া তিথির চৈতী চাঁদের দুল॥"
কুচবরণ মখমলী আসমান
হিরণ্যময় অর্ধচন্দ্রহার
লকেটখানি দুলছে সন্ধ্যাতারার
সাঁঝের কন্ঠে পরালে জাজ্বল্যমান
কে পরালে এমন মণিভূষণ
আকাশ জুড়ে এমন বিহ্বলতা
কে শোনাবে আড়ালের কথকতা
সহস্রকোটি চোখে অবলোকন
বিস্ময়ে তাই শুধুই তাকিয়ে থাকা
সৌন্দর্যপিয়াসী মনগুলো ছুঁয়ে ছুঁয়ে
উন্নতশির দৃষ্টি পড়েনা ভূঁয়ে
এ কেমন চাঁদ নয় তো সে যে রাকা
রাকা ছড়ায় ঝিমঝিম জ্যোৎস্না
বনে বনে গাছের পাতায় ফুলে
চৈতি বাতাসে ধীরে ধীরে ওঠে দুলে
নেচে চলে কোন্ মায়াবিনী বনকন্যা
নক্ষত্রবীথি ধরে অদৃশ্য হয়েছে অবয়ব
দৃশ্যমানতা অমূল্য অলঙ্কার ঘিরে
গল্প-কথারা হারিয়ে গেছে ভিড়ে
অবাক পৃথিবী, ও রূপে পাগল সব।
[[🌝অবাক পৃথিবী🖊️ডরোথী দাশ বিশ্বাস]]
🌕চাঁদ পৃথিবীর চারদিকে ঘুরছে বলে আমরা দেখি, আকাশের গায়ে চাঁদ ক্রমশঃ পূর্বদিকে সরে যাচ্ছে। এই সরে যাওয়ার পথেই সেদিন চাঁদ আড়াল করে ফেললো শুক্রকে আর যে জায়গা থেকে এই আড়ালের পথটা মিলে গিয়েছে সেখান থেকেই দেখা সম্ভব চাঁদের আড়াল বা Lunar Occultation. যেহেতু চাঁদের কক্ষপথটি গ্রহগুলির কক্ষপথের সমতলের খুব কাছাকাছি, তাই চাঁদ যখন গ্রহ থেকে প্রতিফলিত আলো আটকে দেয় তখন এ ধরণের "চন্দ্র গোপন"- ঘটনাটি ঘটে। যেহেতু সূর্য ও চাঁদের পর সবচেয়ে উজ্জ্বল স্বর্গীয় বস্তু শুক্র, তাই শুক্রের এই চন্দ্রাভিযান খুব সহজেই পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হলো। শুক্রের এই চন্দ্রাভিযান চাঁদের পূর্বদিক থেকে শুরু হয় এবং শেষ হয় পশ্চিমদিকে।
🌕দেখে নিই এই বিশেষ সপ্তাহে আমাদের বিশিষ্ট দুইজন লেখিকা/কবির লেখা, কি ভাবছেন তাঁরা-
গত সন্ধ্যায় এক জবরদস্ত পার্টিতে ইন্দুর নিমন্ত্রণ ছিল। সুন্দরী ইন্দু নিজেকে আরও মোহময়ী করতে এক বিখ্যাত বিউটিশিয়ানকে বুক করে রেখেছিল। পার্টিতে অনেক গন্য মান্য ব্যক্তিত্বের আসার কথা।কে জানে কখন কাকে লাগবে আগে থেকে কিছুই বলা যায়না। ইন্দু বিশ্বস্ত সূত্রে খোঁজ নিয়ে জেনেছে সন্ধ্যা নামার কিছুক্ষণের মধ্যেই বশিষ্ঠ, মরীচি, পুলস্ত্য, পুলহ, অত্রি, অঙ্গিরা, ক্রতু, ঊষা, অনিরূদ্ধ, চিত্রলেখ সকলেই আসবে। আদ্রা, লুব্ধক রীতিমতো উত্তেজিত এমন পার্টিতে আমন্ত্রণ পেয়ে। সকলেই অনেকটা সময় হাতে নিয়ে আসবে এবং শেষ পর্যন্ত উপভোগ করবে। গত কয়েকদিন ধরে ইন্দু নিজেকে জনসমক্ষে বেশি আনেনি। দু একদিন তো চিলেকোঠার গোপন আস্তানা থেকে বেরই হয়নি। পার্লারের মেয়েটি রোদ থাকতেই সাজাতে শুরু করেছে। একবার জিজ্ঞাসা করেছিল কেমন লুক আনতে হবে। ইন্দু বলেছিল তার কোনো জাতি নেই ধর্ম নেই। স্বর্গ বেহেস্ত একই জায়গা মনে হয়। তবে আজকের সাজে শুধু পার্টির অতিথি নয়, সারা পৃথিবী যেন চোখ ফেরাতে না পারে! কাঞ্চণ বরণ ইন্দুর ছিপছিপে দেহে সোনার কারুকাজ করা মসলিন। আয়ত দু চোখে ঘন কাজল।কপোলে গোলাপী আভা, ছোট্ট কপালে কাঁচপোকার টিপ। আর তার ঠিক ওপরেই দুলছে শুকতারার টিকলি। ইন্দু আজ রূপে সারা পৃথিবীর রানী। এমন দুর্লভ রূপ দেখতে শুধু মানুষ নয় অন্য গ্ৰহেও তৎপরতা হয়তো! তুলনাহীন ইন্দুর ছবি তুলেছি ওর অনুমতি না নিয়ে।
পুনশ্চ-ওর রূপ মাধুর্যে বিবশ হয়েছিলাম চব্বিশ ঘণ্টার বেশি।তাই কলম ধরা হয়নি যথাসময়ে।
(🌝নিমন্ত্রিত ইন্দু🖋️শিবানী চৌধুরী)
ঘুম নয় কিছু নিবৃত বিরোধ তুলে দিয়েছি
রাতের উষ্ণ ঠোঁটে৷
বিষন্ন আলো আঁধারি, দৃষ্টি অপলক, তোমার
নড়ে উঠা কানের দুলে৷
বৃষ্টির ছন্দে দূরত্ব ভুলে যাই
তারপর আত্মনিমগ্নতা গভীর আলিঙ্গনে৷
নিস্তব্ধতা ভাঙে চুড়ির টুংটাং,
নীলাভ আলোয় জেগে উঠে ঘুমন্ত প্রকৃতি৷
নিন্দুকের হাতে উঠে আসে বন্দুক গ্রেনেড;
যেন প্রেম এক নিষ্ঠুর অপহরণ৷
ইদানিং নির্ঘুমতা ছুঁয়ে যায় মনের ক্ষত
মোমের তরলে নিভে প্রেমিক প্রহর৷
যদি এমন হয়! বৃত্তের বাঁধ ভেঙে
আরো উপরে উঠে আসো তুমি৷
কঠিন আর্ত চিৎকারে হঠাৎ বলে উঠবো
নিন্দুক তোমাকে ভালোবাসি৷
[🌝অতন্দ্র প্রহর🖊️অরণ্য রহমান]
🌕বিগত সপ্তাহে (২৭৷০৩৷২০২৩ থেকে ০১৷০৪৷২০২৩) এমনই একটি বিষয়ের ওপর দৃষ্টিকোণের আলোকপাত ঘটেছে রানারের সম্মানীয় সকল কবিসত্তার মননে। দৃষ্টিকোণের অবারিত দ্বারের মাধ্যমে এবারে পেয়েছি স্বতঃস্ফূর্ত ও অবিশ্বাস্য সাড়া। আমরা পেয়েছি ২১ জন কবি ও ৪ জন অ্যাডমিনকে যাঁরা নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে ভালোবেসে পরম যত্নে তাঁদের লেখায় তুলে ধরেছেন প্রদত্ত চিত্র ও চিত্রকথার ওপর অমূল্য ভাবনা-
কাল রাতটা ছিল আধো-আঁধারে ঢাকা। শুক্লপক্ষের এক ফালি চাঁদ তার রূপের এত ঐশ্বর্য? বহু বছর পর চাঁদ ওতারার মিলন তিথি, লুটলো সবার মন। মূহুর্তে বিলীন সব দুঃখ বেদনা, বিস্ময় আনন্দ! প্রকৃতির কি আপার মহিমা। ছন্দের ঝংকার উঠলো কাব্যে অপূর্ব দৃশ্যে। কল্পলোকে কবির সাধ জাগলো রূপসী প্রিয়ার কানের রূপালি দুল হতে, বাসনা পূর্ণ। অন্য কবির কাব্যে চাঁদ-তারা নববধূঁর কপালের টিকলির রূপ। ইঙ্গিতে বোঝাল ওরা, সুন্দর বিশ্বাস ও ভালবাসার সংকল্পে সুনিবিড় বন্ধন গড়ে।
(🌜একফালি চাঁদ🖋️অনিন্দিতা নাথ)
সেদিন সাঁঝে আকাশ জুড়ে সবে জ্বলে উঠেছে একটা, দুটো করে সাঁঝবাতির রূপকথারা। কুন্তলা তার ছাদে দাঁড়িয়ে দুচোখ ভাসিয়ে পড়ন্ত বিকেলের শেষ সূর্যের আলোটুকু মেখে নিচ্ছিলো। সন্ধ্যা ঘনাচ্ছিলো পাড়ায়, পাড়ায়। রাস্তার আলো জ্বলে উঠছিলো একে, একে পাল্লা দিয়ে অন্তরীক্ষের সাথে। এই সময়টা বড্ড মন কেমন করে, তাই বিশাল আকাশের দিকে চেয়ে তার কতকিছু ভাবনারা উড়ে যায় একটা দিনের সন্ধিক্ষণে। ঠিক যেখানে রাত্রি এসে যেথায় মেশে দিনের পারাবারে। হঠাৎ পশ্চিম আকাশে চোখ যেতেই মুগ্ধতায় মন ভরে যায় কুন্তলার। সে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে চেয়ে দেখে গত একপক্ষ আগে চলে যাওয়া চন্দ্রমা উদয় হয়েছে আর তার নীচটা ঘেঁষে আছে একটা রূপোলী রঙাবিন্দু৷ কি অপূর্ব সে দৃশ্য। মুহূর্তে মন ভেসে যায় শৈশবের সেই দিন গুলোতে "আয়, আয় চাঁদ মামা/ টি দিয়ে যা।" আজ জীবনে প্রথম যেন এত বছর বয়েসে এসে সে আবিষ্কার করলো চাঁদের কপালের টিপ। ভাবনারা সম্বিত ফিরে পেলো, পৃথিবী জুড়ে মুহূর্তে হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে গেছে৷ শুরু হয়ে গেছে মুঠোফোনে আর ক্যামেরায় সে মহাজাগতিক দৃশ্য বন্দী করার ভাবনায়। কুন্তলাও তার মুঠোফোনে শুনতে থাকা গান থামিয়ে অনভ্যস্ত হাতে তুলে নিয়েছিলো সে মহাজাগতিক ক্ষনের মিলন মুহূর্ত। এ এক উন্মাদনা, সে নিজেও জানে সকল কিছুর সাক্ষী হয়ে মুখপুস্তিকাতে দেওয়ায় শুধু একটাই শান্তি, শান্তি যে এই সন্ধিক্ষনটুকু সংরক্ষিত থাক। কখনও নিঝুম অবসরের দুপুরে, বা ঘুম না আসা নিশুতি রাতে চোখের উপর খুলে ধরে ইতিহাস ঝালিয়ে নেওয়া। এ যে মহাজাগতিক ক্ষণ। সাক্ষী থাকার আনন্দ। মুখ পুস্তিকা ভরে সে ছবি অগনিত। সে ছবি ঘিরেও তির্যক মন্তব্য ছোঁড়াছুঁড়ি, যেমন হয় আর কি। মানুষ তো পাঁচমিশালী। পাঁচ রকম তাই মতামত। কুন্তলাও টাঙিয়ে রাখলো, বাহবা কুড়োলো। ক্ষতি নেই তো কোনও, অসামাজিক কাজ তো নয়। পরে সংবাদে বিজ্ঞানীদের কাছে শুনলো বিজ্ঞানের ভাষায় একে নাকি "কনজাংশন" বলা হয়। গ্রহ শুক্র আর উপগ্রহ চন্দ্র কাছাকাছি নাকি প্রায়ই অবস্থান করে, সেদিন শুক্র গ্রহ একটু বেশী কাছে থাকায় এই উজ্জ্বলতা। আরে আমরা সাধারণ মানুষ তো এত বিজ্ঞান বুঝিনা। আমরা সাধারণ মানুষ ইচ্ছে হলেই আকাশ দেখি, আকাশের রঙ দেখি। দেখি কখন উনি রুষ্ট আর কখন উনি তুষ্ট? কখনও এক ঝাঁক পাখির চলে যাওয়া, ঘুড়ির উড়ে যাওয়া। নীলাম্বরীর অবগুণ্ঠন কখন সরিয়ে নামে বারিধারা! আহা! কি সুন্দর যে লাগছিলো সে সন্ধ্যা! কুন্তলা সেদিকে তাকিয়ে ভেবেছিলো এই তো একপক্ষকাল আগে স্ফীত স্থূলকায়া হয়ে বাড়ি গেলি এরই মধ্যে তন্বী তরুণী হয়ে ফিরে এলি এই সুন্দর সাজে! গলার হাঁসুলীতে যেন একটা ছোট্ট পেণ্ডেন্ট। দিন কি ভাবে অতিবাহিত হয়ে যায়! আকাশপানে মুগ্ধতায় চেয়ে থেকে থেকে মেদিনীমণ্ডলে কবি সাহিত্যিকের কলমে তুলিতে এলো জোয়ার। চিত্রকর অংকন করে নিলেন চিত্র। সাঁঝের আকাশে একটা গ্রহ হঠাৎ তার খেয়ালি মনে চন্দ্রমাকে ঘিরে শুধু একটু উঁকি দিয়েছে, গ্রহ আর উপগ্রহর সে সখ্যতায় গ্রাম বাংলার এক কবির কলম শুক্র গ্রহের অন্তর সেজে চন্দ্রমা কে শুধু বলে উঠলো "তোমার কানের দুল হতে কার সাধ না জাগে? আর সে দুল হয়েও লাজে অন্তর কাঁপে"। মূল্যবান ধাতু না হোক, অনন্ত আনন্দের গ্রহ অন্তরের বেদনে তা প্রলেপ হয়ে সুখবারি ঝরে। আসলে সকল সম্পর্কেই বোধকরি কাছটা ঘেঁষে থাকলে সম্পর্কের উজ্জ্বলতা প্রকট হয়। কুন্তলা নামক সাধারণ গৃহবধূর মনে এই গ্রহ উপগ্রহের রেশ ধরা রইলো বেশ।
(🌜সেদিনের সাঁঝের আকাশ🖋️সুলগ্না চৌধুরী)
তোমার রূপের বিবশতায় ইন্দুমতী,/পাগল যদি হই তবে কী এমন ক্ষতি?/পরণে তোমার স্বর্ণচরীর মসলিন খেলা করে,/লক্ষতারার সোনার ফুলেরা
দেহের মিনারে ঝরে।/কপালে পরেছো হীরক টিকলি শুকতারাটির ফুল,/কর্ণে দুলিছে রূপার ঝুমকা বড়ই সাধের দুল।/মেখেছো দেহেতে জ্যোৎস্না চন্দন, হয়েছো শৃঙ্গারে রমণীমোহন,/মুগ্ধ, আবিল দৃষ্টি আমার লুটায়েছে তোমার পায়,/চরণে তোমার চরণচূড়ের নিক্কণ শোনা যায়।/গলায় তোমার নক্ষত্রদল দিয়েছে স্বর্ণহার,/দেবদুর্লভ স্তন দুটি ঢাকা, কুয়াশা- কাঁচুলিতে তোমার।/নিশির শিশিরে নীবিবন্ধনী অপরূপ শোভা তার,/মণিমানিক্যে শোভন, লোভন, আকর্ষে দুর্নিবার।/মেঘরঙ কেশ কবরীর ভাঁজে,/বিজলীর জরি জড়ানো সে সাজে।/রোদন, বেদন, কাঁদন ভরা হৃদয় ক্ষতে,/হইনি কি আজ প্রেমের প্রলেপ, কলঙ্কতে?/আজকে তোমায় কেউ না বলে কলঙ্কিনী চাঁদ,/ত্রিভুবনে ভেঙেছ আজ রূপসাগরের বাঁধ।
(🌜রূপসাগরে ডুব দিয়েছি🖋️শ্যামলী ব্যানার্জী)
ওগো-/চাঁদের দেশের রাজকুমারী,/তোমার মায়াবী রূপের/জগৎজোড়া খ্যাতি।/পড়েছ কানে-/সন্ধ্যা তারার দুল,/-গলায় চন্দ্রহার।/দিনে দিনে-/বাড়ছে তোমার রূপেরই বাহার।/মিলন পিয়াসী-মন যে তোমার,/চাঁদের পানে ছুটছে দুর্নিবার!/ও চাঁদ-/এলে যখন মোর দুয়ারে,/ফিরে তুমি-/যেও নাকো-রূপ সাগরের পাড়ে।/ক্ষণিক না হয় রইলে মোর গেহে।/তোমায় পেয়ে/আর জনমের স্বপ্ন আমার হলো পূরণ!/অশ্রুসিক্ত নয়নজলে-/ধুয়ে দেবো তোমার ঐ রাতুল চরণ।/তুমি চলে গেলে-/নয়নের মনি মোর-নয়ন হারাবে!
(🌜চাঁদের দেশে🖋️কে দেব দাস)
চন্দ্রবদনী, ইন্দুরানী/কি সাজে সেজেছ,/আজকে না জানি--,/আধেক শরীর আঁধারে ঢাকা,/চন্দ্রকলার নায়, আধেক বাঁকা।/রূপোলী জমিন, নীলাভ শাড়ী,/তুমি আজ যেন, মায়াবী নারী।/তারাদের দলে সাজো সাজো রব,/ঘিরেছে শশীকলার, দেহসৌষ্ঠব,/তোমার কানবালাতে বুঝি,/দুলছে হীরের দুল,/হীরের দ্যুতি ছড়িয়ে দিল/শুকতারাটার ফুল।/মসলিন ওড়না জড়িয়ে গায়ে,/বসে আছো বাঁকা নায়ে।/দূর নীলিমায় সন্ধ্যারাগে,/তোমাকে ছোঁওয়ার ইচ্ছে জাগে।/তুমি অধরা বলে,
অস্ফুট কামনায়,/নিন্দুকেরা তোমায় কলঙ্ক দেয়।/তোমার স্নিগ্ধ হাসির আড়ালে,/শত বেদনের ক্ষত লুকালে।/ছিল সেও কলঙ্কিনী রাই,/নিষ্কাম প্রেমে, তার জুড়ি নাই।/কবি যখন তোমায় নিয়ে,/প্রেমের কাব্য রচে,/বেদন ক্ষতে আপনি প্রলেপ,/সব কলঙ্ক ঘোচে।
(🌜অধরা মাধুরী🖋️রিনা রায়)
আকাশের নীল খামে যখন/লুকিয়েছিলে তুমি,/কথা ছিলো আজ সন্ধ্যায়/করবে গো দুস্টুমি।/উঁকি দেওয়া তোমার মুখে/সূর্য ঢালে আলো,/সব সঁপে আজ নিঃস্ব আমি/তবুও বাসি ভালো।/সারা গায়ে দগ দগে ঘা/মনের ভেতর ক্ষত,/প্রেম যে আমার দগ্ধ সোনা/তোমায় খোঁজে অবিরত।/অনেক বর্ষ অনেক মাস/অপেক্ষারই পরে,/তোমার পাশে ঠাঁই পেয়েছি/দেখছি পরস্পরে।/তোমার পাশে আমার আসন/বিশ্ব ভুবন দেখে,/তারার মালায় সাজানো ঘর/সুখের পরশ মাখে।/লজ্জা শরম ভাসিয়ে দিলাম/আশমানি ঢেউ স্রোতে,/একটা গোলাপ তুলে দিলাম/শুক তারাটির হাতে।/সব তারারাই গেল বাড়ি/হয়তো দেখার ভুলে!/একটা তারাই রইলো জেগে/তোমার কানের দুলে?
(🌜একটা তারাই রইলো জেগে🖋️শ্যামল খাঁ)
গত অমানিশা প্রতিপদ নিশা/হেরিনু পশ্চিম গগন/ত্যাজি নীলাম্বর অতি মনোহর/কৃষ্ণ বেশ করেছে ধারন।/নেই উদাস করা বাতাস পাগল পারা/কোথায় কে ডেকেছে তারে।/শশী সে সন্ধ্যায় ছড়ায়নি ধরায়/পারিজাতের কেশর।/ইন্দ্রপুরীর রমনীর মধু যামিনীর/আলোকিত করেনি বাসর।/মোহময় রূপ তবু দেখেনি কেউ কভু/শশী তারকার চুম্বন।/ঊষায় শুকতারা সন্ধ্যায় সন্ধ্যাতারা/আবর্তনে নাম পরিবর্তন।/দোহে যবে ঘেঁষাঘেঁষি পরস্পর পাশাপাশি/সে এক মহাজাগতিক ক্ষণ/এক ফালি শশী কলা যেন এক কন্ঠ মালা/সজ্জিত করেছে গগনেরে/সন্ধ্যা তারা কাছে আসি কহিছে যেন হাসি/কর্ণে না কন্ঠে লবে মোরে ?
(🌜মোহময় সজ্জা🖋️কাকলী বসু)
ও চাঁদ, তোর নাকছাবিতে/শুকতারাটির ফুল/জোছনা রঙের কপালে তোর/জড়িয়ে মেঘের চুল।/ঠিক যেন এক নৌকা ভাসে/
অথৈ নদীর জলে/আকাশ গাঙে ঢেউ উঠেছে/চলছে দুলে দুলে।/ও মাঝি ভাই, সামলে চল/হারিও নাকো কূল/দুলকি চালে দুলছে তরী/দুলছে কানের দুল।/মোহিত হয়ে চন্দ্রমা তার/প্রিয়ায় দেখে চেয়ে/ঠিকরে পড়ে হীরের দ্যুতি/জোৎস্না আকাশ ছেয়ে।/তুই যে আমার নয়নলোভা/ঝুমকো লতার দুল/আজ রূপসী কে বেশী বল/কে যে কাহার তুল!/সত্যি বলি এমন রূপের/তুলনা আর নাই/যেন শ্যামের পানে তাকিয়ে আছে/লজ্জাবতী রাই।/রাই-এর মতই কলঙ্কী চাঁদ/কে মোছাবে কালি/প্রলেপ হয়ে বেদন ঘুচায়/রাধার বনমালী।/সন্ধ্যাতারা চাঁদের সাথে/জমিয়েছে মজলিশ/বিশ্ব ভুবন দৃশ্য দেখে/জানায় যে কুর্নিশ।
(🌜মজলিশ🖋️মধুমিতা ধর)
কেউ হতে চায় কানের দুল/কেউ হয়ে যায় তারা ভুল/অলীক স্বপ্ন সবাই পোষে বুকে/হীরকদ্যুতি চমক অতি আহা ঝিলমিল।/একদিন চাঁদের গায়ে লাগে চাঁদ/একদিন শুক্রের হয় বেজায় সাধ/উঠবে ফুটে বিন্দু হয়ে অলকা তিলকে/জানে রাত গয়ী বাত গয়ী শুধুই ফাঁদ।/দেখলো আকাশ দেখলো পৃথিবী/অপার্থিব এক দৃশ্য সবই/আলোয় আলোকময় উজল জ্যোতি/পূর্ণচন্দ্রের মহিমায় জাগলো ছবি।/নীলাভ এক শামিয়ানা তলে/চন্দ্র শুক্র দোদুল দোলে/তাদের রূপশোভা কী মনোলোভা/লক্ষ তারা একলাইনে পেছনে চলে।/চোখে চোখে হলো কত কথা/দর্শনে দর্শিত অনুপম বার্তা/মগ্ন আকুল টিভি ব্যাকুল/হাঁ করে গিলে ফেবু স্ট্যাটাস যথা!
(🌜রূপসায়রে🖋️রত্না দাস)
সাঁঝ নামলে আকাশপুরে রাতের রাণী মোহিনী ইন্দুবালা/জোৎস্নাসিক্ত অনুপম দেহ বিভঙ্গে বিনোদিনীর ছলাকলা/আকাশপুরে গ্রহ নক্ষত্ররা তার প্রজা সভাসদ অনুগত/ইন্দুর প্রতি গোপন প্রেমের কামনায় পুড়ছে অবিরত।/কারুর সুপ্ত সাধ হবে কানের ঝলমলে সোনার দুল/কেউ স্বপ্ন দেখে ছুঁয়ে যাবে খোলা মেঘ কালো চুল।/রূপের গরিমায় ইন্দু তাদের পানে তাকায় নাকো ফিরে/নক্ষত্ররাজি দুঃখে তাই ম্রিয়মাণ সহস্র যোজন দূরে।/কলঙ্কের দাগ লাগে দেহে তবুও যেন কলঙ্কহীনা/জয় করবার অধিকারে আপন বৃত্তে সম্পূর্ণা।/দিনের রাজা দৃপ্ত অরুণ পরম স্নেহে ভগ্নীসমা মানে/বিদায়বেলায় রাজ্যপাট ছেড়ে যায় তার শাসনে।/শাসনের রাশ হাতে তুলে ইন্দুর চিত্তভরা অহঙ্কার/মেঘের মুকুট মাথায় পরে স্নিগ্ধরূপে দেখায় চমৎকার।/অঙ্গভরা সোনার অলঙ্কারে পূর্ণিমায় সে পূর্ণশশী/মনের কোণে লুকিয়ে রাখে তবু একটু বেদন হাসি।/ধীরে ধীরে দেহে অবক্ষয় নামে সেই তিথি অমাবস্যা/কাঙ্খিত প্রেমিকাকে ছোঁয়া গ্রহ নক্ষত্রের শুধু তপস্যা।/ব্যর্থ প্রেমিকেরা এগোয় মনের বেদন ক্ষতে প্রলেপ দিতে/সোনা না হয় রূপো হয়েই খানিক স্পর্শে সঙ্গ পেতে।/অতৃপ্ত ইন্দুর নয়নে ফুটে ওঠে গভীর অনুসন্ধান/কোথা সেই প্রাণপুরুষ যার সনে বাঁধা মনপ্রাণ।/আকুল আহ্বানে কক্ষচ্যুত শুক্রগ্রহ আসে তার পাশে/অপার্থিব এক প্রেমের মিলন দৃশ্য আকাশপটে ভাসে।/আকাশ ভরা গ্রহ তারা নিঃসীম অন্ধকার মহাশূন্য লোকে/ছড়িয়ে রইলো মুগ্ধ মানবের দৃষ্টি নীল নীলিমার বাঁকে
(🌜বিনোদিনীর ইতিকথা🖋️মধুশ্রী সিনহা)
আমি তো রয়েছি দূর নভোনীলে, তোমার আলিঙ্গনে,/অনিন্দ্য রূপে চিরসাথী হয়ে, জড়ায়ে চিরন্তনে।/রূপালী আলোর ঝর্ণা ধারায়, হতে পারি আমি নদী,/ভেসে যাব স্রোতে, আবেগের সাথে, তুমি ভাসাও যদি,/অনুভবে রব, চাঁদ টিপ হব, থাকব তোমার ভালে,/তোমার কপোলে রামধনু হব, টোল পরা দুটি গালে।/হব রুনুরুনু পায়ের নূপুর, তালে তাল তুলে দুলব।/ঠমকে ঠমকে নাচের ধমকে সুরে সুর, ধ্বনি তুলব।/একফালি চাঁদ একটি তারা, অনিমিখে দিশাহারা।/চির বন্ধনে হয়ে উন্মুখ, চেয়ে মুখে মুখ, তবুও অধরা।/শত কলঙ্ক জমানো এ বুকে, জানিনা কি ছিলো ভুল!/যদি কাছে ডাকো ভালোবেসে হব, তোমার কানের দুল।/যদিও আমি নই কিছু দামী, লজ্জায় তাই নত,/একবার শুধু আঁখি মেলে চাও, মুছে দাও সব ক্ষত।/আমি তো ব্রতী তোমার সেবায়, ঢেলে দিয়ে মন প্রাণ,/বিছিয়ে দিয়েছি রূপের মাধুরী, তবু কেন ম্রিয়মান?/শত অভিমান জমানো হৃদয়ে প্রলেপ হবো যখন,/এমনি করে কি দূরে ঠেলে দিয়ে উদাস রবে তখন?/চির সুখে রব তোমার ও বুকে জোছনা হয়ে ঝরবো,/থাকব মেতে তোমার সাথে, হাতে হাত রেখে চলব।/ তোমার অঙ্গে অঙ্গ জুড়েছি, নব আলোকের সাজে,/মেতেছি রঙ্গে তোমার সঙ্গে, আনন্দ ধরা মাঝে।
(🌜তোমার সঙ্গে🖋️বীথিকা ভট্টাচার্য)
চন্দ্রাবতীর টিপ হতে যে সাধ ছিল তোর মনে/ কক্ষনো তা বলিস নি তো রাখলি খুব গোপনে/আজকে যেমন সুযোগ পেলি অমনি তাড়াতাড়ি/চাঁদকপালে ফোঁটা হয়ে বানালি সুন্দরী/শুক্রগ্রহ, আদর করে শুকতারা তাও বলে/আজকে যেন চন্দ্রহারে ভূষণ হয়ে দোলে/আভরণে আভূষণে চাঁদ সেজেছে নিজের মতো/শুকতারাটি রইলো যে তার সঙ্গে ওতপ্রোত।
(🌜টিপ🖊️সর্বাণী রিঙ্কু গোস্বামী)
চৈত্রের আকাশে তোমায় আমি প্রথম দেখেছিলেম... নীল আকাশের বুকে তোমার মিষ্টি মুখখানা ঢাকা পড়েছিল চূর্ণ কুন্তলে... তোমার কানের লতিতে দুল যেন একফালি রমজানের চাঁদ... দৃশ্যমান তারাটি যেন ঝুমকোর ফুল হয়ে পরশ এঁকে যায়... নির্নিমেষে তাকিয়ে থাকি আমি... কত কথা মনে পড়ে যায়... রাত গভীর হলে চাঁদ যেন নেমে আসে... মন্দারের আলয়ে পার্বতী সকাশে... পারিজাত হাতে এগিয়ে যায় নারী চন্দ্রচূড় পানে দিন অবসানে... পাদ্মঅর্ঘ্য হাতে এগোয় পার্বতী... অর্পণ করে পুষ্প চন্দ্রমৌলিরে... মাগরিবের আজানের সুর ছুঁয়ে যায় ওরে... দু'বাহুর বন্ধনে বাঁধা পড়ে প্রেম... রমজানের চাঁদের পরশ ছুঁয়ে যায় দোঁহে... রমজানের চাঁদ হাসে শিবের মাথায়... সব ধর্ম মিশে হয় একাকার... সময়ের পথ ধরে আমি হেঁটে যাই... খুঁজে ফিরে যমুনার কূলে কূলে... কাঁসর আর আজানের মাঝে... যদি দেখা পাই হারিয়ে ফেলা আমার আমিরে...
(🌜রমজানের চাঁদ🖊️শ্যামল কুমার মিশ্র)
আ-হা-হা-হা হেরি একি রূপ/আজ আকাশের কোলে/শুকতারা সে দিয়েছে ধরা/চাঁদের কানের দুলে।/দেখেছে শুধু দুর থেকে চেয়ে/স্বপ্ন ছুঁয়েছে মন/এতদিন পরে জড়িয়ে তারে/করবে আলিঙ্গন।/চাঁদের পানসি ভাসছে যেন/সাঁঝের আকাশ গাঙে/নিজের রঙে, রঙ মাখাবে/ধাইছে চাঁদের পানে।/দু'য়ের যুগল মিলন দেখে/আমরা কলম ধরি/কেউ বলি তায় ইদের ভেট/কেউ, বলি মহেশ্বরী।/জানি দুজনায় গ্রহ-উপগ্রহ/সূর্যের সংসারে/তর্ক থামিয়ে উপভোগ করি/নৈসর্গিক সুন্দরে।।
(🌜চাঁদের কানের দুল🖊️পল্লব ভট্টাচার্য অনন্ত)
চূড়ান্ত ক্ষত বেদনায় মুহ্যমান আমি…।/সন্ধ্যার আলাপচারিতায় তবু থাকতেই হয় পাশে।/ভীষন রকম একা, তুমিতো জানোই...।/তবু মুগ্ধ চোখে দেখে আমায়/ সাগর নদী আরও কতই।/অমাবস্যার রাতে অন্ধকার মেখে থাকি একা…।/বড়ো শান্তি পাই,/কোনো চাতক চাউনি আমাকে স্পর্শ করেনা।/ স্পর্শ করেনা কোনো বিম্বিত সুখ।/আমিও নির্মোহো হয়ে বসি উপাসনায়।/উজ্জ্বল আভরণে তন্বী তরুণীর/সমারোহে থেকে আমি ক্লান্ত…।/আমায় একটু একা থাকতে দাও…।/ বিচলিত করোনা।/আজ আমি ধ্যান মগ্ন এক সন্ন্যাসী।/ আমি যে আজ তোমার দুয়ারে,/"শত বরণের ভাব উচ্ছাস," সঙ্গে নিয়ে এসেছি,/মুহূর্ত কাল সাথে থাকার উল্লাসে...।/ তুমি ফিরিয়ে দিওনা,.../চেয়ে দেখো আমায়, অপেক্ষা করেছি কত কাল/সম্পূর্ণ একাকী করে পাবো/এই আকাঙ্ক্ষায়…।/এই মুহূর্ত নষ্ট হতে দিওনা।/জোৎস্না তোমায় ছুঁয়ে ভালোবাসার গল্প শোনায়।/সবাই মোহিত হয়ে শোনে।/আর আমি? লক্ষ যোজন দূর থেকে, নিয়ম মেনে,/শুধু মাত্র আজ ক্ষণিকের সন্ধ্যায় সঙ্গিনী হতে এসেছি।/তোমার রুপোলি আভরণ নেই।/চৈত্র সন্ধ্যায় নিয়েছো গৈরিক আবরণ।/পাংশু মুখ, কেনো?/আমি লজ্জায় লাল, মধু ঋতু আমায় কানে কানে বলে গেলো,/আমাদের যুগল মিলনে বসুধা সুখে আচ্ছন্ন।/তবু নিরুপায় তোমার ক্ষতর প্রলেপ হতে পারলাম না।
(🌜কথোপকথন🖋️শিখা নাথ)
অমানিশা সবে দিগন্ত ও পার/রয়ে গেছে এখনও আঁধার রেশ তার।/এক কলা চাঁদ এলো আকাশ কোণে,/ শুকতারা একেলা জেগে সেই ক্ষণে।/মায়াবী চিত্র আকাশ পটে আঁকা/আকশের গলে চন্দ্র হার যেন রাকা।/আলোর স্বর্ণালি আভার ঝলকানি/শুকতারা আজি চন্দ্রহার-এ রুপোলি লকেট মানি।/কিবা শোভা মনোলোভা মুগ্ধ আঁখি/নিশি পোহাবে উষা লগন ক্ষণিক বাকি।/নেই কো আজ কলঙ্ক ছাপ চাঁদের গায়/শুকতারা সুখে লাজে মরমে তায়।/প্রকৃতির রুপে মুগ্ধতা রাশি রাশি/পার্থিব দুখ যায় নিমেষে ভাসি।
(🌜আকাশ গলে চন্দ্রহার🖋️নিভা চাকলাদার)
রমজান মাসে শুক্লা চতুর্থী সন্ধ্যায় চন্দ্র শুক্র মিলন/নীল আকাশে আঁধারিতে চাঁদ অলংকার পরিহিত.../কবির কলমে আহামরি রূপ বর্ণনায় সৌন্দর্যময়/কেউ বলে আকাশ গাঙ্গে নাও কোলে শুক্র গ্রহ.../চাঁদের আদর পেতে সোহাগে টইটুম্বর!/কেউ বলে চাঁদের কানে সন্ধ্যা তারার দুল/মহাজাগতিক সৌন্দর্যে আসমানি চন্দ্রচূড়/বাঁকা স্বর্ণালী রোশনি আলোয় সলমা জরির কাজ/সোনালী চন্দ্রচূড় হারে হীরের মণিহার!/ভোরের শুকতারা রাতে সন্ধ্যাতারা চাঁদের শোভায়/শিবের জটাজালে উঁকি দেয় চন্দ্রপ্রভায় তারার ফুল/নমাজ পাঠ আর সন্ধ্যা আরতির ঘন্টা ধ্বনিত/আজানের ধ্বনি শঙ্খ নিনাদে ধর্মে ভেদাভেদ নাশ!/অপরূপ সৌন্দর্যে মহামিলনের পুণ্যতীর্থ রূপ দর্শন/মনের চেতনায় সৌহাদ্য ও সম্প্রীতির বার্তাবহ/চাঁদের অলংকার সন্ধ্যাতারার পাশাপাশি অবস্থান/চোখে আঙুল দিয়ে শিখিয়ে দিলো একেশ্বরবাদ!!
(🌜চাঁদের অলঙ্কার🖋️কাবেরী রায়চৌধুরী)
আকাশপারে মেঘের দেশে/চাঁদপানা ওই মুখে/শুকতারাটি বিভোর হলো/ভালোবাসার সুখে।/আলতো চুমে যায় যে ছুঁয়ে/মুগ্ধ নীরবতায়/চাঁদের হাসি বাঁধ ভেঙে যায়/স্বর্ণরাঙা আভায়।/ভালোবাসার সোহাগরাতে/চন্দ্রাবলী মেয়ে,/শুকতারা আজ প্রেমপিয়াসী/বরমাল্য নিয়ে।/রাতের আকাশ উজ্জ্বল আজ/অপরূপা মনোহরা/চাঁদবদনী, রাজনন্দিনী/আজ যে স্বয়ম্বরা।
(🌜স্বয়ম্বরা🖋️পাপড়ি রায়)
দাঁড়িয়ে আছি মাটির কাছাকাছি/দেখছি পাঁচ কিলোমিটার দূরে/আকাশ ছুঁয়েছে মাটি,রচেছে দিগন্ত।/এত কাছে, ছুঁয়ে রয়েছি তোমাকে পৃথিবী,/একবারে এটুকুই যে দৃষ্টিগোচর হয়।/কিন্তু দেখেছো কি আশ্চর্য---/প্রায় তিরানব্বই বিলিয়ন আলোকবর্ষ/ব্যাসের মহাকাশ যেন পুরোটাই/ধরা দেয় রাতের আকাশে---/কাছ থেকে সবটা দেখা যায়না বন্ধু/সবটা দেখতে হলে দূরত্ব দরকার।/ভেবেছো কি কখনও/যখন দিনের আলোয় চোখ/বহু কিছু দেখে ক্লান্ত হয়---/সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে আরামকেদারায় বসে/কেন চোখদুটো বিশ্রাম খোঁজে/রাতের আকাশে?/একটা মস্ত আকাশ ছিল তারার কাথাস্টিচে/আকাশগঙ্গা ধরা দিত রাত্রি গাঢ় হলে/রক্ষাকবচ হিসেবে এলো ধাতব শামিয়ানা/শুক্রের চন্দ্র সমাবরণ দেখে নিই এসো ডিজিটালে।
(🌜শুক্রের চন্দ্র সমাবরণ🖋️সায়ন্তন ধর)
কত দিন আগের কথা! সেই যে সেই মেয়ে বেলায় শিউলি-কুড়োনো শরতের দিনে খুব ভোর ভোর উঠতে হতো। ঘুম চোখে জল দিয়েই সাজি হাতে আলো পিসির বাগানে দৌড়...!
দেরি হলে ঝিমলি অন্তুরা সব ফুল কুড়িয়ে নেবে। অন্তুটার গায়ে আবার যা জোর! গাছ ঝাঁকালে একটা ফুলও আর গাছে থাকবে না। আলো পিসি একটা ছোট ঝুড়ি দিয়ে হাসিমুখে বলতো, "যত পারিস, ফুল কুড়ো, আমাকে শুধু এক ঝুড়ি দিয়ে যাস।" সেই ভোর বেলায় দেখতাম পূব আকাশে জ্বলজ্বল করছে শুকতারা। বাড়ির দাওয়া থেকে দেখতাম আছে আছে, হঠাৎ দেখি নেই। আকাশ আলো হয়ে উঠতেই শিউলির মতো টুপ করে ঝরে গেছে বুঝি! কে জানে, স্বর্গের বাগানে কোনো ছোট্ট মেয়ে সেটা কুড়িয়ে নিলো কিনা! আর বিকেলে খেলা যখন বেশ জমে উঠেছে, হঠাৎ সাঁঝ আকাশে সেই তারা উঠতো সন্ধ্যাতারা হয়ে। হাসিমুখে মনে করিয়ে দিত ঘরে ফেরার কথা। অমনি খেলা শেষ, ঘরমুখো আমরা। কোনো বকুনি না, চোখ রাঙানি না, আলো পিসির হাসির মতো স্নিগ্ধ তার ভাষা। আমাকে বড়ো ভালোবাসতো আলো পিসি। মোয়াটা, নাড়ুটা, চন্দ্রপুলিটা যখন তখন মিলে যেত। সে নাকি আমার জন্যই তুলে রাখা থাকতো। মাঝে মাঝে সুন্দর রিবন দিয়ে আমার চুল বেঁধে দিতো। কত গল্প বলতো! রাক্ষস খোক্কস, দত্যি-দানো, পরীর গল্প, রাজকন্যার গল্প! একবার মৎস্যকন্যার গল্পও বলেছিল। তারা নাকি গান গেয়ে সমুদ্দুরের নাবিকদের ভুলিয়ে নিয়ে যায়।
আলো পিসিকে দেখতে ভারী সুন্দর ছিল। ফর্সা, হাসিহাসি মুখ সবসময়, গোল সিঁদুরের টিপ কপালে, কানে চাঁদের মতো বাঁকা একজোড়া সোনার দুল পরতো, তাতে ছোট্ট এক কুচি হীরের ঝুমকো দোল খেত আর ঝিকমিকিয়ে উঠতো। একদিন গিয়ে দেখি আলো পিসি কেমন মন মরা। কি হয়েছে জিজ্ঞেস করায় বললো বাঁ কানের দুলটা আছে, কিন্তু ঝুমকোটা কোথায় খুলে পড়ে গেছে। সবার সাথে সাথে আমিও খুঁজলাম অনেক, কিন্তু পাওয়া গেল না। বললো, "জানিস, তোর পিসেমশাই এই দুলটা আমাকে প্রথম উপহার দিয়েছিলেন।" পিসেমশাইকে আমি দু-একবার দেখেছি। তিনি নাকি মস্ত ইঞ্জিনিয়ার! জাহাজে জাহাজে দূর দূর দেশে ঘুরে বেড়ান, অনেক দিন পর পর বাড়ি আসেন। তিনি এলে আমি আর ও বাড়ি যেতাম না, কেমন ভয় ভয় করতো। অনেক দিন পিসেমশাই আসেননি। যেখানে গেছেন, সেই দেশে বোধহয় সন্ধ্যাতারা বাড়ি ফেরার কথা মনে করিয়ে দেয় না। আলো পিসির মন খারাপ হতো, আমি গেলে আমাকে নিয়ে ভুলে থাকতো সব। একদিন গিয়ে দেখি আলো পিসি কাঁদছে, আমাকে দেখে ডাকলো না, আদর করলো না, নাড়ু দিলোনা। কি হয়েছে, বুঝতে পারিনি। বাড়িতেও মা জেঠিমারা বলাবলি করছিলেন পিসেমশাই নাকি আর আসবেন না। "কেন? কি হয়েছে পিসেমশাইয়ের?" অমনি বকুনি, ছোটদের নাকি সব কথার মধ্যে থাকতে নেই। আমার মনে হলো নিশ্চয়ই মৎস্যকন্যারা পিসেমশাইকে ভুলিয়ে নিয়ে গেছে। পরদিন গিয়ে ভয়ে ভয়ে আলো পিসিকে সে কথা বলতেই আমাকে বুকে চেপে ধরে কী কান্না! বললো, "তুই ঠিক ধরেছিস! তুই ঠিক বলেছিস।"
তারপর তো বাবা বদলি হয়ে গেলেন। আমরাও সঙ্গে সঙ্গে ঘুরতে লাগলাম এ দেশ, সে দেশ। কুড়ি বছর পরে আবার দেশের বাড়ি এলাম বেড়াতে। আলো পিসির বাড়িটা জঙ্গলে ভরে গেছে। শিউলি গাছটা থেকে টুপটুপিয়ে ফুল ঝরছে বুনো লতার ঝোপে। মাটিতে পড়ে আছে কতদিনের বাসি পচা ফুল। কেউ থাকে না আর। সাপখোপের বাসা।
আজ পশ্চিম আকাশে চাঁদ এবং আমার মেয়েবেলার সেই সন্ধ্যা তারার যুগপৎ সংযোগ আমাকে সেই অর্ধশতক আগের সেই দিনগুলিতে ফিরিয়ে নিয়ে গেল। এই মহাজাগতিক মিলনে সেই হাসি হাসি মুখ আলো পিসির কথা মনে করে চোখ ভিজে গেল। আকাশ ভরা তারার মাঝে কোনটা আমার আলো পিসি, কে জানে? সে কি পিসেমশাইকে দেখতে পাচ্ছে? খুঁজে পেয়েছে কি তার হারানো ঝুমকো?
(🌜আলো পিসি🖋️সুনৃতা রায় চৌধুরী)
কে দিলো গো গলে তোমার/স্বর্ণমালিকা/কে পরালো কর্ণে তোমার দুল/ও বালিকা/চুমকি জরির আঙরাখা গায়/ওগো রাতের আকাশ/ঝিরঝিরঝির চৈতি বাতাস/ফেলছে গভীর শ্বাস/চন্দ্রকলার এ কোন্ রূপ/স্বপ্নমদির রাতে/ভাসছে যেন সোনার তরী/মেঘ সমুদ্রেতে/দৃশ্য এ কোন্ দিলো ধরা/বিশ্ববাসীর চোখে/চাঁদের ছায়া সাঁঝের তারায়/অবাক হয়ে দেখে।
(🌜চাঁদের ছায়া সাঁঝের তারায়🖋️আল্পি বিশ্বাস)
🌕আমরা সকলে ঋদ্ধ হয়েছি একই ভাবনার বহুমুখী প্রকাশে, উপভোগ করেছি কবিতার সৌন্দর্য ... আপ্লুত হয়েছি নব নব ধ্যানধারণায়। এভাবেই আগামীতেও সমৃদ্ধ হবে রানারের সাহিত্য প্রাঙ্গণ- এই আশা রেখে গত সপ্তাহে দৃষ্টিকোণে অংশগ্রহণকারী সম্মানীয় বন্ধুদের নাম ঘোষণা করছি ...
Sibani Chowdhury
Oronno Rahman
Anindita Nath
Choudhury Sulagna
Shyamali Banerjee
K Deb Das
Rina Ray
Shyamal Khan
Kakali Basu
Madhumita Dhar
Ratna Das
Madhusree Sinha
Bithika Bhattacharya
সর্বাণী রিঙ্কু গোস্বামী
Shyamal Kumar Mishra
পল্লব ভট্টাচার্য অনন্ত
Shikha Nath
Niva Chakladar
Kaberi Roy Chowdhury
Nupur Roy
Papri Roy
🌕অ্যাডমিনদের মধ্য থেকে যাঁদের লেখা পেয়েছি তাঁদের নাম ঘোষণা করছি-
Sayantan Dhar
Dorothy Das Biswas
Sunrita Roy Chowdhury
Alpi Biswas
🌕তাঁদের জন্য রইলো আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
ধন্যবাদান্তে -
অ্যাডমিন প্যানেল
রা না র
১২৷০৯৷২০২৩