16/06/2024
সহজে করুন ছাদ বাগান
লেখক, ব্রতীন দাস
শখের বাগানে কখন কী সার :
আমরা অনেকেই বাগান করে থাকি। কিন্তু জানি না গাছে কখন কী সার দিতে হবে। বিশেষ করে যারা নতুন বাগানি, প্রায়শই তারা এই ভুলটি করে থাকেন। অনেক সময় দেখা যায়, গাছে ফুল ও ফল হওয়ার জন্য যে সারের প্রয়োজন, সেটা না দিয়ে গাছ বৃদ্ধি পায়, এমন সার প্রয়োগ করে ফেলি। এতে ফল হয় উল্টো। গাছে ফুল ও ফল আসতে দেরি হয়।
গাছের দ্রুত বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন নাইট্রোজেন ঘটিত সার। ইউরিয়া থেকে আমরা ৪৬ শতাংশের মতো নাইট্রোজেন পেয়ে থাকি। নাইট্রোজেনের অভাব হলে গাছের পাতা হলুদ হয়ে যায়। ১০ ইঞ্চি টবের ক্ষেত্রে আধ চামচ ইউরিয়া দেওয়া যেতে পারে। তবে গাছের গোড়ায় নয়। দিতে হবে টবের চারদিকে। ইউরিয়া দেওয়ার পর বেশি করে জল দেওয়া দরকার টবে। যারা নাইট্রোজেনের চাহিদা মেটাতে জৈব সার প্রয়োগ করতে চান, তারা প্রয়োগ করতে পারেন কেঁচো সার, গোবর সার কিংবা পাতা পচা সার। টবে যে পরিমাণ মাটি রয়েছে, তার ত্রিশ শতাংশ জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে। ফুল ও ফল আনতে প্রয়োজন ফসফেট ও পটাশের। এক্ষেত্রে ডিএপি কিংবা এনপিকে প্রয়োগ করতে হবে খুব সাবধানে। কারণ এগুলির মাত্রা যদি বেশি হয়ে যায়, নষ্ট হয়ে যেতে পারে গাছ। জৈব সার ব্যবহার করে ভালো ফুল ও ফল পেতে প্রয়োগ করতে পারেন হাড়ের গুঁড়ো। এতে প্রচুর পরিমাণে ফসফরাস থাকে। পটাশের চাহিদার মেটাতে প্রয়োগ করা যেতে পারে পাকা কলার খোসা। এতে ৩০ শতাংশ পটাশ পাওয়া যায়। কলার খোসা শুকিয়ে গুঁড়ো করে টবের মাটিতে দেওয়া যায়, আবার তরল জৈব সার বানিয়েও প্রয়োগ করা যেতে পারে। যদি দেখা যায় গাছে ফুল ও ফল আসছে কিন্তু দাঁড়াচ্ছে না, বুঝতে হবে পটাশের ঘাটতি রয়েছে। নাইট্রোজেনের মতোই ১০ ইঞ্চি টবের জন্য পটাশ ব্যবহার করতে হবে আধ চামচ। সার প্রয়োগের পর অবশ্যই বেশি করে জল দেওয়া দরকার গাছের গোড়ায়। ভার্মি কম্পোস্ট প্রতিমাসে টব পিছু ১০০ গ্রাম করে দেওয়া যেতে পারে। তবে অজৈব সারের সঙ্গে কখনোই ভার্মি কম্পোস্ট প্রয়োগ করা চলবে না। জৈব ও অজৈব সার প্রয়োগের মাঝে অন্তত যেন ১৫ দিনের ব্যবধান থাকে। সার প্রয়োগের পাশাপাশি ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, জিংক, বোরণের মতো উপাদানগুলিও গাছ ঠিকমতো পাচ্ছে কি না সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। রাসায়নিক সার ডিএপি দিয়ে ফুলেফলে ভরিয়ে তোলা যেতে পারে বাগান। এতে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় রয়েছে নাইট্রোজেন ও ফসফরাস। কোনও গাছ প্রতিস্থাপন করার পরও যদি দেখা যায়, বৃদ্ধি হচ্ছে না কিংবা জৈব সার প্রয়োগ সেভাবে ফল মিলছে না, গাছটিকে দেখতেও তরতাজা লাগছে না, তখন ডিএপি ব্যবহার করে গাছটিকে সুন্দর করে গড়ে তোলা যেতে পারে। তবে গাছে কখনোই সরাসরি ডিএপি ব্যবহার করা চলবে না। এক চামচ সার নিয়ে আড়াইশো মিলিলিটার জলে গুলে একটি বোতলে ভরে রেখে দিতে হবে একদিন। তারপর ওই বোতল থেকে অল্প অল্প করে সার নিয়ে তা আরো বেশি জলে মিশিয়ে তারপর প্রয়োগ করতে হবে টবে। প্রয়োজনে পাতায় স্প্রে করা যেতে পারে। দেখা যাবে কয়েকদিনের মধ্যেই গাছ সবুজ ও তরতাজা হয়ে উঠছে। তবে ডিএপি সার প্রয়োগের আগে দুদিন গাছে কোনও জল দেওয়া যাবে না। সার প্রয়োগের আগে সবসময় টবের মাটি খুঁড়ে নিতে হবে। ইনডোর প্ল্যান্ট এর ক্ষেত্রে যদি দেখা যায়, গাছের বৃদ্ধি একেবারেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে কিংবা গাছের বেশিরভাগ পাতা হলুদ হয়ে গিয়েছে, তাহলে ডিএপির দ্রবণ তৈরি করে ১৫ দিনে একবার ব্যবহার করতে পারেন।