PCA Diary

PCA Diary এই ডায়েরির খোলা পাতা, পথ চলতে ভালোবাসা মানুষজনের গল্প ধরে রাখে, যেখানে নটেগাছ কখনও মুড়োয় না।
ডায়েরি 👉 খেয়া ✒️, বিমল 📸 ও পথ চলতে ভালোবাসা সব্বার

আজ সকালের news এ জানলাম শিয়ালদহগামী কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসে একটি মালগাড়ির ধাক্কা ও দুর্ঘটনার খবর। কার ভুল, কি ভুল এসব ত...
17/06/2024

আজ সকালের news এ জানলাম শিয়ালদহগামী কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসে একটি মালগাড়ির ধাক্কা ও দুর্ঘটনার খবর। কার ভুল, কি ভুল এসব তর্ক এখন থাক। আটকে থাকা বিপর্যস্ত মানুষগুলো দ্রুত উদ্ধার পান। আহতরা পান শুশ্রূষা ও আরোগ্য। মৃতের সংখ্যা যেন আর না বাড়ে। আমাদের সবার আশৈশব প্রিয় ট্রেনটিও সব দুঃস্বপ্ন পিছনে ফেলে শীঘ্রই ট্র্যাকে ফিরুক। ঈশ্বরের কাছে এটাই প্রার্থনা।

ছোট্ট একটা লেক। সমতলের মতো দিগন্তবিলাসী মোটেও নয়। ছোট মানে ছোটই। মানে এতোটাই ছোট যে, যে কেউ নাক বেঁকিয়ে তাকে বলতেই পার...
15/06/2024

ছোট্ট একটা লেক। সমতলের মতো দিগন্তবিলাসী মোটেও নয়। ছোট মানে ছোটই। মানে এতোটাই ছোট যে, যে কেউ নাক বেঁকিয়ে তাকে বলতেই পারে পুকুর। কিন্তু পাহাড়ে? সেখানে সে ছোট নয়। সে মস্ত বড়ো। আর হবে না ই বা কেন? যার বুকে মুখ দেখে একটা নয় দুটো নয় সাত সাতটা পাহাড়! তাকে কি কেউ ছোট বলে ডাকতে পারে বলো? সে যেন ছোট্ট পারুল বোন। আর সাত পাহাড় তার সাত ভাই চম্পা। তাদের কথা মহারাজ, মানে তাদের বাবা ভুলেছেন অথবা সৎ মায়েরা মনে রাখতে দেন নি। তারপর থেকে তারা নিজেদের মতো করে বড়ো হচ্ছে ঘন সবুজ বনের ভিতর। কেউ তাদের খোঁজ রাখে না। কেউ তাদের ব্যাগ গুছিয়ে স্কুল বাসে তুলে দেয় নি কখনো। তাই তারা শেখে নি বর্ণমালা বা ধারাপাত। রাত্রে তাদের দেখাশোনা করে তারারা আর সকাল হলেই নীল আকাশ চলে আসে। তারা তাই আকাশের মতো উদার হতে শিখেছে। আর পাখিরা তাদের দিয়েছে গানের সুর। পাশেই যে ছোট্ট মন্যাষ্ট্রি, সেখানে আছেন ভগবান তথাগত। তিনি তাদের শিখিয়েছেন শান্তির পাঠ আর ক্ষমার মন্ত্র। যাদের কাছে বেড়ানো মানে কেবল সাইট সিয়িং নয়, তারা মাঝে মাঝে পথ ভুলে চলে আসে এখানে। তারা তো রূপকথা জানে না, তাই তারা লেকটিকে ডাকে সেভেন মিরর বলে।

Location: Seven Mirror Lake, Barfung, West Sikkim
Date: 26/5/24

আজ আমার মন ভীষণ খারাপ। যে মন খারাপ সব কিছু এলোমেলো করে দেয়, সেই রকম মন খারাপ। অফিসফেরত ব্যস্ত বিকেলে পাঁচ দিক থেকে গাড়...
13/06/2024

আজ আমার মন ভীষণ খারাপ। যে মন খারাপ সব কিছু এলোমেলো করে দেয়, সেই রকম মন খারাপ। অফিসফেরত ব্যস্ত বিকেলে পাঁচ দিক থেকে গাড়ি ঢুকে সবকিছু এলোমেলো করে দেওয়া পাঁচমাথার মোড়ের মতো হাঁ করে তাকিয়ে আছি। কতো কিছু বলছে সবাই। কতো হাসি, কথা, মজা, কতো কুশল। কান পেড়িয়ে মন ছুঁতে পারছে না কেউ। এই মন খারাপের পাশে বসবার মতো কেউ নেই এখানে। এখানে সবাই খুব রুক্ষ। আজ সেই আয়নাটা চাই আমার। যেখানে মুখ দেখলে মন খারাপ বলে, পালাই। সেই জাদু আয়নাটা শুধু তোমার কাছেই আছে। আয়নাকে ঘিরে সবুজ একটা রুমাল পেতে রাখো তুমি। আমার কষ্ট ধুয়ে মুখ মোছার জন্য। আর আছে পাথুরে চেয়ার টেবিল। শুধু আমার জন্য। তোমার শীতল স্পর্শে আমি ততক্ষণে তরতাজা। মন খারাপ উধাও। তোমার দিকে তাকাতেই মিষ্টি হাসো তুমি। বলো, বড়ো বড়ো ঘাসেদের ফাঁকে জোঁক আছে। একটু সাবধানে পথ চলো।
এখানে এতো খেয়াল কে রাখবে বলো আর? একটা বড়ো পাথর দেখে সাবধানে বসি। হাতের ঠোঙায় মুড়ি আর উৎসব চানাচুর। আমাদের একান্তযাপন।
কেউ কোত্থাও নেই। একটা দুটো করে মাছ মাথা তুলছে মুড়ির টানে। আর তাদের টানে উঁকি দিচ্ছে সাদাকালো একটা হ্যাংলা বিড়াল। সেদিকে আমাদের হুঁস নেই কোনো। আমরা আমাদের মতো মন খুলে বসি। আমি, তুমি আর সাক্ষী নীল আকাশ। তোমার গল্প শোনাও তুমি। সেই কবে তিন লামা এসেছিল এই পথে। আকাশ সেদিনও এমন ঘন নীল ছিল। এরকমই কোন এক পাখি ডাকছিল একটানা। তোমার কাচ জলে তারা করেছিল প্রথম রাজার অভিষেক। তবে তার আগে মন্ত্রপূত করে নিয়েছিল তোমায়। তখন প্রধান সেই লামার নাম পেলে তুমিও। কাথোক। তুমি ভুলে গেছো তারও আগে কি নামে ডাকা হতো তোমায়। তখনও কি আমার মতো কেউ পাশে এসে বসতো ? এভাবেই ভালোবাসতে তাকে? আমার জিগ্গাসা আর শেষ হয় না। এদিকে গল্পে গল্পে বেলা গড়িয়ে যায়। এবার বন্ধ হবে দরজা। উঠতে হবে আজকের মতো।

জীবন যেমন দেয় অনেক কিছু, তেমনই তাকেও দিতে হয় অনেক। সে চুপিসারে নিয়ে নেয় আমাদের কুমিরডাঙা শৈশব, স্বপ্নে মোড়া কৈশোর, ...
07/06/2024

জীবন যেমন দেয় অনেক কিছু, তেমনই তাকেও দিতে হয় অনেক। সে চুপিসারে নিয়ে নেয় আমাদের কুমিরডাঙা শৈশব, স্বপ্নে মোড়া কৈশোর, গোলাপ ফোটা যৌবনও। সময় সবকিছু কেড়ে নেওয়ার আগে তাই তার চোখকে ফাঁকি দিয়ে নিজের সঙ্গে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে। আর তখনই তুমি হও আমার মাথা রাখার চওড়া বুক। আমি এক দৌড়ে চলে যাই। তুমি আমার জন্য সাজাও দুদিনের খেলাঘর। দোলনা আমার প্রিয়। সে খবর তোমার জানা। বুড়ো রাস্কিন বন্ড - যিনি আমার চেয়েও বেশি ভালোবাসেন তোমায় - তাকেও ডেকে নিই আমাদের সঙ্গে। তারপর, জীবনকে কাঁচকলা দেখিয়ে জমে ওঠে বেঁচে থাকার উৎসব।

01/06/2024

ছায়াতাল। পশ্চিম সিকিমের জনপ্রিয়তম বেড়ানোর ঠিকানা। পেলিং থেকে মাত্র ৩২ কিলোমিটার দূরে। অথচ পেলিং এর ভীড় আর হৈচৈ থেকে শত যোজন দূরে। যেখানে আছে কেবল সবুজ প্রকৃতি আর তার মাঝে ছোট্ট পোখারি, রঙিন মাছ। আর আছেন মস্ত এক মানুষ, মহাত্মা তেয়াংসী সিরিজুঙ্গার মস্তো বড়ো মূর্তি আর মস্তিতে ভরপুর কচিকাঁচার দল। বাকি কথা না লিখে লেন্সে ভরে এনেছি, ভালো লাগা ভাগ করে নেব বলে।

পাহাড়ী পথে যেতে যেতে গাড়ির জানলা দিয়ে আমার বুভুক্ষু চোখ চেয়ে থাকে। একটা দৃশ্যও চোখহারা করতে চায় না। ছোট ঝোরা, রঙিন ...
01/06/2024

পাহাড়ী পথে যেতে যেতে গাড়ির জানলা দিয়ে আমার বুভুক্ষু চোখ চেয়ে থাকে। একটা দৃশ্যও চোখহারা করতে চায় না। ছোট ঝোরা, রঙিন ঘাসফুল, ছোট্ট পাখি, উদাস বৃদ্ধ। একমনে ক্ষেতে কাজ করা মাঝবয়সী, মেয়ের চুলে তেল মাখানো মা। হাতে হাত গল্পে মাতোয়ারা স্কুল ফেরত কিশোরী। পথের দুধারে তারা আসে আর পার হয়ে যায়। রঙিন পাহাড়ী বাড়ি? নীল, সবুজ, সাদা, গোলাপী। তারাও আসে। কিন্তু যেতে চায় না। কেবল লোভ দেখায় আমায়। পাহাড়ের সাথে ঘর বাঁধার লোভ।
এক চিলতে বাড়ি আমাদের। ঠিক পাশেই একটা নদী। প্রতি দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে তার জলে মুখ দেখব আমি আর পাহাড়। প্রতি দিন নতুন নতুন নাম নেবে সেই নদী। কোনদিন বিপাশা, কখনো গঙ্গা বা সালতেজ। না হলে ঝালং, মূর্তি, পার্বতী, তিস্তা, রঙ্গিত, ব্রহ্মপুত্র বা কামেং। তারপর ঘরকন্না শুরু হবে। পাহাড় কুড়িয়ে আনবে কাঠকুটো আর আমি চাপাবো চায়ের জল। তারপর? কোনদিন চা এ চিনি কম হলে পাহাড় করবে ঝগড়া। কোনদিন মেরি বিস্কুট ফুরিয়ে গেলে আমার হবে গোঁসা। এরপর কাক চিল সবাই একে একে জানবে আমাদের প্রেম ফুরিয়ে যাওয়ার খবর। হাসাহাসি হবে আমাদের নিয়ে। না, এ আমি কিছুতেই হতে দেব না। দুবেলার চাল ডাল নুন তেলে কিছুতেই ফিকে হতে দেব না ভালোবাসার রং। তার চেয়ে এই ভালো দূর থেকে দেখা।
©️ PCA Diary

27/05/2024

A day in West Sikkim. ..

আজ সকালে স্নান সেরে এলোচুলে সকালের ঝকঝকে রোদের সামনে এসে দাঁড়াতেই আবার ধরা পরে গেলাম। হ্যাঁ, হাতে গোনা কয়েকদিনের পাহাড...
27/05/2024

আজ সকালে স্নান সেরে এলোচুলে সকালের ঝকঝকে রোদের সামনে এসে দাঁড়াতেই আবার ধরা পরে গেলাম। হ্যাঁ, হাতে গোনা কয়েকদিনের পাহাড় যাপন শেষে তখন আমার মন ভীষণ খারাপ।‌ পাহাড় থেকে ফেরা তো হয় না। মনটাকে পাহাড়ের কাছে রেখে যন্ত্রের মুখোশে মুখ গোঁজা। প্রতিদিনের রেষারেষি আর ইঁদুর দৌড়। সকাল থেকে সন্ধ্যা দৌড় দৌড় আর দৌড়। আপোষ করে বাঁচা। আমার ভেজা চুল আলতো আঙুলে ঘেঁটে দিয়ে পাহাড় বলে, এটাই তো জীবন। মনটা আমার কাছে না ফেলে রেখে মনের মধ্যে আমাকে ভরে নিলেই হ’ল। যন্ত্র নয় মানুষ হয়ে বাঁচো। দেখবে মন কেমনের ব্যস্ত দিনে একটা ঘাসফুল পথের ধারে আলগোছে ঠিক ফুটবে শুধু অফিস ফেরত তোমার মন ভালো করবে বলে। আর যাওয়া মানে তো যাওয়া নয়, কেবল আরেকটা আসার বাহানা খোঁজা। হেসে উঠি। পিঠে ব্যাগ তুলে নিই। আর গাড়িতে ওঠার আগে চুপিচুপি আমার ছাতাটা ফেলে রেখে আসি। বর্ষায় খুঁজতে আসবো বলে। পাকদন্ডী পথ আমাকে নিয়ে নেমে যায় নীচে আরও নীচে। শেষ বাঁকটা পেরিয়ে যাওয়ার আগে তিস্তাও হাত নেড়ে বলে, তাড়াতাড়ি চলে এসো কিন্তু!

জীবন যেন এক অনন্ত পথ হাঁটা।  জন্মিলে হাঁটিতে হবে, অচল কে কোথা কবে! পকেটের জোর চাই না। শরীরে নাইবা থাকলো হাজার  হাতির শক্...
24/05/2024

জীবন যেন এক অনন্ত পথ হাঁটা। জন্মিলে হাঁটিতে হবে, অচল কে কোথা কবে! পকেটের জোর চাই না। শরীরে নাইবা থাকলো হাজার হাতির শক্তি। কেবল ইচ্ছেটুকু সম্বল করে শুধু পথে নামার অপেক্ষা। বাকি দায়িত্ব পথের।

আমার সঙ্গে আড়ি করেছে সে। তাও একটা দুটো দিন নয়। তিন তিনটে বছর। আমি কেন ভাব করি নি? এক হাতে কি তালি বাজে? নিশ্চয়ই আমারও...
24/05/2024

আমার সঙ্গে আড়ি করেছে সে। তাও একটা দুটো দিন নয়। তিন তিনটে বছর। আমি কেন ভাব করি নি? এক হাতে কি তালি বাজে? নিশ্চয়ই আমারও কিছু দোষ আছে। জানি, তুমি এসবই ভাবছো। আমি হলেও এ রকমই ভাবতাম। কিন্তু বিশ্বাস করো, সে রকম কিছুই হয় নি। তবু সে আমার সাথে আড়ি করেছে। কতোবার দেখা করার চেষ্টা করেছি। কত জায়গায়। কিন্তু সে ঠিক বুঝতে পেরেই লুকিয়ে গেছে। গতকাল আবার এসেছি। আরেকবার চেষ্টা করে দেখতে। রাস্তা থেকেই সঙ্গ নিল দুজন। আমি জানি, এই দুজনই আমাদের মাঝখানে চলে আসে বারবার। তারপর আর দেখা হয় না আমাদের। এবারও! ওদের সঙ্গে দেখা হতেই আমার মনে হয়েছিল সব শেষ। এবারও। তারপর আজ সকালে ঘুম ভাঙতে দেখি, কোথায় মেঘ, কোথায় বৃষ্টি। আমার জানলা জুড়ে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে সে। আমি জানলা খুলতেই সব আগের মতো। আমার বন্ধু কাঞ্চনজঙ্ঘা তিন বছর পর আজ হেসেছে।
ব্ল্যাক কফির কাপে এক সাথে চুমুক দিয়ে আগের মতোই গল্প জমে উঠলো। তারপর সারাটা দিন একসাথে কাটালাম। সন্ধ্যায় লুকিয়ে পরার আগে কথা দিয়ে গেল কাল আবার দেখা হবে।

23/05/2024

কালুক, সুন্দরী সিকিমের বুকে এক টুকরো পান্না সবুজ বসতি।

হঠাৎ তোমার চিঠি পেয়ে বেশ খানিকটা অবাক হয়ে গেছি। এমন হঠাৎ করে তুমি যে ডাকবে ভাবি নি। এতোদিনের না দেখা পেরিয়ে আজও এতো ভ...
21/05/2024

হঠাৎ তোমার চিঠি পেয়ে বেশ খানিকটা অবাক হয়ে গেছি। এমন হঠাৎ করে তুমি যে ডাকবে ভাবি নি। এতোদিনের না দেখা পেরিয়ে আজও এতো ভালোবাসো আমায়? অথচ আমি তো তোমাকে সেভাবে ভালোবাসিনি। ঠিক যেভাবে ভালোবাসলে অন্য কারো দিকে তাকাতে ইচ্ছে করে না। আমি তো বারবার সৌন্দর্য খুঁজেছি। হিমালয়ের নানান প্রান্তে ছুটে গেছি শুধু সুন্দরের খোঁজে। সমুদ্র, জঙ্গল, ঢেউ খেলানো টিলা, তারাও বাদ যায়নি। তবে যখনই যেখানেই গেছি একবার ঠিক মনে পরেছে তোমার মুখ। তোমার ফুলের সাজি। তোমার ঝলমলে কাঞ্চন ব্যালকানি। ঝর্ণার মতো হাসি। কিছুতেই ভুলতে পারি নি তোমায়। মাঝে বারবার প্রকৃতি রুষ্ট হয়েছে। হড়পা বান, ধস এসে বারবার তছনছ করেছে তোমায়। আর আমি ব্যস্ত থেকেছি নিজেকে নিয়ে। তোমার চিঠিতে তার কোন উল্লেখও নেই। এতোগুলো বছর কেটে গেল। একটুও বদলাও নি তুমি।আজ তাই তোমার চিঠি পেয়ে পুরনো সব ছবিগুলো একটা একটা করে সাজালাম চোখের সামনে। নতুন করে দেখব বলে।

16/05/2024

পাহাড়ের হাওয়ায় একটা হাতছানি আছে। ভালোবাসার হাতছানি। একটা মিষ্টি গন্ধ আছে। ভালো লাগার গন্ধ। অনেক দিন পাহাড়ে না গেলে ভোর রাতে সেই হাওয়া নেমে আসে আমার মফস্বলের উঠোনে। তারপর তার মিষ্টি গন্ধ নাকে সুড়সুড়ি দিয়ে ঘুমকাতুরে আমাকে টেনে তোলে। জানলায় মুখ রাখতেই সে বলে,” কতো দিন দেখা হয় নি বলো তো?” আমিও সঙ্গে সঙ্গে কথা দিই,” যাচ্ছি”। তারপর চটপট তল্পিতল্পা গুটিয়ে ফেলি। পাহাড়। আর পাহাড়ী হাওয়া? তার সাথে তো পথেই দেখা হয়ে যায়। উপচে পড়া খুশিতে সে ছুঁয়ে দেয় আমার বাড়িয়ে দেওয়া হাত।

শিমলা যাচ্ছি। টয়ট্রেনে। স্বপ্নের সফর। ট্রেন ছাড়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই পেলাম চা বিস্কুট। তার একটু পরেই প্রাতরাশও দিয়ে গে...
15/05/2024

শিমলা যাচ্ছি। টয়ট্রেনে। স্বপ্নের সফর। ট্রেন ছাড়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই পেলাম চা বিস্কুট। তার একটু পরেই প্রাতরাশও দিয়ে গেল। ভাগ্যিস স্টেশনেই ব্রাশ করে নিয়েছিলাম! স্যান্ডুইচে কামড় দিতে দিতে দুচোখ ভরে দেখছি। চারপাশের প্রকৃতির সৌন্দর্য যেমন চোখ জুড়ানো, রেল ব্রীজগুলিও তেমনি অবাক করা। মাঝে মাঝেই আসছে একের পর এক টানেল। একটা টানেলে ট্রেন ঢোকার সময় একবার নিভে গেল কামরার আলো। পরক্ষনেই জ্বলেও উঠলো। আর তারই মধ্যে একটা মুখ যেন ভেসে উঠলো জানলার কাচে। ভেসে উঠেই মিলিয়ে গেল। কিন্তু যাওয়ার আগে যেন বলে গেল আমার কথা কি জানো তুমি? আমার সময়ের কথা? চমকে উঠলাম। তেত্রিশ নম্বর টানেল কি এসে গেছে!
সেটা ছিল উনিশশো সাল। ব্রিটিশরা ততোদিনে খুঁজে পেয়েছে পাহাড়ের রানি শিমলাকে। সমতলের সাথে তাকে জুড়তে চায় তারা। আর তাই পাহাড় কেটে তৈরি হচ্ছে রেলপথ। তেত্রিশ নম্বর টানেলটির দৈর্ঘ্য অনেক বেশি। দায়িত্ব পেলেন কর্নেল বরোগ। শুরু হল দুদিক থেকে সুড়ঙ্গ খোঁড়া। কিন্তু অঙ্কের গরমিলে দুটো মুখ মিললো না কিছুতেই। অর্থ এবং সময়। অপচয় হল দুয়েরই। ব্রিটিশ সরকার শাস্তি দিলেন বরোগকে। দিতে হল জরিমানাও। অফিসার থেকে শ্রমিক, সকলের হাসির পাত্র হলেন তিনি। রাত্রে হাঁটতে বেরিয়ে সেই অসম্পূর্ণ টানেলে এসে নিজের বন্দুকের গুলিতে আত্মঘাতী হলেন বরোগ সাহেব। রেলওয়ের প্রধান ইঞ্জিনীয়ার এইচ এস হ্যারিংসন সম্পূর্ণ করলেন সেই টানেল। তাঁকে পথ দেখালেন স্থানীয় এক সন্ন্যাসী, বাবা ভাল্কু। পরিত্যাক্ত সেই টানেল থেকে এক কিলোমিটার দূরে তৈরি হল নতুন টানেল। টানেল নম্বর ৩৩। সংলগ্ন এলাকা ও স্টেশনের নাম হল বরোগ। খ্যাতি পেলেন বাবা ভাল্কু। শিমলায় এখনও তাঁর নামে রেল মিউজিয়াম আছে। আর সফল হয়েও সময়ের স্রোতে হারিয়ে গেলেন এইচ এস হ্যারিংসন। পরিত্যাক্ত সেই টানেলে হাঁটতে বেড়িয়ে আজও অনেকের দেখা হয়ে যায় কর্নেল বরোগের সঙ্গে। টানেলের স্যাঁতসেঁতে অন্ধকারে দুদন্ড দাঁড়িয়ে গল্পও করেছেন কেউ কেউ।

আজ আনন্দবাজার পত্রিকায়
10/05/2024

আজ আনন্দবাজার পত্রিকায়

তোমার সাথে আড়ি করে বেশিদিন থাকা যায় না।
08/05/2024

তোমার সাথে আড়ি করে বেশিদিন থাকা যায় না।

অনেক অপেক্ষা পেরিয়ে কাল বৃষ্টি এসেছিল। জানলা দিয়ে দেখি তপ্ত মাটির বুকে ফোঁটায় ফোঁটায় নেমে, সে মিলিয়ে যাচ্ছে।  সোঁদা...
07/05/2024

অনেক অপেক্ষা পেরিয়ে কাল বৃষ্টি এসেছিল। জানলা দিয়ে দেখি তপ্ত মাটির বুকে ফোঁটায় ফোঁটায় নেমে, সে মিলিয়ে যাচ্ছে। সোঁদা গন্ধ হয়ে ছড়িয়ে পরছে চারপাশে। আস্তে আস্তে বৃষ্টি বাড়লো। আর আমিও সেই ছেলেবেলার মতো এক দৌড়ে চলে গেলাম ছাদে। দরজা খুলতেই একরাশ বৃষ্টি ভেজা হাওয়া আমায় ঘিরে ধরে। “এসো, দেখো আমরা কেমন জুড়িয়ে গেছি বৃষ্টি মেখে।" কিন্তু আমার যে ছেলেবেলা ফুড়িয়ে গেছে। আমার যে যখন তখন ভিজতে মানা। এসব আবোল তাবোল ভাবছি। হঠাৎ দেখি ছাদের আলসের ধারে কে যেন বসে আছে অন্ধকারে, আর বসে বসে খুব হাসছে। আরে, এতো সেই সোনালী হাঁস। একদিন যার সঙ্গে দেখা হয়েছিল এক আশ্চর্য লেকে। সাংগেতসর লেক। সেখানে তার ঘর আছে, বর আছে, আছে ছোট ছোট ছানা। তবু সব ছেড়ে আমার সঙ্গে গল্প করতে এসেছে সে! পাশে গিয়ে বসি। সে তার ডানার জল ঝেড়ে ফেলে। ভেজা আলসেতে আমাদের গল্প জমে ওঠে।
একটা ছোট্ট নদী। তার নাম তাকসাং। কাছেই তাকপো সিরি হিমবাহ থেকে তার পথ চলা শুরু। তার স্বচ্ছ জলে আকাশের ছায়া পরে। তাকে ঘিরে ঘন ঘাসে ঢাকা উপত্যকা। রাখালের দল সেখানে নিয়ে আসে চমরী গাই আর ভেড়ার পাল। বড়ো বড়ো পাইন গাছেরা তাদের অতন্দ্র প্রহরী। সে অনেক দিন আগের কথা। সেই ১৯৫০ সাল। মিসমি পাহাড়ের অনেক অনেক নীচে তৈরি হল এক ভূমিকম্প। এত তীব্র ভূমিকম্প আগে কখনো কেউ দেখে নি। অসম থেকে তিব্বত কেঁপে উঠল। তৈরি হল জলোচ্ছ্বাস। সৃষ্টি হল হড়পা বান। একমাস ধরে চলল তাণ্ডব। শান্তশিষ্ট তাকসাং নদীও বে-লাগাম হল। সেই সবুজ ঘাসে ঢাকা উপত্যকায় তৈরি হল এক হ্রদ। এখনো তার বুকে জেগে আছে ভূমিকম্পের স্মৃতি। তার স্বচ্ছ জলে বড়ো বড়ো পাথর আর বোল্ডার। আর রয়েছে তার প্রিয় পাইন গাছেরা। পাতা ঝরে গেছে। তবু তারা একগলা জলে দাঁড়িয়ে এখনও পাহারায় অটল। এখন সে এক পবিত্র হ্রদ। স্থানীয়রা মনে করে সেই ভয়ঙ্কর বন্যা থেকে সে ই তাদের রক্ষা করেছিল। রঙিন পতাকার ভালোবাসায় বেঁধে রাখে তাকে। হিমেল হাওয়া খেলা করে তার সঙ্গে। সকাল থেকে সন্ধে। সোনালী হাঁসের দল ঘর বাঁধে। তারপর একদিন এক পরমা সুন্দরী আসেন সেখানে। তাকে ঘিরে কতো লোকজন। ক্যামেরা, আলো, রঙিন ছাতা। কি দারুন নাচতে পারে সেই মেয়ে। তনহাই তনহাই তনহাই। মুগ্ধ সাংগেতসর। উপত্যকা থেকে হ্রদ হয়েছে সে। ইচ্ছে হল ঐ মেয়েটার মতো হবে সেও। সেও নেচে উঠবে “আজ হাওয়াওনে বংশী বাজায়ি…"। মাধুরী হল সে।
©️PCA Diary

Location: Tawang, Arunachal Pradesh
Video link: https://youtu.be/77ByD5bkSEM

মাঝে মাঝে মুহূর্তরা থমকে যায়। সব না পারারা ফুটে ওঠে পারা হয়ে। ডেলিভারি বয়ের কাজ করা ছেলেটি টাকা জমাতে থাকে। আর খাতার ...
05/05/2024

মাঝে মাঝে মুহূর্তরা থমকে যায়। সব না পারারা ফুটে ওঠে পারা হয়ে। ডেলিভারি বয়ের কাজ করা ছেলেটি টাকা জমাতে থাকে। আর খাতার পিছনে কাটাকাটি হিসেব জমে দার্জিলিং কত টাকা দূরে। অসুস্থ মা চলে যাওয়ার আগে বলেন, ‘আমাকে একবার পাহাড় দেখাবি?' পাহাড়ের বাঁকে বাঁকে বমিতে কাহিল। মেয়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে। শুধু কোনো কোনো বাঁকে কাঞ্চনজঙ্ঘা এসে উঁকি দিয়ে ফিরিয়ে দিচ্ছে ফ্রকপরা কিশোরীবেলা। একটাও ফুল না চেনা ছেলেটা ছোট্ট একটা ফুলের ছবি তোলার জন্য বিপদজনক খাদের ধারে চলে যায়। মেয়ের স্কুল বাসের হর্ন সকালের ব্যস্ততাকে শোনায় টয়ট্রেনের বাঁশি। অঞ্জন দত্ত বেঁধে ফেলেন অপূর্ব সব গান আর সত্যজিৎ রায় সৃষ্টি করেন কাঞ্চনজঙ্ঘা। পাইনবনের লুকোচুরি ফোটায় এক চিলতে রোদের মতো হাসি। অনেক অমিত এখানেই লাবণ্যকে খুঁজে পায়। ব্যাঙ্কের নিশ্চিত চাকরি ছেড়ে মুম্বাই এর মেয়ের ঠিকানা হয় গুলমার্গ। ভালোবেসে বেছে নেয় একলা মেয়েদের স্কী শেখানোর কাজ। আমার মতো একটা আদ্যপান্ত ভীতু মেয়েও লহমায় পেয়ে যায় মুঠোভর্তি সাহস। আর এইসব অসম্ভবকে সম্ভব করে যে তারই নাম পাহাড়।

চোদ্দোশো বছর ধরে নগ্গর ( Naggar) ছিল কুলুর রাজধানী। মানালি থেকে নগ্গর এর পথে কিছু দূর যেতেই একটা ছোট্ট ঝর্ণা। আহা কি সুন...
03/05/2024

চোদ্দোশো বছর ধরে নগ্গর ( Naggar) ছিল কুলুর রাজধানী। মানালি থেকে নগ্গর এর পথে কিছু দূর যেতেই একটা ছোট্ট ঝর্ণা। আহা কি সুন্দর নাম তার। জগৎ সুখ। তাকে ভালো করে দেখতে যেই কাচ নামিয়েছি, সে আমার দুচোখ ছুঁয়ে বললো, আমার সবটুকু সুখ তোমারও হোক। আমি অবাক হয়ে বললাম, বোকা মেয়ে! এমন করে কি সুখ বিলিয়ে দিতে হয়? সে শুধু মিষ্টি হাসিতে মন ভরিয়ে দিল। আর হিংসুটে রাস্তাটা ঘন পাইন বনের ভিতর দিয়ে আমাকে নিয়ে পালিয়ে এলো তার কাছ থেকে। কিছুদূর আসার পর পাইন বন আর নেই। পথের দুধারে সাজানো শুধুই আপেল গাছ! ফলের সময় কেমন সাজো তোমরা? জিঞ্জাসা করলাম। সাড়া না দিয়ে ওরা তাকালো রানির মতো। এসব দেখতে দেখতে আমিও পৌঁছে গেলাম নগ্গর ক্যাসেল এ। রাজার বাড়ির গেটে কোন প্রহরী নেই। আছে দুটো কুকুর। গাবলু আর গুবলু। আমার খোলা চুল। এলোমেলো। রাজ প্রাসাদে ঢুকছি বলে কথা, তাই হাত দিয়ে একটু ভদ্রস্থ করে নিতে বৃথা চেষ্টা করি।
নাম ক্যাসেল হলেও এটা ঠিক দূর্গ নয়। রাজার বসতবাড়ি। পাথরের এই বাড়ি এমনভাবে তৈরি যে উনিশশো পাঁচ সালের ভূমিকম্পে আশপাশের সবকিছু ধ্বংস হলেও এই বাড়িটার একটা পাথরও খসে পরে নি। বিয়াস নদীর ওপার থেকে এপারে মানুষ হাতে হাত রেখে একটা শিকল তৈরি করেছিল। সেই শিকলে সওয়ার হয়ে এল পাথর। তৈরি হল এই প্রাসাদ।
প্রতিটি প্রাসাদই গল্পের ঝাঁপি। গল্পগুলো শুনবো, তাই যুক্তিকে সরিয়ে রাখি হাতব্যাগে। তারপর এগোই সামনে। ভিতরে বাঁদিকে একটা মহল আর ডানদিকে একটা। মাঝখানে চৌকো উঠোন আর সামনে মন্দির। মন্দিরের ছোট্ট গেট খুলে এগিয়ে যাই। বন্ধ দরজার ফাঁক দিয়ে দেখা যাচ্ছে একটা বড়ো পাথর। সুন্দর করে ফুল দিয়ে সাজানো। জাগতিপাত। সমস্ত দেবদেবীর প্রতিভূ এই পাথর। দেও টিব্বা পাহাড় থেকে মৌমাছিরা এই প্রকাণ্ড পাথর বয়ে নিয়ে আসে এখানে। দেবতাদের প্রিয় এই স্থানে। বাঁদিকের মহল এখন হেরিটেজ হোটেল। সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামলে একটা ছোট্ট মিউজিয়াম। আর ডানদিকের মহলে ঢোকার মস্ত কাঠের দরজা। ভিতরে ঢুকে মুগ্ধ হয়ে যাই। এমন ছবির মতো বাড়ি ছেড়ে কেন চলে গেছে রাজপরিবার? ভিতরে তখন একদল কলেজের মেয়ে। রিলসের প্রস্তুতি চলছে। য়ে ইস্ক হায়….। হিরো, রোজা, জব উই মেট, টিউবলাইট অগুন্তি সিনেমার দৃশ্য একসঙ্গে ভীড় করে স্মৃতিতে। সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে আসি। রেলিং এ ঠেস দিয়ে দাঁড়াতেই সে ফিসফিস করে গল্প শোনায়। তার প্রিয় রানির গল্প। রানির ছিল এক ভেড়ার ছানা। দুধসাদা। রানি তাকে ভালোবাসতেন আর রাজা করতেন হিংসা। আমার রানি শুধু আমাকেই ভালোবাসবে এই রকম ব্যাপার আর কি। একদিন হলো কি, হিংসুটে রাজা ভেড়ার ছানাকে ছুঁড়ে ফেলে দিলেন ঐ সামনে উঠোন থেকে। নীচে, অনেক নীচে পরলো সে। আর পরার আগে শেষ বারের মতো কেঁদে উঠল। কান্না শুনে ছুটে এলেন রানি। ঝাঁপ দিলেন তিনিও। আর মৃত্যুর আগে তাঁর দেওয়া অভিশাপে এই প্রাসাদে আজ নেই রাজ পরিবারের কোন সদস্য। সামনে মাথায় বরফের টুপি পরা ওই যে পাহাড় চুড়োগুলো, তারা সবাই সাক্ষী এর। মন উদাস হয়ে যায়। নীচে নেমে আসি। একটা চেয়ারে বসি। কলেজের মেয়েদের শ্যুটিং তখনও চলছে। পাশে একজন বয়স্ক মানুষ বসে আছেন। চোখে চোখ পরতেই হাসেন। আলাপ হয়। পাঞ্জাবের লোক। সংসারের জোয়াল টানতে টানতে কখন যে বয়স বেড়ে গেছে, শরীরে‌ বাসা বেঁধেছে নানান অসুখ। খেয়ালও করেন নি। তারপর একদিন হঠাৎ স্ট্রোক। প্রাণ বাঁচলো, কিন্তু শরীর সারলো না। ডাক্তার হাওয়াবদলের পরামর্শ দিলে আসেন এখানে। তারপর দুবছর কেটে গেছে। আর ফেরা হয় নি সংসারে। ক্যাসেলের পাশেই থাকেন। জমানো টাকা সব শেষ। তাই শুরু করেছেন জ্যোতিষ। এভাবেই এক এক করে গল্প জমতে থাকে নগ্গর ক্যাসেলের ঝাঁপিতে। রূপকথার গল্প।

পাহাড়ে অফবিট লোকেশন। শুনলেই মনে ভেসে ওঠে ছবির মতো একটা জায়গা। সেখানে ছোট্ট একটা বাড়ি। সুন্দর করে সাজানো। পাহাড়ী বাড়...
28/04/2024

পাহাড়ে অফবিট লোকেশন। শুনলেই মনে ভেসে ওঠে ছবির মতো একটা জায়গা। সেখানে ছোট্ট একটা বাড়ি। সুন্দর করে সাজানো। পাহাড়ী বাড়ি যেমন হয়, ঠিক সেরকম। মনের ভিতর এরকমই একটা ছবি নিয়ে সেবার গেছিলাম একটা ছোট্ট গ্রামে। যাওয়ার অবশ্য আরও একটা কারণ আছে। সেটা হল গ্রামের নাম। তার নাম মাইরুন। নাম শুনে আশ্চর্য আমি। রঙের নামে নাম? কি জানি কেমন দেখতে তাকে? তাই বেরিয়ে পরলাম তার উদ্দেশ্যে। নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে কালিম্পং পেড়িয়ে আলগাড়া নামে এক ছোট্ট শহর। একরত্তি সেই শহরকে পিছনে ফেলে একটু এগোতেই চলে এলাম মাইরুন গ্রাম। দেখি একটুও মেরুন নয়। তার সারা শরীর জুড়ে শুধু সবুজ আর সবুজ। পথের দুধারে এক দুই তিন করে ছোট ছোট বাড়ি। ব্যস্ততাহীন জীবনের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে আছি, যেমন তাকিয়ে থাকি মেলার জিলিপির দিকে। দেখি এক মহিলা, মুখে তার কোজাগরী চাঁদের আদল, কি যেন একটা ফল, ঠিক মেরুন বলা যাবে না, তবে কাছাকাছি রঙের, খেতে খেতে রাস্তার দিকে তাকিয়ে। খুব ইচ্ছে হল, কি ফল, কেমন খেতে জানতে। তখন আর কে জানে ওঁর বাড়িতেই অতিথি আমরা। কিছু পরে ঠিক ঠিকানায় এসে দেখি সামনে সেই পূর্ণিমা চাঁদ। ছোট ছোট কয়েক ধাপ সিঁড়ি বেয়ে দুদিকের সাজানো গাছ পেড়িয়ে পৌঁছে গেলাম নীল বাড়িটায়। বাড়িটার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে একসারি পাহাড়, নিজেদের মধ্যে ঠেলাঠেলি করছে আমাকে দেখার জন্য। আমি হেসে ঘরে ঢুকে পড়ি। বাড়ির লোকজনের সঙ্গে আলাপ জমতে দেরি হয় না। পূর্ণিমার চাঁদ ততক্ষণে আমাদের মায়াদিদি। তার মেয়ে পিয়ার সঙ্গে ঘুরে দেখি ছোট্ট সবজি বাগান। সেখানে একরকমের শাক দেখলাম, পেঁয়াজের মতো খেতে। রাতে ঐ শাক দিয়ে পেঁয়াজি খেলাম মুচমুচে। মায়া দিদির হাতের রান্না চমৎকার। আর বাড়ির উঠোনে আছে একটা মিষ্টি পীচ ফলের গাছ। একগাছ পাকা ফল। গাছতলাতেও পরে। সেই ফলের লোভে পাড়ার বাচ্চা থেকে বুড়ো সবাই একবার করে ঘুরে যাচ্ছে পীচতলা থেকে। আমরাও বাদ যাই নি। মায়া দিদির ছেলে সোনাল স্কুটিতে চাপিয়ে নিয়ে যায় কাছেই দুক্কা ফলস্ দেখতে। যদিও সেই ঘোর গ্রীষ্মে তার জল খুবই কমে গেছে। আর দেখায় দুক্কা ভ্যালি। কি যে সুন্দর তার রূপ! বিকেলে পায়ে হেঁটে ঘোরা। গ্রামের ছোট্ট চার্চ। শুধু রবিবারে খোলে। পাড়ার একজন খুলে দিলেন। ভিতরে ঢুকে একটু বসলাম। ওঁর সাথে অনেকক্ষণ গল্প হল। দুঃখ করছিলেন গ্রাম হারিয়ে যাচ্ছে শহরের ছায়ায়। হোমস্টের ঠিক সামনের বাড়ির কাকিমাতো নিজের বাড়ির লোকের মতো মিশলেন। বিকেলে পাড়ার গল্পের আসরে যোগ দিলাম আমরা। একটা গোটা পাড়া নিমেষে আপন করে নিল আমাদের। চলে আসার সময় মায়াদিদির ছোট্ট নাতি ছাওয়াং এর চোখ ছলছল। আমাদের শহুরে মনে যান্ত্রিকতা ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পরলো আবীর। ভালোবাসার রঙ। মাইরুন।

Golays Homestay, Mairung Gaon
Video link: https://youtu.be/erPAZU5vdFk

কোথায় যেন শুনেছিলাম চলতি কা নাম জিন্দেগী। কিন্তু মাঝে মাঝে এমন এক একটা স্টেশন আসে আর এমনভাবে হাতছানি দিয়ে ডাকে যে মনে ...
27/04/2024

কোথায় যেন শুনেছিলাম চলতি কা নাম জিন্দেগী। কিন্তু মাঝে মাঝে এমন এক একটা স্টেশন আসে আর এমনভাবে হাতছানি দিয়ে ডাকে যে মনে হয় একটু নামি। একটু গা এলিয়ে বসি পেতে রাখা চেয়ারে। তারপর ট্রেনের দিকে চোখ রাখি। জানলায় কোন উদাস মুখ আছে কি? যাকে কেউ ছাড়তে আসে নি বলে মন খারাপ? বা কাউকে ছেড়ে এসেছে বলে? রেলগাড়ি না হয় অপেক্ষায় থাক। আর তার যদি খুব তাড়া, আমায় ফেলে চলে যাক। চলেই যাক। যেই সে তার বাঁশি বাজাবে সবাই ব্যস্ত হয়ে উঠবে। আমি বসে বসে তাদের ব্যস্ততা দেখব। আর হাত নেড়ে খেলনা ট্রেনকে বলব সায়োনারা।

নদীটার নাম রেলি খোলা। ছোট্ট একটা নদী। মাত্র দশ কিলোমিটার মতো রাস্তা একা একা হেঁটেই হাঁফিয়ে ওঠে সে। তাই তিস্তার দেখা পেত...
21/04/2024

নদীটার নাম রেলি খোলা। ছোট্ট একটা নদী। মাত্র দশ কিলোমিটার মতো রাস্তা একা একা হেঁটেই হাঁফিয়ে ওঠে সে। তাই তিস্তার দেখা পেতেই ছুট্টে গিয়ে হাত ধরে তার। শুরু হয় একসাথে চলা। একদিন দেখা হয়েছিল তার সাথে। জায়গাটা বেশ। একটা লোহার ব্রীজ। প্রেয়ার ফ্ল্যাগ দিয়ে সাজানো। তার একপাড়ে একটা হোমস্টে। আর অন্য পাড়ে রিসর্ট। আর আছে কয়েকটা টেন্ট। আরও কাছাকাছি থাকার জন্য। সব কিছুই তাকে ঘিরে। তার জন্য। অথচ রেলির সেদিকে ভ্রুক্ষেপও নেই। সে নিজের খেয়ালে বয়ে চলে। আমি যখন তার কাছে গেলাম তখন জৈষ্ঠ্যের ভরদুপুর। ঠা ঠা রোদ্দুর। ভীষণ ক্লান্ত আমি। সে আমাকে হাতের ইশারায় কাছে ডাকলো। আমার পায়ের পাতা ভিজিয়ে দিয়ে বললো, এসো। আগে কখনো নদীতে স্নান করি নি আমি। স্নান করিনি চার দেওয়ালের বাইরে। সে আমার সমস্ত লজ্জা ধুইয়ে দিল তার শীতল জলে। বিকেলটাও কাটালাম তার সাথে। আমি পাশে একটা পাথরের উপর বসে রইলাম আর সে শোনালো তার জীবনের গল্প। কি করে নদী হল সে, সেই সমস্ত কথা বললো আমায়। তারপর ঝুপ করে সন্ধ্যা নেমে এলো। চলে আসছি। পিছন থেকে বললো কাল তোমাকে ঝর্ণার জলে স্নান করতে নিয়ে যাব। পরদিন সাতসকালে ঘুম ভাঙলো পাখির গানে। কি পাখি দেখবো বলে জানলার পর্দা সরাতেই দেখি এক দারুণ দৃশ্য। নদীর ওপারে পাহাড় থেকে নেমে এসেছে হরিণ। জল খাচ্ছে। এতো সতর্ক যে ছবি তোলার সুযোগ দিল না। চটপট তৈরি হয়ে নিলাম। রেলি খোলা অপেক্ষা করছে। গিয়ে দেখি সকালবেলার নরম রোদে কি মিষ্টি দেখাচ্ছে ওকে। আমাকে দেখে হাত তুলে পাশেই একটা জায়গা দেখালো। পাথরের পিছনে দেখি একদম সামনে কিন্তু আড়ালে লুকিয়ে একটা ঝর্ণা। আমাকে দেখে ঝিকিমিকি হেসে উঠলো। ভাবখানা এমন যেন কেমন বোকা বানালাম! এমন সুন্দর ছাদছাড়া শাওয়ার পেয়ে আমি তখন অভিভূত। সাধ মিটিয়ে স্নান করছি, হঠাৎ পাশ থেকে সে ডেকে উঠলো, "খেয়াল আছে আজ তোমায় ফিরতে হবে?”

꧁༺ তাকনা ༻꧂ ভীষণ গরম পরেছে। প্রতি বছরই পরে। তবু গরম পরলেই আমরা, মানে সমতলের মানুষরা কেমন যেন পাহাড়মুখী হয়ে পরি। মনে হয...
19/04/2024

꧁༺ তাকনা ༻꧂
ভীষণ গরম পরেছে। প্রতি বছরই পরে। তবু গরম পরলেই আমরা, মানে সমতলের মানুষরা কেমন যেন পাহাড়মুখী হয়ে পরি। মনে হয় পাহাড়ে একবার যদি পৌঁছাতে পারি, তাহলেই ব্যাস, কটা দিনের মুক্তি। আর তারপর, জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে পিঁপড়ের সারির মতো গাড়ির লাইন। শুধু দার্জিলিংই নয়, কালিম্পং, কার্শিয়াং সব জমজমাট। যারা মনে মনে পাহাড়কে আপন করে পাওয়ার প্ল্যান করেছিলো তাদের সবার চক্ষু চড়কগাছ। আর তাই নতুন বাংলা শব্দ অফবিটের জন্ম।
কালিম্পং এর রেলি রোড তাকনা ভঞ্জন গাড়ি স্ট্যান্ড থেকে একটা বোলেরো গাড়ি বুক করে চেপে বসলাম। কিছু দূর যেতেই সেই চেনা পাহাড়ি গন্ধ নাকে এসে লাগল। দুপাশে পাহাড়ী বাড়ি টুকটাক সাজানো। যেখানে যেটুকু ফাঁকফোকর আছে সর্বত্র কোন খেয়ালি যেন নানান সবুজ রঙের আল্পনা এঁকে রেখেছে। কালো ফিতের মতো রাস্তা এঁকেবেঁকে পাহাড়ে উঠছে। তারপর অনেক বাঁক পেড়িয়ে গাড়ি দাঁড়ালো ছোট্ট দোকানের সামনে। দোকানি এক পাহাড়ি বউ। তার একঢাল লম্বা মসৃণ চুল আর নাকে নকল হীরের ঝলকানি। আমার মুগ্ধ চোখের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসলো। তখনই চোখে পড়লো দোকানের সাইনবোর্ডে লেখা তাকনা নামটা। আমাদের ঠিকানা এসে গেছে । নামতে যাব। ড্রাইভার দাদা বললেন, আভি নেহি।
আবার স্টার্ট হল ইন্জিন। আমার দুচোখ জুড়িয়ে দিয়ে পেড়িয়ে গেল কয়েক ঘর বসতি উদাসীন মানুষজনকে নিয়ে। হঠাৎ দেখি গাড়ি পীচ রাস্তা ছেড়ে পাথুরে রাস্তায় নামছে। কি হল ? আমার শহরে মন সতর্ক হয়ে ওঠে। ড্রাইভার দাদা আশ্বস্ত করেন, চলে এসেছি। এরপর দুপাশে ঘন হয়ে আসে গাছপালা। যেমন পাড়ায় বড় কোন সেলিব্রেটি এলে ঘিরে ধরি আমরা, ঠিক সেরকম। তারপর পাথুরে পথও শেষ। গাড়ি থমকে যায়। ড্রাইভার দাদা নেমে গেলেন। মুখটা একটু চিন্তিত লাগলো কি! ভাবছি, নির্ঘাত পথ হারিয়েছি। ড্রাইভার দাদা দরজা খুলে বললেন আমরা পৌঁছে গেছি।
গাড়ি থেকে নেমে চারপাশে তাকিয়ে দেখি। একদম পাহাড়ের চূড়ায়। ঠিক পাশেই একটা সরকারী প্রাইমারি স্কুল। পরে জেনেছি ছাত্র সংখ্যা ছয়। হোমস্টের মালিক আমীর ভাইয়া এগিয়ে এসেছেন। আন্তরিক অভ্যর্থনায় না চেনার দূরত্ব মুছে গেল লহমায়। ঘরের কর্ত্রী না থাকার জন্য বারবার দুঃখ প্রকাশ করছেন। কয়েক ধাপ সিঁড়ি ভেঙে সাজানো উঠোন। পোষা দুটো কুকুর লেজ নেড়ে এগিয়ে এলো। সামনে এসে আদরের বায়নায় শুয়ে পরলো। পরিপাটি সাজানো সবকিছু। ঘরে গিয়ে স্নান সেরে নিতেই দুপুরের খাবারের ডাক পরলো। খাবার সামান্যই। ভাত, একটা ভাজা, ডাল আর ডিম। সঙ্গে আচার আর স্যালাড। গৃহকর্ত্রী রেবেকা দিদি যত্ন করে খাওয়ালেন। জানালেন আজ বিকেলে একটা ছোট্ট খাবারের দোকান খুলবেন। তাই এতো ব্যস্ত আজ।
খাওয়ার পর হাঁটতে বেরোলাম। কাছেই একটা রক গার্ডেন। হোমস্টেরই তৈরি। তারই একপাশে দোকান সাজাচ্ছেন রেবেকাদিদি। আমরা এগিয়ে গেলাম সামনে। পথের দুধারে চেনা অচেনা গাছেরা দাঁড়িয়ে। বাঁদিকে একটা পায়ে চলা পথ উঠে এসেছে নীচে থেকে। একটা জেসাসের মুর্তিও আছে। ডানদিকে জঙ্গল বেশ ঘন। কি একটা পাখি একটানা ডেকেই চলছে। এগিয়ে গেলাম। কত রকমের ফার্ন! আমরা ছাড়া কেউ নেই।
হঠাৎ দেখি এক থুথ্থুরে বুড়িমা। মাথা থেকে পিছনে ঝুলছে একটা কাপড়ের ব্যাগ । ফোকলা মুখে এক গাল হাসি। চমকে উঠি। একটু ভয়ও পাই। আমার এলোমেলো হিন্দি আর ওনার নেপালীতে গল্প জমে উঠতে দেরি হয় না। ওনার বাড়ি ঐ জঙ্গল পথে। নীচে মুদিখানা সেরে স্কুল ফেরত নাতিকে সঙ্গে নিয়ে ফিরছেন। ফেরার সময় দেখি রেবেকা দিদির দোকান তৈরি। তার ছোটছেলে পিগিব্যাঙ্ক হাতে ঘুরঘুর করছে। প্রথম ক্রেতা সে ই হবে। আমরা খেলাম গোলগাপ্পা। এখানকার মতো মশালাদার না হলেও বেশ লাগলো।
চলে এলাম হোমস্টের বসার জায়গায়। জায়গাটা খোলা আকাশের নিচে। পাহাড়ের দিকে মুখ। কাঠের পাটাতনের উপর। অর্কিড দিয়ে সাজানো। পিছনে ছোট্ট একফালি লন। ঘাসে ঘাসে রঙিন লিলি ফুটে আছে। আকাশে সন্ধ্যার স্নিগ্ধতা। আমরা চেয়ার টেনে নিয়ে বসলাম। দূরে দূরে পাহাড়ের কোলে একটা একটা করে তারা ফুটে উঠছে। তারা ফুটে উঠছে আকাশেও। সুযোগ বুঝে এক মনে গলা সাধা শুরু করেছে ঝিঁঝিঁ র দল। মশা কামড়াচ্ছে। কিন্তু চারপাশের এমন জাদু যে আমরা উঠতে পারছিনা। রেবেকা দিদির নতুন দোকানে প্রথম দিনের বিক্রিবাটা ভালোই হয়েছে শুনলাম।
আজ রাতের চিকেন রান্না করছে রেবেকা দিদির দিদি। দোকানের উদ্বোধন উপলক্ষে সে এসেছে বোনের বাড়ি। গন্ধে ম ম করছে চারপাশ। উনুনের ধারে বসে অনেক গল্প হল। তারপর রাতের খাওয়া সেরে একটা সুন্দর ঘুম। খুব সকালে আমীর ভাইয়া নিয়ে গেলেন গ্রাম ঘুরে দেখতে। ৩৬০ ডিগ্রী ভিউ পয়েন্ট থেকে দেখলাম সকাল হওয়া। ছবির মতো গ্রাম। মানুষ জনও খুব আলাপী।
এবার ব্রেকফাস্ট করে চলে যেতে হবে। মন চাইছে আরও কয়েকটা দিন এই ভালো লাগার পাহাড় চূড়ায় কাটিয়ে যেতে। লটবহর নিয়ে বেরিয়ে এলাম। রেবেকা দিদি হাতে ধরিয়ে দিলেন একগোছা হলুদ গুসবেরী।

Location: Mystery Garden, Takna, Kalimpong
Video link: https://youtu.be/GOLS4sqheac

14/04/2024

রাত পোহালেই নববর্ষ। সংক্রান্তির এই রাতটা কেমন যেন স্মৃতিমেদুর করে তোলে। পিছন দিকে হাঁটতে ইচ্ছে করে খুব। হাঁটতে হাঁটতে চলে যাওয়া যায় কতো দূর! কলেজবেলা। স্কুলবেলা। ছেলেবেলা। এক একটা স্টেশন যেন। ছবির মতো পেড়িয়ে যায়। মায়ের হাতের মার। আচার চুরি। ভাইয়ের সঙ্গে খুনসুটি। লুকিয়ে খাওয়া আইসক্রীম। স্কুলের গেট টপকে কেনা সোনপাপড়ি। নববর্ষের রাণী রঙের প্যান্ট। ঝকঝকে সব ছবি। কোথাও গাছ থেকে দোল খাচ্ছে ছোটকা, দাদু চেনাচ্ছেন অর্কিড। তো কোথাও ম্যাজিক দেখাচ্ছেন ছোট পিসেমশাই। এই ভাবে যেতে যেতে এসে যায় জন্ম মুহূর্ত। যেখানে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে মেয়েকে পৃথিবীর আলো দেখিয়ে অবসন্ন মায়ের ম্লান মুখ এক চিলতে হাসিতে ধরিয়ে দেয় পৃথিবীর প্রথম পাসপোর্ট। আর ওটির বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা বাবার কানে পৌঁছে যায় আজীবনের আব্দার। তারপর? তারপর একরাশ অন্ধকার। সেই অন্ধকারে পথ হাঁটছি আমি। হাতড়ে হাতড়ে। হোঁচট খেতে খেতে। পরে যাচ্ছি। আবার উঠে দাঁড়িয়ে হাঁটা।এইভাবে যেতে যেতে কখন যে পৌঁছে গেছি এক নদীর ধারে। নদীর স্বচ্ছ জল বয়ে চলেছে মিষ্টি শব্দে মন ভরিয়ে। একটু এগোতেই দেখি গাছের নিচে বসে আছেন এক সৌম্যকান্তি পুরুষ। সদ্য তাঁর জন্ম হয়েছে। ব্রহ্মার মানসপুত্র তিনি। ধ্যানমগ্ন। হঠাৎ নদী থেকে একটা ছোট্ট মাছ লাফিয়ে উঠলো তাঁর কোলে। আর তার প্রাণ রক্ষা করতে বললো। মনু তাকে নিয়ে দ্রুত জলাশয়ের দিকে এগিয়ে গেলেন। এইভাবে মৎস্যরূপী বিষ্ণু আশ্রয় নিলেন মনুষ্যত্বের। মনুর হৃদয়ে স্নেহ, মায়া, করুণা সঞ্চারিত হল। আর সেই পথ ধরে তৈরি হল প্রথম প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে পৃথিবীকে রক্ষার পথ। মানুষের হাত ধরে। একটা মিষ্টি হাওয়ার স্পর্শে চোখ মেললাম। এসে গেছে পয়লা বৈশাখ। শুভ নববর্ষ।

আকাশে একফালি ঈদের চাঁদ। ক্যালেণ্ডারের লাল। আর দূর থেকে ভেসে আসা ট্রেনের বাঁশি। ত্রহ্যস্পর্শের টানে চেপে বসলাম ট্রেনে। সক...
11/04/2024

আকাশে একফালি ঈদের চাঁদ। ক্যালেণ্ডারের লাল। আর দূর থেকে ভেসে আসা ট্রেনের বাঁশি। ত্রহ্যস্পর্শের টানে চেপে বসলাম ট্রেনে। সকাল আটটা পঁয়ত্রিশের হাওড়া বর্ধমান সুপার। এই ট্রেনে চাপার শখ বহুদিনের। কেমন যেন একটা জাদু ট্রেন বলে মনে হয়। দেখতে অবিকল লোকাল ট্রেনের মতো, ভাড়া লোকাল ট্রেনের, অথচ হাওড়া আর বর্ধমানের মধ্যে আঠাশটা স্টেশনের একটাতেও থামবে না! আবার আমাদের নামিয়ে দিয়েই ছুমন্তরে হয়ে যাবে লোকাল ট্রেন। এ যেন হ্যারি পটারের হগওয়ার্টস এক্সপ্রেস। ছুটির দিনে ট্রেনে নিত্যযাত্রীদের ভীড় কম থাকায় বেশ ফাঁকা ফাঁকা। একজনও দাঁড়িয়ে নেই। কামরার পিছনের দিকে টানা লম্বা যে সিটটা, ঠিক তার মুখোমুখি সিটটায় বসলাম। ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে। আমার সিট ঠিক জানলার পাশে নয়। তাই মাঝে মাঝে জানলায় উঁকি দিচ্ছি। হঠাৎ বাঁ দিকে তাকিয়ে দেখি ফাঁকা দরজায় যেন জায়ান্ট স্ক্রিনে বিশ্বকাপ ফাইনাল ম্যাচের মতো করে বাইরেটা দেখার সুযোগ। এক মুহুর্তও নষ্ট না করে ঘুরে বসি আর চোখ রাখি প্রকৃতির দিকে। মেঘলা আকাশের একটা মনোরম চৈত্র দিন শুরু হয়ে গেছে। পেরিয়ে যাচ্ছে গ্রাম, ধানক্ষেত, পদ্মপুকুর, প্রাইমারি স্কুল, বাজার, লেভেল ক্রসিং এ অধীর মানুষজন আর ফ্যলফ্যাল করে তাকিয়ে থাকা স্টেশন। এখনও গরু নিয়ে মাঠে যায় রাখাল। সাইকেলে নীল সাদা মেয়ের দল। একটা দুটো তিনটে পুকুর। তাদের টলটলে জলে মুখ দেখছে মেঘলা আকাশ। আর কি আশ্চর্য সেই জলে একটাও প্লাস্টিক ভেসে নেই। হঠাৎ কামরায় হৈহৈ। স্কুল ব্যাগ কাঁধে বর্ধমান থেকে ট্রেনে চেপেছিল একটা ছেলে। সে যে বাড়ি থেকে পালাচ্ছে কে জানতো? তারপর শুরু হল ব্যস্ততা। অভিমানী ছেলে বড়ির ফোন নাম্বার বলবে না কিছুতেই। অবশেষে তার স্কুল ডায়েরি দেখে জানানো হল স্কুলে। স্কুল থেকে বাড়ি। তারপর বাবার সঙ্গে কথা। সকলের সমবেত ভালোবাসায় অভিমান পালানোর পথ খুঁজছে। আমিও এই অবসরে চোখ রাখি জায়ান্ট স্ক্রিনে। কিন্তু ট্রেন ততক্ষণে লিলুয়ায়। জায়ান্ট স্ক্রিনের দখল নিয়েছে কংক্রিট। চোখ সরিয়ে উঠে পড়ি। এবার নামতে হবে। পৌঁছে গেছি তিলোত্তমায়। আধুনিক ভারতের প্রথম রাজধানী। প্রথম অনেক কিছুর শহর এই কোলকাতা। ভারতে প্রথম মেট্রোরেল এই শহরে। এতো কিছুর সাথে নতুন পালক প্রথম জলের তলায় মেট্রোরেল। আর আজ চাপবো সেই ট্রেনেই। ট্রেন থেকে নেমে সোজা চোদ্দ নম্বর প্লাটফর্মে। সেখানে ভোজবাজির মতো তৈরি হয়েছে আস্ত একটা স্টেশন। চলমান সিঁড়ি নিয়ে গেল মাটির অনেক নীচে। যেখানে পৌঁছায় না হাওড়া স্টেশনের কোলাহলও, সেখানে পৌঁছে গেলাম আমি। ট্রেন এখন চলে ধর্মতলা পর্যন্ত। টিকিটের দাম দশ টাকা। এবার লিফট এ চাপলাম। আরও নীচে নামতে হবে। প্লাটফর্মে নেমে দেখি রেললাইন কাচ দিয়ে ঘেরা। একটু পরেই ট্রেন ঢুকলো। চেপে বসলাম ট্রেনে। পাশের সিটে ঠাকুমার সাথে বসে আছে একটা ছোট্ট মেয়ে। আর বলছে নদী, নদীর ভিতর জল, তার নিচে বালি আর তার নিচে আমরা।আর আমার কানে বেজে চলেছে বহুকাল আগে শোনা একটা গান,
আমার যেমন বেশী তেমনি রবে চুল ভেজাবো না
জলে নামবো জল ছড়াবো জল তো ছোঁব না।।

মন খারাপ হলে আমার একটা নদী চাই। আমার গভীরতম মন খারাপও যে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে খড়কুটোর মতো। পাহাড় টপকে সবুজ জঙ্গলের বুক চ...
06/04/2024

মন খারাপ হলে আমার একটা নদী চাই। আমার গভীরতম মন খারাপও যে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে খড়কুটোর মতো। পাহাড় টপকে সবুজ জঙ্গলের বুক চিরে যে ছুটে আসবে শুধু আমার মন খারাপ বলে। মেঘলা দিন আমার পছন্দ নয় সে জানে। তাই সে অনেক দূরে পাহাড়ের বুকে মেঘকে ডেকে নেয়। মেঘ তো তাকে ভালবাসে। সেই ছোট্টবেলা থেকে মেঘ আর বৃষ্টিই তো তাকে কোলে পিঠে করে বড়ো করেছে। আর তাই, তার উপর বড্ড মায়া ওদের। তার কোন আব্দার তারা ফেরাতে পারে না। তার বাবা গৌরী সেন ( Gori Chen) পাহাড়ও বড্ড আদর দেয় মেয়েকে। আদুর করে মেয়ের নাম রেখেছে কামেং। গরবিনী সেই মেয়ের জন্য অরুণাচলের কামেং জেলা দুভাগে ভাগ হয়ে গেল। মেয়ের সে সব খবর রাখতে বয়েই গেছে। আর রাখবেই বা কি করে? ততক্ষণে আমার মন খারাপের খবর নিয়ে সোনালী হাঁসেরা পৌঁছে গেছে যে তার কাছে। সে তাই তাড়াতাড়ি এলোচুল আলগোছে বেঁধে বেড়িয়ে পরেছে। সে জানে সে না এলে আমার মন খারাপ কেউ সারাতে পারবে না। সে ছাড়া কে ই বা খবর রাখে আমার। আর তারও তো আর কেউ নেই আমি ছাড়া। আসতে আসতে তার মনে পড়ে যায় তার এই পুরুষালি নাম আমার পছন্দ নয় একটুও। মনে পরতেই থেমে যায় সে। একটু থমকায়। একটা মনের মতো নাম খোঁজে। তারপর নামেরি ন্যাশানাল পার্কের জঙ্গলে মন খারাপে মুখ আঁধার করে বসে থাকা আমার কাছে আসে। পিছন থেকে চোখ টিপে ধরে। গাছের উপর বসে থাকা একঝাঁক টিয়া হাসতে হাসতে উড়ে চলে যায়। আমি তাকে ছুঁয়ে দেখার আগেই সে আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে যায় খুশির স্রোতে। ভরিয়ে দেয় মন। মুছিয়ে দেয় মন খারাপ। তার নতুন নাম এখন জিয়া ভরেলি।
তোমাদেরও যদি মন খারাপ আর ক্লান্তি মুছে মন ভরিয়ে নিতে ইচ্ছে হয়, অরুনাচল ট্যুরের প্রথম রাতটি কাটিয়ো অসম-অরুনাচল সীমান্তে, ভালুকপঙ এ। আর ঘুরে নিও নামেরি ন্যাশনাল পার্ক। সেখানেই অপেক্ষায় আছে জিয়া ভরেলি নদী। আর হ্যাঁ rafting করতে ভুলো না কিন্তু।

Address

Bardhaman
Burdwan
713101

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when PCA Diary posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to PCA Diary:

Videos

Share

Nearby media companies