Pupils of Schooldays

Pupils of Schooldays Pupils of Schooldays is an Indian Photoblog about schooldays stories of students, teachers & parents.

‘ এক এক্কে এক দুই এক্কে দুই নামতা পড়ে ছেলেরা সব পাঠশালার ঐ ঘরে ‘ হ্যাঁ , আজকের ডিজিটাল শিক্ষায় পারদর্শী ছোটরা শুনলে সত্য...
11/07/2022

‘ এক এক্কে এক দুই এক্কে দুই
নামতা পড়ে ছেলেরা সব পাঠশালার ঐ ঘরে ‘
হ্যাঁ , আজকের ডিজিটাল শিক্ষায় পারদর্শী ছোটরা শুনলে সত্যিই অবাক হবে , আমার শৈশবের বিদ্যাভ্যাস শুরু হয় এই পাঠশালা থেকেই। কিন্তু আমি এখন তোমাদের সোশাল মিডিয়া ও ডিজিটাল ভারতবর্ষের সাথে অভ্যস্থ । আমার নাম হিমাংশু ভূষণ ভট্টাচার্য । আমার বয়স এখন বিরাশি বছর । আমার বর্তমান নিবাস উত্তরপাড়ায় এবং এই বাড়িরই পশ্চিমার ঘরে এক দাইমার হাতে আমার জন্ম । আমি স্বর্গীয় ফণীভূষণ ভট্টাচার্য ও স্বর্গীয়া রমলা ভট্টাচার্যের প্রথম সন্তান । মায়ের কাছেই আমার প্রথম শিক্ষা ও বিদ্যা লাভ হলেও ঠাকুরদার শাসন ও ঠাকুমার অকৃত্রিম স্নেহ আমার শিশুবেলার কিশলয়কে সবুজ করে রেখেছিল । পাঁচ বছর বয়সে ঠাকুরদা স্বর্গীয় শশিভূষণ ভট্টাচার্যের হাত ধরে গিয়ে ভর্তি হই আমাদেরই পাড়ার কাছের হরিসভার খোকা মাস্টারের পাঠশালায় । একে আপনারা আজকের পরিভাষায় K.G class বলতে পারেন । এখন না আছে সেই পাঠশালা , না আছে সেই হরিসভার পুরনো পরিবেশ । বাড়ি থেকে স্লেট খড়ি নিয়ে গিয়ে সেখানকার দালানে আমরা সার বেঁধে বসতাম । একজনই মাস্টারমশাই, খোকা মাস্টার আমাদের বাংলা ও অঙ্ক শেখাতেন । ঘরের বাইরে বালতিতে জল রাখা থাকত । স্লেটে একটি বিসয় লেখা হলে , মাস্টারমশাই তা দেখে দিতেন । বাইরের সেই বালতির জলে ন্যাতা ভিজিয়ে সেই লেখা মুছে আবার নতুন বিষয় লিখতাম । এই দৃশ্য আপনারা হয়তো পুরনো বাংলা সিনেমায় দেখে থাকবেন , কিন্তু এ আমার বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা । এখানে দুই বছর পড়ে এক বছরের জন্য ভর্তি হলাম বাড়ি থেকে একটু দূরে কেষ্ট মাস্টারের পাঠশালায় । প্রথম দিন নিয়ে গেলেন সেই ঠাকুরদাদা । তারপর থেকে অবশ্য একাই হেটে যাতায়াত করেছি । এই পাঠশালাটি ছিল আর একটু উন্নত ,তবে এরও এখন আর কোন অস্তিত্ব নেই । এখানে দু’বছর পড়েছিলাম । এখানেই প্রথম কাগজ পেন্সিলে লিখতে শিখি । এখানে বিভিন্ন বিষয়ের জন্য আলাদা আলাদা শিক্ষক নিযুক্ত ছিলেন । বাংলা , অঙ্ক ইংরাজির প্রাথমিক শিক্ষালাভ আমার এখান থেকেই । এবং এখানে যে যথেষ্ট ভাল লেখাপড়া হতো তার প্রমাণ পাওয়া যায় আমার পরবর্তী জীবনে । কারণ এরপর উত্তরপাড়া এবং তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের সে সময়ের ছেলেদের সবথেকে কাঙ্ক্ষিত বিদ্যালয় Uttarpara Gvernment High School –এ আমি তৃতীয় শ্রেণিতে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বলা ভাল পঞ্চম স্থান অধিকার করে ভর্তি হই । এই প্রবেশিকা পরীক্ষাটির গুরুত্ব ও মান সম্বন্ধে কিছু বলতে চাই কারণ সেখানে এখন ভাগ্য পরীক্ষার মাধ্যমে ছাত্র ভর্তি করা হয় । তখন তৃতীয় শ্রেণিতে এই স্কুলে ভর্তির জন্য একশ জন পরীক্ষা দিতে পারতো নাম উঠত মাত্র পঁয়ত্রিশ জনের তার মধ্যে মাত্র ত্রিশ জনকে ভর্তি নেওয়া হত । নির্ণয়ের মাপকাঠি ছিল শুধুমাত্র মেধা । আমি যখন তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি হতে যাই তখন আমার পিসতুতো দাদা দেবদাস চক্রবর্তী এই বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির কৃতী ছাত্র ছিল এবং পরে সে স্কুল ফাইনাল পরীক্ষায় র‍্যাঙ্ক করেছিল , সেই মেজদাই আমায় পরীক্ষা দেওয়াতে নিয়ে গেলেও তার জন্য আমি কোন অতিরিক্ত সুবিধা পাইনি । এই স্কুলটি তখন তৃতীয় শ্রেনি থেকেই শুরু হতো । তাই এই প্রবেশিকা পরীক্ষায় অঙ্ক ইংরাজি ও বাংলা ভাষার লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হতো । সেই পরীক্ষায় এমন ভাবে প্রশ্ন করা হতো যাতে শুধুমাত্র প্রাথমিক জ্ঞানের সঠিক মূল্যায়ন হয় । মনে আছে লেখা পরীক্ষায় বাংলায় একটি শ্রুতিলিখন লিখতে দেওয়া হয়েছিল । সেখানে আমি একটি মাত্র বানান ভুল করেছিলাম । বাংলার পণ্ডিত হরকান্তবাবু আমাকে মৌখিক পরীক্ষার সময় সেই ভুলটির কথা বলে তা সংশোধন করে দিয়েছিলেন । মৌখিক পরীক্ষাতেও কিছু বানান জিজ্ঞাসা করেছিলেন , যার সবটাই আমি সঠিক বলতে পেরেছিলাম , পরীক্ষা ব্যবস্থাটি এতোটাই স্বচ্ছ ছিল সেই সময় । অঙ্কে কিছু সাধারণ যোগ বিয়োগ করতে দেওয়া হয়েছিল । বাংলার পাশাপাশি ইংরাজি ভাষাকেও সমান গুরুত্ব দেওয়া হতো এই বিদ্যালয়ে । তাই আমরা ইংরাজি মাধ্যম স্কুলে না পড়েও ইংরাজি বানান ও ব্যাকরণ খুব ভাল ভাবে শিখেছিলাম । প্রবেশিকা মৌখিক পরীক্ষায় হেড মাস্টারমশাই বীরেন বাবু ইংরেজিতে সাধারন কিছু প্রশ্ন করেছিলেন । ইংরাজিতেই তার উত্তর দিতে হয়েছিল । পরের দিন ফল প্রকাশিত হল , আমি পঞ্চম হয়েছি । জীবনের প্রথম সাফল্য । এই সাফল্যের আনন্দটা থেকেও আজকের এই স্কুলের ছাত্ররা বঞ্চিত হয় । এরপর নিয়মিত স্কুল চলতে লাগল । স্কুলে অনুশাসন ছিল খুব কড়া । নিয়মিত লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলা হতো । স্কুলের পরে হতো ফুটবল ও হকি খেলা । বিশাল মাঠ ছিল আমাদের স্কুলে । পিছনের ছোট মাঠে ছিল বাস্কেট বল কোর্ট । তবে বাস্কেট বল খেলা কমই হত । এই মাঠটি প্রচুর বিদ্যার ভারে আজ স্কুল বাড়িতে পরিণত হয়েছে । তবে ক্রিকেট খেলার চল ছিল না । আর আমাদের কোন ইউনিফর্ম ছিল না কিন্তু পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে সঠিক সময়ে স্কুলে আসতে হতো । মনে আছে জ্যোতিন্দ্রমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় যখন হেড মাস্টারমশাই ছিলেন তখন স্কুলে ঢোকার শেষ ঘণ্টা বাজার সময় তিনি নিজে স্কুল গেটে এসে দাঁড়াতেন এবং যে ছাত্র দেরি করে আসতো তাকে তাঁর কাছে কৈফিয়ত দিতে হতো , তারপরে স্কুল গেট বন্ধ হয়ে যেত । এতটাই কড়া অনুশাসন ছিল তাঁর । তিনি খুব দায়িত্ব নিয়ে স্কুলের প্রতিটি ছেলের পরিচয় জানতেন এবং মনে রাখতেন। তাঁর আমলে এই স্কুল থেকে স্কুল ফাইনাল পরীক্ষায় ছাত্ররা দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকার করেছিল । এই অনুশাসনের বিষয়ে উল্লেখ্য স্কুলের পরে স্কুলের মাঠে যে খেলা হতো সেখানে বাইরের ছেলেদের প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল । এই দ্বার রক্ষা ও হকিস্টিক বিতরণের দায়িত্বে ছিল গয়া মালি । আমরা তার শাসনকে যথেষ্ট ভয় পেতাম , মান্যতাও দিতাম । এই গয়া মালির দায়িত্ব ছিল স্কুলে আমাদের টিফিন তৈরি করা ও বিতরণ করাও । সিঙ্গারা , লাড্ডু কচুরী, এক একদিন এক একটা টিফিন বানানো হতো । আমরা লাইন দিয়ে টিফিন নিতাম । হরকান্তবাবু ও গয়ামালির অভিজ্ঞ তত্ত্বাবধানে দুষ্টুমি করার সুযোগ ছিল না । ছাত্রদের অনুপস্থিতির কারণে যে টিফিন অতিরিক্ত হতো তা এক একদিন এক একটা জুনিয়র ক্লাসের ছেলেদের মধ্যে বিতরণ করা হতো । এতো সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা আজকের দিনে বিরল । ক্লাসে কোন পড়া ভুল করলে শিক্ষকরা ছুটির পরে শিক্ষকদের ঘরে দেখা করতে বলতেন এবং সামান্য বেতনের মাস্টারমশাইরা স্বেচ্ছায় সাগ্রহে অতিরিক্ত সময় স্কুলে থেকে সেই পড়া আমাদের বুঝিয়ে দিতেন । তাই বোধহয় আজকের দিনে আমাদের আদর্শগুলো এতোটাই back dated । তামসরঞ্জন বাবু যখন আমাদের হেড মাস্টারমশাই হয়ে আসেন তখন একটি সুন্দর নিয়ম শুরু করেন- উচু ক্লাসের ছাত্রদের একটি বোর্ডে দৈনিক খবরগুলি দিনের শুরুতে লিখে রাখতে হতো । এতে ছাত্রদের সমাজ সচেতনতা বৃদ্ধি পেত। মনে আছে, এই বিদ্যালয়ের একটি অনুষ্ঠানে রাজ্যপাল এসেছিলেন । আমাদের কতো অবুঝ উন্মাদনা তখন। কিন্তু বিদ্যান গম্ভীর শিক্ষকদের আমরা খুবই ভয় পেতাম , শ্রদ্ধাও করতাম সমান ভাবে । তাদের ব্যক্তিত্বই ছিল শ্রদ্ধা করার মতো ।তাই উন্মাদনা কোনদিন শৃঙ্খলাকে ভঙ্গ করেনি ।
স্কুলের সরস্বতী পুজোর প্রধান দায়িত্ব থাকতো দশম শ্রেণির ছাত্রদের ওপর । পুজোর আগের দিন সন্ধ্যায় নির্দিষ্ট কুমোর বাড়ি থেকে ঠাকুর আসত । দশম শ্রেণির ছাত্ররা এবং শক্ষকরা ওই রাতটি স্কুলে থেকে ঘর সাজাতেন । হেড মাস্টারমশাই নিজের খরচে ওই রাতে সব ছাত্রের খাবার ব্যবস্থা করতেন । কী দায় ছিল বলুন তো ওনার ? শুধুমাত্র ভালবাসা ।
স্কুলে প্রতি বছর বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা হতো । প্রতি বছর অংশ নিতাম । মনে আছে এক বছর কমলালেবু দৌড় প্রতিযোগিতায় একটা কাপ পুরস্কার পেয়েছিলাম । এখনও যত্ন করে রেখে দিয়েছি । যত্ন করে মনে রেখেছি স্কুলের দিনগুলো । তবু অনেক কিছুই ঝাপসা হয়ে আসে । কিছু বন্ধু এখনও আছে , তাদের সাথে যোগাযোগও আছে । বিদ্যালয়ের প্রতি বছরের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যাই । তাদের সাথে দেখা হয় । দেখি অতীত , দেখি বর্তমান । তারপর আমার মেজ ভাই ভাইপো এবং আরও অনেক স্বজন এই স্কুলে পড়েছে । দিন বদলেছে , স্কুল বদলেছে । তবু এই বিদ্যালয়টি আমাদের উত্তরপাড়ার ঐতিহ্য । এই বিষয়ে বলা ভাল আমার ঠাকুরদাদা প্রথম জীবনে উত্তরপাড়ার জমিদার শ্রী জয়কৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়ের জমিদার বাড়ির গৃহশিক্ষক ছিলেন । তারপর তিনি এই স্কুলের পণ্ডিত হন । তখন এটি সরকারি স্কুল ছিল না । ছিল জয়কৃষ্ণ মুখোপাধ্যায় প্রতিষ্ঠিত একটি স্কুল । পরে এটি যখন উত্তরপাড়া রাষ্ট্রীয় উচ্চবিদ্যালয়য় হয় তখন ঠাকুরদা একটি অন্য সরকারি চাকরিতে যোগ দিয়ে দিয়েছেন । ফলে স্কুলটির সাথে আমার রক্তের সম্পর্ক আছে । তাবলে , দাদুর নাতি বলে কখনো আলাদা আদর পাইনি স্কুলে আর সেটাই হওয়া উচিৎ ।
এখন সমাবর্তনে গিয়ে বুঝতে পারি বিদ্যালয়ের অনেক কিছুই বদলেছে। যুগের দাবীতে বদলানোটাই কাঙ্ক্ষিত । কিন্তু আশা করবো , যে বদলই হোক না কেন তা যেন স্কুল ও ছাত্রদের মঙ্গলের জন্য হয় এবং তা যেন উত্তরপাড়ার ঐতিহ্যকে রক্ষা করে ।

Written by – মধুরিমা ভট্টাচার্য

স্কুলজীবনে যখন আমরা থাকি, তখন এর গুরুত্ব আমরা ততটাও বুঝিনা যতটা বেরিয়ে এসে বুঝি! ওই যে কথায় আছে না, "নদীর এপার কহে ছাড...
19/06/2022

স্কুলজীবনে যখন আমরা থাকি, তখন এর গুরুত্ব আমরা ততটাও বুঝিনা যতটা বেরিয়ে এসে বুঝি! ওই যে কথায় আছে না, "নদীর এপার কহে ছাড়িয়া নিশ্বাস, ওপারেতে সর্বসুখ আমার বিশ্বাস..." সবসময়ই আমরা যেখানে, যে মুহূর্তে থাকি সেটার থেকে বেটার মনে হয়, অন্যের জীবন বা অন্য জীবনযাত্রাকে। যখন স্কুলে পড়ি, তখন মনে হয়, ধুর কি বোরিং জীবন; কলেজ হয়তো বেস্ট হবে। কিন্তু সময়ের চাকা গড়িয়ে যখন স্কুলের শেষ দিনে আসি, তখন হয়তো উপলব্ধিটা বদলে যায় আর হয়তো এরকম করেই স্কুলজীবনটা শেষ হয়ে যায় আমাদের।
একদম প্রি-নার্সারি থেকেই আমার স্কুল সেন্ট স্টিফেন'স স্কুল। একদম ছোটবেলার, তেমন কিছু মনে দাগ কেটে যাওয়া স্মৃতি না থাকলেও, ক্লাস থ্রি বা ফোর নাগাদ, জীবনে খানিকটা অসুবিধা বা বিঘ্ন এসেছিল বলা চলে। খোলাখুলি বলতে আপত্তি নেই যে, সেই মুহূর্তে আমার বাড়ির আশেপাশের পরিবেশ ও সেখানকার লোকজন একেবারেই ভালো ছিল না। একটা টক্সিক পরিবেশ আমাকে বদলে দিচ্ছিল, বদ সঙ্গ জীবনে উঁকি দিয়েছিলো বারংবার।
পড়াশোনা থেকে অনেকটা দূরে সরে গেছিলাম তখন। সেই অবস্থা থেকে আজকের দিনে আমি ফিরতেই পারতাম না, যদি না মা বাবা থাকতো; স্পেশালি বাবা।
ওরা একফোঁটা বকেনি আমাকে; মনে আছে অনেক বুঝিয়েছিল আমাকে। কেন ওই পরিবেশে, ওই বয়সে আমার থাকা ঠিক না, সবটা খুব গুছিয়ে বলেছিল তখন। ধীরে ধীরে আমি ইমপ্রুভ করা শুরু করি, সমস্যার কালো মেঘ কেটে যায় ধীরে ধীরে; কিন্তু তখন আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে অন্য সমস্যা। এতদিনে আমি পড়াশোনার থেকে অনেক দূরে চলে যাওয়ায়, এবার আর পড়াশোনায় মন দিতে পারছিলাম না; ফলত আমি ট্রমায় চলে যাচ্ছিলাম। এইসময় আবার "বাবা" হলো saviour! বাবা রাত জেগে নোটস বানিয়ে দিত, আনসার তৈরি করে দিত; অ্যান্ড দেন ফাইনালি ক্লাস ফাইভের পরীক্ষায় একটা দারুন রেজাল্ট করতে পেরেছিলাম আমি। ওটাই ছিল বাবার করা কষ্টের, রিওয়ার্ড।
সেদিন বাবার মুখের হাসিটা, জানান দিয়েছিল যে হ্যাঁ, আমি পেরেছি। আসলে পারতে তো হতই, বাবার রাতের পর রাত জাগার কষ্টের দামটা আমাকে দিতেই হতো। এরপর থেকে পড়াশুনা এই গতিতেই চলছিল।

স্কুলের টিচাররা সেই ছোট থেকেই পাশে ছিল, সবেতেই হাতে ধরে সাহায্য করত। খুব ছোট থেকেই নাচ শিখি আমি, তাই স্কুলের সব অনুষ্ঠানেই নাচ করেছি আমি। এছাড়াও ছোট থেকেই আর্টস অ্যান্ড ক্রাফটস এর শখ ছিল ভরপুর, তাই স্কুলের যেকোনো রকম প্রজেক্ট বা এক্সিবিশনে আমি নাম দিতাম। ড্রয়িং টাও খুব মন দিয়ে শিখেছি ছোট থেকে, তাই স্কুল ম্যাগাজিনে প্রত্যেক বার কিছু লিখে বা ড্রয়িং করে দেয়ার চেষ্টা করতাম। ইন্টার স্কুল ড্রয়িং কম্পিটিশন বা ইন্টার ক্লাস কম্পিটিশন; সবেতেই পার্টিসিপেট করেছি এবং কিছুসময় র‍ ্যাংকও করেছিলাম। আর ছিল কবিতা আবৃত্তি, টিচার্স ডে থেকে শুরু করে ক্রিসমাস ফেস্ট সবেতেই করেছি।
ক্লাস নাইন তখন, জীবনে এলো লকডাউন; আবার পড়াশুনা শিকেয় উঠলো; আবার মাসখানেক পর ভর্তি হলাম স্টুডেন্ট হাব কোচিং সেন্টারে। এটা জীবনের অন্যতম মোড় ঘোরানো সময় ছিল। ভালো কিছুর বন্ধুর সাহচর্য পেলাম, সাথে পেলাম ভালো কিছু শিক্ষক। যারা শুধু পাঠ্যবই পড়িয়েই শিক্ষাদানে বিশ্বাসী ছিলেন না; দিলেন জীবনের পাঠও।
এভাবেই দেখতে দেখতে আমার ক্লাস টেন বোর্ড এক্সাম শেষ হলো।

আমি তৃষা মালিক, এই বছর ক্লাস টেন বোর্ড এক্সাম দিয়েছি।
এখন সাউথ এন্ড স্কুলে ভর্তি হয়েছি। পুরনো স্কুল ছেড়েছি, তাও শেষ হয়নি পুরোনো দিনগুলো আর সেই সঙ্গে জড়িয়ে থাকা মানুষগুলো; আজও মনে পড়ে স্কুলের স্যার ম্যাডামরা কিভাবে কখনো ভালোবেসে, কখনো বকে আবার কখনো বুঝিয়ে পড়াশোনা করাতো। আসলে হারিয়ে যাইনি কিছুই, আশা করি যাবেও না আর আমি দেবওনা! আজীবন এই স্মৃতিগুলোকে মনের মধ্যেই লালন পালন করে, গড়ে তুলবো এক মহীরুহ; যা মুখের মধ্যে এনে দেবে অকৃত্তিম শান্তি আর হালকা একটা হাসি।

তবে এতদিন পর একটা উপলব্ধি খুব হয়, যেটা আমি আমার সমাজকেও বলতে চাই যে –"জীবনে বাবা মার আগে কিচ্ছু না, যেকোনো সমস্যা হলে তাদেরকেই বলো ভয় না পেয়ে। তারা ঠিক পাশে থাকবেন, আর কেউ না থাকলেও..." আমার জীবনে সমস্যা এসেছে অনেক, হয়তো ভবিষ্যতেও আসবে; কিন্তু আমি জানি সেদিন যেমন বাবা ছিল, ভবিষ্যতেও থাকবে।
আজ ফাদার'স ডে। এই ছোট্ট জীবনে কখনো বলতে পারিনি বাবাকে যে বাবাকে ঠিক কতটা ভালোবাসি; জানি না বললেও বুঝে ঠিক নেবে বাবা। তবে আজ যখন সুযোগ হয়েছে বলেই ফেলি,
"বাবা তোমায় খুব ভালোবাসি, এভাবেই থেকো আমার পাশে, সাথে আজীবন..."

Written by : অনুশ্রী মন্ডল

19/06/2022

Happy Father’s Day

জীবনটা পরীক্ষাতে ভরা। প্রত্যেক দিন, প্রত্যেক মুহূর্তে মানুষকে ভিন্ন ভিন্ন পরীক্ষা দিতে হয়। জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরীক...
16/06/2022

জীবনটা পরীক্ষাতে ভরা। প্রত্যেক দিন, প্রত্যেক মুহূর্তে মানুষকে ভিন্ন ভিন্ন পরীক্ষা দিতে হয়। জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরীক্ষার ভার বিভিন্ন রকম৷
একজন বিদ্যালয়গামী শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবনে প্রথম বড় পরীক্ষা হল মাধ্যমিক,দ্বিতীয় হল উচ্চমাধ্যমিক। আমার কাছেও তাই ছিল। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি শেষ করে আস্তে আস্তে বুঝতে পারছিলাম বৃত্তটা বড় হচ্ছে। পড়াশোনার ক্ষেত্রটিও সমানভাবে বড় হচ্ছিল। মাধ্যমিকে সাতটা বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করতে হয়েছিল।
মাধ্যমিক শেষ করার পর পছন্দমতো বিষয় বেছে নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার পালা শুরু হয়েছিল। 'বর্ধমান বিদ্যার্থী ভবন গার্লস' হাই স্কুল' -এই তৃতীয় শ্রেণি থেকে পড়াশোনা করি আমি। সেখান থেকেই এই বছর উচ্চমাধ্যমিক উত্তীর্ণ হয়েছি।
মাধ্যমিকের সময় যেহেতু নিজের পছন্দের বিষয় বেছে নেওয়ার সুযোগ থাকে না তাই আশানুরূপ নাম্বার পাইনি। মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলাম। এই সময় প্রিয় শ্রদ্ধেয় শিক্ষিকারা, বাবা-মা মানসিকভাবে পাশে দাঁড়িয়েছেন। সংকল্প গ্রহণ করেছিলাম এই ব্যর্থতা কাটিয়ে উঠব উচ্চমাধ্যমিকের সময়।হয়েছেও তাই!
যদিও বিদ্যালয়জীবনকে পাইনি এইসময়। করোনা মহামারীর চোখ রাঙানির ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থেকেছে প্রায় দেড় বছর। নিচু ক্লাসে পড়ার সময় ভাবতাম বিদ্যালয় জীবনের শেষের দিনগুলো উপভোগ করব। পড়াশোনা, শিক্ষিকাদের সান্নিধ্যে কাটাব। করোনার কারণে সে সুযোগ হয়ে ওঠেনি। প্রিয় শিক্ষিকাদের সান্নিধ্য থেকে বঞ্চিত থাকতে হয়েছে। ইতিহাস শিক্ষিকা পবিত্রা ম্যামের ক্লাস, পারমিতা ম্যাম, দেবপ্রিয়া ম্যাম, ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষিকা অর্চনা ম্যাম প্রমুখজনের আকর্ষণীয় ক্লাস থেকে দূরে থাকতে হয়েছে বাধ্য হয়েই।
এই অনিচ্ছাকৃত বিদ্যালয় বিমুখ জীবনে বাবা-মা পাশে থেকেছেন৷ মাধ্যমিকের পর বিষয় পছন্দ করা নিয়ে তারা কোনো জোর করেননি৷ অনেক ছাত্র-ছাত্রী'কেই বাবা-মায়ের নানান বিষয় বাবা-মায়ের পছন্দের নিরিখে বেছে নিতে হয়। আমার মনে হয় পরবর্তীকালে এই নিয়ে নানান সমস্যার মুখে পড়তে হয় তাদের। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে আমার বাবা-মা কখনো আমার পছন্দের উপর অহেতুক জোর খাটাননি। প্রথম থেকেই কলাবিভাগে পড়ার ইচ্ছে ছিল,সে ব্যাপারেও আমাকে যথেষ্ট সাহায্য করেছেন তাঁরা। কলাবিভাগে অনেক বিষয় আছে৷ নানান মানসিক টানাপোড়েনে কাটাতে হয়েছিল। এক্ষেত্রেও বাবা-মা সাহায্য করেছেন। সব টানাপোড়েন কাটিয়ে - আবশ্যিক বাংলা ইংরেজি ছাড়াও, ভূগোল (জিওগ্রাফি), দর্শন (ফিলোজফি), রাষ্ট্রবিজ্ঞান (পলিটিকাল সায়েন্স), সঙ্গীত (মিউজিক)- বিষয়গুলোকে বেছে নিয়েছিলাম। পরীক্ষার কিছুদিন আগে বিদ্যালয় খুলেছিল। করোনার ভয় তখনও কাটেনি। তবু মুখে মাস্ক আর স্যানিটাইজার সঙ্গে নিয়ে বিদ্যালয়ে যেতাম। পরিস্থিতি ও পরীক্ষা এসে যাওয়ার কারণে খুবই কম গেছি কিন্তু যতবার গেছি মনে হয়েছে প্রায় দেড় বছর বিদ্যালয় থেকে দূরে থাকার ফলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র থেকে দূরে সরে গেছি। বুঝেছি, শিক্ষার্থীদের এগিয়ে চলার পথে বিদ্যালয়ের ভূমিকা ঠিক কতখানি।
মাধ্যমিকের আগে, যখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল তখন বিদ্যালয়ের সূত্রে নানান প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতাম। 'ইন্টার-স্কুল' প্রতিযোগিতায় নিজেকে প্রকাশ করার সুযোগ দিতেন শিক্ষিকারা। বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হত। সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে নিজের বোধ,চেতনায় শান দেওয়ার সুযোগ পেতাম। সৃজনশীলতার দিকটি সম্পর্কে ধারণা স্পষ্ট হত। বন্ধুদের সঙ্গে পড়াশোন সহ নানান বিষয়ে আলোচনার সুযোগ পেতাম।গ্রুপ স্টাডির সাহায্যে জ্ঞান বৃদ্ধি হত।

আমি অরুণিমা চন্দ্র। এই বছর অর্থাৎ ২০২২ সালের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ৯২.৪ শতাংশ নাম্বার পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছি। পরবর্তীতে ইচ্ছে আছে স্নাতক স্তরে ইংরেজি বিষয় নিয়ে পড়ার। আমার মনে হয় প্রত্যেক জন শিক্ষার্থীরই উচিত তাদের পড়াশোনার ক্ষেত্রে নিজেদের ভাললাগার বিষয়ে প্রাধান্য দেওয়া। মাধ্যমিকের সময় সাতটি বিষয়েই যেমন যথাসম্ভব যত্নশীল হওয়া প্রয়োজন, তেমনই উচ্চ মাধ্যমিকের পরিধিতে আগ্রহ আছে এমন বিষয়গুলো বেছে নিয়ে সেগুলোর উপর চর্চা করা বিশেষ প্রয়োজন। পাঠ্যপুস্তকের সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য বই, বিদ্যালয়ের শিক্ষিকাদের মূল্যবান মতামত গ্রহণ করা প্রয়োজন। মনে রাখা দরকার বাড়ির পরে বিদ্যালয়ই একমাত্র স্থান যেখান থেকে আমরা শুভ বোধ তৈরির ধাপগুলো জানতে পারি। ঋদ্ধ হই।

প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক হয়ে উচ্চমাধ্যমিক - শিক্ষাজীবনের এই প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়গুলোতে নানান টানাপোড়েন, অসুবিধা কাটিয়ে উঠে আমাকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছেন প্রিয় ও শ্রদ্ধেয়া শিক্ষিকারাও। তাঁদের অনুপ্রেরণা, আশীর্বাদ আমার আগামী দিনের পাথেয়।

Written by- তিতাস বন্দ্যোপাধ্যায়

(2/2) এতো বছরের স্কুলের সরস্বতী পুজোর চেনা রঙটা বদলে যেতে থাকল । আরও ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়ে উঠল আমার মা । আমরা তখন দুজনেই নারী...
07/06/2022

(2/2) এতো বছরের স্কুলের সরস্বতী পুজোর চেনা রঙটা বদলে যেতে থাকল । আরও ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়ে উঠল আমার মা । আমরা তখন দুজনেই নারী । তাই বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়েও পথভ্রষ্ট হইনি কখনো । এই বিষয়ে আমার মাসী ও দিদার অবদানও আছে । তাছাড়া আমি যৌথ পরিবারে বড় হয়েছি , এবার অধিকার পেলাম সেই পরিবারের মেয়ে মহলের । যে সরস্বতী পুজোয় বাসন্তী শাড়ি পড়া, স্কুলে অঞ্জলি দেওয়া , স্কুলে ভোগ প্রসাদ খাওয়াই ছিল প্রধান উদ্দেশ্য সেই সরস্বতী পুজর জন্যই মা বা জেঠিমার বছরের সেরা শাড়িটাকে বেছে নিলাম , চুলের বিন্যাস- প্রসাধন সম্বন্ধে চলল বান্ধবীদের সাথে দীর্ঘদিনের আলোচনা , তারপর সেই বসন্তপঞ্চমীর শুভদিনে স্কুলে অঞ্জলিটুকু সেরে বান্ধবীদের সাথে ঘুরতে বেরনোই হয়ে উঠলো মুখ্য উদ্দেশ্য । সারাদিনের শেষে বুঝতে পারলাম আমি কিশোরী হয়ে উঠেছি । এই আনন্দ কার সাথে ভাগ করে নেবো , একজনই তো আছে , সেই মা …। সেও তো একদিন কিশোরী ছিল ।
বড় হওয়ার সাথে সাথে বড় হয়ে উঠল দুটো শব্দ – ভবিষ্যৎ, কেরিয়ার। আমি যখন অষ্টম শ্রেনিতে পড়ি তখন আমার সপ্রতিভ কথা বলাকে লক্ষ করে আমার বাবুন কাকা ( দিব্যেন্দু খাঁরা ) আমায় প্রথম সাংবাদিকতার বিষয়ে ভাবতে বলে । এবং এই পেশায় যে ভবিষ্যতে বিভিন্ন কাজের সুযোগ পাওয়া যাবে সেকথাও আমায় প্রথম বলে বাবুন কাকা । বাবুন কাকা এটাও আশা করেছিল যে আমার উচ্চমাধ্যমিকের সময় এই বিষয়টি স্কুলশিক্ষার পাঠ্য ভুক্ত হবে । এবং সত্যি এই বছর থেকে আমাদের বিদ্যালয়ে Mass Communication বিষয়টি পাঠ্য ভুক্ত হয়েছে এবং আমি তা নিয়ে পড়ার কথা ভাবছি । আমি ছোট থেকে অঙ্কে ভয় পেতাম । কিন্তু দশম শ্রেনিতে আমাদের শ্রেনি শিক্ষিকা মৌমিতা দিদিভাই আমাদের এতো সুন্দর করে অঙ্ক শেখান যে আমার অঙ্কের ভয় চলে যায় । তিনি আমায় খুব ভালবাসেন । তিনিও আমায় ভবিষ্যতে একজন সফল Journalist হিসেবে দেখতে চান । সেই কারণে আমার ওপর অনেক আশা নিয়ে তিনি আমায় আর চার জনের সাথে কন্যাশ্রীর এগারো বছর উদযাপন উপলক্ষে শ্রীরামপুরে আয়োজিত একটি বিতর্ক সভায় পাঠান । সেখানে হুগলী জেলার আরও বিভিন্ন স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা অংশগ্রহণ করেছিল এবং আমি সেখানে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করি । আমার পরিবার, বিদ্যালয় ও বন্ধুরা এতে খুব খুশি হয়েছে এবং আমি বলব , আমি এই সুযোগ পেয়ে আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠতে পেরেছি এবং আমার ভবিষ্যতের লেখাপড়ার দিশাটি আরও স্পষ্ট হয়েছে । এছাড়াও আমার স্কুলের দিদিভাইরা আমাদের দশম শ্রেণির শুরুতেই ছাত্রীদের সাথে এবং অভিভাবকদের সাথে পৃথকভাবে ও একসাথে বসে আমাদের কেরিয়ার কাউন্সেলিং করেন এবং সেখানে আমাদের বড়দিভাই খুব স্পষ্ট ভাবে আমাদের বুঝিয়ে দেন শুধু বিজ্ঞান শাখায় সীমাবদ্ধ থাকলেই যে জীবনে সফল হওয়া যায় এমন নয় ,Commerce , Arts , Fine Arts , Visual Arts শাখা থেকেও জীবনে সাফল্য খুঁজে নেওয়ার বহু পথ আছে । ভবিষ্যতের বিষয় খুঁজে নেওয়ার জন্য ছাত্রীদের নিজস্ব ভাল লাগার প্রতি গুরুত্ব দিতে বলেন তিনি । আমার মাও সেই মতে বিশ্বাসী ।
মা ছোটবেলায় বালি শিশুমঙ্গল স্কুলে পড়ত , তারপর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেয় বালি মেকল স্কুল থেকে এরপর উত্তরপাড়া প্যারীমহন কলেজ থেকে স্নাতক । এরপরে কিছুদিন Montessori Training ও নিয়েছিল । মা কলা বিভাগে পড়াশোনা করেছে । মায়েদের সময় নবম ও দশম শ্রেনির সিলেবাস নিয়ে মাধ্যমিক এবং একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেনির সিলেবাস নিয়ে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা হতো । এখন শুধু দশম শ্রেনি নিয়ে মাধ্যমিক এবং শুধু দ্বাদশ শ্রেনি নিয়ে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা হওয়ার কারনে বিষয়টা কিছুটা সহজ হয়ে গেছে । তাছাড়া তখন প্রশ্নপত্রের কাঠামোর ধরণের কারণে বিজ্ঞান ও কলা বিভাগের প্রাপ্ত মানের তারতম্য হতো অনেক বেশি । এখন কলা শাখাতেও সংক্ষিপ্ত ও অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন হয় । এখানেও practical ও project থাকার কারণে ভাল নম্বর পাওয়া যায় । ফলে উচ্চশিক্ষার সুযোগ থাকে অনেক । তাই সাম্প্রতিক কালে কলা বিভাগে ছাত্র সংখ্যা ও প্রতিযোগিতা বেড়ে গেছে এবং তা ভাল হয়েছে । মায়ের কাছে গল্প শুনেছি মা নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকে গৃহ শিক্ষকতা শুরু করে । এতেই তার অনেকটা পড়াশোনার খরচ চলতো । কারণ তখন প্রতিটি বিষয়ের জন্য গৃহ শিক্ষকের প্রয়োজন হতো না । আর উচ্চমাধ্যমিকের বিষয় নির্বাচনের সময় মা সেভাবে ভবিষ্যতের পেশার কথা চিন্তা করেনি । তখনকার দিনের বেশির ভাগ মানুষই এতোটা ভাবতেন না , অথবা পরিবার এই বিষয়ে এতোটা বেশি ভাবতো যে ছাত্রছাত্রীদের ভাল লাগার কোন জায়গা থাকতো না । কিন্তু আমার স্কুল আমার পরিবার বিশেষত আমার মা এবং আমার ছোট মাসীও আমার ভাল লাগার ওপর গুরুত্ব দিয়ে আমায় বিসয় নির্বাচন করতে শিখিয়েছে । আমি উচ্চমাধ্যমিকে আবশ্যিক বিষয় ছাড়া যে সকল বিষয়কে নির্বাচন করে নিতে চাই , সেগুলি হল , Mass Communication , Computer Application , Political Science , Education । কারণ ভবিষ্যতে আমি Journalism নিয়ে উচ্চশিক্ষার পাঠ নিতে চাই । আমি কীভাবে এই বিষয়টি নির্বাচন করলাম তার পর্যায়গুলি আমি ক্রমান্বয়ে বললে ভবিষ্যতের ছাত্রছাত্রীদের সুবিধা হবে ।
১। আমার journalism ভাল লাগে ।
২। এই পেশায় ভবিষ্যতের কর্মসংস্থান এবং সমাজে কিছু অবদান রেখে যাওয়ার সুযোগ আছে ।
৩। ছোট বেলা থেকেই আমার ভাষার ওপর দখল এবং যুক্তি দিয়ে কিছু বলা ও লেখার দক্ষতা গড়ে উথেছিল ।
৪। আমার বিদ্যালয় এবং আমার অভিভাবক আমাকে এই বিষয়ে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছে এবং তাদের অভিজ্ঞতাও আমাকে আমার নির্বাচনে স্থির থাকতে সহায়তা করেছে ।
৫। আমার শিক্ষা আমায় শিখিয়েছে ছেলেদের পেশা এবং মেয়েদের পেশা বলে আলাদা কিছু হয় না । যে কোন পেশায় সফল হওয়ার জন্য নারী পুরুষ নির্বিশেষে কর্মদক্ষতা ও কাজের প্রতি সত থাকাটা খুব জরুরী।
এইভাবে Mass Communication বিষয়টি নির্বাচন করার পরে অন্য তিনটি বিষয় নির্বাচনের সময় আমি যে সব দিকে লক্ষ রাখি তা হল –
১। বিসয় তিনটি যেন আমার ভবিষ্যতের উচ্চশিক্ষা ও মনোনীত কর্মক্ষেত্রে সহায়তা করে ।
২। বিষয়গুলি নিয়ে যেন উচ্চশিক্ষারও সুযোগ থাকে ।
৩। বিষয়গুলি যেন যথেষ্ট scoring subject হয় ।
৪। বিষয়গুলির সাথে project ও practical যুক্ত থাকলে ভাল হয় ।
এরপর মাধ্যমিকের ফলাফলের ওপর নির্ভর করছে আমার ভবিষ্যৎ চিন্তার বাস্তব রূপায়ন । বড়দের আশীর্বাদ ও ছোটদের শুভেচ্ছায় আমি যেন আমার কর্মজীবনে সফল এবং প্রকৃত মানুষ হয়ে উঠতে পারি । মানুষ হয়ে, অমৃতের সন্তান হয়, যেন মনুষ্যত্বের অপমান না করি এবং মনুষ্যত্বের অপমান সহ্য না করি । এই বিষয়ে ছোটবেলার একটি ভাব সম্প্রসারণের পঙক্তি দিয়ে আমার গল্প শেষ করব –
‘ অন্যায় যে করে এবং অন্যায় যে সহে
তব ঘৃণা যেন তারে তৃণ সম দহে । '

Written by - মধুরিমা ভট্টাচার্য

(1/2) ‘ শ্রীন্যন্তু বিশ্বে অমৃতস্য পুত্রঃ ‘ "আমরা অমৃতের সন্তান । স্বাভাবিক প্রাকৃতিক নিয়মে অন্যান্য জীবের মতোই বিবর্তনে...
07/06/2022

(1/2) ‘ শ্রীন্যন্তু বিশ্বে অমৃতস্য পুত্রঃ ‘
"আমরা অমৃতের সন্তান । স্বাভাবিক প্রাকৃতিক নিয়মে অন্যান্য জীবের মতোই বিবর্তনের মাধ্যমে বর্তমান মানব জাতির সৃষ্টি হলেও মেধা , বুদ্ধি , স্মৃতি শক্তি , ধী ও মননের দ্বারা মানুষ অন্যান্য জীবের থেকে অনেক উন্নত প্রজাতি বলে বিজ্ঞানীরা মনে করেন । আমরাও তা –ই বিশ্বাস করি। আমাদের উন্নত প্রযুক্তি , বিজ্ঞান , সাহিত্য , দর্শন আমাদের জীব – শ্রেষ্ঠ করে তুলেছে, হয়তো বা আমাদের নৈতিক ক্রম অবনমনের কারণও এইগুলি । ছোটবেলা থেকে গুরুজনেরা আশীর্বাদ করে বলেছেন , মানুষ হও । বুঝিনি কাজটা কতোটা কঠিন । যতো বড় হয়েছি এটুকু বুঝতে পেরেছি আমাদের সমাজে মানুষের বড় অভাব । বিশেষত বিগতপ্রায় অতিমারির সময় যেমন সৃষ্টিকর্তার মানসপুত্রের মতো কিছু মানুষকে মানুষের জন্য জীবন পণ করতে দেখেছি তার পাশাপাশি দেখেছি মনুষ্যত্বের চূড়ান্ত অপমান বিরাজ করছে সমাজের সর্বস্তরে । পাশাপাশি শিক্ষাখেত্রে অনলাইন লেখাপড়া সর্বশিক্ষা অভিযানকে উচ্চবিত্তের মধ্যে সীমায়িত হয়ে যেতে বাধ্য করেছে । যদিও সেখানে অন্য কোন পথ খোলা ছিল না ।এই পথে শিশুদের দৃষ্টিশক্তি , কিশোর বয়সের খেলাধুলা নষ্ট হয়ে গেছে । দেখা দিয়েছে ভিডিও গেমের আত্মকেন্দ্রিকতা । এই অতিমারি আমাদের প্রজন্মকে এক চরম অর্থনৈতিক সঙ্কট ও বেকারত্বের আশঙ্কার সামনে দাড় করিয়ে দিলেও এই কৈশোরে আমরা মানব জীবন সম্বন্ধে যে অভিজ্ঞতা অর্জন করলাম তা দুর্লভ । এখন আমার কাছে সব থেকে বড় প্রশ্ন হল এই জীবনের শিক্ষা বা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে আমরা কর্ম জগতের কোন পথকে কীভাবে বেছে নেব , যার ফলে আমার অন্ন- বস্ত্র – বাসস্থান ও চিকিৎসার সংস্থান হয় , আমি আমার পরিবারের পাশে থাকতে পারি , সমাজে আমার অবদান থাকতে পারে এবং জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত নিজের মনুষ্যত্বকে বাঁচিয়ে রাখতে পারি । আমি জানি আমার পরিস্থিতিতে দণ্ডায়মান সকল কিশোর কিশোরী ও তার পরিবারের কাছে এটি একটি বড় প্রশ্ন ।
আমি সুনিপা ঘোষ । আমার মা শ্রীমতী নবনিপা ঘোষ । বাবা সুশান্ত ঘোষ।আমরা হুগলী জেলার উত্তরপাড়ায় থাকি । বাবা দিনের বেশির ভাগ সময়টাই নিজের কর্মক্ষেত্রে ব্যাস্ত থাকেন । মায়ের জীবন উৎসর্গ করা রয়েছে আমাকে বড় করার কাজে । মাই আমার সবথেকে ঘনিষ্ঠ বন্ধু । আমি এই বছর মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছি । হয়তো আপনারা যখন আমার কথা পড়বেন ততোক্ষণে আমার পরীক্ষার ফলও প্রকাশিত হয়ে গেছে । তাই এখন আমার এবং আমার পরিবারের কাছে সবথেকে বড় চিন্তা হল যে আমি কোন শাখায় পড়াশোনা করবো । তবে আমার মা কখনোই আমার মতের বিরুদ্ধে আমার ওপর কিছু জোর করে চাপিয়ে দেন না , ছোটবেলা থেকে এবং একটু বড় হওয়ার পরেও , ছোট ও বড় বেলার সব কথাই মায়ের সাথে ভাগ করে নিই । মা শুধু ভাল মন্দের বিভাজনটা বুঝতে সাহায্য করেন । লেখাপড়ার ক্ষেত্রেও সে কথা সমান ভাবে সত্যি । শাখা নির্বাচনের কথা বলার আগে মা ছাড়া যে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় আমি বড় হয়ে উঠেছি সেই বিষয়ে কিছু বলতে চাই । কারণ শিকড়ের কথা না বললে শাখা প্রশাখার গল্প বলব কী করে ?
KG – A , K G – B আমি পড়েছি উশশ্রী বিদ্যানিকেতনে । আর সব শিশুদের মতোই স্কুলে যেতে গেলেই খুব কাঁদতাম কারণ অতোটা সময় মাকে ছেড়ে থাকতে হবে । বাবা – মা আমায় স্কুলে ভর্তি করে দিয়ে এসেছিলেন । তারপর মায়ের সাথে বা শৈশবে যিনি আমার দেখাশোনা করতেন সেই সুলেখা মাসীর সাথে দৈনন্দিন স্কুলে যেতাম । ঐ স্কুলে কান্না ছাড়া আমার তেমন কোন স্মৃতি নেই । তবে ওখানে আমাদের দেখাশোনা করার জন্য একজন মাসী ছিলেন তাকে আমি খুব ভালবাসতাম । সেই সামান্য বেতনের মানুষটি তার অকৃত্রিম ভালবাসায় আমাদের মায়ের অভাব পূরণ করে দিতেন ।
এরপর প্রথম শ্রেনিতে ভাগ্যপরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে প্রবেশ করলাম উত্তরপাড়া উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে । সেখানেও একই চিত্র । মা স্কুলে পৌঁছে দিয়ে বাড়ির দিকে পা বাড়ালেই আমার কান্না শুরু । অনেকদিন পর্যন্ত ক্লাসে মন দিতে পারতাম না , কোন বন্ধু ছিল না , একটা কোনে চুপ করে বসে থাকতাম । এমন ভাবেই আমি হয়তো গভীর অবসাদে চলে যেতে পারতাম যদি সেদিন সহচরীর মতো পুষ্প দিদিভাই এসে আমার হাত না ধরতেন । তিনি ছিলেন আমাদের নাচের শিক্ষিকা । আমাকে এভাবে একলা বসে থাকতে দেখে তিনি আমায় ডেকে নিয়ে যান সবার সাথে নাচ করতে । প্রথম স্কুলের আনন্দ ও মুক্তিকে খুঁজে পেলাম আমি । শুরু করলাম সবার সাথে কথা বলতে খেলতে পড়ায় মন দিতে । আমার এগারো বছর বয়সে আমি পুষ্প দিদিভাইএর নাচের স্কুল ‘ সুর ও বানী ‘ তে ভর্তি হই এবং আনন্দ , সাফল্য ও বহু অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে আমি এখনও নাচ শিখে যাচ্ছি । তাছাড়া সেই সময়ের অমৃতা দিদিভাই , মিতা দিদিভাইয়ের ভালবাসা ও শিক্ষার কথা ভুলবো না । একটু বড় হতে বিদ্যালয়ের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে , ক্রীড়া প্রতিজগীতায় , বিদ্যালয় থেকে আয়োজিত সামাজিক হিতসাধনের পদযাত্রায় অংশ নিতে থাকলাম । চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত বাড়িতে মায়ের কাছেই লেখাপড়া করেছি । পঞ্চম শ্রেণিতে সোনালী দিদিভাই আমার গৃহশিক্ষিকা রূপে নিযুক্ত হলেন , বলা ভাল তিনি আমাদের পরিবারের একজন হয়ে উঠলেন । আমি তাকে ‘ দিদিভাই ‘ ও ‘তুমি ‘ বলে সম্বোধন করতাম । তার তখনো সন্তান ছিল না । তিনি আমায় নিজের মেয়ের মতোই স্নেহ করতেন , বকুনিও দিতেন । আমি তার কোলে বসে পড়াশোনা করতাম আমার খাওয়া খাবার থেকে তাকে খাইয়ে দিতাম , আমার সব অত্যাচার তিনি সস্নেহে গ্রহণ করতাম । আমি যে ইংরাজি বিষয়টাকে ভালবাসতে শুরু করি , তা তারই জন্য । তারই জন্য এবং অবশ্যই আমার স্কুলের জন্য লেখাপড়াকে আর কখনো ভয় পাইনি , ভালবেসেছি । এরপর নবম শ্রেণিতে প্রথম প্রতিটি বিষয়ের জন্য আলাদা আলাদা করে সহশিক্ষার কোচিঙে ভর্তি হলাম । প্রথম বড় হলাম। "

Written by - মধুরিমা ভট্টাচার্য

''আসলে তুমি ক্ষুদ্র ছোটো, ফুলের মতো বাগানে ফোটোবিরহে যদি দাঁড়িয়ে ওঠো, ভূতের মতো দেখায়!গাছের কাছে গিয়ে দাঁড়াও, দেখবে...
06/06/2022

''আসলে তুমি ক্ষুদ্র ছোটো, ফুলের মতো বাগানে ফোটো
বিরহে যদি দাঁড়িয়ে ওঠো, ভূতের মতো দেখায়!
গাছের কাছে গিয়ে দাঁড়াও, দেখবে কত ছোটো।''

তখনও শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের এই কবিতার অর্থ বোঝার বয়সে পৌঁছাইনি। তখন সবেমাত্র 'সহজপাঠ','কিশলয়'-এর বৃত্ত থেকে এক'পা -দু'পা করে এগোচ্ছি! কিন্তু এই এগোনোর সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে পারছিলাম গাছের প্রয়োজনীয়তা কতটা।
আমার বিদ্যালয় জীবন কেটেছে 'বর্ধমান সাধুমতী বালিকা শিক্ষাসদন'-এ। বিদ্যালয়ে প্রবেশের পর থেকে, বলা ভালো, ক্লাসরুমে শিক্ষিকার বলে দেওয়া 'গাছ' বিষয়ক রচনা খাতায় লেখার মতোই, মনের ভিতরেও একটা রচনা লেখার শুরু হয়েছিল।
মনে আছে, তখন পঞ্চম শ্রেণিতে উঠেছি৷ রবীন্দ্রজয়ন্তীর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। সবাই তৎপর। ঠিক করা হল 'বলাই' ছোটগল্পটির নাট্যরূপ মঞ্চে পরিবেশিত হবে। ছোট থেকেই সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রগুলো আমাকে বিশেষভাবে টানত। তাই নাটকের কথা শুনে সেখানে অংশগ্রহণ করলাম।
আমরা যারা 'বলাই' গল্পটি পড়েছি তারা জানি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই গল্পে বলাই নামের ছোটো ছেলেটির সঙ্গে গাছের সখ্যের ভাবটি কী অপরূপ শব্দে ফুটিয়ে তুলেছেন। নাটকটিতে অংশগ্রহণ করার পর থেকেই আরও বেশি করে পরিবেশ নিয়ে ভাবতে শুরু করি। পঞ্চম শ্রেণির বালিকা এই আমি যত বড় হয়েছি ততই বুঝতে শিখেছি গাছের কথা, গাছের ব্যথা।
বিদ্যালয় জীবন শেষ করে বর্ধমান রাজ কলেজে পড়তে যাই। আলাপ হয় আমারই বয়সী নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে,যাদের মধ্যে অন্যতম সৌভিক, দোলন প্রমুখজনেরা। 'মানুষ' বলছি কারণ তখনও তারা বন্ধু হয়নি। বন্ধু হয়েছে পরে, যখন দেখেছি আমার ভাবনাচিন্তার পথটি তাদের পথের পাশে পাশে চলে। তখন থেকেই মাথার মধ্যে একটা বিষয় বেশ ঘুরপাক খেত আমাদের। কিছু একটা করতে হবে। আমাদের চারপাশে থাকা মানুষদের বোঝাতে হবে পরিবেশের গুরুত্ব।
আমাদের এই ভাবনার ফসলরূপেই ২০২০ সালের প্রথমের দিকে আমাদের স্বপ্নের 'সমাবর্তন' আত্মপ্রকাশ করে। কলেজবেলার এবং আমাদের বয়সী অন্যান্য বন্ধুরা ছাড়াও এই পরিকল্পনা রূপায়ণে যোগ দেন মনামী'দি, সুকন্যা'দি,শ্যামাপ্রসাদ কুণ্ডু সহ বয়ঃজ্যোষ্ঠ মানুষ ও অভিভাবকেরা।
'সমাবর্তন' কেবলমাত্র পরিবেশ নিয়ে কাজ করে এমনটা নয়, অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া বাচ্চাদের একত্রিত করে তাদের শিক্ষার দিকটিতেও নজর রাখে। 'সহজপাঠ' নামে একটি অবৈতনিক শিক্ষার অঙ্গন তৈরি করা হয়েছে বাচ্চাগুলির জন্য। বাচ্চাদের প্রথাগত শিক্ষার পাশাপাশি পরিবেশ কীভাবে রক্ষা করতে হবে সেই পাঠও দেওয়া হয়৷ ফাঁকা স্থানে তাদের বৃক্ষরোপণে অংশগ্রহণ করার কাজে উৎসাহ দেওয়া হয়। মানবতা,মূল্যবোধ -সর্বপরি তাদের সুস্থ সমাজ গঠনের অংশীদার করার অঙ্গীকার গ্রহণ করা হয়৷ তারাও অত্যন্ত উদ্দীপনার সঙ্গে 'সমাবর্তন' এর এই প্রয়াসে, আমাদের এই উদ্যোগের অঙ্গীকারে সামিল হয়।
করোনাকালে, মহামারীর ভয়ংকর প্রকোপের মুখে দাঁড়িয়ে 'সমাবর্তন' এর পক্ষ থেকে রোগ বিষয়ক সচেতনতা প্রচারের সঙ্গে সঙ্গে, প্রতিনিয়ত দেওয়া হয়েছে পরিবেশের প্রতি সদয় হওয়ার বার্তাও।
প্লাস্টিক বর্জন করার কথা, গাছ না কাটার কথা সহ দূষণ রোধ করার ব্যাপারে সচেতনতা প্রচার করা হয়েছে।

আমফান, ইয়াস প্রভৃতি ঝড়ের প্রকোপে পশ্চিমবঙ্গের সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া এলাকা সুন্দরবন। আমি 'সমাবর্তন' এর কাজের সূত্রে সেখানে উপস্থিত থেকেছি ত্রাণসামগ্রী নিয়ে। দেখেছি ম্যানগ্রোভ অরণ্য হ্রাস পাওয়ার ফলে কীভাবে ক্ষতির মুখোমুখি হচ্ছে সেইসব এলাকা। ম্যানগ্রোভ বৃক্ষের চারা এলাকার মানুষদের হাতে তুলে দিয়ে এসেছি আমরা, সচেতনতা প্রচারের চেষ্টা করেছি যথাসাধ্য - চেষ্টা করেছি বোঝানোর প্রকৃতি মায়ের লালিত্য অক্ষুণ্ণ রাখার কথা সঞ্চারিত করার।
'সমাবর্তন' তার শুভ চেষ্টা চালিয়ে যাবে।
আমি, পূজা সোনকার। 'সমাবর্তন' এর সদস্য হয়ে আমিও চেষ্টা চালিয়ে যাব আরও বেশি করে মানুষের কাছে পৌঁছানোর। মানুষকে বোঝাব, আমরা এক এক জন যদি একটি করে চারাগাছ রোপণ করি এবং সেটিকে সম্পূর্ণ পরিচর্যা দ্বারা বৃক্ষে পরিণত করতে পারি তবে বিন্দু বিন্দুতে তৈরি সিন্ধুর মতোই এই পৃথিবী আবারও রুক্ষতা, দূষণ, অতিরিক্ত তাপমাত্রার রোগ থেকে মুক্তি পেয়ে পুনরায় সবুজ হয়ে উঠবে।

Written by- তিতাস বন্দ্যোপাধ্যায়

"আমরা যাইনি ম’রে আজো— তবু কেবলি দৃশ্যের জন্ম হয়:মহীনের ঘোড়াগুলো ঘাস খায় কার্তিকের জ্যোৎস্নার প্রান্তরে..."দৃশ্যের জন্...
31/05/2022

"আমরা যাইনি ম’রে আজো— তবু কেবলি দৃশ্যের জন্ম হয়:
মহীনের ঘোড়াগুলো ঘাস খায় কার্তিকের জ্যোৎস্নার প্রান্তরে..."

দৃশ্যের জন্ম হয়। পথ হাঁটতে হাঁটতে, বৃষ্টি ভেজা মাটির গন্ধে, কাদা মাখা পায়ের উল্লাসে- আর সেইসব দৃশ্য কুড়িয়ে নিতে নিতে আমরা বড় হয়ে উঠি। শৈশব কাটিয়ে পা রাখি বিদ্যালয়ের চৌকাঠে। চারপাশের মানুষজন পিঠ চাপড়ে বলতে থাকেন - 'পরীক্ষায় অনেক নাম্বার পেতে হবে বাবু! আরও নাম্বার!''
আমি দেবার্ঘ্য দত্ত, বর্ধমান টাউন স্কুলে আমার বিদ্যালয় জীবন শুরু হয়েছিল। প্রথমদিকে গৃহশিক্ষক ও কড়া নজরের ঘেরাটোপে বেশ জোরকদমে পড়াশোনা চলছিল- তবু কী আশ্চর্য, সিলেবাসের পাতাদের থেকে,বীজগণিতের 'X,Y,Z' এর থেকে আমাকে বেশি টানত সবুজ মাঠ, নীল আকাশ! আমাকে টানত সাহিত্যের অলিগলি।
বাড়ির বড় ছেলে আমি, আত্মীয় পরিজনের 'আশা' ছিল খুব! কিন্তু মাধ্যমিকে কম নাম্বার পেয়ে উত্তীর্ণ হওয়ার ফলে আমাকে কেন্দ্র করে যত সব উচ্চাকাঙ্খা, তা সরতে শুরু করে! প্রবাদে আছে - 'যা হয় তা ভালোর জন্য হয়'! সেইরকমই ঘটল যেন! উচ্চাকাঙ্খা সরে যাওয়ার ফলে আমার ইচ্ছের মাঠ বড় হতে থাকল। প্রকৃতির কাছাকাছি আসার সুযোগ বেড়ে গেল।
বিদ্যালয় জীবন আমাকে দু'হাত ভরে দিয়েছে বন্ধু ৷ 'কাছের-দূরের' বিচার সম্পূর্ণ আপেক্ষিক হলেও, আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু সুমন। মনে পড়ে, কালবৈশাখীর বিকালে ইংরেজি টিউশনের পড়া শেষ করে বেরোতেই ঝেঁপে বৃষ্টি নামল। আমি আর সুমন গিয়ে দাঁড়ালাম একটা চালার নিচে! অনেকক্ষণ কেটে যাওয়ার পরও বৃষ্টি থামার লক্ষণ না দেখে দু'জনেই রাস্তায় নেমে পড়লাম! সঙ্গে সাইকেল ছিল। জুতো সাইকেলের ক্যারিয়ারে আটকে হাঁটতে থাকলাম, বৃষ্টিতে গড়াগড়ি খেলাম- সেই দিন আমার স্মৃতিপটের অন্যতম উজ্জ্বল দিন।
বন্ধুদের মধ্যে যাদের নাম না করলেই নয় তারা হল- দেবজ্যোতি, সৌরভ,স্বপ্নরূপ, মৌলিক,শঙ্কর! ওরা না থাকলে দেবার্ঘ্য, দেবার্ঘ্য হয়ে উঠত না বোধহয়। আমার ভাবনার,বোধের জগতে ওরা আলো করে দাঁড়িয়ে আছে।
অনেক ছোট থেকেই লিখতে ভালবাসতাম। আমার বাবা ভীষণ ভালো লিখতেন, তাঁর থেকে উদ্দুদ্ধ হয়েই আমার লেখা শুরু করা। ছড়া লিখে বাবাকে দেখাতাম আমি। বাবা সেগুলো পড়ে 'খুব ভালো' স্বাক্ষর করে তারিখ দিয়ে দিতেন। ওই যেন আমার শ্রেষ্ঠ উপহার। তাঁর দেওয়া উৎসাহই আমার ছায়া।
বিদ্যালয় জীবন শেষ করে গণমাধ্যম (মাস কমিউনেকশন) নিয়ে পড়া শুরু করি। এই সময় অনির্বাণ রায়চৌধুরীর সান্নিধ্যে আসি ৷ তিনিই আমার মুর্শিদ সমান। তাঁর কাছ থেকেই গণমাধ্যমের বিস্তারিত পাঠ নেওয়া শুরু। এমনকি জীবনের প্রথম রোজগারের পথও তাঁর হাতেই তৈরি! তিনিই প্রথম একটি ডকুমেন্টারি কাজের জন্য পাঠান।
সিনেমা দেখতে ভালবাসি অনেক ছোট থেকেই। কবিতা ভালবাসি ৷ কবিতা'ই আমার 'জিয়নকাঠি'। ইউটিউবে একটা চ্যানেল আছে আমাদের। সেই খানেই টুকটাক কাজ করার শুরু। আস্তে আস্তে তৈরি করি 'আবর্ত'। একটি এক্সপেরিমেন্টাল কাজ বলা যায়। বহু মানুষ কাজটি দেখে মতামত রেখেছিলেন।
এরপর একটা স্বপ্নের কাজে হাত দিই। 'ছাতিম ফুলের গন্ধ'। ২০২০ সাল থেকে পরিকল্পনা গ্রহণ করি একটা শর্টফিল্ম তৈরি করার। ছাতিমের গন্ধ মাখা কবিতা থেকেই এই কাজের চিত্রনাট্য লিখি। কিন্তু পরপর বাধা আসে। ২০২০,২০২১ সালে যখনই শ্যুটিং-এর কাজ শুরু হয়েছে তখনই নানান প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছি। তারপর এল ২০২২। চারিদিকে যখন নতুন বছরের উচ্ছ্বাস তখনই আমার জীবনে ঘনিয়ে এল কালোদিন। ৭ ই জানুয়ারি আমার জীবনের অন্যতম অবলম্বন মা'কে হারালাম আমি। কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে,কাউকে কিছু বুঝতে না দিয়ে কর্তব্যপরায়ণ আমার মা চলে গেলেন। আগে বুঝিনি, মা'কে হারানোর পর বুঝলাম আড়ালে থেকেই কত বড় দেওয়াল হয়ে ছিলেন তিনি আমার। ছাতিম ফুলের চিত্রনাট্য কাছের সবাইকে পড়িয়েছিলাম। মা'কে পড়ানো হয়নি। মা'কে দেখানোও হল না। মা'কে বলা হল না -
'আমি তোমার মাধ্যমিকের বাধ্য ছেলে নই, তবু আমার একটা ভাবনার জগত ছিল! সেই জগতে তুমি ছিলে!'
বলা হল না-
'' ও মা, বড় হয়ে গেছি শুধু তুমি জানলে না।
যতদূরে যাই, আকাশে তাকাই
সব তারা জ্বলে ওঠে তোমারই কথায়...''
ছোটবেলায় স্কুলে যেতাম মায়ের হাত ধরে, হেঁটে! হেঁটে গেলে আইসক্রিম কিনে দিত মা। কোনোদিন খুব ক্লান্ত হলে টাউন সার্ভিস ধরে বাড়ি ফিরতাম! আর এইসব হাঁটা পথ, টাউন সার্ভিসের ভিড়, বন্ধুরা, স্কুল,কম নাম্বার, বৃষ্টি -থেকেই বোধহয় ছেঁকে নিতাম সিনেমা বানানোর ইচ্ছেটা।

দৃশ্যের জন্ম হয়! মানুষ আসে, সরে যায়। কত কত জন্ম হয় রোজ এই পৃথিবীতে, মৃত্যুও হয়।প্রকৃতি তার আপন খেয়ালে দু'হাত মেলে রাখেন। ক্লান্তি আসে, বিরহ আসে, আসে ক্ষোভ,অভিমান-
তবু বাঁচি!
বাবা-মা, কাছের, দূরের, ভাঙা-গড়া, বিদ্যালয় জীবন, শিক্ষক-শিক্ষিকা, বন্ধুরা-
ওরা আসে- স্মৃতিতে, বর্তমানে। ওরা আসবে ভবিষ্যতে!
তবু বাঁচি -এই বিশ্বাসে।

Written by- তিতাস বন্দ্যোপাধ্যায়

Address

Raipur
Champahati
743330

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Pupils of Schooldays posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Videos

Share


Other Champahati media companies

Show All

You may also like