17/07/2024
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! সর্বপ্রথম ঈমান-আক্বিদা বিষয়ক জ্ঞান শিক্ষা করা প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরযে আইন। অতঃপর দ্বীনের অন্যান্য জরুরী জ্ঞান শিক্ষা করা ফরয। মানুষ কতিপয় বিশ্বাসকে অন্তরে ধারণকেই আক্বিদা বলে।
❏ ড. ইবরাহিম আনীস বলেন-
(العَقِيْدَةُ) الحُكْمَ الَّذِي لَا يَقْبَلُ الشَّكَ فِيهِ لَدَىْ مُعْتَقِدِهِ وَ (فِي الدّين) مَا يُقْصَدُ بِهِ الِاعْتِقَاد دون الْعَمَل كعقيدة وجود الله وَبَعثه الرُّسُل (ج) عَقَائِدْ
-‘‘আক্বিদা অর্থ এমন বিধান বা নির্দেশ যা বিশ্বাসীর বিশ্বাস অনুসারে কোনরূপ সন্দেহের অবকাশ রাখে না....ধর্মীয় বিশ্বাস যা কর্ম থেকে পৃথক। যেমন- আল্লাহ তা‘য়ালার অস্তিত্ব, রাসূলদের প্রেরণ। এটির বহুবচন আকায়েদ।’’
(আল-মুজাম আল-ওয়াসীত, ২/৬১৪পৃ.)
আক্বিদা শুদ্ধ না হলে তার কোন ইবাদতই আল্লাহ কবুল করবেন না। হাশরে ময়দানে অসংখ্য ব্যক্তি এমন হবে যে তারা অনেক আমল করেছেন; কিন্তু আক্বিদা শুদ্ধ না থাকার কারণে তাদের আমলকে আল্লাহ বাতিল বলে ঘোষণা করবেন।
❏ যেমন মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন-
وَقَدِمْنَا إِلَى مَا عَمِلُوا مِنْ عَمَلٍ فَجَعَلْنَاهُ هَبَاءً مَنْثُورًا
-‘‘(আর) আমি (যখন) তাদের সে সব আমল (ইবাদতের) দিকে মনোনিবেশ করব, যা তারা (দুনিয়াতে) করে এসেছে, তখন আমি তা (তাদের সকল ইবাদত) উড়ন্ত ধুলিকণার মতই (ঈমান শূন্য হওয়ার কারণে) নিষ্ফল করে দিব।’’
(সূরা ফুরকান, আয়াত, ২৩)
তাই ঈমান-আক্বিদা যদি শুদ্ধ না থাকে বান্দার আমল হাশরের ময়দানে ধুলার মতই উড়ে যাবে। তাই এক মাত্র সঠিক দল আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অনুসারী না হলে কোন ব্যক্তির আমলই আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না।
❏ হযরত হুযায়ফা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন-
لَا يَقْبَلُ اللَّهُ لِصَاحِبِ بِدْعَةٍ صَوْمًا، وَلَا صَلَاةً، وَلَا صَدَقَةً، وَلَا حَجًّا، وَلَا عُمْرَةً، وَلَا جِهَادًا، وَلَا صَرْفًا، وَلَا عَدْلًا، يَخْرُجُ مِنَ الْإِسْلَامِ كَمَا تَخْرُجُ الشَّعَرَةُ مِنَ الْعَجِينِ
-‘‘আল্লাহ কোন বিদ‘আতীর (তথা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের বিপরীত কুফুরী-শিরকী আক্বিদা বিশ্বাসে নতুন বিশ্বাসী ব্যক্তির) কোনো রোযা, নামায, সদকা (যাকাত), হজ্জ, ওমরা, জিহাদ, ফরয ইবাদত, নফল ইবাদত কবুল করবেন না। সে (কুফুরী-শিরকী আক্বিদা পোষণের কারণে) ইসলাম থেকে বাহির হয়ে যাবে, যে ভাবে চুল (সহজে) আটার খমীরা থেকে বাহির হয়ে যায়।’’
(সুনানে ইবনে মাযাহ, ১/১৯পৃ. হা/৪৯, হাদিসটি ‘হাসান’।)
❏ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন-
أَبَى اللَّهُ أَنْ يَقْبَلَ عَمَلَ صَاحِبِ بِدْعَةٍ حَتَّى يَدَعَ بِدْعَتَهُ
-‘‘আল্লাহ বিদ‘আতির (আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের বিপরীত দলের অনুসারীর) কোনো ইবাদত কবুল করবেন না, যতক্ষণ না সে তার বিদ‘আত পরিত্যাগ করে।’’
(সুনানে ইবনে মাযাহ, ১/১৯পৃ. হা/৫০, হাদিসটি ‘হাসান’ পর্যায়ের।)
হাশরের ময়দানে যাদের ঈমান সঠিক বলে বিবেচিত হবে তারাই কেবল জান্নাতে যাবে। তাই জান্নাতে যাওয়ার জন্য সকলের পূর্বে আক্বিদা শুদ্ধ করা জরুরী।
❏ যেমন মহান আল্লাহ তা‘য়ালা ইরশাদ করেন-
وَمَنْ يَعْمَلْ مِنَ الصَّالِحَاتِ مِنْ ذَكَرٍ أَوْ أُنْثَى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَأُولَئِكَ يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ وَلَا يُظْلَمُونَ نَقِيرًا
-‘‘যদি কোন পুরুষ বা মহিলা সৎকর্ম (ইবাদত) করে এমতাবস্থায় যে, সে মুমিন (অর্থাৎ ঈমানদার অবস্থায় ইবাদত করে)তাহলে সে (এবং তার মত ঈমানদার লোকেরাই শুধু মাত্র) জান্নাতে প্রবেশ করবে। (ইবাদতের পুরষ্কার দেওয়ার সময়) তাদের উপর বিন্দুমাত্র জুলুম, অবিচার করা হবে না।’’
(সূরা নিসা, ১২৪)
❏ হযরত উমর (رضي الله عنه) বলেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন-
يَا ابْنَ الْخَطَّابِ، اذْهَبْ فَنَادِ فِي النَّاسِ، أَنَّهُ لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ إِلَّا الْمُؤْمِنُونَ، قَالَ: فَخَرَجْتُ فَنَادَيْتُ: أَلَا إِنَّهُ لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ إِلَّا الْمُؤْمِنُونَ
-‘‘হে খাত্তাবের পুত্র! যাও লোকদের মাঝে ঘোষণা করে দাও যে, একমাত্র ঈমানদাররাই জান্নাতে প্রবেশ করবে। হযরত ওমর (رضي الله عنه) বলেন, অতঃপর আমি বের হলাম এবং ঘোষণা করলাম: শুণ রাখো, ঈমানদার ছাড়া কেউ জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।’’
(সহীহ মুসলিম, ১/১০৭, হা/১১৪)
উপরের আলোচনা থেকে বুঝা গেল আক্বিদার গুরুত্ব অত্যাধিক। রাসূল (ﷺ) থেকে সর্বপ্রথম সাহাবায়ে কিরামই আক্বিদা শিখেছেন। তাই মহান রব তা‘আলাও আমাদের আক্বিদা (বিশ্বাস) সাহাবীদের মত হওয়ার আদেশ করেছেন।
❏ মহান রব ইরশাদ করেন-
وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ آمِنُوا كَمَا آمَنَ النَّاسُ قَالُوا أَنُؤْمِنُ كَمَا آمَنَ السُّفَهَاءُ أَلَا إِنَّهُمْ هُمُ السُّفَهَاءُ وَلَكِنْ لَا يَعْلَمُونَ
-‘‘এবং যখন তাদেরকে বলা হয়, ‘ঈমান আনো যেমন অপরাপর লোকেরা (সাহাবীরা) ঈমান এনেছে, তখন তারা বলে ‘আমরা কি নির্বোধদের মতো ঈমান নিয়ে আসবো? জেনে রাখুন! তারাই হলো নির্বোধ; কিন্তু তারা জানে না।’’
(কানযুল ঈমান, সূরা বাক্বারা, আয়াত নং-১৩)
আয়াতে آمَنَ النَّاسُ বলে অধিকাংশ মুফাসসিরগণ সম্মানিত সাহাবায়ে কিরাম বলেই অবহিত করেছেন। অতএব, বুঝা গেল কিয়ামত দিবসে ওইসমস্ত লোকের ঈমান আল্লাহর মহান দরবারে কবুল হবে, যাদের ঈমানের দৃঢ়তা সাহাবীদের সাথে মিল রয়েছে।
❏ নবীয়ে পাক সাহেবে লাওলাক হযরত মুহাম্মাদ (رحمة الله) এর ফরমান-
وَإِنَّ بني إسرائيل تَفَرَّقَتْ عَلَى ثِنْتَيْنِ وَسَبْعِينَ مِلَّةً، وَتَفْتَرِقُ أُمَّتِي عَلَى ثَلاَثٍ وَسَبْعِينَ مِلَّةً، كُلُّهُمْ فِي النَّارِ إِلاَّ مِلَّةً وَاحِدَةً، قَالُوا: وَمَنْ هِيَ يَا رَسُولَ اللهِ؟ قَالَ: مَا أَنَا عَلَيْهِ وَأَصْحَابِي
-‘‘নিশ্চয় বনী ইসরাঈল বাহাত্তর দলে বিভক্ত হয়েছে এবং আমার উম্মত তিয়াত্তার দলে বিভক্ত হবে। তাদের সকলেই জাহান্নামে যাবে তবে একটি দল ব্যতীত। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হল, তারা কারা? রাসূল (ﷺ) উত্তর দিলেন, আমি এবং আমার সাহাবার আদর্শের ওপর যারা প্রতিষ্ঠিত থাকবে।’’ ১
{১. খতিব তিবরিযি, মিশকাতুল মাসাবিহ, ১/৬১পৃ. কিতাবুল ই‘তিসাম বিস্-সুন্নাহ, হাদিস নং.১৬১, তিরমিযি, আস্-সুনান, ৫/২৬পৃ. হাদিস, ২৬৪১, আহলে হাদিস আলবানী সুনানে তিরমিযির তাহক্বীকে হাদিসটি ‘হাসান’ বলেছেন, তাবরানী, মু‘জামুল কাবীর, ১৩/৩০পৃ. হাদিস, ৬২, ১৪/৫২পৃ. হাদিস, ১৪৬৪৬, মাকতুবাতু ইবনে তাইমিয়া, কাহেরা, মিশর, প্রকাশ.১৪১৫হি. বায়হাকি, ই‘তিক্বাদ, ১/২৩৩পৃ. বাগভী, শরহে সুন্নাহ, ১/২১৩পৃ. হাদিস, ১০৪}
নবী পাক (ﷺ)‘র এই আলোকময় বর্ণনা সম্পর্কে প্রত্যেক মুসলমানদের জেনে রাখা প্রয়োজন। যাতে করে, সাহাবায়ে কিরামদের আক্বিদা-বিশ্বাস ও মুহাব্বতের অবিকল অনুকরণ করতে পারে।
প্রখ্যাত আলেমেদ্বীন আল্লামা যিয়াউল্লাহ কাদেরী (رحمة الله)’র দরজাত বুলন্দির লক্ষে বিনম্র চিত্তে মাওলায়ে কায়িনাতের মহান দরবারে পাকে দোয়া করছি। যিনি অত্যন্ত চিন্তা-গবেষণার মাধ্যমে ‘আকাইদে সাহাবাহ’ নামক উর্দু কিতাবটি রচনার মাধ্যমে আমাদেরকে প্রজন্মের জন্য একটি জীবন্ত গাইড লাইন উপহার দিয়েছেন।