Arup Ojha

10/03/2024

🟢‘বিগলু’ নামের বিড়ম্বনা🟢

রীতিমতো আমাকে রেসিস্ট তকমা দিয়ে দিল। করেছিটা কী আমি? যে চা বেচে তাকে চাওয়ালা বলিনি, যে হাওয়াই চটি পরে তাকে চটিওয়ালা বলিনি কিংবা যে সব হারিয়ে বিদ্রোহ করছে তাকে সর্বহারা বিপ্লবী বলিনি। কেবল আমার পোষ্য, যে কিনা বিগেল প্রজাতির, তার নাম দিয়েছি বিগলু। এটা জানাজানির পর গেল গেল রব উঠেছে, কেন জাত তুলে নাম রাখব, আমি জাতিভেদ সমর্থন করছি, ওই নিরীহ জাতের প্রাণীর বংশকে অপমান করছি, এই একবিংশ শতকেও আমি জাতপাত নিয়ে পড়ে আছি, আমি নিশ্চিত আমার বিরুদ্ধে এরপর মানবাধিকার কমিশন বসতে চলেছে।

মানুষের হিপোক্রেসি দেখার মতো। এই পাশের বাড়ির কাকিমার কথাই ধরুন। আমি কুকুর আনার আগে শুনতাম ঐ কাকিমা কুকুরদের নামে দিনরাত গালাগালি দিচ্ছে, রাস্তার কুকুরদের হেঁটা করছে, যেই আমি ঘরে নিয়ে এলাম, অমনি দেখি রিল বানাচ্ছে, হ্যাজ নামাচ্ছে মানুষ বিদেশি কুকুর কেন পুষবে, রাস্তার কুকুরদের অ্যাডপ্ট তো করতে পারত, তাতে তারা অন্তত পরিবার পেত। তারপর যেই বিগলু নামটা শুনেছে, কুকুরদের প্রতি ভালোবাসা যেন উথলে পড়েছে, এমন ভাব করছে যেন আমার জন্য আবার মধ্যযুগীয় বর্বরতা ফিরে আসবে, আবার কোনো মহাপুরুষ এসে মানুষ এবং কুকুরকে উদ্ধার করবে।
এদের দেখে মনে হয় এই নাম রাখা নিয়ে এরা এত কষ্ট পাচ্ছে অত দুঃখ মানুষ পরম-পিয়ার বিয়েতে অনুপমের জন্য পায়নি।

ব্যাপারটা এমন জায়গায় চলে গেছে, আমি আজ বাজার গেছি, একজন এসে গান্ধীজীর আত্মজীবনী আমায় ধরিয়ে দিল, বলল “জাতপাতের আঁধার থেকে বেরোতে মহাত্মা গান্ধীকে জানতে হবে।” মাইরি বলছি তখন নিজেকে ‘রকি রানী কি প্রেম কাহানি’র রণভীর রণভীর ফিল হচ্ছিল। তবু ভাবলাম বেঁচে গেছি, থাপ্পড় তো আর বসায়নি।

কিন্তু তারপর যে ঘটনাটা ঘটল ভয়ে তো আমার শিরদাঁড়া দিয়ে ঠান্ডা একটা স্রোত বয়ে গেল। বাজার থেকে গান্ধীজীর আত্মজীবনী নিয়ে ফিরছি, সেদিন এক বিশ্ববিখ্যাত মন্দিরের উদ্বোধন, তাই অনুরাগীরা আনন্দ করতে করতে ফিরছে, আমার হাতে বইটা দেখে কটমট করে তাকাল। আমি ভাবলাম, আমি তো গেলাম। দরদর করে ঘামতে ঘামতে দিদিকে স্মরণ করলাম, কাজও দিল তাতে, আমার গায়ে একটা আঁচড়ও পড়ল না। কারণ এটা পশ্চিমবঙ্গ, আর এখানে ডান্ডা হাতে ঠান্ডা করার ফ্রি লাইসেন্স একমাত্র শাসকের আছে।

এখন ভাবি, ভুলটা কী করেছি আমি। আগে যে নামগুলো ঘরে পোষ্যদের দেওয়া হত সেগুলো রাখলে অসুবিধে আছে, কারণ মানুষ জাতে ওঠার জন্য সেই বিদেশি নামগুলো নিজের ছেলেমেয়েদের রেখে দিয়েছে। এখন টমি ডাকলে পাশের বাড়ির কোনো ছেলে এসে যদি হামি দেয় তো বিপদের তাইনা। নাম নিয়ে তাই ভাবনা চিন্তার শেষ নেই, ভাবতে ভাবতে গরম চাকে সরবত ভেবে খেয়ে মুখ পুড়িয়ে ফেললাম, পোড়ামুখে এটা ভেবেই গর্ববোধ করলাম, অন্য কিছু করে তো মুখ পোড়েনি। ছাত্রাবস্থায় পড়ার সময় যদি এত ভাবতাম তাহলে নির্ঘাৎ আজ মঙ্গলগ্রহে ইসরোর মাধ্যমে ধান রোপণ করতাম।

এই ডগির নাম রাখা নিয়ে আমার উপরে ওঠা অভিযোগের ভিত্তিতে আমার একটা অভিযোগ আছে। একটা বিশেষ কাজের বিশেষ পজিশনের নাম মানুষ আবিষ্কার করে ফেলেছে, ঐ অবলা প্রাণীগুলো জানলই না মানুষ ওদের নাম দিয়ে দিব্যি এনজয় করে যাচ্ছে। ওরা যদি জানত যে এরকম নাম ওদের নামে রাখা হয়েছে তাহলে প্রথমেই ওদের হার্ট অ্যাটাক আসত, কারণ ওদের বায়োলজিকাল প্রক্রিয়াটা তো আলাদা, তাছাড়া ওরকম পজিশন প্রায় সব চতুষ্পদ প্রাণীর ক্ষেত্রে দেখা যায়। তাই প্রশ্ন তুলত কেন কেবল ওদের নামেই এরকম পজিশনের নামকরণ করবে মানুষ, তাছাড়া মানুষ কেনই বা ওই পজিশন নেবে, মানুষ তো দুপেয়ে প্রাণী, প্রাইভেসি বলে ব্যাপার আছে তো।

কিন্তু দুঃখের কথা ওই অবোলা প্রাণীদের নিয়ে কেউ লড়াই করার কথা ভাবেনা, ওদের ভাবনা কেবল আমার বিগেলকে বিগলু নাম রাখা নিয়ে।

🔸(বিগলু বাদে বাকি সব চরিত্র এবং ঘটনা কাল্পনিক)🔸

02/02/2024

শীতের বিকেল, তবু হেমন্তের মতোই বিষণ্ণ। সন্ধ্যে হতে ঢের বাকি। সূর্যের গায়ে লালরঙ জমা শুরু হয়নি। কিন্তু জানি সন্ধ্যে ঠিক নামবে, যেমন প্রতিদিন নামে, অন্ধকারে ঢেকে যাবে চারিদিক, লাখ লাখ আলো জ্বালিয়েও যে অন্ধকার ঢাকা যাবেনা।
সামনে দেখি পাখিরা এখনও উড়ছে, ফেরার তাড়া নেই। নিশ্চিন্তে চোখ বন্ধ করলাম।

তারপর তাকাতেই দেখি আলোর ছিটেফোঁটা নেই, দিন পেরিয়ে গেছে। এত তাড়াতাড়ি সন্ধ্যে নামার কথা ছিলনা। এ সন্ধ্যের জন্য কোনো প্রস্তুতি তো নেওয়া হয়নি। এক পলকে কত কী পাল্টে যায়। যেমন করে অকস্মাৎ মৃত্যু আসে। যে মৃত্যুর জন্য কোনো প্রতীক্ষা থাকেনা, অযাচিত অতিথির মতোই চলে আসে। কোনোকিছু বুঝে ওঠার আগে একযুগ পাল্টে দিয়ে যায়।

অসময়ে আঁধার নামলে যেমন মনে আশঙ্কা ভিড় করে, চারিদিক নিস্তব্ধ হয়ে যায়, তেমন আপনজন হঠাৎ চিরতরে ছেড়ে গেলে জীবনের পথ যেন হারিয়ে যায়, যে রাস্তাগুলো আমরা তিল তিল করে নির্মাণ করি , সেগুলোর মুখ যেন বন্ধ হয়ে যায়, সে রাস্তা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার শক্তি থাকেনা, আর নতুন রাস্তা তৈরি করার উৎসাহ পাইনা।

যাঁকে হাত বাড়ালে এক মুহুর্ত আগে স্পর্শ পেতাম, মুখে না বললেও যে বুকের গন্ধ নেওয়ার ইচ্ছে পুষে চলতাম, সে গন্ধ আর স্বপ্নেও পাইনা।

বারবার এটাই মনে হতে থাকে এরকম হতে পারেনা। যে রাতের প্রস্তুতি থাকেনা, সে রাত এলে তার প্রতিটা মুহূর্ত অসহ্য হয়ে ওঠে, এক সেকেন্ড বছরের সমান প্রতিপন্ন হয়।

তবু সে আঁধারকে মেনে নিতে হয়, ভগবানকেও দোষ দিতে ইচ্ছে করেনা, চারিদিক আঁধারের ভেতর শুধুই শূন্যতা থাকে, সে আঁধারে পথ না পেলেও এগিয়ে যাওয়ার কথা ভাবতে হয়, এছাড়া আর কোনো উপায় থাকেনা।

✍️ অরূপ

20/12/2023

একটা সময় মানুষ একলা হয়ে যায়,
একলা থাকতে থাকতে সে জমিয়ে ফেলে নি:সঙ্গতার পাহাড়,
রাস্তায় কাজের দিনে ছুটে চলা মানুষের ভিড়ে সে স্থাণুবৎ দাঁড়িয়ে থাকে,
ফেলে আসা অতীত, হারিয়ে যাওয়া মানুষের স্মৃতি তাকে তাড়া করে বেড়ায়,
অঝোরে কাঁদতে চাইলেও তার আর চোখ ভেজেনা,
ঘরের ফাঁকা ছাদে দুহাত নিক্ষেপ করে চিৎকার করতে চায়, কিন্তু পারেনা
নতুন পথ খুঁজে পায়না, উল্লাসে মেতে উঠতে মন চায়না, বন্ধুদের ঠেকে যেতে ইচ্ছে করেনা, জীবনের লক্ষ্য খুঁজে পায়না
তখন কোনো মানুষকে আপন মনে হয়না, পাশে বসতে ইচ্ছে করেনা, কাউকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে ইচ্ছে করেনা,
একাকীত্বে আচ্ছন্ন হয়ে সে কেবল মানুষের সঙ্গ থেকে মুক্তি চায়।

#আমসত্ত্ব

15/12/2023

পুত্রশোকে ভগ্ন পিতাই জানে ছেলে হারানোর যন্ত্রণা,
গঙ্গার গ্রাসে ভিটেমাটি হারানোর হাহাকার কেবল সেই মানুষ করে,
যে একদিন ভেবেছিল ভালোবাসার মানুষটাকে নিয়ে জীবনে বহু নকশিকাঁথা আঁকবে, সেই জানে ভালোবাসা না পাওয়ার শূন্যতা,

তখন সেই মানুষের নিজেকে সর্বহারা মনে হয়, বেঁচে থাকাটা প্রতি পদক্ষেপে কাঁটার জুতোর পরে হেঁটে চলার মতো লাগে, অদ্ভুত উদাসীনতায় ডুবে যায়।
সে ভাবে-
যা ঝড় আসে আসুক,
যা পরীক্ষা নেয় নিক,
যা চলছে চলতে থাকুক
হারিয়ে যাওয়া এ সময় আর ফিরে না আসুক

এরপর হারানোর আর কোনোকিছু বেঁচে নেই,
“গেছে যে দিন” একবারেই চলে গেছে,

তার কাছে এখন কেবল দীর্ঘশ্বাস পড়ে থাকে, মুখোমুখি বসবার কোনো বনলতা সেন থাকেনা।

#আমসত্ত্ব

14/12/2023

সময় যখন বশে নেই, জীবন কঠিন পরীক্ষা নিয়ে যাচ্ছে, কোনোকিছুই ইচ্ছেমতো হচ্ছেনা, ঘরে বিছানায় শুয়েও শান্তির ঘুম আসছেনা, ভবিষ্যতের রাস্তা কালো মেঘে ঢেকে আছে, একটা আশা মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে- "একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে"।

অমাবস্যার রাতে পথহারা পথিক দূরে আলোর বিন্দু দেখতে পেলে যে সাহসে এগিয়ে যেতে থাকে,
খরায় সব ফসল নষ্ট হতে দেখেও যে আশায় চাষী আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে,
মারণরোগে ভুগতে ভুগতে রোগী যে আকাঙ্ক্ষায় প্রাণবায়ু ধরে রাখে-

"কোনো একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে"-
এ কেবল আশার আলো দেখায় না, ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়া জীবনকে পুনরায় গড়ে তোলার দিশা দেখায়।

#আমসত্ত্ব

13/12/2023

যে মানুষটা তোমাকে আঘাত দিয়ে চলে যায়, একবার পিছন ফিরেও তাকায় না, ত্যাগ করার পর তুমি কেমন আছো জানতে চায়না, বহুদিন পর যখন ফিরে আসে, তখন তাকে গ্রহণ করার প্রবৃত্তি থাকেনা।

কারণ, তার প্রতি তোমার ভালোবাসা আর বেঁচে নেই, চলে যাওয়ার পর যে রাগ হয়েছিল, সে রাগ সময়ের সঙ্গে মিলিয়ে গেছে, যে কষ্ট পেয়ে তুমি ঘরের কোণে গুমরে কেঁদেছ, ঘুমহীন রাতের পর রাত পার করেছ, সেই কষ্টটা চোখের জলের মতো শুকিয়ে গেছে, তুমি নতুনভাবে বাঁচার অভ্যাসটুকু করে নিয়েছ।

তার প্রতি তোমার ভালোবাসা নেই, কষ্ট নেই, নেই কোনো অভিমান যাকে ভালোবাসায় পরিবর্তন করা যায়।

আছে শুধু অবজ্ঞা, যা কেবল দূরত্ব বাড়ায়
ভাঙা কাচ জোড়া লাগলেও দাগ থেকে যায়।

#আমসত্ত্ব

12/12/2023

🔷ঘটোৎকচ🔷

যে যোদ্ধা প্রবল বীরত্ব প্রদর্শন করেও যুদ্ধের ময়দানে আত্মবলি দেয়, তাদের আমরা ট্র‍্যাজিক নায়কের আসনে বসাই। যেমন, অর্জুনতনয় অভিমন্যু। চক্রব্যূহ রচনা করেও যাঁর পরাক্রমের কাছে নতিস্বীকার করে কর্ণকে পর্যন্ত যুদ্ধের রীতি লঙ্ঘন করে হত্যা করতে হয়েছিল। তাই অভিমন্যুর বীরত্বের কথা এখনও আমরা স্মরণ করি।
কিন্তু এর মাঝে আরও এক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রের কথা ভুলে যাই, কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে যার অবদান একজন নায়কের থেকে কোনো অংশে কম নয়। ভীমসেন ও হিড়িম্বার পুত্র ঘটোৎকচ। যাঁকে মহাভারতের এক উপেক্ষিত নায়ক বলা যায়।

সেই ঘটোৎকচ, যাঁকে ভীমসেন যখনই স্মরণ করেছেন, বিনা বাক্যব্যয়ে চলে এসেছেন, যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন। প্রয়োজনে দ্রৌপদী সহ পান্ডবদের কাঁধে চাপিয়ে জঙ্গলের মধ্যে বয়ে বেড়িয়েছেন। পিতার নিকট নিজের জন্য কখনো কিছু প্রার্থনা করেননি। কৃষ্ণের পরামর্শে যখন ভীমসেন ঘটোৎকচকে যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে নির্দেশ দেন, তখনই সেখানে হাজির হয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে কুরুসেনাদের উপর তান্ডব চালাতে থাকেন। ইন্দ্রজালের সাহায্যে রথ রচনা করে ঘটোৎকচ অলায়ুধকে নিহত করে কর্ণের দিকে অগ্রসর হতে থাকেন।
প্রবল পরাক্রমী কর্ণও তাঁর সঙ্গে পেরে ওঠেন না। কর্ণ ও ঘটোৎকচ পরস্পরের দিকে অজস্র তীরনিক্ষেপ করতে থাকেন। ঘটোৎকচ মন্ত্রোচ্চারণ করে কর্ণের দিকে তীর নিক্ষেপ করেন যাতে কর্ণের রথের সারথি এবং ঘোড়াগুলো নিহত হয়। এরপর শুরু হয় ঘটোৎকচের বিক্রম। ইন্দ্রজাল রচনা করেন, প্রবল গর্জন করে সেই ইন্দ্রজালের মধ্য দিয়ে বিপুল সংখ্যক তীর, বর্শা, ভারী দণ্ড, কুঠার, তলোয়ার, গদা, বল্লম, কাঁটাযুক্ত গদা, শতঘ্নী ও অন্যান্য নানাবিধ অস্ত্রশস্ত্র কর্ণ সহ কুরুসেনাদের দিকে নিক্ষেপ করতে থাকেন। প্রচুর সেনা তাতে মারা যায়। বলাবাহুল্য কোনো পান্ডবের মাধ্যমে এর আগে এত কুরুসেনার সংহার হয়নি। ইন্দ্রদেবের কাছ থেকে প্রাপ্ত যে অস্ত্র কর্ণ অর্জুনের জন্য সংরক্ষিত করে রেখেছিলেন, তা বাদ দিয়ে বাকি অস্ত্র প্রয়োগেও ঘটোৎকচকে পরাস্ত করতে সক্ষম হলেননা। অবশেষে সেই বাসুকি অস্ত্র প্রয়োগ করতে বাধ্য হলেন, ঘটোৎকচ নিহত হলেন, এবং সে সময়েও বহু কুরুসেনার প্রাণ নিলেন।

ঘটোৎকচের কথা মহাভারতে এখানেই শেষ।
এরপর আর উল্লেখ পাওয়া যায়না। ঘটোৎকচের মৃত্যুর পর ভীমের মধ্যে ক্রোধের সঞ্চার হলেও তা পর্যাপ্ত ছিল কী? যেমন দেখা গিয়েছিল অভিমন্যুর মৃত্যুর সময়, অর্জুন সহ পান্ডবরা যেভাবে উদ্যত হয়ে কৌরবদের নিধনের জন্য এগিয়ে গিয়েছিলেন তেমনটা ঘটোৎকচের সময় দেখা যায়নি।
অভিমন্যুর তাও নিজেকে পিতাসমান বীর প্রমাণ করার দায় ছিল, কিন্তু ঘটোৎকচের সেই বাসনা ছিলনা। তিনি এসেছিলেন নি:স্বার্থভাবে, মাতা হিড়িম্বা রাক্ষসী হয়েও যাঁকে ভীমসেনের আদর্শে দীক্ষিত করেছিলেন।
এছাড়া ঘটোৎকচ যে বীরত্ব দেখিয়েছিলেন, সেই বিক্রম যদি কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের শুরু থেকে দেখা যেত হয়ত যুদ্ধের ফল অনেক আগেই নির্ধারিত হয়ে যেত।
ঘটোৎকচ জানতেন কর্ণের সামনে গেলে মৃত্যু হয়ত অবধারিত, তা সত্ত্বেও তিনি এগিয়ে এসেছিলেন কোনো চাওয়া পাওয়া ছাড়াই।
তিনি জানতেন পান্ডবদের জয়ে তিনি কোনো রাজত্ব পাবেন না, যেহেতু রাক্ষস বংশে জন্ম।

রাক্ষস হওয়ার জন্য ঘটোৎকচকে নিয়ে স্তুতিবাক্য রচিত হয়না, পরে মহাভারতে উল্লেখ পাওয়া যায়না। তাঁর বীরত্বের বদলে বিশালাকার শরীরের নীচে কৌরবসেনার চাপা পড়ার ঘটনায় আমরা পুলকিত বোধ করি, তাঁর আত্মবলিদানে ব্যথিত হইনা, অশ্রুপাত করিনা, যেমনটা করি অভিমন্যুর ক্ষেত্রে।
আসলে যুগে যুগে জাতপাতের শিকার নিচু জাতের মানুষেরাই হয়ে এসেছে, তাদের কৃতিত্ব খাটো করে দেখা হয়েছে, তারা ইতিহাসে স্থান পায়না, তাদের বীরগাথা, শৌর্য রচিত হয়না।
তারা এক ক্ষুদ্র পার্শ্বচরিত্র হিসেবেই আমাদের মননে বেঁচে থাকে।

ঋণ -নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ীর “কথা অমৃতসমান” (সংবাদ প্রতিদিন, রোববার),
https://roar.media/bangla/main/myth/ghatotkacha-vadha-parva-5

11/12/2023

পুষে রাখা শখ আর অপূর্ণ সব ইচ্ছে
করে নতিস্বীকার দায়িত্বভারের কাছে।

একটা সময়ের পর নিজের শখ ভুলে কেবল প্রয়োজনের জন্য বাঁচার অভ্যাস করে নিতে হয়।

তখন নিজের আনন্দ বলে কিছু থাকেনা, আপনজনের খুশিতে আনন্দ খুঁজে নিতে হয়। কর্তব্যের বোঝায় শখের কথা ভুলে যেতে হয়। পরিস্থিতির চাপে নিজের সবকিছু ত্যাগ করে পরিবারের জন্য নিজেকে নিয়োজিত করতে হয়। তখন নিজের বলে কিছু থাকেনা, “নিজস্ব”এই শব্দটাই অলীক মনে হয়।

তবু যে ইচ্ছেগুলো আমরা এতদিন লালন পালন করে আসি, চেষ্টা চলে নিরন্তর, সেই অপূর্ণ ইচ্ছেগুলো বাঁচিয়ে রাখার, টুকরো টুকরো শখগুলো পূরণ করার, কিন্তু “বড়ো” হওয়ার দায়িত্বভারে ধীরে ধীরে চাপা পড়ে মিলিয়ে যায়, বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হয়না।
#আমসত্ত্ব

07/11/2023

"রোজ কত কী ঘটে যাহা তাহা
এমন কেন সত্যি হয় না আহা!"
রূপকথা যে কেবল বইয়ের পাতায় থাকেনা, বাস্তবেও রূপকথার জন্ম হয় তা আজ আফগানিস্তান অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের ক্লাইম্যাক্সে ম্যাক্সওয়েলের ইনিংস না দেখলে বিশ্বাস হতনা। এই ম্যাক্সওয়েল যেন সেই রূপকথার নায়ক যে রক্তাক্ত হয়েও একা এক সৈন্যবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করে অসাধ্যসাধন করে দেশকে বাঁচায়। ৯১/৭ থেকে একা হাতে দলকে টেনে ডাবল সেঞ্চুরি করে ২৯১ রানের গণ্ডি টপকে জয় করা যে সম্ভব তা ম্যাক্সওয়েল প্রমাণ করে দিলেন। এই জয় হাসিল করতে তাঁকে কী কী বাধা পেরোতে হয়েছে? ইনিংসের মাঝপথে হাঁটতে পারছিলেন না, সিঙ্গেল রান নিয়ে এত বড় লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্বব নয়। সাত উইকেট পড়ে গেছে, পাশে কেউ ব্যাটার নেই। সঙ্গে আছে সেমিফাইনালে ওঠার ভয়ঙ্কর চাপ।
সেখানে তাঁর হাতিয়ার ছিল দৃঢ়সংকল্প, প্রবল আত্মবিশ্বাস এবং সর্বোপরি হার না মানা মনোভাব। ক্রিকেটে অসিদের এই মনোভাবের জন্য তারা অনেক অসম্ভবকে সম্ভব করেছে। এই ইনিংসটা হয়ত কেবল অসিদের নয় পৃথিবীর ওয়ানডে নিয়ে ইতিহাস রচনা হলে তার প্রথম সারিতে থাকবে।
আফগানিস্তানের হয়ত এই হার হজম করতে অনেকদিন লেগে যাবে। তারা হেরে গেল ম্যাক্সওয়েলের ঐ মানসিকতার কাছে। ম্যাড ম্যাক্স প্রমাণ করে দিলেন
“The difference between the impossible and the possible lies in a person's determination.”

20/10/2023

শত সংগ্রামের মধ্যেও দুর্গারা হাল ছেড়ে দেয়না, ঝুঁকি নিতে পিছিয়ে যায়না।
দুর্গারা রাঁধে আবার চুলও বাঁধে। মাতৃরূপে দুর্গা আসে, সন্তানদের যেকোনো মূল্যে আগলে রাখে। সেই দুর্গাই পরিবারকে রক্ষা করতে প্রয়োজনে অস্ত্র ধরতে পারে, জীবনযুদ্ধে পরিবারের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য নিজের কোনো তোয়াক্কা না করে এগিয়ে যেতে পারে।
মা দশভুজার কাছে প্রার্থনা করি আশেপাশের সব দুর্গা সারাজীবন"যেন থাকে দুধেভাতে" এবং তাদের প্রাপ্য সম্মানটুকু পেয়ে হাসিমুখে বাঁচতে পারে।

এক দুর্গা রিক্সা চালায় কুচবিহারের হাটে
এক দুর্গা একশো দিনের কাজে মাটি কাটে |
এক দুর্গা রাস্তা বানায় পিচ ও পাথর ঢালে
এক দুর্গা রোজ চুনো মাছ ধরছে বিলে – খালে।
এক দুর্গা করছে মাঠে দিনমজুরের কাজ
এক দুর্গা খিদেয় কাঁদে, পায়নি খেতে আজ।
সবাই জানি, এদের কারো হয়না কোনও পূজো
এরা তো মা তোমার মতো নয়কো দশভুজো।
সব দুর্গার চোখে-মুখেই ফুটবে হাসি কবে?
মাগো, তোমার পুজো সেদিন সত্যি সফল হবে।
(সব দুর্গাই থাকুক সুখে -ভবানীপ্রসাদ মজুমদার)

07/10/2023

📝চোতা📝

পরীক্ষাহলে যাওয়ার আগে ব্যাকবেঞ্চারসরা-
"প্রচুর টেনশন, নাম্বার পেতে লিখতে হবে পাতার পর পাতা
ভয় কী, সে ব্যবস্থা করেছি, নিয়েছি লুকোনো সব চোতা।"

তাই পরীক্ষাহলে যাওয়ার আগে এইসব ব্যাকবেঞ্চারসদের ভালো করে পরখ করুন, তাদের চোখেমুখে গামলা গামলা টেনশন দেখতে তো পাবেননা, বরং দেখবেন ক্যাপ্টেন কুল ধোনি এখানেও গন্ডা গন্ডা শিষ্য তৈরি করে রেখেছেন । শিক্ষকরা তাই কঠিন প্রশ্ন তৈরি করে ছাত্রদের চমকে দেওয়ার বদলে আত্মবিশ্বাসী ছাত্রদের পরীক্ষাহলে দেখে অবাক হয়ে যান। যে ছাত্ররা দুদিন আগে ক্লাসে কোনো উত্তর বলতে গিয়ে এদিক ওদিক করুণচোখে তাকিয়ে থাকত, কাঁপতে থাকা হাত পা দেখে মনে হত "কন্ঠ আমার রুদ্ধ আজিকে"/ মনে সব উত্তর হারা, তারা যে কেমন করে পরীক্ষাহলে লিখে যায় তা খুঁজে পাবেননা।

তাহলে কী ভাবছেন, আমি এই অসৎ উপায়ে পরীক্ষায় উতরে যাওয়ার প্রক্রিয়াকে সমর্থন করছি? প্রদীপের নীচে অন্ধকারকে দেখলে হবে, আলোটাকেও তো দেখতে হবে। আসুন জেনে নিই, চোতা করাটা আমাদের জীবনে এগিয়ে যাওয়ার পথে কেমন প্রভাব ফেলে-
🔸১) চোতা যুদ্ধ জিততে শেখায়। পরীক্ষা হল যুদ্ধ, যেখানে আমাদের সন্তান ভাবা শিক্ষকরা হঠাৎ ভোল বদলে সিলেবাসের বাইরের প্রশ্ন দিয়ে আমাদের তাক লাগিয়ে দিতে চান।
শেক্সপিয়ার তো বলেই গেছেন, "এভরিথিং ইজ ফেয়ার ইন লাভ অ্যান্ড ওয়ার"। আমাদের এই বাণীকে বাস্তবে রূপায়ণ করতে চোতাই শেখায়।

🔹২) চোতা আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। ওই যে উপরে বললাম, দুদিন আগে যেখানে ক্লাসে প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে যাদের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা অপরাধীর মতো মনে হত, তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের আমদানি ঘটানো, তাও আবার পরীক্ষাহলে, এই দুরূহ কাজটি চোতাই করে।

🔸৩) চোতা টিমগেমের উপকারিতা শেখায়। ক্লাসে যে সহপাঠীর মুখের দিকে তাকাতে ইচ্ছে করত না, পরীক্ষাহলে তার হাতে হাত ধরে সমস্ত ইগো ভুলে গিয়ে পরীক্ষা নামক বৈতরণি পার করতে চোতার জুড়ি মেলা ভার।

🔹৪) জীবনে চলতে গেলে হলম্যানেজ করার ক্ষমতা থাকাটা জরুরি। হলম্যানেজে চোতার মতো বড়ো শিক্ষক আর কী হতে পারে।

🔸৫) চোতা দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়। যে শব্দগুলো পড়ার জন্য অণুবীক্ষণ যন্ত্রের প্রয়োজন, তা দ্রুতগতির সঙ্গে পড়া ও লেখার মতো অসাধ্যসাধন চোতার মাধ্যমে হয়।

" চুরি বিদ্যা বড়ো বিদ্যা, যদি না পড়ো ধরা" এই অমোঘ সত্যের সঙ্গে পরিচয় চোতার মাধ্যমে হয়। তাই পরীক্ষাহলে যখনই দেখবেন কোনো সহপাঠীর টেনশনে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার জোগাড়, বাণের জলে ভেসে খড়কুটো ধরতে চাইছে, নিজের মানবিক চরিত্রকে জাগ্রত করুন, তার হাতে চোতা ধরিয়ে দিন, মানুষ হয়ে পাশে দাঁড়ান।

06/10/2023

😴নাক ডাকা😴

হঠাৎ ঘরে এলেন, দেখলেন রুম ফাঁকা
আর দেরী কেন গুরু, শুরু করুন নাক ডাকা।

সারাদিন কাজে ব্যস্ত থাকার পর, ক্লান্ত শরীরটাকে এলিয়ে নির্বিঘ্নে ঘুম দিয়ে যদি নাক না ডাকতে পারলেন তাহলে ঘুম গভীর হল কই? ইদানিং বাস ট্রাম থেকে শুরু করে নেহা কক্করের কনসার্ট, সবজায়গায় ঘুমকাতুরে মানুষদের দেখতে পাবেন।

নাকের মধ্যে বায়ুচলাচলে ব্যাঘাত ঘটলে নাক ডাকা এক স্বাভাবিক ব্যাপার, তা সত্ত্বেও মানুষ নাক ডাকলেও স্বীকার করেনা।
অবিবাহিত মানুষের নাক ডাকাকে অস্বীকারের একটা কারণ থাকতে পারে, কিন্তু বিবাহিত মানুষের ক্ষেত্রে তা স্পষ্ট নয়।
যেমন, আপনি মধ্যরাতে নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছেন, তখন যদি স্ত্রী আপনার গায়ে হাত দেয়, অন্য ইঙ্গিত ভেবে ফেলবেন না যেন, আপনার নাক ডাকায় অতিষ্ঠ হয়ে আপনাকে জাগানোর চেষ্টা করছেন। স্ত্রীরা স্বামীর ক্রোধান্বিত গর্জনকে তত ভয় পায়না, যতটা পায় নাসিকাগর্জনকে।

চারিদিকে এত ঘুমকাতুরে মানুষদের দেখে কুম্ভকর্ণের শিষ্য বলে মনে হয়। কুম্ভকর্ণ তাই মরেও প্রমাণ করল সে মরে নাই।

05/10/2023

🔷বন্ধু🔷
(২)
যখন আপনি খুব আনন্দ করছেন, কিংবা রেগে আছেন, অথবা দু:খের সাগরে নিজেকে সঁপে দিয়েছেন, তখন যদি কেউ এসে বলে, "বন্ধু চল, হাতটা দে"- গ্যারান্টি দিয়ে বলছি আপনার মন ভালো হয়ে যাবে।

বন্ধু হল সেই,যার চওড়া কাঁধে নিশ্চিন্তে মাথা রাখতে পারবেন , বন্ধু হল সেই, যাকে ভরসা করে আপনার গোপন কথা নির্বিঘ্নে বলতে পারবেন, বন্ধু হল সেই যাকে জড়িয়ে ধরে আপনি কাঁদতে পারবেন।

তাই, যে বন্ধুকে আপনি না ডেকেও পাশে পান, তার যখন আপনাকে সবথেকে বেশি প্রয়োজন তখন যেন আপনি বলতে পারেন, "হাল ছেড়ো না বন্ধু" বরং হাতটা ধরো শক্ত করে।

04/10/2023

🔶বন্ধু🔶
(১)
বন্ধু কাকে বলবেন, স্কুলে স্যারের চেয়ারে চুইংগাম আটকে রাখার অপরাধে যার সঙ্গে শাস্তি পাবেন,
বন্ধু কাকে বলবেন, যে আপনার সঙ্গে থাকলে লেটনাইট সিনেমা দেখে ফেরার সময় নায়কের ডায়লগ চিৎকার করে পাড়ার মানুষের ঘুম ভাঙাবেন,
কিংবা বন্ধু কাকে বলবেন, যে আপনার স্ত্রীকে এক্সের কথা বলে আপনাকে বিপদে ফেলবে।

বন্ধু সে, যে বাবার সামনে ভুল করে সিগারেট খাওয়ার কথা বলবে,
বন্ধু সে, যার কথায় পরীক্ষায় নকল করতে গিয়ে ধরা পড়বেন কিন্তু সেও আপনার শাস্তি ভাগ করে নেবে,
বন্ধু সে, ব্রেকআপের পর যে আপনার টক্সিক এক্সকে নিয়ে একদিকে যেমন হাসাহাসি করবে অন্যদিকে হাতটা ধরে বলবে "চল একটু বেড়িয়ে আসি।"
যে হাতটা সে ছেড়ে যাওয়ার কথা কখনো ভাববেনা, সেই আপনার বন্ধু।

21/09/2023

🟢২১ শে সেপ্টেম্বর🟢
🌍বিশ্ব শান্তি দিবস🌎

নিজের ঘরে টিকে থাকা বউ, বিভিন্ন দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত মউ এবং দীপিকার ডেবিউ, সবেতেই যার প্রয়োজন সেটা হল -শান্তি।
তাই সর্বস্তরে শান্তি বজায় রাখার জন্য ২১ শে সেপ্টেম্বর সারা পৃথিবীজুড়ে বিশ্ব শান্তি দিবস উদযাপন করা হয়।
এই দিনটিতে ২৪ ঘন্টার জন্য অহিংসা ও যুদ্ধবিরতি পালন করা হয়। প্রত্যেকবছর বিভিন্ন থিম থাকে। এ বছরের থিম হল “Actions for Peace: Our Ambition for the Global Goals”. গতবছর থিম ছিল “End Racism. Build Peace.” অর্থাৎ জাতপাতের অবসান ঘটিয়ে শান্তি স্থাপন করা।
১৯৮২ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক শান্তি দিবস পালন করা হত। এরপর জাতিসংঘ এই ২১শে সেপ্টেম্বর দিনটিকে পালন করার সিদ্ধান্ত নেয়।
এই দিনটি পালনের মাধ্যমে এই বার্তা দেওয়া হয় যে এমন বিশ্ব গড়ে তোলা হবে যেখানে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশ বিদেশের কাঁটাতারের বেড়া ভুলে সকল নাগরিক হিংসা ত্যাগ করে উন্নতির কাজে নিজেদের নিয়োজিত করতে পারেন।
এই দিনটির স্মরণার্থে নিউইয়র্কের জাতিসংঘের সদর দফতরে "শান্তিঘন্টা" বাজানো হয়। এই ঘন্টারও একটা ইতিহাস আছে। ১৯৫৪ সালের জুনে জাতিসংঘের জাপান অ্যাসোসিয়েশন শান্তিঘন্টাটি নিউইয়র্কে প্রধান দফতরে উপহার দেয়। এই ঘন্টাটি তৈরী করতে মুদ্রা এবং পদক ঢালাই করা হয়েছিলা যা এসেছিল পোপ, জাতিসংঘের সদস্য দেশ এবং ৬০জনের ও বেশি শিশুদের কাছ থেকে। এই ঘন্টাটি যদিও বছরে দুবার বাজানো হয়- ২১ শে সেপ্টেম্বর এবং বসন্তের প্রথম দিনে।

তবে মনে বিদ্বেষ রেখে মন্দিরের ঘন্টা আর সারা বছর দেশগুলো "তু তু ম্যায় ম্যায়" করে শান্তিঘন্টা বাজানো একই- কোনো ফল পাওয়া যায়না, যদিও বিন্দু বিন্দু জলকণা জমে যেমন সিন্ধু তৈরি হয় তেমনই ক্রমশ প্রচেষ্টার ফলে হয়ত একদিন বিশ্বে সব ভেদাভেদ ভুলে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে।

13/09/2023

🔶 ধৃতরাষ্ট্ররা বারবার ফিরে আসেন 🔶

ধৃতরাষ্ট্র বারবার ফিরে আসেন, বিভিন্ন রূপে। মহাভারতে ধৃতরাষ্ট্র কেবল শারীরিক দিক দিয়ে জন্মান্ধ ছিলেন না, পুত্রস্নেহে এতটাই অন্ধ ছিলেন যে ফলস্বরূপ তাঁর জীবদ্দশাতেই শতপুত্রের মৃত্যু সঞ্জয়ের মাধ্যমে মানসচক্ষে দেখেছিলেন। তবু ধৃতরাষ্ট্রের শিক্ষা হয়নি।
এযুগে, আমরা মহাভারতের গল্প জানি এবং বলাবাহুল্য সেখান থেকে শিক্ষাগ্রহণ করি। এখনও মানুষকে পুত্রস্নেহে অন্ধ হতে দেখলে তাকে ধৃতরাষ্ট্রের সঙ্গে তুলনা করি। কিন্তু ধৃতরাষ্ট্র কখনও নিজে তো নয়ই দুর্যোধনকে দিয়েও শিক্ষাগুরুকে হেনস্থার শিক্ষা দেননি, প্রহার তো দূরের কথা। কারণ শিক্ষাগুরুকে ভগবানের স্থানে বসানো হয়ে এসেছে, তাঁদের শাসন ছাত্রের কাছে আশীর্বাদতুল্য হিসেবে গণ্য হয়ে এসেছে।
শিক্ষক যদি ছাত্রের ভুলে শাসন করেন তখন সেই শাসনের কথা ঐ ছাত্র তার বাবা মাকে এসে বলার সাহস দেখাতে পারতনা। কারণ তাতে তার উপর সহানুভূতির পরিবর্তে তিরস্কার পাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল থাকত। কিন্তু ছেলেকে শাসন করেছেন বলে সেই শিক্ষককে স্কুলে গিয়ে বাবা বা আত্মীয় প্রহার করে আসবেন এই ঘটনা দেখলে শিউরে উঠতে হয়।
হয়ত এরকম ঘটনা আগেও ঘটেছে, কারণ সিসিটিভি সব স্কুলে থাকবেনা বা সেই দুর্মতি ব্যক্তি যদি রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকেন তাহলে বিচার পাওয়ার আশা কম, উল্টে সেই শিক্ষকের পুনরায় প্রহার বা প্রাণভয়ের আশঙ্কা থেকে যায়।
এরকম ঘটনা ঘটতে থাকলে শিক্ষক ছাত্রের সম্পর্ক বজায় থাকবে তো? ছাত্রের ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে উঠলে ছাত্রের ভুলকে শুধরে দেওয়ার দায়িত্বও শিক্ষকের উপর বর্তায়। এখন শুধরে দিতে গিয়ে যদি পাল্টা হুমকি, শারীরিক নিগ্রহ ঘটে তাহলে শিক্ষকরা কখনো ছাত্রকে শাসন করতে আসবেন না।(এক্ষেত্রে বলে রাখা দরকার শাসন এবং অন্যায়ভাবে নিগ্রহ সম্পূর্ণ আলাদা ব্যাপার, তবু বাবা এসে পাল্টা মেরে যাবেন সেটা এক্ষেত্রের সমর্থনযোগ্য নয়)। ফলত তাঁদের সম্পর্ক পেশাদার হয়ে যাবে, যান্ত্রিকতায় পর্যবসিত হবে।

এর উল্টো মতবাদ আসবে শিক্ষক ছাত্রের সম্পর্ক তো বন্ধুর মতো হওয়া উচিত ( প্রতিটা সম্পর্কে এখন 'বন্ধু' কথাটা ঢুকিয়ে দেওয়ার চল চলছে যদিও), তর্কের খাতিরে ধরেও নিলাম। কিন্তু বন্ধুত্বেও তো শাসনের স্থান থাকে। উল্লেখ্য শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পিতা-মাতার আসনে বসানো হয়, এবং উল্টোদিকে তাঁদের কাছেও সন্তানসম স্নেহের প্রত্যাশা থাকে।

এই ঘটনা তাই প্রশ্নচিহ্নের মুখে দাঁড় করায়, এখন বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক-ছাত্রের মধ্যে আবার সুসম্পর্ক গড়ে তোলা যাবে তো? নাকি যেভাবে যান্ত্রিকতা এই সম্পর্ককে ক্রমশ গ্রাস করছে তার দিকে আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

(প্রথম ছবি- "আমার শিক্ষক" - মারুফ হোসেন সম্পাদিত(অভিযান পাবলিশার্স) বইয়ের পাতা থেকে
দ্বিতীয় ছবি- শিক্ষক নিগ্রহের )

12/09/2023

🔷বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়🔷

বাংলা সাহিত্যে লবটুলিয়া বইহারের জঙ্গল থেকে আফ্রিকার রিখটার্সভেল্ড পর্বতমালা পর্যন্ত যাঁর অবাধ যাতায়াত ছিল তিনি অমর কথাসাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়।

বিভূতিভূষণ একদিকে যেমন পাঠককে লবটুলিয়া জঙ্গলের সাধারণ ঝোপঝাড়ের স্নিগ্ধরূপের দর্শন করিয়ে দেন অন্যদিকে তিনি সেই শান্ত পাঠকের মনে অ্যাডভেঞ্চার জাগিয়ে চাঁদের পাহাড়ের খোঁজে সুদূর আফ্রিকা নিয়ে যেতে পারেন, যেখানে মাঝরাতে অগ্ন্যুৎপাতের "ভয়ঙ্কর সুন্দর" দৃশ্য শংকরকে শত হীরকখন্ডের লোভ ভুলিয়ে সেই দামাল প্রকৃতির সামনে নতজানু করিয়ে দেয়। বিভূতিভূষণ পারেন প্রত্যন্ত গ্রামের কোনো এক সাধারণ পরিবারের ইন্দির ঠাকরুণকে তুলে ধরে আমাদের ঠাকুমা-দিদার ছবি মনে করিয়ে দিতে, কিংবা পাঠকের মনে ভাইবোনের প্রথম ট্রেনদর্শনের জন্য কাশবন দিয়ে ছুটে চলার চিত্র এঁকে দিতে। আবার পাচক হাজারি ঠাকুরের একটা হোটেল খোলার লক্ষ্যে বিভিন্ন চড়াই উতরাই পেরিয়ে এগিয়ে যাওয়ার কাহিনীর মধ্য দিয়ে তৎকালীন সমাজকে তুলে ধরতে।

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় স্বীকার করেছেন যে তিনি কোনো বড়ো ঘটনায় বিশ্বাসী ছিলেন না। গ্রামবাংলার দৈনন্দিন ছোটো ছোটো সুখ:দুখের নকশিকাঁথা আঁকতে পছন্দ করতেন। আমাদের চারপাশের বহমান অথচ মন্থর জীবনযাত্রাকে লিপিবদ্ধ করার পক্ষপাতী ছিলেন। কৃত্রিমতায় তাঁর অরুচি ছিল। তাইতো রাস্তার ধারের বা কোনো এক জঙ্গলের নাম না জানা ফুলকে এত সুন্দর করে বর্ণনা করতে পেরেছেন, গ্রামের মায়াবী জ্যোৎস্নার অপরূপ রূপের সঙ্গে পাঠকের পরিচয় করিয়েছেন, ইছামতী নদীর পাশের গ্রামের নীলচাষীদের উপর ইংরেজদের অত্যাচার, তাদের হাহাকারের ছবি তুলে ধরতে পেরেছেন।

জন্মদিনে সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি আমার সশ্রদ্ধ প্রণাম।

11/09/2023

হিংসায় বিষিয়ে যাওয়া মানুষের মনে ভালোবাসার জাগরণ ঘটানো যদি জাদু হয়, তাহলে, ভালোবাসা সরিয়ে ঘৃণার সঞ্চার করে ফুলের বদলে অস্ত্র ধরিয়ে দেওয়া হল কালাজাদু। আর সেই কালাজাদুর জাদুকর ছিলেন ওসামা বিন লাদেন। না, লাদেন কোনো হিরো নন, সেটা আমরা জানি। আমেরিকায় ঐ ভয়ানক হামলার পর সারা পৃথিবী জুড়ে যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছিল তা অকল্পনীয়। মানুষের মনে সন্ত্রাসবাদীরা আতঙ্কের থাবা বসিয়ে দিয়েছিল।
তবে ওসামা বিন লাদেন না থাকলে আমরা জানতে পারতাম না আমাদের আশেপাশের মানু্ষদের, যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ঐ লাদেনকে সমর্থন জানিয়েছিলেন। তাঁদের বক্তব্য ছিল আমেরিকার অনেক বাড় বেড়েছে, তাই এরকম শিক্ষা দেওয়া দরকার। তাই লাদেন পৃথিবীজুড়ে শুধু ঘৃণা পাননি, সমর্থনও যে পেয়েছিলেন তা বলাই বাহুল্য। আসলে তিনি কেবল তাঁর জঙ্গিদের ব্রেনওয়াশ করেননি, তিনি মনস্তত্ত্ব বুঝতেন, তিনি জানতেন অন্যান্য মানুষের ভেতর থেকে হিংসা, দ্বেষ, ঘৃণা সহজেই বেরিয়ে আসে। তাই বহু মানুষ ভুলে গেছিলেন যে ঐ হামলায় ৩০০০ জনের থেকেও বেশি সাধারণ মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল। লাদেন শিক্ষিত ছিলেন, তিনি আমেরিকাকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য করেছেন, বেশ করেছেন- এরকম তত্ত্বও এসেছিল। ভাবতে অবাক লাগে অনেকেই আবার যুদ্ধবিরোধী।শক্তিশালী দেশের উপর এরকম আক্রমণ তাই তার প্রতিপক্ষদের মুখে হাসি ফুটিয়েছিলো, অনেক দেশ পরোক্ষভাবে ওসামা বিন লাদেনকে সমর্থন করেছিল।
এ অনেকটা সেই মহাভারতের কর্ণের মতো, নিজে লড়তে না পারলে যেকোনো উপায় প্রতিপক্ষকে হারিয়ে দাও, সে অধর্মের সাথ দিতে হোক না কেন।

01/03/2023

ফেসবুকে বিখ্যাত এক লেখকের পেজে বিদেশি একজন শিল্পী দেখলাম,খুব সম্ভবত প্রতিবন্ধী। ক্রাচে ডানহাত ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে পায়ের কাছে এক পুতুলকে দিয়ে ভায়োলিন বাজিয়ে অসধারণ সুর তুলছেন। দুহাতে সুতোর টানে পুতুলের হাত বাঁধা, শুধু পুতুলের দিকে তাকালে মনে হবে হাসিমুখে যেন সেই পুতুলই ভায়োলিনে সুরের মূর্ছনা তুলে আমাদের সম্মোহিত করে ফেলছে। অর্থাভাবে নিজের শিল্পীসত্তাকে না খুইয়ে রাস্তায় শিল্পের প্রকাশ ঘটিয়ে রোজগার করার চেষ্টা করছেন। সেই শিল্পীকে কি প্রতিবন্ধী বলা চলে? দর্শক খুশি হয়ে যখন কয়েন ফেলছেন, হাসিমুখে সেই শিল্পী ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছেন।অথচ ধন্যবাদ দেওয়া উচিত আমাদের, দর্শকদের।

সেই শিল্পী তো প্রতিবন্ধী হতে পারেন না, যাঁরা শত বাধা পেরিয়ে বাঁচার স্বপ্ন দেখেন; দারিদ্র্য,প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও নিজেদের শিল্পীসত্তাকে বিসর্জন না দিয়ে দেশ কাল সীমানা পেরিয়ে দূরের মানুষদের এইভাবে অনুপ্রেরণা জুগিয়ে যান, হার স্বীকার করে হাহুতাশ করতে থাকা মানুষকে ধাক্কা দিয়ে আবার উঠতে বাধ্য করান।

28/02/2023

মাঝে মাঝে সকালে ঘুম ভাঙলে বইয়ের আলমারির দিকে তাকালে একটা দীর্ঘশ্বাস ঝরে পড়ে। কত বই যে পড়া বাকি, তবু বই কেনা বন্ধ হয়না। হয়ত যা বই জমে গেছে এখন নিয়মিত পড়া শুরু করলেও এ জন্মে শেষ হবে কিনা সন্দেহ। এ যেন এক নেশা, পড়া না হলেও বই কেনায় লাগাম টানা একপ্রকার অসম্ভব। মাঝে মাঝে জোর করে বই কেনা থেকে নিজেকে বিরত রাখলে কখন যে আবার ভুত চেপে বসে। বই রাখার জায়গা অপ্রতুল, মায়ের বকুনি সবটা অগ্রাহ্য করে ঠিক নতুন বই এসে পুরানো বইয়ের উপর চেপে বসে। ঐ পুরানো বইগুলোর দিকে তাকালে মনে হয় যেন আমাকে দেখে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ছে। এখন সোশ্যাল মিডিয়া পড়ার সময়তে যে থাবা বসিয়েছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। না চাইলেও পুরোপুরি ফেসবুক ইউটিউব ছেড়ে বিরত থাকতে পারবনা। কোনো প্রয়োজনে বা তথ্য জানতে একবার সোশ্যাল মিডিয়াতে চোখ রাখলেই ঐ নিউজফিড আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরবে।
তবু বইয়ের টান যে ছাড়া যায়না, এ এক আলাদা অনুভূতি।

21/02/2023

দিনশেষে আঁধার নামলে যেমন সবাই নিজেদের আশ্রয়ে ফিরতে চায়, পাখিরা তাদের বাসায় ফিরে যায়, সিংহ গুহায় ফিরে আসে, সেরকমই কর্মসূত্রে বা বিভিন্ন জটিলতায় যতই অন্য ভাষাকে আপন করে নিইনা কেন, সবশেষে আমাদের মাতৃভাষাতে ফিরে এসেই নিশ্চিন্তির আশ্রয় মেলে,মাতৃভাষাতে কথা বলে, মনের ভাব প্রকাশ করে শান্তি পাই। জন্ম থেকে যে ভাষাতে কথা বলতে শিখেছি,নিজেদের অজান্তেই যে ভাষাকে আপন করে নিতে পেরেছি, যে ভাষার মাধ্যমে পরিবেশকে চিনতে পেরেছি সে ভাষাতেই তো মনের আনন্দ। আমাদের মধ্যে যে আবেগগুলো চলাফেরা করে, মনের ভিতরে নিয়মিত যে হাসি-কান্না-দুখের প্রকাশ ঘটে, সেখানেও কিন্তু আপনমনে মাতৃভাষাতেই কথা বলি।

মাতৃভাষা আমাদের সম্পদ, আমাদের আবেগ,আমাদের গর্ব, শেষ সম্বল হারিয়ে গেলেও আমাদের ভাষা হারিয়ে যায়না, তাইতো আমরা মাতৃভাষা রক্ষার তাগিদে প্রাণটুকু বলিদান দিতেও পিছপা হইনা।

সকলকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের শুভেচ্ছা।

19/02/2023

এও কী সম্ভব? ভারতবর্ষের বর্তমান সবচেয়ে জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী তার নিজের কনসার্ট থেকে হঠাৎই আর একজন শিল্পী, যিনি হয়ত তাঁর মতো অতটাও বিখ্যাত হয়ে উঠতে পারেননি, প্যান ইন্ডিয়ায় জনপ্রিয় হননি, ভারতবর্ষের রক গান কে এখনও যিনি একা হাতে টেনে নিয়ে চলেছেন, তবু প্রাদেশিকতায় আবদ্ধ থাকায় তাঁকে সেই অর্থে আপামর ভারতবাসী চিনতে পারেনি, কিন্তু অরিজিৎ সিং তাঁকে তাঁর মতো করে যোগ্য সম্মান দিলেন।

অরিজিৎ সিংয়ের তো কোনো দায় ছিল না, একটা লাইভ কনসার্টে বাংলার আরেক নক্ষত্রের ছবিকে স্ক্রিনে তুলে ধরে তাঁর গান, তাঁর ব্যান্ডের গান গাওয়ার। যেখানে অরিজিৎ সিংয়ের ঝুলিতে এত নিজস্ব গান, যেগুলো যেকোনো মূহুর্তে সমস্ত দর্শককে আসন ছেড়ে নাচতে বাধ্য করবে, মোবাইলের ফ্লাশলাইটে স্টেডিয়াম ভর্তি করাতে পারবে, নিজের গান ছেড়ে অন্যের গান গাওয়ার দায় তো নেই। সেখানেই কোনো এক প্রাদেশিক রক ব্যান্ডের গান গেয়ে তাকে ট্রিবিউট দেওয়ার কথা একমাত্র অরিজিৎ সিংই পারেন।
বারবার অরিজিৎ সিং প্রমাণ করে দেন তিনি সবার থেকে একদমই আলাদা, যাঁর পা সবসময় মাটিতে থাকে, সাফল্যের সিঁড়িতে চরমশিখরের দিকে এগোতে এগোতেও যিনি ছোটবেলাকে ভুলে যান না, ভোলেননা ছোটবেলার অনুপ্রেরণার কথা। তিনি মনে করিয়ে দেন সবসময়,
"আরও একবার চলো ফিরে যাই,
পাহাড়ের ওই বুকেতে দাঁড়াই
আকাশের হাতছানিতে সাড়া দিই
কি হবে না ভেবে।"

এভাবেও যে অন্যতম সেরা গায়কদের দেখা হতে পারে, ভাবেননি রূপম ইসলামও। অরিজিৎ সিংয়ের কনসার্টে দর্শকাসনে বসতে বসতে তাঁর ছবি স্টেজে ভেসে উঠবে, তাঁর গাওয়া গান অরিজিৎ গেয়ে উঠবেন, মূহুর্তের মধ্যে মঞ্চে থাকা গায়ক, যাঁর লাইভ শো দেখার জন্য ভক্তরা হাপিত্যেশ করে বসে থাকেন, সেই অরিজিৎ সিংয়ের থেকে ফোকাস তাঁর দিকেই ঘুরে আসবে, তাঁকে অরিজিৎ সিংয়ের সাথে গলা মেলাতে হবে সেটা বোধহয় ওই ঘটনাটা ঘটার আগে ভাবতেই পারেননি ভারতবর্ষের সেরা রকস্টার।
একসাথেই গেয়ে ওঠেন,
"তবু যাচ্ছি কি,
ফিরে যাচ্ছি কি,
সেই ভুলে যাওয়া তোমাকেই"

জানি ভুলতে তিনি দেবেননা। মোবাইলের স্ক্রিনে বারবার ওই কনসার্ট দেখে আমার মতোই আপনারও এই অনুভূতিটা হবে
"আমি আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছি আবার,
দেখি চোখ ভিজে যায় কান্নায়।"

এইভাবেই একটা ইতিহাস রচনা হয়, এইভাবেই কাদা ছোঁড়াছুড়ির বদলে নিজেদের ইগোকে সুদূর প্রশান্ত মহাসাগরে নিক্ষেপ করে একজন শিল্পী, আরেকজন শিল্পীকে কুর্নিশ জানান, সম্মানজ্ঞাপন করেন।

16/02/2023

কখনও চিঠি লিখতে ইচ্ছে করে। ইচ্ছে করে প্রিয়তম মানুষের উদ্দেশ্যে একটা পত্র লিখে পাঠিয়ে দিই। চিঠির মধ্যে এক মাদকতা আছে। পাঠের সময় প্রত্যেকটি শব্দ যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে, প্রেরকের মুখ ভেসে ওঠে তাতে, তার আবেগকে আঙুল দিয়ে স্পর্শ করা যায়। দূরে থাকা কোনো আপনজনের চিঠি সম্পর্কগুলোকে ধরে রাখে, পোক্ত করে। চিঠির রেশ থেকে যায় অনেকক্ষণ।

এখন চটজলদি মেসেজ, ইমেলের যুগে ক্ষণিকের এক আবেগ মিলিয়ে যায়, তারপর আবার নতুন মেসেজ এসে তাকে বদলে দেয়।

এই মধুমাসের কোনো এক অলস দুপুরে প্রিয়জনের চিঠি মনের সব গ্লানি মুছে দিয়ে ফুরফুরে করে , চিঠির শুরুতে ঐ সম্ভাষণেই দূরত্ব ঘুচিয়ে দেয়।

একটি চিঠি অনেককিছু বদলে দিতে পারে…

14/02/2023

আজ সব মান অভিমান ভুলে ভালোবাসার মানুষটাকে আঁকড়ে থাকার দিন, নিজের ভুলটুকু শুধরে নিয়ে সেই মানুষটার কাছে ফিরে যাওয়ার দিন, দোষ না থাকলেও পাহাড়প্রমাণ ইগোকে ভেঙে দিয়ে "Sorry" বলে দূর হতে থাকা সম্পর্ককে আবার বাঁচিয়ে তোলার দিন, একসাথে চলতে চলতে কোনো এক স্বপ্নপূরণের সেলিব্রেশনের দিন-

আজ সেই দিন, প্রিয়তম বা প্রিয়তমার জন্য একটা লাল গোলাপ কিনে কাজ থেকে ফেরা হয়,
ঝগড়া মিটিয়ে নিয়ে আস্ত একটা দিনকে ভালোবাসার নামে উৎসর্গ করা হয়,
ভালোবাসার জন্য সারা বছর পড়ে থাকলেও এই একটা দিন তাই স্পেশাল হয়ে ওঠে, সঞ্জীবনী মন্ত্রের মতোই অনেক মৃতপ্রায় সম্পর্ককে সজীব করে তোলে;

এই একটা দিনই পারে পুরো পৃথিবীটাকে একসুরে বেঁধে শুধুই ভালোবাসার জয়গান করিয়ে নিতে।

13/02/2023

আশায় মানুষ বাঁচে-
কাঠফাটা রোদ্দুর দেখেও চাষী বুকভরা আশা নিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বৃষ্টির প্রার্থনা করে; কঠিন রোগে ভুগতে থাকা আপনজনের জন্য শেষ সম্বলটুকু খুইয়েও তার প্রাণ ধরে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করে;
মাঝসমুদ্রে ডুবতে থাকা জাহাজের মানুষজন ফাঁকা সমুদ্র দেখেও ভাবে কেউ এসে তক্ষুনি তাকে উদ্ধার করবে;
রাস্তায় ভিক্ষা করতে থাকা সহায়সম্বলহীন ভিক্ষুকও ভাবে তার একদিন রাজপ্রাসাদ হবে;
গ্রামে টেনিস বল নিয়ে খেলতে থাকা শিশুও ভাবে সে একদিন শচীন তেন্ডুলকর হবে;

জীবনে ভাঙাগড়া থাকে, ভাঙতে ভাঙতে নুইয়ে পড়লেও মানুষ এই আশার জোরে নিজেকে ধরে রাখে, আবার ওঠে, ব্যর্থ প্রেমিক নতুন ভালোবাসা খুঁজে পেয়ে নিজের জীবনকে আর একবার সাজিয়ে নেওয়ার সুযোগ পায়-

এই আশাই বারবার প্রাণশক্তি জুগিয়ে মানুষকে এগিয়ে নিয়ে যায়…

🖋️অরূপ

11/02/2023

Procrastination কাটিয়ে লক্ষ্য স্থির করার সাতটি স্টেপ

10/02/2023