10/10/2020
সাত বছর আগে, একটা বই মেলায় তিথীর সাথে প্রথম পরিচয় হয় অনিরুদ্ধ এর.. বয়সে তিথী অনিরুদ্ধ এর চেয়ে এক বছরের বড়...
ফুরিয়ে যেতে যেতে, যেদিন সবটুকু অনুভূতি ফুরিয়ে যাবে , সেদিন আর তিথীর ইচ্ছে থাকলেও, সে তার অনিরুদ্ধ এর কাছে ফিরতে পারবে না...
অনেক বুঝিয়েছিল অনিরুদ্ধ তাকে, পাগলের মতো তিথীর পিছনে পরে থাকতো, যতরকম ভাবে বোঝানো যায়, ও বুঝিয়েছিল, ওর ভালোবাসার কথা... কিন্তু তিথী বুঝেও বুঝতো না...
প্রেমের শুরুতে বার বার বলেছিল তিথী, যে আমি তোমার থেকে বড়ো, আমাদের কাস্ট আলাদা, বাড়ি থেকে কখনো মানবে না, তুমি ফিরে যাও...আমার আশা ছেড়ে দাও...
কিন্তু অনিরুদ্ধ তিথীর কোনো কথাই শুনতো না, কানের ধারে ঘ্যানঘ্যান করেছিল পুরো তিন বছর...
তিথী বেশ কঠিন মনের মেয়ে, একটা প্রাইভেট অফিসে কাজ করে, ওর নিজস্ব একটা আঁকার স্কুল আছে,
অনিরুদ্ধ ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে, সাথে বাচ্চা বাচ্চা ছেলে মেয়ে দের ক্যারাটি শেখায়, তাতেই ওর হাত খরচ টা চলে যায়...
পড়াশোনা ও কাজের সুত্রে দুজনেই নর্থ কলকাতার বাসিন্দা কয়েক বছর হলো...
তিন বছরে তিথিও অনিরুদ্ধ কে ভালোবেসে ফেলে, ওই বই মেলাতেই ও অনিরুদ্ধ কে তার মনের কথা টা জানিয়ে দেয়...
তারপর এই চার বছরে কলকাতার এমন কোনো ওলি গলি নেই যেটা ওরা একসাথে হাত ধরে হাঁটে নি... গঙ্গার ধারে ঝাল মুড়ি কাকু টা ওদের কেমন যেনো আত্মীয় হয়ে গেছে...
বালিগঞ্জে স্টেশনের ধারে ওই চাল চুলো হীন মাধবী দির যেদিন পেইন উঠলো, অনিরুদ্ধ আর তিথীই তাকে হসপিটালে অ্যাডমিট করায়, ফুট ফুটে একটা কন্যা সন্তানের জন্ম দেয় মাধবী দি...
ওরাই দুজন বাচ্চাটির নাম রাখে "ইতিকথা" , না কোনো পদবী নেই, শুধুই ' ইতিকথা ' .... যখন সবে মাত্র 4 মাস ইতিকথা, তখন একটা অ্যাকসিডেন্ট এ মাধবী দি তার পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলে...
তিথি মাসের শেষে যে টাকা টা পায়, তার থেকে নিজের ঘর ভাড়া আর পুরো মাসের যাবতীয় খরচ টা রেখে, বাকিটা একটা শিশু সংস্থা তে দিয়ে দিতো, ইতিকথা - র জন্ম এর পর থেকে আর দেয় না, "ইতিকথা "র সব দায়িত্ব তিথী নেয়... মাধবী দি মানুষিক রুগী, কোন ভরসায় ওই টুকু বাচ্চা টিকে স্টেশনে ছেড়ে যেতে পারতো তিথী...?
তিথীর নিজের বলতে অনিরুদ্ধ ছাড়া আর কেও নেই, অনাথ আশ্রম এ মানুষ তিথী...
অনিরুদ্ধ - তিথী দুজন দুজনকে ভীষণ ভালোবাসতো... ইতিকথা , তিথীর কাছে থাকতো, ওকে মা ডাকতো..
তিথী অনিরুদ্ধ এর সম্পর্ক চার বছর সম্পূর্ণ হলে তিথী অনিরুদ্ধ কে বাড়িতে জানতে বলে, অনিরুদ্ধ জানিয়েও ছিলো, কিন্তু অনিরুদ্ধ এর বাবা সাফ জানিয়ে দিলো মেয়েটির কাস্ট আলাদা এই সম্পর্ক তিনি কখনো মানবেন না, তাও আবার মেয়েটি অনিরুদ্ধ এর চেয়ে বয়সে বড়ো ... অনেক বোঝানোর পর তিথিকে অনিরুদ্ধ এর পরিবার মেনে নেয়... কিন্তু ইতিকথা কে মানতে রাজি হয় নি অনিরুদ্ধ এর পরিবার....
কিন্তু তিথী , ইতিকথা কে ছাড়তে পারবে না বলে জানিয়ে দেয়...
তখন অনিরুদ্ধ , তিথী কে জানিয়ে দেয় যে তার পক্ষে তাহলে সম্পর্কে থাকা সম্ভব নয়, সে তার পরিবারের কথার অমান্য হতে পারবে না...
ইতি মধ্যে ইতিকথা - র তিন বছর হতে চললো... সামনে 7th সেপ্টেম্বর ইতিকথা - র জন্মদিন...
তিথী , অনিরুদ্ধ - র পায়ে পড়ে কেঁদেছিল, থেকে যেতে বলেছিল, অনিরুদ্ধ শোনেনি...
(পরবর্তী অংশ পার্ট - 2 তে বলছি...)
(পার্ট - 2 শুনতে চাইলে কমেন্ট এ জানিও)
✍️ Aloka Basu🍁