01/07/2022
আপনি জানেন কি?????
পুরান মতে ভগবান জগন্নাথ চার ভাবে
এই বিশ্বে প্রতিভাত হলেও তিনি ভোজনের জন্য পুরী ধামে আবিভূত হয়েছেন-
ক) বদ্রীনাথ ধামে তিনি ধ্যান মগ্ন
খ) রামেশ্বরম ধামে স্নান লীলা
গ) দ্বারকায় শয়ন এবং
ঘ) পুরী ধামে ভোজন
এই চার ধামের মধে তিনি শ্রীক্ষেত্র পুরী
ধামেই নিত্য আহার করেন, তাই পুরী ধামের
ভোগের মহত্ব এত অসীম।
এই পুরী ধামে শ্রী ভগবানের নিত্য সেবা হয় ৫৬
রকমের ভোগ দিয়ে।
স্বয়ং মাতা লক্ষী দেবীই যেন প্রতিদিন প্রভু
জগন্নাথের জন্য এই ভোগ রান্না করেন।
জগন্নাথ দেবের ভোগ গ্রহনের পর মাতা বিমলা
দেবী সেই প্রসাদ গ্রহণ করেন। তাই এই প্রসাদ
মহাপ্রসাদ নাম জগত বিখ্যাত। এই মহাপ্রসাদে
থাকে ৯ রকমের চালের পদ, ১৪ রকমের সবজি
৯ রকমের দুধের জিনিস, ১১রকমের মিষ্টি,২৩ রকমের পিঠা-পুলি, মালপোয়া ও অনন্য জিনিস। জগন্নাথের ৫৬ ভোগ গুলো হচ্ছে
১) উকখুড়া অর্থাৎ মুড়ি, ২) নাড়িয়া কোড়া অর্থাৎ নারকেল নাড়ু, ৩) খুয়া অর্থাৎ খোয়া ক্ষীর, ৪) দই, ৫) পাচিলা কাঁদালি অর্থাৎ টুকরো টুকরো কলা ৷ ৬) কণিকা অর্থাৎ সুগন্ধী ভাত, ৭) টাটা খিঁচুড়ি অর্থাৎ শুকনো খিঁচুড়ি, ৮) মেন্ধা মুন্ডিয়া অর্থাৎ বিশেষ ধরণের কেক, ৯) বড়া কান্তি অর্থাৎ বড় কেক, ১০) মাথা পুলি অর্থাৎ পুলি পিঠে, ১১) হামসা কেলি অর্থাৎ মিষ্টি কেক ৷ ১২) ঝিলি অর্থাৎ এক ধরণের প্যান কেক, ১৩) এন্ডুরি অর্থাৎ নারকেল দিয়ে তৈরি কেক, ১৪) আদাপচেদি অর্থাৎ আদা দিয়ে তৈরি চাটনি, ১৫) শাক ভাজা, ১৬) মরীচ লাড্ডু অর্থাৎ লঙ্কার লাড্ডু, ১৭) করলা ভাজা, ১৮) ছোট্ট পিঠে, ১৯) বারা অর্থাৎ দুধ তৈরি মিষ্টি ২০) আরিশা অর্থাৎ ভাত দিয়ে তৈরি মিষ্টি, ২১) বুন্দিয়া অর্থাৎ বোঁদে, ২২) পাখাল অর্থাৎ পান্তা ভাত, ২৩)খিড়ি অর্থাৎ দুধভাত, ২৪)কাদামবা অর্থাৎ বিশেষ মিষ্টি ৷ ২৫) পাত মনোহার মিষ্টি ২৬) তাকুয়া মিষ্টি, ২৭) ভাগ পিঠে, ২৮) গোটাই অর্থাৎ নিমকি, ২৯) দলমা অর্থাৎ ভাত ও সবজি ৩০) কাকারা মিষ্টি ৷ ৩১) লুনি খুরুমা অর্থাৎ নোনতা বিস্কুট, ৩২) আমালু অর্থাৎ মিষ্টি লুচি, ৩৩) বিড়ি পিঠে, ৩৪) চাড়াই নাডা মিষ্টি ৩৫) খাস্তা পুরি, ৩৬) কাদালি বারা, ৩৭) মাধু রুচী অর্থাৎ মিষ্টি চাটনি, ৩৮) সানা আরিশা অর্থাৎ রাইস কেক, ৩৯) পদ্ম পিঠে ৪০) পিঠে, ৪১) কানজি অর্থাৎ চাল দিয়ে বিশেষ মিষ্টি. ৪২) দাহি পাখাল অর্থাৎ দই ভাত, ৪৩) বড় আরিশা, ৪৪) ত্রিপুরি ৪৫) সাকারা অর্থাৎ সুগার ক্যান্ডি, ৪৬) সুজি ক্ষীর, ৪৭) মুগা সিজা, ৪৮) মনোহরা মিষ্টি, ৪৯) মাগাজা লাড্ডু ৫০) পানা, ৫১) অন্ন, ৫২) ঘি ভাত, ৫৩) ডাল, ৫৪) বিসার অর্থাৎ সবজি, ৫৫) মাহুর অর্থাৎ লাবরা, ৫৬) সাগা নাড়িয়া অর্থাৎ নারকেলের দুধ দিয়ে মাখা ভাত ৷
একবার ইস্কন প্রতিষ্ঠাতা শ্রীলপ্রভুপাদ
আমেরিকায় রথযাত্রার সময় উপস্থিত ছিলেন
সেখানে ওয়াশিংটনে প্রথম ইস্কনের
রথযাত্রা শুভ সূচনার সময়। ৫৬ ভোগ দিতে গিয়ে
দেখা যায় বহু বিদেশীরাই ভারতীয় রান্নার
এতগুলি নিরামিষ পদ আয়ত্ত করতে পারছিলেন
না। তখন তিনি নিজে দাড়িয়ে নিরামিষ পদ
কেক, প্যাটিস বানানো শিখিয়েছিলেন বিদেশী ভক্তদের।
তবে শ্রীক্ষেত্র পুরীতে যারা গেছেন তারা
সকলেই অবগত আছেন পুরীধামের রান্নাঘরের মাহাত্ম্যা সম্পর্কে।
সে এক দেখার মতই রান্নাঘর, প্রতিদিন ৭৫২টি
উনুনে রান্না হয়, ৬০০জন রাঁধুনি, আর ১,০০০
সহকারী এই কাজ করেন নিষ্ঠা সহকারে।
জগন্নাথ দেবের রান্নায় সব সবজি লাগলেও
কিছু সবজি একেবারেই নিষিদ্ধ যেমন -
সাধারণ আলু (একমাত্র ক্ষামআলু ব্যবহার করা হয়)
লঙ্কা, গাজর, রসুন, পিয়াজ, টমেটো প্রভৃতি।
আশ্চর্যের বিষয় এই পাকশালায় কোনো
বৈদ্যুতিক বাতি নেই। কুপি বা লম্ফ জ্বেলে দক্ষ
পাণ্ডারা এই রান্না করে যাচ্ছেন সেই
আদ্দিকাল থেকে আজ একই ভাবে। সব রান্নাই
হয় মাটির হাড়িতে করে, কোনো ধাতব পাত্র
ব্যবহার হয়না।
সব থেকে আশ্চর্যের বেপার হলো উনোনের উপর
একটা হাড়ির উপর আর একটা হাড়ি চাপিয়ে
দেওয়া হয়, এই ভাবে পর পর ৯টি হাড়ি
চাপানো থাকে আর শেষ হাড়ির নিচে
থাকে গনগনে উননের আচ কিন্তু সব থেকে
উপরের হাড়ির রান্না শেষ হয় সবার প্রথমে।
এমন বিচিত্র লীলা লীলাময়ের দ্বারাই একমাএ সম্ভব।